নীল অপরাজিতা পার্টঃ১৮শেষ_পার্ট

0
1998

#নীল_অপরাজিতা
#শেষ_পার্ট
#Rifat_Amin

বাসর ঘরে সাধারণত সালোয়ার কামিজ পরে নববধুকে দেখা না গেলেও মিষ্টির বেলায় সেটা দেখা গেলো। এখন বাজে রাত এগারোটা। ফুলে ফুলে সাজানো বিছানায় শুয়ে আছে মিষ্টি। কিন্তু যার আসার কথা তাঁর এখনো টিকিটাও দেখা যাচ্ছে না। না আসলেই বা কি? বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফেসবুকিং করতে ভালোই লাগছে মিষ্টির। চারপাশ থেকে এক ধরণের মিষ্টি মিষ্টি সুভাস আসছে যেটা মিষ্টির মনকে ফুরফুরে করে দিচ্ছে। একটু আগেও কেঁদেকেটে অস্থির হয়েছিল সে। কিন্তু এখন ভালো লাগছে। যদিও অভির প্রতি রাগটা কমছে’ই না। তবে বিয়ে করার পরও একই বাসায় থাকতে পারে ক’জন? শুধু নিজের রুমটা পরিবর্তন হয়েছে। বিয়ে হলো একদম সাধারণ ভাবে। আত্মীয়স্বজন কম থাকায় তেমন লোকজনের সমাবেশও হয়নি। অভির দাদি একটু আগে অনেক পরামর্শ দিয়ে গেলো। কিন্তু একটুও মাথায় ঢুকেনি মিষ্টির। শাড়ি পাল্টে সাধারণ সালোয়ার কামিজ পরে হাফ ছেড়ে বাঁচলো মিষ্টি। শাড়িটাকে দশকেজি ওজনের পাথর মনে হয়েছিলো। রুমের দরজা খট করে খুলে যাওয়ায় চমকে উঠলো মিষ্টি। অভিকে দেখে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললো সে। অতঃপর শোয়া থেকে উঠে বসে আবার ফেসবুক ঘাটতে লাগলো।
অভি রুমে প্রবেশ করে রুমের লাইট জ্বালিয়ে দিলো। বিছানায় বসে বললো-

– বাসর রাতে যে বরকে সালাম করতে হয় সেটা জানিস না?

মিষ্টি ফোনটা রেখে হাই তুললো একবার। প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে এখন। গতরাতেও তেমন ঘুম হয়নি। আবার আজকেও হবে কি’না কে জানে। আমাকে জ্বালিয়ে মারবে একেবারে। মিষ্টি বললো-

– তাই বুঝি? জানা ছিলো না তো।

কথাটা বলেই অভির দিকে তাকিয়ে বললো-

– আসসালামু আলাইকুম। ভালো আছিস?

– এভাবে সালাম করতে হয়না। পা ছুঁয়ে সালাম করতে হয় মাথামোটা।

– ওহহ। জানা ছিলো না।

– তাও ভালো যে বাসর রাতে দরজা বন্ধ করতে হয় তা জানিস। গুনগুনের মতো তো আর ন্যাকামি করিস নি।

– গুনগুন কে?

– তোর মাথা আর আমার মুন্ডু।

– ভালো। আচ্ছা শোন, আমার ঘুম পাচ্ছে অনেক। মাথাও ধরছে সো তুই আমার মাথা টিপে দে একটু। আমি ঘুমিয়ে গেলে বালিশটা নিয়ে সোফায় গিয়ে শুয়ে পরবি। ভুলেও বিছানায় শোয়ার ট্রাই করবি না।

– কিহহহ!! এটা আমার বিছানা ওকে। বেশী কথা বললে তোকেই বিছানার নিচে শোয়াবো। যদিও আমার মনে দয়ামায়া একটু হলেও আছে। আমার সাথেই বিছানায় থাকতে পারিস, সমস্যা নাই।

– ইম্পসিবল। তুই তাহলে এই জন্যেই আমাকে বিয়ে করেছিস শয়….

কথাটা শেষ করতে পারলো না মিষ্টি। তার আগেই অভির ফোন আসায় ফোনটা রিসিভ করলো সে। আননোর নাম্বার থেকে কল এসেছে। অভি বললো-

– আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?

ওপাশ থেকে একটা মেয়ের কন্ঠ শোনা গেলো। বললো-

– ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আপনি কি অভিরাজ শেখ?

– হ্যাঁ। আপনি কে বলছেন?

– ঐ যে একদিন গুন্ডাদের থেকে আমাকে বাঁচালেন মনে আছে? আমি রিশিতা।

– ওহহ! রিশিতা কেমন আছো?

– আলহামদুলিল্লাহ। আপনি? আচ্ছা আপনি কি এখনো সিলেটে আছেন?

– না। আমি এখন বাসর ঘরে একটা রণচণ্ডীকে নিয়ে আছি।

– মানে!

– মানে হচ্ছে আমার বিয়ে হয়ে গেছে। এখন আমার বাসর রাত। ভালো থাকবেন আর দোয়া করেন যে, যাকে বিয়ে করেছি সে যেনো আমাকে একটু বাঁচতে দেয়। আল্লাহ হাফেজ।

বলেই ফোন কাটলো অভি। ফোন কেটে দেখলো মিষ্টি ঘুমিয়ে পরেছে। কি করা যায়? এখানেই শুয়ে পরবো না’কি ওর কথামতো সোফায় ঘুমাবো? ধুর কি ঝামেলায় পরা গেলো। আমার রুম, আমার বিছানা অথচ আমি’ই ঘুমাবো সোফাতে? অসম্ভব।
অভি পান্জাবী টা চেন্জ করে একটা টিশার্ট পরে নিলো। অতঃপর বিছানায় সামনে এসে বললো-

– ভালোয় ভালোয় উঠে পর। এত রাতে ঝামেলা করিস না।

– আমি ঘুমিয়ে পরেছি। কাল কথা হবে ভাইয়া। আসসালামু আলাইকুম।

অভি মিষ্টির কম্বল টানদিয়ে সড়িয়ে ফেললো। হাত ধরে নিচে নামাতে চেষ্টা করলো-

– নিচে নাম বলছি। এতদিন তো ভাইয়া বলিস নি। আজ আবার বিয়ে করার পর ভাইয়া বলার শখ জাগলো কেনো?

মিষ্টির ঘুম ঘুম ভাবটা কেটে গেলো । রাগে গা হিরহির করছে এখন। শরীরেও এনার্জি পাওয়া যাচ্ছে না কারণ সকাল থেকে তেমন কিছু খাওয়া’ই হয়নি টেনশনে।

-ঐ মেয়েটা’কে তুই কি বললি? আমি রণচন্ডী? তুই আমার মাঝে রণচন্ডীর দেখছিস কি?

– আচ্ছা আর বলবো না। কয়বার সালাম দিতে হয়?

-আমাকে জ্বালিয়ে কি শান্তি পাস বলতো? একটু আগেই তো বললি বাসর রাতে বরকে সালাম দিতে হয়। আর তুই তো আমার বর না, আমার বর হবে রাজপুত্র। পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চড়ে আমাকে বিয়ে করতে আসবে। আহা!

– আমি তোর বর না তো কি?

– বেষ্টফ্রেন্ড। মানে ফালতু ফ্রেন্ড।

– দেখ তোকে বিয়ে করার একদম ইচ্ছা আমার ছিলো না। নেহাত বাবা মা আর দাদি, বিয়ের চাপ দেয়ার কারণেই বিয়ে করতে হলো। এখন বেশী ঢং করিস না। আমাকে শান্তিতে থাকতে দে।

– আমার কাঁচা ঘুমটা ভেঙে এখন আমাকেই বলছিস আমি তোকে জ্বালাচ্ছি? এখন আমার ঘুম পাচ্ছে না। চল ছাদে যাই। খিদাও লাগছে অনেক, সঙ্গে কিছু নিয়ে খাবার আসিস। খেতে হবে।

বলেই বিছানা থেকে উঠে পরলো মিষ্টি। এদিকে মিষ্টির বিছানা থেকে উঠে পরার সুযোগে অভি ফট করে বিছানায় শুয়ে পরলো। কম্বলের নিচে ঢুকে পরে বললো-,

– তোর ঘুম না আসতেই পারে। কিন্তু আমার এখন প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। চাইলে ঘুমাতে পারিস আমার পাশে। নাহলে একা একা ছাদে যা। ভূতে ধরবে। আল্লাহ হাফেজ।

আর কোনো সাড়াশব্দ না পাওয়ায় অভি ভাবলো মিষ্টি হয়তো চুপ করে আছে। কিন্তু একটু পর হঠাৎ ঠান্ডা পানির অস্তিত্ব মিললো বিছানায়। কম্বলটা ভিজে শরীরের সাথে মিশে যেতে চাইছে। এই শীতকালে ঠান্ডা পানি শরীরে লাগায় বিদ্যুৎ গতিতে চমকে উঠলো অভি। সে যা ভেবেছিলো তাই। খালি জগ হাতে নিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে মিষ্টি। অভির রাগ করতে চাইলেও পারলো না। এই মেয়ে যা বলবে তাই৷ সে বিছানা থেকে উঠে কপট রাগের সুরে বললো-

-দিলি তো বিছানাটা ভিজিয়ে। এবার ঘুমাবো কিভাবে?

– আজ ঘুমাবো না। চল তোর বাইকটা নিয়ে সারা শহর ঘুরে বেড়াই। তুই তো আর পক্ষীরাজ ঘোড়া আনতে পারবি না। তোর বাইকটাকেই পক্ষীরাজ ঘোরা ভেবে চালাতে হবে!

– ওহহ তাহলে আমাকেও রাজপুত্র হিসেবে ভেবে নিয়েছিস তাইনা? বাহ! ঢংয়ের রাণী বাহ!

রাত ৩ টা ৪৫। বাইকে করে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে অভি। ঘুম পাচ্ছে না তেমন। বরং এই বাসররাতে বাইকে নিজের বউ নামক প্রাণীকে চড়িয়ে ঘুরে বেড়াতে ভালোলাগছে। অভিকে পেছন থেকে জাপটে ধরে পিঠে মাথা ঠেকিয়ে আছে মিষ্টি। অভি বাইকটা থামালো একটা ল্যাম্পপোস্টের নিচে। ল্যাম্পপোস্টের আলো হালকা নীল। সেখানে দাড়িয়ে আশেপাশের সব কিছুকেই নীল দেখাচ্ছে। আকাশে হালকা মেঘ গুরগুর করছে। এই শীতের সময় কি বৃষ্টি হবে নাকি? যদিও গায়ে শীতের কাপর আছে। কিন্তু বৃষ্টি থেকে বাঁচার রেইনকোট তো আর নেই। অভি বললো-

– নাম এখানে।

– এখানে নামবো কেন?

– তুই তো আমাকে বিয়ে করতে চাইতি না। যাই হোক, বিয়েটা ভুলবসত হয়ে গেছে সো এখন তো করার কিছুই নাই। কিন্তু আমার একটা ফ্রেন্ড নাকি তোকে পছন্দ করে। ও একটু পর এখানে পৌঁছে যাবে। ওর সাথে পালিয়ে যাস। আমার কাছ থেকে বেঁচে যাবি। এখন খুশি তো?

অভির কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলো মিষ্টি। হাত পা ঠকঠক করে কাঁপতে থাকলো । কোনো মতে বাইকটায় আবার বসে পরলো মিষ্টি। –

– মানেহহ! তোকে তো আমি এমন ভাবি নি। নিজের বউকে বেঁচে দিতে আসছিস? ছিঃ। আমার এখন নিজের প্রতি ঘৃণা লাগছে যে তোর মতো একটা বেয়াদব ছেলে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। তাকে আমি আবার বিয়েও করেছি।

– তোর কথা শেষ? চল সামনের দোকানটা এখনো খোলা আছে। দুকাপ চা খেয়ে আসি।

– তুই যা। আমার ভালোলাগছে না।

অভি ভাবতেই পারিনি হঠাৎ করে এত সিরিয়াস হয়ে যাবে মিষ্টি। মেয়েটা’কে পুরোপুরি চিনতে পারলাম না। অথচ আমি জানি, আমার থেকে এই মেয়েকে বোঝার ক্ষমতা কেউ রাখে না। এমনি কি ওর বাবাও না। প্রতিটা দিন একসাথে কেটেছে। যেখানেই যাই একসাথে গিয়েছি। আমি যেই স্কুলে ভর্তি হয়েছি সেখানেই মিষ্টি জেদ ধরে ভর্তি হয়েছে। তারপর এই কলেজ, ভার্সিটি। অভি যেখানেই যাক না কেনো মিষ্টি সেখানে হাজির হবেই। এট এনি কস্ট! অভিকে চুপ থাকতে দেখে মিষ্টি বললো-

– কি’রে চুপ করে আছিস কেন? লজ্জা লাগেনা এই মুখটা দেখাতে?

অভি ধীর পায়ে এগিয়ে এসে মিষ্টিকে বাইক থেকে নামালো। মিষ্টি অভির কাছ থেকে ছারা পাবার জন্য অস্থির হয়ে উঠছে। আকস্মিক কোনো কথা না বলে মিষ্টিকে কোলে তুলে নিলো অভি। সাথে সাথে একটু একটু করে আকাশ থেকে বৃষ্টি নামছে। মিষ্টির বিষ্ময় এখনো কাটছে না। অভি বললো-

– আমাকে এমন ভাবলি কিভাবে সেটাই বুঝতে পারছি না। তুই আমার বউ, আমি সেটা মানি আর না মানি। এতদিন যেভাবে আগলে রেখেছি তার থেকে এখন আমার দায়িত্ব বেশী তোকে আগলে রাখার। সেখানে তোকে আমি ছেড়ে দেবো?

মিষ্টি অভির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো-

– সিনেমার ডায়লগ দিচ্ছিস যে। প্রেম পাচ্ছে?

– না। চল চা খাই।

চায়ের দোকানের সামনে এসে দুকাপ চা নিলো অভি। চা’য়ে চুমুক দেয়ার সাথে সাথে সারা শরীরে একটা শিহরণ বয়ে গেলো। চা খাওয়া শেষে বাইকের কাছাকাছি আসলো অভি। মিষ্টি বললো-

– বাসর রাতে নাকি বউকে উপহার দিতে হয় কিছু। তুই আমায় কি দিলি?

অভি হঠাৎ লক্ষ করলো রোডের ওপাশে একটা
অপরাজিতা ফুটে আছে। তৎক্ষনাৎ সেটা ছিড়ে আনলো অভি। এখনো হালকা বৃষ্টি নামছে। শরীর ঠান্ডায় কেঁপে কেপে উঠছে। অভি বললো-

– এটাকে তোর বাসর রাত মনে হয়? রাস্তায় হচ্ছে বাসর। যাই হোক

বলেই অপরাজিতাটা গুজে দিলো মিষ্টির কানে। সাথে সাথেই ঝুমঝুম করে বৃষ্টি নামলো। মিষ্টি বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য সেখান থেকে পালাতে চাইলেই হাতটা ধরে ফেললো অভি। অভি বললো

– ল্যাম্পপোস্টের নীল আলোয়, নীল অপরাজিতাটা, নীল মানবীকে দারুণ মানিয়েছে আজ বৃষ্টিতে ভিজলে দোষ নেই। চল ভিজি, জ্বর আসলেও ক্ষতি নেই।

সমাপ্ত

( জানিনা কেমন হলো গল্পটা। হুট করেই সমাপ্তি টানতে ইচ্ছা হলো। আল্লাহ হাফেজ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here