#নীল_অপরাজিতা
#পার্টঃ৫
#Rifat_Amin
“কেন রোদের মতো হাসলে না
আমায় ভালোবাসলে না,
আমার কাছে দিন ফুরালেও আসলে না।
এই মন কেমনের জন্মদিন
চুপ করে থাকা কঠিন,
তোমার কাছে খরস্রোতাও গতিহীন।
নতুন সকাল গুলো কপাল ছুঁলো তোমারই
দূরে গেলেও এটাই সত্যি তুমি আমারই,
শুধু আমারই ..
রোদের মতো হাসলে না
আমায় ভালোবাসলে না,
আমার কাছে দিন ফুরালেও আসলে না।।
জলে ভেজা, চোখবোজা
ঘুম খোঁজা ভোর,
নিশানা তীর, স্মৃতির ভীড়
এলোমেলো ঘর’দোর।,🌼
মেঘ আসে এলো কিসে
ছুঁয়ে দিলেই সব চুপ,
সেই মেঘবালিকার গল্প হোক,
শহরজুড়ে বৃষ্টি হোক,
রোদ্দুর হোক আজ শুধুই তাহার ডাকনাম।
পাতাভরা সব দু-টুকরোরা
কাল বৈশাখীর মতো মুখজোরা,
সব ভিজে যাক শুধু বেঁচে থাক অভিমান
নতুন সকালগুলো কপাল ছুঁলো তোমারই
বেঁধে রাখতে পারলে তুমিও হতে আমারই
শুধু আমারই …”
রোদের মতো হাসলে না
আমায় ভালোবাসলে না,
আমার কাছে দিন ফুরালেও আসলে না। “””
———
গানটা শেষ করে অভির দিকে চাইলো মিষ্টি। অভি, মিষ্টির দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। এত সুন্দর গলায় গান আগে কখনো শুনা হয়নি মিষ্টির থেকে। শুনবোই বা কি করে। সব সময় ঝগড়া করে কাটিয়ে ফেলেছি সময়। মিষ্টি তার কানে গোঁজানো অপরাজিতা খুলে হাতে নিলো। ফুলটার দিকে চেয়ে থেকে সন্দিহান কন্ঠে বললো —
‘ আগেও কখনো এই কাজ করছিলি??
‘ কোন কাজ?? ‘
‘ এইযে আমার কানে অপরাজিতা দিলি। কয়টা মেয়েকে এমন ভাবে পটিয়েছিস?. ‘
মিষ্টির মুখ থেকে এমন কথা শুনে হেসে ফেললো অভি। অভিকে তার বাবা মায়ের বাইরে একমাত্র মিষ্টিই ভালো মতো বুঝে। মিথ্যা কথা বললে অকপটে ধরে ফেলে। সেই মেয়ে এই কথা বলতে পারলো কিভাবে। অভিকে হাসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো মিষ্টি.।
” তার মানে তুইও সৌমিত্রর মতো?? মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করে চলিস। ছিঃ! ‘
‘ সৌমিত্রর মতো আর হতে পারলাম কই। সৌমিত্র মিথিলাকে অনেক ভালোবাসে। যদিও সে মেয়েদের সাথে একটু ফ্লার্ট করে বেড়ায়। ‘
——-
সারা বাড়িতে বিয়ের আনন্দ চলছে। অভির নিচে নামতে ইচ্ছাই করলো না। এই ছাদে থাকতে অনেক ভালোলাগছে। যদি এখানে কেউ হুমায়ুন আহমেদ স্যার এর একটা বই এনে দিতো, তাহলে শুয়ে শুয়ে বই পড়তে থাকতাম।
ছাদে কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত করার পর নিচে নেমে আসলো অভি আর মিষ্টি। অভির পড়নের কাপড় একদম পছন্দ হচ্ছেনা মিষ্টির। অভিকে টেনে ঘরের মধ্যে আনলো মিষ্টি । দরজাটা লাগিয়ে একদম অভির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
‘ আজকে সারাদিন তুই আমার খোঁজখবর নিস নাই। খুব দেমাগ বেড়ে গেছে না?? তোর দেমাগ আমি বার করবো। খুব তো ছাদে গান গাইতে বললি আমায়। নিজে কখনো একটা কবিতা আবৃত্তি করিয়ে শুনাইছিস?? যাই হোক বাদ দিলাম। বিছানায় দেখ পান্জাবী আছে। তারাতারি রেডি হয়ে নিচে আয়। বিয়েতে সবসময় আমার কাছাকাছি থাকবি । কোনো মেয়ের দিকে তাকালে…’
আর কিছু না বলেই হনহন করেই দরজা খুলে বেড়িয়ে গেলো মিষ্টি। অভি হতবুদ্ধির মতো তাকিয়ে
আছে মিষ্টির যাওয়ার পানে। খানিক পরে সচকিত হয়ে ভাবলো, এটা কি হলো? আমি স্বপ্ন দেখলাম না তো?? পাঁচ সেকেন্ডের টর্নেডো ঝেড়ে দিয়ে গেলো। এখন সারাদিনের এই নীরবতার অর্থ বোধগম্য হলো অভির ।
মিষ্টির পছন্দ মতো নীল পান্জাবী পরে বাহিরে আসলো অভি। ইতিমধ্যে বরপক্ষও এসে গেছে। বরপক্ষ থেকে যারা এসেছে তাদের অনেকেই বউ দেখতে ব্যস্ত, কিছু মধ্য বয়স্ক লোক চেয়ার নিয়ে বসে গল্প করছে প্যান্ডের সামনে।
বিয়েটা যেহেতু বাড়িতেই হচ্ছে তাই বিয়ে পড়ানোর জন্য সুন্দর একটা প্যান্ডেল সাজানো হয়েছে আঙ্গিনার ঠিক উত্তর দিকে। রংবেরঙের আলোয় চারপাশটা অদ্ভুত ভুতুরে বলে মনে হলো। অভির দুচোখ তখন শুধু মিষ্টিকে খুঁজতে লাগলো। তখন কি বলে গেলো তার সব মাথার উপর দিয়ে চলে গেছে। অভি পান্জাবীর পকেট থেকে ফোন বের করে মিষ্টিকে ফোন লাগালো। কিন্তু মিষ্টির ফোন অদ্ভুত ভাবে বন্ধ দেখালো। কখনো তো ফোন বন্ধ করে রাখেনা ও। বরং ফোন করার সাথে সাথেই রিসিভ করে উল্টাপাল্টা বলতে শুরু করে।
অভি দুএকবার চেষ্টা করার পর সৌমিত্রকে ফোন করলো। প্রথমবারেই রিসিভ করলো সৌমিত্র।
অত্যন্ত বিরক্ত কন্ঠে বললো —
‘ ভাই শান্তিতে কি একটু প্রেম করতেও দিবি না ‘
অভির এই মহুর্তে রাগে গা হিরহির করে উঠলো। ব্যাটা বলে কি। সেই কখন থেকে লুতুপুতু করছে তবুও শান্তি হয়না। নিজেকে সামলে নিয়ে কাজের কথা বললো অভি —
‘ কোথায় তুই?? আর মিষ্টিকে দেখেছিস আশেপাশে একটু আগে?? ‘
‘ না তো। আচ্ছা আমি আসতেছি দাড়া। বায় ‘
ফোন কেটে দিলো সৌমিত্র। নিশ্চই আবার প্রেমে ঢলে পড়বে এই ছেলে। ওসব বাদ দিয়ে অভি শানাজ আপুর রুমের ভীতর চললো মিষ্টিকে খোঁজার জন্য। রুমে ঢুকেই অস্বস্তিতে পরে গেলো একদম। এখানে তো সব মেয়ে,। বেশীরভাগই ছেলে পক্ষের। নীল পান্জাবীর উপর মিষ্টি কালারের মুজিব কোট পরিহিত ছেলেকে দেখে রুমের প্রতিটা মেয়ে হা হয়ে গেলো। তাদের সামনে থাকা নববধুকে না দেখে এমন ভাবে অভিকে দেখছে যেনো অভিই বর। আর মেয়েগুলো সেই বরের শালি। শানাজের পাশে বসে থাকা মাহিন মিটিমিটি শুধু হাসছে। তার অভি ভাই যে কতটা সুন্দর আর হ্যান্ডসাম সেটা মাহিন ভালো করেই জানে। কিন্তু কখনো বাসার বাইরেই যায়না। শুধু ভার্সিটি আর বাসা, বাসা টু ভার্সিটি।
অভি তীব্র অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতেও মাহিনকে কাছে ডাকলো। মাহিন তার পরম ভক্তি নিয়ে অভির কাছে আসলো।
‘ তোর বোন কোথায় রে?? ‘
‘ আমি কি জানি?? তুমিই তো ভালো জানবে তাইনা?? ‘
‘ এই আমি ভালো জানবো মানে কি হ্যা?? ‘
‘ যাই হোক অভি ভাই। আপু কোথায় আমি জানি না। ‘
মাহিন অভির কানে কানে বললো ‘ তোমাকে সুন্দর লাগছে ভাইয়া। দেখছো না সব মেয়েরা কেমন হা হয়ে আছে। আমাকেও একটু সুন্দর বানিয়ে দাওনা ভাইয়া। আমি তোমার একমাত্র ছোট ভাই তাইনা?? নিজের না হলেও তো ভাই। আর চাইলে শালাবাবুও ডাকতে পারো। আমি কিছু মনে করবো না। ‘
মাহিনের পাকাপাকা কথা শুনে চোখ কপালে উঠে গেলো অভির। এতো পাম দেয়া কোথা থেকে শিখলো। অবশ্য কার ছোট ভাই দেখতে হবে না। মিস রণচন্ডীর ছোট ভাই বলে কথা।
‘ তোর বয়স কতো জানিস?? তোর বয়সে আমি ঠিকমতো প্যান্ট পরতেই পারতাম না। আর তোর বোনকে আমি বিয়ে করছি না’কি?? যে তুই আমার শালা হবি। ‘
কথাগুলো অভি রুম থেকে বের হতে হতে বললো মাহিনকে। আগে দেখা যেতো প্রেমিকার ছোট ভাইকে শালাবাবু ডাকলে সে ক্ষেপে যেতো। এখন দেখছি সে নিজেই নিজেকে শালা বলে সম্পর্ক ঠিক করে ফেলছে। সম্ভব সম্ভব, কলি যুগে সব সভব।
অভির সাথে মাহিন তার বোনকে খুঁজতে লাগলো। বাড়িটা খুব বড় নয় যে খুঁজতে অসুবিধা হবে। কিন্তু বিয়ে বাড়িতে লোকজনের যা ভীর তাতে প্রাণটা না বেরহয়। কিছুক্ষণ খোঁজার পর চিন্তিত হয়ে পড়লো অভি। এখনো ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।
——–
সারাবাড়িতে খোঁজার পর মিষ্টিকে, মিথিলা আর সৌমিত্রর সাথে দেখা গেলো ছাদে। এই মহুর্তে এতক্ষণের কষ্ট করে খোঁজার সব হিসাব নিতে ইচ্ছা হলো অভির। মিষ্টি, মিথিলা, সৌমিত্র ছাদের রেলিংয়ে ঠেস দিয়ে আছে। সৌমিত্র, অভি আর মাহিনকে দেখা মাত্র হাসার চেষ্টা করলো। —
‘ সরি রে ভাই তোকে মিষ্টির খবরটা দেয়াই হয়নি। ‘
অভি কিছু বললো না। সোজা মিষ্টির সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো –
‘ তোর ফোন বন্ধ কেনো?? ‘
‘ ফোনে চার্জ নেই। চার্জ দিতে ইচ্ছাও করছে না। এমনেই থাকি ‘
অভি আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। সে’ও মাহিনকে সাথে নিয়ে রেলিঙে বসে পড়লো। মাহিন এতোক্ষণ নিশ্চুপ থাকলেও এবার বললো —
‘ অভি ভাই ‘
‘ হু বল ‘
‘ বিয়ের পর আমরা কোথায় যাবো?? ‘
‘ কোথায় আর যাবো?? সোজা বাসা। ‘
সৌমিত্র বোতলে করে পানি খাইতেছিল। অভির এই কথা শুনে ফিক করে সব পানি বেড়িয়ে গেলো মুখ থেকে। সৌমিত্র আর মিষ্টি একসাথে চেঁচিয়ে বললো–
‘ বাসা যাচ্ছি মানে?? ‘
অভি নির্বিকার স্বরে বললো-
‘বাসা যাচ্ছি মানে বাসা যাচ্ছি। এখানে থাকা সম্ভব না।’
‘ আমি কোথাও যাচ্ছি না। আব্বু তোকে পাঠিয়েছে আমার সাথে মানে আমার সব কথা শুনে চলতে হবে। তাছাড়া সৌমিত্রকে আমি বলেছি সিলেটের কিছু সুন্দর সুন্দর যায়গা ঘুরবো। টাকার কথা চিন্তা করতে হবেনা। সব খরচ দ্য গ্রেট অভিরাজ শেখ বহন করবে। ‘
বলেই চোখ টিপলো মিষ্টি। মাহিন আর মিথিলা নীরব দর্শকের ভুমি পালন করছে আর হাসছে। এখানে কথা বলা একদম উচিত হবে না।
অভি বললো —
‘ আমি কি টাকার গাছ নাকি?? আর আমি তো এখানে আসতেই চাইনি। আমি জানতাম কোন রণচন্ডীর খপ্পরে পরতে হবে আমাকে। শুধু আঙ্কেলের জন্যই আসা। ‘
কথা বলতেই ফোন বাঁজলো অভির। অভির মা ফোন করেছে। মনে পড়লো দুই দিন থেকে কোন খোঁজখবর বেয়া হয়নি বাবা মা’র। ফোন রিসিভ করেই সালাম দিলো অভি। অভির মা সালামের উত্তর দিয়ে বললো –
‘ ভালো আছিস বাবা ‘
‘ আলহামদুলিল্লাহ আম্মু। তুমি আর বাবা কেমন আছো?? ‘
‘ এইতো আলহামদুলিল্লাহ। তোর দাদিও এখন একটু সুস্থ। শুনলাম মিষ্টিকে নিয়ে সিলেট গেয়েছিস। ‘
‘ হ্যা মা। অনেক ঝামেলায় পরেছি ওর সাথে এসে’।
‘ ও আবার কি করলো। শোন, বিয়ের পর মাহিনকে আর মিষ্টিকে নিয়ে একটু ঘুরে আসিস সিলেট। খবরদার ওর সাথে রাগারাগি করবি না। ভারী মিষ্টি মেয়ে। ‘
অভি এই কথা শুনে আরো অবাক হয়ে গেলো। ফোনটা কেটে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে দেখলো সে হাসছে।
‘ মা’কেও ম্যানেজ করছিস তাহলে। ‘
মিষ্টি উত্তর না দিয়ে শুধু হাসলো। সৌমিত্র আর মিথিলার দিকে তাকিয়ে বললো–
‘ দোস্ত ডিসাইড করে নে কোথায় যাবি। বিয়ের আগেই তোর হানিমুন প্যাকেজ করে দিলাম। কত ভালো আমি তাইনা??’
মিষ্টির কথা শুনে চোখ পাকালো অভি –
‘ কি সব বলছিস?? ছোট ভাইটাকেও নষ্ট করছিস তুই। ‘
কথাটা মাহিনের একদম পছন্দ হলো না। তবুও তার মাহিন ভাইকে কিছু বলা যাবে না।মাহিন না শোনার ভান করে বললো —
‘ আমার প্রাইভেট মেট কয়েকমাস আগে জাফলং আসছিল। চলো আমরা আগে সেখানেই যাই ‘
অভি ভ্রু কুঁচকে বললো–
‘ প্রাইভেট মেট আবার কি রে?? ‘
‘ অভি ভাই তুমি এটাই জানো না?? স্কুলের ফ্রেন্ড যদি ক্লাস মেট হয়। তাহলে প্রাইভেটের ফ্রেন্ড প্রাইভেট মেট হবে তাইনা? ‘
মাহিনের কথা শুনে এবার সবাই হেসে ফেললো। সৌমিত্র বললো-
তাহলে তোমার প্রাইভেট মেটের ঘুরে আসা যায়গায় যাওয়া যাক। কি বলো??
চলবে???