নিশি রাতের ডাক ‘পর্ব :১৩

0
636

#নিশি_রাতের_ডাক
#পর্ব ১৩
#সুমাইয়া_আক্তার

আস্তে আস্তে রুশা, আয়েশা,তানিয়া,সামান্তা,ফারিন, নিশিতা আমার সামনে দেখা দিতে লাগলো…আমি ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছি…মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার অবস্থা আমার….কোনোভাবে নিজেকে সামলিয়ে নেই…

আয়েশা বলে উঠলো,,,আমাকে কেন মেরেছে?? কে মেরেছে???কিভাবে মেরেছে জানতে চাও না???

হুম, জানতে চাই….

তাহলে শোনো….তোমার মামার কুনজরে শুধু আমি একা না হোস্টেলের শতাধিক মেয়ে পড়েছে….আমি যখন টয়েলেটে যেতাম তখনি তোমার মামা আমাকে সেক্সুয়াল হ্যারাজমেন্ট করতো….আমি কিছু করতে গিয়েও করতে
পারিনি….একদিন রাতে আমেনা খালা কান্না করতে করতে আমাকে ডেকে নিয়ে বললেন,,,এই আয়েশা শোনো আমার মেয়ে বৃষ্টির মাথা ফেটে গেছে…অনেক রক্ত লাগবে…তুমি কি রক্ত দিতে পারবা???

জ্বী দিতে পারবো…কিন্তু কোথায় আপনার মেয়ে???

এই যে পাশের হাসপাতালেই আছে…চলো আমার সাথে….

আমেনা খালা আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন???এখানে তো কোনো হাসপাতাল নেই….খালা আমার খুব ভয় করছে…আমি চলে যাচ্ছি হোস্টেলে…

তখনি তোমার মামা মানে ওই জানোয়ার টা আমার হাত হেচকা টানে ঝোপের মধ্যে নিয়ে যায়….আর আমেনা খালা কে 2000টাকা দিয়ে বিদায় করে দেয়….

আমেনা খালা এমন কাজ করবে ভাবতে পারিনি যাকে আমি নিজের মায়ের মতো ভাবতাম সেও এই কাজে..!!ছিঃ….

এরপর সেই জানোয়ার টা আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে… আমি চিল্লাতে থাকি….তখনি আশিক স্যার আমাকে বাঁচাতে আসে…জানোয়ার টা আশিক স্যার কে আঘাত করে সাথে আমাকেও…আমি ওখানেই পড়ে যাই…অজ্ঞান অবস্থায়ই সে আমার সাথে!!!!

তারপর যখন আমার জ্ঞান ফিরে তখনি জানোয়ার টা আমার গলা চেপে ধরে….শত চেষ্টা করেও বাঁচতে পারিনি…. মেরেই ফেলল আমাকে….তারপর আমাকে টেনে নিয়ে গিয়ে আমার রুমে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দেয়….যাতে সবাই বুঝতে পারে আমি আত্মহত্যা করেছি….

আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না….মাথা ঘুরে পড়ে যাই আমি….

তারপর যখন জ্ঞান ফেরে আশিক,জয়, সামান্তা,রুশা,ফারিন,আয়েশা,নিশিতা,তানিয়া ওরা সবাই আমার পাশেই ছিল…. মা কেঁদে অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে…বাবা, মা আমার অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার কারণ বুঝতে পারলেন না…আমিও কিছু বুঝতে দেইনি….মাথা ঝিম ধরে আছে আমার….পুরো শরীর ব্যাথা আমার… মা কে বললাম,,,মা আমাকে একটু চা করে দেও…খুব মাথা ধরেছে…. মা আমার জন্য চা করতে চলে গেছেন….

তারপর সামান্তা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,আপু তোমার ক্ষতি করার জন্য আমরা সবাই দুঃখিত…তুমি এখন বিশ্রাম নেও…আমরা আবার পরে আসবো…

জয় চলে যেতেই জয়ের হাত ধরে রাখি আমি….ওর হাত ধরে রেখে কান্না করতে থাকি…জয় আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,,,পাগলী আমি যাচ্ছিনা… আসবো আবার আমি…এখন তোমার বিশ্রাম দরকার…আমার কথা যখনি স্মরণ করবে আমি চলে আসবো….
আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলো জয়….

আমি ভেবে পাইনা একটা মানুষ মরার পর ও কিভাবে এতো ভালোবাসতে পারে??? না জানি বেচে থাকলে কতটা ভালোবাসতো????

নবনীর চোখে পানি…. আমি আস্তে আস্তে বিছানা ছেড়ে উঠে বসলাম….নবনীর হাত ধরে বললাম,,,,ক্ষমা করে দিও আমাকে….আমার মামার জন্যই আজ এই অবস্থা তোমার….কিন্তু আমি কিছু করতে পারছিনা আর করার সাধ্যও নেই….

নবনী আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই চলেছে…মা এসে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,,,কি হয়েছে??? এভাবে কাঁদছিস কেন???

আমি নবনী কে ছাড়িয়ে বললাম,,,না মা তেমন কিছুনা…আমি অজ্ঞান হয়ে গেছি…তাই মন খারাপ করছিলো…
মা আমাকে চা দিয়ে চলে গেলো….আমি নবনী কে বললাম,,, যাও ফ্রেশ হয়ে এসো…আর কান্না করতে হবেনা….আমি কিছু একটা ব্যবস্থা করবো….

রাতে খাওয়ার পর মায়ের ফোন থেকে মামা কে ফোন করলাম….ফোন করে বললাম,,,মামা আমি কাল হোস্টেলে যাবো…তুমি কাল সকালে এসে নিয়ে যেও….

মামা বলল,,,কাল এসে কি করবি???আর দুইদিন পর ই আয়…
মামার কথায় আর কিছু বলতে পারলাম না….কেন দুইদিন পর যেতে বলল,,বুঝলাম না…

রুমে এসে দেখি নবনী বারান্দায় গিয়ে মন খারাপ করে ফ্লোরে বসে আছে…আমিও গিয়ে নবনীর পাশে বসলাম…নবনী কাঁদছে.. কিভাবে ওকে শান্তনা দিব বুঝতে পারছিনা….নবনী কাঁধে হাত রেখে বললাম,,,দেখো তুমি এভাবে কেঁদো না…এখন তুমি একা নও আমরা দশজন একসাথে আছি….রিটন আহাম্মেদ আমার আপন মামা হলেও আমি তাকে ছাড়ব না…ওনার শাস্তি উনি পাবেই….

খুব জানতে ইচ্ছে করছে রুশা,তানিয়া, ফারিন আর সামান্তার মৃত্যু হলো…যদিও এসব জেনে আমার লাভ নেই…কোন প্রমাণ ছাড়া কিছুই করতে পারব না আমি….

হঠাৎ করেই ওরা সবাই আবার এসে হাজির হয়েছে….রুশা বলে উঠলো,, এখন কেমন আছো ফাহমিন???

আমি জবাব দিলাম,,হুম এখন ভালো আছি…আচ্ছা তোমাদের সাথে কি হয়েছিলো একটু বলবে আমাকে????
সবাই একসাথে বলে উঠলো,,,হুম বলব….

রুশা বলতে শুরু করে,,,যেদিন আমার লাশ রুমে পাওয়া যায় তার আগের দিন রাতে রহিম স্যার আমাকে ডেকে বললেন,,,রুশা মা এদিকে আসবে??তোমার মা ফোন করেছে বাড়ি থেকে….আমি রহিম স্যারের কথা বিশ্বাস করে তার সাথে গেলাম…স্যার আমাকে কমন রুমে নিয়ে গেলেন….আমি স্যার কে বললাম,,,,কি হলো স্যার আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কেন???

তখন তোমার মামা হেসে বলল,,,এই যে মামণি,, কি যে সেক্সি লাগছে তোমাকে….আমাদের একটু মজা দিবে???কথা দিচ্ছি কেউ জানতে পারবে না….

আমি ভয়ে কাঁপতে থাকি,,, এ কি বলছেন স্যার??? প্লিজ আমার এতো বড় ক্ষতি করবেন না…তারপর,,, তারা দুজনেই আমাকে জানোয়ারের মতো খুবলে খেয়েছে….অনেক কাকুতি,মিনতি করেছি কেউ শোনেনি….

রিটন স্যার বলে উঠলেন,,,কাল আবার ও এসো কিন্তু…আর এই টাকাগুলো রাখো কাজে লাগবে….
আমি টাকাগুলো তার দিকে ছুড়ে বললাম,,,, আমি সবাইকে সব বলে দিবো…আপনি এই হোস্টেলের মেয়েদের সাথে কি করেন???এই কথা বলেই দৌড়ে বাহিরে আসতেই,, আমার মাথায় আঘাত লাগে….মাথায় হাত দিয়ে পিছনে তাকাতেই দেখি,, রিটন স্যার একটা হাতুড়ি দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করেছে….আমার মাথা থেকে দড়দড় করে রক্ত পড়ছে…আমি মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে পড়ে যাই….

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here