ধূসর ভালোবাসা পর্ব-১৫

0
884

#ধূসর_ভালোবাসা
পর্ব-১৫

সহকারি যে ছেলে গুলো নিয়াজের সাথে গিয়েছিল, তারা ফিরে এসেছে, হাবা-গোবা হয়ে আমার সামনে এসে বলল,

– ভাবি আজব কান্ড, আমরা যেয়ে দেখি যে খালু বসে আছেন সুস্থ মানুষ। কিন্তু এমন কেন করলো বুঝলাম না।

আমি ওদের সামনে কিছুই বলতে পারলাম না, কারন আমার এমনটাই মনে হচ্ছিল, নিয়াজের মা আমাকে ওদের বাসায় নিতে সব কিছুই করতে পারে। কারন নিয়াজের ব্যবসা এখন খুব ভালো চলছে। কিন্তু আমি বাড়ি না গেলে, নিয়াজও যাবে না। আর নিয়াজের ব্যবসা তার দখলেও যাবে না। তাই সে এই বুদ্ধি করেছে, যে আমি যাবো। আর ওরা সবাই আমাকে আটকিয়ে দেবে, তাহলে নিয়াজও বাসাতেই রয়ে যাবে। ওদের প্ল্যান দেখে আমার মাথা ঘুরছে। আল্লাহ আমাকে বাচিয়ে দিলেন।

কিন্তু আমার শাশুড়ি যখন এভাবে আমাকে নিয়ে যেতে পারলেন না, তখন অন্য পদ্ধতি অবলম্বন করলেন। আমাকে কষ্ট দেবার নিত্য নৈমেত্বিক বুদ্ধি। কিন্তু সে এটা কখনই ভাবলেন না যে আমার ক্ষতি মানে তার নিজের ছেলের ক্ষতি, নিজের বংশধরদের ক্ষতি।

নিয়াজ এখন দিনাজপুর একটু কম যায় কারন তার বাবা মায়ের কান্ডতে সে নিজেও কষ্ট পেয়েছে।

আমার মেয়ে এখন বেশ বড় হয়ে গেছে, সে বোঝে বাবা রাতে অন্য কোন মানুষ। রাতে বাবার সাথে কথা বলা যায় না। দিনেও যে নিয়াজ মেয়ের সাথে খুব কথা বলে তা নয়। নিয়াজের কাছে মেয়ের প্রতি ভালোবাসা নেই বললেই চলে। এর প্রধান কারন একদিন নেশা অবস্থায় বলেছিল।

মেয়ে বড় হওয়ায় অনেকেই তাকে চাচা ডাকে। আর সুন্দরী মেয়েরা চাচা ডাকলে তার কষ্ট হয়।

কোন কোন সময় খুব কাছের মানুষের আচরনে ঘৃনা আসলেও মুখ ফুটে তা বলা যায় না। সহ্য করতে হয়, ঘৃনা গুলো গচ্ছিত সম্পদের মতো আজীবন বয়ে বেড়াতে হয়।

নিয়াজকে বহু বুঝিয়েছি যেন, নেশা না করে। এতে হিতে বিপরীতই হয়েছে। আমার গায়ে হাত তুলতে নিয়াজের বাঁধে না। সে তো দিনে দিনে পিশাচ বনে যাচ্ছে।

প্রথমে ভয়ে নিয়াজকে ছাড়তে পারি নি, এখন আমার বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকিয়ে সব সহ্য করি।

এইতো সেদিন, দাদা খুব অসুস্থ। খবর পেয়ে দেখতে যেতে চেয়েছিলাম। নিয়াজ বলল,

– তুমি ডাক্তার? তুমি গেলে তোমার দাদা সুস্থ হয়ে যাবে? দোয়া করো, দোয়া। সেটাই কাজে লাগবে।

দাদা জান মারা গেলে, যেতে চাইলাম। বলল,

– তুমি কি ইমাম, যে গিয়ে মিলাদ পড়াবা?

বহুবার অনুরোধ করেও যেতে দেয়নি। বলেছে,

– এখন নিয়ে যাবার মতো সময় নেই।

– বাবাকে বলি লোক পাঠাতে?

– কাকে? ঐ ফুপাতো ভাইকে, রাকিবকে?

ঘৃনায় আর কিছু বলিনি। চুপ করে বসে থেকে কেঁদেছি। গগন বিদারী আর্তনাদ করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছিল। নিয়াজ বাড়িতে আছে, ছেলে মেয়েরা আছে তাই মন শান্তি করে কাঁদতে পারিনি।

এমনকি ইরার বিয়ের সময়, আগে আমাকে যেতে দেয়নি। গায়ে হলুদের দিন পৌছেছি, বিয়ে খেয়ে নিয়ে চলে এসেছে। বৌভাতের দিন থাকতে দেয়নি। সাথে করে নিয়ে এসেছে আমাকে। বাবা খুব রাগ করলেও শোনেনি। নিয়াজের সাথেই আমাকে চলে আসতে হয়েছে।

ভাইয়ার বিয়েতে নিয়াজ কোন ঝামেলা করেছিল না। তখন নিয়াজ বেশ ভালো ছিল। আমার শাশুড়ি তখন কম আসতেন, সে কারনে নিয়াজ সে সময় অনেক স্বাভাবিক ছিল।

নিয়াজের অনেক কুকর্মের খোজ আমি বাসায় বসে পাই, ঐ যে মুখ খুললেই……….!!

আমি চুপ করে রই, বাবাকে কিছু বলতে পারিনা। ভাইকেও বলতে পারিনা। সবাই জানে নিয়াজের অনেক টাকা, আফিফা খুব ভালো আছে। থাক সবাই এটা জেনেই ভালো থাকুক।

নিয়াজ মাঝে মাঝে গল্প করে বলে,

– আফিফা, তুমি বুড়ি হয়ে যাচ্ছো। আজ কালকার মেয়েরা অনেক মর্ডান। ঐ যে পরিচয় করিয়ে ছিলাম না, ওরা অনেক স্মার্ট।

আমি কান পেতে শুনি, আমার পেছনে যে মানুষ বছরের পর বছর ঘুরে বেড়িয়েছে। দিনের পর দিন রাস্তায় দাড়িয়ে থেকেছে তার কাছে আমি বুড়িয়ে গেছি। আজ আমি বড়ই বেমানান, সেকেলে, আনস্মার্ট।

শুনি আর ভাবি আমার কি দোষ ছিল, আমি নিজের জীবন পড়াশোনা নিয়ে নিজের ভূবনে খুব ভালো ছিলাম। কেন সে জোর করে তার জীবনে নিয়ে আসলো, আমি জানিনা।

নিয়াজের জীবনে এসে আমি, আমাকে নিয়াজের মত করেই তৈরী করেছি। তার ভালো লাগা, আমার ভালো লাগা। তার পছন্দই আমার পছন্দ। তবুও তার তিরস্কার আমার জীবনে জমানো পুঁজি।

ছেলেকে আমি নিয়াজের মতো তৈরী করতে চাই না। সে ছোট ছোট গুটি গুটি চোখে সব দেখে, বাবার কান্ড দেখে কি বোঝে জানিনা। তবে আবীর আমার ছেলে বাবার মতো রাগ পেয়েছে। আর আমি এটারই ভয় পাই। আমি চাইনা নিয়াজের এতটুকু ছায়া আবীরকে স্পর্শ করুক। নিয়াজকে অনেক বুঝিয়েছি যেন আবীরকে বোর্ডিং স্কুলে দেয়। নিয়াজ রাজি হয় না।

নিয়াজ আবীরকে খুব ভালোবাসে, কি জানি ছেলের মাঝে ভবিষ্যৎ নিয়াজকে দেখে কিনা।

মেয়েটা বড় হয়েছে, বাবার সব কিছু বোঝার বয়স হয়েছে। কিন্তু মেয়েটা খুব লক্ষি। সে বড়ই শক্ত মানুষ, আমার অবলম্বন, আর ছেলে আমার বেঁচে থাকার শক্তি। মেয়ে এখন জীবন চেনায়, জীবন শেখায়। আমি ওদের চোখ দিয়ে জীবন দেখি, স্বপ্ন দেখি। বেঁচে থাকার হিসেব টুকু মেলাই আমি ছেলেমেয়ের চোখে।

ওদের স্বপ্নেরও নিয়াজ পাখা ভাঙ্গে, ছেলে মেয়ের পড়া ছাড়া বাহিরে যাওয়া যাবে না। কোন সখ থাকা যাবে না। কারো সাথে মেশা যাবে না। তারাও যে আমার মতো রোবট হয়ে জীবন যাপন করে। যখন ঢাকায় যায়, নানীর বাড়িতে তখন তারা বাঁচার মতো করে বাচে।

আমি কখনই চাই না যে ওরা ওদের বাবাকে অপছন্দ করুক। আর তাই ওদের বাবার সম্পর্কে কোন কটুক্তি কে আমি প্রশ্রয় দেইনি।

নিয়াজ বাবাকে জানিয়েছে যে, বাড়ির মাটি কিনবে। কিন্তু কিছু টাকা লাগবে। বহুদিন পর বাবা মা আমার বাসায় এসেছে। কটা দিন খুব ভালো কাটলো। বাবা নিয়াজের হাতে বাড়ি মাটি কেনার জন্য টাকা দিলেন, আর আমাকে একজোড়া সোনার বালা পরিয়ে দিলেন। আমার জন্মদিন তাই বাবা নিয়ে এসেছেন।

জন্মদিন, আমার? ভুলেই গেছি, সেই কবে। ভুলেই গেছি সুখের স্মৃতি, ছোট বেলায় কি মজার করে সাজিয়ে গুছিয়ে আনন্দে কেটে যেত জন্মদিন গুলো। বাবা আমার জীবনের হিরোই রয়ে গেলো, কিন্তু নিয়াজ হারিয়ে গেছে বিস্তর।
ওর অবহেলা গুলো এতো বেশি যে ভালোবাসা গুলো ছায়াও ফেলতে পারে না। শুধু বাবার বাড়ি যেতে চাইলে বলে,
– তোমাকে ছাড়া থাকতে পারি না। আসলে………..

গতকাল বাবা মা এসেছেন, আগামীকালই চলে যাবেন। রাতে নিয়াজ বাড়ি ফিরেছে অন্যের কাঁধে ভর করে। পরনের কাপড় ছিন্ন ভিন্ন। সাথের ছেলেটা বলল,

– স্যার আজ একটু বেশি খেয়েছে, তাই রাস্তায় পড়ে গেছিলো।

নিয়াজের শরীরটা অসার হয়ে বিছানায় পড়ে রইল, আর আমার বাবার চোখ দুটো রক্তের মত লাল হয়ে গেলো। বাবা রাতে কিছু খেলেন না।

অবন্তি আর আবীরকে নিয়ে কথা বললেন, কি কথা বললেন, জানি না। আমাকে থাকতে দেয়নি। মায়ের চোখে আজ অশ্রুর বন্যা। কাছে এসে মাথায় হাত রেখে, কেঁদেই গেলেন মা।

পরদিন খুব সকালে বাবা মা চলে গেলেন, যাবার সময় বললেন,
– আফিফা, মা, তোমার বাবার বাড়িতে তোমার যায়গাটা ঠিক আগের মতোই আছে। তোমার জন্য আমার বাড়ির দরজা আজীবন খোলা।

আমার ছেলেটা অনেক ছোট কিন্তু মেয়েটার মাঝে বাবা কি যেন শক্তি দিয়ে গেছেন, মেয়েটা কেমন গম্ভীর হয়ে থাকছে। কি যেন চিন্তা করে সব সময়।

অবন্তি স্কুল থেকে এসে খুব কাঁদছে, কাছে গিয়ে কান্নার কারন জানতে চাইলে, বলল,

– মামনি, ক্লাসে এক ফ্রেন্ড আমার বাবা সম্পর্কে…………..

এটুকু বলেই অবন্তি কাঁদতে লাগলো। আমার সাহস হয়নি, বাকি টুকু শোনার। চুপচাপ সরে আসলাম।

নিয়াজ তোমার ছায়া আমার জীবন নষ্ট করেছে, কিন্তু আমার সন্তানদের জীবন নষ্ট হতে আমি দেবো না। এখন আমি তাদের জন্য কি করবো, তাও জানিনা।

পরদিন আমার শাশুড়ি এসেছেন। উনি আসলেই আমার এখন ভয় করে, কখন কি থেকে কি গন্ড গোল তৈরী করেন।

অবন্তির এর বান্ধবী খুব অসুস্থ, তাই বিকেলে আমি আর অবন্তি ওর বান্ধবী কে দেখতে যাবো। অবন্তি জিদ ধরলো যেন, আমার বাবার উপহার দেয়া চুড়ি গুলো পরি। আমি আর অবন্তি বাসা থেকে বের হবো, ওমনি আমার শাশুড়ি রাগ করে বাসা থেকে বের হলেন। আমি কিছু বুঝতে পারলাম না।

রাতে নিয়াজ বাড়ি ফিরলে খুব রাগারাগি করছে, আমি কারন কিছুই খুঁজে পেলাম না।
পরের দিন, নিয়াজের অফিসের একটা ছেলে বললো,

– চাচি (নিয়াজের মা) অফিসে খুব ঝামেলা করেছে, আপনাকে নিয়াজ ভাই নতুন চুড়ি বানায় দিয়েছে, চাচিকে কেন দেয়নি। এটা নিয়ে যত সমস্যা। জমির বায়নার টাকা থেকে বেশ কিছু টাকা নিয়ে গেছে।

আমি বসে বসে কেদে ফেললাম। এ ছাড়া আমার আর কি বা করার আছে।

তবে আসছে দিন গুলো যে এতো খারাপ হবে তা ভাবতেও পারিনি। আমার শাশুড়ি নিয়াজকে বহু কুমন্ত্রনা দিতে শুরু করেছে, আমি বুঝতে পারছি। কারন নিয়াজ এখন ছেলে মেয়েদের সাথেও খুব খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করেছে। নিয়াজ বাসায় থাকলে বাচ্চা গুলো কেমন যেন চুপ করে থাকে ভয়ে। ওরা সব সময় আতংকে থাকে বাবাকে নিয়ে। এটা আমার কেমন সংসার, যেখানে স্বাধীন ভাবে চলা যায় না। কথা বলা যায় না। সুখে থাকার অভিনয় করতে হয় মাত্র। ভালোবাসা এখন আমার সংসারে শৌখিনতা। আবেগ হলো শুধু শুধু বিলাসিতা।

আমার শাশুড়ি আজ দুপুর বেলায় আসলেন, সে সময় নিয়াজ বাড়িতেই ছিল। নিয়াজের মা নিয়াজের কাছে টাকা চাইল। নিয়াজ কিছু একটা বললো, আমি তাদের কথার মাঝে থাকতে চাইনা। তাই ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম।

আমার শাশুড়ি চলে গেলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম,

– মা কিসের টাকা চাইছিলেন?

– তুমি আমার কাছে কৈফিয়ত চাও?

– কৈফিয়ত চাই নি। এমনি জিজ্ঞেস করছি।

– তোমার এতো বড় সাহস।

– সাহস যদি থাকতো তাহলে, জিজ্ঞেস করতাম, যে রাতে তুমি কোথায় যাও? তোমার ইনকামের মোটা একটা অংক তুমি অন্যের সংসারে ব্যয় করো। সে পরিবারের মেয়ে আমার সামনে গল্প সোনায়- নিয়াজ ভাই খুব ভালো। আমাদেরকে এটা কিনে দেয়, সেটা কিনে দেয়। তুমি কেন অন্যের সংসারে টাকা দিবা। তোমার মা, তোমার জন্মদাত্রী। তাকে তুমি টাকা দিতেই পারো। কিন্তু বাহিরে মেয়েকে কেন?

– এতো বড় সাহস?

নিয়াজ আমার দিকে এগিয়ে এসে, এক চড় দিলো। এরপর কতক্ষন জ্ঞান ছিলো না, বলতে পারবোনা। জ্ঞান ফিরলে দেখি যে আমি মেঝেতে পড়ে আছি, মেঝেতে প্রচুর রক্ত। অবন্তি পাথরের মতে দাড়িয়ে আছে। আমি কোন রকমে উঠে বসলাম, মেয়েকে বললাম,

– মা অবন্তি, আমার কিছু হয়নি। একটু মাথা ঘুরে পড়ে গেছিলাম।

– মামনি, তুমি এর আগেও যতবার রক্তাক্ত হয়েছো, আর ততবারই তুমি বলেছো যে মাথা ঘুরে পড়ে গেছো। আমি এখন বুঝি মা, কিভাবে তোমার মাথা ঘোরে আর তুমি পড়ে যাও।

আমি মাথা নতো করে চুপচাপ বসে রইলাম। মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,

– তাছাড়া কি বলবো মা?

– মা তুমি কেন সহ্য করো?

– সহ্য না করে কি করবো?

– অনেক কিছু করার আছে, আমি যা বলবো তুমি তাই করবে। নানা ভাই যাবার সময় আমাকে টাকা দিয়ে গেছেন। আর বলেছেন, যেন কোন রকম সমস্যা হলে তোমাকে নিয়ে নানু বাড়ি চলে যাই।

– তুমি কি করতে চাইছো অবন্তি?

– আমরা নানু বাড়ি চলে যাবো মা।

– তা হয়না মা, বহুদিন আগেই আমি যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু লোক লাজের ভয়ে তোমার নানী আমাকে মানা করেছে।

– মামনি, নানী বলেছে যেন তোমাকে নিয়ে চলে যাই। নানু নানী নিজে চোখে বাবার আসল রুপ দেখেছে, উনারা চাননা যে তুমি আর কষ্ট পাও। আর না মামনি, অনেক হয়েছে। বাবার সাথে আর নয়। চলো আমরা চলে যাই। তোমাকে বুদ্ধি পড়ে মন খুলে হাসতে দেখিনি। সারা জীবন কষ্ট করে পার করলে, এখন একটু বাঁচার মতো করে বাঁচো মা, বাকিটা জীবন তোমাকে সুখে শান্তিতে স্বাধীন ভাবে দেখতে চাই মামনি।

অবন্তির কথায় অবাক হলাম, মেয়েটা আমার বড় হয়ে গেছে। সে কেমন বড় বড় কথা বলছে।কিন্তু তাই বলে, আমার তিলে তিলে গড়া সংসার কি করে ছেড়ে যেতে পারি। বেলকনিতে বসে, আকাশের দিকে তাকিয়ে বহু এলো মেলো কথা মনে পড়তে লাগলো। তারপর মনে হলো, সত্যি তো, এভাবে আর কত? আমি মানুষ, নিয়াজ তা ভুলে গেছে। নিয়াজের ধারনা আমি একটা খেলনা। যখন মন চাইবে ভালোবাসবে, আবার মন চাইলে ছুঁড়ে ফেলে দিবে। আসলেই জীবনে আমার কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব জরুরী। এভাবে আর কতো?

মেয়ের হাত ধরে, জিজ্ঞেস করলাম,

– মা, আজ আমি খুব অসহায়। আমার চিন্তা করার ক্ষমতা টুকুও হারিয়ে গেছে। তুই বল, কি করবো?

– মামনি , আর কোন চিন্তা নয়। বাবা সকালে বাহিরে গেলে, আমরাও চলে যাবো।

– লুকিয়ে যাবো মা? পালাবো আমরা?

– না মা, আমরা নতুন কর বাঁচার জন্য চলে যাবো। এটা পালানো নয়।

-তাহলে আমরা এখন কি করবো?

-কাল সকালে বাবা বাহিরে গেলে আমরাও চলে যাবো মা, এটাই করতে হবে। মা আর কোন রাস্তা নেই।

পুরো বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখলাম, এই সংসারটা আমার নিজের হাতে গড়া। শূন্য থেকে শুরু করেছিলাম। আজ আমার সাজানো গোছানো সংসার। শুধু গোছাতে পারিনি ভালোবাসার মানুষটাকে। সে হারিয়ে গেছে অন্য জগতে। আসলে শুরু থেকেই সে এরকম ছিলো, আমি শুধু চিনতে ভুল করেছি।

বাড়ির প্রতিটা আসবাব পত্র আমার পছন্দ তরে কেনা, অনেক কিছু নিজে হাতে তৈরী করা। সমস্ত বাড়িতে আমার স্পর্শ একে দেয়া। আমি কি করে থাকবো, আমার গোছানো সোনার সংসার ছেড়ে।

#সিরাজুম_মনিরা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here