নিশি রাতের ডাক ‘পর্ব :১৪

0
463

#নিশি_রাতের_ডাক
#পর্ব ১৪
#সুমাইয়া_আক্তার

তারপর আমার আর কিচ্ছু মনে নেই… অজ্ঞান অবস্থায় আবার ও ওরা আমার সাথে!!!!!
যখন জ্ঞান ফেরে আমি তখন ও কমন রুমে ফ্লোরে নগ্ন অবস্থায় পড়ে আছি…আমার উঠে দাঁড়াবার শক্তি নেই…অনেক চেষ্টা করে জামা কাপড় পড়ে উঠে দাঁড়াই…. কমন রুমের দরজা খুলে বাহির হতে যাবো কিন্তু দরজা বাহির থেকে লক করা….আমি অনেক চিৎকার করি… তারপর জহির আঙ্কেল মানে দারোয়ান এসে দরজা খুলে দেয়…আমি কান্না করতে করতে বলি আঙ্কেল আমাকে বাঁচান…

তিনি ও একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে বলেন,,,কি গো মামণি এবার আমাকে আদর করার সুযোগ দেও… এতো তাড়া কিসের???দারোয়ান আঙ্কেল আমার কাছে ধীরে ধীরে আসতে লাগলেন…. হেচকা টানে আমার বুকের থেকে ওরনা নিয়ে ফেললেন…আর বাচাতে পারিনি নিজেকে…

আমার মাথা দিয়ে এখনো রক্ত ঝরছে…মাথা সোজা করে দাঁড়াতে পারছি না আমি….আমি কান্না করতে করতে রুম থেকে বের হতে যাবো রহিম স্যার আমাকে ধাক্কা দিয়ে রুমের ভিতর ঢুকিয়ে দেয়…তারপর আমার ওরনা দিয়ে গলায় পেঁচাতে পেঁচাতে বলে,,, তুমি কি ভাবছো তোমাকে বাঁচিয়ে রাখব??না না তুমি বেচে থাকলে তো আমাদের সব কিছু ফাঁস হয়ে যাবে…
মেরেই ফেলল আমাকে….কি দোষ করেছিলাম আমি???আমাকে কি বাচতে দেওয়া যেতো না????আমি না হয় সব কিছুই গোপন রাখতাম….তারপর আর কি আমাকে ওইভাবে ঝুলিয়ে দিয়েছে যেভাবে ওদের ঝুলিয়েছে….

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,,,আচ্ছা তোমাদের কে মেরে এভাবে ঝুলিয়ে রাখলে কেউ কি কখনো দেখতো না???এটা কি করে সম্ভব??একটা মানুষ কে এইভাবে ঝুলিয়ে রেখে চলে যায় আর কেউই সেটা দেখে না???

তখন সামান্তা বলে উঠলো,,, কিভাবে কেউ কিছু বলবে???মেয়েদের কে তো খুব ভয়ে রাখতো রিটন স্যার….উনি বলতেন যদি আমরা কাওকে কিছু বলি তাহলে আমাদের ও ওদের মতো হাল করবেন….আর উনার একজন চামচা মানে পুলিশ আছে…সেই পুলিশ কে তো টাকা দিয়ে কিনে রেখেছে…. একটা খুন কে আত্মহত্যা তে পরিণত করতে পারে নিমিষেই….

এবার আমি সামান্তার কথা জিজ্ঞেস করলাম…কিভাবে কি হলো???

সামান্তা বলতে শুরু করে,,,,একদিন রহিম স্যার আমাদের ক্লাস নিচ্ছিলেন…ক্লাস নেওয়ার এক পর্যায়ে রহিম স্যার আমার পিঠে হাত রাখেন…প্রথমে কিছু মনে করিনি…আমি স্যার কে সম্মান করতাম… ধীরে ধীরে স্যারের হাত আমার কোমরের দিকে নামতে থাকে…আমি স্যার কে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করি এ কি করছেন আপনি???

স্যার থতমত খেয়ে বললেন,,,,তুমি কি বলছো এসব???তুমি আমার মেয়ের মতো….আমাকে এরকম ভাবতে পারলে তুমি????

আমি মাথা নিচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম…ক্লাস শেষে স্যার আমাকে বললেন,,,আমার সাথে এসো কথা আছে তোমার সাথে….

আমার খুব ভয় লাগতে শুরু করে….আমি স্যারের সাথে যাই….স্যার আমাকে হোস্টেলের ছাদে নিয়ে গেলেন…আমি স্যারকে জিজ্ঞেস করলাম,,,স্যার আপনি আমাকে ছাদে নিয়ে এলেন কেন???

স্যার আমার শরীরে বিভিন্ন জায়গায় হাত দিতে থাকলেন…. আমি কাঁচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছি…. কিছু করতে পারছি না আমি….আমি কিছুটা সাহস নিয়ে বললাম,,স্যার আমাকে ছেড়ে দেন না হয় আমি ছাদ থেকে লাফ দিব….

এই কথা শুনেই রহিম স্যার ভয় পেয়ে আমাকে ছেড়ে দিলেন…..আমি দৌড়ে কাঁদতে কাঁদতে ছাদ থেকে নেমে আমার রুমে চলে যাই…রুমে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দেই….তারপর আমি ফ্যানের সাথে ওরনা পেঁচিয়ে আত্নহত্যা করি…কারণ আমি বেচে থাকলে আমার সাথে ওইসব হতো যা আমি কখনোই সহ্য করতে পারতাম না….আর কাগজে লিখে গিয়েছিলাম আমার মৃত্যুর জন্য রহিম স্যার দায়ী….

আমি বলে উঠলাম,,,কিন্তু আমি যে কাগজে লিখা দেখলাম তোমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়….,!!!!

সামান্তা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,,,হয়ত রহিম স্যার সেই কাগজ টা সরিয়ে এই কাগজ টা রেখে দিয়েছে…

আমি ভেবে পাচ্ছি না…কেন বিশ্বাস করবো এই কথাগুলো???শত হলেও সে আমার মামা…

এবার তানিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,,তানিয়া কি হয়েছিল তোমার সাথে???

তানিয়া বলতে শুরু করে,,,আমি ক্যান্টিনে যাচ্ছিলাম পানি আনার জন্য….তখন কেউ চিৎকার করছে এমন আওয়াজ আসছে…আমি আওয়াজ টা লক্ষ্য করে সামনে এগোতে থাকি…রাত তখন ১১.৪০ বাজে… আমি কমন রুমের সামনে এসে থামি…কমন রুম থেকেই আওয়াজ আসছে….আমি কমন রুমের দরজার একটা ছিদ্র দিয়ে দেখার চেষ্টা করি…দেখলাম প্রায় পনেরো/বিশজন মেয়েকে আটকে রাখা হয়েছে… ওদেরকে বলা হচ্ছে,,,তোমরা এই ড্রাগস গুলো নিজেদের শরীরে ঢুকিয়ে নেও…. তোমাদের এখনি পাচার করা হবে….

আমার কাছে ফোন থাকলে আমি প্রমাণ হিসেবে রাখতে পারতাম..আমি দৌড়ে গিয়ে ফারিন কক্র ডেকে আনি….আমরা ভয়ে কাঁপতে থাকি…আমার হাত থেকে পানির বোতল পড়ে যায়…তখনি রিটন স্যার দরজা খুলে বাহিরে বের হয়ে আসেন…আমাদের দেখেই একটা অট্টহাসি দিয়ে বললেন,,, আচ্ছা তাহলে তোমরা আমার সম্পর্কে সব জেনে গেছো???

আমি ভয়ে বলতে থাকি,,, স্যার আমাদের ছেড়ে দেন…আমরা কাওকে কিচ্ছু বলব না…প্লিজ ছেড়ে দেন আমাদের….

তা কি করে হয় মামণি রা???এভাবে তো তোমাদের ছেড়ে দেওয়া যায়না….

আমাদের দুজনকেই রিটন স্যার কমন রুমের ভিতর নিয়ে গেলেন….আমাদের দুইজন কে বেধে রাখা হলো…আমরা অনেক কাকুতি মিনতি করেছি তাও আমাদের ছাড়লো না….

হঠাৎ রহিম স্যার আমাদের দুইজনের মুখেই রুমাল চেপে ধরলেন….আমরা দুইজন ই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলাম…..

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here