ত্রয়ী পর্ব ৩

0
1235

ত্রয়ী
মোর্শেদা হোসেন রুবি

৩||
– আজকেই দেখা করবে মানে ? উনি কী জানে তুই এখানে ? ” সাবা জিজ্ঞেস করলে সায়রা কিছুটা ইতস্তত করে বলল,
-” না, তা জানেনা। শুধু বলেছে মুভি শেষ হলে তিনটা সাড়ে তিনটার দিকে প্রেসক্লাবের সামনে আসবে। এদিকে নাকি কী কাজ আছে। কাজ শেষ হলে ফোন দিবে। তখন আমাকে ওনার সাথে দেখা করতে হবে। তার একটাই কথা। হয় ঠিকানা দাও আর নয়ত আমার সাথে বাইরে দেখা কর।
-” বাপরে, এ তো দেখি বিরাট আশিক । কী করবি এখন ? কিছু ভেবেছিস? তোয়া বলল।
-” কী আর ভাবব। দেখা তো করতেই হবে। দেখা করে পুরো ব্যপারটা বুঝিয়ে না বললে তো ঝামেলাটা থেকেই যাচ্ছে। ” সায়রাকে বিরক্ত মনে হল।
-“আচ্ছা, ব্যাটা সব শুনে যদি বলে বিয়েতে রাজী হও নইলে তোমার বাবাকে বলে দেব, তখন কী করবি ? ” বলে তোয়া সাবার দিকে ফিরল। ” কী রে, ভুল বললাম ? ”
-” নাহ্, ঠিকই বলছিস। এরকম সম্ভাবনাই বেশী। সায়রার এই ব্যটারে নিয়া সিরিয়াসলি ভাবা উচিত।” সাবা বিজ্ঞের মত মন্তব্য করল।
-” সিরিয়াসলি আবার ভাবে কেমনে ? বিয়ে করতে কস নাকি ? ”
-” করে ফেল। ভালোই তো। পার্মানেন্ট বয় ফ্রেন্ড পেয়ে যাবি। রোজ সিনেমা যাবি, চাইনিজ খাবি আর চান্নিপসর রাইতে…!”
-” হম, তোরে কইসে। বিয়ে করলে এসব কিচ্ছু হয় না। খালি ঝগড়া হয়। আমার কাজিন টাজিন যে কয়টাকে দেখলাম সবগুলার একই কাহিনী। জামাই বউকে সন্দেহ করে আর বউ জামাইকে। ওদের দেখলে বিয়ের শখ চলে যায়। ”
-” সত্যিই, আমার আজব লাগে। ঝগড়াই যখন করবি তো বিয়ে করা কেন ? তবে আমার দুলাভইটা ভাল। আপার সব কথা শোনে। “তোয়া ঠোঁট উল্টালো। ” আমার অবশ্য এসব বিয়ে ফিয়ে করতে ইচ্ছে করেনা। আমি অনেক লেখাপড়া করে জীবনে কিছু হতে চাই। এয়ারহোস্টেস, পাইলট, ডাক্তার। এরকম কিছু। আমার দেশ বিদেশ ঘুরতে খুব খুউব ভাল্লাগে।” দুই হাত একত্রিত করে শিহরিত কণ্ঠে বলল সাবা। তোয়া সায়রার দিকে তাকাল, ” তোরও কী একই কাহিনী ? ”
-” আর আমার কাহিনী। এখন স্কুলে আছি বলে ক্ষান্ত দিচ্ছে। এস.এস.সিটা হয়ে গেলে কলেজে পড়তে দেবে কিনা সন্দেহ আছে। আমার বাপ-মা ঠিক ধরে বিয়ে দিয়ে দেবে।”
-” কিন্তু তুই বিয়ে করতে চাস না এই তো ? ” তোয়া হাসল।
-” চাইনা তা না। এখনই চাই না। আরেকটু বড় হই। গ্রাজুয়েশন করি। এখনই বিয়ের কী।” বলতে গিয়ে মুখ নামাল সায়রা।
-” হমম..!” শব্দ করে একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোফায় কাত হল তোয়া । ঘুম ঘুম লাগছে ওর। কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলে হয়ত ঘুমিয়েই পড়বে।
-” তোর কথা তো বললি না তোয়া । জীবন নিয়ে তোর স্বপ্ন কী। ” পা দিয়ে ওকে গুঁতো দিলে তোয়া একচোখ খুলল। ঘুম ঘুম আবেশে বলল, ” আমার স্বপ্ন তোদের চেয়ে আলাদা। ”
-” কীরকম ? ” সায়রা আগ্রহী হল। ” তারমানে তুই দেশের প্রসিডেস্ট হবি নয়ত সাইন্টিস্ট। এই তো?”
-” কচু। এসব হয়ে লাভ নেই। চুল পেকে অকালেই বুড়ো হয়ে যাব। তারচে হুজুর টাইপ কাউরে বিয়ে করব যে আমাকে চাকরী বাকরি করাবে না, বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবে আর ভালবেসে সব কাজ করে দেবে। আমি বাবা আরামপ্রিয় মানুষ। আমার এমন জামাই দরকার যে আমাকে শোকেসে তুলে রাখবে। ও কাজ করবে আর আমি খাব দাব ঘুমাব। ” বলে আরো আয়েশ করে শুলো তোয়া । ওর বলার ভঙ্গিতে সাবা আর সায়রা হেসে ফেলল।
-” আর পোলাপান দিয়ে ক্রিকেট টিম যে বানাবি এটা তো বললি না।” সাবা হি হি করে হেসে উঠল।

এমন সময় বেল বাজলে তিনজনই প্রায় লাফিয়ে ঊঠল। দ্রুত এলোমেলো পোশাকগুলো টেনে টুনে ঠিক করে ভদ্রস্থ হয়ে বসল তিনজন। সায়রা অভ্যসবশতঃ ওড়নাটা মাথায় প্যাঁচাল। এসময় একজন বয়স্কা ভদ্রমহিলাকে উঁকি দিতে দেখে তিনজনেই দাঁড়িয়ে পড়ল ওরা। তোয়া সবার আগে সালাম দিলে বাকি দুজনও ওকে অনুসরণ করে সালাম দিল। বয়স্কা ভদ্রমহিলাটি হাসিমুখে ওদের দিকে তাকালেন। হাতের ইশারায় বসতে বললেন। তোয়ার দিকে তাকালেন, ” কেমন আছ তোয়া ? অনেকদিন পর দেখা হল। ভাল আছ? তোমার আম্মা ভালো আছে ? ”
-” জি, আন্টি। আমরা সবাই ভাল আছি । ”
-” ওরা কী তোমার বান্ধবী ? তোমরা দাঁড়িয়ে কেন, বসো না। ”
-” জি, আমরা একসাথে একই স্কুলে পড়ি।” বলে তিনজনই সুবোধ বালিকার মত বসে পড়ল।
-” আচ্ছা তাই নাকি। ভাল খুব ভাল।” বৃদ্ধা নিজেও একটা সোফা দখল করে বসলেন। আপন মনেই মেয়ে আর নাতনী সম্পর্কে কয়েকটা কথা বললেন যা একজন সুখী নানুমনির মুখেই মানায়। ওরা তিনজন কী প্রতিউত্তর করবে ভেবে না পেয়ে নিরবেই বসে রইল। হঠাৎ মনে পড়েছে এমন ভঙ্গিতে বয়স্কা জানতে চাইলেন, ” ওহ্, তোমরা সবাই খাওয়া দাওয়া করেছ তো ? আমি জিজ্ঞেস করতেই ভুলে গেলাম। ”
-” জি, আন্টি খেয়েছি।” তোয়া উত্তর দিলে ভদ্রমহিলা সন্তুষ্টচিত্তে মাথা নেড়ে সায়রা আর সাবার দিকে তাকালেন। সাবার দিকে তাকিয়ে কয়েক সেকেন্ড স্থির থেকে বললেন,
-” তোমার বাসা কোথায় ? ”
-” জি, আমি ? ” সাবা থতমত খেয়ে গেল। সায়রার দিকে একবার তাকিয়ে বলল, ” আঁ…আজিমপুর। ”
-” ওও….বাবা কী করেন ? ”
-” বাবা নেই আমার। ”
-” ও, আচ্ছা। ভাইবোন ক’জন ? ”
সাবা অস্বস্তির সাথে তোয়ার দিকে তাকাল। বলল, ” আমরা পাঁচ ভাই বোন। ভাইটা ছোট। ফোরে পড়ে। ”
-” হম…!” মাথা দোলালেন ভদ্রমহিলা। ” ভাড়া বাসা না নিজেদের ? ”
-” নিজেদের। দাদা বাড়ীর অংশ আরকি। ”
-” সংসার চলে কী করে ? ” স্থির ভঙ্গিতে প্রশ্ন করে চললেন বয়স্কা। সাবার মনে মনে বিরক্ত হলেও উষ্মা চেপে উত্তর দিল। এই একটা জিনিস ভারি অস্বস্তি লাগে সাবার। কিন্তু কিছু করার নেই।
বয়স্কা মাথা নেড়ে এবার তোয়ার দিকে তাকালেন, “কণা জেনেছে যে তোমরা এসেছ ? ওর সাথে কথা হয়েছে ? ”
-” জি, আন্টি। ময়না নিজেই জানিয়েছে কনা আপাকে। উনিই আমাদের বসতে বলেছেন। ”
-” খুব ভালো করেছে। ঠিক আছে। থাকো তোমরা।” বলে উঠতে গিয়েও কী মনে হতে ওদের দিকে তাকালেন, ” বাসায় জানে তো তোমরা এখানে ? চিন্তা করবে না তো ? ”
-” আ…আমার বাসায় করবে। আমি এখন চলে যাব আন্টি।” মাঝখান থেকে সায়রা বলে উঠলে সাবাও সুর মেলাল, ” আমাকেও যেতে হবে। আম্মু টেনশন করবে নইলে।”
তোয়া দুই বান্ধবীর দিকে তাকিয়ে সামান্য অস্বস্তির সাথে বলল, ” ওমা, তোরা গেলে আমি আর একা থেকে কী করব। আমিও যাবো। ”
-” বাহ, তোমরা তিনজনই দেখি চলে যেতে চাইছ। নাকি আমাকে দেখে মত বদলালে? ”
-” আরে না না আন্টি। এমনিতেও আমাদের যেতে হত। এখানে পাশেই কিছু বই কিনতে এসেছিলাম তো সেকারণেই আসা।” তোয়া ফ্যাকাশে হাসলে বয়স্কাটি প্রশ্রয়ের হাসি হাসলেন, ” এরকম বয়স আমরাও পার করেছি। হুটহাট এদিক সেদিক চলে গেছি। তবে তোমাদের মত এত সহজ ছিল না ব্যপারটা। যাই হোক, তোমরা চাইলে বসতে পারো। কণা সন্ধ্যার দিকে চলে আসবে। আমি একটু বিশ্রাম নেব। ”
-” না, আন্টি। আমরা বরং যাই। বেশী দেরী দেখলে বাসায় চিন্তা করবে।” সায়রা এবার উসখুস করে উঠল।
-” তোয়া তুমিও কী যাচ্ছ। তুমি নাহয় থাক। তুমি এখনই যাবে কেন। এসেছ যখন কনার সাথে দেখা করেই নাহয় যাও। ”
-” না, আন্টি। আজ থাক। আরেকদিন।” তোয়া হাসল। বয়স্কা সবার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বিদায় নিলেন। সাবাকে বললেন, ” আবার এসো কিন্তু তোমরা। ”
-” জি, আসব। ”

গলিটা এসময় নির্জনই থাকে। আবাসিক এলাকা বলেই কী না কে জানে। অফিস পাড়া বলে সেভাবে আলাদা করে বোঝা যায়না। ত্রয়ীর দলটা হাঁটছে। তিনজন অকারণেই এ ওর গায়ে গড়িয়ে পড়ছে হাসতে গিয়ে। ওদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠল শেষ বিকেলের নির্জন পাড়াটা।
হাঁটতে হাঁটতেই একটা মুদি দোকান পেয়ে সাবা থামাল ওদের। তিনটা চিপস কিনে ফের হাঁটা ধরল। গলির শেষ মাথায় গিয়ে রিক্সা নেবে এমনই ইচ্ছে আছে। সাবা চিপস মুখে পুরে সায়রাকে কনুই দিয়ে গুঁতা দিয়ে বলল,
-” তোর হইলেও হইতে পারে জামাইরে ফোন দে না। চারটা তো বাজে। এখনও ব্যটার খবর নাই। বড় ইরেসপন্সিবল প্রেমিক দেখা যায়।”
-” একদম ঠিক। আই এগ্রি উইথ ইউ।” চিপস খেতে খেতেই সাবার সমর্থনে মাথা নাড়াল তোয়া।
সায়রা সাথে সাথেই ঘুরে দাঁড়িয়ে তর্জনী তুলে শাসাল, ” দেখ বাজে বকবি না। সে না আমার হবু জামাই না প্রেমিক। আলতু ফালতু কথা বলে একদম মাথা গরম করবি না। ”
-” ও বাবা, হঠাৎ একেবারে ক্ষেপে গেলি দেখছি।” তোয়া অবাক হয়ে সাবার সমর্থন খুঁজল। সাবা পুরোপুরি নির্বিকার। সে তার নিজের মোবাইলে ব্যস্ত। সায়রা কিছু বলার আগেই ওর ফোন বাজল।
স্ক্রিণে আরমানের নাম দেখে প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে রিসিভ করার বদলে কট করে কেটে দিলে দুই বান্ধবীই চমকে তাকাল।
-“ওমা, কাটলি যে ? তাকে জানাবি না ? ” সাবা বিস্মিত।
-” লাগবেনা। এখন ফোন ধরলেই ওর সাথে দেখা করতে যেতে হবে। আমার আর দেখা করতে যাবার মুড নেই।” সায়রা কপাল কোঁচকাল।
সাবা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাঁধ নাচাল, ” দেখিস, পরে আবার ঝামেলায় না জড়াস। আচ্ছা, আমি গেলাম , বাই। ”
-” তুই কী এখান থেকেই রিক্সা নিবি ?” বলে সায়রা নিজেই চারপাশে রিক্সা খুঁজল।
-” হ্যাঁ, তোরা দুজন তো একসাথে যাবি। কাজেই চিন্তা নেই। আমি এখান থেকেই রিক্সা নেব। অপরিচিত এলাকা। তার উপর একা। ”
-” তাহলে তুই রিক্সা নে আগে। তারপর আমরা পরে নিচ্ছি।” তোয়া বলল।
-” বাই দা ওয়ে, কাল তো স্কুল বন্ধ। কাল কী তাহলে দেখা হবে না ? ” সাবার চোখে হতাশা।
-” কেন হবে না। সকাল সকাল তোয়ার বাড়ী চলে আয়। আমিও চলে আসব সেখানে। তিনজনে সারাদিন আড্ডা দেব।” সায়রা ভ্রু নাচালে সাবা অবাক হয়ে তাকাল।
-” তোর বাড়ী থেকে এলাউ করবে ? ” সাবা সায়রাকে বোঝার চেষ্টা করছে। ওর মুড বোঝা মুশকিল। এইমাত্র বিরক্ত হল আরমানের ফোন পেয়ে। এখনি আবার তোয়াদের বাড়ি আড্ডা দেবার কথা বলছে। সবসময় বলে বাড়ী খুব কনজারভেটিভ আবার এখন নিজেই বলছে কাল ছুটি মানাবে তোয়ার বাড়ীতে। ওর মনে যে কখন কী চলে বোঝার উপায় নেই।
-” তোয়াদের বাড়ী শুনলে আম্মু কিচ্ছু বলবে না। মামাও এলাউ করবে। তাছাড়া আব্বু ঢাকায় নেই। করাচী গেছে বড়ফুপুর বাড়ী। কাজেই আমি এখন আজাদ কাশ্মীর।এলাউ করবে না মানে ?” সায়রা কপট ভঙ্গিতে মুখ শক্ত করলে তিনজনই হেসে ফেলল। অমনি সায়রার হাতের ফোনটা বেজে উঠল। সাবা ওর পিঠে মৃদু চাপড় মেরে বলল, ” যাহ্, এমন করিস না। রিসিভ কর । যা বলার বলে মামলা খাল্লাস কর। কেমন আজব তুই। ”
-” ওফ্, সাবা। আমি ওকে ততটা পছন্দ করিনা কতবার বলব এককথা ? ” প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে মুখ কোঁচকাল সায়রা। সাথে সাথেই তোয়া ওর মুখে তর্জনীর অগ্রভাগ পুরে ঢং করার মত করে বলল, ” তাহলে আমাকে দিয়ে দে।”
-” মানে ? কেমনে দিমু ? ” সায়রা বোকার মত তাকাল। সাবা দুই হাত কোমড়ে রেখে বলল, ” বুচ্ছি। সাজান ছবির সালমান খানের মত, ঠিক না ? অই তুই লাত্থি চিনোস ? ”
-” কেন, লাত্থি দিবি কেন ? তুই নিবি নাকি যে ? “তোয়া সিরিয়াস হল।
-” ছ্যাহ্, আমার একটুও পছন্দ হয়নি। হাফ লেডিস।”
-” এ্যাই, বাজে কথা বলবিনা।” তোয়া কপট ধমকের সুরে বলল।
-” আচ্ছা, বললাম না। কিন্তু তুই যে নিবি বললি সেটা কীভাবে, বল তো একটু শুনি ?”
-” কেন, নাটক নভেল সিনেমাতে যেমনে নেয় সেমনে।”
-” সিস্টেমটা কী সেটা ক না। ” সাবা ফের কোমড়ে হাত রাখল।
-” সিস্টেমটা এখনও ভাবিনি। ”
-” হমম, কনাপাদের বাসায় বললি, পাইলট হবি, এয়ার হোস্টেস হবি ? আর এখন প্রেমিক ভিক্ষা চাস। ফইন্নি। ” সাবা রাগ ঝাড়ল।
-” কারণ আমার কাছে ওনাকে ভাল লেগেছে। আর পাইলট তো কালকেই হইতেসি না। এগুলো হবার জন্য আমাকে আরো কয়েক বছর পড়াশোনা করতে হবে। তার আগে গায়ে হাওয়া বাতাস লাগাতে পারবো না এসব মান্ধাতা আমলের চিন্তা ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদেরকে।”
-” কী জানি, আমি তো তার সাথেই প্রেম করব যাকে বিয়ে করব।” সাবা ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করল।
-” আহারে, কী আমার সাধু সন্নাসী। প্রেম করার পর যদি দেখিস বিয়ে হলো না। তখন কী করবি ? ” তোয়ার পাল্টা প্রশ্নে সাবা মুখের পানি কুলি করে বাইরে ফেলে দিয়ে বলল।
-” নো প্রব। তাহলে বিয়ে করে প্রেম করব। তবু জনে জনে প্রেম করে বেড়াতে পারব না। এসব দেখলে আমার বমি আসে। ”
-” তোর আসলে ভিক্টোরিয়ান যুগে জন্মানো উচিত ছিল। সায়রা যে পরিবার থেকে এসেছে, এসব কথা ওকে বললে মানায় তোকে না। ” মাথা নাড়ল তোয়া।
-” পরিবার দিয়ে কিচ্ছু হয় না। যার যার রুচি পছন্দ তার তার। আমার এসব খুচরো প্রেমে বিশ্বাস নেই। ব্যস।”
-” আচ্ছা, সময় হলে দেখা যাবে। ঐ যে একটা খালি রিক্সা আসতেসে। জলদি ধর।” তোয়ার কথা শুনে সাবা তাকাল। হাত তুলে ডাকল।
-” এই খালি যাবেন…?”
এর কিছুক্ষণের মধ্যেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল ওদের দলটা । সাবা একা একদিকে আর তোয়া আর সায়রা আরেকদিকে।
====

আজ একটু আগেভাগেই ঈশার নামাজ পড়ে নিল সায়রা। কোনোরকম বাকবিতন্ডা ছাড়া রাতের ভাতও খেয়ে নিল। অন্যান্য দিন হলে এত সহজে ভাত খেতে বসতো না। সারাদিন আজ প্রচুর হাবিজাবি খেয়েছে। পেটটা এমনিতেও ফেঁপে আছে। কিন্তু এ কথা আম্মিকে বলা যাবে না। বললেই বলবে, কোত্থেকে কী খেয়ে আসছিস যে ভাত খাবিনা ? কাজেই আজ এরকম কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হতে দেয়া যাবে না। এমনিতেই য় আছে আরমানদের বাসা থেকে কেউ কোন কথা লাগিয়ে দিল কী না। ভাত খেয়ে নিজের রুমে আসার সময়ই ফোন পেল। আরমান করেছে। সায়রা চারপাশ তাকিয়ে দ্রুত নিজের ঘরে চলে এল। ফোন কানে চেপেই ধমকালো, ” হ্যালো, এত রাতে ফোন করেছেন কেন ? ”
-” তার আগে বলো তুমি আমাকে ওভাবে ব্লাফ দিলে কেন। আমি তোমাকে বলেছিলাম যে আমি প্রেসক্লাবের কাজটা সেরে তোমার সাথে দেখা করব। আর তুমি পুরোটা বিকেল ফোন বন্ধ করে রাখলা। কতবার ফোন দিয়েছি আমি চেক করতো।”
-” আমার চেক করার দরকার নাই । আপনি কী কানে কম শোনেন নাকী সেটা বলেন ? আপনাকে আমি সেদিন বলি নাই যে আমি আপনাদের প্রস্তাবে রাজী না ? ”
-” তাহলে কার প্রস্তাবে রাজী ? ”
-” সেটা আপনাকে বলব কেন ? আপনি আমার সব ব্যপারে নাক গলাবেন কেন ? ”
-” ঠিক আছে। এখন থেকে গলাব না। আমার আম্মাকে বলে দেব যে মেয়ে বিয়েতে রাজী না কারণ সে আজ লাভার নিয়ে সিনেমা দেখতে গেসে। তারপর আম্মা তোমার আব্বুকে কী বলবে সেটা তার ব্যপার।”
-” আপনি কী আমাকে ব্ল্যাক মেইল করছেন।? ”
-” উঁহুঁ, ব্লু মেইল করছি। জানো তো, ভালবাসার রঙ নীল।”
-” একতরফা কখনও ভালোবাসা হয়না।”
-” সিনেমা হলের ভালোবাসাটাও একতরফা ছিল। আমি নিজের চোখে দেখেছি।”
-” ওদের আমরা চিনি পর্যন্ত না। ওরা বখাটে ছেলের দল।”
-” তারমানে তুমি কেবল বাড়ীতেই ধার্মিক সেজে থাকো। বাইরে একা একা সিনেমা দেখে বেড়াও?”
-” আপনার কী ? ”
-” আমার কী সেটা কালই টের পাবে। রাখি।”
-” এই যে, শোনেন। আপনার আল্লাহর দোহাই লাগে আমার বাসায় এসব কিছু বলবেন না। প্লিজ।”
-” তোমাকে বাঁচিয়ে আমার কী লাভ ? ”
-” আমাকে বিপদে ফেলেই বা আপনার কী লাভ বলুন। বলছেন পছন্দ করেন কিন্তু আমাকে ট্র্যাপে ফেলে বাগাতে চাচ্ছেন। মানুষ যাকে পছন্দ করে তার খারাপ কখনও চাইতে পারেনা। ”
ফোনের এপাশটা হঠাৎ নিরব হয়ে গেল। আরমান কিছুক্ষণ নিরব থেকে মৃদু শব্দে বলল, ” আচ্ছা রাখি, কেমন ? ভালো থেকো।” বলামাত্রই ফোনটা কট করে কেটে গেল।
কিছুটা অস্বস্তি হলেও সায়রার যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল। মুখ দিয়ে স্বস্তির বাতাসটুকু বের করে দিয়ে আলমারী ঘেঁটে নতুন থ্রিপীসটা বের করে রাখল। কাল বেরোবার আগে আয়রন করে নেবে। কথাটা ভাবতেই মুখে হাসি ফুটল ওর । আপন মনেই ফিসফিসিয়ে বলল, ” কাল আমি ঠিক আপনার মাথা ঘুরিয়ে দেব মহামান্য ডাক্তার সাহেব। দেখব এই সায়রাকে আপনি কতদিন এড়িয়ে চলেন। মোবাইলের স্ক্রীণের ছবিটা দেখে এক একাই নাক সিঁটকাল। কালকের দিনটা ওর জন্য তাৎপর্যপূর্ণ সন্দেহ নেই।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here