দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_১৮
#কলমে_লাবণ্য_ইয়াসমিন
অন্যদিনের তুলনায় সকালে আজ দেরিতে ঘুম ভাঙলো হৃদীতার। হৃদয় এখনো ও ঘুমিয়েই আছে। ও আড়মোড়া দিয়ে উঠে বসে নিজের দিকে তাঁকিয়ে অবাক হয়ে গেলো কারণ পরণের শাড়ির কিছুই ঠিক নেই। তারপর হঠাৎ ওর গতকাল রাতের কথা মনে পড়লো রেস্টুরেন্ট থেকে বের হবার সময় খুলে গিয়েছিল লোকজন আর জায়গার অভাবে ওটা আর পড়া হয়নি। কোনো রকমে জড়িয়ে এসেছিল। ভাবলো হৃদয় হয়তো ওকে রুমে এভাবেই এনেছে আর রাতে হৃদয়ের কাছে যাওয়ার সময় এতো খেয়াল ছিল না। হৃদীতা আর সময় নষ্ট না করে দ্রুত বাথরুমে চলে গেলো। হৃদয় জেগে গেলে সম্মান নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে। যেই মুখ হয়তো বলে বসবে কেমন মেয়ে তুমি নিজের কাপড় ঠিক রাখতে পারোনা। অপবাদ দিয়ে বসবে তুমি মেয়েই না। হদীতা চেঞ্জ করতে করতে ভাবলো শাড়ি পড়াটা এবার ভালো করে শিখতে হবে। মাঝে মধ্যেই তো পড়তে হয়। হৃদীতা ফ্রেস হয়ে বাইরে চলে আসলো। নিচে আসতেই দেখলো সোফায় বেশ কয়েকজন বসে গল্প করছে দীলারা বেগমের সাথে। হৃদীতা আসতেই উনি ওর দিকে তাঁকিয়ে হেসে বললেন,
> হৃদীতা এদিকে আসো আলাপ করবে।। তোমরা তো গতকাল ছিলে না তাই আলাপ করানো হয়নি
হৃদীতা ধীর পায়ে সোফায় গিয়ে বসলো উনাদের সামনে। দীলারা বেগম ওকে দেখিয়ে বলল,
> আপা এই হলো হৃদীতা। যাকে দেখতে তোমাদের আসা।আর হৃদীতা এটা তোমার খালা শাশুড়ি আর আমার বড় বোন।
হৃদীতা মিষ্টি হাসি দিয়ে আলাপ করলো।
> আসসালামুয়ালাইকুম খালা আম্মা কেমন আছেন?
> ওয়ালাইকুমাসালাম।আলহামদুলিল্লাহ ভালো। হৃদয় কে দেখছি না কেনো? সে কোথায়?
> ঘুমিয়ে আছে গতকাল অনেক হাঁটাহাঁটি করেছেন আর রাতে ভালো ঘুম হয়নি তাই হয়তো ঘুমাচ্ছেন উনি।
> তা বেশ ভালো।
হৃদীতা উনাদের সাথে বসে গল্প শুনছে। সবাই বেশ ভালো। হৃদয়ের মামি, খালা, খালাতো বোন মিলে কয়েকজন আছে এখানে। তন্ময়া এখনো নিজের রুমেই আছে। ও নয়টার আগে বাইরে আসবে না। তনুজা বাগানে দৌঁড়াদৌঁড়ি করছে। আর কুসুম কে শুধু হুকুম করছে এটা ওটা আনার জন্য। কুসুম প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে গেছে তনুজার উপরে। কিন্তু মেয়েটা বুঝতেই চাইছে না। ওকে আরও কারণ অকারণে শুধু ভেতরে বাইরে দৌড় করাচ্ছে। শেষমেশ কুসুম ছলছল চোখে ভেতরে এসে দীলারা বেগমের কাছে বলে ফেলল,
> খালা আম্মা তনুজা আপা বাড়িতে কবে যাবেন? আপনি তাঁরে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন নয়তো আমারে ছুটি দেন।
> কেনো রে? এমন কথা কেনো বলছিস? মেহমান আসলে কি এমন কথা বলতে আছে?
হৃদয় সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসতে আসতে কথা গুলো শুনতে পেলো তাই ও উত্তর করলো।
> আম্মু বুঝতে পারছো না কেনো বলছে? তোমার ভাইয়ের মেয়ে এক নাম্বারের আলস মহিলা। হুকুম করা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। শোন কুসুম তুই কিন্তু ওর আর কোনো কথায় শুনবি না। ওকে বল যার কাজ তাকেই করতে হবে।। জামিনদার কন্যার অসুবিধা হলে রাস্তা মাপে যেনো
> আচ্ছা ভাইজান।আপনে আমারে বাঁচাইলেন। উফ কি যে ঝামেলা।
কুসুম আচল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো। ওকে আর বোম মেরেও ও ঘর থেকে বের করা যাবেনা। হৃদীতা সোফায় বসে সব শুনছিল। হৃদয়ের মামি বেশ অসন্তুষ্ট হলেন হৃদয়ের এমন কথা শুনে। উনার মেয়েটা এমনি প্রথম থেকেই। তবুও তো উনি তার মা। হৃদয় খাবার টেবিলে গিয়ে বসলো। সকাল সকাল ওর প্রচণ্ড ক্ষুধা পেয়েছে। ওকে বসতে দেখে হৃদীতা উঠে গেলো ওকে খাবার দিতে। দীলারা বেগম রান্না ঘর থেকে এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছেন। এর মধ্যেই তন্ময়া এসে হাজির। ও আবদারের সুরে বললো,
> আম্মু হৃদীতা আজ থেকে আমার সাথে ঘুমাবে। এক বাড়িতে থেকে বিয়ে হচ্ছে কোনো মজাই তো হচ্ছে না। বর সব সময় বউকে দেখলে বিয়ে বিয়ে অনুভূতি হয় নাকি। দূরে থাকলে ভালো হবে।
> আমার ও তাই মনে হচ্ছে বুঝলি? আচ্ছা একটা কাজ কর বরং হৃদীতাকে নিয়ে তোরা কয়েকজন বাইরে আমাদের গেষ্টরুমে চলে যা।( খাবার দিতে দিতে)
> আম্মু কথাটা কিন্তু খারাপ বলোনি। তুমি কুসুম কে বলো আজকের মধ্যেই ওখানে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করতে। আর ভাইয়া তুই কিন্তু বিয়ের আগে একটুও ওদিকে উঁকিঝুঁকি দেবার চেষ্টা ও করবি না। তাহলে কিন্তু তন্ময়া ভীষন ভীষন রেগে যাবে।
> তোরা যা সমস্যা নাই কিন্তু হৃদীতা ওখানে যাবেনা। (খেতে খেতে)
ওদের কথার মধ্যেই তনুজা বাইরে থেকে এসে বসতে বসতে বললো,
> বউকে একা ছাড়তে ভয় পাচ্ছ? শোনো হৃদয় তোমার মতো কাজের লোকদের উপর নজর না অন্যরা দিবে না। লোকের রুচি এতোটাও খারাপ হয়ে যায় নি। তাই এমন নেকামি না করলেও চলবে। (প্লেটে খাবার নিতে নিতে)
>জানিস তো কর্মই ধর্ম। যার কর্ম আছে তার কদর আছে কিন্তু তোর মতো অচল জিনিসের প্রতি মানুষের নজর একটু কম।? তাই তোকে নিয়ে ভয় না করলেও আমার বউকে নিয়ে আমার যথেষ্ট ভয় আছে বুঝলি? কে আর চাই এমন শোপিস ঘরে নিয়ে তুলে রাখতে। আমি তো চাইবো না।( হাসি দিয়ে )
তনুজার এখন প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। হৃদয় ওকে উচিৎ একটা জবাব দিয়েছে আর অপমান করেছে সবার সামনে বিশেষ করে হৃদীতার সামনে। ওকে অচল বলেছে এটা ও মেনে নিতে পারছে না। এখন ওর খাবার রেখে চলে যেতে ইচ্ছা করছে কিন্তু যাবে না। চলে গেলে তো ও হেরে যাবে। ওকে এর উচিৎ জবাব দিতে হবে। তার জন্য এদের সাথে মিলেমিশে থাকা প্রয়োজন। হৃদীতা দাঁড়িয়ে খাবার পরিবেশন করছে। দীলারা বেগম ওকে বসতে বললো খাবার খাওয়ার জন্য। হৃদীতা অনিচ্ছা শর্তেও বসে পড়লো। খাওয়া শেষ সবাই যে যার কাজে চলে গেলো। এদিকে তন্ময়ার জিদের কাছে হৃদয় হার মেনে নিয়ে ওদেরকে গেষ্টরুমে থাকার অনুমতি দিয়ে দিলো। কুসুম ওদের কাপড় গুলো নিয়ে একে একে ওখানে রেখে আসছে।
হৃদীতা, তন্ময়া, তনুজা আর হৃদয়ে দুজন কাজিন ওরা এখন থেকে বিয়ে পযর্ন্ত ওই বাড়িতেই থাকবে। ওদের সবার দেখাশোনার জন্য কুসুম কে ওদের সাথে রাখা হচ্ছে। আগামীকাল গায়ে হলুদ তাই আজকের মধ্যেই যতোটা পারা যায় আয়োজন শেষ করতে হবে। হৃদয়ের মনের মধ্যে কেমন হচ্ছে। তনুজাকে ওর একটুও বিশ্বাস নেই। মেয়েটা ওর কোনো ক্ষতি না করে বসে জিদের বসে। এই জন্য ও মানা করছিল কিন্তু বাড়ির সবাই যেদিকে মতামত দিয়েছে সেখানে ওর না বলা শোভা পাই না। হৃদীতা ওর প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো গোছাতে ব্যস্ত।হৃদয় সোফায় বসে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছে। মূলত ও ল্যাপটপের দিকে ভান করে তাকিয়ে আছে কিন্তু ওর নজর আছে হৃদীতার দিকে। হৃদীতাকে এমন উৎফুল্ল হয়ে গোছানো দেখে হৃদয় ভ্রু কুচকে বলল,
> বাহ তুমি তো দেখছি ভিষণ খুশি ওখানে যাবার জন্য।
> খুশী না হবার কি আছে। সবাই মিলে এক সাথে থাকবো কতো গল্প করবো আড্ডা হবে। আমার তো ভেবেই নাচতে ইচ্ছা করছে কিন্তু আমি নাচতে জানিনা।( মন খারাপ করে)
> হু বাঁচা গেছে। না জানতেই এই, জানলে না জানি কি হতো। একটা কথা তুমি কিন্তু দক্ষিণের দিকে যেই রুমটা আছে ওটাতে ঘুমাবে ঠিক আছে? আর ওদেরকে নিবে না একা থাকবা।
> কিন্তু কেনো? আমি এদের সাথে থাকলে কি হবে?
> তোমার মাথা হবে। আমি যা বললাম তাই করবে। যদি অন্যথা হয়েছে আমি কিন্তু তোমাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো। (ধমক দিয়ে )
> ওরা যদি না মানে? (মন খারাপ করে)
> মানাবে। যেমন করেই হোক মানিয়ে নিবে। না মানাতে পারলে শাস্তি কিন্তু তুমি পাবে ওরা না। (ভয় দেখিয়ে)
হৃদীতা বুঝলো এই ছেলের কথার বাইরে গেলে কপালে শনি মঙ্গল বৃহস্পতি যা যা আছে সব কিছুই নাচবে। কিছু একটা করতেই হবে। ওকে এমন ভাবতে দেখে হৃদয় তাড়া দিয়ে বলল,
> আমার কথা কি কিছু বুঝেছো? নাকি আবার বলবো?
> বুঝেছি। আচ্ছা আপনি এমন কেনো করছেন?
> আমার ইচ্ছা করছে তাই করছি। যাও ওরা অপেক্ষা করছে। দেখা হচ্ছে খুব দ্রুত।
> আচ্ছা আসছি তাহলে।
হৃদীতা ওর থেকে বিদাই নিয়ে ঘর থেকে বের হতেই ওর মনে হলো এই যাওয়ায় হয়তো ওর শেষ যাওয়া। এই ঘরে ওর আর আসা হবে না।কিন্তু কেনো? এমন কেনো মনে হচ্ছে ও বুঝতেই পারছে না। ওর চোখ দিয়ে আপনা আপনি পানি গড়িয়ে পড়লো। হৃদীতা চোখ মুছতে মুছতে দীলারা বেগমকে সালাম দিয়ে তন্ময়ার সাথে চলে আসলো। এখানে মোট তিনটা রুম। হৃদীতাকে কুসুম হৃদয়ে বলা রুমেই থাকার ব্যবস্থা করেছে। হৃদয় কুসুম কে আগে থেকেই বলে দিয়েছিল। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তনুজা এই রুমটা পছন্দ করেছে। ও এই রুম থেকে বের হচ্ছে না দেখে কুসুম বলল,
> আপা হৃদয় ভাইয়া ভাবির জন্য এই রুমটা ঠিক করেছেন এখন আপনি যদি এখানে থাকেন তাহলে কিন্তু আপনার এই বাড়িতে থাকা আজকের মধ্যেই ঘুচে যাবে। জানেন তো উনি কেমন মানুষ।
তনুজা কিছু ভাবলো তারপর বললো
>আচ্ছা তাহলে আমি তন্ময়ার সাথেই থাকবো। আসলে আমি জানতাম না হৃদয় ওর জন্য এই রুমটা ঠিক করেছে। আমার কোনো কাজের মেয়ের রুমে থাকার ইচ্ছা নাই।
ও যেতেই হৃদীতা বিছানায় গিয়ে বসলো। এই রুমটা ভীষন সুন্দর করে সাজানো। ওর বেশ পছন্দ হয়েছে। কিন্তু এর একটা মাত্র জানালা। তাও বন্ধ আছে। হৃদীতা জানালাটা খুলে দিলো যাতে হাওয়া আসে।জানালা দিয়ে বাগানে দেখা যাচ্ছে। সুন্দর সুন্দর ফুল ফুটে আছে বাগানে। হৃদীতার এই বাগানে যাওয়া হয়নি এখনো। এই বাড়িতে এসে এতো কিছু হয়ে গেলো যে ভালো করে কোনো কিছুই দেখা হলো না। হৃদীতা ভাবলো সকালে অবশ্যই যাবে। চা খাবে আর খালি পায়ে শিশির ভেজা ঘাসের উপরে হাঁটবে অনেক মজা হবে।
অন্যদিকে হৃদয় রুমে বসে আছে। ওর হাতে একটা ডাইরী ওখানে বিশেষ কিছু লেখা নেই। একটা তারিখ দিয়ে তার নিচে ছোট্ট করে লেখা আছে” অনাকাঙ্খিত মেয়েটি জন্মদিন আজ।এই দিনে মেয়েটি পৃথিবীতে এসেছিল মানুষের বোঝা হয়ে। জানিনা কবে আবার বিদাই নিবে সবাই কে মুক্তি দিয়ে”। হৃদয় বুঝলো এটা হৃদীতার ডাইরী। হৃদয় তারিখ টা ভালো করে হিসাব করে বুঝলো আগামী পরশুদিন মানে ওদের বিয়ের দিনটাই হৃদীতার আঠারোতম জন্মদিন। হৃদয়ের ভীষন ভালোলাগলো। ও হৃদীতার জন্য বিশেষ কিছু করতে চাই। যেটাতে ও খুব খুশী হয়ে যাবে। এটা নিয়ে শাফিনের সাথে কিছু পরিকল্পনা করতে হবে। হৃদয় নতুন করে সব কিছু শুরু করতে চাই। ও একটু একটু করে ভালোবেসে ফেলেছে হৃদীতাকে। মেয়েটা অনেক দুখী। ও চাইনা আর ওকে দুঃখ দিতে। মেয়েটাকে ও পৃথিবীর সব থেকে সুখী মানুষের একজন করে তুলবে। আগলে রাগবে নিজের কাছে। কথা গুলো ভাবতেই হৃদয়ে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো। কিন্তু কথা গুলো ওকে জানাতে তো হবে?। যেই মাথা মোটা মেয়ে না বললে কিছুই তো মনে হয় বুঝবে না। ওকে বলতে হবে কিন্তু কি করে ভেবে হৃদয় শাফিন কে ফোন দিলো। কয়েকবার রিং হবার পরেও ও ফোনটা তুললো না। হৃদয় ও ছেড়ে দেবার পাত্র নয়। ও আরও কয়েকবার ফোন দেওয়ার পর ও ফোন তুলেই ঝাড়ি দিয়ে বলল,
> হৃদয় আমি মিটিংয়ে আছি।তুই দেখছিস ফোন তুলছি না তবুও কেনো ফোন করেই চলেছিস বলতো?
> রাখ তোর মিটিং এদিকে আমি বিপদে আছি আর তুই মিটিং মিটিং করছিস। আমাকে তো জানিস নিজে শান্তি না পেলে আমি কাউকে শান্তিতে থাকতে দেই না।
> হু খুব জানি। তো শুনি তোর সেই মহা বিপদ খানা কী?( রাগ করে)
> আমি প্রেমে পড়েছি।( লজ্জা পেয়ে)
> হৃদয় তোর লজ্জা করে না ঘরে এমন সুন্দরী বউ রেখে আবার প্রেমে পড়তে। ছি ছি তোর চরিত্রের এই অবনতি হলো কেমন করে? আমি তো…
> এই থামতো আমি কখন বললাম যে আমি ঘরে সুন্দরী বউ রেখে অন্যমেয়ের প্রেমে পড়েছি? বাজে কথা চিন্তা করে করে তোর মাথায় এখন শুধু কু চিন্তাই ঘুরছে বুঝলি?
> না বুঝলাম না। সব কিছুই মাথার উপর দিয়ে গেলো। (অবাক হয়ে)
> আমি হৃদীতার প্রেমে পড়েছি। এখন সেদিনের মতো সুন্দর একটা বুদ্ধি বের করে বল কেমন করে ওকে প্রপোজ করবো?
> আমার মিটিং শেষ হলে আসছি। আগে মিটিং টা তো শেষ করতে দে ভাই।( অনুরোধ করে)
> রাখ তো তোর মিটিং। আচ্ছা তুই থাক আমি নিজেই আসছি।
হৃদয় ওর উত্তরের অপেক্ষা না করেই রেখে দিলো। শাফিন জানে ও যখন বলেছে তখন আসবেই তাই মানা করে লাভ নেই। এই ছেলের মাথায় যখন কিছু ঢুকে তখন তা শেষ না হওয়া পযর্ন্ত চলতেই থাকে। তবে এটা অনেক ভালো খবর যে হৃদয় হৃদীতাকে মেনে নিচ্ছে তাও ভালোবেসে এর থেকে ভালো খবর আর হয়না। শাফিন মিটিং বাতিল করলো। বন্ধুর থেকে ব্যবসায়ীক মিটিং কি বড় হলো নাকি। টাকা পয়সা জীবন অনেক আসবে কিন্তু এই সুখের মুহূর্ত টা চলে গেলে আর কখনও ফিরে আসবে না। ও বন্ধুর বিপদের সময় যেমন পাশে থাকবে তেমন খুশীর সময় ও থাকবে। ওর ভাবতে ভাবতেই হৃদয় এসে হাজির হলো,
> বাহ হাওয়ার বেগে হাজির?
> তুই বুঝবি না। আগে প্রেমে পড় তখন বুঝবি। অপেক্ষার এক মূহুর্ত যেনো হাজার বছরের সমান। মনের মধ্যে কেমন অদ্ভুত শিহরন আর ভালোলাগা কাজ করছে যা তোকে বলে বোঝাতে পারবো না এটা সম্পূর্ণ অন্যরকম একটা অনুভুতি।
> হৃদয় সাহেব হৃদয় হারিয়ে চলিছে বনবাসে।
> বাজে কথা বলবি না।এখন আমি সিরিয়াস তাই মজ করা বন্ধ ওকে?
> ওকে।
হৃদয় আর শাফিন একটা সুন্দর পরিকল্পনা করলো। ও হৃদীতাকে বিয়ের রাতে সবটা বলবে আর ওকে চমকে দিবে কিছু উপহার দিয়ে। ওরা এগুলো নিয়ে সুন্দর একটা প্লান করলো।
রাতে হৃদীতা নিজের রুমে শুয়ে আছে। একটু আগেই ও তন্ময়ার রুম থেকে এসেছে। কুসুম ও বাসা থেকে খাবার এনেছিল সাবার জন্য। দীলারা বেগম ও এসেছিল সবাই কি করছে দেখতে। কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না এই সব যেনে গেছে। হৃদীতার এখানে অনেক ভালোলাগছে। কিন্তু হৃদয়ে কথা মনে পড়ছে। কিন্তু আজ এখানে আসার পর থেকেই হঠাৎ করেই ওর হৃদয়ে চেহারা টা মনে করতে পারছে না। মনের মধ্যে অনেকবার আকার চেষ্টা করছে কিন্তু হচ্ছে না। হৃদীতার এখন রাগ হচ্ছে নিজের উপরেই। একটা দিন না হতেই ও কেমন করে ওর চেহারা টা ভুলে গেলো। মনে হচ্ছে একটু দেখতে পারলে হয়তো ভালো হতো। কিন্তু কি করবে? কাছে একটা ফোন ও তো নেই যে বলবে দেখা করতে। ওর মনের মধ্যে আনচান করছে। একটুও শান্তি পাচ্ছে না। হৃদীতা বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে করতেই হঠাৎ জানালায় কেমন একটা শব্দ হলো। হৃদীতা সাথে সাথে উঠে বসে পড়লো। জানালাটা নড়ছে ও এটা দেখে ভয়ে চিৎকার করতে ভুলে গেছে। রুমে আলো জ্বলছে সেই আলোতে ও এক দৃষ্টিতে ওদিকেই তাঁকিয়ে আছে। নড়তে নড়তে জানালাটা খুলে গেলো আর বাইরে থেকে একজন ঝাপ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। হৃদীতা অবাক বনে গেলো।
(চলবে)
ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। এটা একটি ভৌতিক কাল্পনিক গল্প তাই ভালো না লাগলে বাজে মন্তব্য না করে ইগনোর করুন।