#নীল_অপরাজিতা
#পার্টঃ৪
#Rifat_Amin
ভোরে ঘুম থেকে উঠেছে মিষ্টি। উঠেই হাতে ব্রাশ নিয়ে বাড়ির পেছনের পুকুর ঘাটে চলে এসেছে আর সাথেও মিথিলাকেও আনা হয়েছে। ভোরের সুর্য হালকা উঁকি দিচ্ছি দূরের ছোট বড় গাছগুলোর উপর। আর সেই প্রতিবিম্ব গঠিত হচ্ছে পুকুরের স্বচ্ছ পানিতে। প্রতিবিম্বের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিষ্টি। মিথিলা, মিষ্টির এই নীরবতা ধরতে পারছে না। কিছু বলতেও পারছেনা কারণ সম্পর্কে ওর বড় হয় মিষ্টি। বাড়ির পেছনে আজ প্রথমবার আসলো মিষ্টি। এসেই বিষ্ময়ে হা হয়ে গিয়েছিল। এমন সুন্দর সকাল ইট পাথরের শহরে কখনো দেখেনি। কেমন সুন্দর হাওয়া আসছে আশপাশ থেকে। সেই হাওয়ায় দোল খাচ্ছে মিষ্টির কেশ। মিথিলা চুপ করে বসে থাকতে না পেরে বললো —
” এত সকালে এখানে আনলে যে আপু। তোমার কি মন খারাপ?? ”
মিষ্টি, মিথিলার কথা শুনলে কি শুনলো না। সে একদৃষ্টিতে সেই সুর্যের দিকেই তাকিয়ে আছে। গতকাল সারাদিন অভির সাথে নিজে থেকে কথা বলতে যায়নি মিষ্টি। নিজের এই কর্মে প্রচন্ড খুশি হলেও অভিও যে কোনো খবর নেয়নি এই জন্যেই অবাক হচ্ছে । নিজের আত্মসম্মানবোধে আঘাত লাগলো মিষ্টির। তাহলে কি এতোদিন আমি ওরে শুধুই জালাতন করতাম। ওরও তো একটু খোঁজ নেয়া উচিত ছিল। বিয়ে বাড়িতে নিয়ে এসে উদ্ধার করেছে আমায়।
মিথিলা উত্তর না পেয়ে আবার বলে উঠলো —
” আপু ”
মিষ্টি সচকিত হয়ে মিথিলার দিকে তাকালো। সকাল সকাল মিথিলাকে এখানে নিয়ে এসে ডিস্টার্ব করলাম না তো।
” বলো মিথিলা। আচ্ছা রাতে কি সৌমিত্রর সাথে কথা হয়েছে তোমার?? ”
সৌমিত্রর নাম শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো মিথিলা। অস্ফুটে স্বরে বললো —
” হ্যা আপু। কথা হয়েছে। ”
” দেখো মিথিলা আমাদের ফ্রেন্ডশিপটা তো কেমন জানো?? কলেজ লাইফ থেকে সৌমিত্রকে আমি চিনি। ও ভীষণ ভালে ছেলে আর সবার সাথে ফ্রি মাইন্ডেড। আর তোমার সাথে ওর সম্পর্কের মাত্র বছর খানেক হলো। তোমার ওকে কেমন মনে হয়?? ”
মিষ্টির কথায় মিথিলার গলা শুকিয়ে গেলো। তাহলে কি সৌমিত্র! না না! ধুর কি ভাবছি আমি। মিথিলা ঠোঁট উল্টে বাচ্চাদের মতো করে বললো —
” বুঝিনি আপু! ”
মিথিলার কথায় হো হো করে হেসে উঠলো মিষ্টি। হাসতে হাসতে বললো —
” মজা করলাম। হিহিহি। ”
————💙
সকাল ১০ টা ৩৯। সকালের মিষ্টি সুর্যটা রেগেমেগে দুপুর হবার জন্য প্রস্তুত। এদিকে সৌমিত্র মরার মতো ঘুমিয়ে আছে। অভি সকাল সকাল উঠে বিয়ের বিভিন্ন কাজে হাত লাগাচ্ছে। ডেকোরেশনের ব্যাপারটা একা হাতে সামলাচ্ছে অভি। মিষ্টির মামা বারবার বারণ করছে কাজ করতে। তবুও মানছে না অভি। এই সময়ে রুমে বসে থাকার মতো লজ্জাজনক আর কি হতে পারে। বড় মানুষগুলো সব দেখাশোনা করছে আর আমি বসে থাকবো তা তো হতে পারে না। মাহিন তার ফোন নিয়ে পুকুর পাড়ে মিথিলাকে নিয়ে বসে আছে। মিথিলার জায়গাটা বড্ড ভালোলেগেছে। এখনো কেমন বাতাস বইছে চারপাশে। মিথিলা মাহিনের চুলে হাত বুলিয়ে দিলো আর বললো—
” তুমিও গেম খেলো অভি ভাইয়ের মতো?? ”
মাহিনের মনোযোগ পুরোপুরি গেমের মাঝে রেখেও
মিথিলার দিকে তাকিয়ে আবার গেমে চোখ দিলো। গেম বিষয়ে কেউ প্রশ্ন করুক এটা মাহিন চায়। আর অভি ভাইয়ের সাথে তুলনা করছে দেখে গর্বে বুকটা ভরে উঠলো মাহিনের। তবুও সেলিব্রেটি ভাব মেরে বললো —
” অভি ভাইয়ের মতো এতটা পারিনা। তবে যথেষ্ট ভালো খেলি। ”
নিজের মুখে নিজের প্রশংসা শুনে হেসে ফেললো মিথিলা। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো কি আর উত্তর পেলাম কি!
মাহিন আর উত্তর না পেয়ে নিজেই বললে —
” একটা কথা বলি দিদি ? কিছু মনে করিও না ”
মিথিলা ভ্রু কুঁচকে ফেললো। সন্ধিহান কন্ঠে বললো
“বলো মাহিন ”
” সৌমিত্র দাদা তোমার কে হয়?? ”
সৌমিত্র নাম শুনে আকাশ থেকে পড়লো মিথিলা। এই ছেলের বয়স কত হবে?? অথচ কেমন অকপটে জিজ্ঞেস করে ফেললো। কিন্তু এ কিভাবে জানলো আশ্চর্য!! কন্ঠটা স্বাভাবিক রেখে বললো-
” তেমন কিছুনা। কেনো বলো তো।?? ”
মাহিন পুকুরের শানপাড় থেকে উঠে ফোনটা পকেটে পুরলো। যেতে যেতে বললো —
” বুঝি বুঝি! সব বুঝি ”
বলেই চোখ টিপলো মাহিন। মিথিলা হা হয়ে গেলো মাহিনের কান্ডে। এমন কথায় কি রিয়েকশন দিবে বুঝতে পাড়লে না মিথিলা। ক্ষণিকের জন্য রিয়েকশন সফটওয়্যার ডিজেবল হইছে মনে হয়।
——-💙
বিকেলের দিকেও সাড়াবাড়িতে কোলাহলে ভরপুর৷ বাড়ির বাইরে উচ্চস্বরে সাউন্ড বক্স বাজছে। সেই বক্সে টনি কাক্কারের দিম্মে দিম্মে সং বাঝছে। অভি এখনো সব কাজ দেখাশোনা করছে আর সাথে যুক্ত হয়েছে সৌমিত্র। সৌমিত্রর এই সব কাজ একদম করডে ইচ্ছে করছে না। তবুও তো আর বসে থাকা যায় না।
কিছুক্ষণ কাজ করার পর বিরক্ত কন্ঠে বললো —
” মামা, আর কতো কাজ করবো। চল আমারে বউয়ের কাছে দিয়ে আয়। ”
” তোরে কাজ করতে বলেছি। তুই যা প্রেম কর। ”
” এমন করিস কেন দোস্ত। আমার একটা মাত্র জিএফ। ওর সাথে প্রেম করবো না তো কার সাথে করবো?? ”
” মানুষের জিএফ কয়টা থাকে? তুই যে আমার সাথে কোথাও বের হলে নিজের সুন্দর মুখখানা নিয়ে মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করিস এই খবর কি মিথিলারে দেবো। তোরে একটা উপদেশ দেই, তারাতারি নিজের বাপকে বলে বিয়ে করে নে মিথিলারে। ”
” তোরা দুইটা আমার সাথে কি শুরু করছিস বা*। খালি ব্লাকমেইল। আমি মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করি সেটা এক জায়গায়। আর মিথিলা আরেক জায়গায়।।”
অভি উত্তর দিলো না। সৌমিত্রকে এভাবে হুমকি দিতে ভালো লাগে অভির। হুমকি খাওয়ার পর সৌমিত্রর মুখটা দেখার মতো হয়।
বিয়ের সব এ্যারেন্জমেন্ট কমপ্লিট হয়েছে বিকেলের মাঝেই। মিষ্টি বর্তমানে সাঝতে ব্যাস্ত। পার্লালের যে মেয়ে গুলো এসেছিলো শানাজকে সাজাতে তাদের কাছেই সাজছে মিষ্টি। আর মিথিলা দারুণ ফ্যাসাদে পড়ে গেছে পিচ্চিগুলার কাছে। সবাই একের পর এক মেহেদী লাগায় নিতে সিরিয়াল নিতে লাইন ধরে দাড়ায় আছে। সৌমিত্র মিথিলার এই কাজ দেখে রেগে মেগে আবার অভির সাথে বাইরে সব দেখাশোনা করতে গেছে। কোথায় ভাবছিলাম ঢাকা শহরের বদ্ধ ঝন্ঝাট থেকে মুক্তি পেয়ে সিলেটের চা বাগানে ঘুরে ঘুরে প্রেম করবো। তা আর হলো কই। কপাল!!
–
বিয়ে হবার কথা রাতে। এখন সব মেয়েরা সেজেগুজে বিয়ে বাড়িতে ঘোরাফেরা করছে। বরপক্ষ সম্পর্কে কোনো খবর নেয়নি এখনো অভি। এখন মিষ্টির মামাকে আশেপাশে দেখাও যাচ্ছেনা। এত এত কাজের চাপে এই বয়সে মেয়ের জন্য কি করছেন না করছেন। সর্বোচ্চ আয়োজন করে মেয়েকে শশুড়বাড়ি পাঠাতে চায় প্রতিটা বাবা। মিষ্টির মামা তার বিপরীত নয়। সৌমিত্রকেও এখন দেখা যাচ্ছেনা অভির আশেপাশে, নিশ্চই মিথিলার সাথে কথা বলছে।
অভি সারাদিনের ক্লান্তি কাটাতে ফোনটা ফো নিয়ে ছাদের দিকে রওনা হলো। সারাদিনে একটুও গেমে ঢুকা হয়নি। এখন গেমে ঢুকে ডেইলি মিশন গুলো চেক করতে হবে৷ অভি ছাদে উঠে রেলিংয়ে ঠেস দিয়ে ফোন নিয়ে মাত্র গেম ওপেন করবে তার আগেই ফোন আসলো মিষ্টির। অভির মনে পড়লো গতকাল থেকে মিষ্টি কেমন চুপচাপ হয়ে আছে। অভির সামনে পর্যন্ত আসছে না। অভি ফোনটা রিসিভ করে কানে নিলো —
” হ্যালো, বল মিথিলা ”
মিষ্টি কন্ঠ স্বাভাবিক রেখে বললো—
” তুই কোথায় এখন।??
” ছাদে আছি। চলে আয় । আসার সময় গায়ে একটু চাদর দিয়ে আসিস। বাতাস আছে, ঠান্ডা লেগে যাবে। ”
” আমাকে ডাকছিস যে। এত সুবুদ্ধি হলো কবে?? ”
” তোর সাথে কথা আছে। উপরে চলে আয় ”
ফোনটা কেটে গেমে ঢুকলো অভি। আজ আর গেম খেলা হবে না। শুধু মিশনগুলোই চেক করতে হবে।
খানিক বাদে উপরে উঠে আসলো মিষ্টি। পড়নে নীল শাড়ি, সেটা এই অন্ধকারে হালকা বোঝা যাচ্ছে। চাঁদের দেখা নেই আজ। তবুও বাড়ির এতো লাইটিংয়ের হালকা আলো ছাদের মধ্যে চলে আসছে।
হালকা বাতাসে মিষ্টির চুলগুলো কাঁপছে। হাত নাড়ালে পাওয়া যাচ্ছে কাঁচের চুড়ির শব্দ। এই মেয়ে যে শাড়িও পড়তে পারে এটা অজানা ছিলো।
অভি লক্ষ করলো ওর গায়ে চাদর নেই শুধু শাড়ি পরেই চলে আসছে —
” তোরে না বললাম চাদর আনতে। কথা কি কানে নিস নাই?? ”
” না! ভালোলাগছে না চাদর গায়ে দিতে। তার থেকে এমনই থাকি। ”
” আমি বলছি জন্যই আনলি না চাদর। আচ্ছা তুই শাড়িও পড়তে পারিস জানা ছিলো না তো। অন্ধকার তাই তেমন দেখতে পারছি না। সৌমিত্র কইরে?? ”
” মিথিলা শাড়ি পড়লো সাথে আমাকেও জোর করে পরিয়ে দিলো। সৌমিত্র এখন পুকুর পাড়ে প্রেম করছে। তাই আমি মিথিলার থেকে কেটে পড়লাম। ”
” তুই কেমন চুপচাপ হইছিস। “.
-” এমনি। “.
বলেই মিষ্টি ফোনের ফ্লাশলাইট জ্বালিয়ে অভির মুখের উপর ফেললো। গায়ে সেই দুপুরের পরা জিন্স আর লোটো কম্পানির ফুল গেন্জি। চেহারায় ক্লান্তির ছায়া।
” দেবদাস ভঙ্গিতে আছিস যে। এভাবেই বরযাত্রীদের সামনে যাবি নাকি??
অভি ঠোঁটে হালকা হাসির রেখা টেনে বললো —
” না! চেন্জ করবো। তবে এভাবেই দেখলাম অনেক মেয়ে আমার দিকে কন্টিনিউয়াসলি তাকিয়ে ছিলো। সুন্দর লাগছে তাইনা??
” সুন্দর না ছাঁই। এখন গিয়ে পান্জাবী পড়বি। তোর ব্যাগ থেকে আমি পছন্দ করে পান্জাবী সিলেক্ট করছি। ”
মিষ্টির এমন বিহেবে ভালোলাগছে অভির। সাধারণত এই রুপ দেখা যায় না —
” তোর পছন্দ করা পান্জাবী আমি পড়বো কেন?? কখনোই পড়বো না। দুনিয়া উল্টে গেলেও পড়বো না ”
বলে নিচে নেমে গেলো অভি। মিষ্টির মুখটা মহুর্তেই ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। কিন্তু ১ মিনিট পর আবার ছাদে আসলো অভি। মিষ্টির সামনে দাঁড়িয়ে বাম কানে দুইটা #নীল_অপরাজিতা গুজে দিলো। মুখটা কানের কাছে নিয়ে বললো —
” সুন্দর লাগছে তোকে। নীল শাড়িতে মারাত্নক সুন্দর লাগছে। না জানি বিয়ে বাড়িতে কে তোকে দেখে ফিট মারে। ফুলটা ছিঁড়ে আনলাম বারান্দা থেকে। আমার মনে হলো অপরাজিতাকে এখন টবে না থেকে তোর কানেই রাখা উচিৎ। তাইনা???
#চলবে??
(#বিদ্রঃ আমি গল্পের জগতে সম্পূর্ণ নতুন। অনেক অবিজ্ঞতা সম্পন্ন লেখক বা পাঠক আছেন এখানে। আমার লেখায় যদি ভুল থেকে থাকে তাহলে ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ রইলো। যাতে পরবর্তীতে সমস্যা না হয়। ভালোবাসা 💙)