নানান বরণ মানুষ রে ভাই পর্ব-৫

0
1004

নানান বরণ মানুষ রে ভাই
৫ ম পর্ব
বড় গল্প
নাহিদ ফারজানা সোমা

মেজ আপা ও দুলাভাই প্রস্তুত তাদের বাসায় আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বাসার খালাকে মেজ আপা অর্ডার দিয়েছে আমার কিছু জামাকাপড় আর সব বইপত্র গুছিয়ে রাখতে। মেজ আপার ড্রাইভার নিয়ে যাবেন।

ছোট মামা বললেন,”এটা ঠিক হবে না নীতু। বাড়িটাতো বেয়াই-বেয়ানের। উনারা খুব ভালো মানুষ। তবু আমরা সবাই থাকতে তোর ওখানে বুবলির যাওয়া ঠিক হবে না নীতু, বিশেষ করে এই অবস্থায়। বুবলিও কমফোর্ট ফিল করবে না। ও বরং আমার কাছে থাকুক।”

আমি বললাম,”নিজের বাসা ছেড়ে আমি অন্য কোথাও কেনো যাবো? আমি আমাদের নিজেদের বাসাতেই থাকবো।”

সবার মুখ শুকিয়ে গেলো।আব্বু আমতা আমতা করতে লাগলেন।
“আসলে তোমার মা খুব রেগে আছেন তো।তাছাড়া তোমারও যত্ন ঠিকমতো হবে না।”

” আম্মুর অন্যায় আচরণ তুমি সামাল দিতে পারো না কেন আব্বু? ”

“তুমিওতো অন্যায় করেছো বুবলি। এতো ইনভেস্ট করা হোলো তোমার পিছনে, তুমি মেডিকেলে চান্সই পেলে না। প্রিপারেশনের নামে আসলে কি করতে তুমি? ছিঃ! ”

মেজ দুলাভাই বললেন,”অ্যাডমিশন টেস্টে প্রতি বছরই বহু ভালো ছাত্র ছাত্রী চান্স পায় না। আমার চেয়ে অনেক ভালো ছাত্র চান্স পায়নি।আবার এমন এমন ছাত্র -ছাত্রীও চান্স পায় যে অবাক হয়ে যেতে হয়। পরীক্ষাতে পড়াশোনার পাশাপাশি ভাগ্যও লাগে। বুবলি,আর কথা নয়,তুমি আমাদের সাথে চলো। আমার বাবা-মা বরং খুশি হবেন। নীতু বা আমি তোমার ড্রেসিং করে দিতে পারবো। ”

আমি আবারও বললাম,”আমি বাসাতেই যাবো।”

বাসায় এলাম। বাসার ছুটা খালা দরজা খুলে দিলেন। কিশোরী দুলি দূর থেকে উঁকিঝুকি দিতে লাগলো। আপাদের হাত ছাড়িয়ে আমি সোজা নিজের রুমে ঢুকে গেলাম। সবাই পিছন পিছন আসলো। বড় আপা বললো,”আম্মু কোথায় আম্মু?আম্মুকে দেখে আসি।”

আমি বিছানায় চুপ করে বসে থাকলাম। আমি সবার মনের অবস্থা বুঝতে পারছি। একে চান্স পাইনি,তার উপরে নিজের মায়ের বেধড়ক মার খেয়ে হাসপাতালে যেতে হলো,সবাই ভাবছে রাগে দুঃখে আমি আত্মহত্যা করবো।আমাকে প্রতি মুহূর্তে চোখে চোখে রাখতে হবে।

বড় আপা ফিরে এসে বললো,”আম্মু শুয়ে আছে। আমার সাথেও ভালো করে কথা বললো না।চোখ মুখ শুকিয়ে কাঠ।”

“তোমাদের আম্মু দুদিন ধরে কিচ্ছু মুখে দেয়নি।পানিও না।”

আব্বুর কথা শুনে মেজ দুলাভাই বললেন, “নীতু,শরবত বানাও লেবু-চিনি-লবণ দিয়ে। আমিও যাই তোমার সাথে। যদি আম্মা না খান,সোজা স্যালাইন পুশ করার ব্যবস্থা করবো।”

বড় আপা তীক্ষ্ণ স্বরে বললো।,”আম্মু অতো সহজে শরবত খাওয়ার মানুষ না। এই বুবলি, গ্যাঁট মেরে বসে না থেকে আম্মুর কাছে যেয়ে পা জড়িয়ে ধর্, মাফ চা, লাথি দিলেও পা ছাড়বি না।”

মেজ দুলাভাই বললেন, “বুবলি মাফ চাওয়ার মতো কোনো কাজ করেনি।বুবলি,শুয়ে বিশ্রাম নাও।নীতু, চলো আম্মার কাছে।”

আম্মুকে শরবত খাওয়ানো মোটেই সহজ কাজ হয়নি। ঠোঁট টিপে ছিলেন।
মেজ দুলাভাই কোনো জ্ঞান গর্ভ উপদেশ বা স্বান্তনা না দিয়ে নাকি এক পর্যায়ে বলেছিলেন, “না খেলে বড় দুলাভাইকে ডাকবো,তারপর দুই জামাই মিলে শাশুড়িকে সবার সামনে চ্যাংদোলা করে হাসপাতালে নিয়ে যাবো, প্রমিস। আমি কিন্তু সিরিয়াস।”

“হাসপাতালে না নিয়ে বরং আমাকে গোরস্থানে নিয়ে চলো। বেঁচে থেকে কি করবো? মানুষকে মুখও দেখাতে পারবো না।”

“ওসব কথা পরে। আগে শরবত মুখে দিন।”

মেজো দুলাভাই এর পাগলামির অনেক ইতিহাস আছে।তাই আম্মু দুলাভাইকে বেশি ঘাঁটান নি। আম্মু অনশন ভঙ্গ করলেন,তাঁর পালস,প্রেশার মাপা হলো। মাথায় পানি দিয়ে শরীর মুছে কাপড় পাল্টে দেওয়া হলো। সব কিছুই ছুটা খালাকে নিয়ে মেজ আপা করলো। আম্মুকে লেবু মেখে একটু ডালভাতও খাইয়ে দিলো।

আম্মুর পরিচর্যার পরে সবাই খেতে বসলো। আমিও দ্বিরুক্তি না করে ডাইনিং চেয়ারে বসে পড়লাম। আমাকে সবাই সাধবে,আমি না না করবো,এসব আমার পছন্দ নয়।

ডাইনিং টেবিলে বড় আপা কথা ওঠালো,” হাবিজাবি কতোজন চান্স পেয়েছে, টগর সলিমুল্লায় চান্স পেয়েছে, বুবলির বন্ধুদের বেশির ভাগই চান্স পেয়েছে, আম্মুর মাথা খারাপ হবে না কেন?”

টগর আমার ফুপাতো ভাই।

ছোট মামা বললেন, ” রীতু, চুপচাপ খাও।নিজে খাও,অন্যদের খেতে দাও।”

আমি মাথা নিচু করে খাচ্ছি। আমাকে কেন্দ্র করে কতো সমস্যা, কতো কথা কাটাকাটি, ঝগড়া ঝাটি। আসলেই কি আমি গুরুতর অপরাধী? কিন্তু আমিতো পড়াশোনা ঠিক মতো করেছি। কতোগুলো প্রশ্ন বুঝতে পারিনি,সেগুলোর উত্তর আন্দাজে দিয়েছি।সবাই তাই করেছে।শতভাগ সঠিক উত্তর মেডিকেল অ্যাডমিশন টেস্টে কে কবে দিতে পেরেছে?

খাওয়ার পরে বড় আপা বললেন,”যাই। বুবলি, ভালো করে পড়ো। সরকারিতে তো হোলোনা, প্রাইভেটে যেন সবচে’ ভালোটাতে চান্স পাও। আম্মু ভীষণ কষ্ট পেয়েছে। তোমাকে মেরেছে ঠিকই কিন্তু সেই আম্মুই বলেছে যতো টাকা লাগুক তোমার প্রাইভেটে ভর্তি হতে,আম্মু যেমন করে হোক যোগাড় করবে।”

দুলাভাই বললেন,”কোথায় যাচ্ছ? আজ তো তোমার হাসপাতালে কাজ নেই বললে।”

“অন্য কাজ আছে।”
“চলো,আমিও যাই।”
“তুমি তোমার মতো যাও।”
“কখন নাগাদ ফিরবে?”
“যেতেই পারলাম না আর এখনই প্রশ্ন কখন ফিরবে!”

আব্বু বললেন,”কোথায় যাচ্ছিস সেটা বললেই তো পারিস। ”

“কেন?বলতে হবে কেন?আমি ছোট মানুষ? আমি রেপুটেটেড হসপিটালের রেপুটেটেড ডক্টর, আমি কোথায় যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি, কখন আসবো,এইসব কৈফিয়ত আমাকে দিতে হবে? ”

ছোট মামা গম্ভীর গলায় বললেন,”তোকে জামাই কৈফিয়ত তলব করে নি। খুব সাধারণ প্রশ্ন করেছে। আমি কোথাও বের হওয়ার আগে তোর মামীকে বলে যাই কোথায় যাচ্ছি, কখন ফিরতে পারি।দেরি হলে ফোন করে বলে দিই।এতে কি আমার মান সম্মান চলে যাচ্ছে? ”

বড় দুলাভাই একটু কঠিন গলায় বললেন,”যেখানেই যাও, সন্ধ্যার মধ্যে ফিরে আসবে। ভাইয়া ভাবী আজকে রাজশাহী রওনা হয়েছেন, উনার আম্মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, এদিকে আম্মার শরীরটাও ভালো না, রুবি ফোন করেছিলো আম্মা কিছুক্ষণ আগে দু’বার বমি করেছেন,প্রেশার অনেক বেড়েছে, আমি যাচ্ছি। সন্ধ্যায় আমাকে অফিসে বেরোতেই হবে যেহেতু ভাইয়া বাসায় নেই। সুতরাং সন্ধ্যার মধ্যে চলে আসবে।”

“তোমার মায়ের দেখ-ভাল করতে?”

“আল্লাহ মাফ করেন,আমার বাপ-মা’র দেখভাল তোমাকে কখনো করতে না হয়, আসবে তোমার নিজের মেয়ের দেখভাল করতে।”

” ওকে দেখার জন্য পয়সা দিয়ে লোক রাখা আছে। আমি আমার সময়মতো ফিরবো।”
“সেই পয়সাটাও তো তুমি দাওনা।”

ছোট মামা বললেন,”জামাই, তুমি ওর সাথে তর্ক করে নিজেকে ছোট কোরোনা। তোমার ছোট মামীকে ফোন করে দিচ্ছি, সে যেয়ে তোমার মেয়েকে দেখবে। রাতে ফেরার সময় আমি তোমার বাসা হয়ে ওকে নিয়ে যাবো। তুমি এখন বাসায় যাও বাবা,বেয়ান অসুস্থ, এই সময়ে তোমার তাঁর কাছে থাকা উচিৎ। ”

বড় দুলাভাই এর মুখ অনেকক্ষণ ধরে টকটকে লাল। আমার মাথায় হাত রেখে বললেন,” বিশ্রাম নাও। খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতো করো।টেনশন একদম করবে না। আমি তোমার পাশে আছি।”

দুলাভাই বের হয়ে গেলেন। ছোটমামা ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,”বৌ কে কন্ট্রোল করতে পারে না, শালীকে আশ্বাস দেয় আমি তোমার পাশে আছি। ”

বড় আপা জ্বলন্ত চোখে মামার দিকে তাকালো।তারপরে বের হয়ে গেলো।
আমার হঠাৎ ভীষণ কান্না পেলো। বড় দুলাভাই এর জন্য। বাবুনির জন্য। কিন্তু চোখের পানি কাউকে দেখালাম না।

সন্ধ্যায় বই নিয়ে বসলাম।সামনে ঢাকা ভার্সিটির ক ইউনিটের পরীক্ষা।অনেক আগে লুকিয়ে ফর্ম কিনেছি। আম্মু আগেই বলেছিলেন ডাক্তারী ছাড়া আর অন্য কিছু পড়ার কথা যেন চিন্তা না করি এবং ডাক্তারীতে চান্স পেতেই হবে।

কোথা থেকে যেন সাহস আর শক্তি আমার উপরে এসে ভর করলো। আমি একটা মানুষ কিন্তু চাবি দেওয়া পুতুলের মতো। আমার স্বকীয়তা নেই। আমার জীবনের লক্ষ্য ঠিক করার অধিকার আমার নেই। আমি ছবি আঁকতে পারবোনা, গল্পের বই পড়তে পারবোনা, চাচু-ফুপি বা মামা-খালার বাসায় দাওয়াত থাকলেও যেতে পারবো না যদি আম্মুর নিষেধ থাকে। এখন থেকে আমি আমার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিবো, অবশ্যই বড় আপার স্টাইলে নয়, ভালো-মন্দ জ্ঞান আমার আছে।

আম্মু আমার সাথে কথা বলেন না। অন্যদের মাধ্যমে আমাকে বলে পাঠিয়েছেন আমি যেনো তিন বেলা আগে খেয়ে নিই, উনার চোখের সামনে না পড়ি।

আমি আম্মুর সামনে দাঁড়িয়ে শান্ত মুখে বললাম, “আগামীকাল ‘ক’ ইউনিটের পরীক্ষা। আমি পরীক্ষা দিচ্ছি। ”

মেজ আপা শেল্টার হিসাবে আজ আমাদের বাসায় এসে আছে। আম্মু তার দিকে তাকিয়ে হিংস্র ভাবে বললেন,”এতো সাহস হয় কি করে?আমি বলি নি যে ডাক্তারীই পড়তে হবে? কোন্ সাহসে ভার্সিটির ফর্ম কেনা হলো?”

মেজ আপা বললো,” পরীক্ষা দিতে অসুবিধা কি আম্মু? চান্স পেলেই যে ভর্তি হতে হবে,তাতো না।”

আমি বললাম,”তাই-ই। চান্স পেলে আমি ভার্সিটিতেই ভর্তি হবো। বুয়েটের ফর্ম ও কিনবো। সেখানে চান্স পেলেতো কথাই নাই। আমি ডাক্তারি পড়বো না। ডাক্তারিতে আমার ইন্টারেস্ট কখনোই ছিলো না।”

এতো দৃঢ়,শান্ত,অকম্পিত স্বরে আমি কথাগুলো বললাম, আম্মুর মুখে সহসা কথা যোগালো না।

রাতে মেজ আপাকে বললাম,”সারারাত আমি ড্রইং রুমে বসে থাকবো।বলা যায়না,আম্মু আমার রুমের বাইরে থেকে তালা মেরে দিতে পারে।”

“বাংলা সিনেমা খুব বেশি দেখা শুরু করেছিস নাকি?আয়,ঘুমাতে আয়। বাসার আরেক সেট চাবি আমি আগেই সরিয়ে রেখেছি।”

তার মানে আপার মনেও এই দুশ্চিন্তা এসেছিলো।

‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় আমি সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্হান অধিকার করলাম। পছন্দ করলাম মাইক্রোবায়োলজি। ভর্তি ও হয়ে গেলাম। আমি ভীষণ চুপ হয়ে গেছি, আম্মুও একদম চুপচাপ হয়ে গেছেন। থম মেরে থাকেন।আমার সাথে একদম কথা বলেন না। এর মধ্যে বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় আমি দশম স্হান অধিকার করলাম। আম্মু খবর পাঠালেন আমি যেনো সিভিল ইন্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হই। শুনে আমি স্হির করলাম,আমি মাইক্রোবায়োলজিতেই পড়বো এবং হলে থাকবো। আম্মু প্রবল আপত্তি জানালেন।আব্বুও। আমি আব্বুকে বললাম,”তুমি ভয়ংকর মানসিক অত্যাচার থেকে তোমার কোনো মেয়েকেই রক্ষা করতে পারো নি, রক্ষার চেষ্টা ই করোনি। আজ আমাকে আটকাও কেন? তবে তোমরা আমাকে খাইয়েছো,পরিয়েছো, নামীদামি স্কুল কলেজে পড়িয়েছো, দামী কাপড়-চোপড় কিনে দিয়েছো, অনেক খরচ করেছো,ইনশাআল্লাহ আমি তোমাদের এই ঋণ পরিশোধ করে দিবো। পাই-পয়সা করে শোধ করে দিবো।”

“আর তুমি যে পৃথিবীতে জন্ম নিলে, তোমার মা দুই বছর তোমাকে বুকের দুধ খাওয়ালো, তোমার পেশাব পায়খানা দুই হাতে সাফ করলো, তোমার জন্য রাতের পর রাত জাগলো, এই ঋণগুলো শোধ করবে কি দিয়ে? টাকা দিয়ে? ”

“পৃথিবীতে আমি ইচ্ছা করে জন্মাই নি। তোমরা নিয়ে এসেছো। বুকের দুধ খাইয়েছো, ময়লা সাফ করেছো, নিজেদের ঘুম নষ্ট করেছো। আমি যদি তখন এতোটুকুও বুঝদার হতাম, তোমাদের এতো কষ্টে ফেলতাম না। আর রাত জাগা,কাঁথা কাপড় কাচা, গোসল করানো,খাওয়ানো এসব কাজ দাদী মনে হয় তোমাদের থেকে বেশি করেছেন আমাদের তিন বোনের জন্য। বাবা-মায়ের ঋণের কথা তুলছো, দাদীর ঋণ তুমি কি চমৎকার ভাবে শোধ করেছো, মনে আছে আব্বু? ”

আব্বু-আম্মু হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। নতুন আমাকে তাঁরা ঠিক চিনতে পারছেন না।আমার শান্ত মুখ,স্হির চোখ, ঠান্ডা গলাকে বোধহয় একটু ভয়ই পাচ্ছেন।

ঝড়ের বেগে বাসায় ঢুকলো বড় আপা। উত্তেজনা আর আনন্দে চোখ মুখ ঝলমল করছে।

“আম্মু,আমার ইংল্যান্ড যাওয়া ফাইনাল হয়ে গেছে। সব ফর্মালিটিজ শেষ। আগামী মাসের সাত তারিখে ফ্লাইট। ”

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here