ধর্মের দেয়াল পর্ব:৩

0
1309

#ধর্মের_দেয়াল
-নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ৩

-জ্বীন টি নাফিসাকে ওর পাখা
দিয়ে জড়িয়ে ধরল।
-নাফিসা আর কিছু করতে পারেনা।
দোয়া পড়তেও ভুলে যায়।
-আর বলল নাফিসা তুমি যে সত্যই
স্পেশাল। তুমি কি সেটা জান?
তাইতো তোমায় আমি এত্ত ভালবাসি
আর কাছেও নিজের করে চাই বৈধ
নিয়মে। বাবার নিষেধ সত্বেও।
.
.
.
– জ্বীন পুরুষটির নাম কাইফ।
-কাইফ বলল নাফিসা আমার দিকে
তাকাও। নাফিসা সম্পূর্ন কাইফের
আয়ত্বে।যেন ওর হুকুমের গোলাম।
.
-কাইফের চোখের দিকে তাকিয়ে
দেখলো চোখ ২ টি গাড় নীল বর্নের আর
সেখান থেকে দ্রুতি ছড়াচ্ছিল। কিন্তু
কি অবাক কান্ড! নাফিসার চোখও
ধীরে ধীরে নীল বর্ন ধারন করছিল।
.
.
-ছাদের পরিবেশটা একদম ভৌতিক
অবস্থা। এখানে কোন সাধারন মানুষ
থাকলে নিশ্চয় হার্ড ফেইল করত।
-হুম হচ্ছে আর একটু জলদি নিজের
মস্তিষ্কের উপর পেশার দাও নাফিসা!
.
.
-নাফিসার মুখ দিয়ে তখন শুধু গড় গড় শব্দই
হয়ে যাচ্ছিল আর নীল থেকে গাড়
নীলের পথে যাচ্ছে চোখ ২ টি।
.
-এমন সময় কাইফকে কেউ ১ জন জোড়ে
ধাক্কা দিল এবং হঠাৎ ধাক্কা
সামলাতে না পেরে দুরে ছিটকে
গিয়ে পড়ল।
– সাথে সাথে কাইফ গর্জে উঠল।
-২ টা মেয়ের ছায়া গিয়ে গিয়ে
নাফিসার মাথায় হাত দেয় আর সাথে
সাথে ঙ্গান হারিয়ে ফেলে
নাফিসা এবং নিচে ফ্লোর পরে যায়।
.
– এর পর ৪ টা জ্বীন ছায়া এসে কাইফকে
বেধে ফেলে মায়াবলে।
– কাইফ শুধু ১টা কথাই বলতে পারলো।
আমায় ছেড়ে দিন তাছাড়া ও মরে
যাবে।
.
.
.
.
– রাত১১.৪৫ বাজে কলিং বেল বেজেই
চলছে।
-বিথী ধড়পড়িয়ে ওঠে ঘুম থেকে। তবুও
কলিং বেল বাজা থামছে না।
– ও ডাইনিং রুমে যেতেই দেখল ওর মা
জাহানারা বেগম চিল্লায় বলল ঐ ছুড়ি
কই? রাতে যে একটু ঘুমাব তার উপায়
নেই। মুখপুড়ী মরছে নাকি! মরলে
ঝামেলার পা ধুয়ে উঠতাম……
.
.
.
আম্মা আপারে এইভাবে কেন বলছেন?
ওনি কি ঘুমাবেন না কি! উনি কি
মানুষ নন….
যান দেখেন এত্ত রাতে বৃষ্টির মধ্য কে
আসল?
.
– তুই চুপ থাক, পরের জন্য মায়া দেখছি
ধরে না বলে মেয়ে ধমক দিল
জাহানারা।
.
-জাহানারা লুকিং গ্লাস দিয়ে
দেখল, বারান্দায় কাক ভেজা হয়ে
দাড়িয়ে আছে তার একমাত্র ছেলে
‘রাফী’। ঢাকা থেকে আসছে সে।
.
.
.
.
-তারপর হন্তদন্ত হয়ে দরজা খুলে দেয়।
– ‘রাফী’ ঢুকে মাকে সালাম দেয় আর
বলে এত্ত সময় লাগে দরজা খুলতে?
-এমনি নাকি আমি ওকে পছন্দ করি না।
ছেলে আমার কাক ভেজা হয়ে গেছে
খুলে দেওয়ার নামই নাই। বিথী যাতো
টাওয়াল নিয়ে আয় আর মুকপুড়িকে
ডেকে বল গিয়ে খাবার গরম করতে!
.
.
.
– রাফি বেশ রেগেই গেল এবং বলল মা
আবার শুরু করছো?
তোমার ধামড়ি মেয়ে ছিলনা?
ওতো খুলে দিতে পারতো
.
– ভাইয়ের রাগ দেখে বিথী ভয় পেয়ে
যায়। টাওয়াল এনে দিয়েই দৌড়ে
চলে যায় নাফিসাকে ডাকতে। কারণ
ভাই এখন তার ভুল ধরবে আর বেশি ভুল
করে ফেললে গালে ২ টা চড়ও পড়বে।
.
.
.
– মা কেমন আছো! আর বাবা নিশ্চয়
ঘুমাচ্ছে? ওনার শরীর কি ভাল আছে….
– ধীরে বলল হুম সবাই ভালই আছে।
জাহানারা ছেলেকে বড্ড ভয় পায়।
-নাফিসা যে আজ খুলে দিলনা!ওর
শরীর কি ঠিক আছে?
-জাহানারা গজ গজ করতে করতে বলল,
ওর আবার কি হবে! ওর মত মাইয়াদের
কিছু হয়না। ওরা মানুষের সংসারে
আগুন জ্বালাতেই ভালবাসে যেমন ওর
মা আমার সংসার জ্বালাইছিল।
– মা! কিছু বললে?
.
– না! কই কিছু বলিনি তো বলে
জাহানারা ছেলে মাথার চুল মোছার
দিকে তাকালো।
.
.
– রাফী এবার মাস্টার্স কমপ্লিট করে
১টা জবে ঢুকছে পাশাপাশি এম বি এ ও
করছে।
.
.
-বিথী দৌড়ে এসে বলল আম্মা
আপাতো ঘরে নেই!
– ঘড়ে নাই মানে! কই গিয়া মরছে?
– রাফি ধমক দিয়ে বলল মা! এসব কথা
ছাড়বা না?
-ওয়াসরুম, কড়িডোর সব জায়গাতে কি
দেখছিস! না, নাদেখে এসে
চেচেচ্ছিস।
– কোথাও নেই সব জায়গাতে খুজেছি।
———————-
-বিথীর দিকে তাকিয়ে রাফি দেখল
ও ভয়ে কাপছে।
-আজব তো! ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে উঠা
এত্ত বড় মেয়ে কিনা এই সামান্য
ব্যাপার নিয়ে এই অবস্থা।
– লাইট জ্বালায় দেখছিস তো?
– হ্যাঁ ভাইয়া আপা আপা করে ডাকলাম
কিন্তু কোথাও পেলাম না।
.
.
-রাফি কি জেনো ভেবে দৌড়ে
ছাদে গেল পিছে বিথী ও দৌড় দিল।
.
.
ছাদটা ঘুটঘুটে অন্ধকার, প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে
আর মাঝে মাঝে বিজলি চমকাচ্ছে।
-চিলেকোঠা রুমের বাড়ান্দায় গিয়ে
লাইট জালালো আর মনে মনে বলল
আল্লাহ বোনকে যেন পাই এখানে।
– ছাদের শেষ দিকটাই রেলিং ঘেসে
কেউ বসে আছে দেখে রাফির আর
বুঝতে বাকি রইল না ওটা কে?
– দৌড়ে গেল ওর কাছে। এমন সময়
বিজলীর আলোয় দেখল ওর কোমড় অবদি
ছাদের পানিতে ডুবে গেছে।
– বিকট শব্দে কোথায় জানি বাজ পড়ল।
-বিথী পিছন থেকে চিল্লায় উঠল আর
সাথে সাথে লাইটি ঠাস করে ফেটে
গেল। সঙ্গে সঙ্গে ঘুটঘুটে অন্ধকার।
রাফি পিছন ফিরে বলল চিল্লাস কেন?
যা নিচে থেকে লাইট নিয়ে আয়। এই
বলে নাফিসাকে কোলে তুলে
জোড়ে আসতে গিয়ে বেলি ফুলের
টবের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল
আর সাথে সাথে নাফিসাও ছিটকে
পরে গেল।
-বিথী লাইট নিয়ে এসে জোড়ে বলে
উঠল ভাইয়া আপার মুখে রক্ত কেনন?
– রাফি ঝট করে উঠে নাফিসাকে
আবার কোলে তুলে খোড়াতে
খোড়াতে নিচে সিড়ি দিকে
এগিয়ে গেল। পায়ে বড্ড তারও
লেগেছে।
– ছেলের কোলে নাফিসাকে দেখে
আৎকে উঠল আর চিল্লে বলল ওর কি
হইছে?
-বিথী শুধু কেদে বলল আম্মা আপনার
কথা আল্লাহ শুনছে।
আপা মরে গেছে মনে হয়। ভাইয়া আপা
কি বাচবে রে……..
মাটিরও পিঞ্জিরা ভাঙ্গিয়া
চুরিয়া
একদিন তো যাইবে পাখি উড়িয়া
উড়িয়া………
নাফিসার অবস্থা দেখে এই গজলটিই শুধু
মনে পড়ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here