নীল অপরাজিতা পার্টঃ১৭

0
1117

#নীল_অপরাজিতা
#পার্টঃ১৭
#Rifat_Amin

ঘড়িতে রাত ১ টা। হাসপাতালের বেডে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে সৌমিত্র। জ্ঞান ফিরেছে একটু আগেই। সৌমিত্রর বাবা মা’কেও জানানো হলে এই মধ্যরাতেই হাসপাতালে উপস্থিত হয়েছে তারা। এখন নিজের ছেলের সাথে কথা বলছে কেবিনে। মিষ্টি তখন থেকে হাসপাতালের বারান্দার মাঝে পায়চারি করছে । ভীতরে যাবার সাহস পাচ্ছে না। এখনো সে এসবের জন্য নিজেকেই দায়ী করছে। এমনিতেই বিয়ে নিয়ে বড় ঝামেলায় পরেছে তাতে সৌমিত্রর এক্সিডেন্টে মিষ্টি কিংকর্তব্যবিমূর হয়ে পরেছে। অভি কিছুক্ষণ আগে কোনো এক রেস্টুরেন্টে চলে গেছে খাবার আনার জন্য অথচ এখনো আসার নাম নেই। একা একা অস্বস্থি অনুভব হচ্ছে মিষ্টির। কিছুক্ষণ পর অভি আসলো সবার জন্য খাবার নিয়ে। হাসপাতালে খেতে অনেকটাই অসুবিধা হলো সবার তবুও খেয়ে নিলো। সৌমিত্রকে খাইয়ে দিলো তার মা। সৌমিত্র মিষ্টির দিকে তাকিয়ে হাসলো। মিষ্টি শুকনো মুখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে৷ কথা বলার সাহস পাচ্ছে না। খাওয়া দাওয়ার পাট শেষ করে অভি সৌমিত্রর বাবা মা’কে বললো-

– আপনারা বাসায় যান। এত রাতে আপনাদের ঘুম দরকার। আমরা এখানে আছি।

সৌমিত্রর বাবা মা রাজি হলেন না। নিজের ছেলেকে একা হসপিটালে রেখে বাসায় যে তাদের ঘুম হবে না এটাই স্বাভাবিক। অতঃপর সৌমিত্র নিজেই বললো-

– আমি এখন ভালো আছি মা। তোমরা যাও। কালকেই আমি রিলিজ করে নেবো।

– বেশী কথা বলবি না সৌমিত্র। কত করে বলছিলাম যে বাইক দেখেশুনে চালাবি। হলো তো এক্সিডেন্ট। ভাগ্যিস বড়সড় কিছু হয়নি।

বলেই বেডে বসে পরলেন সৌমিত্রর মা। সৌমিত্র বললো-

– রাত অনেক হয়েছে মা। কাল সকালে আবার আসিও সমস্যা নেই। অভি তুই একটু পৌঁছে দিয়ে আয় তো। আর মিষ্টিকেও বাসায় পৌঁছে দিস।

মিষ্টি এবার একটু কথা বলার সাহস পেলো। রাগী লুক নিয়ে বললো-

– বেশী কথা বলবি না সৌমিত্র। চুপচাপ থাক।

অভি বললো-

– তাহলে চলেন আন্টি।

অতঃপর অভি সৌমিত্রর বাবা মা’কে বাসায় পৌঁছে দিয়ে হসপিটালে ফিরে আসলো। গাড়ি থেকে নেমে হসপিটালে ঢুকবে এমন সময় ফোন আসলো মিষ্টির। বাসা থেকে ফোন দিয়েছে।

– হ্যালো, বাবা। তুমি এতো রাতে এখনো ঘুমাও নি?

– তুই কোথায় গেলি এতরাতে? আর বলছিস টেনশন করবো না।

– সৌমিত্র এক্সিডেন্ট করেছে বাবা। আমরা সেখানেই আছি।

– কি বলছিস? কিভাবে?

– কাল ফিরে এসে জানাবো। এখন রাখি।

– আরে শোন। তোদের বিয়েটা এমনেই ঘরোয়া ভাবে দিবো। দুএকজন আত্মীয়কে ইনভাইট করবো। পরে নাহয় বড়সড় আয়োজন করা যাবে। কি বলিস?

মিষ্টির ইচ্ছা হলো অনেক কথা বলার। কিন্তু অসুস্থ বাবার উপর কোনো শক্ত জবাব দিলো না মিষ্টি। রাগ কন্ট্রোল করে ফোনটা কেটে দিলো। অতঃপর সৌমিত্রর কেবিনের দিকে রওনা হতে হতে অভিকে বললো –

– যেভাবেই হোক বিয়ে আটকা। আমি তোকে বিয়ে করতে পারবো না।

– তুই আটকা গিয়ে। অসহ্য।

রুমে ঢুকে দেখলো সৌমিত্র ওর হাতঘরিটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। বোধহয় ভেগে গেছে। অভি একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বললো-

– কিরে ঘড়িটা ভেঙ্গে গেছে?

– এটা মিথিলা দিয়েছিল দোস্ত। ফেটে গেছে গ্লাসটা।

– আচ্ছা বাদ দে। এখন কেমন লাগছে?

– ধুর ভাই। আমার কিছুই হয় নাই। বামহাতে ব্যাথা পেয়েছি অনেক। কিছু কিছু যায়গা ছিলেও গেছে আর মাথার এক যায়গায় একটু ফেটে গেছে। তেমন কিছু না।

মিষ্টি তেজ নিয়ে বললো –

– এটা তেমন কিছু না? মাথা ফেটে গেছে এটা সাধারণ?

– আচ্ছা বাদ দে। মিথিলাকে জানাইছিস নাকি?

অভি বললো-

– না জানানো হয় নি। এত রাতে জানালে আর ঘুমাতে পারবে না। এখানেও আসতে চাইতে পারে।

সৌমিত্র শুয়ে পরলো কম্বল টেনে। বললো-

– ভালো করেছিস। আচ্ছা তোরা নাহয় বাড়ি যা। আমি তো ভালো আছি। এখানে থেকেই আর কি করবি?

মিষ্টি এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার বললো-

– তখন কিসের চাকরির কথা বলছিলি?

অভি কিছু না বুঝতে পেরে বললো-

– কি হয়েছে?

সৌমিত্র সামান্য হেসে বললো –

– ও কিছু না। একটা চাকরির দরকার ছিলো। এই আরকি। সমস্যা নাই আমি ম্যানেজ করে নিবো।

মিষ্টি সৌমিত্রর কাছাকাছি এসে বসলো-

– তখনের ব্যাবহারের জন্য সরি দোস্ত। অভি আমাকে থাপ্পড় মেরেছিলো তুই জানিস? তাইতো মেজাজ টা খুব খারাপ ছিলো। এখন বল আমাকে তোর জব কেনো দরকার? এখনো তো স্টাডি কম্প্লিট হয়নি।

– বিয়ে করবো মিথিলাকে। ওর বাসায় বিয়ের চাপ আসছে তাই।

অভি বললো-

– তুই সেজন্যই ওরে ফোন করছিলি গাধা। যাই হোক কাজ হয়ে যাবে। আগে একটা পরামর্শ দে। আমার আর মিষ্টির বিয়েটা কেমনে ভাঙ্গা যায়?

– সত্যি সত্যি বিয়ে ঠিক হয়েছে? ওয়াও!

বলেই শোয়া থেকে উঠতে গিয়ে ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলো সৌমিত্রর। মিষ্টি চোখ পাকিয়ে বললো-

– তোকে দেখে মনে হচ্ছে আমাদের বিয়ের খবর শুনে খুশি হয়েছিস।

– অবশ্যই। দেখ দোস্ত। তোর অন্য যায়গায় বিয়ে হলে তুই সংসার করতে চলে যাবি। তখন তো আমাদের যোগাযোগ তেমন হবে না। বন্ধুত্বের ফাটল ধরবে। তার থেকে তোরা বিয়ে করে নে। তাহলে এক বাড়িতেই থাকতে পারবি। তুই তোর বাবা আর ভাইটাকেও দেখে শুনে রাখতে পারবি।

সৌমিত্রর কথা শুনে অভি হতাশার নিঃশ্বাস ফেললো। চোখ পাকিয়ে বললো –

– তুই আমাদের বন্ধ না’রে। বন্ধু নামে কলঙ্ক।

সৌমিত্রর কথার প্রেক্ষিতে মিষ্টি বললো-

– কিন্তু দোস্ত আমার তো রাজপুত্র দরকার। যে ঘোড়ায় চড়ে আমাকে বিয়ে করতে আসবে। কিন্তু এই খাটাশটাকে দেখ। এর মাঝে রাজপুত্রের ‘র’ নাই। আর বেষ্টফ্রেন্ড কে কেউ বিয়ে করে? বিয়ের আগেও বাঁশ খাইছি এখন বিয়ে করলে বাকি জীবনটাও খাবো।

অভি সৌমিত্রর দিকে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বললো-

– ওর রাজপুত্রের গল্প বন্ধ করতে বল সৌমিত্র। নাহলে ঠাডিয়ে আরেকটা চড় মরবো।

এদিকে সৌমিত্র মিষ্টির কথায় হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারলো না। বললো-

– অভিকে দেখে কত মেয়ে ফিদা হয়েছে সেটা তোর নিশ্চই জানার কথা। আগে বল বিয়ে কবে?

– কাল

-ওয়াও। দোস্ত আমি এখন সুস্থ। তুই ডক্টর কে ডেকে রিলিজের ব্যাবস্থা কর প্লিজ। তোদের বিয়েতে কত প্লানিং করছিলাম জানিস? সেগুলা সাড়তে হবে।

অতঃপর রাত তিনটার দিকে ঘুমিয়ে পরলো তারা। যে যেখানে পারলো ঘুমিয়ে নিলো। সকালে মিথিলাকেও জানানো হয়েছে তাই সে দেখা করতে এসেছে সকাল সকাল। মিষ্টির ডাক পরেছে শপিং করার জন্য। যা যা দরকার টুকটাক যেনো কিনে নেয়। এদিকে মিথিলাকে জোর করে সৌমিত্র মিষ্টির সাথে লাগিয়ে দিয়েছে যাতে সে পালাতে না পারে। দুএকজন আত্মীয় আসবে না’কি বিকেলের দিকে।
আর বিয়ে হবে রাত্রি বেলা। এদিকে সৌমিত্র হাসপাতাল থেকে কিভাবে পালাবে সেই ধান্দা করছে। নিজের দুই বেস্টফ্রেন্ডের বিয়েতে এমন হাল হবে ভাবতেও পারেনি সে। অভি সকালের খাবার খেয়ে সৌমিত্রর কাছে আসলো। সৌমিত্রর বাবা মা অলরেডি ওকে খাইয়ে দিয়ে গেছে। অভি এসে একবার ডক্টরের সাথে যোগাযোগ করলো রিলিজের বিষয় নিয়ে। ডক্টর জানিয়েছে বাসায় একটু রেস্ট করার জন্য। তাহলে খুব তারাতারি সুস্থ হতে পারবে। অতঃপর সৌমিত্রর কাছে এসে বললো-

– রিলিজের বিষয়ে কথা বলেছি। রিলিজ করে দিবে সমস্যা নেই। তুই হাটতে পারবি তো?

সৌমিত্রর এই খবর শুনে খুশিতে লুঙ্গি ডান্স দিতে ইচ্ছে করছে। অবশেষে হসপিটাল থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। অসহ্যকর একটা যায়গা। সে বললো-

– পায়ে তো তেমন ব্যাথা পাইনি। শুধু বাম হাতে যা সমস্যা। আর মাথাতে তো ব্যান্ডেজ আছেই। নো টেনশন ব্রো।

– দোস্ত ওরে বিয়ে করা কি ঠিক হবে? আমাকে জ্বালিয়ে মারবে একেবারে।

-তার আগে তুই বলতো, ওকে ছারা তুই থাকতে পারবি? ছোট থেকে একসাথে বড় হয়েছিস। তোর আর আমার ফ্রেন্ডশীপটা যতটা শক্ত। তার থেকে হাজারগুণ শক্ত তোর আর মিষ্টির ফ্রেন্ডশীপ। যাকে দেখে দেখে এই জীবনের অর্ধেক টা পার করলি তাকে ছারা বাকি জীবনটা কি চলতে পারবি? তাছাড়া মিষ্টির বাবা তোকে ভালো করে চিনে। একমাত্র তুই আছিস যে কিনা মিষ্টিকে বুঝে ভালোভাবে। তোর সাথে বিয়েটা হলে আঙ্কেল নিশ্চিন্ত হতে পারেন যে তার মেয়েটা অন্তত ভালোভাবে বাকি জীবনটা কাটাতে পারবেন। একবার তুই মাহিনের বিষয়টা ভেবে দেখতো। মিষ্টি এ বাড়িতে থাকলে ও সবসময় মাহিনকে দেখে শুনে রাখতে পারবে। আর যদি মিষ্টির অন্য যায়গায় বিয়ে হয়ে যায় তাহলে মাহিন একা হয়ে যাবে না? তোর বাবা আর মিষ্টির বাবার মাঝে যে ফ্রেন্ডশিপ আছে সেটা তো তারা অটুট রাখতে চাইবে তাইনা? আর আমি সিওর যে মিষ্টিকে একমাত্র তুই ভালো রাখতে পারবি।

সৌমিত্র কথাটা বলেই ফোঁস করে নিশ্বাস ছাড়লো। অভি মাথা হালিয়ে এতক্ষণ সৌমিত্রর কথা শুনছিলো। সৌমিত্র আবার বললো-

– বিয়ে তোর, সিদ্ধান্ত তোর। মিষ্টিকে ভালো রাখতে চাইলে বিয়ে করে নে।
চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here