নেশাক্ত প্রণয়োণী পর্ব_২৪

0
814

#নেশাক্ত_প্রণয়োণী
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_২২(অজান্তে)

আরভীক এর ঠোঁট ফেটে র’ক্ত ঝরছে। আনজুমা রেগে পুরু ভাবনাশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। তার স্বামীর সভ্য পুরুষের পিছনের পশুকে চিনতে পারেনি সে। আশফিকে না পেয়ে প্রায় বিশ ঘণ্টা হয়ে গিয়েছে। কোথায় আছে, কেমন আছে কিছুই উপলব্ধি করতে পারছে না! দুঃখে দুঃখে মন ক্ষুণ্ণতায় ভোগছে। কষ্টের ভারাক্রান্ত ক্লান্তি দূরীকরণে গিয়ে ছিল উঠানে হাঁটাহাঁটি করতে। কিন্তু সম্মুখীন হলো অপরিকল্পিত এক সত্যতার!
আরভীক কাকে যেনো ফোনে বলছে,
‘আশফিকে মে’রে তারা কিছুই হাসিল করতে পারবে না। আমার কোনো চিন্তে নেই! কি’ডনাপার্স বুঝতেও পারেনি এ বিষয়ে হাহাহা।’

সে কথার ছলে মৃদু হাসির গুঞ্জন দেয়। যা তিক্ত,ঘৃণার জম্ম দিয়ে দেয় আনজুমার হৃদয়ে। বিয়ের পূর্বেও ভেবে ছিল মানুষটা রসিকপূর্ণ হলেও ঘৃণিত পুরুষ নয়! তবে সে ভুল প্রমাণিত হলো। মানুষটা বহুরুপী। সর্বদা ভালো আচরণের মুখোশ পরে সকলকে বোকা বানানোই তার মুখ্য উদ্দেশ্য। চোয়াল শক্ত করে আরভীক এর কাঁধে ধরে পিছু ঘোরায়। দিগন্তের সীমানা লঙ্ঘন করে ঝাঁঝালো চ’ড় লাগায় নরম স্নিগ্ধ মুখোশ পরিহিত আরভীক এর গালে! হঠাৎ চ’ড়ে’র আক্র’মণে স্তদ্ধ হয়ে যায় সে। গালে হাত রেখে চোখজোড়া গোলাকৃতির ন্যায় করে তার প্রণয়োণীর দিকে চাই। আনজুমা ক্ষোভে কাঁপছে, তার শ্বাস মাত্রাতিরিক্তভাবে চলাচল করছে। আরভীক নিবিঘ্নে গাল থেকে হাত সরিয়ে মৃদু হাসার চেষ্টা করে এগিয়ে যায় আনজুমার নিকট। ঘনিষ্ঠ হবার পূর্বেই আনজুমা অভাবনীয় কর্ম করে ফেলে। উঠানে থাকা ছোট গাছের ডাল তার হাতের নাগালে হওয়ায় সেটি চেপে ধরে হাতের মুঠোয়। আরভীক যেই না আনজুমাকে বুকে আগলে নিতে গেল। আনজুমা ডালটি দিয়ে আরভীক এর গলায় আ’চ’ড় কেটে দেয়। আচড়ের চোট জোড়ালো হওয়ায় ঠোঁট কামড়ে মৃদু আর্তনাদ করে উঠে সে। হুঁশ এলো আনজুমার। রাগের বশীভূত হয়ে সে গলদ কর্ম সিদ্ধি জাহির করে ফেলেছে। ডালের মাথায় তাজা র’ক্ত দেখে ঘাবড়ে যায় সে। আতঙ্কিত নয়নে তার স্বামীর দিকে চাই। আরভীক অসহায় নয়নে বহু কথা বলার জন্য প্রয়াস করছিল। কিন্তু সময় পেল না গলার আচ’ড়ে রক্তক্ষরণ মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ে উঠানের বালিতে। আরাজ সাহেব করিডোর থেকে আরভীক এর লুটিয়ে পড়া দেখে আতঁকে উঠে। সময় বিলম্ব না করে তৎক্ষণাৎ উঠানে চলে আসে। ছেলের গলা আর ঠোঁট ফেটে র’ক্ত’ক্ষরণ হচ্ছে বুকে আগলে নেয় তাকে। নিস্তব্ধ,নিস্তেজ শরীর নিয়ে তিনি কাঁপছে। এককালীন আজীবের শরীর বুকে আগলে নিয়ে ছিল তিনি। তফাৎ ছিল আজীবের মৃতদেহের লাশ এবং এ মুহুর্তে আহত আরভীক এর ক্ষতপূর্ণ দেহ। তিনি কান্নাময় নয়নে আরভীক এর আ’চড় লাগা স্থানে তার গলায় থাকা স্কার্ফটি মৃদু চাপে বেঁধে দেয়। যেন র’ক্ত’ক্ষরণ স্বল্প সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। ঠোঁটের কোণায় জমাটবদ্ধ র’ক্ত মুছে দিয়ে আনজুমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘খু’ন করতে গেলে তা পারোনি। অত্যন্ত এই বুড়ো বাবার উপর দয়া করো মা। আমার ছেলেটাকে বাঁচাতে সহায়তা করো আল্লাহর দোহাই লাগে।’

আব্বুর ন্যায় ভাবা মানুষটির মুখে দৃঢ় অনুনয়-বিনয় শুনে শিউরে উঠে আনজুমা। তৎক্ষণাৎ ফোন বের করে ‘অঞ্জয়’ কে কল দেয়। গাড়িতে ছিল সে। আরভীক বসের প্রাঙ্ক কলে বলা বাক্যধারা বোঝে ফাহাদ,সায়াজকে নিয়ে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছনোর পূর্বে ফোন আসায় স্বাভাবিক ভাবে দেখে। ফোনের স্ক্রিনে ‘আনজুমা ভাবী’ লেখা দেখে হতবাক। গাড়ি থামিয়ে কল রিসিভ করতেই আতঙ্কিত কণ্ঠের দ্বারা প্রকাশিত বাক্যে নির্বোধ হয়ে গেল অঞ্জয়। গাড়ি তৎক্ষণাৎ ইউটার্ন নেয়। সায়াজ ইউটার্ন হতে দেখে নানানবিদ প্রশ্ন করে। তবে ভয়ে,চিন্তিত দশায় অঞ্জয় কোনো রুপ জবাবদিহি করতে পারল না। অযথা নিশ্চুপ রইল দুজনে। আনজুমা তার আরাজ আব্বুর সঙ্গে আরভীককে ধরে রুমের দিকে এলো। বিছানায় শায়িত করে আনজুমা কাঁপান্বিত হাতে আরভীক এর পরণের পরিহিত কোট,শার্ট খুলে দেয়। যেন র’ক্ত মুছে উম্মুক্ত হাওয়ায় আহত ব্যক্তির শ্বাসরন্দ্র কার্যক্ষম হয়। আরাজ সাহেব শার্টের হাতা দিয়ে চোখ মুছতে থেকে মগ ভর্তি পানি এনে ছেলের নিকট পাশ ঘেঁষে বসে। আরভীক এর নিসাড় দেহে লেগে থাকা র’ক্ত মুছে দেয়। আনজুমা অনুতপ্ততার প্রলম্বনে আরভীক এর ডান হাতের পাশে বসে। তার মাথায় হাত রাখতে গেলে সেই হাত আকঁড়ে ধরে আরাজ সাহেব। বউমার দিকে না তাকিয়ে গাম্ভীর্য ভরা গলায় শুধায়।

‘ছেলেকে মা’রতে পারোনি বলে মাথা ফাটিয়ে দিতে চাও এখন!’

তিক্ত কথায় চমকে গেল সে। চোখজোড়া জ্বলজ্বল করছে তার। জীবনটা গোলকধাঁধায় বেঁধে গিয়েছে তার। শান্তি,হাসি খুশি থাকতে গিয়েও পারে না। এক দিন মন খুলে হাসলে পরের দিন কোনো না কোনো অঘটন ঘটে যায়। তখন দুচোখে অশ্রুসিক্ত করা বিহীন অন্য কোনো কারণ রয়ে যায় না। রাগ,হিংসা মানুষের সরল সত্তাকে মেরে দেয়, প্রলয় ঘটিয়ে শান্ত করে দেয় পরিবেশ! কিন্তু প্রলয়ের পর শান্ত পরিবেশ পেয়েও লাভ কি! অন্যত্রে প্রলয়ের দ্বারা প্রিয়জন হারিয়েই ফেলেছে। আরভীক প্রিয় না হলেও অপ্রিয় নয়! সে তো তার মনের সুপ্ত অনুভূতি জাগ্রৎ পুরুষ! তাকে সে নিজ হাতে খু’ন করতে চাইবে কি!
দোষ কি তার! হ্যাঁ তারই সত্য না শুনে বিবেকবুদ্ধিহীনতার পরিচয় দিয়েছে সে। ন্যূনতম জ্ঞান ছিল না তার। সত্য শুনার পূর্বেই আঘাত করে আহত করে ফেলেছে। নিশ্চুপে চোখের অশ্রুজল বিসর্জন দিয়ে চলেছে আনজুমা। আরভীক তখনো সেন্সলেস। তড়িঘড়ি সেখানে অঞ্জয়রা প্রবেশ করে। বস-বন্ধুর আহত দেহ দেখে চমকে গেল তারা। ফাহাদ জোরসরো হয়ে আরাজ সাহেবকে সরিয়ে আরভীক এর হাত ধরে পার্লস চেক করে।
মন্থর গতিতে রক্ত সঞ্চালন হচ্ছে। আরাজ সাহেব ক্রন্দনময় গলায় শুধায়।

‘বাবারা আরভীককে মেডিক্যালে নাও। না হলে দেরি হয়ে যাবে।’

সকলে মাথা নেড়ে সায় দিল। তারা আরভীককে ধরে মেডিক্যালের পথে রওনা দেয়। অঞ্জয় খেয়াল করে দেখেছে আনজুমা ভাবীকে তার আরাজ আঙ্কেল উপেক্ষা করে চলছে। ব্যাপারটা শোচনীয় বটে। তবুও আরভীক স্যার জ্ঞান ফিরতেই আনজুমা ভাবীকে দেখতে চাইবে। অতএব, সে জোরাজুরি করে আনজুমাকে মেডিক্যালে নিয়ে আসে। আরাজ সাহেব তাকে দেখে ভীষণ ক্ষেপে যায়। অঞ্জয়কে বকে গেল। তিনি স্বাভাবিক কণ্ঠে আরভীক এর আহত করার ঘটনাটি বলে। শুনে তিনজনে মন থেকে নিরাশ হলো।
সায়াজ আনমনে শুধায়।
‘আনজুমা ভাবী আপনি কি একবার পারতেন না তার কথা শুনতে।
সে প্রাঙ্ক কল করে আশফিকে নিয়ে তিক্ত মন্তব্য করে ছিল। যা ক্ষুদ্র হলেও এর পরিধি বিস্তৃত নিশ্চয় জানে সে ! তবুও আশফির প্রতি ভীষণ দূর্বল আরভীক। সেই দূর্বল জায়গাকে নিয়ে আসলেই সে খারাপ চিন্তাধারা পোষে রাখবে বলে মনে হয় আপনার!’

আনজুমা শুনে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। তার গলার কাতরতা দমে না গিয়ে বেড়ে গেল। সে ফুঁপানো গলায় কষ্ট করে বলে,

‘আপনারা যে বলে যাচ্ছেন ! আমার অবস্থা কি বুঝতে চেষ্টা করেছেন। স্বামী হারিয়ে এক জীবন্ত প্রাণ ছিল আমার বাঁচার অনুপ্রেরণা। আমাদের আশফি! তাকে হারিয়ে প্রায় ঘণ্টাখানিক চলে গেল। অথচ আপনাদের এই ভাই কিনা আপনাদের সঙ্গে প্রাঙ্ক কলে আশফিকে নিয়ে মজা করছিল। জানেন এর প্রভাব আমার মস্তিষ্কে কতটা গাঢ় হলো। বুঝতে পারবেন আপনারা এক মায়ের ভেতরকার আহত মন,ছেলে হারিয়ে ফেলার হাহাকার ! প্রতিক্ষণে উনাকে জিগিয়েছি কবে নিয়ে আসবে আমার আশফিকে, কবে নিয়ে আসবে! না তিনি আছেন তার ধান্দায়। ফাজলামি যেন ছাড়ে না মোটেও। আমি ওতটা আহত করে মে’রে ফেলতে চাইনি। রাগের বশে হাত চালিয়েছি। যার ক্ষত এতটা গাঢ় হবে ভাবেনি। আপনারা আমায় ক্ষমা করে দিন সরি।’

চোখ মুছে মেডিক্যাল থেকে বেরিয়ে যায় আনজুমা। অঞ্জয় পিছু যেতে চাইলে আরাজ সাহেব কঠোর গলায় থামিয়ে দেয়। তিনি অসহনীয় দৃষ্টিতে চেয়ে ছিল যা আনজুমার হৃদয়কে খন্ডিত করে দেয়। সে ‘আব্বু’ বলে মানে এই ব্যক্তিকে। তার চোখে নিজের প্রতি অসহনশীলতা, ঘৃণ্য নজর সহে নিতে পারেনি আনজুমা। বিধেয় ক্ষমা চেয়ে রওনা দেয় বাসার দিকে।

৪২.
দুঘণ্টা পর জ্ঞান ফিরে আরভীক এর। চোখ খুলে সামনে তার বাবাকে দেখতে পায়। মৃদু কণ্ঠে, ‘হেই ড্যাড!’ বলে ডাকে।
আরাজ সাহেব মৃদু হেসে আরভীক এর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। সে তার চোখজোড়ায় পরম মর্মভেদী কাতরতার ন্যায় প্রণয়োণীকে খুঁজে। দৃষ্টি পুরু রুমে বুলিয়ে না পেয়ে উত্তেজিত হয়ে যায়। উম্মাদের মত ‘জুমা কই,জুমাআ’ বলে ডাক দেয়। ফাহাদ তার কাঁধে হাত রেখে থামিয়ে শ্বাস নিতে বলে। আরভীক কথা অনুযায়ী শ্বাস নিয়ে আনজুমার কথা জিজ্ঞেস করে।
অঞ্জয় যা হলো সব ঠোটস্থ এর মত উগলে দেয়। আরভীক শুনে কপাল চাপড়ে শুয়ে পড়ে। দৃঢ় কণ্ঠে অঞ্জয়কে বলে,

‘আনজুমা কিডনাপ হয়ছে কিনা খবর নিয়ে দেখ তো।’

কথাটা শুনে সকলে হা করে তাকায়। সে ভাবলেশনহীন চেয়ে রইল অঞ্জয়ের দিকে। সে ভেবাচ্যাকা খেয়ে ফোন বের করে গার্ডস কে কল দেয়। আহত এক গার্ড কল রিসিভ করে ফুঁপে বলে,

‘স্যার ম্যাডামকে ধরে নিয়ে গেছে।’

হতবুদ্ধির ন্যায় ফাহাদ ধমকে বলে,

‘আর ইউ গোন ম্যাড ডুড! ভাবীও কিডনাপ তাও তুই সহজভাবে নিচ্ছিস বিষয়টা। আমরা সবাই জানি আশফি আর ভাবী তোর জীবনের কি মূল্যায়ন রাখে! তুই তাদের জন্য কেমন ছটপট করতি দেখেছি আমরা। পরিণয়ে কি….।’

কথাটি মুখ থেকে বের করতে পারল না ততক্ষণে আরভীক শরীরের জোসে চ’ড় লাগিয়ে বসে ফাহাদের গালে। থরথর করে কাঁপছে সে। আঙুল দেখিয়ে জোসে থাকা দশায় পরিপূর্ণ হুমকির কণ্ঠে শুধায়।

‘আমার প্রণয়োণী ও আশফির কিছু হতো। যে আমার কলিজার অংশে হাত দেবে সেই ব্যক্তির জীবন জ্যান্ত লাশ বানিয়ে দেব আমি। আমার জীবন চুলোয় যাক, তাদের জীবনহানি হওয়ার কোনো পথই রাখব না।’

সে আহত শরীর নিয়ে পাত্তাহীন দাঁড়িয়ে পড়ে।সোজা দাঁড়িয়ে ফোন বের করে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির নাম্বারে কল দেয়। অপরপাশের ব্যক্তিকে গুরুগম্ভীর কণ্ঠে শুধায়।

‘কিডনাপ করছিস ভালো কথা! হরণের উদ্দেশ্য থাকলে বলব মাথা থেকে নিবিঘ্নে ঝেড়ে ফেল। না হলে আমি তোর বোনের জীবন নরক বানিয়ে দেব।’

শেষাক্ত কথায় ব্যক্তিটি দম ফেলে আহাজারি গলায় আশ্বস্ত করে।

‘চিন্তের কিছু নেই আইম নিউ ম্যারেড। বউ ছাড়া অন্য নারীর দিকে তাকানো শুভা পায় না আমার কারেক্টারের সঙ্গে।’

তিক্ষ্ণ দম ছেড়ে বাসার দিকে রওনা দেয় তারা। সময় অবিলম্বে মার্শাল কারাটিয়ান ফোর্স রেডি করে সঙ্গে নিল। তার বাবা আরাজ সাহেবের কাঁধে হাত রেখে বলে,

‘দোয়া করিও তোমার ছেলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে যাচ্ছে।’

শুনে চোখ বুজে তপ্ত শ্বাস নিয়ে আরভীক এর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)

৪৩.
আশফি মাথার চুল ধরে টানছে লিয়াকত সাহেবের। বেচারা বুড়ো মানুষ পড়েছে ভেজাল ঝামেলায়। খাবার খেতে চেয়েছে ফলে লিয়াকত সাহেব নিয়ে এলো একটি চকলেট। আচ্ছা বাচ্চা আশফির চকলেট খেয়েই কি পেট ভরবে!
তাই চকলেট খেয়ে পুনরায় চুল টানছে লিয়াকত সাহেবের। সে যতক্ষণ ‘পারব না’ বলছে ততক্ষণ আশফি তার চুল টেনে ছিঁড় ছিঁড় করে ফেলছে। লিয়াকত সাহেব পাল্টা আক্রমণ করতে পারছে না। কেননা বেছে দেওয়ার সময় ছেলের চেহারায় খুঁত বা ত্রুটি থাকলে ডিলার্স রিজেক্ট করে দেবে তাদের ডিল। ফলে সহে নিচ্ছে যন্ত্রণা। ভ্যাঁ ভ্যাঁ কেঁদে লিয়াকত সাহেবের চুল শক্ত করে ধরে দিল রামটান। ব্যস একগুচ্ছ চুল ছিঁড়ে চলে এলো আশফির হাতে। সে কান্না থামিয়ে একপলক চুলের দিকে তো আরেক পলক লিয়াকত সাহেবের দিকে তাকায়। লিয়াকত সাহেব হতভম্ব চোখে চুলগুলো দেখে কাঁপা হাতে মাথা স্পর্শ করে। যে স্থান থেকে চুলগুলো ছিঁড়েছে সেখানে র’ক্ত এসে মারাত্মক অবস্থা হয়েছে। কপাল বয়ে র’ক্ত ঝরছে লিয়াকত সাহেবের। সে রক্ত দেখে রাম চিৎকার দিয়ে উঠে। বেশ উৎসুক মজার চোখে দেখছে আশফি। খিদের চটে লিয়াকত সাহেবের পকেট থেকে পূর্বেই চার-পাঁচ চকলেট হাতিয়ে নিয়েছে। সেগুলো মুখে পুরছে আর খিলখিলিয়ে হাসছে। লিয়াকত সাহেব পুরু রুম জুড়ে পায়চারী করে মুখে ঠোঁটে এক বাক্যই আওড়ে যাচ্ছে ‘খু’ন খু’ন খু’ন’। জাফর সাহেব রুমে এসে তার বন্ধুর বেগতিক দশা দেখে তৎপর হলো ট্রিটমেন্ট দিতে। ক্ষেপণ দৃষ্টিতে আশফির দিকে তাকিয়ে ধমকে উঠে। আশফি ঠোঁট ফুলিয়ে ভেটকানো কণ্ঠে বলে,

‘বাবাইয়ে আতে ডুসুম করে মেতে দেবে হুম!’

শুনে হাহা করে বিশ্রী হাসি দিয়ে উঠে জাফর সাহেব। যেন তিনি জোকস শুনেছে। হাসিমাখা কণ্ঠে শুধায়।

‘তোকে কিডনাপ করেই তো তোর বাপকে হাতের মুঠোয় বন্দি করে খুন করব।’

‘বেএএ’ জিভ দিয়ে লম্বা সুর টেনে ভেংচি দেয়। সে লিয়াকত সাহেবের চুল জাফর সাহেবের মুখ বরাবর ছু’ড়ে দেয়। তিনি অতিষ্ঠ ভরা নজরে ছেলের দিকে তাকায়।
আশফি ‘বেএ বেবে বেএ বে’ করে জিভ দেখাচ্ছে আর খিলখিলিয়ে হাসছে। সেও হেসে বলে,

‘বাবাইয়ে আতবে আতবে আতবে !’

জাফর সাহেব বিনাবাক্য ব্যয় করে পাগল ছেলেকে রুমবন্দি রেখে লিয়াকত সাহেব কে নিয়ে বেরিয়ে যায়। রুমে আর বেশিক্ষণ থাকলে পাগলগরাধের রোগী হতে হবে তাদেরকে। আপাত পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনি লিয়াকত সাহেবকে পাশ্ববর্তী এক মেডিক্যালে নিয়ে যায়। জাফর সাহেবের ফোনে রাজিব কল দেয়।
তিনি উক্ত কলের অপেক্ষা করছিল। ফোন রিসিভ করে উত্তেজিত গলায় শুধায়।

‘কাজ হয়ছে ঐ ছেমড়িরে ধরে আনছস!’

‘হ্যাঁ শ্রদ্ধীয় আনজুমা ভাবীকেও ধরে আনছি।’

‘ঐ তুই শ্রদ্ধা দিয়ে কথা বলছিস কেন তার নামে। ঐ ছেমড়ি হলো আরভীকের বউ আগে সুয়াইবের বউ ছিল। এই মা-ছেলে দুজনকেই মোটা অংকের টাকায় বেছবো। ওদের শ্রদ্ধা জানিয়ে কি বোঝাস তুই! আরভীক কি তোর ভাই লাগে নাকি।’

শেষের কথাটি শুনে রাজিব বাঁকা হেসে তার সামনে আয়েশী ভঙ্গিতে বসে থাকা ব্যক্তির দিকে তাকায়। দুজনের চোখাচোখি হতেই ঠোঁটজোড়ায় ভেসে উঠে শয়তানি হাসি। রাজিব মিছামিছি আমতা ভাব করে বলে,

‘না মানে শত্রু হলেও মিত্র হতে কতক্ষণ!’

‘রাখ তোর প্রবাদগিরি। ছেমড়িকে ধরে আন আর ছেলের কাছে ফেল। ছেলেটাও ফাজিল একটা। লিয়াকতের মাথার একগুচ্ছে বা’ল ছিড়ে ফেলছে।’

রাজিব দ্বিরুক্তি না করে ফোনটা কেটে দেয়।
ফোন রেখে সামনে থাকা ব্যক্তির দিকে চেয়ে বলে,

‘রেডি থাক।’

অপর ব্যক্তি বাকাঁ হেসে বলে,

‘খেলার প্রধান লিডার আমি আর আমিই রেডি থাকব না তা কি করে হয়!’

চলবে…..
(কাল রহস্যের জোট খুলব ইন শা আল্লাহ্)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here