নীল অপরাজিতা পার্টঃ১৬

0
949

#নীল_অপরাজিতা
#পার্টঃ১৬
#Rifat_Amin

-সরি দোস্ত! আর এরকম হবে না। তুই তখন হঠাৎ পেছন থেকে ধাক্কা দিতে গেলি কেনো? মানলাম মজা করছিস। কিন্তু আরেকটু হলেই তো ছাদ থেকে পরে যেতাম।

অভি অতি গম্ভীর গলায় কথাটা বলেই বিছানায় মিষ্টির পাশাপাশি বসলেন। মিষ্টি কাঁথা কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। ঠিক ঘুমিয়ে নয়! ঘুমের ভান করে আছে। সেই কখন থেকে অভি উঠতে বলছে কিন্তু মিষ্টির সারাশব্দ কিছু নেই। আসলে যে মানুষ ঘুমিয়ে থাকে তাকে সহজে জাগিয়ে তোলা যায়। কিন্তু যে মানুষ ঘুমের ভান করে তাকে কখনো জাগিয়ে তোলা যায় না। কথাটা যে কতটা সত্য তা অভি এখন হারে হারে টের পাচ্ছে। অভি এবার কম্বল টান দিতে চেষ্টা করলো। কিন্তু মিষ্টি এমন ভাবে কম্বল পেঁচিয়ে রেখেছে যে টান দিতেও আসছে না।

– ভালোয় ভালোয় উঠে পর। নাহলে কোলে তুলে নিয়ে সোজা ছাদে নিয়ে গিয়ে নিচে ফেলে দিবো। উঠ না’রে ভাই।

আবারো মিষ্টি নিশ্চুপ। এবার অভি যা করার তাই করলো, মিষ্টিকে কম্বলসহ পেঁচানো অবস্থায় কোলে তুলে নিলো। কোলে তুলার সাথে সাথেই মিষ্টি সজোড়ে একটা চিৎকার দিলো। অভি কোনো কথা না বাড়িয়ে সোজা ছাদের দিকে হাটছে। এদিকে মিষ্টির ভয়ে কলিজায় পানি নেই। এই ছেলে যে ছাদ থেকে ফেলে না দিবে! তার তো গ্যারান্টি নেই। সে কোল থেকে নামার জন্য ছটফট করতে লাগলো। কিন্তু অভির শক্তির কাছে মিষ্টির শক্তি হাতি আর মশার সমান।

– এতক্ষণ কানের কাছে যে ঘ্যান ঘ্যান করলাম তখন তো ঘুমিয়ে ছিলি। এখনো নাহয় ঘুমিয়েই থাক। ছাদ থেকে পরার পর কবরে গিয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করিস।

– ছেরে দে শয়তান। তোর মতো লুচ্ছা আমি এজীবনে দেখিনি। নামিয়ে দে আমাকে। আন্টি আন্টি!

মিষ্টির কন্ঠ পেয়ে রান্নাঘর তেকে ছুটে আসলেন অভির মা। অভির কোলে কম্বল পেঁচানো মিষ্টিকে দেখে হতবাক হয়ে গেলেন।

– অভি কি করছিস এসব। ছাড় ওকে। পাগল হয়ে গেলি নাকি?

– তুমি তোমার কাজে যাও মা।

মিষ্টি খানিকটা চিৎকার করে বললো-

-না আন্টি। আপনার ছেলে আমাকে মেরে ফেলতে ছাদে নিয়ে যাচ্ছে। প্লিজ বাঁচান আমাকে।

– ঐ কানের কাছে চেঁচাবি না।

– অভি নামিয়ে দে ওকে। দেখ কত ভয় পেয়েছে মেয়েটা।

শেষ পর্যন্ত অভি নামিয়ে দিতে বাধ্য হলো। মিষ্টি ভাবতে লাগলো এখন যদি আমাকে মারার কথা আন্টিকে বলে দেই তাহলে বিয়েটা এখানেই ক্যান্সেল করে দিবে৷ কারণ এমন ছেলের সাথে আর যাই হোক বিয়ে দিতে চাইবে না কেউ। এখনো গাল ফুলে আছে মিষ্টির। ঠোঁটে এখনো রক্তের হালকা দাগ। সৌমিত্রর সাথে কথা বলে সেখান থেকে সরাসরি রুমে এসে কম্বল মুড়ে ঘুমের ভান করেছিল সে। ভূলবসত দরজাটা অফ করা হয়নি।

– মা তোমার মুখে আর ঠোঁটে কি হয়েছে। দেখি! দেখি।

বলেই সামনে এগিয়ে আসলো অভির মা। মিষ্টি সুযোগ পেয়ে ন্যাকা কান্না জুরে দিলো। এমন ভাব করলো যেনো খুব মেরেছে কেউ তাকে। অভিনয় করে নাক টানতে টানতে সব কথা খুলে বললো অভির মা’কে। সাথে বাড়িয়ে বললো অনেক কিছু। এদিকে মিষ্টির কথা শুনে অভি হতভম্ব হয়ে গেলো। কি সুনিপুণ অভিনয়! অভির মা অগ্নি দৃষ্টিতে অভির দিকে তাকালো –

– এসব কি সব সত্যি? এই শিক্ষা দিয়েছি তোকে আমি?

অভি থতমত খেয়ে বললো-

– ও সব মিথ্যে বলছে মা। তুমি আমার কথা বিশ্বাস করো না?

অভির মা কন্ঠ স্বাভাবিক রাখলেন। এমন গোমট ভাব মানে আজ অভির উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাবে। মিষ্টিকে বুকে জড়িয়ে মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন। অতঃপর বললেন-

-আচ্ছা তোকে আমি বিশ্বাস করলাম। তাহলে মিষ্টি মিথ্যা বলছে আমাকে তাইনা? ওর মুখে, ঠোঁটে ওসব কিসের দাগ? নিজে নিজেই ওমন দাগ বানিয়েছে ? ছোটবেলা থেকে তো এই শিক্ষা দিয়েছিলাম। বাহ ভালো!

– বিশ্বাস করো আম্মু। এই শয়তানটা অভিনয় করছে।

অভির মা মিষ্টিকে ছেড়ে দিয়ে অভির সামনে এসে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন। মহূর্তে হতবাক হয়ে গেলো অভি আর মিষ্টি। মিষ্টি ভেবেই পায়নি এমন কান্ড করবে অভির মা। অতঃপর শান্ত কন্ঠে বললেন-

– ভেবেছিলাম তোদের বিয়েটা কয়েকদিন পর ধুমধামের সাথে দিয়ে দেবো। কিন্তু না! কালকেই বিয়ে দেবো আর মিষ্টির সব দায়িত্ব তোকে নিতে হবে।

অতঃপর হনহন করে সেখান থেকে চলে গেলেন অভির মা। এখন অভি আর মিষ্টি দুজন দুজনের দিকে ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে আছে। দুজন দুজনকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। মিষ্টি কেঁদে দিবে এমন অবস্থা। এতো দেখি ভালো করতে গিয়ে উল্টা নিজেই বাঁশ খেয়ে গেলাম। অভি গালে হাত দিয়ে স্টেচুর মতো দাঁড়িয়ে আছে। মিষ্টি ভয়ার্ত কন্ঠে বললো-

– সরি দোস্ত। চলনা দুজন পালিয়ে যাই।

মিষ্টির কথায় সম্ভিত ফিরে পেলো অভি। মিষ্টির এমন কথায় কি রিয়েকশন দেবে বুঝতে সেটাই পারলো না অভি। আগে প্রেমিক প্রেমিকা পালিয়ে যেতো বিয়ে করার জন্য। এখন আমাদের পালাতে হচ্ছে বোধহয় বিয়ে না করার জন্য। হায় আল্লাহ!

রাত বাজে ১২ টা। অভি আর মিষ্টি ছাড়া সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিয়ের প্লানিং করছে মিষ্টির বাবার রুমে। সবার একমত! যত তারাতারি বিয়ে হবে ততই ভালো। এতে যেনো অভির দাদির’ই আগ্রহ বেশী। মাহিন সেই রাত নয়টাতেই আজ ঘুমিয়ে পরেছে তাই সে কিছুই জানে না এসবের। এদিকে অভির রুমে মিষ্টি আর অভি দুজন বসে দুজন দুজনকে দোষ দিচ্ছে।
মিষ্টি কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো-

-প্লিজ দোস্ত। আমাকে বিয়ে করিস না। আমার জন্য রাজপুত্র পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চড়ে আমাকে নিতে আসবে। তুই আমার লাইফ টা শেষ করিস না।

– আমিতো তোকে বিয়ে করার জন্য নাচতেছি তাইনা? তোকে বিয়ে করার থেকে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে মরে যাওয়া ভালো।

– তাই করা না দোস্ত। তুই মরে গেলে তো আর বিয়ে হবে না। কি দারুণ বুদ্ধি। তুই জিনিয়াস।

– আহা! আমি মরে যাই। শখ কতো! তো নিজেই মরে যা। তাহলেই তো সব ঝামেলা মিটে যায়।

মিষ্টি সামনে থাকা অভির টি শার্ট দিয়ে অভিকে মারতে মারতে বললো-

– শালা আমি মরলে আমার রাজপুত্র কাকে বিয়ে করবে।

হঠাৎ ফোন আসায় বিরক্ত হলো মিষ্টি। সৌমিত্র আবার ফোন করেছে দেখে বিরক্তির সাথে এবার রাগও যুক্ত হলো। ফোনটা ধরেই বলতে থাকলো-

– শালা এখন কয়টা বাজে। এত রাতে ফোন দিয়ে আমাকে জালিয়ে মারছিস কেনো?

– সরি! আপনি কে আমি চিনি না। তবে যার ফোন সে এক্সিডেন্ট করেছে। কল লিস্টে আপনার নাম্বার দেখে জানালাম। মরিচ দিয়ে নাম্বার সেভ করা। ভাবলাম আপনি হয়তো বেস্টফ্রেন্ড টাইপের কিছু হবেন।

সাথে সাথেই ফোনটা বিছানায় পরে গেলো কান থেকে। মিষ্টি স্তব্ধ হয়ে গেছে এক্সিডেন্টের কথা শুনে। এদিকে মিষ্টির এমন অবস্থা দেখে ফোনটা নিয়ে নিলো অভি। ওপাশ থেকে হ্যালো হ্যালো করতেই আছে একটা ছেলে। অভি হসপিটালের ঠিকানা নিয়ে নিলো। মিষ্টি এখনো চুপ করে আছে। কথা বলার শক্তিটুকু পাচ্ছে না। অবি বললো-

– এখানে সময় নষ্ট করে লাভ আছে? চল হসপিটালে যাবো।

মিষ্টি শুধু হু হু করলো। কথা বলতে পারলো না। এত রাতে বাইকে গেলে আরো তারাতাড়ি যাওয়া যেতো কিন্তু মিষ্টির যা অবস্থা তাতে সেই সাহস হলো না অভির। বাবার অফিসের গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায়। অভি চটপট সেই অবস্থাতেই বাবার কাছ থেকে চাবি নিয়ে নিলো। যাওয়ার আগে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হলো। কিন্তু অভি শক্ত কন্ঠে শুধু একটা কথাই বললো-

– পালিয়ে যাচ্ছি না। টেনশন করার কিছুই নেই।

ড্রাইভার না থাকায় নিজেই ড্রাইভ করছে অভি। মিষ্টি এবার কান্না আটকাতে পারলো না। অভি যতদ্রুত পারছে গাড়ি চালাচ্ছে। এর আগে কখনো এত স্পিডে গাড়ি চালায় নি সে। মিষ্টিকে কাঁদতে দেখে বললো-

– কেঁদে কোনো লাভ আছে৷ পাগলের মতো কাঁদছিস যে! মিথিলাকে কি জানাবি এত রাতে?

– সব আমার দোষে হয়েছে। তখন যদি ওভাবে কথা না বলতাম তাহলে আজ এই দিনটা দেখতে হতো না।

বলেই আবার কান্নায় ভেঙে পরলো মিষ্টি। তখন সে বুঝেছিলো সৌমিত্র বাইকে আছে। তবুও এমন করে কথায় বলায় নিজেকেই দোষ দিচ্ছে মিষ্টি। অভি গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিয়ে বললো-

– যা হবার হয়েছে। তুই কি করছিস সেটা জানার প্রয়োজন বোধ করছি না। সৌমিত্র ঠিক আছে। ভাগ্যভালো ছিলো যে সিএনজি চালক নিজেই হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। হসপিটালে ভর্তিও করা হয়ে গেছে। টেনশন করিস না। আগে বল মিথিলাকে জানাবি?

– থাক কালকে জানাবো। আজকে সৌমিত্রর অবস্থা দেখি। এত রাতে এই খবর শুনলে হয়তো হসপিটালে আসতে চাইবে। কিন্তু বাসা থেকে বের হবে কি ভাবে।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here