ধর্মের দেয়াল পর্ব:২

0
1580

#ধর্মের_দেয়াল
-নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ২

নাফিসার সাথে জ্বীন গুলো আরও ১৩
বছর আগে থেকেই থাকত। তারা পুরো
১টা পরিবার থাকে। যে ছায়াটি
সুয়ে আছে এটা নাফিসার লাভার
জ্বীন। যেদিন নাফিসা দোয়া পড়ায়
আলসামি করে সে দিন এই জ্বীনটি ওর
পাশে সুয়ে থাকার জায়গা করে নেয়।
পরদিন নাফিসা ফজরের নামায পড়ার
জন্য ওঠে কিন্তু বিছানা ছেড়ে উঠতে
পারেনা।প্রচন্ড শরীর ব্যাথায় আবেশ
হয়ে আছে। তারপর ৩ কুল পড়ে শরীরে
হাত বুলাতে থাকে এবং কিছুক্ষনের
মধ্যই স্বাভাবিক হয়ে যায়। এর পর ফজরের
সালাত আদায় করে নিজের গা বন্ধ
করে নেয় সুরা পড়ে।
নাফিসা তার চাচা-চাচীর সাথে
থাকে। খুব ছোট্ট বেলায় বাবা-মা
আগুনে পুড়ে মারা যায়। খুব ভোরে
বাসায় আগুন লেগে যায়, বাবা
ঘুমিয়েই ছিল। মা হঠাৎ জেগে দেখে
আগুন, তখন কোন হুস না পেয়ে ছোট্ট ১
বছরের নাফিসা কে বুকে নিয়ে রুমের
বাহিরে এসে তার শাশুড়িকে
চিৎকার করে ডেকে শাশুড়ির রুমের
দরজার বাহিরে নাফিসাকে রেখে
আবার দৌড় দেয়।
নাফিসার দাদি বিলকিস বেগম
নামায শেষ করে কেবল উঠেছে। এই সময়
নাবিলা মানে নাফিসার মায়ের
চিৎকারের শব্দে দরজা খুলে দেখে
ফ্লোরে ছোট্ট নাফিসা কাদছে। আর
নাবিলা দৌড়ে আগুন লাগা রুমে
যাচ্ছে যেখানে নাফিসার বাবা
মেহেদি ঘুমিয়ে ছিল। বিলকিস বেগম
নাফিসাকে কোলে নিয়েই চিৎকার
দিয়ে ওঠে। সবাই আসার আগে সব শেষ
হয়ে যায়।
সেদিন মা ওর বাবাকে নিয়ে আর
ফিরে আসতে পারেনি ছোট্ট
নাফিসার কাছে। আগুনে পুরে ২ জনেই
মারা যায়। সেদিন আকাশ বাতাশে
কান্নায় দুঃখের ছায়ায় ভরে
গিয়েছিল…..
এমনই সেইদিন এতিম হয়ে যায়
নাফিসা। এর পর ৬ বছর বয়সে বিলকিস
বেগম মারা গেলে নাফিসার স্থান হয়
তার চাচার সংসারে। সেখান
থেকেই তার জিবনটা দূর্বিষহ হয়ে
ওঠে। কারন তার চাচাত ভাইবোন দের
সংখ্যাও নেহাত কম ছিল না। ৪
ভাইবোন তার উপর আবার নাফিসা
যেন চোখের বিষ হয়ে উঠেছিল
পরিবারটায়।
নাফিসা কাঁদসে এবং মনে মনে বলছে
মাঝে মাঝে আমার শরীর কেন এত্ত
ব্যাথা হয় আল্লাহ! আর সহ্য করতে
পারছিনা এবার মুক্তি দাও আল্লাহ।
চোখের পানি মুছে রান্না ঘরে যেয়ে
সকালেন নাস্তা বানাতে লেগে
পড়ল। সবার জন্য চা, রুটি, ভাজি ছাড়াও
কয়েক পদের নাস্তা রেডি করল। বাসায়
কাজের লোক আছে কিন্তু ছুটা কাজের
লোক। রুম মোছা,থালা বাটি ধোয়া
ছাড়া টুকটাকি কাজ করে।
________________________
দরজায় গিয়ে নক করে বলে চাচী……..ই।
কয়েক বার ডাকার পর চাচী দরজা খুলে
রেগে বলে এতো চিল্লানোর কি
আছে। বাড়িতে কি ডাকাত পড়ছে?
না….. মানে, আমার আজ ৭ টায়
টিউশানি আছে, ছাত্রীর পরীক্ষা
তাই একটু আগে যেতে হবে। আপনাকে
সব দেখে দিয়েই চলে যাব। চাচী বলল
থাক আর বলতে হবেনা ঢেড় করেছিস।
আর কাজ করে আমাকে ত উদ্ধার
করেছিস। ফ্রেস হয়ে এসে চা নিয়ে
বসে পড়ল চাচী আর বলল যা সবাইকে ঘুম
থেকে তুলে দিয়ে যা।
নাফিসা সবার রুমে নক করে এসে
রেডি হতে লাগল এমন সময় চাচির ডাক।
এই বাড়ানির বাচ্চা…………। নাফিসা
হচকিয়ে উঠল এবং দৌড়ে চাচীর রুমে
গেল। চায়ে এত্ত চিনি কেন বলে
গালে ঠাস করে ১ টা চড় দিল এবং বলল
চিনি ফুরালে কি তোর মরা বাপ এসে
চিনি কিনে দিয়ে যাবে! অচমকায়
চড়টা খুব জোড়েই লাগল। গালে হাত
দিয়ে দিয়ে নাফিসা বলল আমার
শরীর খুব খারাপ চাচী তাই ভুল হয়ে
গেছে। ও ঘর থেকে ওর চাচা এসে বলল
সকাল বেলা কি শুরু করলা? আর তোকেও
বলি নাফিসা মনযোগ দিয়ে একটু কাজ
করতে পারিস না?
যত্তসব ঝামেলা ঘাড়ে উঠে এসেছে।
কবে যে মুক্তি পাব?
ও ঘর থেকে নাফিসা চলে আসে। ২
চোখ দিয়ে পানি পড়া থামছে না
আজ। প্রতিদিন চাচীর হাতে চড় না
হোস্না খায় কিন্তু আজ চাচা ওভাবে
বলতে পারল? লজ্জায় জোরে কাঁদতে
পারছেনা। সোজা বাথরুমে গিয়ে
পানি ছেড়ে দিয়ে কাঁদতে লাগল। ৫
মিনিট পর বের হয়ে এসে রেডি হল এবং
যাওয়ার সময় ওর চাচাতো বোন বিথী
এসে বলল আপা নাসতা করে যা!
নাফিসা বিথীকে বলল না রে দেরী
হয়ে গেছে আজ অনেক বলেই চলে গেল।
রাস্তায় হাটছে কিন্তু চোখের পানি
থামছেনা। একটা রিকসা ডাকল বলল
ভাই যাবেন? হো খালাম্মা যাবো
বলেন কই যাবেন। কথাটা শুনে একটু চুপ
করে গেল তার পর রিকসাই উঠে পড়ল
গন্তব্য স্থানে যাওয়ার জন্য। মনে মনে
বলল আমি সঠিক পর্দা করছি বলেই আজ
উনি খালাম্মা বলে ডাকল। নাফিসার
ছাত্রী মিলিদের বাসায় নেমে
রিকসার ভাড়া মিটিয়ে বাসায়
ঢুকলো। মিলি বসে আছে তার জন্য।
ওকে পড়াচ্ছিল মিলির মা এসে
নাস্তা দিয়ে গেল। সাথে সাথে
নাফিসা বলল খেয়ে আসছিতো আন্টি
এগুলো নিয়ে যান। আজ ওর গলা দিয়ে
খাবার নামবেনা। মিলিকে পড়িয়ে
বাসা থেকে বের হল।
গন্তব্য স্থান মিতুদের বাসায় যাবে
কিছু নোট আনতে সামনে ইনর্কোস
পরীক্ষা। এমনি ক্লাস বা প্রাইভেট
কিছু পড়েনা তাই মিতুই ভরসা। মিতুদের
বাসা থেকে নোটগুলো নিয়ে বাসায়
আসছিল এমন সময় মনে হল কেউ তাকে
ফলো করছে। তবুও না দাড়িয়ে একমনে
হাটতে লাগলো।
এই যে মিস……….
একটা পুরুষ কন্ঠ শুনে দাড়িয়ে গেল।
আবির কাছে এসে বলল আপনি কেমনে
বুঝলেন আমি আপনাকেই ডাকছি!
রাস্তায় তো অনেক মেয়েই যাচ্ছে।
নাফিসা সালাম দিয়ে বলল ভাই! কিছু
বলবেন?
নাফিসার মুখে ভাইয়া ডাক শুনে
আবির বেশ দমে গেল থতমত করতে
লাগল।
নাফিসা বলল কিছু বললে বলেন আমার
দেরী হয়ে যাচ্ছে। আবির বলল
না…মানে কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল
না।চট করে বলে দিল আপনি টিউশানি
করান না? হুম তোহ! আসলে আমার ছোট
ভাইকে পড়ার জন্য একজন শিক্ষক
খুজছিলাম। আপনি যদি………. কথা শেষ
না হতেই নাফিসা আবিরের মুখের
কথা কেড়ে নিয়ে বলল ছেলেদের
আমি পড়াই না। বলে হনহন করে
নাফিসা চলে গেল। আবির এমন অপমান
জিবনে হয়নি। দুর থেকে ওর বন্ধুরা বলল
আশা ছেড়ে দে আর আমাদের ট্রিট দে।
ওদের কথা শুনে আবির রাগে চলে গেল
সেখান থেকে।
বাসায় এসে নাফিসা ফ্রেস হয়ে কাজ
করতে গেল। চাচী একবারও বললনা
খাওয়ার কথা। দিনটা কোনমতে গেল।
রাত ১১ টার দিকে,
আকাশের দিকে তাকিয়ে নাফিসা
ছাদে দাড়িয়ে আছে। আকাশ মেঘে
ঢাকা। জোড়ে জোড়ে বৃষ্টি
চমকাচ্ছিল। এমন সময় জোড়ে কেদে উঠল
মা বলে। আর বলছে দাদী তুমি না
বলতা আমি স্পেশাল একটা মেয়ে
সবাই আমায় এই জন্য ভালবাসবে। কেন
তুমি মিথ্যা বলছিলা। এমন সময় জোড়ে
বৃষ্টি চলে আসে। নাফিসা আরো
জোড়ে কাদে ফুফিয়ে ফুফিয়ে। এমন
সময় পাশে থাকে বেলি ফুলের গাছের
টবটি পড়ে গেল। আর সাথে সাথে
পিছন ফিরে দেখে খুব সুদর্শন পুরুষ যার ২
পাশে সাদা বিশাল ডানা। নাফিসা
দেখে ভয় পেয়ে যায় আর সে চোখ বড়
বড় করে তাকিয়ে থাকে পুরুষটির
দিকে। পুরুষটি ধীরে ধীরে নাফিসার
কাছে এগিয়ে আসে আর তার ২ পাখা
দিয়ে নাফিসাকে আবদ্ধ করে
নেয়……..
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
কিছু কাহানী বাস্তব ও কাল্পনিক
নিয়েই গল্পটি…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here