দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_১৬

দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_১৬
#কলমে_লাবণ্য_ইয়াসমিন

হৃদয় দাঁড়িয়ে আছে,একটু আগে এখানে কি হয়ে গেলো এটা নিয়েই ভাবছে ও। মেয়েটা অদ্ভুত ভাবে এসে আবার চলে গেলো কিন্তু কোন দিকে গেলে। হৃদয় খোঁজার জন্য আশেপাশের তাকিয়ে দেখলো কিন্তু দেখতে পেলো না। এর মধ্যেই হঠাৎ ওর মনে হলো ফোনটা যে পড়ে গিয়েছিল ওটাতো নেওয়া হলো না। হৃদয় কথাটা ভেবেই ফোনটা খুঁজতে থাকলো। হৃদয় কিছুদূরে এগিয়ে এসে ফোনটা পেয়ে গেলো। টর্চ অন করা ছিল তাই ওটা পেতে আর ভোগান্তিতে পড়তে হলো না। ও ফোনটা হাতে নিয়ে গাড়ির কাছে ফিরে আসলো। যখন ও গাড়ির দরজা খুঁলতে গেলো ঠিক তখনই একটা মেয়ে মিষ্টি কন্ঠে ওকে ডাক দিলো। হৃদয় পেছনে তাঁকিয়ে দেখলো সেই মেয়েটা ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। হৃদয় অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে। বড়ই সুন্দর আর মায়াবী দেখতে এই মেয়েটা। হৃদয় কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে কারণ ও বুঝতে পারছে এই মূহুর্তে যে ওর সামনে আছে সে কোনো সাধারণ মানবী নয় অন্যকিছু। ওর একটু ভয় ভয় ও করছে। মেয়েটা মিষ্টি করে হেসে ওকে বলল,

> গভীর রাতে এই জঙ্গলে না আসলেই কি নয়?

> প্রয়োজন ছিল তাই। (আস্তে করে)

> সময় জ্ঞান আপনার বড্ড কম। কিছু বলার আর দেবার ছিল আপনাকে। তাই ডেকেছি।

> ঠিক বুঝলাম আপনার কথা। (ভ্রু কুচকে)

> বুঝবেন সময় আসলে ঠিকই বুঝবেন। আপনি মিথ্যা মায়ায় জড়িয়ে পড়ছেন এখান থেকে আপনাকে বেরিয়ে আসতে হবে এতেই আপনার ভালো হবে। আর আপনি ও ওকে নিজের মায়ায় জড়াবেন না। ওকে আমাদের বড্ড প্রয়োজন। আপনার দৃষ্টির অগোচরে সে যে আপনার স্বজাতি নয়। যদিও সে নিজেও তেমন কিছুই জানেনা। তবে সে সবটা জানবে খুব দ্রুত আর ফিরে আসবে আমাদের কাছে।

> মানে কার কথা বলছেন?

> আমার হাতে বেশি সময় নেই। এই বইটা আপনাকে দিতেছি এটা পড়লে সবটা জানতে পারবেন। আর আপনি ও এখুনি চলে যান। কখনও আর রাতে এখানে আসবেন না। সাবধানে থাকবেন।

হৃদয়ের হাতে একটা বই দিয়ে মেয়েটা অদৃশ্য হয়ে গেলো। হৃদয় বইটা নিয়ে দ্রুত গাড়িতে উঠে বসলো।লাল একটা কাপড়ে মোড়ানো বইটা। হৃদয় ভাবলো বাড়িতে গিয়েই বইটা পড়বে। মেয়েটার কথা ওর মাথার উপর দিয়ে গেছে। তবে হৃদয় ওর কথাগুলো নিয়ে বেশ সিরিয়াস। ও দ্রুত গাড়ি নিয়ে বাড়িতে এসে বইটা নিয়ে ওর নিজের রুমে চলে আসলো। হৃদীতা এখনো বসে আছে ওর অপেক্ষায়। হৃদয় রুমে আসতেই হৃদীতা বিছানা থেকে দ্রুত উঠে ওর দিকে এগিয়ে আসলো। হৃদয় ওর চোখেমুখে কেমন অদ্ভুত আতঙ্ক দেখতে পাচ্ছে। মানে ও ভয় পেয়েছে কিছু একটা নিয়ে। হৃদয় ওকে ভ্রু কুচকে জিঙ্গাসা করলো,

> কি ব্যাপার কিছু কি হয়েছে যে এমন ভয় পেয়ে আছো? (বইটা রাখতে রাখতে)

> আপনি ফিরছেন না দেখে ভয় পাচ্ছিলাম। মন বলছিল আপনার কোনো বিপদ হয়েছে। জানিনা হঠাৎ করেই এমন মনে হলো।

> আসলেই হয়েছিল।

> আপনার কি হয়েছিল? কোথাও লাগেনিতো?

> অস্থির হবার মতো কিছুই না। একটু পড়ে গিয়ে হাতে ব্যাথা পেয়েছি। যাইহোক ঘুমিয়ে পড়ো অনেক রাত এখন।( কথাটা লুকিয়ে )

> আপনি ফ্রেস হয়ে আসুন। খাবেন না?

> খেয়ে এসেছি। (বাথরুমে যেতে যেতে।)

হৃদয় বাথরুমে যেতেই হৃদীতা টেবিলের উপরে রাখা জিনিস টা খুলে দেখতে লাগলো। ও কাপড় সরিয়ে দেখলো সুন্দর একটা বই। হৃদীতার কেমন জানি হলো, মনে হলো এই বইটা ওকে পড়তেই হবে যেভাবেই হোক। ও সিদ্ধান্ত নিলো হৃদয় ঘুমিয়ে পড়লে এটা পড়বে তাই ও বইটা যেমন ছিল তেমন করেই রেখে দিলো। হৃদয় বাথরুম থেকে এসে দেখলো হৃদীতা টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। হৃদয় কে দেখেই ও সরে দাঁড়ালো। হৃদয় মুখ মুছতে মুছতে ওকে বলল.

> ঘুমাবে না?

> হুম। কিন্তু কোথায়? আপনি তো বলেছিলেন আপনার কোনো কিছুতেই আমার ছোয়া না লাগাতে।

> বাহ খুব তো আমার কথা মানো। আমাকে ছুয়ে এখন আবার আমার জিনিস ছোয়া নিয়ে সমস্যা? বাংলা সিনেমার নায়কাদের মতো না না না তোমার সাথে আমি ঘুমাতে পারবো না এমন ডায়ালগ না মেরে বিছানায় উঠে যাও আর ঘুমিয়ে পড়ো। মেজাজ খারাপ হলে কিন্তু ছাদে রেখে আসবো তখন বুঝবে।( হুমকি দিয়ে )

> আপনি কি সবাইকে এমন কথায় কথায় হুমকি দেন নাকি শুধু আমাকেই দেন?

> অন্যদের প্রয়োজন পড়ে না। তোমার মতো কি অন্যরা অবাধ্য নাকি?

> ও আচ্ছা। একটা কথা বলতাম।

> হুম বলো

> ও বাড়ির কোনো খবর জানেন? আব্বু কেমন
আছেন কিছু জানেন?( চিন্তিত হয়ে)

> তোমার আব্বু সহজে অসুস্থ হবার পাত্র না বুঝলে? আমাকে দেখলেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। লোকটার মাথা খারাপ।

> আপনি উনাকে নিয়ে কোনো বাজে কথা বলবেন না। উনি আনেন ভালো। আমাকে মানুষ করেছেন। কতো কতো বিপদ থেকে আমাকে আগলে রেগেছেন আপনি জানেন? আমি তো এতিম। একটা এতিম কে মানুষ করেছেন। উনি না থাকলে হয়তো হৃদীতা কোন অতল গহীনে তলিয়ে জেতো তার চিহ্ন ও থাকতো না। (দীর্ঘশ্বাস ফেলে)

> আমার ঘুম ঘুম ভাবটা এমন টেনশন মার্কা কথা বলে কাটিয়ে দিওনা প্লিজ। একটা বই এনেছিলাম কিন্তু আজ আর পড়া হবে না।

কথা বলতে বলতে হৃদয় বইটা আলমারির লকারে রেখে দিলো।হৃদীতার চোখ ওই দিকে। ওর মনের মধ্যে আনচান করছে। ভেবেছিল পড়বে কিন্তু ওতো লক করে রাখলো। কি হবে এবার। হৃদয় পেছনে তাকিয়ে দেখলো হৃদীতা না শুয়ে আলমারির দিকে তাকিয়ে ভাবছে। হৃদয় এসে লাইট বন্ধ করে ড্রিম লাইট অন করে শুয়ে পড়লো। বারবার এক কথা বলতে ওর একটুও ভালোলাগে না। হৃদীতা নিরাশ হয়ে হৃদয়ে পাশে শুয়ে পড়লো। এমনি অনেক রাত হয়ে গেছে তারপর আবার সন্ধ্যায় ঘুমানোর জন্য হৃদীতার ঘুম আসছে না। ও চোখ খুলে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে। ফ্যানটা অনবরত ঘুরছে কেমন শীতশীত করছে। এই রুমে একটাই কম্বল যেটা হৃদয় গায়ে নিয়ে ঘুমিয়ে আছে। জোরে ঘনঘন নিশ্বাসের শব্দ জানান দিচ্ছে ও গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে আছে। হৃদীতার হঠাৎ ইচ্ছা করছে বাইরে ছাদে গিয়ে দাঁড়াতে। কিছুদিন এমন হয়েছে ওর শুধু মনে হয় চাঁদের আলোতে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি আর হাওয়াতে ভেসে বেড়াই। ওর এমন আজব আজব ইচ্ছার জন্য ও নিজেই প্রচণ্ড বিরক্ত হয়। কিন্তু কি করবে?। কানের কাছে সেই ফিসফিস শব্দ টা যে হঠাৎ শুরু হয়েছিল এখন মাঝে মাঝেই হয়। হৃদীতা অনেক কথার মধ্যে শুধু একটা কথায় বুঝতে পারে বাঁচাও আমাদের। হৃদীতা বুঝতেই পারেনা কাকে বাঁচানোর কথা বলা হচ্ছে। আর কে এইসব বলছে। এপাশ ওপাশ করতে করতে ও ঘুমিয়ে পড়লো।

ভোর সকালে ঠান্ডা বাতাসে হৃদয়ের ঘুম ভেঙে গেলো।ও উঠে দেখলো বারান্দার দরজা খোলা আর ওদিক থেকে বাতাস আসছে। কম্বলের এক প্রান্ত ওর গায়ে আর আরেক প্রান্ত হৃদীতার গায়ে। হৃদীতা ওর কাছেই হাত পা গুটিয়ে শুয়ে আছে। হৃদয় ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে উঠে বসলো। গায়ের কম্বল টা রেখে বারান্দার দরজা বন্ধ করতে আসলো। ওর মনে আছে ঘুমানোর আগে সব বন্ধ ছিল তাহলে হঠাৎ এমন খোলা কেনো কে জানে। হৃদয় দরজা বন্ধ করে বিছানায় এসে কম্বল মুড়ি দিলো আবার। হৃদয় ঘুমানোর কিছুক্ষণ পরে হৃদীতা উঠলো। ও তাড়াতাড়ি কম্বল টা ছেড়ে দিয়ে উঠে বসলো। ঘুমের মধ্যে কখন কম্বলের মধ্যে ঢুকে পড়েছে ঠিক পাইনি। হৃদয় দেখলে পেলে কি ভাববে তাই ও আর ঘুমাবে না এখন। হৃদীতা নামাজ পড়ে বাইরে আসলো চা তৈরি করে ছাদে গিয়ে খাবে আর এই চমৎকার সকাল টা উপভোগ করবে। হৃদীতা ভাবনা অনুযায়ী চা নিয়ে ছাদে চলে আসলো। আজ মনটা অনেটাই ভালো। হৃদয় ওর সাথে আর খারাপ ব্যবহার করছে না এটাই ওর জন্য অনেক ভালো একটা দিক। হৃদীতা ছাদে চেয়ার টেনে বসে পড়লো। ও দূরে তাঁকিয়ে আছে আর মাঝে মঝে চায়ের কাপে মুখ ঢুবাচ্ছে। ওর মধ্যে হঠাৎ কারো পায়ের শব্দে হৃদীতা চমকে উঠে পেছন ফিরে তাকাল। হৃদীতা পেছনে তাকিয়ে অবাক হলো কারণ হৃদয় দাঁড়িয়ে আছে হাতে চায়ের কাপ নিয়ে। হৃদীতাকে ও আরও একবার অবাক করে দিয়ে ওর সামনে একটা চেয়ার নিয়ে বসে পড়লো। হৃদীতা শুধু তাকিয়ে দেখছে হচ্ছে টা কি। যেই ছেলে দুপুর পযর্ন্ত পড়ে পড়ে ঘুমাই সেই ছেলে কিনা এতো সকালে ছাদে ভাবা যায়। হৃদীতা ওর দিকে এমন করে তাকিয়ে থাকতে দেখে ও ভ্রু কুচকে বলল,

> আমাকে দেখতে কি সত্যি অনেক সুন্দর?

হৃদীতা বুঝলো হৃদয় কেনো এটা বলেছে তাই ও চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল,

> এতো সকলে আপনি হঠাৎ ছাদে?

> সকালটা কি তোমার একার নাকি? আমারও ঠিক আছে?

> হুম কিন্তু আপনি তো আসেন না আজ হঠাৎ এসেছেন তাই বলছি।

> আমি আগেও এসেছি যখন তুমি ছিলে না। ভেবেছিলাম এখন থেকে প্রতিদিন আসবো। আসার সময় কফি খেতে ইচ্ছা করছিল কিন্তু এতো সকালে আমাকে কে কফি বানিয়ে দিবে তাই দেখলাম কিচেনে চা করা আছে তাই ওটাই নিয়ে এলাম। খেয়েই দেখি আজ কেমন লাগে। তোমার তো চা ছাড়া চলে না।

> আপনি জানেন আমি প্রচণ্ড চা খাই?

> হুম খুব জানি। চলতে পারেনা মেয়ে তবুও চা তৈরী করতে প্রস্তত এটা দেখেও বুঝবো না?

> চা টা আমি এমনি এমনি খাই না। এটার পেছনে একটা কারণ আছে। নাইবা শুনলেন সেসব কথা।( চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে )

> বলো শুনবো। শুনতে ইচ্ছা করছে।

> কি হবে শুনে?

> অনেক কিছুই হবে। একটু বলে থেমে গেলে হবে? আমার এখন সবটা শুনতে ইচ্ছা করছে। বলা শুরু করো।

> যখন আমি খুব ছোট ও বাড়িতে তখন থেকেই টুকটাক কাজ করতাম। আব্বু তো বাড়িতে থাকতেন না তেমন, আম্মু থাকতো। রিয়া আপু আম্মু ওদের সবার নাস্তা করা না হলে আমাকে খেতে দিতেন না। প্রচণ্ড ক্ষুধা পেতো কি করবো বুঝতাম না তাই লুকিয়ে চা খেয়ে পেট ভরাতাম। সকালে সবাই চা বিস্কুট খেতো আর যেটা বেঁচে থাকতো ওটা তো রান্না ঘরেই থাকতো ওটা আমি খেতাম। এমন করে এক সময় এটা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেলো। সকালে উঠে শুধু চা খেয়ে সবার খাওয়া শেষ হলে খাবার খাওয়া। কখনও খেয়েছি আবার কখনো না খেয়েও থেকেছি কখনো কাউকে জানতে দেইনি। আপনাকে হঠাৎ বলে ফেললাম।( ধরা গলাই)

ওর কথা শুনে হৃদয় চুপ হয়ে গেছে। ও ভাবছে এইটুকু এটা মেয়ে এত কষ্ট সহ্য করে লড়াই করে বেঁচে আছে। আর আমি নিজেও ওকে কতো কষ্ট দিয়েছি। একদম ঠিক হয়নি। ও দীর্ঘশ্বাস ফেলে হৃদীতার হাতের উপরে হাতটা রেখে ওর দিকে তাঁকিয়ে বলল,

> খুব সরি আমি না বুঝেই তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। জানিনা ক্ষমা করবে কি না তবে আর এমন করবো না।

> ক্ষমা কেনো চাইছেন আজবতো। আমি আপনাকে অনেক আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি। আপনারা সবাই অনেক ভালো। আপনার পরিবারের লোকজন সবাই আমাকে কতো সুন্দর ভাবে মেনে নিয়েছেন।

> আমি রিয়াকে বিশ্বাস করতাম ও আমাকে তোমার নামে অনেক মিথ্যা বলেছিল তাই রেগে গিয়েছিলাম। হয়তো তুমি আমাকে ঘৃণা করো ভাবো হৃদয় অনেক খারাপ ছেলে। আসলে রাগ কন্টোল করতে পারিনা। রাগ হলে কখন কি করি বুঝতে পারিনা।

> হুম জানি তো আপনি রাগের ডিম্ব। সেদিন হঠাৎ এসেই আমাকে রাস্তায় মধ্যে দিলেন কয়েকটা থাপ্পড় বসিয়ে। (হাসি মুখে)

> আরে ও সব আর বলো না। আমার মাথায় তখন আগুন জ্বলছিল। আমার হাটুর বয়সি একটা মেয়ে আমার চরিত্র নিয়ে আজেবাজে কথা বলেছে শুনে দৌড়ে চলে গেছি।

> আপনার কথা শুনে এখন আমার হাসি পাচ্ছে। (হাসি দিয়ে )

> সেতো এখন পাবেই।

ওদের কথা বলতে বলতেই চারদিকে আলো ফুটে গেলো ওরা নিচে নেমে আসলো। নিচে নামতেই আবাক কারণ আজ বাড়ির অন্যরা সব সোফায় বসে আছে। ওদেরকে এক সাথে নিচে নামতে দেখে তন্ময়া দুষ্ট হাসি দিয়ে বলল,

> বাহ ভাইয়া শেষমেশ তোমারা প্রেমটা তাহলে শুরু করেই দিলে?

> তোর মাথায় শুধু দুষ্ট বুদ্ধি ঘুরছে আমি তো বুঝতে পারছি। আম্মু ওর বিয়ে দিয়ে দাও।।

> আমার বিয়ে নিয়ে তোমাকে ভাবতে হচ্ছে না। এখন নিজের বিয়ে নিয়ে ভাবো। আম্মু বাড়িতে অনুষ্ঠান করে আবার তোমাদের বিয়ে দিবেন বলছে। খুব মজা হবে।

হৃদয় অবাক হয়ে ওর মায়ের দিকে তাকালো। উনি বুঝিয়ে বললেন। আত্মীয় স্বজন সবাই বউ দেখতে চাইছে আর সমাজে তো একটা নিয়ম আছে সবটা পালন করতে হবে তাই উনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আর আজ থেকেই তার তোড়জোড় চলবে। নিমন্ত্রণ পত্র রেডি এখন কার্ড গুলো ঠিকানা অনুযায়ী পৌঁছনোর প্রয়োজন। হৃদয় কোনো প্রতিবাদ করলো না। বিয়ে করেছে এখন সামাজিক স্বীকৃতি দিতে হবে এটা ওর প্রাপ্ত। হৃদয় বসে পড়লো বিয়ের কার্ড পছন্দ করতে। ও আর তন্ময়া কার্ড নিয়ে রীতিমতো ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে। দীলারা বেগম মাঝে আঝে দুজনকেই বকা দিচ্ছে। হৃদীতা চুপ করে সোফায় বসে আছে আর ওদেরকে দেখছে আর ভাবছে এরা কতো ভালো। এতো সুখ কি আমার কপালে সহ্য হবে? নাকি সব ফেলে আবারও কোথাও চলে জেতে হবে? জানি না ভাগ্যে কি লেখা আছে। ভেবে ও দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
সকালের খাবার খেয়ে হৃদয় আর শাফিন বেরিয়ে পড়লো সবাইকে নিমন্ত্রণ করতে। আবার প্রথম থেকে সব নিয়ম মেনেই বিয়ে হবে। গায়ে হলুদ থেকে শুরু করে সব।হৃদয়ের মা নিজের ভাই বোন আর তাদের ছেলেমেয়েদেরকে আগেই বলেছিলো। ওরা আজ বিকালেই চলে আসবে। উনি চান বিয়ে উপলক্ষে বাড়িটা লোকজনে ভরপুর হয়ে উঠুক।
অন্যদিকে হৃদীতা প্রচণ্ড ঝামেলায় পড়েছে তন্ময়া ওকে ইচ্ছা মতো ড্রেস পড়াচ্ছে আর দেখছে কোনটা পড়লে সব থেকে বেশি সুন্দর লাগবে। ও আর কি বাধ্য মেয়ের মতোই হাসি মুখে করে চলেছে কিন্তু ওর মন কেমন অশান্ত হয়ে আছে। শুধু মনে হচ্ছে ওকে কেউ কিছু বলছে আর এখুনি চলে যেতে হবে কিন্তু কোথায় যেতে হবে ও বুঝতে পারছে না। ও জোর করে হাসছে কথা বলছে সবার সাথে। দুপুরে হৃদীয়া আর তন্ময়া বসে আছে। তন্ময়া কথা বলছে আর ও শুনছে। এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো। কুসুম দরজা খুলে দিতেই একটা মেয়ে লাগেজ নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। দেখতে মোটামুটি সুন্দরী কিন্তু পোশাক টা মোটেই সুবিধার না। মেয়েটা এসেই তন্ময়াকে জড়িয়ে ধরলো। তন্ময়া ও বেশ খুশি ওকে দেখে। হৃদীতা শুধু তাকিয়ে দেখছে। মেয়েটা ওর সাথে আলাপ করেই ফুপি ফুপি বলে চিৎকার শুরু করলো ওর চিৎকার শুনে দীলারা বেগম বাইরে বেরিয়ে আসলেন।

> ফুপি কেমন আছো?

> আলহামদুলিল্লাহ ভালো। এতোদিন পরে তোর আসার সময় হলো? (অভিমান করে)

> কি করবো পড়াশোনা প্রচুর চাপ তাই আসতে পারিনাই তবে এখন এসেছি সহজে যাচ্ছি না।

> তা বেশ থাক কিন্তু ভাইজান আসবে কবে?

> বলতে পারিনা তুমি ফোন দিয়ে শুনে নিও। আচ্ছা ফুপি হৃদয় এমন একটা কাজ করলো আর তোমারা সব মেনে নিচ্ছ?

> কেনো সমস্যা কী? তোকে তো আলাপ করানো হয়নি ওটা হৃদীতা তোর ভাবী। (হৃদীতাকে দেখিয়ে)

> ও আচ্ছা এই মেয়েটা?

> মেয়ে কি রে ভাবী বল। হৃদয় কে না হয় ভাইয়া বলতে লজ্জা লাগে হৃদীতাকে অন্তত ভাবী বল নয়তো কিন্তু এবার হৃদয় এসে তোর কান মলে দিবে।

> বউয়ের প্রতি তার এতো টান?

ওর কথা শুনে তন্ময়া হাসলো। এটা হৃদয়ের মামাতো বোন তনুজা সবাই তনু বলেই ডাকে। প্রচণ্ড অহংকারী আর আধুনিকা ও। ওর মনের মতো হলে কথায় নেই কিন্তু যদি না হয় তাহলে ও তাকে একটুও সহ্য করতেই পারেনা। হৃদীতার তনুকে দেখে বেশ ভালোলাগলো।

(ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here