দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_১৫

দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_১৫

#কলমে_লাবণ্য_ইয়াসমিন

হৃদয়ের মধ্যে মধ্যে অনাবিল এক প্রশান্তি কাজ করছে। অবশেষ তাকে পাওয়া গেলো । কিন্তু ওর কাছে ও যাবে কেমন করে। দোতালার বারান্দায় বসে আছে হৃদীতা । ডাকলে যদি কেউ বুঝে যায় তখন তো সমস্যা হবে। ওখানে উঠতে হবে কিন্তু হৃদয় ওখানে উঠবে কেমন করে। তারপর হঠাৎ ওর মনে হলো আমি যদি কিছু একটা শব্দ করি বা ঢিল ছুড়ি তাহলে তো ও বুঝতে পারবে। হৃদয় ভাবনা অনুযায়ী কয়েকবার আওয়াজ করলো কিন্তু ও শুনতে পেলো না তাই ও এবার সেকেন্ড অপসন কাজে লাগালো মানে কয়েকটা ঢিল ছুড়লো। এতে বাধলো অরেক ঝামেলা। হৃদীতা ঢিলের ভয়ে না তাকিয়ে ভেতরে চলে গেলো। হৃদয় রেগে ফেটে পড়ছে আর বকছে। এই বেয়াদব মেয়েটাকে ধরে আচ্ছা করে কানের নিচে কয়েকটা থাপ্পড় দিলে মনে শান্তি লাগতো। পাজি মেয়ে একটা বাড়িতে নিয়ে যায় আগে তারপর বুঝবে কি অবস্থা করি। হৃদয় বকতে বকতে শান্ত হয়ে নিজেকে বোঝালো এখন রাগ করে মাথা গরম করার সময় নয়। ওর কাছে পৌঁছনোর একটা উপায় তো খুজতে হবে। ও কোথায় আছে এটা তো জানা গেলো।চারদিকে খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ ও একটা পানির লাইনের পাইপ দেখতে পেলে। হৃদয় আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ আছে কিনা। বাগান টা বাড়ির পেছনের অংশে তাই এই দিকে মানুষ খুবই কম আসে এটা এটা ভালো দিক ওর জন্য। হৃদয় কোমরে গমছা বেধে নিয়ে উপরে উঠার চেষ্টা করলো কয়েকবার পিছলে গেলো কিন্তু শেষমেশ ও উঠতে সফল হলো। হৃদয় বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। এখুনি রুমে ঢুকতে হবে নয়তো কেউ চলে আসবে তাই ও আস্তে করে পা ফেলে দরজা খুলে ভেতরে চলে আসলো। হৃদীতা এলোথেলো হয়ে মেঝেতে বসে কাঁদছে। হঠাৎ পেছনে দরজা খোলার খটখট শব্দে ও পেছনে তাকিয়ে দেখলো একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। ও আচেনা মানুষ কে নিজের রুমে দেখে ঘাবড়ে গিয়ে চিৎকার দিতে গেলো কিন্তু পারলো না। তার আগেই হৃদয় ওর মুখে নিজের হাত দিয়ে বন্ধ করে দিলো। হৃদীতা জোর করছে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে কিন্তু পারছে না। ওর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। ওর প্রচণ্ড ভয় করছে কি হবে এখন ভেবেই ওর বুকের মধ্যে ধুপ করে উঠলো। হৃদয় এবার ফিসফিস করে বলে উঠলো।

> চিৎকার করছো কেনো? এখানে থাকতে খুব মজা হচ্ছে তাই? থাকো এখানে আমি চলে যাচ্ছি। যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর।

হৃদীতা কন্ঠ টা শুনে অবাক হয়ে গেলো। হৃদয় এসেছে ওকে উদ্ধার করতে ও ভাবতেই পারছে না। বিশ্বাস হচ্ছে না এই অচেনা লোকটার আড়ালে চেনা সেই একজন আছে। হৃদীতা যেনো আশার আলো দেখতে পেলো। ও কিছু না ভেবেই হৃদয়ে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে উঠলো। হৃদয় এক হাত ওর মাথায় রেখে অন্যহাত দিয়ে ওকে জড়িয়ে নিলো। হৃদীতা কাঁদতে আর কিছু বলছে যা ওর কান্না জন্য বোঝা যাচ্ছে না জড়িয়ে যাচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ কান্নাকাটির পর হৃদীতা ওকে হঠাৎ ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। হৃদীতা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আর আড় চোখে বারবার ওকে দেখছে। হৃদয় বিছানায় গিয়ে বসে লাগানো দাড়ি আর চুলটা খুলে নিয়ে মাথায় হাত দিয়ে চুল গুলো ঠিক করছে। হৃদয় কে অদ্ভুত লাগছে দেখতে হৃদীতা শুধু দেখছে। হৃদয় হঠাৎ ওর দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,

> এমনে তাকিয়ে থাকলে আমার লজ্জা করে। আর তোমার দেখা শেষ হলে বলেবে এরা কারা আর তোমাকে কেনো ধরে এনেছে কিছু জানতে পেরেছো?

হৃদীতা ভীষণ লজ্জা পেলো ওর কথা শুনে। তাই মাথা নিচু করেই বলল,

> এখানে একজন লোক আছে উনি আমাকে বিয়ে করতে চান। উনার জন্যই আমাকে এখানে ধরে আনা হয়েছে। আর কিছুই জানিনা।

> বা কি চমৎকার। বুঝলাম না যে দেখছে সেই তোমাকে বিয়ে করতে চাইছে রহস্য কি? সবার চোখ আমার বউয়ের উপর কি ভালো। কয়েকদিন পর তো তুমি সেলিব্রেটি হয়ে যাবে।। (কটাক্ষ করে)

>বাজে কথা বলবেন না। এই লোকটার অন্যকোনো উদ্দেশ্য আছে। উনি এখনো আমার সামনে আসেননি।

> সে আমি দেখে নিবো। যাইহোক এখান থেকে বাইরে যাবো কেমন করে?। ওয়েট একটা ফোন দিয়ে নেই।

হৃদয় পকেট থেকে ফোনটা বের করে ফোন দিলো। একবার ফোন বাজতেই ওপাশ থেকে সঙ্গে সঙ্গে উওর আসলো,

> আপনি ঠিক আছেন তো।

> আমি ঠিক আছি আর হৃদীতাকে ও পেয়েছি। আমরা ভেতরে আছি। আপনারা চলে আসুন।

> ওকে আল্লাহ হাফেজ। সাবধানে থাকবেন। দেখা হচ্ছে।

> আল্লাহ হাফেজ।

হৃদয় ফোন কেটে হৃদীতার দিকে তাকিয়ে দেখলো। এতোক্ষন হৃদীতা ওরদিকেই তাকিয়ে ছিল। হৃদয় তাকাতেই ও চোখ নামিয়ে নিলো। মেয়েটা দুদিনেই কেমন শুকিয়ে গেছে।ওর চোখে আজ কোনো কাজল নেই। হুমায়ুন স্যার মিসির আলী সিরিজের কোনো এক গল্পে বলেছিলেন ফর্সা মেয়েদের কাজলে মানায় না। মূলত কাজল স্যামবর্ণ মেয়েদের জন্য। উনার কথাটা মিথ্যা নয় একদম ঠিক। হৃদয় কথাটা ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ মনে হলো একে দেখার অনেক সময় আছে আগে এখান থেকে জেতে হবে। হৃদয় ওর দিকে তাকিয়ে বলল,

> একটা কথা বলবো?

> জ্বী বলুন অনুমতি নেওয়ার কি আছে?

> ভদ্রলোক তোমাকে বিয়ে করতে চাইছে তাহলে এখানেই থেকে যাও ভালো হবে। আপনি তো তোমাকে কখনও সম্মান দেই না সব সময় অপমান করি। আমার অনেক দোষ।

> আপনি কি সত্যি আমাকে এখানে রেখে যাবেন? আপনি আমাকে নিয়ে যান প্লীজ প্লীজ। আমি কখনও আপনাকে জ্বালাবো না প্রমিজ করছি।। (কান্না করে)

> হুম নিয়ে যাবো কিন্তু আমার কথা মতো চলতে হবে। আমি যা বলবো তাই করতে হবে। (গম্ভীর ভাবে)

> জ্বী আচ্ছা। (মাথা নেড়ে)

> চলো আমার সাথে। এখানে বসে থাকলে ধরা খেয়ে যাবো।

হৃদয় বিছানা থেকে উঠে হৃদীতাকে নিয়ে বারান্দায় আসলো। এখুনি পুলিশ এসে বাড়িটা ঘিরে ফেলবে তাই ওদেরকে আগেই বের হতে হবে। হৃদয় ওকে বোঝালো পাইপ ধরে কেমন করে নিচে নামতে হবে। কিন্তু হৃদীতা বুঝতে পারছে না ওর ভয় করছে। হৃদয় ওকে ধমক দিচ্ছে চেষ্টা করার জন্য। শেষমেশ হৃদয়ের সাহায্যে ও পাইপ ধরে নিচে নামতে পারলো। হৃদয় আর ও বাগানের মধ্যে গাছের নিচে লুকিয়ে পড়লো। তার কিছুক্ষণ পরেই দুইটা গাড়ি এসে থামলো বাড়ির সামনে। গাড়ি থেকে কয়েকজন পুলিশ ভেতরে গিয়ে খুঁজতে শুরু করলো। সারা বাড়িতে হৈচৈ পড়ে গেছে। পুলিশ বাড়ির ভেতরে গিয়ে কাজের লোক ছাড়া আর কাউকেই পেলো না। ওরা হৃদয়কে ফোন দিয়ে বাইরে আসতে বললো। এই বাড়ির মালিক হঠাৎ উধাও হয়ে গেছে ওরা আসার খবর কেমন করে যেনো পেয়ে গেছে। হৃদয় বুঝতে পারছে না ওরা হঠাৎ কেমন করে খবর পেলো। রিয়াতো ওখানে আটক আছে তাহলে খবর কে পাঠালো? লোকটা অনেক চালাক। নিজেকে আড়ালে রেখে আবার আসবে ঝামেলা করতে হৃদয় বুঝতে পেরেছে। লোকটার নাম আর পরিবারের কথা এখানের কেউ জানেনা। সবাই উনাকে মালিক বলেই ডাকে। ভদ্রলোক কিছুদিন এখানে এসে এই বাড়িটা তৈরী করেছেন আর সব কিছুই নিজের বোনের মাধ্যমে। উনি লোকজনেল সামনে আসেননা। বিশেষ গোপন খবরের মাধ্যমে জানা গেছে ভদ্রলোক রাতের আধার ছাড়া চোখে দেখেন না। লোকটা হয়তো দিনকানা। হৃদয় ওই বাড়ি থেকে আসার আগে দুজন কে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিলো। ও প্রমিজ করেছিল সেই দুজকে ও কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে পুলিশের হাতে দিয়ে বলেছে আচ্ছা করে ধোলাইখানাই নিয়ে ধোলাই দিলে সব বলবে।

যাইহোক হৃদয় আর হৃদীতা থানায় গিয়ে সব ঝামেলা মিটিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো। গাড়ি চলছে বাড়ির পথে। হৃদীতা জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে বাইরে। এই দুদিনে ওর মনে হয়েছিল আর কখনও হয়তো বাড়িতে ফিরতে পারবে না ও। এর মধ্যেই হঠাৎ হৃদয়ের ফোন বেজে উঠলো। হৃদয় অপেক্ষা না করেই ফোনটা তুললো। কালাম ফোন দিয়েছে। হৃদয় হাসতে হাসতে কথা বলছে।

> হ্যা কালাম কি খবর

> ভাই এই ঝামেলা টাকে কি আমরা উগান্ডায় চালান করে দিবো?( হেসে হেসে)

> আরে না। একটু হুমকি ধামকী দিয়ে ছেড়ে দে। আর বলে দে এমন জঘন্য কাজ করার আগে যেনো দুবার ভেবে নেই।।

> আচ্ছা ভাই। আপনি আর ভাবি তাহলে বাড়িতে যান এদিক আমি সামলে নিবো। পরে দেখা হচ্ছে। আল্লাহ হাফেজ

> আল্লাহ হাফেজ।

হৃদয় ফোন রেখে গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। আজ দুদিন ঘুম খাওয়া সব লাটে উঠেছিল চিন্তাই। যাইহোক আপাতত এখন শান্তি। হৃদীতা এখনো তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ও বোঝার চেষ্টা করছে কার কথা বলছিল ওরা। হৃদয় হুট করে চোখ খুলে ওর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

> কি ব্যাপার বলোতো আমাকে কি খুব সুন্দর লাগছে?

> মানে? (ভ্রু কুচকে)

> দেখেই যাচ্ছ তখন থেকে তাই বলছি। যাইহোক রিয়াকে আমি কিডন্যাপ করেছিলাম তাই ছেড়ে দিতে বললাম এটাই তো শুনতে চাইছিলে?

> আপনি ক্রাইম করেছেন এটা ঠিক না। আম্মু যদি পুলিশে খবর দেন তখন কি হবে?

> কি আর হবে তোমাকে দেখিয়ে দিবো। ওদের কথা শুনেই তো নাচতে নাচতে চলে গিয়েছিলে। আর এদিকে আমরা টেনশন করে মরছি। জানো তোমার আম্মু আর বোন তোমাকে বিক্রি করে দিয়েছিল। আমার কাছে উপাই ছিল না তাই বাধ্য হয়ে ওকে ধরে এনেছি। তবে ওদেরকে আমি এমনি ছাড়ছি না। জেলের ভাত ওদের জন্য রেডি হচ্ছে।

> খুব সরি। শুনুন না আমি বুঝতে পারিনি ওরা এমন করবে। (মন খারাপ করে)

> হুম এতো সহজে ক্ষমা পাচ্ছ না। তোমার শশুর মশাই হার্ট এটাক দিতো তোমাকে না পেলে বুঝলে। আর আম্মু তো সারারাত ঘুমাই নাই।

> আমার বোকামির জন্য এমন হলো। আমি আর কখনও এমন করবো না।

> ঠিক আছে।

ওদের কথার বলার মধ্যেই গাড়ি থেমে গেলো। হৃদয় বাইরে তাকিয়ে দেখলো বাড়িতে এসে গেছে তাই ওরা নামলো গাড়ি থেকে। হৃদীতা গাড়ি থেকে নামতেই তন্ময়া দৌড়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো।

> কেমন আছো তুমি? কত মিস করছিলাম জানো? আর কখনও এমন করোনা। (কান্না চোখে)

হৃদীতা কোনো কথা বলছে না শুধু হু হু করে কাঁদছে। হৃদয় ওদেরকে রেখে ভেতরে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পরে দীলারা বেগম ও এসে দাঁড়ালো হৃদীতার সামনে। হৃদীতা দৌড়ে গিয়ে দীলারা বেগম কে সালাম দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। সেদিন ও ভুল করেছিল তাই ক্ষমা চাইছে বারবার। দীলারা বেগম ওকে বুঝিয়ে ভেতরে নিয়ে গেলো। হৃদীতা রুমে এসে গোসল করে ফ্রেস হয়ে নিচে নেমে আসলো। অনেক ক্ষুধা পেয়েছে ওর। আজ দুদিন ওর খাওয়া আর গোসল কিছুই হয়নি। খাবার দিয়েছিল ওরা কিন্তু ওর খাবার গলা দিয়ে নামেনি। হৃদীতা খাবার টেবিলে গিয়ে বসতেই সবাই একে একে এসে বসলো। হৃদয়ের বাবা আজ বেশ খুশী। উনি খোশমেজাজে গল্প করছেন নিজের বাবার আমলের গল্প। উনি মাঝে মাঝেই এমন করে থাকেন। হৃদীতা বসতেই ওর শাশুড়ি খাবার তুলে দিলো ওর প্লেটে। হৃদীতা চুপ করে খাবার খাচ্ছে আর গল্প শুনছে। খাওয়া শেষে দীলারা বেগম ওকে নিজের রুমে গিয়ে রেষ্ট নিতে বললো। ও রুমে এসে বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করলো। ওর প্রচণ্ড ক্লান্ত লাগছে। দুদিন ঘুম হয়নি এখন ঘুমাতে পারলে ভালো হবে। বেশ কিছুক্ষণ ঘুমালো কিন্তু হঠাৎ খুটখাট শব্দে ওর ঘুম ভেঙে গেলো তাই ও চোখ খুলতে বাধ্য হলো। ও তাকিয়ে দেখলো হৃদয় ওর আলমারি খুলে কাপড় গুলো সব কুসুমের কাছে দিচ্ছে আর বলছে,

> শোন আমার রুমে সব গুছিয়ে রাখবি।

> ভাইজান আপনার আলমারিতে রাখবো তো?

> তো আমি কি তোকে আম্মুর আলমারিতে রাখতে বলছি। কথা কম কাজ বেশি যা এখন।

কুসুম সব নিয়ে চলে যেতেই হৃদীতা ভ্রু কুচকে উঠে বলো। ও ঘুমঘুম চোখে বললো,

> কি করছেন আপনি? এগুলো কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?

> আজ থেকে তুমি আমার রুমেই থাকবে। কখন কি হয়ে যায় তাই চোখে চোখে রাখতে চাই আমি।

> কি হবে? {অবাক হয়ে}

> তোমার মাথা। কিছু তো বুঝনা গাধা একটা। যাও আমার রুমে গিয়ে যত ইচ্ছা ঘুমাও। আমি একটু বাইরে যাবো কাজ আছে। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে রাতে ফিরবো।

হৃদীতা কিছু বলতে গেলো কিন্তু পারল না তার আগেই হৃদয় চলে গেলো। হৃদীতার কথা দিয়েছে হৃদয়ের সব কথায় ও শুনবে তাই আর ঝামেলা না বাড়িয়ে ফ্রেস হয়ে বাইরে আসলো। দীলারা বেগম রান্না করছে আর কুসুম তাকে সাহায্য করছে। হৃদীতা ধীর পায়ে নিচে এসে সোফায় বসলো। তন্ময়া এই সময় নিজের রুমে পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত আছে। হৃদীতার একটুও ভালোলাগছে না একা বসে থাকতে। তাই ও রান্না ঘরের দিকে উঠে আসলো। ওর জানা আছে ওকে কিছুই করতে দিবে না কিন্তু কিছু করলে সময় টা ভালো যাবে। আর দুদিন চা খাওয়া ও হয়না। চা খেতেও অনেক ইচ্ছা করছে। হৃদীতা রান্না ঘরে ঢুকতেই দীলারা বেগম ওর দিকে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,

> কাজ কিছুই আর অবশিষ্ট নেই করার মতো। তাই এখানে এসে লাভ নেই। বাইরে যাও আমি চা করে আনছি শাশুড়ি বউমা মিলে টিভি দেখবো আর খাবো।

> জ্বী আম্মু। (হাসি দিয়ে।)

হৃদীতা অনিচ্ছা শর্তেও চলে আসলো। সন্ধ্যায় সবাই মিলে বসে আড্ডা দিতে দিতে বেশ রাত হয়ে এসেছে কিন্তু হৃদয় এখোনো ফিরে আসেনি। বাড়িতে সবার খাওয়া শেষ যে যার রুমে চলে গেছে। হৃদয় রাত করে বাড়িতে ফিরে এটা নতুন কিছু না। কিন্তু হৃদীতার টেনশন হচ্ছে। মনে হচ্ছে কিছু একটা হতে চলেছে। ও রুমে পায়চারি করছে আর ভাবছে কি করে ওর খবর নিবে?

অন্যদিকে হৃদয় শাফিনের সাথে দেখা করে বাড়িতে ফিরে আসছে। কথা বলতে বলতে অনেক রাত হয়ে গেছে ও বুঝতে পারেনি। ওর মন আজ বেশ ভালো ফুরফুরে। কয়েকদিনের সব ঝামেলা মিটে গেছে। হৃদয়ের গাড়ি চলছে সেই জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে। হঠাৎ কিছু একটা ওর গাড়ির উপরে এসে পড়লো আর বিকট শব্দ হলো।সঙ্গে সঙ্গে হৃদয় গাড়ি থামিয়ে ফেলল। ওটা গাড়ির উপরে পড়তেই জানালার কাচ গুলো ঝনঝন করে বেজে উঠেছিল। হৃদয় ভাবছে হয়তো কোনো গাছের ডাল ভেঙে গাড়ির উপরে এসে পড়েছে তাই ও গাড়ি থেমে নেমে বাইরে এসে দাঁড়ালো। ফোনের টর্চ লাইট জ্বালিয়ে উপরের দিকে খুঁজে দেখলো কিন্তু কিছুই পেলো না। ও আশেপাশের ভালো করে দেখলো কোথাও কিছু নেই। ও অবাক হচ্ছে কি ছিল ওটা আর কোথায় বা চলে গেলো।। ও যখন কিছুই পেলো না তখন ও গাড়িতে ফিরে আসতে গেলো কিন্তু তার আগেই কিছু একটা ঝড়ের গতিতে ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। হৃদয় ছিটকে দূরে গিয়ে পড়ল। ও হাতে প্রচণ্ড ব্যাথা পেয়েছে তবুও উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। ওর হাতের ফোনটা কোথাও পড়ে গেছে। আকাশে চাঁদ আছে কিন্তু জঙ্গলের মধ্যে তেমন আলো নেই। কোথায় কি আছে তেমন বোঝার ওতো উপাই নেই। হৃদয় দ্রুত গাড়ির কাছে যেতে গেলো কিন্তু আবার কিছু একটা ঘুরতে ঘুরতে ওর দিকে এগিয়ে এসে ধাক্কা দিতে যাবার আগেই একটা মেয়ে এসে ওর সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো।। হৃদয় মেয়েটার মুখ দেখতে পারছে না। এই মেয়েটা মোটেই সাধারন মেয়েদের মতো না। কারণ ওর শরীর থেকে আলোর রশ্মি বের হচ্ছে।। মেয়েটা ওর চোখের পলকে সামনের সেই শক্তিটাকে ঝাপটে ধরে অদৃশ্য হয়ে গেলো। হৃদয় বুঝতেই পারলো না এখানে কি হয়ে গেলো। কিছু একটা ওকে মারতে এসেছিল আর এই মেয়েটা ওকে বাঁচিয়ে দিলো। হৃদয় ভাবছে এ কি সেই যাকে ও নদীর তীরে দেখেছিল। হয়তো কিন্তু মেয়েটা ওকে সাহায্য কেনো করলো।

(ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here