নিশি রাতের ডাক ‘পর্ব :৪

0
700

#নিশি_রাতের_ডাক
#পর্ব 4
#সুমাইয়া_আক্তার

এমন সময় ফজরের আজান দেয়…আর মূহুর্তেই সেই তিনটি কালো ছায়া হাওয়া হয়ে উড়ে যায়…

আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই মাটিতে…এবার অনেক বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে…বড় মামা এসে
আমাকে ধমকাচ্ছে আমি কেন বাহিরে গেলাম…এবার তো বাবা মাকেই ডেকে পাঠিয়েছেন…আমি ভয়ে আধমরা হয়ে গেছি…

মা বাবা এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো…আমি বাবা মাকে শান্ত করার জন্য বললাম,,বাবা দেখো কিচ্ছু হয়নি আমার…আমি ঠিক আছি…

বাবা আর মা হাউমাউ করে কেঁদেই চলেছে… বাবা তো নাছোড় বান্দা আমাকে বাড়িতে নিয়েই ছাড়বেন….

নিয়ে গেলো আমাকে বাড়িতে…মা তো উঠে পড়ে লেগেছে আমাকে হুজুর দেখানোর জন্য…

আমাকে টেনে নিয়ে গেলেন হুজুরের কাছে…হুজুর আমাকে তাবিজ দিলেন….বললেন তাবিজ টা ডান হাতে পড়তে…কোনভাবেই এটা খোলা যাবেনা…আমাকে তিনটি মেয়ের আত্না আছড় করেছে…আমি এই তাবিজ খুললেই ওরা আমার ক্ষতি করবে…

আমি কখনো এসবে বিশ্বাস করিনা তাও মায়ের জোরাজুরিতে পড়তে হচ্ছে…
এখন বিশ্বাস না করেও পারছি না…কারণ আমার সাথে যা হচ্ছে তা তো আর ফেলে দেওয়ার মতো না…

অনন্যা,সায়মা,নাফিসা রিদিতার কথা খুব মনে পড়ছে…মায়ের ফোন নিয়ে স্কুলের টেলিফোনে ফোন করলাম…

অনন্যা আর সায়মার সাথে কথা বললাম…অনন্যা বলল,,,এই শোন আমাদের ক্লাসের ফারিন আছে না…ওই মেয়েটাও ওর রুমে আত্মহত্যা করেছে…ফারিনের মা বাবা এসেছে বলল পুলিশের কাছে মামলা করবে…আর এদিকে রুশার খুনীকে এখনো বের করতে পারেনি…টিচারদের উপর যে সন্দেহ করবে এমন কোন আলামত পায়নি…

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম…..আমি অনন্যা কে বাই বলে ফোন রেখে দিলাম…খুব খারাপ লাগছে…ভাবছি কে করছে এমন???কেনইবা এভাবে আত্মহত্যা করছে???
মায়ের ডাকে আমার ভাবনায় ছেদ পড়লো…মা খেতে ডাকছে আমাকে…

কোনমতে খাওয়া শেষ করলাম… আমি আমার রুমে এসে শুয়ে পড়েছি কিন্তু কোনভাবেই ঘুম আসছে না…
শোয়া থেকে উঠে বারান্দায় গেলাম….আজকের আকাশ টা চাঁদে ঝলমল করছে….এক অপরুপ দৃশ্য….মন ছুঁয়ে যাচ্ছে একদম…হঠাৎ এক দমকা বাতাস এসে পড়লো আমার শরীরের উপর…প্রচন্ড বাতাসে আমি ছিটকে পড়ি মাটিতে…..

মাটি থেকে উঠতেই খেয়াল করলাম আমার ডান হাতে যে তাবিজ টা ছিল সেটা খুলে পড়ে গেছে মাটিতে…

আমি তাবিজ টা হাতে নিতেই তাবিজ অদৃশ্য হয়ে গেলো…আর তখনি কেউ যেন স্বশব্দে হেসে উঠলো…

কেউ হেসে হেসে বলছে তুই কি ভেবেছিস???তাবিজ দিলেই তুই আমাদের হাত থেকে বেঁচে যাবি???

আমি চিৎকার দিয়ে জিজ্ঞেস করি…কে তুমি??কি চাও আমার কাছে???কেন করছো এমন???আমি কি ক্ষতি করেছি তোমার???

তখনি আওয়াজ আসলো,,, কি ক্ষতি করেছিস???তুই ক্ষতি করিস নি…ক্ষতি তো করেছে তোর মামা….রিটন আহাম্মেদ…

মানে কি বলতে চাইছো তুমি???মামা যদি তোমার ক্ষতি করে থাকে তাহলে আমার সাথে এমন করছো কেন???

কারণ তোর মামার প্রাণ তুই…তুই চলে গেলে তখন রিটন আহাম্মেদ বুঝবে আপনজন হারালে কেমন লাগে???

তুমি কি বলছ আমি বুঝতে পারছিনা….

তারপর মা দরজায় নক করে…দরজা খুলতেই মা জিজ্ঞেস করে এত রাতে কার সাথে কথা বলছিস তুই???

আমি থতমত খেয়ে বললাম,,, কই কার সাথে কথা বলব??

মা চোখ বড় বড় করে বললেন,,একি তোর হাতে তাবিজ কোথায়???খুলে ফেলেছিস কেন???এই কথা বলেই আমার গালে চড় মেরে দিলেন…

আমি মাকে বলছিলাম,,মা আমার তাবিজ পড়তে ভালো লাগেনা…মা তাও জোর করে তাবিজ পড়িয়ে দিলেন…

আমি আবার ও শুয়ে পড়ি কিন্তু আমার মাথায় সেই মেয়েটার বলা কথাগুলো ঘুরছে…কি হচ্ছে এসব???মামা কি করেছে ওদের???
তাহলে মামা কি ওদের??? ছিঃ ছিঃ একি ভাবছি আমি???

এসব ভাবতে ভাবতে যে কখন ঘুমিয়ে পড়ি আমার খেয়াল নেই…সকাল বেলা মায়ের ডাকে আমার ঘুম ভাঙ্গে…
বই খাতা সব স্কুলের হোস্টেলেই রেখে এসেছি…তাই পড়তেও পারছিনা…খুব বোরিং লাগছে…সকালের নাস্তা করে বাড়ির পিছনের বাগান টায় গেলাম…বাগানে অনেক ধরনের ফুল গাছ লাগিয়েছে বাবা…বাবার বাগান করা খুব পছন্দ…..বাগানে ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম কি কি ফুল গাছ লাগিয়েছে বাবা…হঠাৎ জবা ফুলের গাছে চোখ গেলো…রক্তজবার মতোই জবা ফুল ফুটে রয়েছে…. তাই একটা জবা ফুল হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখছিলাম…তখনি মনে হলো আমার হাত টা অবশ হয়ে আসছে…নাড়াতে পারছিনা হাতটা…

জবা ফুল গাছের কাছ থেকে সরে আসতেই… আমার হাত আগের মতো হয়ে গেছে…আমি আবার হাত নাড়াতে পারছি…

বাগান থেকে চলে আসি আমি…দেখলাম মা রান্না করছে…মায়ের কাছে গিয়ে বসলাম…মা হাতের দিকে তাকিয়ে বলল,,,কিরে তোর হাতে রক্ত কিসের???পাগলের মতো হয়ে গেছে মা…

আমিও ভাবতে পারছিনা রক্ত আসলো কোথা থেকে???আমার তো হাত কাটেনি…তাহলে???

মা আমাকে ধমকাচ্ছে… কই গিয়েছিস তুই???হাত কাটলো কিভাবে???

আমি অবাক হয়ে বললাম,,,আমি নিজেও জানিনা মা কিভাবে কাটলো…হাতের দুইটা আঙ্গুল কেটে গেছে…খুব রক্ত ঝরছে…মা বাবাকে ফোন করে ডাক্তার নিয়ে আসলেন…

ডাক্তার আমার হাত দেখে বললেন,,,মনে হচ্ছে তুমি নিজের হাতে কেটেছো??

আমি বললাম,, না আমি নিজের হাত নিজে কাটতে যাবো কেন??আমি বাগানে গিয়েছিলাম..জবা ফুল্র হাত লাগাতেই… আমার হাত অবশ হয়ে যায়…তারপর আমি মায়ের কাছে চলে আসি…মা দেখে বলল,,,আমার হাত কেটে গেছে….

ডাক্তার একটা শ্বাস ছেড়ে বললেন,,,সাবধানে চলাফেরা করবে…আর এন্টিসেপটিক ওষুধ দিচ্ছি খেয়ে নিও…

আমার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে গেছে…মা আমাকে রুমে শুয়ে দিয়ে গেছে…কিছুক্ষন শুয়ে থাকার পর উঠে বসলাম…তারপর দেয়ালে লাল লাল অক্ষরে লেখা ভেসে ওঠা দেখলাম…

তুই কি ভেবেছিস তুই বেঁচে যাবি?? না তোর ক্ষতি তো আমি যেভাবেই হোক করব…ওই জবা ফুল টায় আমি কাটা দিয়ে দিয়েছিলাম..এজন্যই তোর হাত কেটে গেছে…মনে রাখিস তুই বাঁঁচবি না….তুই মরবি…সাথে তোর মামা ও তোর মামার গ্যাং রাও মরবে….

আমি ভয়ে কান্না করতে থাকি…কেন করছো এসব???আমাকে মাফ করে দেও…আমি আর নিতে পারছিনা… আমার অসহ্য লাগছে….আমাকে মাফ করে দেও প্লিজ….

তখনি আমার চোখের সামনে সেই তিনটি কালো ছায়া এসে হাজির হয়েছে…সেই তিনটি ছায়া মানুষের আকারে পরিণত হলো…একজনের ঠোঁট কাটা..ঠোঁট দিয়ে রক্ত ঝরছে…আর এক জনের চোখের কোটর থেকে চোখ বেরিয়ে গেছে…আর একজনের সেদিন সাদা সালোয়ার কামিজ পড়া মেয়ে দেখেছিলাম…সেই মেয়েটার চেহারা আগুনে পুড়ে ঝলসে গেছে…

আমি চিৎকার দিতে থাকি…আর ওরা তিনজন বলছে,,,তোর হাতে তাবিজ আছে তাই তোর কাছে আসতে পারছিনা…কিন্তু তুই ভাবিস না যে তুই বেঁচে যাবি…তোর ক্ষতি না করে আমরা এখান থেকে যাবো না….

তারপর ওরা তিনজন দেয়ালে মিশে যায়….আমি কান্না করছি অনবরত…কি করেছে আমার মামা??না মামাকে আমার জিজ্ঞেস করতেই হবে….

বিকেলে বসে বসে টিভি দেখছিলাম…মা এসে বলল,,,ফাহমিন তোর পার্সেল এসেছে…

আমি বললাম,,,কে পাঠাবে আমাকে পার্সেল???আমি তো কিছু অর্ডার করিনি…

তারপর পার্সেল টা নিয়ে আসলাম ঘরে… পার্সেলটির বক্সের উপরে আয়েশা নাম লেখা….
আমি নাম টা দেখে ভড়কে যাই…আয়েশা??এ কি করে হতে পারে???

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here