দ্বিতীয়_সূচনা পর্ব_৩২

0
1559

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৩২
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

আজ দু’দিন হলো রাতে ঠিক মতো ঘুম হচ্ছে না অয়নন্দিতার। ঘুম না আসার কারণটা জানা খুব সহজ, যা অয়নন্দিতা নিজেই জানে। গতকাল সন্ধ্যায় ফারহান ফোন দিয়েছিল। বলেছিল, আবার ও বাড়ি গিয়েছ। কেন, আমার বাড়িটা বুঝি ভালো লাগে না তোমার?
বার কয়েক বোঝাবার চেষ্টাও করেছিল সে ফারহানকে যে, সে আসতে চায়নি। মামা জোর করাতে আসতে হলো তাকে। মামা মামীর আদরের সে। বাবা মায়ের পর মামা মামী-ই তার আপন। তাই তাদের কথা ফেলতে পারে না অয়নন্দিতা। প্রতিউত্তরে ফারহান বলেছিল, আমি বুঝি কেউ নই তোমার? আমায় ফেলে দুই দিন পর পরই চলে যাও। কেন এমন করো তুমি?
ফারহানের অভিযোগগুলো বেশ ভালো লেগেছিল অয়নন্দিতার। ভালো লাগার বিশেষ কারণ হলো, অয়নন্দিতা বুঝতে পেরেছে অভিযোগগুলোর মাঝে ভালোবাসা লুকিয়ে আছে। ফারহানের লুকায়িত ভালোবাসাটুকু প্রকাশ পাচ্ছে অভিযোগের মাধ্যমে।
সন্ধ্যায় মামা মামী আর হাসানকে কথা বলতে দেখেছে অয়নন্দিতা। হাসান অয়নন্দিতাকে তাদের কাছে বসতে বললে অয়নন্দিতা মিলির পাশে গিয়ে বসে। অয়নন্দিতার মামা ফারহানকে বলেছেন এ বাড়ি আসতে। ফারহান নাকি বলেছে তার ব্যস্ততা বেশি। যদি পারে তবে আসবে। অয়নন্দিতা বুঝতে পারছে না ফারহানের এই না করার কারণ কী হতে পারে? সে কি আসলেই ব্যস্ত নাকি অয়নন্দিতার সঙ্গে রাগ করেছে। অয়নন্দিতা মনে মনে পণ করেছে আগামী কয়েক মাস এই বাড়ি আসবে না। তাহলে আর ফারহানও রাগ করবে না।
দুপুর বেলা ঘুমানোর কারণে মাথাটা ধরে আছে অয়নন্দিতার। দু’কাপ কড়া লিকারও খেয়েছে কিন্তু ব্যথা কমছে না। ফারহানকে একবার ফোনও দিয়েছিল, লাভ হয়নি। সে রিসিভ করেনি। অয়নন্দিতা মনে মনে বলতে থাকে, লোকটার ভাবভঙ্গি ভালো ঠেকছে না। তার মাথায় কখন যে কী হয় তা বোঝার উপায় নেই।

ঘড়িতে সময় নয়টা।
অয়নন্দিতা তখনও শুয়ে আছে। মিলি হুট করেই ঘরে চলে আসে। দ্রুত পায়ে ঘরে ঢুকেই সে অয়নন্দিতাকে জোর করে তুলে দেয়।
‘ওঠো না, শুয়ে আছো এখনও। খাবা না?’
‘ভাবী, আমার মাথা ব্যথা করছে। এইভাবে নাড়াচাড়া দিচ্ছো কেন?’
‘হা হা। কারণ একটা নাড়াচাড়া মার্কা খবর আছে।’
‘নাড়াচাড়া মার্কা খবর! এমন খবরের কথা জীবনেও শুনিনি।’
‘শোননি তাতে কী হয়েছে? আজ তো শুনলে। চলো। বসার ঘরে চলো।’
‘আচ্ছা আচ্ছা। এইভাবে নাড়িও না আমায়। যাচ্ছি আমি। তুমি যাও, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।’
‘ফ্রেশ হওয়া লাগবে না। এমনিতেই চলো।’
‘উফফ ভাবী, যা শুরু করেছ তুমি।’
মিলি অয়নন্দিতাকে জোর করে বিছানা থেকে তুলে দেয়৷ অয়নন্দিতা না চাইতেও উঠে বসে। শালটা ঠিকঠাক মতো শরীরে জড়িয়ে নিয়ে যেই না নামতে যাবে ওমনি কারো কন্ঠস্বর শুনতে পায় অয়নন্দিতা। একটা ভারী কন্ঠস্বর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
‘এই সময়ে শুয়ে থাকলে মোটা হয়ে যাবে তো।’
অয়নন্দিতা হকচকিয়ে ওঠে। নজর দরজার দিকে ঘোরায়। এই মুহুর্তে নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। ভূত নয়তো। ফারহান স্ব শরীরে দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। ব্ল্যাক জিন্স হোয়াইট টি-শার্ট পরা ফারহানকে একদম সাধারণ একজন পুরুষ মানুষ লাগছে। অয়নন্দিতা হা করে তাকিয়ে দেখছে তার বরকে। পাশে দাঁড়িয়ে মিলি মুচকি হেসে দু’জনকে দেখছে। দু’জন দু’জনকে এমন ভাবে দেখছে যেন মনে হচ্ছে দু’জনেরই চোখে চোখে কথা হচ্ছে। মিলি আর দাঁড়িয়ে না থেকে পাশ থেকে কেটে পড়ে। মিলি চলে গেলে ফারহান অয়নন্দিতার সামনে এসে দাঁড়ায়। ফারহান বুঝতে পারছে না তার কাছে অয়নন্দিতাকে এত সুন্দর লাগছে কেন। দু’দিন না দেখাতেই কি এত সুন্দর লাগছে নাকি অয়নন্দিতা এমনিতেই এত সুন্দর। লাল জামার সাথে সাদা শালটা বেশ মানিয়েছে অয়নন্দিতাকে। ফারহান মুচকি হেসে অয়নন্দিতার আরও কাছে চলে আসে। আলতো করে অয়নন্দিতার কপালে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ায় ফারহান। দু’গালে হাত রেখে অয়নন্দিতার চোখের দিকে তাকায় ফারহান। ভেজা স্বরে বলে ওঠে,
‘অবাক হয়েছ?‘
অয়নন্দিতাও ফারহানের দু’হাত জড়িয়ে ধরে। বলে,
‘অনেকটা।’
‘কেমন দিলাম সারপ্রাইজ?’
‘ভাবী কি এইজন্যই আমায় ডাকতে এসেছিল?’
‘হ্যাঁ। পরে ভাবলাম। নাহ, আমিই যাই আমার বউয়ের কাছে।’
‘হঠাৎ চলে এলেন। ফোন দিয়েছিলাম, রিসিভ করেননি কেন?’
‘সারপ্রাইজ দিব সেইজন্যই রিসিভ করিনি।’
‘এত সারপ্রাইজ দিতে কে বলেছে?’
‘তুমিই বাধ্য করেছ।’
‘আমি!’
‘জি। আমায় রেখে চলে আসো কেন এখানে। জানো না, তোমার পেছনে আমি আমার ভালোবাসার খানিকটা অংশ ইনভেস্ট করেছি। সেই ভালোবাসার অংশটুকু খাটাতে হবে তো। না হলে প্রফিট কিংবা লসের হিসাব পাবো কী করে?’
ফারহানের কথা শুনে অয়নন্দিতা শব্দ করে হেসে দেয়। হাসির শব্দ যেন ঘরের বাইরে না যায় সেইজন্য ফারহান সঙ্গে সঙ্গে অয়নন্দিতার মুখ চেপে ধরে। এরপর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,
‘আস্তে হাসো নারী। হাসির শব্দে অন্যরা না জ্ঞান হারায়।’
কথাটা শোনার পর পরই অয়নন্দিতা তার কানের নিচে উষ্ণ স্পর্শ অনুভব করে। সেই স্পর্শে অয়নন্দিতার চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে যায়। ফারহানকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে অয়নন্দিতা। ফারহানও অয়নন্দিতাকে জড়িয়ে ধরে পরম ভালোবাসায়।

চলবে…………………………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here