#দ্বিতীয়_পুরুষ
পর্ব ২৪
_নীলাভ্র জহির
আজ পাত্রপক্ষ রুবিনাকে দেখতে আসবে। রূপকের প্রচেষ্টায় বিয়েতে সম্মতি দিয়েছেন জোসনা বেগম। সকাল থেকেই চলছে রান্নাবান্নার আয়োজন। একটা বড়োসড়ো দেশী মোরগ জবাই করা হয়েছে। মাছ ধরতে বড় জাল নিয়ে পুকুরে নামল রূপক।
আজ সে দোকানে যায়নি। প্রথমবার জাল ফেলে ছোট ছোট কয়েকটা বাটা মাছ উঠে এলো। চিত্রা হাসতে হাসতে বললো এইগুলা খাওয়াইবেন রুবিনার শ্বশুরবাড়ির লোকজন রে?
আরে না। বড় মাছ পামু।
বড় মাছ থাকলেতো পাইবেন। মাছ ছাড়ছিলেন পুকুরে?
মেলা আগে একবার পোনা ছাড়ছিলাম। রুই কাতলা, তেলাপিয়া। অবশ্য খাইছি অনেক। তারপরও মনে হইতাছে দুই-চারটা মাচ পামু।
কপাল ভালো হইলে পাইবেন।
চিত্রা একটা বালতি নিয়ে পুকুরের চারপাশে ঘুরছে আর রূপকের মাছধরা দেখছে। পুকুরে বড় জাল ফেলে যখন রূপক টেনে টেনে তোলে তার খুব উত্তেজিত বোধ হয়। কয়টা মাছ উঠেছে সেটা দেখার জন্য মনটা আকুপাকু করে। সে দৌড়ে এসে যখন জালের সামনে উপর হয়ে বসে দেখে একটাও মাছ ওঠেনি। ময়লা আবর্জনা উঠে এসেছে একগাদা। সেইসঙ্গে কিছু বাজে বাঁশের কঞ্চি। খিলখিল করে হেসে উঠল চিত্রা।
রূপক বলল তুমি হাসতাছো বউ। দেইখো আমি বড় মাছ পামু।
হ, দেখতাছি তো। কত বড় বড় মাছ পাইছেন আপনি।
কথাটা বলেই একটা বড় বাঁশের কঞ্চির উপরে তুলে ধরল চিত্রা। কঞ্চির দিকে তাকিয়ে সে খুব জোরে জোরে হেসে উঠলো। তার বাঁধভাঙা এই খল খল হাসির শব্দে রূপকের বুকের ভিতর কেমন যেন ধুকপুক ধুকপুক করছে। এই মেয়েটা যখন হাসে তার বুকের আকাশ-পাতাল সবকিছু কাঁপিয়ে দেয়। জড়িয়ে ধরে প্রচন্ড ভাবে ভালোবাসতে ইচ্ছা করে মেয়েটাকে।
রূপক বলল, তুমি ঘাটে নাইমো না। অনেক পিছল। উপরে গিয়া খাড়াও। মাছ পাইলে আমি দিয়ে আসমু।
চিত্রা বালতিটা রূপকের কাছে রেখে উপরে উঠে এল। লুঙ্গি ছোট করে বেধে আরো একবার পুকুরে জাল ফেলল রূপক। চিত্রাকে অবাক করে দিয়ে এবার জালে একটা বড় মাছ উঠলো। একটা বড় কাতলা মাছ। বেশ বড় একটা মাথা। খুশিতে চকচক করে উঠলো চিত্রার মুখখানা। রূপক আনন্দে চিৎকার করে বলল, বড়মাছ পাইছি বউ। কাতলা মাছ।
তারপর জোরে জোরে তার মাকে ডাকতে লাগলো, মা ও মা। দেইখা যাও কত বড় মাছ পাইছি। কই দেইখা যাও?
জোসনা বেগম ছুটে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলেন। রান্না ঘরের কাজে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। তবুও ছেলের আনন্দমুখর গলা শুনে আর ভেতরে থাকতে পারেননি। মাছ দেখে তিনি হাসতে হাসতে বললেন, রুবিনার কপালটা মনে হইতেছে ভালই হইবো। প্রথম সাক্ষাতেই হের শ্বশুরবাড়ির লোকজন বড় মাছের মাথা খাইবো।
রূপক মাছটা জাল থেকে বের করতে করতে বলল, মাছের মাথাটা আমার পোলারে খাওয়াইও।
তোর পোলা কই?
পোলা তো আমার বউয়ের প্যাটে। আমার বউরে দিও তাইলে আমার পোলার খাওয়া হইবো।
জোসনা বেগম আড়চোখে চিত্রার দিকে তাকালেন। সেই চোখে রাগ কিংবা বিস্ময় কোনটই ফুটে উঠল না। তার দৃষ্টি পুরোপুরি অনুভূতিহীন। চিত্রা কোনো ভ্রুক্ষেপ করলো না। কেবল মুচকি হাসলো।
আবারো বাড়ির ভেতর ঢুকে গেলেন জোসনা বেগম। চিত্রা বলল আম্মার সামনে এমন করলেন ক্যান?
কইছি তো কি হইছে?
আমার বুঝি শরম করে না?
ওরে আমার শরম রে। পোলার মা হইতেছ এখনো শরম রাখলে হইব। দুইদিন পর পোলার বউ আইবো বাড়িতে।
চুপ থাকেন তো। সারাক্ষণ মশকরা। মাছটা বালতির মধ্যে রাখেন। আমি লইয়া বাড়িতে যাই। কুইটা ধুইয়া রান্নার আয়োজন করতে হইবো।
চিত্রা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে দেখলো একটা বেশ উৎসব উৎসব ভাব। পাশের বাড়ি থেকে চাচি এসেছেন। নারকেল কোড়াচ্ছেন তিনি। নারকেল দিয়ে পুলি পিঠা ভাজা হবে। আতপ চাল আর খেজুর গুড় দিয়ে বানানো হয়েছে ক্ষীর। এ বাড়ির সবাই মানুষকে খাওয়াতে খুব পছন্দ করে। আর মেয়ের বাড়ির পাত্রপক্ষ মানে তো আরও বিশেষ কিছু। রান্না ঘরের পাশে বটি ছাই নিয়ে বসলেন এক দাদি। তিনি মাছ কাটবেন। চিত্রা দাওয়ায় হেলান দিয়ে দাড়াল। তার এখন কোন একটা কাজ করা কর্তব্য। কিন্তু জোসনা বেগম এখন পর্যন্ত তাকে কোনো কাজ করতে দেয় না। যদিও গত কয়েকদিন ধরে তার আচরণে মোটেও মনে হয়নি যে তিনি রেগে আছেন। তবুও চিত্রা রান্না ঘরের আশেপাশে এলেই তিনি বলেন, তোমার কিছু করতে হইবো না।
বাজারের ব্যাগ এর পাশেই পলিথিনে অনাদরে পড়ে রয়েছে এক বিরা পান। চিত্রা পান নিয়ে গেল ধোয়ার জন্য। গামলা ভরে পানি নিয়ে খল খল করে পান ধুয়ে রাখলো। শাশুড়ীর ঘরের মাচা থেকে নিয়ে এলো সুপারি। টুলের ওপর বসে ধীরে ধীরে সুপারি কাটতে লাগল সে। কিছুক্ষণ পরে আবার ও রূপকের উচ্ছ্বসিত কন্ঠ শুনতে পেল, মা দেইখা যাও। চিত্রা কই গেলা? এই দেখো আবার একখান পাইছি।
এতগুলো মানুষের সামনে থেকে উঠে যেতে চিত্রার লজ্জা লাগছিল। তাই বসে বসে সুপারি কাটতেই মনোযোগ দিয়ে রাখল সে। মোরগের মাংস কষানোর কড়া সুঘ্রান আসছে। ঘ্রাণে খিদে পেয়ে যাচ্ছে চিত্রার। কিন্তু লজ্জায় বলতে পারল না।
রূপক মাছ নিয়ে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করল। বলল, যা পাইছি তাতেই ম্যালা হইবো। এবার একখান বড় কার্ফু মাছ পাইছি। ছোট ছোট কিছু পুটি মাছ ধরছে। এগুলা কড়া কইরা ভাজি কইরো।
মাছের বালতিটা রান্নাঘরের পাশে রেখে রূপক পুকুর ঘাটের দিকে চলল গোসল করতে। চিত্রাকে বলল আমার লুঙ্গি টা দিয়ে যাও তো?
মনে মনে এমন একটা সুযোগ খুঁজছিল চিত্রা। সে সুপারি রেখে ঘরে গেল লুঙ্গি ও গামছা নিতে। মাচার একপাশ থেকে নিল তার গোসল করা সুগন্ধি সাবান। অনেকক্ষণ ধরে তার স্বামী পুকুরে মাছ ধরেছে। গায়ে পানি ও কাদার গন্ধ। এখন তাকে সুগন্ধি সাবান দিয়ে গোসল করিয়ে দিতে পারলে ভালো হয়। চিত্রা গামছা ও সাবান নিয়ে পুকুর ঘাটে এসে দাঁড়ালো। রূপকের গোসল করা প্রায় শেষ। উঠে এসে গামছাটা হাত থেকে নিতে লাগল সে।
চিত্রা বলল, খাড়ান । আগে উইঠেন না। সাবান মাখেন।
আরে সাবান লাগাইতে হইব না।
একটু মাখেন।
আমি সাবান মাখলে তুমি খুশি হইবা?
হ,
তাইলে তো দেখি মাখাই লাগে। দেও সাবান টা দেও।
চিত্রা হাসিমুখে সাবান এগিয়ে দিল রূপকের দিকে। গায় বেশি করে ফেনা তুলে দুই হাত দিয়ে রূপক কচলাতে থাকল। মন ভরে সেই দৃশ্য উপভোগ করতে লাগল চিত্রা। তার মনে হচ্ছে আজকের দিনটা ভীষণ সুন্দর। সবার মনোভাব দেখে মনে হচ্ছে দুই পরিবার মোটামুটি রাজি এই বিয়েতে। আজকে আনুষ্ঠানিকভাবে রুবিনা কে দেখতে আসবে পাত্রপক্ষ। তারপর নিশ্চয়ই বিয়ের দিন তারিখ নিয়ে পাকা কথা হবে। সবকিছু ভালোভাবে শেষ হবে কিনা সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকা সত্ত্বেও আজকের দিনটা চিত্রার কাছে একটি বিশেষ দিন। আজকের দিনের সব কিছুই সুন্দর।
মেহমানরা আসতে আসতে বিকেল গড়িয়ে গেল। জোসনা বেগম পোলাওয়ের চাল ধুয়ে রেখেছেন। মেহমান আসার পর তিনি সেটা রান্না করবেন বলে। আগেভাগে পোলাও রান্না করে রাখলে ঠান্ডা হয়ে যাবে। খেতে ভালো লাগবে না। কিন্তু তারা ভীষণ দেরী করে এলেন।
সবাইকে অভ্যর্থনা জানিয়ে আঙিনার মাঝখানে গোল করে রাখা চেয়ারে বসতে দেয়া হলো। কাচের জগ ভর্তি করে এক জগ শরবত বানিয়েছে চিত্রা। শরবতের জগ ও গ্লাস টেবিলের মাঝখানে এনে রাখলো। ধীরে ধীরে সবার হাতে শরবত তুলে দিয়ে সালাম জানাচ্ছিল চিত্রা। মুরুব্বী এসেছেন বেশ কয়েকজন। অল্প বয়সী মেহমান খুব কমই এসেছেন বলা যায়। শিমুলের ভাই ও ভাবিরা আছেন। ভাবিদেরকে নিয়ে ঘরের ভেতরে চলে গেল চিত্রা।
রূপক লেগে পড়ল সবাইকে নাস্তা দিতে। চিত্রার বিয়ের সময় কেনা একটা গোলাপী রঙের শাড়ি পড়ানো হয়েছে রুবিনাকে। নিজের সাজসজ্জা নিজেই করেছে রুবিনা। গালে ফেস পাউডার লাগিয়ে গাল দুটো লাল টকটকে বানিয়ে ফেলেছে। ঠোঁটে দিয়েছে লাল লিপিস্টিক।
তাকে নিয়ে যাওয়া হল সবার সামনে। ভয়েই রুবিনার আত্মা শুকিয়ে কাঠ। কী যে হবে, সেই ভাবনায় আচ্ছন্ন মনে ব্যকুল সে।
একজন মুরুব্বি জানতে চাইলেন,
তোমার নাম কি মা?
রুবিনা ভয় ভয় গলায় উত্তর দিল। অন্য একজন জানতে চাইলেন তার পড়াশোনা কতদূর, কোন কোন কাজ করতে পারে, রান্নাবান্না জানে কিনা, হাদিস কোরআন পড়া আছে কিনা ইত্যাদি।
হাদিস-কোরআনের প্রসঙ্গ আসতেই অন্য একজন মুরুব্বী বললেন, সূরা কদর পইড়া শুনাইতে কও।
রুবিনা মনে মনে সূরা পড়ার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলল। সঙ্গে সঙ্গে শিমুলের বড় ভাই বললেন, থাউক পড়া লাগব না। তার জানাশোনা তার মধ্যে থাকবো। সূরা কিরাত তার নামাজে লাগবো। আমরা শুইনা কি করমু?
উত্তরটা ভালো লাগলো রুবিনার। মনে মনে বড় ভাইয়ের প্রতি তার শ্রদ্ধা জেগে উঠলো। মুচকি হাসি চেপে রাখলো রুবিনা। মুরুব্বী হয়তো শিমুলের ভাইয়ের কথায় খানিকটা দমে গেলেন। চেয়ারে হেলান দিয়ে গম্ভীর মুখে বসে রইলেন তিনি। ভাবটা এমন যে আজকালকার পোলাপান কে তিনি এই কারণেই পছন্দ করেন না। মুরব্বিদের মুখের উপর কথা বলার কারনে।
তখন আর একজন বললেন, তাইলে আর জিজ্ঞেস করার কি আছে। আর কোন কিছু জানার দরকার নাই। এখন আপনি তাইলে ঘরে যান।
রুবিনা কি করবে বুঝতে পারলো না। স্থিরভাবে বসে রইল। শিমুলের বড় ভাই চিত্রাকে ইশারা করে বললেন, নিয়া যান।
ঘরের ভেতর যেতে যেতে রুবিনার মনে হচ্ছিল এই পথ যেন অনন্তকাল ধরে জ্বলছে। কারণ সেই মুহূর্তে সবাই তাকিয়ে আছে তার দিকে। সবার চোখ তখন তার হাটা চলা নিয়ে কথা বলছিলো নিশ্চয়ই। অনেকটা আরষ্ঠ বোধ করছিল রুবিনা। তাকে নিয়ে কে কী ভাবছে সেসব তাকে চিন্তিত করছে। শেষ পর্যন্ত সবার সম্মতিতে বিয়েটা ভালোভাবে হবে তো? শিমুলের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। সে পড়ে রয়েছে সূদুর ঢাকা শহরে। সবকিছু কিভাবে হবে কে জানে? মনে কেবলই অজানা আশঙ্কা।
রুবিনা ঘরে চলে গেলে দু একজন মুরুব্বী বলাবলি করছিল মাইয়া ভালো আছে। ভদ্র, শিক্ষিতা। নামাজী ও মনে হয়। এখন যেহেতু পোলা আগে থেইকা মাইয়ারে পছন্দ করে, আমাদের তো এখানে আর কিছুই বলার ছিল না। তারপরও সমাজের একটা নিয়ম আছে। আমরা দেখতে আইছি। মাশাল্লাহ মাইয়া পছন্দ হইছে আমার। বাকিদের যা মতামত থাকুক না কেন বিয়ে তো দিতেই হইবো। নয়তো আমাগো নাতি আবার খুব কষ্ট পাইব মনে। তয় আমার মনে হয় কারোই মাইয়ারে অপছন্দ হয় নাই।
মুরুব্বী কথাটা বলে সবার মতামতের জন্য প্রত্যেকের মুখের দিকে একবার করে তাকালেন। মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন সবাই। তখন মুরুব্বী বললেন, তাইলে এখন আপনারা একদিন আমাদের বাড়িতে আসেন। আমাদের পোলা যেহেতু ঢাকায় আছে। দুই দিনের ছুটি লইয়া পোলারে আইতে কই। আপনারা পোলারে দেখেন। একটা আলাপ পরিচয় হোক। তারপর যেহেতু পোলায় চাকরি করে, যে দিন আইবো তারপরের দিন বিয়ে-শাদির একটা ব্যবস্থা করা যায়। এখন আপনাগো কি মতামত?
মুরুব্বী তাকালেন রূপকের বাবার দিকে। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা তিনি। মুখভঙ্গি দেখেই বোঝা যাচ্ছে তিনি ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছেন। এই দিন হয়ত প্রত্যেকটা বাবাকেই দেখতে একই রকম লাগে। খানিকটা মুষড়ে পড়েছেন তিনি। জোসনা বেগম দূরে দাওয়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। লম্বা ঘোমটা টেনে দিয়ে মুখে আঁচল গুঁজে তিনি চোখ পিটপিট করে খেয়াল করছেন কি কি বলছেন? তিনি সেখান থেকে মৃদু স্বরে বললেন, আমাগো কোন আপত্তি নাই।
তখন মুরুব্বী উত্তর দিলেন, আলহামদুলিল্লাহ । তাইলে আমরা পোলারে আইতে কই?
সবার মুখে ফুটে উঠল হাসি। কারন বিয়ে মোটামুটি পাকা হয়ে গেল। শিমুল যেদিন আসবে তার পরের দিন পড়িয়ে দেয়া হবে বিয়ে। বিয়ের সব আয়োজন তাহলে এখন থেকেই শুরু করতে হবে। দিনক্ষণ নির্ভর করছে এখন পুরোটাই শিমুলের ওপর।
জোসনা বেগম খাবারের আপ্যায়নে লেগে গেলেন। মেহমানদের সামনে যে বড় টেবিলটা বসানো হয়েছে সেখানেই দেয়া হল খাবার। রূপক নিজহাতে পরিবেশন করছে। পানির জগ দৌড়াদৌড়ি করে এনে দিচ্ছে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা। রূপকের চাচাতো ভাইয়েরা এনে দিচ্ছে তরকারির বাটি। খাবারের আয়োজন দেখে মুরুব্বিদের চোখে মুখে তৃপ্তির হাসি। আয়োজনের কোন কমতি রাখেননি রূপকের পরিবার। খাবার খেয়ে পান মুখে দিয়ে যে যার মত আরাম করে বসলেন। কেউবা হাঁটতে গেলেন বাইরে। কেউ আবার রূপকের বাবার সঙ্গে কথা বলতে বলতে তাদের ঘরের ভিতরে গিয়ে বসলেন। পুরুষ লোকদের খাওয়া শেষ হয়ে গেলে চিত্রার ঘরের ভেতর জোসনা বেগম মহিলা অতিথিদেরকে খেতে দিলেন। তাদেরকে আপ্যায়ন করছিলেন তিনি নিজেই। কিন্তু সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে সবার জোরাজুরি থাকা সত্বেও তিনি কিছুই মুখে দিতে পারছিলেন না। মেয়ে হারানোর শোকে যেন আজ থেকেই তিনি মুষরে পড়েছেন। সকলে তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে এই এই দেখে তার চোখ ছল ছল করছে। অন্যদিকে বুকটা ফেটে যাচ্ছে তার। এক ধরনের হাহাকার গ্রাস করেছে। এই শূন্যতা কিসের তিনি বুঝতে পারছেন না। জগতের শুধুমাত্র কন্যাদায়গ্রস্ত পিতামাতাই এই অনুভূতি উপলব্ধি করবেন।
চলবে..