দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_১৭

দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_১৭
#কলমে_লাবণ্য_ইয়াসমিন

তনুজা হৃদীতার দিকে তাকিয়ে ভাবছে দেখতে সুন্দর হলেই কি কাজের মেয়ে মালকীন হয়ে যাবে? হৃদয় কেমন করে এই ভুলটা করতে পারলো আমার মাথাতেই আসছে না। ছেলেটাকে এই মেয়ে ভুলভাল বুঝিয়ে হয়তো বিয়েটা করেছে। হৃদয়ের মতো রাগী আর জেদী ছেলে জিদ করে কাজের মেয়ে বিয়ে করে ঘরে তুলেছে এটা কে বিশ্বাস করবে। ফুপিরা সব পাগল হয়ে গেছে নয়তো কি আর এমন করে। হৃদয় কে বোঝাইতে হবে। বলতে হবে এখনো সময় আছে ওকে ছেড়ে দিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করতে। এই মেয়েকে কিছু টাকা দিয়ে বিদায় করতে হবে। কোথাকার কে এসে সব কিছুর উপর অধিকার বসাবে এটা তো মেনে নেওয়া যায় না। তনুজাকে এমন তাকিয়ে থাকতে দেখে হৃদীতা বেশ লজ্জা পাচ্ছে। তন্ময়া হাসতে হাসতে ওকে ধাক্কা দিয়ে বলল,

> আপু ওর দিকে তাকিয়ে কি দেখছো বলোতো? ভাইয়ার পছন্দ আছে বলতে হবে তাই না?

> তোর ভাইয়ার পছন্দ এমন থার্ডক্লাস জানা ছিল না। কাজের মেয়েকে বউ করে এনেছে।কান্ডজ্ঞান নেই কোনো। (বিরক্ত হয়ে)

> আপু এমন কেনো বলছো? হৃদীতা অনেক কিউট একটা মেয়ে সবাই ওকে পছন্দ করে। আর কাজের মেয়ে কেনো বলছো? বাড়ির টুকটাক কাজ সবাই করে তাই বলে সে কি বাড়ির কাজের লোক হয়ে যাবে? আমার তো ওকে বেশ লাগে।

> তুই বুঝবি না। হৃদয় কোথায়?

> নিমন্ত্রণ করতে গেছে এখুনি এসে যাবে। তুমি রুমে গিয়ে ফ্রেস হও।

>আচ্ছা আমি রুমে যাচ্ছি ফ্রেস হবো।ও ফিরলে বলবি দেখা করতে।

তনুজা লাগেজ রেখে হাইহিলের গটগট আওয়াজ তুলে ভেতরে চলে গেলো। ও চলে যেতেই তন্ময়া হৃদীতার কাছে বসে বোঝালো তনুজার কথায় মন খারাপ না করতে। হৃদীতা হেসে মাথা ঝাকালো। ওর তো এইসব কথা শুনে শুনে অভ্যাস হয়ে গেছে। এখন আর নতুন করে কোনো মন খারাপ হয়না। বাড়িতে লোকজন আসতে শুরু করেছে। হৃদীতা রুমে এসে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। মনটা ভীষন খারাপ মনের মধ্যে কেমন খচখচ করছে। কিছুই ঠিক বলে মনে হচ্ছে না। মন বলছে কিছু খারাপ হতে চলেছে কিন্তু কি সেটা ওর জানা নেই। হৃদয়ের সাথে এই বিষয়ে আলাপ করতে পারলে হয়তো ভালো হতো কিন্তু কি বলবে? এমন এলোমেলো কথা বলে ওকে টেনশনে ফেলা ঠিক হবে না। হৃদীতা চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে দরজায় হেলান দিয়ে। নিজেকে একটু শান্ত রাখার চেষ্টা করছে। যা কিছু হচ্ছে মনের ভুল ভেবে বোঝাতে লাগলো। হঠাৎ একটা ঠান্ডা হাত ওর কাধ স্পর্শ করেতেই হৃদীতা চমকে উঠে পেছনে তাকালো। হৃদয় হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।

> বাহ তুমি তো ভীষণ ভীতু।

> জ্বী না। আমি মোটেও ভীতু নয়। অনেক সাহস আমার।

> হুম সেতো বুঝতেই পেলাম। তো এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো নাকি ভাবছো কোনটা?

> তেমন কিছুই না। একা থাকতে ইচ্ছা হলো তাই উপরে চলে এলাম। আপনি কখনো আসলেন?

> এইতো এইমাত্র। একজন কে নিমন্ত্রণ করতে যেতে হবে যাবে আমার সাথে?

> কাকে?

> যাবে নাকি বলো। যেতে চাইলে চলো নাহলে থাক। (ভেতরে যেতে যেতে)

> গেলে মন্দ হয়না। বাইরে গেলে হয়তো মন ভালো হবে। তন্ময়াকে সাথে নেই?

> জ্বী না। ওর এখন অনেক কাজ। শুনো আলমারিতে একটা শাড়ি আছে কুসুম কে বলছি ও তোমাকে পড়িয়ে দিবে। ওটা পড়ে নিচে আসো আমি অপেক্ষা করছি।

> কিন্তু আপনি যে বলেছিলেন আমাকে শাড়িতে মানায় না।

> তো কি হয়েছে। আচ্ছা তোমার যা মন চাই পড়ে এসো আমি অপেক্ষা করছি নিচে।

হৃদয় বলতে বলতে চলে গেলো। ও চলে যেতেই হৃদীতা মিষ্টি করে হাসলো। হৃদয় ওর জন্য শাড়ি এনে তুলে রেখেছে কথাটা ভাবতেই ওর মনটা আনন্দে ভরে উঠলো। সব খারাপ লাগা নিমিষে উধাও হয়ে গেলো। হৃদীতা লক খুলে শাড়িটা বের করলো। খুব সুন্দর বাসন্তী রঙের সুতি সিল্কের শাড়িটা হৃদীতা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছে। হৃদীতা দ্রুত বাথরুমে ঢুকে ফ্রেস হয়ে নিলো শাড়িটা পড়তে হবে কিন্তু কুসুম আসেনি ওকে শাড়ি পড়াতে। কি করবে ভেবে ও নিজেই পড়তে শুরু করলো। কয়েদিন শাড়ি পড়ে ও কিছুটা হলেও শিখেছে। হৃদীতা শাড়ির সাথে কিছু জুয়েলারি আর দুহাত ভর্তি কাচের চুড়ি পড়ে নিলো। কাচের চুড়ি পড়তে ওর ভালোলাগে। চুড়ির রিমঝিম শব্দের ঝঙ্কার হৃদয়ে অন্যরকম একটা অনুভূতির সৃষ্টি করে। হৃদীতা খুব যত্ন করে নিজেকে সাজিয়ে তুললো তারপর সাবধানে পা ফেলে ধীত গতিতে নিচের দিকে এগিয়ে চললো। হৃদয় সোফায় ওর জন্য অপেক্ষা করছে। তনুজার সাথে দেখা করা হয়নি ওর। ভেবেছিল করবে কিন্তু ওই মেয়েটাকে ওর খুব একটা সুবিধার মনে হয়না। হৃদয় চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। গতকাল শপিংমলে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ একটা শাড়ি দেখে ওর ভীষন পছন্দ হয়েছিল তাই ওটা কিনে এনেছে হৃদীতার জন্য। শাড়িটা পেতে ওকে রীতিমত একটা ছেলের সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছে। ছেলেটা ওর স্ত্রীর জন্মদিনে উপহার দিবে তাই ওটা পছন্দ করছিল তখনই হৃদয় গিয়ে ওর হাত থেকে ওটা নিজের হাতে নিয়ে নেই আর বলে ওটা ও নিবে। ও শাড়ির দামের থেকেও বেশি দাম দিয়ে ও কিনে এসেছে। ছেলেটা অনেক বকেছে কিন্তু হৃদয় পাত্তা দেইনি। পছন্দের জিনিস ছড়ে দেওয়া ঠিক না। দামে কি যায় আসে ভালোলাগার কাছে টাকা পয়সার হিসাব চলে না। একটু খানি ভালোলাগার জন্য মানুষ কতো কিছুই না করছে আর ও তো সামান্য একটা শাড়ি কিনেছে। ভেবেছিল হৃদীতা আজ পড়বে কিন্তু মেয়েটাতো শাড়ি পড়তেই জানেনা। সেতো জানে শুধু কাঁদতে। হৃদয় কথা গুলো ভাবছিল। হঠাৎ হৃদীতার ডাকে ও চোখ খুললো। হৃদীতা দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে। হৃদয় মুগ্ধ হয়ে গেলো যতোটা ভেবেছিল তার থেকেও সুন্দর লাগছে। যদিও সে ততটা ভালো করে শাড়ি পড়তে পারেনাই তবুও চলবে। হৃদয় কে এমন তাঁকিয়ে থাকতে দেখে হৃদীতা নিজের চুড়ি গুলো ওর সামনে নাড়িয়ে দিলো।চুড়ির রুমঝুম শব্দে হৃদয় মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,

> চলো দেরী হচ্ছে। (হাসি দিয়ে )

> হুম এটাইতো বলতে চলেছিলাম আপনাকে।।

হৃদয় উঠে এসে দীলারা বেগম কে ডাকলো বাইরে যাবে তাই বলে যাবে কিন্তু বেরিয়ে আসলো তনুজা।ওকে দেখে হৃদয় মুখটা গম্ভীর করে ফেললো।

> কেমন আছো?

> আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুই কেমন আছিস?

> হুম ভালো। তোমার কি এখন সময় হবে আমাদের খোঁজ নেয়ার।

> হবে না কেনো? যাইহোক আম্মু কোথায় দেখেছিস? (কথা এড়িয়ে )

> রুমে আছে ফুপার সাথে কথা বলছেন। তোমারা কি কোথাও যাচ্ছ?

> হুম একটু বাইরে যাচ্ছি কাজ আছে।

> আমাকে কি নিবা সাথে? আসলে আমার বাড়িতে থাকতে কেমন বোরিং লাগছে। বাইরে ঘুরলে ভালোলাগতো আর কি।

> প্রশ্নই আসে না।তন্ময়া কে বল নিয়ে যাবে। আম্মুকে বলিস বাইরে যাচ্ছি ফিরতে দেরী হবে।

> আমি পারবো না বলতে। তুমি বলো গিয়ে।

কথাটা বলেই তনুজা ঝাড়ি দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। হৃদয় ওর যাবার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললো বেয়াদব মেয়ে। তোকে নিয়ে যাবো পাগল পেয়েছিস? তারপর হৃদীতার দিকে তাকিয়ে বলল,

> পরে আম্মুকে ফোন করে নিবো। আর বলা আছে কিছু বলবে না।

> জ্বী।কিন্তু ওকে নিলেই পারতেন।

> ওকে যখন চিনবে তখন বুঝবে কি জিনিস। তখন আর বলবে না।

ওরা কথা বলতে বলতে গাড়িতে গিয়ে বসলো। হৃদয় গাড়ি ড্রাইভ করছে আর হৃদীতা পাশে বসে আছে। গাড়ি ছুটছে শহরের দিকে। হৃদীতা জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে বাইরে। হৃদয় মাঝে মাঝে ওকে আড়চোখে দেখছে।সারা রাস্তা এমন লুকোচুরিতেই কাটলো ওদের। গাড়ি এসে থামলো একটা রাস্তার পাশে। হৃদয় গাড়ি থেকে নেমে দরজা খুলে হাত বাড়িয়ে দিলো ওর দিকে। হৃদীতা কিছু একটা ভেবে নিজের হাতটা ওর হাতের উপর রেখে বাইরে বের হলো। সময় টা পড়ন্ত বিকাল সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়েছে। ছেলেমেয়েরা জোড়ায় জোড়ায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ি নয়তো ফুসকা নিয়ে মেতে আছে। হৃদয় এখনো ওর হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় ধরে রেখেছে। হৃদীতা অবাক হয়ে দেখছে সব কিছু। ওর এই সময় টা বাইরে কখনও আসা হয়নি। এই সময় বাড়িতে অনেক কাজ থাকে। বসন্তের এলোমেলো বাতাসে মাঝেমাঝে ধুলাবালি ও উড়ছে তবুও ভালোলাগছে ওদের। হৃদয় ওর হাত ধরে সামনে এগিয়ে চললো। হৃদীতা চুপ করে ওকে অনুসরণ করছে। হৃদয় ওকে নিয়ে একটা লেকের পাড়ে এসে দাঁড়ালো। হৃদীতা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,

> আপনি যাকে নিমন্ত্রণ করতে এসেছিলেন সে কোথায়?

> কখন বললাম আমি নিমন্ত্রণ করতে এসেছি? যা বলেছি সেসব ভুলে যাও আর মন খুলে উপভোগ করো যা কিছু দেখছো সবটা।

> ও আচ্ছা আচ্ছা এবার বুঝেছি আপনার নিমন্ত্রণের ব্যপারটা আসলে কি?

> আমি তো ভাবতাম তুমি শুধু কাঁদতেই জানো। এখন দেখছি বুঝতেও জানো। বাহ আরও কতো কি জানো আমাকে যদি জানাতে ভালো হতো।

> একটু একটু করে সব জানবেন।যাইহোক বসবেন নাকি ঘুরবেন?

> বসবো না। আজ সারা বিকাল ঘুরাঘুরি করবো আর রাতে ডিনার করে বাসাই ফিরবো।।

> তন্ময়া কে মিস করছি খুব। আসলে খুব ভালো হতো।

> জানি দুজন মিলে আমাকে বোরিং করে তুলতে তাই ওকে রেখে এসেছি। এখন বকবক করলে আমার সাথেই করো।

> জানেন আপনাকে আমি আগে ভীষন ভয় পেতাম জানিনা ভয়টা কেমন দিন দিন কেটে যাচ্ছে।

> ব্যাপার কি আমার প্রেমে টেমে পড়ে যাওনি তো আবার?

> আপনি ও না।( লজ্জা পেয়ে)

হৃদয় আর ও হাসছে আর কথা বলছে। আজ হৃদয়ের মন অনেক ভালো। বন্ধুদের সাথে অনেক ঘুরাঘুরি করে কিন্তু এমন টা আগে কখনও হয়নি। এই লেকটাতে ওর হাজার বার আসা হয়েছে তবুও আজ মনে হচ্ছে নতুন। সব কিছুতেই আলাদা একটা সৌন্দর্য্য খুজে পাচ্ছে। সারা বিকাল ওরা ঘুরলো আর গল্প করলো। সন্ধ্যায় ওরা শপিংমলে গিয়ে কিছু কেনাকাটা করলো। রাতে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাবার খেয়ে ফিরতে ফিরতে ওদের প্রায় রাত দশটা বেজে গেলো। হৃদীতার মধ্যে যেই জড়তা ছিল সেটা অনেকটাই কেটে গেছে। ও মন খুলে হৃদয়ের সাথে কথা বলছে কোনো সংকোচ ছাড়া। হৃদয় শাফিনের থেকে বুদ্ধি নিয়েছিল হৃদীতার মনের ভয় কেমন করে কাটাবে তাই ও এই বুদ্ধি টা দিয়েছিল। যাইহোক হৃদয় বেশ খুশি শাফিনের উপরে। ভাবছে ছেলেটার বুদ্ধি আছে বলতে হবে। হৃদয় কথা গুলো ভাবছে আর মিটিমিটি হাসছে। হৃদীতা ঘুমে ঢুলছে। অনেক সকালে ঘুম থেকে উঠেছিল সারাদিন অনেক ধকল গেছে তাই ও ক্লান্ত হয়ে গাড়ির মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লো। হৃদয় ওকে আর ডাকলো না।
বাড়িতে পৌঁছে হৃদয় ওকে কোলে করেই রুমে নিয়ে গেলো। এই কোলে তুলে রুমে আনার পেছনেও একটা কারণ আছে। রেস্টুরেন্টে থেকে বের হবার সময় হৃদীতার পায়ের সাথে প্যাঁচ লেগে শাড়িটা খুলে গিয়েছিল। তখন কোনো রকমে শুড়িটা গুছিয়ে জড়িয়ে পড়ে ছিল। এখন যদি ও হেটে আসে তাহলে সবাই দেখবে কেমন একটা বাজে ব্যাপার হবে তাই এই বুদ্ধি টা। ঘড়িতে রাত এগারো টা বাজে বাড়িতে সবাই জেগেই আছে। হৃদয় সাবার সামনে দিয়েই ওকে নিয়ে এসেছে। তনুজা ওদের এমন করে ফিরতে দেখে বিরক্ত হলো কিন্তু অন্যরা বেশ খুশি। হৃদয় ওকে রুমে রেখে নিচে আসলো গাড়িতে শপিং ব্যাগ গুলো রাখা আছে। হৃদয় ওগুলো নিয়ে ভেতরে আসতেই দীলারা বেগম হাসিমুখে বললেন।

> বাহ আমার ছেলের দেখি বেশ উন্নতি হয়েছে। তা বাবা তোমার সেই রাগ কোথায় গেলো? (মজা করে)

> রাগ হাওয়ায় উড়ে গেছে। তোমার কি মনে হয় আমি শুধু রাগ করতেই জানি?

> হুম আগে তো তাই জানতাম যাইহোক অনেক ঘুরাঘুরি হয়েছে এখন রুমে যাও। সকালে অনেক কাজ আছে।

হৃদয় ওর মায়ের সাথে কথা বলে উপরে চলে আসলো। হৃদীতা ঘুমাচ্ছে হৃদয় ও এসে ওর পাশে ঘুমিয়ে পড়লো। সেদিন জঙ্গল থেকে আনা বইটা ওর আর পড়া হয়নি। ওটার কথা ও বেমালুম ভুলে গেছে। গভীর রাতে হঠাৎ হৃদীতার কান্নার শব্দে হূদয়ের ঘুম ভাঙলো। হৃদয় তাঁকিয়ে দেখলো হৃদীতা বারান্দায় কান্নাকাটি করছে। হৃদয় তাড়াতাড়ি পাশ ফিরে নেমে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। হৃদীতার মুখ দেখা যাচ্ছে না পেছন ফিরে দাড়িয়ে আছে। ওর চুল গুলো বাতাসে উড়ছে। হৃদয় চিন্তাত হয়ে দ্রুত ওর পাশে গিয়ে ওর কাধে হাত রাখলো। হাত রাখার সাথে সাথে হৃদীতা কান্না বন্ধ করে দিলো কিন্তু পেছন ফিরলো না। হৃদয় ভ্রূ কুচকে ওকে প্রশ্ন করলো

> এই কি হয়েছে কাঁদছো কেনো? আমার দিকে তাঁকাও।

হৃদীতা কোনো উত্তর করলো না কিন্তু হৃদয়ের হাতটা ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিয়ে পেছনে ঘুরে তাকালো। হৃদয় ভয় পেয়ে গেলো কারণ এটা হৃদীতা নয় অন্যকেউ। মেয়েটা রাগে ফুসতে ফুসতে বলে উঠলো,

> তোকে বারবার বলার পরও কথা শুনছিস না কেনো? সামনে তোর জন্য ভয়ানক খারাপ দিন অপেক্ষা করছে। প্রস্তুত হয়ে যা।

> কে আপনি? এখানে কী আপনার? হৃদীতা হৃদীতা কোথায় তুমি। (পেছনে ঘুরে)

হৃদয় চিৎকার করে হৃদীতাকে ডাকছে।ওর চিৎকারে হৃদীতার ঘুম ভেঙে গেলো ও দ্রুত উঠে এসে হৃদয় কাছে এসে দেখলো হৃদয় একা দাঁড়িয়ে আছে। হৃদীতা এসেই ওর হাত ধরলো

> কি হয়েছে আপনার? এমন করে ডাকছেন কেনো?

> তুমি কি এখানে কাউকে দেখেছো?

> কৈ না তো।

> হৃদীতা কিছুদিন ধরে আমার সাথে অস্বাভাবিক কিছু ঘটনা ঘটছে। বুঝতেই পারছিনা এইসব কি হচ্ছে আমার সাথে। প্রথম যেদিন তোমাকে ওই বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে গিয়েছিলাম তখন থেকে এমন হচ্ছে। আচ্ছা তোমার সাথেও কি এমন হচ্ছে? (মাথায় হাত দিয়ে )

> আমার সাথে যা হয় কোনো কিছুই স্বাভাবিক হয়না। বিয়ে থেকে শুরু করে সব কিছুই অস্বাভাবিক ঠিক আছ? ঘুমের মধ্যে চলে এসেছেন আর ভুলভাল কী দেখতে কি দেখেছেন ঠিকনাই। কোথাও কেউ নেই চলুন রুমে যাবেন।

> হুম।তুমি যাও আমি আসছি।

> না আপনি আমার সাথেই যাবেন।

হৃদীতা ওকে বুঝিয়ে রুমে নিয়ে আসলো। হৃদয় ভাবলো হয়তো হৃদীতার কথায় ঠিক। এই সব নিয়ে ভাবলে চলবে না। আধুনিক যুগের ছেলে হয়ে এই সব অস্বাভাবিক আজে বাজে কি সব চিন্তা করছি। এইসব যদি একবার শাফিন জানতে পারে তাহলে এলাকায় আর মুখ দেখানো যাবে না। ও সবাইকে জানিয়ে দিবে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ও আবার ঘুমিয়ে পড়লো।

(চলবে)

(ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here