#ত্রয়ী
মোর্শেদা হোসেন রুবি
৪||
বড় রাস্তার মোড়টাতে বখাটে ছেলেদের এই জটলাটা রোজই বসে। এর প্রধান কারন রাস্তার ওপারের গার্লস স্কুলটা। আশেপাশের চায়ের ছাপড়াগুলোতেও যে ছোটখাট জটলা যে থাকেনা তা নয় তবে মোড়ের বড় জটলাটা কেবল স্কুল খোলা থাকলেই দেখা যায়। স্কুল বন্ধ থাকলে সাধারণত এখানে ছেলেদের আড্ডাটা সেভাবে বসে না। এরা তখন সামান্য সরে গিয়ে পাশের ছাপড়াটাতে বসে আড্ডা দেয় আর পথচলা মেয়েগুলোকে দেখে টিটকারি মারে আর কমেন্ট করে দিনটাকে কাটায়। এদের এই আড্ডা চলে একেবারে মাঝরাত পর্যন্ত । কেবল স্কুল খোলা থাকলেই এই দলটা দিনের নির্দিষ্ট দুটো সময়ে ঠিক স্কুলের অপজিটের এই মোড়টাতে এসে হাজির হয়ে যায়। আর এই সময়টা হলো স্কুল শুরুর আধাঘন্টা আগে এবং ছুটির ঘন্টা পড়ার দেবার পর থেকে পরবর্তী একঘন্টা পর্যন্ত। যতক্ষণ পর্যন্ত স্কুলের শেষ ছাত্রীটা বড় রাস্তাটা ক্রশ করে চলে না যায় ততক্ষণ পর্যন্ত এই দলটা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে। এসময় ওদের কণ্ঠে থাকে হরেক পদের প্রেমাকুতিপূর্ণ গান আর উদাস কবিতার পংক্তি যা আবৃত্তি হতে থাকে বারবার। পরিমিতিবোধ হীন সরবে।
আজ স্কুল বন্ধ। তারমানে আজ কোন জটলা থাকবেনা। ভাবনাটা মনে আসতেই একটু একটু করে সাহস ফিরে পেল সাবা। বাড়ী থেকে বেরোনোর পরই এই জায়গাটার কথা মনে পড়ে বেশ নার্ভাস লাগছিল ওর। নার্ভাস লাগার মূল কারণ আজ ও একা। আর ওর চলার পথের ঐ জায়গাটা বখাটেদের আড্ডাখানা।
ঐ দলটাকে অনেকদিন ধরেই দেখছে সাবা। এরা স্কুল গোয়িং মেয়েগুলোকে সমানে টিজ করতে থাকে। আর তাদের টিজিং এর ভাষাটাও খুবই মারাত্মক। মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন অংশের কুরুচিপূর্ণ বর্ণনা উল্লেখ করে তারা পদ্য আবৃত্তি করতে থাকে ওরা। ওদের জ্বালায় এই পথটা অতিক্রম করা সাবার জন্য সবসময়ই ভীতিকর একটা কাজ। তাছাড়া অন্যান্য দিন সায়রা আর তোয়া ওর সাথে থাকে। ওরা ছাড়াও স্কুলের অনেক মেয়ে ওর সাথে থাকে। স্কুল ছুটির পর মেয়েদের বড় একটা দল সবাই রাস্তা পার হয়ে এই মোড়টাতে এসেই রিক্সা টেম্পু বাস ধরে আর যার যার বাড়ির পথে চলে যায়। তোয়া আর সায়রার বাড়ী একই এলাকায় বলে ওরা একসাথেই যায় তবে সাবা একা বলে ওরা দুজন দাঁড়িয়ে থেকে ওকে রিক্সায় তুলে দেয় তারপর বাড়ির পথ ধরে। আজ সায়রা বা তোয়া ওর সাথে নেই কিন্তু রাস্তার মোড়ের ঐ জটলাটা আছে অথচ আজ স্কুল বন্ধ। সাবা ভীষণ অবাক হলেও বিস্ময় লুকিয়ে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করল। দুর থেকেই দলটা দেখতে পেল ওকে। প্রায় সাথে সাথেই ওদের একজন গান গাওয়া শুরু করে দিলে সাবা ভয়ে ঘামতে লাগল। যদিও নির্ভিক একটা ভাব ধরে রেখেছে চেহারায়। অন্যদিকে তাকিয়ে পা চালিয়ে দ্রুত হাঁটতে লাগল সে। পাশাপাশি ভাবতে চেষ্টা করল তোয়াদের বাড়ী যাবার আর অন্য কোন পথ আছে নাকি। মনে পড়ল, এই বড় রাস্তাটা পার না হয়ে তোয়াদের বাড়ীর পথ ধরা সম্ভব না। কথাটা মনে হতেই হতাশা ছেঁকে ধরল ওকে। অকারণেই ওড়না টেনে ঠিক করল। রুমালটা হাতের মুঠোয় শক্ত করে চেপে ধরে রোবটের ভঙ্গিতে পথটা ক্রশ করতে যাবার মুহূর্তেই একটা ছেলে হেড়ে গলায় গান গেয়ে উঠল।
” পরেনা চোখের পলক, আহ্। কী তোমার রূপের ঝলক।”
সাবা চোখ কান বুঁজে জায়গাটা পার হবার জন্য নির্বিকার ভঙ্গিতে পা বাড়ালেও আচমকা হ্যাঁচকা টান খেয়ে প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়ার উপক্রম হল ওর। আর তখনই টের পেল দলটার কেউ একজন ওর কাঁধের ব্যাগটা ধরে প্রবল টান দিয়েছে। যার ফলে তাল সামলাতে না পেরে লাইট পোস্টের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে কপাল ফুলে গেছে ওর। সাবা কিছু বলার আগেই দলটার নেতা গোছের ছেলেটা এগিয়ে এল। বেশ লম্বা মত একটা ছেলে। দাঁতগুলো উঁচু। খুবই ভারিক্কী একটা ভাব। অথচ সে যে একটা ব্যক্তিত্বহীন ছেলে তা ওর পোশাক আর চালচলন দেখলেই বোঝা যায়। সে এসে দুষ্টামী করা ছেলেটাকে প্রবল ধমক দিয়ে হাত মুচড়ে ধরে বলল,
-” অই ব্যাটা, মাইয়াগো ব্যাগ ধইরা টানোস কেন ? তগো কী মা বোন নাই ? ”
দ্বিতীয় ছেলেটা সাথে সাথেই মেয়েলি গলায় বলে উঠল, ” ছেড়ে দে শয়তান। ”
-” ছাড়ুম। আগে স্যরি ক মাইয়াটারে। নাইলে তর হাত ছাড়ুম না। এই আপু খাড়ান। ও আপনার কাছে মাফ চাইব।”
-” না, না। লাগবেনা।” কোনমতে বলেই কেটে পড়তে চাইল সাবা। নেতা গোছের ছেলেটা পথ আটকে বলল, ” এইটা কেমন কথা আপু। আপনার জন্য অরে বকা দিলাম আর আপনি এভাবে চইলা যাইবেন এটা তো ঠিক না। একটু খাড়ান। অরে স্যরি বলার সুযোগ দেন। অই ক।”
-” প্লিজ, আমার পথ ছাড়েন। আমাকে যেতে দিন। আমার স্যরি লাগবেনা।” কাঁদো কণ্ঠ সাবার।
-” আরে যাইতে তো দিমুই। আপনারে ধইরা কী বইসা থাকুম নাকি সারাদিন । কিন্তু আপনি এইভাবে চইলা গেলে আমার অপমান। কারণ আমি আমার গুরুপের কাউরে পারমিশন দেই না মেয়েগো সাথে মিসবিহেভ করার। কেউ ভুলে কইরা ফালাইলেও তারে মাফ চাওয়াই আর ঐ মাইয়ার হাতে অরে কানমলা খাওয়াই । কাজেই, নিয়ম অনুযায়ী আপনি এখন ওর কানটা ডইলা দিবেন। ” বলেই দলের ছেলেটার দিকে তাকিয়ে ধমক মেরে ডাক দিল, ” ঐ বান্দর এদিকে আয়। তর আজকা নিস্তার নাই।” বলে আসামী ছেলেটাকে কলার ধরে টানতেই ছেলেটা হেলেদুলে সাবার সামনে এসে দাঁড়াল।
সাবা ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড ভয় পেলেও মুখোভাবে শান্ত থাকার চেষ্টা করল। সে বেশ বুঝতে পারছে পুরোটাই এদের সাজানো নাটক কিন্তু কিছু বলার উপায় নাই। সাবা টের পেল ও ইতোমধ্যেই ঘামে পুরোপুরি ভিজে গেছে। বিচারক ছেলেটা ওকে বলল, ” নেন আপু, একদম কচলায়া দেন ওর কানটা।”
-” প্লিজ, আমাকে যেতে দিন। আমার এসবের দরকার নেই।” কাতর কণ্ঠে অনুনয় করে সরে দাঁড়াতে গেলে বাধা পেল সাবা। দলটা ওকে রীতিমত ঘিরে ধরেছে।
আশপাশ দিয়ে পথচলা লোকগুলো দেখেও না দেখার ভান করে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। সাবার কান্না পেল ভয়ে। সে ফের কাকুতি মিনতি করার মুহূর্তেই শুনল পরিচিত কণ্ঠের ডাক, ” এটা সাবা না ? ”
সাবার মনে হল সে যেন ধড়ে প্রান ফিরে পেয়েছে। তাকিয়ে দেখল একটু দুরেই দাঁড়িয়ে আছে তোয়ার বড় ভাই, সজীব ভাইয়া। অনুসন্ধানী চোখে ওকে দেখছে সে। আর তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে দাঁড়িওয়ালা গোছের লম্বা চওড়া আরেকজন। দুজনের হাতেই সাদা এপ্রন। সম্ভবত কলেজ থেকে ফিরছে ওরা। সাবা হঠাৎ ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলল সজীবকে দেখে। মুহূর্তেই সজীব যা বোঝার বুঝে নিয়ে সামনে এগোল।
-” কী হচ্ছে কী এখানে ? ”
প্রশ্নটা নেতাগোছের ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে করলেও সে পাত্তা না দেবার ভান করে বলল, ” অই মিয়া, আপনে কেডা ? ”
-” আমি যে ‘ই হই, আপনারা আগে বলেন ওকে আটকেছেন কেন ? ”
-” আটকাইনি তো। জিগান মাইয়াটারে। এই আপু, আমরা আপনারে আটকাইছি ? আমরা তো আরো আপুর লগে বেদ্দবি করনের লিগা আমাগো দোস্তের বিচার করতাছি। এই আপু, কথা কন না কেন ? ”
সাবা নিরবে ফুঁপাতে লাগল কিছু বলল না। সজীব এবার ধমক মেরে বলল, ” রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে মেয়েদের বিরক্ত করেন আর এসব নাটক রচনা করেন তাই না ? যান, সরেন এখান থেকে। এই সাবা, চলে এসো।” বলে সজীব সাবাকে হাতের ইশারায় ডাকল।
সাবা দ্রুত সজীবকে অনুসরণ করে পা বাড়াল। অমনিই নেতা গোছের ছেলেটা ওর পথ আটকে মুখ বাঁকিয়ে সজীবের দিকে তাকাল।
-” অই মিয়া, মুখ সামলায়া কথা কইবেন। চিনেন আমারে ? মাইয়া আপনের কী লাগে যে এতো হিরোগিরি দেখাইতাছেন ? ”
-” খবরদার বাজে কথা বলবেন না। ও আমার ছোট বোনের বান্ধবী। আমার বোনের মতই। ফালতু কথা বন্ধ করো আর সরে দাঁড়াও। সাবা এসো তো আপু ।”
-” হোইত্তর বান্ধবীর খেতাপুরি…!” বলে খিস্তি করে সজীবের কলার টেনে ধরল নেতা গোছের ছেলেটা। সাবা এবার ভয় পেয়ে গুঙিয়ে কেঁদে উঠল। সজীব কোনরকমে সাথের বন্ধুটাতে ডাকল, ” এ্যাই রাশেদ। এদিকে আয় না জলদি ব্যাটা।”
রাশেদ নামের ছেলেটা এতক্ষণ অদূরে দাঁড়িয়ে দেখছিল পুরো ব্যপারটা। সে ইচ্ছে করেই এসব ঝামেলা থেকে নিজেকে দুরে রেখেছে কারণ সে জানে এসব উটকো ঝামেলায় শেষ পর্যন্ত গুন্ডাপান্ডা গুলোই জিতে যায়। মাঝখান থেকে নিজের অপমান। কিন্তু এই মুহূর্তে বন্ধুকে বিপদে পড়তে দেখে না এসে পারল না। সে ধীর পদক্ষেপে এসে শান্ত ভঙ্গিতে বলল,
-” কী ভাই কলার ধরেছেন কেন ? এভাবে যার তার কলার ধরা তে ঠিক না। বিপদে পড়বেন তো।”
-” অই মিয়া আপনে আবার কে ? ”
-” আমি কেউ না তবে ও অনেক কিছু। ওর ফুপা আর্মির বড় অফিসার । খবর পেলে মেরে আপনাকে তক্তা বানিয়ে দেবে। আর আপনার এই টুটা ফাটা মেম্বারদের নলা ছুটিয়ে দেবে। ওকে ছাড়েন ।ছাড়েন বলছি। আর এসব ঝামেলা বন্ধ করেন। নয়ত ব্যপারটা আপনার জন্যই খারাপ হবে। বিশ্বাস না হয় অপেক্ষা করুন। আমি ওর ফুপাকে ফোন দিচ্ছি। তারপর দেখেন মজা ।” বলে পকেট থেকে ফোন বের করে নাম্বার টিপতে লাগল। নেতা গোছের ছেলেটা এবার কিছুটা দ্বিধায় পড়ে গেল রাশেদের কথাটা শুনে। কী ভেবে সজীবের কলার ছেড়ে দিয়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল, ” যান, আজকে ছাইড়া দিলাম। অই চল্।” বলে দলটা নিয়ে দ্রুত সরে গেল ছেলেটা।
সজীব এবার নিজের কলার ঠিক করে সরে এসে বন্ধুর দিকে তাকাল।
-” কী রে, তুই না মিথ্যা বলিস না। সত্যবাদী মানুষ। ফট করে এরকম ডাহা মিথ্যা কথা বললি কী করে? ”
-” মোটেও মিথ্যা বলি নাই। মিথ্যা বললাম কোথায় তুই দেখা ? পুষ্পের ফুপা আর্মির মেজর ? আর পুষ্পকে যে তুই বিয়ে করবি এটা ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই জানে। তাহলে ব্যপারটা কী দাঁড়াল ? তোর ফুপা শ্বশুর আর্মি। একই তো কথা।”
-” তুই শালা আসলেই একটা বিচ্ছু। চল্। ” বলে সাবার দিকে তাকাল ,” কই যাচ্ছিলা তুমি? ”
-” আপনাদের বাসায় । ” চোখ মুছে বলল সাবা।
-” কাঁদছেন কেন। এরকম সেজে গুজে রাস্তায় বের হবার সময় নিশ্চয়ই মেন্টাল প্রিপারেশন রেখেছিলেন যে এসব বখাটেরা আপনাকে অপমান করবে। তাহলে কাঁদার কী হলো।” রাশেদ বিরক্তি চেপে কথাটা বলে সজীবের দিকে তাকাল। ” আমি যাই দোস্তো।”
-” সে কী? বাসায় না যাবি বললি ? ”
-” নাহ্, আজ আর যাবো না। তোর এই ক্যাচালেই অনেকটা সময় চলে গেছে। আমার ইচ্ছে ছিল তোর ওখানে ঘন্টাখানেক আড্ডা দিয়ে হলে ফিরে যাব। কিন্তু এখানেই তো পঁচিশ মিনিট শেষ। তোর বাসায় গিয়ে দশ পনের মিনিটের বেশী সময় পাব না। কাজেই আজ বাদ থাক। গেলাম।” বলে একনজর সাবাকে দেখেই ছেলেটা ফুটপাথ ছেড়ে নেমে পড়ল রাস্তায়। হাত উঁচিয়ে একটা রিক্সা ডেকে তাতে উঠে পড়ল। রিক্সায় বসে সজীবের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ল আরেকবার তবে সাবার দিকে আর তাকাল না। ভুলেও না।
======
তোয়াদের বাড়ীটা বেশ বড়। তিন কাঠা বাড়ীর চারধারে প্রচুর জায়গা ছেড়ে বাড়ীটা বানানো হয়েছে। বাড়ীর সামনের খোলা জায়গাটাতে ব্যাডমিন্টন কোর্ট বানানো হয়েছে। সেখানেই সায়রা আর তোয়াকে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা গেল। দুজনেই কর্কের পেছনে ছুটাছুটি করছে আর ঘাম ঝরাচ্ছে। এমন সময় সজীবকে আর সাবাকে ঢুকতে দেখে ওদের খেলা থেমে গেল। তোয়া খুশিতে ‘হাই সাবু’ বলে চেঁচালেও সায়রার মুখ থমথমে হয়ে গেল। সে কোন প্রতিক্রিয়া দেখাল না।
সজীব এগিয়ে এসে বোনকে বলল, ” তোর বান্ধবীকে লবন পানি খাওয়া। বেশ ভয় পেয়েছে বেচারী।” বলে সাবার দিকে তাকিয়ে হাসল সজীব। বলল,
-” শোনো, এরকম অফ ডে তো একা একা এদিক সেদিকে যাবা না। ছুটিছাটার দিনে রাস্তায় বখাটেদের আড্ডা থাকবেই। তোমাদেরকেই সামলে চলতে হবে। আজ আমি আর রাশেদ না থাকলে কী হতো তুমিই বলো। ” বলে সজীব আর দাঁড়াল না। নিজের ঘরের দিকে চলে গেল।
তোয়া ব্যাট ফেলে সাবার কাঁধ ধরে ঝাঁকাল।
-” ঠিক করে বলতো কী হইসে? ”
সাবা তোয়াকে জড়িয়ে ধরে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল এবার। সায়রা বিস্ময় নিয়ে ওদের দুজনকে দেখতে লাগল।
আধাঘন্টা পর ওদের তিনজনকে দেখা গেল তোয়ার ঘরে জুস হাতে বসে থাকতে। সায়রাকে এখন আগের তুলনায় অনেক শান্ত দেখাচ্ছে। সাবা আর সজীবকে একসাথে দেখার পর যে খারাপ লাগাটা তৈরী হয়েছিল সেটা পুরোপুরি কেটে গেছে সাবার মুখে ওর পুরো ঘটনাটা শুনে। সে আর গোমড়া মুখে নেই বরং এবার হাসতে দেখা গেল ওকে। টিপ্পনী কেটে বলল,
-” ছেলেটা দেখতে কেমন রে সাবা ? ”
-“কোন ছেলেটা দেখতে কেমন ? ” সাবা বোকার মত তাকাল।
-” আহা, ঢং। বুঝিস না, তাই না ? রাশেদ মিয়ার কথা জিজ্ঞেস করছি। ”
-” ওহ্, সেই রাশেদ ? দুর, কাইষ্টা পাবলিক। কথায় কোন রসকষ নাই। ডাক্তারী পড়লেই কী এমন রসকষ হীন হতে হয় ? আমাকে একগাদা কথা শোনাল ছেলেটা।” কথা বলছে রাগের অথচ মৃদু হাসছে সাবা। ওর চোখ জোড়া স্বপ্নাতুর হয়ে উঠেছে।
সায়রার কথায় মুখ তুলে তাকাল। সায়রা ঠোঁট উল্টে বলছে, ” এই জন্যই তো আমার ডাক্তারদের পছন্দ না। এরা বড় বেরসিক।”
সাবা মুচকি হেসে বলল, ” হম, পছন্দ না হলেই ভাল। আমাদের সজীব ভাইয়া তো অলরেডী বুকড। ”
কথাটা শোনামাত্রই সায়রার হাসি দপ করে নিভে গেল। চেহারা দেখে মনে হল ওর মুখে কেউ একপোচ কালি মেরে দিলো এইমাত্র। কোনমতে জিজ্ঞেস করল, ” কে বলেছে তোকে এসব ? ”
সাবা জবাব দেবার আগেই তোয়া হেসে বলল, ” এটা তো আমি আগেই জানি। পুষ্প আপুর সাথে ভাইয়ার এ্যাফেয়ার অনেক আগে থেকেই। ভাইয়াও পুষ্প আপুকে খুব পছন্দ করে। অবশ্য পুষ্প আপুও কম না। যেমন দেখতে তেমন মেধাবী। ”
-“আচ্ছা, তোর এই রাশেদ ভাই কী সজীব ভাইয়ার ফ্রেন্ড না ওর সিনিয়র ? ব্যাটার দাঁড়ির জন্য তো ঐটাকে বুড়ো মনে হল। ” সাবা হালকা চালে জানতে চাইল।
-” কী যে বলিস। রাশেদ ভাই একটা জিনিয়াস ছেলে। উনি তো…!” তোয়া মাথা নেড়ে নেড়ে রাশেদ সম্পর্কে বলতে শুরু করলে সাবা মন দিয়ে শুনতে লেগে গেল। তবে এসবের কোনকিছৃই সায়রার কানে প্রবেশ করল না। সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিজের মোবাইলের দিকে। যেখানে সজীবের পাঞ্জাবী পড়া একটা ছবি দেখা যাচ্ছে। ছবিটা সজীবের অগোচরে সায়রাই একদিন তুলেছিল। তোয়ার জন্মদিনে।
চলবে…