ত্রয়ী শেষ পর্ব

0
3250

ত্রয়ী ২৮||
প্রথম খন্ডের শেষ পর্ব
মোর্শেদা হোসেন রুবি

শিরি অকাতরে ঘুমাচ্ছে। ঘুমানোর সময় ওকে রীতিমত একটা প্রানহীন অর্ধকঙ্কাল বলে মনে হয়। ওর দিকে তাকাতেও তখন ভয় হয় সাবার। দেখলে মনে হয় যেন মরে গেছে ও। কিন্তু যখন ঘুম ভেঙে উঠে বসে তখন আবার সবকিছু ঠিক মনে হয়। সাবা ভেবে পায়না মাত্র তিনদিনে একটা মানুষ এতোটা শুকায় কীভাবে। বাড়ি আনার পর থেকে নিজেই ওকে ধমকে ধামকে খাওয়াচ্ছে। সুরমা আপা আজকাল এ বাড়িতে আসে ঠিকই কিন্তু ভুলেও ওদের ঘরে ঢুকেনা। ছেলেকেও ঢুকতে দেয় না। বাবলুটা আসে মাঝেমধ্যে আর আসে মিলি আপা। তবে শিরির সাথে কোন কথা বলেনা সে। চুপচাপ দেখে চলে যায়। আজ তোয়া এসেছে শিরিকে দেখতে। অবশ্য শিরিকে দেখাই ওর মূখ্য উদ্দেশ্য নয়। আর মাসখানেক বাদেই ওদের এসএসসি পরীক্ষা। সেটা নিয়ে আলাপ করাই এখন মূল উদ্দেশ্য। কয়েকদিনের মধ্যেই স্কুলে যেতে হবে। খোঁজখবর নিতে হবে। প্রবেশ পত্র কবে দেবে না দেবে সেটাও জানতে হবে। সিট কোথায় পড়েছে জানা দরকার। তিনজনের সিট যেন একসাথে পড়ে সেজন্য ওরা সিরিয়াল করে ফর্ম জমা দিয়েছে।
সাবা জানাল, শিরির টেনশনে গত তিনচার দিন ওর লেখাপড়া হয়নি। সব শিকেয় উঠেছিল। এখন বাকি দিনগুলো রাত জেগে জেগে পড়ে সেটা কভার করতে হবে। শুনে তোয়া মন খারাপ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুখ নামাল। সাবা ওকে লক্ষ্য করে বলল, ” তোর কী হয়েছে রে ? আসার পর থেকেই দেখছি। এত মন খারাপ কেন ? পরীক্ষার চিন্তায় ? ”
-” তা তো আছেই।” তোয়া প্রানপনে দীর্ঘশ্বাস চাপল।
-” আমার কিন্তু এরকম মনে হচ্ছে না। আমাদের মধ্যে তুই সবচে ভাল ছাত্রী। তোর স্কোরও ভাল। সে তুলনায় সায়রা একটু ডাল। চিন্তা হলে ওর হবার কথা। এর মধ্যে দার্জিলিং গিয়ে বসে আছে। কবে ব্যাক করবে কে জানে। ”
-” শুনিস নাই, ম্যাডাম বিয়ে করেছে ওখানে। ওর এসএসসি পরীক্ষা তো এবার বারসাত মির্জা নেবে।” ভ্রু নাচিয়ে বলতে গিয়ে এবার সামান্য হাসল তোয়া। সাবা রীতিমত থ’ বনে গেল। বোকার মত বিস্ফারিত চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল, ” বলিস কী এসব ? সায়রা বিয়ে করেছে আর আমি জানিনা ? ”
-” রাগ করিস না দোস্তো। সায়রা ফোন করে তোকে বলতে বলেছিল আমিই ভুলে গেছি। কী করব তুইই বল। একে তো তোদের বাড়ির এই অবস্থা। তোকে পাওয়া দুষ্কর। তার উপর আমি যে কী বিপদে পড়েছি তা আমিই জানি। একটা সময় ছিল যখন আমরা তিনজন একে অন্যের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়তাম। একটা জোট ছিলাম আমরা ত্রয়ী। কিন্তু মাত্র অল্প ক’দিনেই আমরা কেমন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম দ্যাখ। তোর এতবড় সমস্যা গেল অথচ আমি বা সায়রা তোর পাশে নেই। ঐ দিকে সায়রা নিজের পারিবারিক সমস্যা নিয়ে একা একাই খাবি খাচ্ছে। মা খালার চাপাচাপিতে বিয়ে করতে বাধ্য হল এক দার্জিলিং অলাকে। আমরা দুজন ওর পাশে নেই। আর আমার সাথে যা শুরু হয়েছে। সেটাও আমাকে একা একাই ফেস করতে হচ্ছে। বুদ্ধি পরামর্শ দেবার জন্য তুই আর সায়রা পাশে নেই। আমাদের এমন হল কেন বল তো ? এত তাড়াতাড়ি আমাদের ত্রয়ী গ্রুপটা তিন টুকরো হয়ে গেল কেন বুঝলাম না। অথচ আমাদের চুল পাকেনি চামড়ায় ভাঁজ পড়েনি। ভেবেছিলাম বিয়ে হলে বুড়ো হলে হয়ত তিনজন তিনদিকে যাব। এখন দেখছি মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে আমরা তিনজন তিনদিকে ছিটকে পড়েছি। কেউ কারো বিপদে পাশে থাকতে পারছিনা। এমন কেন হল আমাদের ত্রয়ীর ?” তোয়াকে দেখে মনে হল ও সত্যিই কেঁদে ফেলবে।
সাবা লম্বা করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নাড়ল, ” তুই ঠিকই বলেছিস রে। আমাদের ত্রয়ী গ্রুপের উপর মবদনজর লেগেছে। কী অসম্ভব এক হয়ে ছিলাম আমরা। প্রতিটা দিন একজন আরেকজনকে না দেখলে শান্তি পেতাম না। অথচ এখন সপ্তাহ পেরিয়ে যায় দেখা হয়না।”
তোয়া চোখ মুছে শিরির দিকে তাকাল। মেয়েটা তিনদিনেই হাড় জিরজিরে হয়ে গেছে। কণ্ঠের হাড় বেরিয়ে এসেছে আর চোখগুলো বড় বড় দেখাচ্ছে। আলতো করে ওর মাথায় হাত রাখল তোয়া, ” যাই শিরি। ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করো আর যে ভুল একবার করে ফেলেছ। বাকি জীবন আর এই ভুল করো না। তাহলে তোমাকে সত্যিকারের খারাপ মেয়ে বলেই গণ্য করবে সবাই।” তোয়া উঠে দাঁড়ালে সাবা বলল,
-” সায়রা কী তাহলে পরীক্ষা দেবেনা এবার ? ”
-” দেবে তো। আজ ওর আকদ হলে আর হয়ত দু’দিন ওখানে থাকবে। তিনদিনের দিন ওর বর নিজেই ওকে ঢাকা পৌঁছে দেবে। ও তো আমাকে এটাই বলল ফোনে। ও ঢাকায় এলে আমরা তিনজন একসাথে প্রবেশ পত্র তুলতে যাব বুঝেছিস? ”
-” হম।” সাবা সায় দিল। তোয়ার হঠাৎ মনে পড়েছে এমনভাবে বলল, ” ওহ্, ভাল কথা। বলতেই তো ভুলে গেলাম। সামনের মাসের ফার্স্ট উইকে আমাদের র্যাগ ডে। যাবিনা ? ”
-” দেখা যাক। এখনও নিশ্চিত না। একগাদা টাকা চাইবে পার্টি করার জন্য। আমার হাতে এখন টাকা নাই।”
-” টাকার জন্য আটকাবে না। আমি ভাবছি সায়রা না এলে আমরা দুজনও যাবো না। ও এলে তিনজন একসাথে যাব। ঠিকআছে ? না করিস না প্লিজ। এসএসসির পর কে কোথায় চলে যাই।”
-” হমম…!” ফের দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাবা তীক্ষ্ম চোখে তোয়ার দিকে তাকাল। ” সেই তখন থেকে তোকে দেখছি বিষাদের করুণ বিউগল বাজাচ্ছিস। কাহিনী কী একটু বল তো। সায়রা নেই তাতে কী, আমি যদি তোর কোন কাজে আসতে পারি তাহলে আমি সেটা করব। কী হয়েছে আমাকে বল না।”
তোয়া মুখ নামাল। চোখ থেকে টপটপ পানি পড়ছে ওর। সাবা একবার শিরির দিকে তাকিয়ে তারপর তোয়ার হাত ধরে টেনে সামনের রুমে আনল। বাবলু স্কুলে। সুরমা আপাও আজ আসেনি। বাড়ি একরকম খালিই বলতে গেলে। সাবা ফিসফিস করে বলল, ” কী হয়েছে আমাকে বলতেই হবে তোর। সামনে পরীক্ষা আর তুই এভাবে গুমরে মরবি তা হতে দেব না। আমাকে বল, তারপর বুঝব এখানে আমার করার কিছু আছে কী না।”
তোয়া হঠাৎ সাবার হাত আঁকড়ে ধরল। মৃদুস্বরে বলল, ” আব্বু এসএসসির পরপর আমার বিয়ে দেবেন বলছেন। তার ঘনিষ্ট বন্ধুর ছেলের সাথে। সেজন্যেই….!”
-” এই কথা ? ” তোয়ার কথার মাঝেই চেঁচিয়ে উঠল সাবা। তারপরই ম্লান হেসে বলল, ” তুই যে মানের সুন্দরী তোর বিয়ে হয়ে যাবে এটাই তো স্বাভাবিক তাই না ? তুই আর সায়রা, তোদের রূপও আছে, বাবার গাঁটের জোরও আছে। তোদের জন্য পাত্রের লাইন লাগবে সেটাই তো হবার কথা। এতে আপসেট হবার কী হল ? নাকি বিয়ের পর পড়াশোনা করাবেনা ওরা ? ”
-” আরে না, পুরোটা না শুনেই তো একগাদা মন্তব্য করে বসলি। আমরা সুন্দর আর তুই বুঝি বান্দর। নিজেকে আয়নায় ভাল করে দেখে তারপর কথা বলিস।”
-” হইসে বাদ দে। দেখসি।” সাবা হাত নাড়ল। ” তোর মন খারাপের কারণটা বল শুনি। সায়রার মত তোরও ছেলে পছন্দ হয়নাই তাই তো ? ”
-” জি না। আমার ছেলে পছন্দ হবার কোন সুযোগই এখানে নাই। আমি তো এখানে কেবল দাবার গুটি মাত্র। ”
-” মানে ? ”
-” মানে সহজ। আমি বিয়ে করলে ছোঁয়া আপুর বিয়ে হবে। নইলে না।” বলে থামল তোয়া। সাবা চুপ করে তাকিয়ে আছে। বোঝার চেষ্টা করছে কথাটা। তোয়া ওর চোখে এসে পড়া পানি গুলো সরিয়ে দিয়ে বলল,
-” জামিল আঙ্কেল বাবার খুব প্রিয় বন্ধু। তার ছোট ছেলে আদনানকে বিয়ে করতে হবে আমার। তাহলেই তিনি তার পঙ্গু বড় ছেলেকে দিয়ে ছোঁয়া আপুকে বিয়ে করাবেন। ছোঁয়া আপুর সমস্যাটা তো তুই জানিস। আপুর আলজিহ্বা ছোট বলে তার কথা বোঝাই যায়না। সে তুলনায় আঙ্কেলের বড় ছেলে পঙ্গু হলেও বাকি দিক দিয়ে সুস্থ। ছোটবেলায় কী একটা দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যান তিনি। জামিল আঙ্কেলের সাথে বাবার বন্ধুত্ব খুব পুরোনো । জামিল আঙ্কেল নিজেই রেখেছেন প্রস্তাবটা । তার বড় ছেলের সাথে ছোঁয়া আপুর বিয়ের বদলে আমাকে তাদের ছোট ছেলের সাথে বিয়ে দিতে হবে এটা তার ডিমান্ড। শুনে বাবা তো মহাখুশি। আমাদেরকে কোন কিচ্ছু না বলেই দুই বন্ধু মিলে এভাবে ক্রশ ম্যাচ করেছে। আম্মু প্রথমে একটু রাগ করেছিল কিন্তু আদনানকে দেখার পর ঠান্ডা। আমার এসএসসি’র পরীক্ষার পর দুটো বিয়ে একসাথে হবে। আপুকে তুলে দেয়া হবে আর আমার আকদ করিয়ে রাখবে। এইচ এস সি’র পর ফাংশান করে তুলে দেবে। আমি কান্নাকাটি করেছিলাম বলে আম্মু বলল, আমি রাজি না হলে নাকি ওরা ছোঁয়া আপুকেও বিয়ে করাবেনা।” বলতে গিয়ে তোয়ার গলা বুঁজে এল। সাবা নিরবে তাকিয়ে আছে তোয়ার দিকে। তোয়া লেখাপড়া ছাড়াও সবদিক দিয়ে চমৎকার একটা মেয়ে। সে তুলনায় ওর বড় বোন ছোঁয়া অসম্পূর্ণ। ওর বিয়ে হচ্ছেনা ওর বাক প্রতিবন্ধীতার জন্য। তোয়াকে দিয়ে জামিল আঙ্কেল কেন বদলাবদলি করতে চাচ্ছেন বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু এটা কেমন শর্ত ? সাবা একটু ভেবে বলল, ” আচ্ছা, তোর জন্য যাকে ঠিক করা হয়েছে সে ঠিক আছে তো ? ”
-” কে ঠিক আছে তো ? আদনানের কথা বলছিস ? না, সে ঠিক নেই।”
-” ঠিক নেই মানে ? ” সাবা চমকে উঠল।
-” ঠিক নেই মানে সে শারিরীক ভাবে সুস্থ কিন্তু মানসিক ভাবে অসুস্থ।” তোয়া মুখ ভার করল।
সাবা ওর হাত ধরল এবার, ” তার মানে পাগল ? ”
-” পাগল না, সেয়ানা পাগল। ইবলিশের খালাত ভাই। আমাকে ফোন করে বলে আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারব না। যেন আমি বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গেছি। আবার বলে, এই কথাটা সবাইকে বলে দিবে। তার মানে সে বলতে পারবে না। ওর হয়ে আমাকে বলতে হবে। আমি কেন বলব তুই বল ? ওকে তো ওর বাপ নাকি বাড়ী থেকে বের করে দেবে বলেছে। তাতে আমার দায় কী? দিলে দিবে। ”
-” বলিস কী। বখাটে নাকি ? বের করে দিবে কেন ?”
-” জানি না। লেখাপড়াও ঠিকমত করেনা বোধহয়। কোনোরকমে বিএ পাশ করে এখন টো টো কোম্পানীর ম্যানেজার। ”
-” হম, এবার ক্লিয়ার। আঙ্কেল তোকে দিয়ে ছোঁয়া আপুর ঘর বসাচ্ছেন আর ঐ লোকও আপাত দৃষ্টিতে সুস্থ কিন্তু অভদ্র এক ছেলের কমতি পুরো করতে তোকে বিয়ে করাচ্ছেন। ”
-” এটাই হতে যাচ্ছে। বাবা আঙ্কেলের কাছে আমার লেখাপড়া নিয়ে খুব গর্ব করেছেন। আমার বৃত্তি পাবার গান শুনিয়েছেন। টেস্টে ভাল করেছি এসব বলেছেন। শুনে জামিল আঙ্কেল বলেছেন আমাকেও তিনি সজীব ভাইয়ার মত ডাক্তারি পড়াবেন। কারণ তার নাকি খুব শখ পরিবারের কেউ ডাক্তার হোক। তাই পুত্রবধূকে ডাক্তার বানাবেন। ”
-” হম, ছেলেকে পারেননি তাই তোকে দিয়ে টোপ ফেলেছে। কিন্তু ছেলেটা তোকে বিয়ে করতে না চাওয়র কারণটা কী ?
-” সে নাকি কাউকে ভালবাসে। তুমুল ভালবাসা।”
-” বাপরে বাপ, এরই মধ্যে নিজের জন্য পাত্রীও যোগাড় করে নিয়েছে ব্যাটা ? ”
-” হম, নিবেই তো। কচি খোকা নাকি। বয়স তো ভালই। মিনিমাম পঁচিশ ছাব্বিশ।”
-” তোকে সে এসব কখন বললো ? ”
-” যেদিন ছোঁয়া আপুকে দেখতে এসেছিল সেদিনই। সুযোগ পেয়েই আমাকে বলে হাত ধুবো বেসিনটা কোথায় ? বেসিনে নিয়ে গেলাম, বলে কিনা ফোন নাম্বারটা দিন, জরুরী কথা আছে। ”
-” বাপরে, একেবারে হিরোইটিক এপ্রোচিং ? ”
-” শোনার পর পর আমিও ঐরকম ভেবেছিলাম। কিন্তু পরে যখন ফোনে ইনিয়ে বিনিয়ে জানাল সে আরেকজনকে পছন্দ করে আমাকে বিয়ে করতে পারবে না তখন একই সাথে খুশিও হয়েছিলাম আবার রাগও লাগছিল। রাগটা এজন্য যে সে কথাটা আমার মুখ দিয়ে বলাতে চায়। কেমন বদ চিন্তা কর।”
-” এখন কী করবি তুই ? ” সাবার এ প্রশ্নে পাঁজর নিংড়ানো দীর্ঘশ্বাস ফেলল তোয়া।
-” এখনও জানিনা কী করব। ”
-” তোর মা’কে বলে দে।’
-” হুঁহ, বলিনি ভেবেছিস ? আমার মা বলে ধনী পরিবারের ছেলেদের পেছনে ওরকম দু চারটা ফেউ থাকেই। কিন্তু আমার মন টানেনা। কোন ছেলে বিয়ে করব না বা পছন্দ করিনা কথাটা বলার পরও আমিই সম্ভবত প্রথম মেয়ে যে বেহায়ার মত বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলে বসে আছি।”

দরজায় টোকা পড়লে দুজনের কথায় ছেদ পড়ল। সাবা উঠে গিয়ে দরজা খুলে অপরিচিত বয়স্ক একজনকে দেখে প্রথমটায় হকচকিয়ে গেলেও পেছনে রাশেদ নামের লোকটাকে দেখে থমকে গেল সে। কয়েক সেকেন্ড স্তব্ধ দাঁড়িয়ে পড়ে সালাম দিয়ে ভেতরে ঢোকার সুযোগ করে দিল। লোকজন দেখেই তোয়া দ্রুত বিদায় নিলে সাবা কিছুটা বেকায়দায় পড়ল। লোকগুলোকে কী বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। তবে ওর অস্বস্তি দুর করল রাশেদ নিজেই। বয়স্ক লোকটিকে দেখিয়ে বলল, ” উনি আমার মামা। মানে, পলাশের বাবা। শিরির সাথে একটু দেখা করতে চান উনি। সেটা কী সম্ভব হবে ? যদি আপনাদের আপত্তি না থাকে। ”
সাবা প্রথমটায় রূঢ় কণ্ঠে প্রত্যাখ্যানের সুরে কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু কী ভেবে সুর নরম করে বলল, দেখা করা হয়ত অসম্ভব হবে না কিন্তু দেখে কী হবে বলুন তো। আর কীইবা দেখবেন। শিরি বেঁচে আছে ভালো আছে।”
রাশেদ কিছুটা অস্বস্তির সাথে দু হাত পকেটে পুরল। ঘাড় ফিরিয়ে একবার আমজাদ হোসেনকে দেখল। রাশেদের ইঙ্গিত বুঝতে পেরে আমজাদ হোসেন মুখ খুললেন।
-” মা, আমি তোমার বাড়ীর বড়দের সাথে একটু কথা বলতে চাই। তোমার মা, বোনজামাই বা অভিভাবক গোছের কেউ। তুমি এ ধরণের আলোচনার জন্য অনেক ছোট। তাই…!”
সাবা অস্বস্তি চাপতে সোফা দেখিয়ে বলল, ” জি, বসুন আমি বড় দুলাভাইকে ফোন দিচ্ছি।” বলে রাশেদের দিকে তাকাল, ” আপনিও বসুন।”

সাবার ফোন পেয়েই বিশ মিনিটের মধ্যে সুরমা আপা চলে এলেন দুলাভাইকে সাথে নিয়ে, তার কিছুক্ষণ পর মিলিও চলে এল। সবাই ড্রইংরুমে কথা বলতে বসলেও সাবা সেখানে গেলো না। সে শিরির পাশেই বসে রইল। শিরি হঠাৎ ফিসফিসিয়ে বলল, ” সাবাপু, আমি পলাশ স্যারকে বিয়ে করবো না । প্লিজ, আপু। তুমি এটা কোনভাবে বন্ধ কর, প্লিজ। ” সাবা তাকিয়ে রইল ওর দিকে। কাঁদবে না রাগ করবে বুঝে উঠতে পারছে না তবে সাবারও মত এটাই।

=====

বিয়ের আয়োজন যত ছোটই বলা হোক না কেন, আয়োজন সম্পন্ন করার পর দেখা গেল এটা বেশ বড় সড়ই হয়েছে। অবশেষে আয়োজনের বহর দেখে উপস্থিত সবাই বলাবলি করতে লাগল পেয়ারী মির্জা তার একমাত্র ছেলের রাজামন্দীতে কাউকে রাখবেন না তা কী হয় ? পেয়ারী মির্জার ফোন পেয়ে নিকটাত্মীয়দের অনেকেই চলে এসেছেন। বিশেষ করে তার আপন চাচাত বোন এবং এককালের সখী চন্দনা পাশা চলে এসেছেন তাঁর দুই ছেলে, বউ আর নাতি নাতনীদের নিয়ে। তবে কামার আগে থেকেই ফ্যামিলি ট্যুরে দার্জিলিং এসেছিল। মেহের আর ওমর পরে যোগ দিয়েছে। বিশেষ করে বারসাতের রাজামান্দি শোনার পর কেউ আর পিছপা হয়নি। যার কারণে মায়ের ফোন পাবার পর ওমর নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে পেয়ারী আম্মির ফাংশানে সে মেহেরকে নিয়ে উপস্থিত থাকবে। হাজার হোক বারসাত তাদেরই কাজিন। ওমরের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে কামার। যদিও তার মনামীকে নিয়ে আজই কোলকাতা ফিরে যাবার কথা ছিল। কিন্তু বারসাতের রাজামান্দী শুনে ওদের সম্পূর্ণ প্রোগ্রাম চেঞ্জ হয়ে গেছে। আজ পুরো পাশা পরিবার গ্রীনফিল্ডে উপস্থিত। কামারকে দেখতে পেয়ে বারসাত নিজেই এগিয়ে গিয়ে হাত মিলালো, পাশা পরিবারকে স্বাগত জানাল। কামার ওর পিঠে আলতো হাত রেখে নিচু স্বরে কুশলাদি জানতে চাইল। পেয়ারী চন্দনাকে তার পুত্রবধূদের সহ ভেতরে মেয়ে মহলে নিয়ে এলেন। যেখানে সায়রা বসে ছিল। বধূর সাজে সায়রাকে অসাধারন আর অপার্থিব মনে হচ্ছিল। চন্দনা নিজেই হেসে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে স্বাগত জানালেন। নিজের পরিচয় দিলেন আর পরিচয় করিয়ে দিলেন মেহের ও মনামীর সাথে। জামিরকে কামার আর মনামীর ছেলে বলে পরিচয় করালেও নাহারকে আলাদা করে কামারের সন্তান বলেন না তিনি। নাহার এখন মেহেরের মেয়ে বলেই সর্বত্র পরিচিত। মনামীও এতে দ্বিমত পোষণ করেনা। বিশেষ করে মেহের সন্তান ধারণে অক্ষম জানার পর থেকে সে নাহারকে অলিখিতভাবে তার সন্তান করেই দিয়েছে। যদিও নাহারকে সে নিজের মেয়ে ভিন্ন অন্য কিছু ভাবেনা। যদি নাহার না থাকত তবে হয়ত তাদের একমাত্র ছেলে জামির পাশাকেই দিয়ে দিত মনামী। কথাটা কামারও জানে। সে কারণেই নাহারকে মেহেরের কাছ থেকে আলাদা করার কথা ওরা কেউ ভাবতে পারেনা।

অনাড়ম্বর বলা হলেও মোটামুটি একটা আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশেই বিয়ে পড়ানো হয়ে গেল সায়রা বাণু বিনতে আমির সানার। কাজী সাহেব স্পষ্ট করেই পিতার নাম উচ্চারণ করলেন আর বারসাত সেটা কবুল করে নিলো। নীলিমা সেটা বাংলাদেশে বসেই অনলাইনে দেখতে পেলেন। আমির সানা আর মঈনও তার পাশেই বসে ছিল। তিনজনেই চুপচাপ বসে আছেন। সায়রা একে একে আমির সানা ও মঈনের সাথে কথা বললেও নীলিমার সাথে কথা বলার সময় ফোন রেখে দিলে নীলিমা বেশ কষ্ট পেলেন। আরেকবার কান্নায় ভেঙে পড়ে কান্নাভেজা কণ্ঠে বিড়বিড় করে বলতে লাগলেন, “ও তো ইকবালের মেয়ে। তাই ওর মতোই নিষ্ঠুর। মায়ের দিকটা একবারও দেখলো না মেয়েটা। ”
-” ওকে একটু সময় দাও নীলি, সব ঠিক হয়ে যাবে। ” আমির সান্ত্বনা দিলেন নীলিমাকে।

রাত গভীর হতে চলেছে তারপরেও বিয়েবাড়ীর জৌলুস এতটুকু ম্লান হয়নি। বরং উৎসব এখন পূর্ণ যৌবনা। সবাই গল্পগুজবে মাতোয়ারা। বারসাত আর সায়রা পাশাপাশি বসে আছে ফুলেল স্টেজে। অতিথিরা একে একে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করে যাচ্ছে আর উপঢৌকন দিয়ে যাচ্ছে।
ও ঘরে পেয়ারী মির্জা চন্দনা পাশার সাথে গল্পে মেতেছেন। এক পর্যায়ে চন্দনা নিজেই স্বাভাবিক কৌতুহল থেকেই জানতে চাইলেন ইকবাল সানার ব্যপারে। পেয়ারী বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে হাসিমুখেই বলে দিলেন, ” হ্যাঁ, ইকবাল সানার মৃত্যুর পর আমির সানার সাথে বিয়ে হয়েছে নীলিমার। আর এটা হতেই পারে। ” চন্দনা তৎক্ষণাৎ চুপ করে গেলেও মনের ভেতর খটকাটা রয়েই গেল। তার জানামতে, ইকবাল সানা বিয়ে করেছেন বলে শোনেননি । পারিবারিকভাবে অনেক বিচার সালিশও হয়েছিল সেসময়। পরিবারের সবার বড় ভাই হিসেবে সেই বিচারে অংশ নিয়েছিল জিমদাল পাশা নিজেই। সেদিন জিমদালের মুখেই শুনেছিল চন্দনা, ইকবাল নীলিমার সাথে তার সম্পর্ককে স্বীকার করেনা। এর কিছুদিন পরেই ইকবাল সানা মারা যায়। পারিবারিক সম্মান অক্ষুন্ন রাখার জন্য সেদিন আমির সানাকেই ভূমিকা নিতে হয়েছিল। সায়রা কী তবে আমির সানার মেয়ে ? কিন্তু তা কী করে সম্ভব ? হিসেব মেলাতে গিয়ে চন্দনার কপালে ভাঁজ বাড়ল যখন তিনি সায়রার মুখের দিকে ভাল করে তাকালেন। সেউ উজ্জ্বল গৌরবর্ণ ত্বক, টিকালো নাক আর জোড়া ভুরু। কাউকে যেন বলে দেবার দরকার নেই এটা ইকবাল সানারই মেয়ে। ভাবতে গিয়ে মনে মনে শিউরে উঠলেন চন্দনা।

বারসাত তার নবপরিনীতাকে নিয়ে আজ ঢাকা ফিরছে তবে এবার আর গাড়ীতে নয়, প্লেনে। সামনের মাসেই সায়রার পরীক্ষা। পেয়ারী মির্জার মতে জার্ণির ধকলটা ওকে পোহাতে না দেয়াই উচিত। তাই সায়রাকে উড়িয়েই নিতে যেতে হচ্ছে বারসাতকে। সায়রার খুব ইচ্ছে ছিল গাড়িতে করে ইনজয় করতে করতে যাবে। আসার পথে টেনশনের কারণে কোন মজাই করতে পারেনি। ভেবেছিল ঢাকা যাবার পথে ঘুম রেলস্টেশনে আরেকবার মুখোমুখি হবে বারসাতের। অনেক না বলা কথা বলবে কিন্তু শ্বাশুড়ি আম্মির কড়া নির্দেশ। সায়রাকে এয়ারপোর্ট থেকে ওর বাসায় নামিয়ে দিয়ে সোজা যেন ইস্কাটন ব্যাক করে বারসাত। এমনকি তিনি ছেলেকে একথাও বারবার মনে করিয়ে দিতে ভৃুলেন নি যে, সায়রার সাথে তার কেবল রাজামন্দী হয়েছে কেবল, বারাত যায়নি। বারসাত মৃদু প্রতিবাদ করতে গিয়েও কয়েকটা দিক ভেবে চুপ করে গেছে। নিরবে মেনে নিয়েছে নিজের ওপর চাপিয়ে দেয়া মায়ের পাষাণী আদেশ। তবে সায়রা আজ অনেকটা উচ্ছ্বসিত। একটু আগেই বারসাতের অনুরোধ মেনে মায়ের সাথে ফোনে কথা বলেছে সায়রা। পুনর্মিলন ঘটেছে মাতা কন্যার। বাংলাদেশে পা রেখেই গাড়ীতে বারসাতের টাই টেনে ধরেছে সায়রা। আব্দারের সুরে বলেছে, ” আমার প্রথম পরীক্ষার দিন থাকবেন না আপনি ? পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে ? ”
বারসাত হেসে বলেছে, ” ও ইয়েস, সেদিন তো ডাব হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ইজন’ট দ্যাট ? আর কী কী নিযে দাঁড়াতে হয় বলে দাও।” বারসাতের এটুকু কথাতেই সায়রা তার হাসি থামাতে পারছিলো না। কিন্তু বারসাত তখনও অস্বস্তি ভুগছে। সে এখনও জানেনা দার্জিলিং ফিরে গিয়ে কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় ওকে। কারণ বিয়ের আগের আম্মি আর গতকালকের আম্মিকে এক ব্যক্তি মনে হয়নি ওর।

=====

আজ এস.এস.সির প্রথম পরীক্ষা। ত্রয়ীদের পরীক্ষা বেশ ভালই হয়েছে। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওদের তিনজনের সিট এবার এক ক্লাসে পড়েনি। সাবা আর সায়রা এক ক্লাসে। বেচারী তোয়া একা আরেক ক্লাসে। পরীক্ষা শেষে ওরা নিজেদের খুঁজে বের করতে গিয়ে অন্য তিনজনকে পেয়ে গেল। তবে তিনজনের অভিব্যক্তি তিন রকমের।

সায়রা বারসাতকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই বলল, ” ওয়াও, আপনি এসেছেন ? ডাব কোথায় ? আপনি বলেছিলেন ডাব হাতে দাঁড়িয়ে থাকবেন।”
বারসাত মৃদু হেসে বলল, ” ডাব আনার দরকার কী। চলো তোমাকেই ডাবের সামনে নিয়ে যাই। যে কয়টা ইচ্ছা খেতে পারবে।” সায়রা হেসে বান্ধবীদের খোঁজে এদিক সেদিক তাকাল।

এদিকে সাবা পরম বিস্ময়ের সাথে রাশেদকে বলল, ” আপনি এখানে ? কেউ পরীক্ষা দিচ্ছে নাকি আপনার ?
-” হম, দিচ্ছে তো একজন। দেখি কোশ্চেন পেপার দেখি ? ” সাবা ইতস্তত করে কোশ্চেন বের করে দিলে ভ্রু কুঁচকে সেটা দেখে কোশ্চেনের উপর আঙ্গুল বুলিয়ে জানতে চাইল রাশেদ,
-” এটার উত্তর কোনটা দিয়েছেন? ” সাবা বোকার মত একবার রাশেদের দিকে তাকিয়ে তারপর কোশ্চেনের উপর কলম ধরে দেখাল।
-” এটা। ”
-” হম, গুড। আর এটা? ”
-” ডি নম্বরটা।”
-” ভেরি গুড। এটা ? ”
-” আপনি কী আরেকবার আমার পরীক্ষা নিচ্ছেন নাকি ? ”
-” কেন, দিতে আপত্তি আছে ? ” রাশেদ ঠান্ডা মাথায় কথাটা বললে সাবা তাকিয়ে রইল। উত্তরটা জানা নেই তার।

তোয়ার অবস্থা বাকি দুই বন্ধৃুর তুলনায় নিদারুণ শোচনীয়। সে গেটের সামনে আদনান আর ওর গোলুমোলু বান্ধবীকে দেখে মাথা থেকে পা পর্যন্ত জ্বলে উঠল। ঐ পায়েই মুখ ঘুরিয়ে ফিরে যাচ্ছিল কিন্তু আদনান দেখতে পেয়েই হাত তুলে ডাক দিল।
-” এ্যাই, মেয়ে। এই যে, আমি এখানে। ”
তোয়া উপেক্ষা করার সুযোগ না পেয়ে বিরস ভঙ্গিতে ফিরে এল। ম্লান মুখে সালাম দিল দুজনকেই। আদনান পরিচয় করিয়ে দেবার ভঙ্গিতে বলল, ” এই যে, ইনি। মাই লাভ। ওর কথাই তোমাকে বলেছিলাম। আমার বান্ধবী শিরিন। আর শিরিন, ও হলো তোবা।” আদনানের চেহারায় স্পষ্ট বিরক্তি। তোয়ার পিত্তি জ্বলে গেল। তবু মুখোভাবে ভদ্রভাব খানা ধরে রেখে বলল।
-” আমার নাম তোবা না তোয়া। তোবা কারো নাম হয়না। এটুকু তো জানা থাকা উচিত আপনার।”
-” ওহ্, তাই তো। সেদিন নাম শুনেই তিনবার তোবা বলেছি। এটা কোন নাম হলো? ইয়ে, শিরিন, চিনেছ তো ওকে। ও হলো আমার বাবার…!” তোয়া আদনানকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ” তার আগে বলুন, আপনি এখানে কেন? ”
-” আবার কেন, তোমার হবু শ্বশুর মানে আমার ফাদার জোর করে পাঠালেন। বলে কিনা বৌমার পরীক্ষা শুরু হয়েছে। যা উৎসাহ দিয়ে আয়।”
-” ওহ্, ” দমে গেল তোয়া। শিরিন মেয়েটা বলল।
-” আদনান আর আমি অনেক পুরোনো বন্ধু। তৃুমি হঠাৎ করে আমাদের মাঝখানে এসে পড়ায় আমি যথেষ্ট আপসেট তোয়া। তোমার প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে প্লিজ, কোনভাবে বিয়েটা ভেঙে দাও। আদনানকে আমি কারো সাথে শেয়ার করতে পারবো না।”
-” আমি তো শেয়ার চাইছি না। বরং আমি নিজেই বিপদে পড়ে গেছি। তাছাড়া যে কাজটা আপনি নিজেই করতে পারেন সেটার জন্য আমাকে ফোর্স করছেন কেন বুঝলাম না।” তোয়া আদনানের দিকে তাকাল। আদনান চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল।
-” পারলে তো আর আপনাকে বলতাম না।” বলেই সে শিরিনের দিকে তাকাল, ” শিরু, কী করবে কর তো। আচ্ছা, একটা কথা এখন যেহেতু বেচারির পরীক্ষা চলছে । এসব কখা নাহয় এখন থাক। এক কাজ করা যাক, ওর শেষ পরীক্ষার দিন আমরা তিনজন একত্রে বসি। এটা নিয়ে একটা ভারি আলোচনা হওয়া দরকার, কী বলো তোয়া ? ”
-” তা ঠিকআছে কিন্তু আমারও একটা অনুরোধ আছে আপনার কাছে। আর সেটা হলো আপনি আমাকে আর কখনও তুমি করে বলবেন না। ”
-” ওহ্, তাই নাকি ? আসলে তুমি মানে আপনি তো বাচ্চা মেয়ে তাই…।”
-” সেটা আপনার কাছে কারণ আপনি বয়সে আমার অনেক বড়। কিন্তু আমার নিজের একটা অবস্থান আছে। আপনি চাইলেই আমাকে তুমি বলতে পারেন না। ” অনিচ্ছাসত্ত্বেও কথাগুলো বলল তোয়া। ব্যাটা এক নম্বরের ফাজিল । প্রেমিকার সামনে বাহাদুর সাজে আর জায়গামত সাহস নেই। একে এভাবেই নাকাল করা উচিত। কথা শেষ করেই তোয়া শিরিনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি চলে এল। পেছন ফিরে একবারও তাকাল না। তাকালে হয়ত দেখতে পেত লোকটা অস্বস্তি ঢাকতে পেছন ফিরে দাঁড়িয়েছে। হয়ত ভাবেনি প্রেমিকার সামনে এভাবে অপদস্থ হতে হবে । একে কী বেচারা বলা যায় ?

~প্রথম খন্ড~
~সমাপ্ত~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here