নিশি রাতের ডাক ‘পর্ব :১১

0
433

#নিশি_রাতের_ডাক
#পর্ব ১১
#সুমাইয়া_আক্তার

যখন জ্ঞান ফেরে তখন ও আমি জয়দের বাড়িতে…আমার মাথার পাশে জয়ের মা চিন্তিত অবস্থায় বসে আছে…আমার জ্ঞান ফেরা দেখে জয়ের মা আমাকে দেখেই বলল,,,এই মাইয়া তোমার কারণে আমার পোলাডা মইরা গেছে…আমরা ভয়ে দিন রাত পার করতে আছি…এহন যদি তোমার মামা জানতে পারে তুমি আমগো বাড়িত আছো তাইলে আমগো রেও শেষ কইরা দিব…জয়ের বাপ এক কাজ করো তুমি ওরে ওর বাড়িত দিয়া আসো তো….

আমি বললাম,,চাচী আমি জয়ের কবর দেখব…কোথায় জয়ের কবর???

আইচ্ছা আসো দেখাইতেছি….

আমি জয়ের বাবার পিছু পিছু গেলাম…জয়ের কবর টা তালগাছ তলার নিচে…জয়ের নাকি ইচ্ছা ছিলো তার কবর যেন তালগাছ তলায় দেওয়া হয়….ওর ইচ্ছা পূরণ হয়েছে…

আমি জয়ের কবরে গিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম…কিভাবে পারলো মামা একটা নিরীহ ছেলেকে এভাবে মেরে ফেলতে???আমাকে প্রপোজ করেছিলো তাই বলে মেরে ফেলবে???

জয়ের বাবা আমাকে বাড়ি নিয়ে এসেছে….মা আমাকে দেখেই চিল্লাতে শুরু করলো,,, কিরে এতোক্ষণ কই ছিলি??? ভাগ্য ভালো তোর বাবা জানেনা..জানলে আমার কি হতো জানিস???

আমি জয়ের বাবা কে বললাম,,,চাচা আপনি যান…আপনাকে কষ্ট দিলাম….জয়ের বাবা মাথা নিচু করে চলে গেলেন….

আমি মাকে প্রশ্ন ছুড়ে বললা,,,,মা জয় যে মারা গেছে আমাকে আগে বলোনি কেন???আর জয়কে মামার গুন্ডা পান্ডা রা মেরেছে তাও বলোনি কেন???

মা কিছু টা তোতলাতে তোতলাতে বললেন,,,আসলে তোর পড়া লেখায় ক্ষতি হবে তাই বলিনি…আর তোর মামা আমাকে বলতে বারণ করেছে….

আমি ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকি….কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে রুমে চলে যাই….তারপর বারান্দায় গিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকি…মনে হলো পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে…

আমি বুঝতে পারছি জয় এসেছে…আমি জয়কে বললাম,,,জয় তুমি দেখা দেও প্লিজ…আমি জানি অদৃশ্য ছায়া টা তুমিই…প্লিজ দেখা দেও তুমি….

জয় আস্তে আস্তে দৃশ্যমান হচ্ছে…আমি জয়কে জাপটে ধরি…ওকে ধরেই কান্না শুরু করি আমি….

জয় আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,,,আমার কি দোষ ছিলো বলতে পারো??? যখন তোমার মামা আমাকে তোমার থেকে দূরে সরে আসতে বলেছিলো তখন আমি তোমার সাথে কথা বলা দূরের কথা তাকাতাম ও না….যেদিন তুমি আমার পথ আটকিয়েছিলে সেদিন তোমার মামা আমার বাড়িতে এসে শাসিয়ে গেছে…আমি প্রতিবাদ করেছিলাম তাই আমাকে ছুরি মেরে দেয় পেটে…

আমাকে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই আমি পথে মারা যাই….

জয়ের কথা শুনে অঝোরে চোখের পানি পড়ছে….জয় আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,,,কেঁদো না…এখন আমাদের কেউ দেখতে পাবেনা…আর আমার মরার ভয় ও নেই…এবার একটু হাসো!!আর তো বেশিদিন থাকবো না….প্রতিশোধ নেওয়া হলেই সারাজীবনের জন্য এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবো….

আমি কি বলব ভেবে পাচ্ছিনা….হঠাৎ মা ডেকে বললেন,,,মা রে,,মাফ করে দিস আমাকে…আমি চাইনি তোর জীবনের কোন ক্ষতি হোক…..তোর মামা কে আমি ছাড়া আর কেউ ভালো জানে না…

আমাকেও একজন পছন্দ করতো…তোর মামা জানার পর সেই ছেলের এক হাত এক পা ভেঙে দিয়েছে…পরে তোর বাবার সাথেই আমাকে জোর পূর্বক বিয়ে দেয়…

আমি মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকি….জয় এখনো আমার পাশেই আছে…কিন্তু ওকে আমি ছাড়া আর কেউ দেখতে পাচ্ছে না…

মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,,,চল খেয়ে নে…সেই সকাল থেকেই না খেয়ে আছিস..

জয় আমাকে ইশারায় বলল,,,যাও খেয়ে এসো…নাহয় শরীর খারাপ করবে তোমার…

আজ সারাদিন নবনীর সাথে কথা বলিনি…রুমে এসে দেখি নবনী বারান্দায় মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে…আমি পিছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরি…নবনী আমাকে ছাড়িয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বারান্দা থেকে রুমে চলে যায়….আমি বারান্দায় ই দাঁড়িয়ে আছি…

জয় এসে আমার হাতের উপর হাত দেখে বলল,,,আচ্ছা আমি বেচে থাকলে কত ভালো হতো বলো???

আমি জয়ের বুকে মাথা রেখে বললাম,,হু ভালো হতো…কিন্তু এখন অনেক খারাপ হলো…এখন তোমার প্রেমে পড়ে গেছি….তুমি চলে গেলে কিভাবে থাকবো আমি???

জয় মুচকি হেসে বলল,,,আমি আবার আসিব ফিরে…তুমি দেখে নিও….

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম….কি হয়ে গেলো ছোট্ট জীবনে…???মামার এরকম আচরণের কারণ বুঝতে পারছি না….

হঠাৎ নবনী এসে বলল,,,কার সাথে কথা বলো তুমি???নাকি তোমার সাথে জ্বীন আছে???

এই কথা বলেই ফিক করে হেসে দেয় নবনী….নবনী কে দেখে মনে হচ্ছে কত বছর যাবৎ যেন হাসেনা…
আমিও হেসে উঠলাম নবনীর সাথে…থাক হাসুক মেয়েটা… আমি নবনীকে বললাম,,,আচ্ছা মামা কি তোমার সাথে এমন কোন আচরণ করেছে যার কারণে তুমি কষ্ট পেয়েছো???

নবনী মুখ ঘুরিয়ে বলল,,,না তো ও তো আমাকে অনেক ভালোবাসে…তখনি সেই ছেলেটা মানে নবনীর ভাই বলে পরিচয় দিয়েছিল সে আস্তে আস্তে দৃশ্যমান হতে শুরু করে…আর নবনী ছেলেটা কে দেখেই ভাইয়া বলে ডাক দিয়ে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিয়েছে….

যাক এবার বিশ্বাস করলাম ছেলেটা নবনীর ভাই….

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here