ধূসর ভালোবাসা পর্ব-২৫

0
789

#ধূসর_ভালোবাসা
২৫তম পর্ব

রাজু আঙ্কেল যাবার আগে উনার মোবাইল নম্বরটা দিয়ে গেলেন, আমারটাও নিয়ে গেলেন। উনার সাথে আর বেশি কথা হলো না। রাতে খাবার পর দাদি আর বড় ফুপু আমাকে আর আবীরকে একটা নির্জন ঘরে নিয়ে গেলেন, আমার পাশে বসে ফুপু বললেন,

– তোমার আম্মার সাথে দেখা করার খুব ইচ্ছে আমার, কিন্তু কোন মুখে দাঁড়াবো! জীবনে অনেক ভুল করেছি মা। আমাদের হয়ে তোমার আম্মাকে বলো, যেন আমাদের মাফ করে দেয়। আমরা আসলেই ভুল করেছি, সে আমাদের বাড়ির লক্ষী ছিল। আমার ভাইয়ের জীবনের লক্ষী ছিল। কিন্তু আমরা তা বুঝতে পারিনি। তার শাস্তি আল্লাহ আমাদের দিয়ে দিলেন। তবে তোমার আব্বা, সারাটা জীবনে শুধু তোমার আম্মাকেই ভালোবেসেছে। উনাকে বোলো, আমাদের যেন ক্ষমা করেদেন।

আমি চুপচাপ বসে রইলাম। আবীর আমার পাশে বসা। চিন্তা হচ্ছিল, আবীর আবার কিছু বলে না দেয় মুখের উপর। ছোট মানুষ, ধৈর্য্য কম। এবার যে নিজের মুখে, নিজের দোষ স্বীকার করলেন। সেটা আসলেই অবিশ্বাস্য। আমার দাদি বললেন,

– দাদুরে জীবনে আমিও ভুল করেছি। যাকে মূল্য দেইনি, সেই আসলে আমার সংসারের লক্ষী ছিল। তাকে দূরে সরিয়ে, ভুল মানুষকে ঘরে এনেছি। আমি জীবনে ভুল করেছি। তোমার আম্মার কাছে আমার হয়ে তোমরা মাফ চায়ে নিও। আমার চোখের সামনে আমার ছেলে চলে গেলো, আমার জীবনে এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু নাই। তোমার আব্বা মারা যাবার আগে তোমাদের দেখার জন্য খুব অস্থির হয়ে গেছিল।

জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হচ্ছিল, তাহলে কেন আমাদের খবর দেয়া হলো না। তারপর ভাবলাম, এ প্রশ্ন হয়ত ভিত্তিহীন। এ সময়ের জন্য অর্থহীন।

বাহিরে চিৎকার চেচামেচি শুনে সবাই দৌড়ে গেলাম। যেয়ে দেখি, আমার দাদা অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছেন। সবাই তাকে তোলার চেষ্টা করছেন। আমি এক গ্লাস পানি নিয়ে তার মুখে কিছুটা ছিটিয়ে দিলাম। উনার কিছুক্ষন পর জ্ঞান ফিরলে, সে আহাজারি করে কাঁদছেন। আর বলছেন,

-কেন আমার ঘাড়ে নিজের সন্তানের লাশ দিলা আল্লাহ। আমার কষ্ট যে সহ্য হচ্ছে না। আমি বাবা পড়ে রইলাম, আর আমার সন্তান চলে গেলো। আল্লাহ কোন পাপের শাস্তি দিলা। আল্লাহ আমার কোন পাপের শাস্তি দিলা।

উনি কত কথা বলে কাঁদছেন। সারাদিন দাদু কিছু খায়নি। সবাই খুব চেষ্টা করেও খাওয়াতে পারেনি। আমি দাদির কাছে থেকে দাদুর খাবারটা নিয়ে তার সামনে বসলাম। হাতে ভাত নিয়ে তাকে বললাম, খেয়ে নেন দাদু। নইলে আপনার শরীর খারাপ করবে। দাদু আমাকে দেখে আরো জোরে কাঁদতে লাগলেন। বাড়ির সবাই কাঁদছেন। আমি নিশ্চুপ, বাড়ির বারান্দায় এসে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম,

বাবা হারানোর যন্ত্রনা আমি জানি, কারন জাগতিক জীবনে আজ আমি এতিম, কিন্তু মনস্তত্ত্বিক ক্ষেত্রে আমি বহু আগেই এতিম হয়ে গেছি। কিন্তু তবুও আমার বুকের মধ্যে আজ বাবাকে চিরতরে হারানোর কঠিন যন্ত্রনা হচ্ছে। বাবা তুমি জিতে গেলে। অনেক কিছুর সম্মুখীন তোমাকে হতে হলো না। তুমি কল্পনাও করতে পারবে না বাবা, কতটা গ্লানি নিয়ে চলতে হয় আমাদের। বন্ধুরা বাবার গল্প করে, কত আবদার, আহ্লাদের গল্প করে বাবাকে নিয়ে। আর আমার পালা আসলে আমি বলে দিতাম তুমি নেই। তুমি ……………..

আজ তুমি সত্যি সত্যিই অনেক দূরে, সবার ধরা ছোয়ার উর্ধ্বে। তোমাকে বহু প্রশ্ন ছিলো জিজ্ঞেস করার। বহু কথা ছিল বোঝাপড়ার। কত হিসেব বেহিসেবী রয়ে গেলো। তুমি আসলেই জিতে গেলে। চলে গিয়ে জিতে গেলে।

রাতে দাদু আমাদের ডেকে বাবার সম্পত্তির কথা বলতে চাইছিলেন, আমি আবারও বললাম-

-বাবা যখন জীবিত ছিল, তখন আমাদের হয়নি, হয়েছে অন্যের। আমরা বাবাকে ছাড়াই জীবন গড়তে পেরেছি। এখন বাবার সম্পত্তির কোন প্রয়োজন আমাদের নেই। বাবার কোন সম্পত্তি আমরা দুই ভাইবোন নেব না।

দাদু অন্যমনস্ক হয়ে কিছু ভাবলেন, তারপর আর কেউ কিছু বললেন না। আমি তাদের যতটা চিনি, আমরা সম্পত্তি না নিলে, উনারা সবাই খুশিই হবেন।

সকালে আরেকবার আমার দাদা বাড়ির অনেকেই তাদের কর্মের জন্য দু:খ প্রকাশ করলেন। ক্ষমা চাইলেন। নাস্তা করেই আমরা রওনা দিলাম। সবার সাথে দেখা করে, বিদায় নিয়ে রওনা দিলাম।

রাস্তায় বারবার আমার চোখ ভিজে উঠছিল। মনে হচ্ছিল, যাদের ছেড়ে যাচ্ছি এরা আমার আপন, আমার রক্ত। তাদের সাথে দুটোদিন একসাথে থেকে মনের কোন এক কোনে তাদের জন্য মায়া বসে গেছে। অথচ বছরের পর বছর বাবাকে ছেড়ে আমরা দূরে, বাবার কি কখনই কষ্ট হয়নি। এটা আমার দাদা বাড়ি, ভাবতেও ভালো লাগছে। এই মানুষ গুলো আমার আপন, আত্নার আত্নীয়। অথচ তোমাদের থেকে বেশি ক্ষতি আমার জীবনে আর কেউ করেনি। তোমাদের সাথে আমার রক্তের সম্পর্কের বাহিরে আরো একটা সম্পর্ক আছে, তাহলো শত্রুতার সম্পর্ক।

দাদির চেহারা মুখের সামনে ভেসে উঠছিল, আজ সন্তান হারানোর পর তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছো। কই এতোদিন একবারো কি তুমি তোমার ভুল দেখতে পাওনি? তোমার মনে হয়নি, আমার ছেলে আমাদের সবচেয়ে ভালোবাসে। জীবনের সমস্ত রোজগার হাসি মুখে আমাদের হাতে দিয়ে দেয়। থাকনা যদি আফিফা আর ওর সন্তানদের সাথে সুখে থাকে।

তোমার সহ্য হয়নি সন্তানের সুখ। দাদি জানো আজ তোমাকে মায়া যতটা হয়েছে, করুনা হয়েছে তারচেয়েও বহু গুন। বাবাকে ছাড়া পথ চলতে আমরা শিখে গেছি। কিন্তু তোমার কি হবে? তোমার অন্য কোন সন্তান, তোমাকে নিয়াজের মতো করে পুজোর আসনে বসায় না। অন্য ছেলেরা তাদের রোজগারের সবটা কেন, এক কোনাও তোমার হাতে দেবে না। আফসোস, তুমি আমার থেকে আরো বেশি ভুক্তভোগি হবে, তোমার ছেলে নিয়াজের অবর্তমানে। আজ তোমার জন্য সত্যি করুনা হচ্ছে।

মনে পড়লো, মামনি ডায়রিতে লিখেছিল, প্রকৃতি যেন বাবার কর্মের ফল বাবাকে দেয়। মামনি এটাও লিখেছিল যে, মামনি মারা গেলে যেন বাবা মামনিকে মাটি না দেয়, শেষ দেখাটাও যেন না দেখে। আবার বাবা মারা গেলে, মামনি বাবাকে শেষবারের জন্য দেখতে যাবে না।

কিছু কথা আমরা মনের অজান্তেই বলি, কিন্তু বিধাতা তা কবুল করে নেন। মামনি যদি আজ বাসায় থাকতো তাহলে, হয়ত বাবাকে শেষবার দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে ছুটে আসতো। কিন্তু বাবার মাটি হয়ে গেলেও মামনিকে খবর পৌঁছানো যায়নি, বাবার মৃত্যর। এখন আর জানাতেও চাচ্ছি না। আগে বাসায় আসুক মামনি। তারপর বলবো।

সাদ ফোন দিয়েছে সকাল থেকে বেশ কয়েকবার। কিন্তু কথা বলা হয়নি। সাদের সাথে কথা বলা দরকার। সাদকে ফোন দেবার সাথে সাথেই রিসিভ করলো,

– সকাল থেকে তোমার জন্য চিন্তা হচ্ছে, ফোন ধরোনা কেন?

– সবার সাথে একে একে কথা বলে বিদায় নিতে দেরি হয়ে গেলো।

– তুমি কিন্তু অনেক ধৈর্য্যের পরিচয় দিলে। এতো কিছুর মাঝেও কারো কোন কথার উত্তর করোনি।

– আমার মামনি যে আমাদের এভাবে তৈরী করেনি। আমরা বড়দের অন্যায় দেখে তবুও মুখের উপর সত্যটা বলতে পারিনা। আর তাই কারো কোন কথার উত্তর করিনি। আর, বলারও তেমন কিছু নেই।

– তোমরা কখন নাগাদ পৌঁছাবে?

– হয়ত সন্ধ্যা হয়ে যাবে।

আবীরের সাথে সাদের পরিচয় আছে। আফরীনের ভাই এবং আমার খুব ভালো বন্ধু হিসেবে। সাদ আর আবীরের মাঝে এখন বেশ ভালো সম্পর্ক। তবে সাদ বাড়ি যায়না বহুদিন। কারন সাদের ধারনা, বাড়ি গেলেই ওর বাবা যে করেই হোক ওর বিয়ে দিয়ে দেবে। আমি অনেক বুঝিয়েও কোন কুল পাইনি। আমি চাইনা, আমার জন্য বাবা ছেলের সম্পর্ক নষ্ট হোক। আর সে কারনে আমি এখন আর সাদের সাথে দূরত্ব বজায় রাখি। নিয়মিত কথা বলি না। দেখা করিনা, ফোনটাও সবসময় ধরিনা। আমি চাই সে তার বাবা মায়ের কাছে ফিরে যাক। জোর করে এ পৃথিবীতে কোন কিছু পাবার ইচ্ছে আমার কোন দিন ছিল না, আর হবেও না।তবে এতে কষ্ট আমিই বেশি পাই। কি করবো কষ্ট আমার যে ভাগ্যের লেখন।

পরদিন আমি অফিসে, একটা অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসলো। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বললো,

– আমার নাম সেভ করোনি মা?

– কে রাজু আঙ্কেল?

– হুম মা।

– সরি আঙ্কেল, সেভ করা হয়নি। কেমন আছেন?

– ভালো আছি, তোমরা?

– আছি এক রকম। সন্ধ্যার দিকে মামনি বাসায় ফিরবে আঙ্কেল, তাই খুব চিন্তা হচ্ছে।

রাজু আঙ্কেল কিছু বলতেন, আমি তাকে বললাম, আঙ্কেল আমি অফিসে। বের হয়ে আপনাকে কল করি?

মামনি বাড়ি ফিরলে কিভাবে তাকে বলবো, মামনি কিভাবে নিবে, বাবার মৃত্যূর খবর। এসব ভাবতে ভাবতে মাথা ঘুরে উঠছে। অফিসে ছুটি নিয়েছি আগামীকাল। কারন আগামীকাল সারাটা দিন আমি মামনির সাথে থাকবো। তার কোন রকম ক্ষতি আমি হতে দেবো না। সে ছাড়া আমার জগত অন্ধকার।

অফিস থেকে একটু আগেই বের হয়ে এসেছি। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে রাজু আঙ্কেলকে ফোন দিলাম। উনি বললেন,

– মা তোমার বাবার কিছু না বলা কষ্টের কথা তোমাদের জানানোর জন্যই ফোন দিয়েছি। নিয়াজের মৃত্যূর খবর শোনার পর থেকে আমার শরীরটাও ভালো লাগছে না। মনে হচ্ছে, যদি শেষ পর্যন্ত নিয়াজের জীবনের শেষদিন গুলোর কথা তোমাদের না বলতে পারি, তবে মরেও শান্তি পাবো না।

– আঙ্কেল এমন করে বলেন না, আপনার কিছু হবে না। আর আপনি বলতে পারেন এখন আঙ্কেল। আমি হাতে সময় নিয়ে আপনাকে ফোন করেছি।

– তোমরা চলে যাবার পর নিয়াজ বেশ কিছু বছর খুব উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করে। আসতে আসতে ব্যাবসা কর্মচারীদের হাতে চলে যায়। সে কিছুই তেমন দেখতো না। যখন জীবন থেকে তার চাওয়ার কিছু জিনিস হারিয়ে যায়, তারপর সে তোমাদের শূন্যতা অনুভব করে, এবং আমার কাছে আসে। এরপর থেকে আমার সাথে বেশ ভালো যোগাযোগ হয়। সব ক্ষেত্রেই আমাকে যেতে হতো তোমার বাবার কাছে, নইলে সে খুব দু:খ পেতো। সে দিন গুলো ছিল অন্যরকম। নিয়াজ তখন সবসময় ড্রিংক করে থাকতো। বিষন্যতা তাকে পুরো পুরি গ্রাস করেছে, সে সবসময় তোমাদের কথা ভাবতো। কিন্তু কোন মুখে দাঁড়াবে তোমাদের সামনে। এর মাঝে তোমার দাদি নিয়াজকে না জানিয়ে নিয়াজের বিয়ে ঠিক করে। আত্নীয় এর বাড়িতে যাবার নাম করে তোমার বাবাকে নিয়ে গিয়ে জোর করে বিয়ে করায়। তোমার দাদি নিজের কসম দেয়, যেন তোমার বাবা বিয়ে করে। এক পর্যায়ে নিয়াজের মনে হয় যে, বিয়ে করাটাই বুঝি ভালো। নিয়াজ আমাকে এভাবেই বলেছে। তবে আসলেই বিয়ের কথা নিয়াজ আগে থেকে জানতো কিনা, আমি নিজেও তা বুঝতে পারিনি। এরপর থেকে নিয়াজের জীবন আরও কেমন যেন হয়ে গেলো। নিয়াজের বাড়িতে নিয়াজ নিজেই পর হয়ে গেলো। নতুন বৌ খুব গরিবের মেয়ে। তার বাবার বাড়ির আত্নীয়রা বেশি সময় নিয়াজের বাড়িতেই থাকতো। নিয়াজ প্রায় বলতো যে, বাড়িতে যতই বেশি করে বাজার করেদিক না কেন, নিয়াজের জন্য সেটাই থাকতো, যা ঐ মেয়েটার বাবার বাসার লোকেরা খাওয়ার পর বাঁচতো। নিয়াজে রাতে ঘুমের মধ্যে প্রায় সময় আফিফার নাম ধরে ডাকতো। ঘুম থেকে উঠে তোমাদের খুঁজতো। তোমাদের জন্য অস্থির হয়ে যেতো। নিয়াজের ঘরে পরপর দুটো ছেলে সন্তান আসলো। কিন্তু নিয়াজের অন্তর আত্না শুধু আফিফা, অবন্তি আর আবীরকেই খুঁজে বেড়াতো। নিয়াজ যতটা সম্ভব ওর অফিসেই থাকতো, বাসায় সেই বৌ সবসময় খিচখিচ করতো, ঝগড়া করতো। নিয়াজ কোন কথা বলার সুযোগ পেতো না, কারন ঐ মেয়েটা কি যেন নাম, সোভা। ওর বাবা ভাই সহ আরও সব আত্নীয় নিয়াজের বাসাতেই থাকতো। নিয়াজ কোন কথা বলতে গেলে উল্টো ওরাই চেচামেচি করে হট্টগোল করতো। তাই নিয়াজ নেশার মাঝেই সুখ খুঁজে নিল। দিন রাত নেশা। ঈদের দিন গুলোতেও নিয়াজ স্বাভাবিক হতে পারতো না। ঈদের দিন একটা খাবার সে মুখে দিতো না। শুধু বলতো, আফিফার মতো রান্না হয় না। আমার অবন্তি আর আবীরকে ছাড়া কোন কিছু কিভাবে খাবো। এসব নিয়েও অশান্তি হতো। ঐ যে সোভা মেয়েটা সব জেনেই বিয়ে করেছিল, নিয়াজের আফিফার সম্পর্কে সব জেনেও নিয়াজের টাকার লোভে বিয়ে করেছিল। নিয়াজ কুরবানি ঈদ গুলোতে ঘর থেকেও বের হতো না। ঈদের দিনের একটুকরো মাংস সে মুখে দিতো না। আমি নিজেও চেষ্টা করে পারিনি তাকে খাওয়াতে। জীবনের এই দিন গুলোতে নিয়াজ খুব খারাপ সময় পার করেছে। সে সোভাকে পুরো পুরি আপন করতে পারেনি, আবার তোমাদেরকেও ভুলতে পারেনি। তোমার দাদির সাথেও শোভার সম্পর্ক ভালো ছিলনা। সে আর আসতো না নিয়াজের বাসায়। কারন সোভা তোমার দাদিকে মোটেও পছন্দ করতো না। আমি নিয়াজকে খুব কাছে থেকে দেখেছি মা, সেই ছোট বেলা থেকে। এটাই বুঝেছি, নিয়াজ ছোট থেকেই বখে গেছিল। সে হয়ত ছোটতেই তার জীবনের লক্ষ্য হারিয়ে ফেলেছিল। নিয়াজের জীবনে আনন্দ ফুর্তি এটাই মূখ্য বিষয় হয়ে যায়, তাই জীবনে কোন জিনিসটা মূল্যবান প্রয়োজনীয়, আর কোনটা মূল্যহীন তা নিয়াজ কখনও বুঝতেও পারেনি। তোমরা থাকতে তোমাদের মূল্য বুঝতে পারেনি, অন্য কাউকে আপন করতে গেছিলো। আবার জীবন যখন নতুন করে শুরু করলো, তোমাদের প্রতি ভালোবাসার উদগ্রীব হলো, যা তাকে তার বর্তমান জীবনের প্রতি উদাসীন করে দিয়েছিল। নিয়াজ সব সময় দূরে সুখ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সুখ যে তার কাছেই আছে, সেটা সে কখনই উপলব্ধি করতে পারেনি। সুখের খোঁজে ছুটে ছুটে, শেষ জীবনে সুখ ওর কপালে জোটেনি। জীবনের প্রতি একবুক হাহাকার, আর নিজের ভুলের আক্ষেপ নিয়ে, শেষ জীবনে বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই ওর হারিয়ে গেছিলো। তোমাদের সামনে দাঁড়াবার মুখ ছিলনা, তাই বিলাপ করে ফিরতো তার ভুলের প্রতি। ভালো ছিলনা নিয়াজ, জীবনের শেষ বেলায়। এক্সিডেন্ট এরপর ডাক্তার বার বার বলেছে, পেসেন্ট নিজে থেকে বাঁচার কোন চেষ্টাই করছে না। আসলে ওর বেঁচে থাকার ইচ্ছে হয়ত আর অবশিষ্ঠ ছিল না। আর আজ এতো গুলো কথা তোমাকে বলার একটাই কারন, আফিফার জীবনটা নষ্ট হবার জন্য আমি যে দায়ী। যৌবনের ঐ দিনগুলোতে যদি সংযত থাকতাম, তাহলে আমার জন্য একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হতো না। আমার কারনেই নিয়াজ আফিফার জীবনে এসেছিল। আজ আমি আফিফার কাছে ক্ষমা চাইতে চাই। আফিফার ক্ষমা পেলে বাকি জীবনে একটু শান্তির সাথে বাঁচতে পারতাম। আজ কতগুলো রাত আমি নির্ঘুম কাটাই।

#সিরাজুম_মনিরা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here