দ্বিতীয়_সূচনা পর্ব_২২

0
1416

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_২৩
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

শরৎকালের বিকেল। আকাশটা উজ্জ্বল। এখনও রোদের ছাপ রয়ে গেছে চারপাশে। আকাশে মেঘেরা এদিক-সেদিক উড়ছে। অয়নন্দিতার কাছে আজকের আকাশটা অন্যরকম লাগছে। এক কথায় যাকে বলা যায় অভূতপূর্ব সুন্দর। ফারহান পাশেই হাঁটছে। অয়নন্দিতার নজর মাঝে মাঝে ফারহানকেও দেখছে। ফরমালে ফারহানকে বেশ সুদর্শন লাগে। অয়নন্দিতা খেয়াল করেছে ফারহান অফিসে ফরমাল পরে যাওয়া আসা করে। আর নরমাল কোথাও বের হলে কখনও টি-শার্ট আবার কখনও ফুলহাতা শার্ট পরে বের হয়।
ফারাশের মুখে শুনেছে ফারহান নাকি প্রচন্ড রাগী মানুষ। কিন্তু অয়নন্দিতা এখন পর্যন্ত ফারহানের রাগের মুখোমুখি হয়নি। তার কাছে ফারহানকে রাগী মনে হয় না। অত্যন্ত শান্ত এবং ঠান্ডা মেজাজের পুরুষ মানুষ মনে হয়। এখন এই মনে হওয়াটা কতটা স্বাভাবিক সেটা সময়-ই বলে দেবে। ব্ল্যাক ব্লেজারটা হাতে নিয়ে হাঁটছে ফারহান। সাদা শার্ট হাতাগুলো ফোল্ড করে রাখা। পায়ে ব্ল্যাক সু। যে কোনো মেয়ে একবার হলেও তাকাবে। অয়নন্দিতার মনে পড়ে যায় সেদিনের কথা যেদিন প্রথম সে ফারহানকে দেখেছিল। কলেজে ফারহানের সবাই ধাক্কা খেয়ে সেদিন অয়নন্দিতার হাত রক্তাক্ত হয়েছিল। নিজেই অপরাধবোধে ভুগেছে৷ তাই তো হসপিটালে নিয়ে ছুটেছিল। মনে পড়ে ট্যুরের কথা। অন্যান্য মেয়েগুলো ফারহানকে আড়চোখে দেখছিল আর স্বপ্ন দেখছিল। কয়েকজন তো রীতিমতো চেষ্টাও করেছিল ফারহান যেন তাদের প্রতি আকর্ষিত হয়। কিন্তু আফসোসের কথা এই যে, তারা প্রত্যেকেই ব্যর্থ হয়েছে।
অয়নন্দিতা ভাবছে সে কি জিতেছে? নাহ, সে সফল হয়নি৷ কারণ, ফারহানের মন এখনও বন্দনাকেই ভালোবাসে। বন্দনাকে নিয়ে মাঝে মাঝে অয়নন্দিতার চাপা হিংসা হয়। বন্দনা এমন একজন নারী যে না থেকেও ফারহানের ভালোবাসা পাচ্ছে। আর সে, স্ব শরীরে ফারহানের এত কাছে থেকেও ফারহানের ভালোবাসা পাচ্ছে না। কত অদ্ভুত এই ভালোবাসার লীলাখেলা।

পাশে যে একজন জীবন্ত মানুষ হাঁটছে এতক্ষণে খেয়াল করে ফারহান। ভেবেছিল অয়নন্দিতা বোধ হয় হারিয়েই গেল। এমন চুপচাপ হয়ে কেউ হাঁটতে পারে তা এতদিন পরে বুঝতে পারে ফারহান। ফারহান মনে মনে প্রশ্ন করে, আচ্ছা অয়নন্দিতা এমন কেন? এত চুপচাপ কেন ও? সাধারণত মেয়েরা স্বামীর পাশে থাকলে অনেক গল্প কপ্রে। ফারহান অন্তত তা-ই জানে। কারণ বন্দনা যতক্ষণ তার সঙ্গে থাকত কিংবা যতক্ষণ সে বন্দনার সঙ্গে থাকত বেশিরভাগ সময় বন্দনাই কথা বলত। এটা হয়েছে, ওটা হয়েছে। আজ সাজি এটা করেছে, কাল ফারাশ ওটা করেছে। এটা পছন্দ, ওটা পছন্দ সব কিছু নিয়েই বন্দনা কথা বলত। বন্দনার এই এত সব অভ্যাসকে যদি এক লাইনে বলতে বলা হয় তবে বলা যায় — বন্দনা কথা ছাড়া থাকতে পারে না।
হলুদ জামা লাল সেলোয়ার আর ওড়নায় যেন অয়নন্দিতার সৌন্দর্য মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেছে। সালোয়ার স্যুটেও অয়নন্দিতাকে সুন্দর লাগে। ফারহান ভাবছে, জগতে সব থেকে বিচিত্র হয় এই নারীকূল। এদের বোঝার সাধ্য আজ পর্যন্ত কোনো পুরুষের হয়নি। ফারহান আরও ভাবছে, একটা সময় সে ভুল ছিল। খুব ভুল ছিল। তার চিন্তা ভাবনা ভুল ছিল। সে ভাবত, সে নারী মন বুঝতে পারে। কারণ সে বন্দনাকে বুঝতে পারে। কিন্তু পরবর্তীতে বুঝতে পারে সে অনেক বড়ো ভুল করেছে। তার এতটাও বোঝা উচিত হয়নি।
কিছুটা পথ হেঁটে ওভারব্রিজ ক্রস করে। রাস্তায় সারি সারি রিক্সা। কতদিন হয়েছে রিক্সায় ঘুরে না সে। লাস্টবার ঘুরেছিল শাম্মির সঙ্গে। আজ-কাল শাম্মিও ব্যস্ত তার প্রেমিকের সঙ্গে। নতুন নতুন প্রেমে পড়লে যা হয় আর কি। এই মুহুর্তে ইচ্ছে হচ্ছে রিক্সায় উঠে পুরোটা সন্ধ্যা ঘুরে বেড়াতে। ইচ্ছেটা পূরণ করলে ক্ষতি নিশ্চয়ই হবে না। অয়নন্দিতা স্থির হয়ে দাঁড়ায়। অয়নন্দিতাকে থেমে যেতে দেখে ফারহানও দাঁড়িয়ে পড়ে সেখানে।
‘কী হলো, দাঁড়িয়ে পড়লে যে? পায়ে ব্যথা হচ্ছে নাকি?’
‘এত সহজে পায়ে ব্যথা হয় না আমার। আমি হাঁটতে পারি।’
‘তাহলে, দাঁড়িয়ে পড়লে যে।’
‘আমি এখন রিক্সায় উঠব। আর আপনাকেও আমার সঙ্গে রিক্সায় উঠতে হবে।’
‘রিক্সায়!’
‘হ্যাঁ।’
‘হঠাৎ রিক্সায় উঠতে চাইছ?’
‘মন চাইল। আগে প্রায় সময় রিক্সায় ঘুরতাম। আমি আর শাম্মি। আজ-কাল শাম্মি ভীষণ ব্যস্ত। কী প্রেম শুরু করল আমাকেই ভুলে গেল। ওর কপালে শনির দশা আছে।’
অয়নন্দিতার কথা শুনে ফারহান না হেসে থাকতে পারেনি৷
‘তোমারও তো বিয়ে হয়েছে। তো ও প্রেম করলে তোমার সমস্যা হচ্ছে কেন?’
‘ইদ্ভুত কথা বললেন তো। আমার বিয়ে হয়েছে তো কী হয়েছে। আমি কি ওর সঙ্গে যোগাযোগ রাখিনি? আমি তো কিছুদিন পর ওর সঙ্গে দেখা করেছি। একসঙ্গে রেস্টুরেন্টে খেয়েছিও। আমি তো ওকে ভুলে যাইনি। ও-ই আমায় ভুলে গেছে।’
‘তাহলে তো বলতে হয় ভীষণ অন্যায় করেছে। শাম্মি নামক মেয়েটাকে ধরতে হবে। কেন সে অয়নন্দিতার সঙ্গে যোগাযোগ করে না।’
‘যোগাযোগ যে একেবারেই করে না তাও কিন্তু না। করে তবে খুব কম। আগে অনলাইনে এলেই নক করত কিন্তু এখন অনলাইনে আমায় দেখলেও মেসেজ দেয় না। কিন্তু পোস্ট তো ঠিকই করে দেখি।’
অয়নন্দিতার অভিযোগগুলো বাচ্চাদের মতো শোনাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ফারহানের হাসি ছাড়া আর কিছুই করার নেই। এদিকে অয়নন্দিতা হাত দিয়ে একটা রিক্সাওয়ালাকে ইশারা করে। রিক্সাওয়ালাও ইশারা পেয়ে রিক্সা ঘুরিয়ে এ পাশে চলে আসে।
‘এই মামা, যাবেন?’
‘কই যাইবেন?’
‘নির্দিষ্ট কোনো ঠিকানা নেই। আপাতত ঘুরব।’
রিক্সাওয়ালা কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল ফারহান আর অয়নন্দিতার দিকে। মনে মনে কী ভেবেছে কে জানে। মিনিট দুয়েক পর হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায় রিক্সাওয়ালা। অয়নন্দিতা রিক্সায় চড়ে বসে। সাথে ফারহানকেও বসায়। ফারহান একবারের জন্যেও না করেনি। আজকের সন্ধ্যাটা না হয় অয়নন্দিতার সঙ্গে রিক্সায় ঘুরে কাটুক।

ফারহানের সিগারেটের বাতিক আছে। অয়নন্দিতার সামনে ধরাতে সাহস পাচ্ছে না। একে তো রিক্সায় পাশাপাশি বসে আছে। এখন সিগারেট ধরালে কী না কী মনে করে সেটাও ভাবতে হচ্ছে তাকে।
‘অয়নন্দিতা, আমি কি একটা সিগারেট ধরাতে পারি?’
‘ইশ রে! এখনও সিগারেট টানার কথা বলে।’
‘অনুমতি চাইছি শুধু।’
‘অনুমতি না দিলে কী করবেন?’
‘এক পাশে রিক্সা থামাব। এরপর রিক্সা থেকে নামব। এরপর একটা বিড়ি ধরাব। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে টানব। এরপর আবার রিক্সায় উঠে বসব।’
‘তবুও টানতেই হবে।’
‘হ্যাঁ।’
‘থাক, রিক্সাও থামাতে হবে না। নামতেও হবে না। এখানেই টানুন।’
ফারহান মুচকি হাসে। এরপর সিগারেটে আগুন জ্বালায়। অয়নন্দিতার সিগারেটে খুব একটা সমস্যা হয় না। সে আরাম করেই ফারহানের পাশে বসে আছে।
‘সিগারেট টানা শেষ হলে আমায় ফুচকা খাওয়াতে হবে কিন্তু।’
ফারহানও হেসে সম্মতি জানায়।

চলবে…………………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here