#পর্ব১৪
#অসমাপ্ত_প্রনয়
#মিঃ_নাহিদ_হাসান
শহরে পা রেখে নাহিদ অনেক খুশি,কখন বাবাকে বলতে পারবে আনন্দের সংবাদ..
বাড়িতে যেতে দেরি হয়ে যাবে, সামনে ছিলো নাহিদের বাবার চালের আরদ…
নাহিদ হন্তদন্ত হয়ে চালের আরদেই ঢুকলো, এইখানেই বাবাকে পাওয়া যাবে, অনেক দিন পর দেখা হবে..!
বাবা তোমার চালের আরদে এইসব কি, কয়দিন আমি ছিলাম না,আর তার মধ্যে এইসব..!
গত পাঁচ দিন পর হঠাৎ ছেলের কন্ঠ শুনে বারেক খন্দকার চমকে পিছনে তাকলেন, নাহিদ যে কখন আসলা, বাড়িতে না যাইয়া গোডাউনে কী..
আমি তো মনে করেছিলাম তুমি ম*রে গেছো, এতো দিন পর কোই থাইকা আইলা..! আমার লোকজন তোমারে তন্ন তন্ন করে খুঁজছে, তোমার খবর নাই..?
ছেলে মনে করলে তো খোঁজ খবর ঠিক পাইতেন, আমি তো বেঁচে ছিলাম, কিন্তু আপনার এইসব কর্মকাণ্ড দেখার পর আর বাঁচার ইচ্ছা নাই, আপনি ভেতরে ভেতরে দুই নাম্বার জিনিসের ব্যবসা করেন, নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হতো না..!
দুনিয়াতে সৎ কাজ কইরা বেশি টাকা ইনকাম করা যায় না, দুনিয়াতে ভালো মাথা তুলে বাঁচতে গেলে_টাকা লাগে বাপজান..! আমি বুঝি টাকাই সব,টাকা হইলে সব করা যায়..
এই যে ছোট্ট প্যাকেট গুলো দেখতাছো না, এইখানে পুরা এক লাখ টাকার ড্রাগ আছে,আর এই পুরা চালের আরদে ৫০হাজার টাকার চাল নাই, আমার মূল ব্যাবসা তো এইসব,ধান,চাল তো সাইনবোর্ড…
আব্বা দুনিয়ায় টাকা সব না,টাকা দিয়া ভালোবাসা কেনা যায় না, আম্মু মারা গেলো, নতুন আম্মু নিয়া আসলেন টাকার জোরে, কিন্তু আমার আসল আম্মুর ভালোবাসা আনতে পারেন নাই…! আপনি ভিতরে ভিতরে তাহলে এতদিন এইসব ব্যবসা করতেন, আমি জানতাম না কেন??
তোমার আম্ম মারা যাবার সময়, আমার হাতে ধরে অনুরোধ কইরা বইলা গেছে,তার ছেলেকে যেন এইসব কাজে না জড়াই..! আমি তোমার মায়ের কথা রাখছি, তাই এতো বছর সবকিছু আড়ালে ছিলো,যেদিন তুমি নিখোঁজ হয়ে যাও, আমি লোক পাঠিয়ে তোমাকে খোঁজা খুঁজি করছি_কিন্তু কোন সন্ধান পাই নাই,তাই ধরে নিছিলাম ম*রে গেছো,তাই আমার গোপন ব্যাবসা অপেন করে ফেলছি…
বাবা আপনাকে এইসব ছাড়তে হবে, কিছু টাকা ইনকাম করার জন্য, আপনি মানুষের ক্ষতি করতে পারেন না, মাদকাসক্তি এমন খারাপ জিনিস,এইটায় যে একবার আসক্ত হয়ে পড়ে,আর ছাড়তে পারে না,যখন সে বাড়ি থেকে টাকা পায় না,তখন সে চুরি করা শুরু করে,মাঝে মধ্যে দলবল নিয়ে ডাকাতি করে বসে, মানুষ খু*ন করে..! বাবা অল্প টাকাতেও জীবন চলে, জীবন কয়দিন আজকে মরে গেলেই তো অন্ধকার কবরে রেখে আসা হবে,তখন কোনো কাজে লাগবে না তোমার এতো সম্পদ…!
বারেক খন্দকার ধমক দিয়ে বললেন, হয়েছে আর জ্ঞান
দিস না আমাকে,তোর আম্মা আমাকে বুঝাতে পারলো না, শেষ পর্যন্ত অকালে মা*রা গেলো..? তুই আর আমাকে কী বুঝাবি, আজকে যা দেখছো_ সব ভুলে যা, মনে কর তুই কিছু দেখোস নাই, অনেক দিন পর বাড়িতে আইছোস,ঘরে যাইয়া বিশ্রাম কর, এইসবে আসলে পরিনতি ভালো হইবো না,সব কিছু এখনি মাটি চাপা দে…?
বাবা আমি এখন একটা জিনিস খুব ভালো করে বুঝতে পারছি_ ছোটবেলায় আমার আম্মু বলতো, খন্দকার বাড়ির ছেলের পরিচয় কখনো বাহিরে দিবি না, কখনো অন্যায় মাথা পেতে নিবি না, তোর বাবা চাচাদের মতো চরিত্র গড়বি না, তুই হবি নিজের মতো, আমি এইবার এই কথা গুলোর মানে বুঝছি, আম্মুর কথায় আমি কখনো নিজের নামের সাথে খন্দকার পদবি জুরি নাই,আর এখন তো মনে হচ্ছে,এই পরিবারে জন্ম নেওয়া পাপ,বাবা আপনি দেশের শত্রু_মানবতার শত্রু, আমি আপনার সব কিছু শেষ করবো, এইটা আমার ওয়াদা..! নাহিদ বেড়িয়ে যেতে ধরলো..?
বারেক খন্দকার এইবার অনেক রেগে গেলেন_ চিৎকার করে বললেন…
এই কে আছিস গোডাউনের দরজা বন্ধ কর,ও যেন বাহিরে যেতে না পারে, সাথে সাথে দুইজন লোক দরজা বন্ধ করে দিলো..
এই মাল গুলো ঠিকঠাক মতো আসিফ মন্ডলের গ্রামের নিয়ে না,ওর ছেলের কাছে দিবি, কোন ঝামেলা যেন না হয়… একজন লোক বেড়িয়ে গেলো…
বাবা এই আসিফ মন্ডল কে..? নিজের এলাকা নষ্ট করছো, এখন ভাইরাসের মতো দুনিয়া ছড়াতে চাও..!
আসিফ মন্ডল আমার পুরানো পাটনার, বিভিন্ন এলাকায় আমার পাটনার আছে, তুমি কিছু করতে চাইলেও কিছু করতে পারবা না_বারেক শয়তানি হাসি দিলো…
আমি গোড়া থেকে সমাজের সব আগছা পরিষ্কার করবো, আমাকে যেতে দেন..
কর্মচারীদের মধ্যে একজন বলে উঠলো,মালিক আপনার ছেলে অনেক চালাক এইখানে থেকে যে কোন সময় পালাতে পারে,ওরে এইখানে রাখা ঠিক হইবো না?
বারেক খন্দকার কেউ কে ডাকলেন .. কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন লোক চলে আসলো, বারেক ইশারা করতেই,সেই লোকটা হুট করে একটা রুমাল চেপে ধরলো নাহিদের নাকে, নাহিদ নিচে পড়ে গেলো..
বারেক লোকজনদের হুকুম দিলো, ওকে বাড়িতে নিয়ে যাও,ঘরে আটকে রাখো,ওরে অঞ্জান করাটা অনেক দরকার ছিলো,না হলে পালিয়ে যেতো_এখন নিয়ে যাও কোন ভয় নাই…
বারেক একটা সিগারেট ধরিয়ে ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে বেরিয়ে গেলেন, দুইজন লোক নাহিদ কে নিয়ে রওনা দিলো বাড়ির দিকে…!
——–
মীম আজকে অনেক খুশি, এতো দিন পর কাউকে নিয়া ভাবতে ইচ্ছা করতাছে, নিজের জীবন সাজাতে মন চাইতাছে, জীবনে কখনো ইচ্ছে মতো সাজগোজ করা হয় নাই, সাজগোজ ভালো লাগতো না, কিন্তু আজকে সাজতে ইচ্ছে হচ্ছে, খুশিতে নাচতে ইচ্ছা করতাছে…
একদিনেই কল্পনায় অনেক স্বপ্ন সাজানো হয়ে গেছে, প্রতিটা ভোরে প্রিয় মানুষের হাত ধরে হাঁটতে চাই, প্রতিটা জোছনা মাখা রাতে অনেক অনেক গল্প করতে চাই, সারাজীবন একসাথে থাকতে চাই,আরো কতো স্বপ্ন, মীম মুচকি হাসে,এই হাসিতে আর দুঃখ নয়, আনন্দের মুক্তা ঝড়ে পড়ে… হয়তো অনেক দিন পর দুঃখের অন্ধকার কেটে , সুখের সূর্য উদয় হয় জীবনে..!
কিন্তু হঠাৎ করেই মনটা মলিল হয়ে যায়,ওনি আসবেন তো, আমাকে নিয়ে যাবেন তো ওনার সাথে..!
মনটা কেমন আনচান করছে, কেমন কু_গাইছে, ওনার কিছু হয়ে গেলো না তো..! আরে আমি এইসব কি ভাবছি, সবসময় তো চিন্তা করা লাগে, মীম নিজের মন কে নিজের বুঝ দেয়…!ওনি আসবেন, আসতে হবেই..?
——
সন্ধ্যা বেলায় জানালায় টোকা পড়ে,এই নাফু..!
নাফিসা জানালা খুলে দেখে কবীর আইছে,কিরে বাদর ভর সন্ধ্যায় এইখানে ক্যান..!
কাল নদীর পাড় থেকে সেই চলে আসছি আর খবর নাই, সারাদিন কী মনে পড়ে নাই, জানি তোর তো মনে পড়বো না,আমারি খালি হুদাই মনে পড়ে,তাই ভর সন্ধ্যায় দেখতে আইলাম…
আজকে বাড়িতে অনেক কাম, আম্মা বাড়ির বাহিরে যাইতে দেয় নাই…
কিসের এতো কাজ, তোর আবার বিয়া ঠিক করলো নাকি, অনেক দিন বিয়া খাই না, দাওয়াত দিস…!
সবসময়ই ফাজলামি ভালো লাগে না কিন্তু, তুই যা এখন আমার চোখের সামনে থাইকা,মাথা গরম করবি না।
আচ্ছা যাইতাছি, এখন বল কিসের এতো কাজ..?
কালকে নাকি শহর থেকে আব্বার বড়ো ভাইয়ের ছেলে আইবো,৭বছর পর গ্রামে আইবো.. তার জন্য এতো আয়োজন..?
সাবধানে থাকিস, আবার জানি বিয়ে করে না নিয়া যায়..
নাফিসা রাগে জানালা বন্ধ করে দিলো,সব সময় এতো আজাইরা কথা কয়,সহ্য করা যায় না…
কবীর সবসময় হাসি মুখে ফাজলামি করে থাকলেও তার মনেও একটা ভয় ঢুকে গেলো..
কেন আসছে তার ভাই এতো দিন পর..?
চিন্তা করতে করতে আসতে আসতে রওনা দিলো বাড়ির দিকে…
চলবে…..