#নিশি_রাতের_ডাক
#পর্ব ১২
#সুমাইয়া_আক্তার
নবনী কেঁদে চলেছে এখনো…ওদের কান্না দেখে আমার চোখেও পানি চলে এসেছে…
তখনি ছেলে টা বলে উঠলো,,,আমি আশিক…এখন আস্তে আস্তে সব জানতে পারবে…তোমার মামা গোপনে মাদক ব্যবসা করে…আর মেয়েদের পাচার করে…
ওহ ভাবছো কিভাবে আমি এসব জানতে পারলাম??? হু,বলছি…
আমি সেই হোস্টেল এর গনিতের শিক্ষক ছিলাম…গণিত ভালো করাতাম বিধায় ক্লাসের সব মেয়েরাই আমাকে পছন্দ করতো…কদিন তো ভালোই কাটালাম….
একদিন বাসায় ফিরতে অনেক রাত হয়…আমি বাইকে করে যাচ্ছিলাম…হঠাৎ কোন মেয়ের চিৎকার শুনতে পাই…আমি চিৎকার এর আওয়াজ কোথা থেকে আসছে দেখার জন্য বাইক রাস্তার সাইডে দাড় করিয়ে দেখতে গেলাম…এখনো মেয়েটা চিৎকার করে যাচ্ছে…চিৎকার করে বলছে,,,,আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ…. আমার এত বড় ক্ষতি করবেন না…দয়া করেন একটু….
তখন লোকটা বলে উঠলো,,, এই চুপ একদম চুপ…তোকে আদর দিচ্ছি আমি….খুন তো করছিনা…বেশি কথা বললে তোকে আর তোর পরিবার কে শেষ করে দিবো….
মেয়েটা কেঁদে কেঁদে বলল,,,,আমার যা ক্ষতি করার করুন…আমার পরিবারের কোন ক্ষতি করবেন না প্লিজ….
এইতো এবার লাইনে এসেছো….
তারপর আমি যখন আওয়াজ দিলাম কে ওখানে??তখনি তোমার মামা ঝোপ থেকে বেরিয়ে এসে বলল,,,ও মাষ্টার মশাই আপনি???যাক ভালো হয়েছে..আপনিও চাইলে জয়েন করতে পারেন…
ছিঃ ছিঃ আপনি এতটা নিচু আর জঘন্য আগে জানা ছিলোনা…..নিজের ভাগ্নির বয়সের মেয়ের সাথে এসব করতে গায়ে বাধলো না???
এই যে মাষ্টার বেশি তেড়িবেড়ি করবা ভালো হইব না কিন্তু…
কি করবেন আপনি??দেখি কি করতে পারেন….?? এই আয়েশা চলো আমার সাথে…
আয়েশা ভয়ে গুটিশুটি হয়ে আমার সাথে চলে আসতেই তোমার মামা ধস্তাধস্তি শুরু করে…এক পর্যায়ে তোমার মামা আমার মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করে…আর আমি সাথে সাথেই সেখানে পড়ে যাই…এরপর কি হয়েছে কিছুই জানিনা আমি….
তারপর দিন সকালে আমি নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করি…তারপর শুনতে পারি আয়েশা আত্মহত্যা করেছে…কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনা যে আয়েশা আত্মহত্যা করেছে…আর ওকে মেরেছে তোমার মামা…নিজের দোষ ঢাকতে তোমার মামা একটা নিরীহ মেয়েকে খুন করে ফেলল….
আমি আর বসে থাকতে পারলাম না…হাসপাতাল থেকে বের হয়ে সোজা চলে গেলাম হোস্টেলে….হোস্টেলে তখন আয়েশার মৃত্যুর খবর নিয়ে তোলপাড় চলছে….তোমার মামা আমাকে দেখেই চোখে টিপ্পনি কেটে বলল,,,কেমন দিলাম????বেশি বাড়াবাড়ি করলে আপনাকেও উপরে পাঠিয়ে দিব….
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না….তোমার মামার সাথে হোস্টেলের শিক্ষক রহিম স্যার ও জড়িত ছিলো…কোন প্রমাণ না থাকায় আমি কোন ব্যবস্থা নিতে পারিনাই তোমার মামার বিরুদ্ধে…
চলে এলাম বাসায়… এক সপ্তাহের মতো বাসায় ছিলাম…তবে মাঝে মধ্যে হোস্টেলে যেতাম…সবার খোজ খবর নিয়ে আসতাম…একদিন নবনী বায়না ধরলো যেন আমার হোস্টেল এ নিয়ে যাই ওকে…বাধ্য হয়ে নিয়ে গেলাম…আর তখনি তোমার মামার লোলুপ দৃষ্টি পড়ে নবনীর উপর….আমি বুঝতে পেরে নবনী কে বাসায় নিয়ে আসি…. ভয়ে থাকতাম কখন কি হয়ে যায়???
এরপর হোস্টেলে একের পর এক খুন হতে থাকে…আমি তদন্ত করার জন্য খোজ খবর নিতে থাকলাম… সেদিন রাত 12টায় আমি হোস্টেলে যাই খবর তোমার মামার বিরুদ্ধে প্রমাণ নেওয়ার জন্য….
গিয়ে দেখি টিচার্স রুমে তোমার মামা আর রহিম স্যার কথা বলছে….আমি ওদের কিছু কথা আমার ফোনে রেকর্ড করি….
তারপরের দিন সকালে আমি সেই রেকর্ড তোমার মামা আর রহিম স্যার কে দেখাই…ওরা দুজনেই খুব ঘাবড়ে যায়….আমাকে বলতে থাকে,,,আচ্ছা শুনেন আমরা যে কাজ করি সেই কাজে আপনাকে 50% শেয়ার দিব…. এতে আপনার ও লাভ আমাদের ও লাভ….
আমি ওদের হুমকি দিয়ে আসি…পুলিশ কে দেখাবো সেই রেকর্ড….
সেদিন ই বিকেলে তোমার মামা আমাদের বাসায় এসে হাজির হয়….আমি তাকে দেখেই বুঝে যাই সে কেন এসেছে???আমার হাতে মিষ্টির প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলল,,,এবার কি করবেন মাষ্টার মশাই???নবনী কে আমি বিয়ে করব আশা করছি আপনার কোন আপত্তি নেই???
আমি জোরে চিৎকার দিয়ে বলে উঠি,,,এই যে আপনার এই গুন্ডাগিরি আপনার হোস্টেলে দেখান…. আমার বাসায় না…এটা ভদ্রলোকের বাসা…
তোমার মামা হাসতে হাসতে আমার সামনে মোবাইল ধরে…. মোবাইলে আমার ভালোবাসার মানুষ নিশিতা কে দেখাচ্ছে….তারপর ফিসফিসিয়ে বলল,,,এইবার কিন্তু ইনি আমার মাছের টোপ হবে….ভেবে দেখেন কি করবেন????
নিশিতা আমার হবু বউ…বাবা মায়ের পছন্দে আমাদের বিয়ে ঠিক হয়….কিন্তু উনি কিভাবে নিশিতার খোজ পেলেন আমি জানিনা….
আমি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ি…কি করব বুঝে উঠতে পারছি না….সেই সময় ই নিশিতা আমাদের বাসায় আসে…আমি নিশিতা কে দেখেই চমকে উঠি…
তোমার মামা নিশিতা কে দেখেই ওর কাছে গিয়ে গালে স্পর্শ করে…আমি তখনি তোমার মামার গালে ঠাস করে চড় দিয়ে বসি….
একদিকে আমার বোন একদিকে আমার ভালোবাসার মানুষ… কি করব আমি???পরে ভেবেচিন্তে রাজি হলাম তার প্রস্তাবে…কিন্তু কিছুই করার ছিল না আমার….
তোমার মামা চলে যাওয়ার সময় আমাকে বলে গেছে,,,আমি যেন রেকর্ডিং টা ডিলেট করে দেই….আমি আর কোন জবাব দিলাম না….ভাবতে লাগলাম কিভাবে কি করব???
হুম এবার আমাকে যা করার করতে হবে…আমি নিশিতা কে নিয়ে বেরিয়ে যাই…ওকে ওর বাসায় পৌঁছে দিয়ে তারপর থানায় যাবো….
যাওয়ার পথেই কয়েকজন লোক আমাদের পথ আটকায়…আমাকে দুইজন ছেলে আটকে ধরে রেখেছে…আর নিশিতা কে দুইজন ছেলে টেনে ধরে রেখেছে…..
আমার পিছন দিকে তোমার মামা পিস্তল ঠেকিয়ে বলছে,,,আমি জানতাম আপনি কিছু একটা ঝামেলা করবেন…তাই আমি আগে থেকেই সতর্ক ছিলাম…. এবার তো আর আপনাকে বাঁচিয়ে রাখা যাবেনা…মরতে হবে আপনাকে….
আমি চিৎকার দিয়ে বলি,,,আমাকে যা করার করেন কিন্তু নিশিতা কে ছেড়ে দেন….
তিনি হো হো করে হেসে বললেন,,,এবার যা করার আপনার সামনেই করব…এই বলে তিনি নিশিতার কাছে যেতে লাগলেন…নিশিতার কাছে গিয়েই ওর গায়ের শাড়ি এক টানে খুলে ফেলল….আমার চোখের সামনেই আমার নিশিতা কে!!!!!
আমার কিচ্ছু করার ছিলোনা…. তারপর নিশিতার পেটে একটা গুলি করে…একটা গুলিতেই আমার নিশিতা মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে….এরপর আমাকে গুলি করা হয়…. এই যে আমার কপালে…..আমি বেচে ছিলাম অনেকক্ষণ… আমি ধীরে ধীরে নিশিতার কাছে যাই…আমার নিশিতা আজ সাদা শাড়ি পড়েছিল…সেই সাদা শাড়ি এখন রক্তে লাল হয়ে আছে….কি নিষ্পাপ দেখাচ্ছে আমার নিশিতা কে….আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে… নিশিতা কে ছোয়ার আগেই জন্য আমার মৃত্যু হয়…..
আশিক ভাইয়া কান্না করতে করতে মাটিতে ধপ করে বসে পড়ে…..আমার চোখ দিয়েও অঝোরে পানি পড়ছে….আমার মামা এমন নিচু মনের মানুষ আমার জানা ছিলো না…..
(চলবে)