ধ্রুবতারা পর্ব_১৫ পুষ্পিতা_প্রিমা

ধ্রুবতারা
পর্ব_১৪
পুষ্পিতা_প্রিমা

সকালের ঘোলাটে কুয়াশার চাদর কেটে গেল সূর্যিমামার আগমনে। ধীরে ধীরে চারপাশে আলো ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। কনকনে ঠান্ডায় জমে যাওয়ার মতো অবস্থা। সেই আধো আধো কুয়াশার মাঝে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল রাহা। গেইট খুলে ঠকঠক করে কাপঁতে কাঁপতে পৌঁছালো তালুকদার বাড়িতে। দরজা ঠেলে ঢুকতেই জাহেদা দৌড়ে এল। রসিকতা করে বলল
‘ ওমা আমার নাতবউ যে? এত সকাল সকাল তোর ডাক্তার বর কোথায়?
রাহা মাথা নাড়িয়ে বলল
‘ ডাক্তার?
জাহেদা বলল
‘ হ্যা। সে তোকে একা ছাড়লো কিভাবে?
রাহা বলল
‘ ডাক্তার আমাকে বকেছে, বলেছে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। তাই আমি তাকে ছেড়ে চলে এসেছি।
গায়ে শাল জড়াতে জড়াতে আনহা এল। বলল
‘ কার সাথে কথা বলছ আম্মা?
রাহাকে দেখে সামান্য অবাক হলো আনহা। বলল
‘ রাহা তুমি? এসো।
রাহা গিয়ে সোফায় বসলো। পা নাড়াতে নাড়াতে বলল
‘ তোমার মেয়ে। মানে নুহা না টুহা ওকে ডাকো।
আনহা ডাক দিল। নোহা হাঁপাতে হাঁপাতে এল। রাহাকে দেখে বলল
‘ আরেহ রাহাপু তুমি কেমনে এখানে আসলা?
রাহা পা নাড়াতে নাড়াতে বলল
‘ ডাক্তারকে ভয় দেখানোর জন্য চলে এসেছি। ভালো করেছি না?
নোহা বলল
‘ খুব ভালো করেছ। তোমার ডাক্তার সেইরকম জব্দ হবে।
রাহা দৌড়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে আসলো। বলল
‘ ডাক্তার আসলে বলবে না কেমন?
জাহেদা হেসে ফেলল। বলল
‘ ওরে নাতবউ তুই তো সেইরকম চালাক দেখছি। আহা আজ আমার জুননু থাকলে কত আদর যত্ন করতো ছেলের বউকে। ভাবতেই অবাক লাগছে আমার জুননু তোর শ্বাশুড়ি।
জায়িদ হাতের ঘড়ি পড়ে আসতে আসতে বলল
‘ জুননুকে নিয়ে কি কথা হচ্ছে আম্মা?
জাহেদা আনহাকে বলল
‘ এই দেখ বোনের কথা তুললেই সে হাজির।
আনহা হাসলো।
রাহা গালে আঙুল দিয়ে বলল
‘ জুননু আমার শ্বাশুড়ি?
আনহা বলল
‘ হ্যা। আর গুড্ডু তোর শ্বশুরআব্বা।
হাসলো রাহা। কি সুন্দর নাম? জুননু গুড্ডু। আর আমার বরের নাম মুননু?
জাহেদা কপাল চাপড়ে বলল
‘ খোদা খোদা তুই আবার ডাকিস না। সেইরকম রেগে যাবে। আমাকে তো কালই বারণ করেছে। নানু আমাকে মুননু ডাকবে না। ওটা আম্মা আব্বা ছোটবেলায় ডাকতো। তারা নেই তাই এই নামে ডাকবেনা। আমার অন্য নাম আছে সেটা ও আম্মা আব্বা দিয়েছে। ওই নামে ডাকবে।
রাহা হেসে বলল
‘ আমি তো মুুননু ডেকেছি। তাই বর রেগে গেছে।
জাহেদা বলল
‘ হয়েছে তুই তো কাম সারলি। যাহ এবার যাহ করার কর।
রাহা খিলখিল করে হাসিতে ফেটে পড়লো। জায়িদ বলল
‘ আহা আমার মামাটাকে জ্বালিয়ে মারছিস রাহা।
রাহা বলল
‘ বরকে জ্বালাতে ভালো লাগে।

দরজায় কলিং বেল বাজলো। রাহা আঁতকে উঠে দৌড়ে রান্নাঘরে চলে গেল। লুকিয়ে থাকলো। সবাই মিটিমিটি হাসলো। জাহেদা গিয়ে দরজা খুলে গম্ভীর গলায় শুধালো
‘ কি জন্য এসেছিস ভাই? কত ডাকতে হয় তারপর আসিস, আজ ডাকা ছাড়া। ব্যতিক্রম মনে হলো।
রোয়েন বলল
‘ আমার ও ব্যতিক্রম মনে হলো। অন্যদিন আমি আসলে তুমি টেনে ঘরে ঢুকাও। আজ?
জাহেদা ভড়কে গেল। সরে বলল
‘ আয় আয়। ওমা এটা কোনো কথা?
রোয়েন এদিকওদিক তাকিয়ে বলল
‘ রাহা এসেছে এখানে?
জাহেদা বলল
‘ না না না। কোথায় রাহা? তুই কি ওকে এখানে আসতে দিস?
রোয়েন বলল
‘ কম কথা বলো নানু। বেশি কথা ভালো লাগেনা আমার।
আনহা বলল
‘ কফি দেব আব্বা?
রোয়েন এদিকওদিক তাকাতে তাকাতে বলল
‘ খাব না এখন। রাহা এখানে আসেনি?
আনহা বলল
‘ না আসেনি তো।
জায়িদ আর নোহা মিটিমিটি হাসলো। রোয়েন বলল
‘ কফি পরে খাব। রাহা কোথায় চলে গেছে আবার?
জাহেদা হেসে করে বলল
‘ ওররে বউ পাগলা। এখন একদম বাপের মতো লাগছে। আমার জুননুকে দুই দিনের জন্য ও এখানে এসে থাকতে দেইনি তোর বাপ। দিনের বেলা এসেছে সন্ধ্যা হতে না হতেই নিয়ে যাওয়ার তাড়া।
রোয়েন রেগে গেল।

আনহা বলল
‘ আহা আম্মা তুমি নাতির সাথে এসব কি কথা বলো?
জাহেদা বলল
‘ সর। ও নাতি আমার। যা ইচ্ছা তা বলতে পারবো আমি।
জায়িদ ঠোঁট টিপে হাসলো। নোহা জায়িদের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। ইশশ মামার মতো তার ও একটা বর চায় ।

রোয়েন রেগে বলল
‘ সবসময় ফালতু কথা নানু। এসব করে কি মজা পাও তুমি? কতবার বলেছি ইয়ার্কি পছন্দ না আমার।
জাহেদা বলল
‘ আচ্ছা আচ্ছা। আর বলব না। যাহ তোর বউ কোথায় পালায় গেছে খুঁজে আন। রোয়েন বলল
‘ পালাবে কেন?
জাহেদা তওবা করে বলল
‘ তওবা তওবা ভুল হয়ে গেছে। পালাবে কেন? ভুল হয়ে গেছে ভাই। মাফ কর।
রোয়েন গটগট পায়ে হেঁটে বের হয়ে গেল। দৌড়ে রাহা এল। হাসতে হাসতে সোফায় শুয়ে পড়লো সে। জাহেদা বলল
‘ জব্দ হোক তোর বর। দেখি বউরে খুঁজে না পেয়ে কি করে সে?

অর্ধেক রাস্তা অব্দি গিয়ে হেঁটে আসলো রোয়েন। আবার বাড়িতে চলে এসে পুরো বাড়ি হাঁটল। তার হাঁটার ধরণ দেখে বুঝার উপায় নেই সে কাউকে খুঁজছে। সোরা এসে বলল
‘ রাহা কি এখনো ঘুম থেকে উঠেনি আব্বা ?
রোয়েন চমকে উঠে বলল
‘ হ্যা। রাহা? হ্যা উঠেছে তো। কিন্তু?
সোরা বলল
‘ কিন্তু কি?
রোয়েন বলল
‘ রাহা কোথায় যেন চলে গিয়েছে। আমি সামান্য বকেছি। কেঁদে উঠে কোথায় যেন চলে গেছে। অনেক খুঁজেছি, পাইনি।
সোরা বলল
‘ কোথায় যাবে সকাল সকাল?
নোহার কাছে যায়নি তো?
রোয়েন বলল
‘ আমি গিয়েছি, নানু বলছে রাহা ওখানে যায়নি।
সোরা বলল
‘ আচ্ছা আমি তোমার বাবাইকে বলছি। দাঁড়াও।

রোয়েন হেঁটে হেঁটে রুমে চলে গেল। রাহা সব কাপড় এলোমেলো করে চলে গেছে। এখন এসব ভাঁজ করার সময় নেই। রাহাকে খুঁজে বের করতে হবে। কোথায় যেতে পারে রাহা? খুঁজে বের করে কয়েকটা চড় দিতে হবে আগে।

নাহিল দরজা ঠেলে রুমে ডুকলো। উৎকন্ঠিত গলায় বলল
‘ কোথায় যাবে রাহা? এতকিছু করছো বকা দেওয়ার কি দরকার ছিল?
রোয়েন বলল
‘ বকা দেব না? উল্টাপাল্টা বকবক করছে। মাথা খাচ্ছে সকাল সকাল।
নাহিল বলল
‘ তো কোথায় যাবে এখন?
রোয়েন বলল
‘ কোথায় যাবে? আশেপাশে আছে হয়ত। আমি দেখছি চিন্তা করোনা।

রোয়েন রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ালো। গলায় মাফলার। ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে যেন। বিরক্তি বাড়ছে তরতর করে। রোয়েন হেঁটে হেঁটে তালুকদার বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। বাগানের দিকে যাবে। রাহা হয়ত ওখানে। কিন্তু বাড়ির পাশ দিয়ে যেতেই বাড়ির ভেতর থেকে হাসাহাসির আওয়াজ এল। রোয়েন দাঁড়িয়ে গেল। দরজার কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়াতেই মেজাজ চটে গেল ওর। চোয়াল ফুলে উঠলো। জোরে দরজা ঠেলে দিতেই দরজা দু ফাঁক হয়ে গেল৷ সবাই হতভম্ব চোখে রোয়েনের দিকে তাকালো। রাহা সোফায় বসে থাকলো চোখ বড় বড় করে। রোয়েন হনহন পায়ে হেঁটে চলে গেল। রাহা পিছু দৌড়ে যেতে যেতে বলল
‘ এই ডাক্তার দাঁড়ান। রাগ করেছেন?
সবাই হাসিতে ফেটে পড়লো। জাহেদা চিল্লিয়ে বলল
‘ ভাই বউয়ের সাথে আর রাগ করিস না। তোর পাগল বউ। আর রাগ টাগ করিস না।

রোয়েন বাড়িতে ডুকে দরজা বন্ধ করে দিল। রাহা বাড়ির সদর দরজা ঠুকাতে ঠুকাতে বলল
‘ এই ডাক্তার আমি আর করব না এমন
নাহিল সোরা দৌড়ে এল রাহার ডাক শুনে। নাহিল এগিয়ে যেতেই রোয়েন ডাক দিল
‘ বাবাই দরজা খুলবে না খবরদার। থাকুক ওখানে। আর জীবনে ও যদি ও আমার সাথে কথা বলতে আসে খবর আছে।
নাহিল আর সোরা মাথা নামিয়ে হাসলো। রোয়েন রুমে চলে যেতেই নাহিল দরজা খুলে দিল। সোরা বলল
‘ তুমি? তুমি?
নাহিল বলল
‘ আব্বা।
রাহা বলল
‘ হ্যা আব্বা। ডাক্তার রাগ করেছে আব্বা?
নাহিল হেসে বলল
‘ তুমি রাগিয়ে দিয়েছ, এখন কি করার?
রাহা কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল
‘ মুননু ডেকেছি তাই বকা দিয়েছে। আমি তো পানিশ দিয়েছিলাম।
নাহিল বলল
‘ এবার তোমাকে তোমার ডাক্তার পানিশ দেবে।
রাহা তাড়াতাড়ি বাড়িতে ডুকে রোয়েনের রুমের দিকে পা বাড়ালো। দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। রোয়েন রাহার সব কাপড় নিচে ফেলে দিয়েছে। রাহা ঘরে ডুকে সব দেখে গালে হাত দিল। বলল
‘ আমাকে ঘর থেকে বের করে দেবেন ডাক্তার?
রোয়েন বলল
‘ হ্যা। তাননার ঘরে চলে যাও। তোমার সব কাপড় চোপড় জিনিসপত্র নিয়ে। যাও। এখানে থাকবে না। যাও।
রাহা ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিল। রোয়েন কাপড়চোপড় সব কুড়িয়ে নিয়ে রাহার হাতে দিয়ে রুম থেকে বের করে দিল। রাহা দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলো। নাতাশা এসে রাহাকে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল
‘ ওই বজ্জাত কি হয়েছে আবার?
রাহা বলল
‘ এই বুড়ি ডাক্তারকে বলো না রাগ না করতে। আমি আর কখনো মুননু ডাকবো না।
নাতাশা হেসে ফেলল। যেতে যেতে বলল
‘ তোর বরের বকা শোনার ইচ্ছা আমার নেই। বুড়ি ডাকছিস সেটা বলে দেব তোর বরকে। সময় আসুক। রাহা মুখ ভেঙিয়ে বলল
‘ আর ও ডাকব বুড়ি বুড়ি বুড়ি। বুড়ি তোমার চুল পেকেছে। তাই তুমি বুড়ি। ডাক্তার ও তোমাকে বুড়ি ডাকবে।
নাতাশা যেতে যেতে বলল
‘ তোকে আমি সুযোগ মত পাই বজ্জাত। দেখিস চুল সব একটা একটা ছিঁড়ব।
রাহা বলল
‘ তোমার আর বরের সব চুল একটা একটা ছিঁড়ব।
রোয়েন রুম থেকে ধমক দিল। রুমে যাও রাহা। যাও। তোমাকে দেখতে চাই না আমি।
রাহা চলে গেল। দরজা বন্ধ করে শুইয়ে থাকলো।

রোয়েন জানালা দিয়ে দেখলো রাহা শুইয়ে আছে। নিচে গিয়ে বলল
‘ রাহাকে কিছু খেতে দাও। না খেয়ে পাগলামি করছে। আমি বাইরে যাচ্ছি।
নাহিল এসে বলল
‘ রাহার ঔষধ?
রোয়েন বলল
‘ মামুনি জানে।
সোরা বলল
‘ হ্যা আমি খাইয়ে দেব।

রোয়েন চলে যেতেই সোরা রাহার রুমে গেল। রাহা কেঁদেকেটে বলল
‘ ডাক্তার আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে।
সোরা বলল
‘ আচ্ছা কেঁদোনা। পরে রাগ কমলে তোমাকে এসে নিয়ে যাবে। কেন ডাক্তারকে রাগাও? কত জ্বালাও তুমি ডাক্তারকে।
রাহা বলল
‘ আর জ্বালাবো না। ডাক্তার বলবে কেমন?
সোরা রাহার গাল টেনে দিয়ে বলল
‘ আচ্ছা।
রাহা হেসে বলল
‘ তুমি ভালো সোরা মা।
সোরা বলল
‘ সোরা মা নয় আম্মা।
রাহা বলল
‘ আম্মা।
সোরা হাসলো। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। রাহা বলল
‘ ডাক্তার তোমার কি হয়?
সোরা বলল
‘ ছেলে। মেয়ের জামাই। দুইজনের দিয়ে যাওয়া আমানত। আমাদের আশ্রয়। বিশ্বাস, ভরসা। সবটা।
রাহা অবাক হয়ে বলল
‘ এতকিছু?
সোরা বলল
‘ হ্যা এতকিছু। ভালো রেখো তোমার ডাক্তারকে।
রাহা বলল
‘ আচ্ছা। কিন্তু বরকে রাগাতে ভালো লাগে আমার। বর রেগে গেলে খুব ভালো লাগে। কিন্তু যখন রাগে তখন ভালো লাগে না। মারতে মন চাই। বড় বুড়ি বলেছে বরকে মারতে নেই তাই মারি না।
সোরা জিভে কামড় দিয়ে বলল
‘ ছিঃ ছিঃ এসব কেমন কথা? এমন কথা কেউ বলে?
রাহা বলল
‘ আমি বলিনা তো। তোমার সামনে বলছি। বরকে বলিও না কেমন?
সোরা বলল,
‘ আচ্ছা। তুমি ও এমন কথা কাউকে বলবে না। এসব বললে পাপ হয়।

রোয়েন গেল যে গেল আর এল না। রাহা সবার মাথা খেল সারাটাদিন। বলল
‘ ডাক্তার আর কখনো আসবে না? আল্লাহ, আমি আর কখনো মুননু ডাকবো না তাকে।
সোরা জোর করে খাইয়ে দিয়ে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে কোনোমতে ঘুম পাড়িয়ে দিল।

রোয়েন রাত করেই বাড়ি ফিরলো। সে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়েছিল। নাহিলকে জানিয়েছিল সে কথা। কারো কাছে রাহার কথা জিজ্ঞেস করলো না। খেয়ে দেয়ে ঘুমাতে গিয়ে দেখলো রাহা এই ঘরে শুইনি। তাননার রুমে দরজা ঠেলে দেখলো রাহা গুটিসুটি মেরে ঘুম। রোয়েন চড়া মেজাজে কোলে তুলে নিল তাকে। ঘুমন্ত রাহার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল
‘ আর মুননু ডেকো? আছাড় মেরে একদম,,,

রোয়েন রাহাকে নিয়ে যেতেই সালেহা বেগমের মুখোমুখি পড়ে গেল। অস্বস্তি নিয়ে বলল
‘ তুমি এখনো ঘুমোওনি কেন? কতবার বলেছি তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বে আর তাড়াতাড়ি উঠবে। সালেহা বেগম কথা ঘুরিয়ে বলল
‘ ঘুম আসছেনা ভাই। তোর যেমন বউ ছাড়া ঘুম আসে না আমারও তোর দাদার কথা মনে পড়লে ঘুম আসে না। রাত বিরাতে বসে বসে স্মৃতি হাতড়ায় আর কি।
রোয়েন বলল
‘ কথার মাঝে ফালতু কথা ঢুকাতে হয় নাহ? ওকে ছাড়া ঘুম আসবে না কেন? ও মাঝরাতে উঠে ভয় পেয়ে চিল্লাপাল্লা করলে সবার ঘুম নষ্ট করবে তাই, নিয়ে আসছিলাম। সবকিছুর নেগেটিভ মিনিং বের করো তুমি আর নানু। যত্তসব। যাও ঘুমিয়ে পড়ো।
সালেহা বেগম ঠোঁট টিপে মুচকি হাসলেন।

রোয়েন রাহাকে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল। রোয়েন উঠে গায়ের উপর কম্বল টেনে দিয়ে বলল
‘ ননসেন্স সবসময় জ্বালিয়ে মারে আমাকে। এখন ভিজেবিড়ালের মতো ঢুসে ঢুসে ঘুমানো হচ্ছে?
রাহা কম্বল পেয়ে নাকমুখ ঢেকে ফেলল। রোয়েন হতবিহ্বল হয়ে পড়লো। বলল
‘ তুমি একা গায়ে দেবে? আমি কি দেব আশ্চর্য? এত বড় কম্বল খেয়ে ফেলেছ?
পরে ভাবলো রাহা তো ঘুম। রোয়েন টেনে নিল অর্ধেক কম্বল। রাহা ঘুমঘুম গলায় বলল
‘ ডাক্তার আসেনি?
রোয়েন বলল
‘ এসেছে চোখ খুলো। আরেকটু জ্বালিয়ে মারো। যত্তসব।
রাহা পিটপিট করে চোখ খুললো। একটু কাছে এসে বলল
‘ সত্যি? এটা ডাক্তার?
রোয়েন বলল
‘ নাহ। রাহা বলল
‘ হ্যা এটাই তো ডাক্তার। ওহ ডাক্তার ভালো হয়ে গেছে। রাগ কমে গেছে?
রোয়েন বলল
‘ দূরে যাও। কম্বল একদম টানবে না। ঠিক আছে। ওইদিকে ফিরে ঘুমাও।
রাহা আরেকটু কাছে এসে বলল
‘ ঠান্ডা লাগছে ডাক্তার। একটু জড়িয়ে ধরি।
রোয়েন চিৎকার করলো।
‘ না দূরে যাও। আমি ঘুমাবো রাহা।
রাহা ঠোঁট ফুলিয়ে অন্য দিকে ফিরে শুইয়ে থাকলো। রোয়েন লাইট বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লো। মাঝরাতে গায়ে ঠান্ডা লাগলো, দেখলো গায়ে কম্বল নেই তার। রাহা সবটা নিয়ে ফেলেছে। এত বড় কম্বল কি করে?
রোয়েন ঘুমঘুম চোখে কম্বল টান দিল। কম্বলের সাথে সাথে নরম তুলতুলে কিছু একটা তার বুকের নিচে এসে পিষ্ট হলো। রাহা ঘুমঘুম গলায় আলুথালু হয়ে বলল
‘ ডাক্তার বেয়াদব। আমাকে চেপে ধরে!
রোয়েন শুনলো না ঘুমের কারণে।

চলবে,
আমার নিজের লেখা কখনো এতটা জঘন্য মনে হয়নি। 🤕🤕
সকালের ঘোলাটে কুয়াশার চাদর কেটে গেল সূর্যিমামার আগমনে। ধীরে ধীরে চারপাশে আলো ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। কনকনে ঠান্ডায় জমে যাওয়ার মতো অবস্থা। সেই আধো আধো কুয়াশার মাঝে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল রাহা। গেইট খুলে ঠকঠক করে কাপঁতে কাঁপতে পৌঁছালো তালুকদার বাড়িতে। দরজা ঠেলে ঢুকতেই জাহেদা দৌড়ে এল। রসিকতা করে বলল
‘ ওমা আমার নাতবউ যে? এত সকাল সকাল তোর ডাক্তার বর কোথায়?
রাহা মাথা নাড়িয়ে বলল
‘ ডাক্তার?
জাহেদা বলল
‘ হ্যা। সে তোকে একা ছাড়লো কিভাবে?
রাহা বলল
‘ ডাক্তার আমাকে বকেছে, বলেছে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। তাই আমি তাকে ছেড়ে চলে এসেছি।
গায়ে শাল জড়াতে জড়াতে আনহা এল। বলল
‘ কার সাথে কথা বলছ আম্মা?
রাহাকে দেখে সামান্য অবাক হলো আনহা। বলল
‘ রাহা তুমি? এসো।
রাহা গিয়ে সোফায় বসলো। পা নাড়াতে নাড়াতে বলল
‘ তোমার মেয়ে। মানে নুহা না টুহা ওকে ডাকো।
আনহা ডাক দিল। নোহা হাঁপাতে হাঁপাতে এল। রাহাকে দেখে বলল
‘ আরেহ রাহাপু তুমি কেমনে এখানে আসলা?
রাহা পা নাড়াতে নাড়াতে বলল
‘ ডাক্তারকে ভয় দেখানোর জন্য চলে এসেছি। ভালো করেছি না?
নোহা বলল
‘ খুব ভালো করেছ। তোমার ডাক্তার সেইরকম জব্দ হবে।
রাহা দৌড়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে আসলো। বলল
‘ ডাক্তার আসলে বলবে না কেমন?
জাহেদা হেসে ফেলল। বলল
‘ ওরে নাতবউ তুই তো সেইরকম চালাক দেখছি। আহা আজ আমার জুননু থাকলে কত আদর যত্ন করতো ছেলের বউকে। ভাবতেই অবাক লাগছে আমার জুননু তোর শ্বাশুড়ি।
জায়িদ হাতের ঘড়ি পড়ে আসতে আসতে বলল
‘ জুননুকে নিয়ে কি কথা হচ্ছে আম্মা?
জাহেদা আনহাকে বলল
‘ এই দেখ বোনের কথা তুললেই সে হাজির।
আনহা হাসলো।
রাহা গালে আঙুল দিয়ে বলল
‘ জুননু আমার শ্বাশুড়ি?
আনহা বলল
‘ হ্যা। আর গুড্ডু তোর শ্বশুরআব্বা।
হাসলো রাহা। কি সুন্দর নাম? জুননু গুড্ডু। আর আমার বরের নাম মুননু?
জাহেদা কপাল চাপড়ে বলল
‘ খোদা খোদা তুই আবার ডাকিস না। সেইরকম রেগে যাবে। আমাকে তো কালই বারণ করেছে। নানু আমাকে মুননু ডাকবে না। ওটা আম্মা আব্বা ছোটবেলায় ডাকতো। তারা নেই তাই এই নামে ডাকবেনা। আমার অন্য নাম আছে সেটা ও আম্মা আব্বা দিয়েছে। ওই নামে ডাকবে।
রাহা হেসে বলল
‘ আমি তো মুুননু ডেকেছি। তাই বর রেগে গেছে।
জাহেদা বলল
‘ হয়েছে তুই তো কাম সারলি। যাহ এবার যাহ করার কর।
রাহা খিলখিল করে হাসিতে ফেটে পড়লো। জায়িদ বলল
‘ আহা আমার মামাটাকে জ্বালিয়ে মারছিস রাহা।
রাহা বলল
‘ বরকে জ্বালাতে ভালো লাগে।

দরজায় কলিং বেল বাজলো। রাহা আঁতকে উঠে দৌড়ে রান্নাঘরে চলে গেল। লুকিয়ে থাকলো। সবাই মিটিমিটি হাসলো। জাহেদা গিয়ে দরজা খুলে গম্ভীর গলায় শুধালো
‘ কি জন্য এসেছিস ভাই? কত ডাকতে হয় তারপর আসিস, আজ ডাকা ছাড়া। ব্যতিক্রম মনে হলো।
রোয়েন বলল
‘ আমার ও ব্যতিক্রম মনে হলো। অন্যদিন আমি আসলে তুমি টেনে ঘরে ঢুকাও। আজ?
জাহেদা ভড়কে গেল। সরে বলল
‘ আয় আয়। ওমা এটা কোনো কথা?
রোয়েন এদিকওদিক তাকিয়ে বলল
‘ রাহা এসেছে এখানে?
জাহেদা বলল
‘ না না না। কোথায় রাহা? তুই কি ওকে এখানে আসতে দিস?
রোয়েন বলল
‘ কম কথা বলো নানু। বেশি কথা ভালো লাগেনা আমার।
আনহা বলল
‘ কফি দেব আব্বা?
রোয়েন এদিকওদিক তাকাতে তাকাতে বলল
‘ খাব না এখন। রাহা এখানে আসেনি?
আনহা বলল
‘ না আসেনি তো।
জায়িদ আর নোহা মিটিমিটি হাসলো। রোয়েন বলল
‘ কফি পরে খাব। রাহা কোথায় চলে গেছে আবার?
জাহেদা হেসে করে বলল
‘ ওররে বউ পাগলা। এখন একদম বাপের মতো লাগছে। আমার জুননুকে দুই দিনের জন্য ও এখানে এসে থাকতে দেইনি তোর বাপ। দিনের বেলা এসেছে সন্ধ্যা হতে না হতেই নিয়ে যাওয়ার তাড়া।
রোয়েন রেগে গেল।

আনহা বলল
‘ আহা আম্মা তুমি নাতির সাথে এসব কি কথা বলো?
জাহেদা বলল
‘ সর। ও নাতি আমার। যা ইচ্ছা তা বলতে পারবো আমি।
জায়িদ ঠোঁট টিপে হাসলো। নোহা জায়িদের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। ইশশ মামার মতো তার ও একটা বর চায় ।

রোয়েন রেগে বলল
‘ সবসময় ফালতু কথা নানু। এসব করে কি মজা পাও তুমি? কতবার বলেছি ইয়ার্কি পছন্দ না আমার।
জাহেদা বলল
‘ আচ্ছা আচ্ছা। আর বলব না। যাহ তোর বউ কোথায় পালায় গেছে খুঁজে আন। রোয়েন বলল
‘ পালাবে কেন?
জাহেদা তওবা করে বলল
‘ তওবা তওবা ভুল হয়ে গেছে। পালাবে কেন? ভুল হয়ে গেছে ভাই। মাফ কর।
রোয়েন গটগট পায়ে হেঁটে বের হয়ে গেল। দৌড়ে রাহা এল। হাসতে হাসতে সোফায় শুয়ে পড়লো সে। জাহেদা বলল
‘ জব্দ হোক তোর বর। দেখি বউরে খুঁজে না পেয়ে কি করে সে?

অর্ধেক রাস্তা অব্দি গিয়ে হেঁটে আসলো রোয়েন। আবার বাড়িতে চলে এসে পুরো বাড়ি হাঁটল। তার হাঁটার ধরণ দেখে বুঝার উপায় নেই সে কাউকে খুঁজছে। সোরা এসে বলল
‘ রাহা কি এখনো ঘুম থেকে উঠেনি আব্বা ?
রোয়েন চমকে উঠে বলল
‘ হ্যা। রাহা? হ্যা উঠেছে তো। কিন্তু?
সোরা বলল
‘ কিন্তু কি?
রোয়েন বলল
‘ রাহা কোথায় যেন চলে গিয়েছে। আমি সামান্য বকেছি। কেঁদে উঠে কোথায় যেন চলে গেছে। অনেক খুঁজেছি, পাইনি।
সোরা বলল
‘ কোথায় যাবে সকাল সকাল?
নোহার কাছে যায়নি তো?
রোয়েন বলল
‘ আমি গিয়েছি, নানু বলছে রাহা ওখানে যায়নি।
সোরা বলল
‘ আচ্ছা আমি তোমার বাবাইকে বলছি। দাঁড়াও।

রোয়েন হেঁটে হেঁটে রুমে চলে গেল। রাহা সব কাপড় এলোমেলো করে চলে গেছে। এখন এসব ভাঁজ করার সময় নেই। রাহাকে খুঁজে বের করতে হবে। কোথায় যেতে পারে রাহা? খুঁজে বের করে কয়েকটা চড় দিতে হবে আগে।

নাহিল দরজা ঠেলে রুমে ডুকলো। উৎকন্ঠিত গলায় বলল
‘ কোথায় যাবে রাহা? এতকিছু করছো বকা দেওয়ার কি দরকার ছিল?
রোয়েন বলল
‘ বকা দেব না? উল্টাপাল্টা বকবক করছে। মাথা খাচ্ছে সকাল সকাল।
নাহিল বলল
‘ তো কোথায় যাবে এখন?
রোয়েন বলল
‘ কোথায় যাবে? আশেপাশে আছে হয়ত। আমি দেখছি চিন্তা করোনা।

রোয়েন রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ালো। গলায় মাফলার। ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে যেন। বিরক্তি বাড়ছে তরতর করে। রোয়েন হেঁটে হেঁটে তালুকদার বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। বাগানের দিকে যাবে। রাহা হয়ত ওখানে। কিন্তু বাড়ির পাশ দিয়ে যেতেই বাড়ির ভেতর থেকে হাসাহাসির আওয়াজ এল। রোয়েন দাঁড়িয়ে গেল। দরজার কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়াতেই মেজাজ চটে গেল ওর। চোয়াল ফুলে উঠলো। জোরে দরজা ঠেলে দিতেই দরজা দু ফাঁক হয়ে গেল৷ সবাই হতভম্ব চোখে রোয়েনের দিকে তাকালো। রাহা সোফায় বসে থাকলো চোখ বড় বড় করে। রোয়েন হনহন পায়ে হেঁটে চলে গেল। রাহা পিছু দৌড়ে যেতে যেতে বলল
‘ এই ডাক্তার দাঁড়ান। রাগ করেছেন?
সবাই হাসিতে ফেটে পড়লো। জাহেদা চিল্লিয়ে বলল
‘ ভাই বউয়ের সাথে আর রাগ করিস না। তোর পাগল বউ। আর রাগ টাগ করিস না।

রোয়েন বাড়িতে ডুকে দরজা বন্ধ করে দিল। রাহা বাড়ির সদর দরজা ঠুকাতে ঠুকাতে বলল
‘ এই ডাক্তার আমি আর করব না এমন
নাহিল সোরা দৌড়ে এল রাহার ডাক শুনে। নাহিল এগিয়ে যেতেই রোয়েন ডাক দিল
‘ বাবাই দরজা খুলবে না খবরদার। থাকুক ওখানে। আর জীবনে ও যদি ও আমার সাথে কথা বলতে আসে খবর আছে।
নাহিল আর সোরা মাথা নামিয়ে হাসলো। রোয়েন রুমে চলে যেতেই নাহিল দরজা খুলে দিল। সোরা বলল
‘ তুমি? তুমি?
নাহিল বলল
‘ আব্বা।
রাহা বলল
‘ হ্যা আব্বা। ডাক্তার রাগ করেছে আব্বা?
নাহিল হেসে বলল
‘ তুমি রাগিয়ে দিয়েছ, এখন কি করার?
রাহা কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল
‘ মুননু ডেকেছি তাই বকা দিয়েছে। আমি তো পানিশ দিয়েছিলাম।
নাহিল বলল
‘ এবার তোমাকে তোমার ডাক্তার পানিশ দেবে।
রাহা তাড়াতাড়ি বাড়িতে ডুকে রোয়েনের রুমের দিকে পা বাড়ালো। দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। রোয়েন রাহার সব কাপড় নিচে ফেলে দিয়েছে। রাহা ঘরে ডুকে সব দেখে গালে হাত দিল। বলল
‘ আমাকে ঘর থেকে বের করে দেবেন ডাক্তার?
রোয়েন বলল
‘ হ্যা। তাননার ঘরে চলে যাও। তোমার সব কাপড় চোপড় জিনিসপত্র নিয়ে। যাও। এখানে থাকবে না। যাও।
রাহা ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিল। রোয়েন কাপড়চোপড় সব কুড়িয়ে নিয়ে রাহার হাতে দিয়ে রুম থেকে বের করে দিল। রাহা দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলো। নাতাশা এসে রাহাকে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল
‘ ওই বজ্জাত কি হয়েছে আবার?
রাহা বলল
‘ এই বুড়ি ডাক্তারকে বলো না রাগ না করতে। আমি আর কখনো মুননু ডাকবো না।
নাতাশা হেসে ফেলল। যেতে যেতে বলল
‘ তোর বরের বকা শোনার ইচ্ছা আমার নেই। বুড়ি ডাকছিস সেটা বলে দেব তোর বরকে। সময় আসুক। রাহা মুখ ভেঙিয়ে বলল
‘ আর ও ডাকব বুড়ি বুড়ি বুড়ি। বুড়ি তোমার চুল পেকেছে। তাই তুমি বুড়ি। ডাক্তার ও তোমাকে বুড়ি ডাকবে।
নাতাশা যেতে যেতে বলল
‘ তোকে আমি সুযোগ মত পাই বজ্জাত। দেখিস চুল সব একটা একটা ছিঁড়ব।
রাহা বলল
‘ তোমার আর বরের সব চুল একটা একটা ছিঁড়ব।
রোয়েন রুম থেকে ধমক দিল। রুমে যাও রাহা। যাও। তোমাকে দেখতে চাই না আমি।
রাহা চলে গেল। দরজা বন্ধ করে শুইয়ে থাকলো।

রোয়েন জানালা দিয়ে দেখলো রাহা শুইয়ে আছে। নিচে গিয়ে বলল
‘ রাহাকে কিছু খেতে দাও। না খেয়ে পাগলামি করছে। আমি বাইরে যাচ্ছি।
নাহিল এসে বলল
‘ রাহার ঔষধ?
রোয়েন বলল
‘ মামুনি জানে।
সোরা বলল
‘ হ্যা আমি খাইয়ে দেব।

রোয়েন চলে যেতেই সোরা রাহার রুমে গেল। রাহা কেঁদেকেটে বলল
‘ ডাক্তার আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে।
সোরা বলল
‘ আচ্ছা কেঁদোনা। পরে রাগ কমলে তোমাকে এসে নিয়ে যাবে। কেন ডাক্তারকে রাগাও? কত জ্বালাও তুমি ডাক্তারকে।
রাহা বলল
‘ আর জ্বালাবো না। ডাক্তার বলবে কেমন?
সোরা রাহার গাল টেনে দিয়ে বলল
‘ আচ্ছা।
রাহা হেসে বলল
‘ তুমি ভালো সোরা মা।
সোরা বলল
‘ সোরা মা নয় আম্মা।
রাহা বলল
‘ আম্মা।
সোরা হাসলো। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। রাহা বলল
‘ ডাক্তার তোমার কি হয়?
সোরা বলল
‘ ছেলে। মেয়ের জামাই। দুইজনের দিয়ে যাওয়া আমানত। আমাদের আশ্রয়। বিশ্বাস, ভরসা। সবটা।
রাহা অবাক হয়ে বলল
‘ এতকিছু?
সোরা বলল
‘ হ্যা এতকিছু। ভালো রেখো তোমার ডাক্তারকে।
রাহা বলল
‘ আচ্ছা। কিন্তু বরকে রাগাতে ভালো লাগে আমার। বর রেগে গেলে খুব ভালো লাগে। কিন্তু যখন রাগে তখন ভালো লাগে না। মারতে মন চাই। বড় বুড়ি বলেছে বরকে মারতে নেই তাই মারি না।
সোরা জিভে কামড় দিয়ে বলল
‘ ছিঃ ছিঃ এসব কেমন কথা? এমন কথা কেউ বলে?
রাহা বলল
‘ আমি বলিনা তো। তোমার সামনে বলছি। বরকে বলিও না কেমন?
সোরা বলল,
‘ আচ্ছা। তুমি ও এমন কথা কাউকে বলবে না। এসব বললে পাপ হয়।

রোয়েন গেল যে গেল আর এল না। রাহা সবার মাথা খেল সারাটাদিন। বলল
‘ ডাক্তার আর কখনো আসবে না? আল্লাহ, আমি আর কখনো মুননু ডাকবো না তাকে।
সোরা জোর করে খাইয়ে দিয়ে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে কোনোমতে ঘুম পাড়িয়ে দিল।

রোয়েন রাত করেই বাড়ি ফিরলো। সে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়েছিল। নাহিলকে জানিয়েছিল সে কথা। কারো কাছে রাহার কথা জিজ্ঞেস করলো না। খেয়ে দেয়ে ঘুমাতে গিয়ে দেখলো রাহা এই ঘরে শুইনি। তাননার রুমে দরজা ঠেলে দেখলো রাহা গুটিসুটি মেরে ঘুম। রোয়েন চড়া মেজাজে কোলে তুলে নিল তাকে। ঘুমন্ত রাহার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল
‘ আর মুননু ডেকো? আছাড় মেরে একদম,,,

রোয়েন রাহাকে নিয়ে যেতেই সালেহা বেগমের মুখোমুখি পড়ে গেল। অস্বস্তি নিয়ে বলল
‘ তুমি এখনো ঘুমোওনি কেন? কতবার বলেছি তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বে আর তাড়াতাড়ি উঠবে। সালেহা বেগম কথা ঘুরিয়ে বলল
‘ ঘুম আসছেনা ভাই। তোর যেমন বউ ছাড়া ঘুম আসে না আমারও তোর দাদার কথা মনে পড়লে ঘুম আসে না। রাত বিরাতে বসে বসে স্মৃতি হাতড়ায় আর কি।
রোয়েন বলল
‘ কথার মাঝে ফালতু কথা ঢুকাতে হয় নাহ? ওকে ছাড়া ঘুম আসবে না কেন? ও মাঝরাতে উঠে ভয় পেয়ে চিল্লাপাল্লা করলে সবার ঘুম নষ্ট করবে তাই, নিয়ে আসছিলাম। সবকিছুর নেগেটিভ মিনিং বের করো তুমি আর নানু। যত্তসব। যাও ঘুমিয়ে পড়ো।
সালেহা বেগম ঠোঁট টিপে মুচকি হাসলেন।

রোয়েন রাহাকে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল। রোয়েন উঠে গায়ের উপর কম্বল টেনে দিয়ে বলল
‘ ননসেন্স সবসময় জ্বালিয়ে মারে আমাকে। এখন ভিজেবিড়ালের মতো ঢুসে ঢুসে ঘুমানো হচ্ছে?
রাহা কম্বল পেয়ে নাকমুখ ঢেকে ফেলল। রোয়েন হতবিহ্বল হয়ে পড়লো। বলল
‘ তুমি একা গায়ে দেবে? আমি কি দেব আশ্চর্য? এত বড় কম্বল খেয়ে ফেলেছ?
পরে ভাবলো রাহা তো ঘুম। রোয়েন টেনে নিল অর্ধেক কম্বল। রাহা ঘুমঘুম গলায় বলল
‘ ডাক্তার আসেনি?
রোয়েন বলল
‘ এসেছে চোখ খুলো। আরেকটু জ্বালিয়ে মারো। যত্তসব।
রাহা পিটপিট করে চোখ খুললো। একটু কাছে এসে বলল
‘ সত্যি? এটা ডাক্তার?
রোয়েন বলল
‘ নাহ। রাহা বলল
‘ হ্যা এটাই তো ডাক্তার। ওহ ডাক্তার ভালো হয়ে গেছে। রাগ কমে গেছে?
রোয়েন বলল
‘ দূরে যাও। কম্বল একদম টানবে না। ঠিক আছে। ওইদিকে ফিরে ঘুমাও।
রাহা আরেকটু কাছে এসে বলল
‘ ঠান্ডা লাগছে ডাক্তার। একটু জড়িয়ে ধরি।
রোয়েন চিৎকার করলো।
‘ না দূরে যাও। আমি ঘুমাবো রাহা।
রাহা ঠোঁট ফুলিয়ে অন্য দিকে ফিরে শুইয়ে থাকলো। রোয়েন লাইট বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লো। মাঝরাতে গায়ে ঠান্ডা লাগলো, দেখলো গায়ে কম্বল নেই তার। রাহা সবটা নিয়ে ফেলেছে। এত বড় কম্বল কি করে?
রোয়েন ঘুমঘুম চোখে কম্বল টান দিল। কম্বলের সাথে সাথে নরম তুলতুলে কিছু একটা তার বুকের নিচে এসে পিষ্ট হলো। রাহা ঘুমঘুম গলায় আলুথালু হয়ে বলল
‘ ডাক্তার বেয়াদব। আমাকে চেপে ধরে!
রোয়েন শুনলো না ঘুমের কারণে।

চলবে,
আমার নিজের লেখা কখনো এতটা জঘন্য মনে হয়নি। 🤕🤕

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here