পাগল প্রেমিকা পর্ব-২৬

0
525

#পাগল_প্রেমিকা
#Sharmin_Akter_Borsha (লেখনীতে)
#পর্ব_২৬

খুব কাছ থেকে ছেলের কন্ঠস্বর শুনে বর্ষা হঠাৎ পেছনে ঘুরে। অভ্র ঠিক বর্ষা’র কানের কাছে মুখ নিয়ে কথাটা বলেছিল। বর্ষা ঘুরে তাকাতেই অভ্র’র ঠোঁট জোড়ার সাথে ঠোঁট জোড়া মিলে গেলো। শুভ’র চিৎকারে অভ্র বর্ষার হুশ ফিরে আসল। মাথা তুলে দু’জনেই উপরে শুভর দিকে তাকালো সে এক পা উঁচু তে তুলে হাত দিয়ে ধরে ‘ ওরে বাবা রে পা টা গেলো রে ‘ বলছে। বর্ষা শুভর দিকে একবার তাকিয়ে পরক্ষনেই অভ্রর দিকে তাকালো। বুকের মধ্যে ধুকপুক শুরু হয়ে গেছে। এক ভ্রু উঁচু করে টেডি স্টাইল হাসি দিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল..

অভ্র- আর ইউ নার্ভাস বেবিডল?
বর্ষা- ধরুন এটা!

অভ্রর হাতে ট্রে থামিয়ে দিয়ে ঠোঁট মুছতে মুছতে সিড়ি দিয়ে নেমে চলে গেলো। ট্রে হাতে নিয়েই বর্ষা’র দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে সিঁড়ি তে বসে পরল।

শুভ- তুই ওখানে বসে না থেকে এসে আমাকে ধর।
অভ্র- ও সরি!

সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায় এক হাতে ট্রে আরেক হাত দিয়ে শুভকে ধরল।
________
রিমা- কি রে তুই এইভাবে ঠোঁট ঢলছিস কেন?
বর্ষা- তোকে বলা টা কি খুব দরকার?
রিমা- যাহ বাবা আমি কি এমন বললাম যে তুই এইভাবে রিয়েক্ট করছিস?
বর্ষা- বৃষ্টি কোই?
রিমা- তাপ্পির রুমে গেছে আর আসেনি।
বর্ষা- চল।
___________

দুই থেকে তিনবার দরজা ধাক্কা দিলে দরজা খুলে দিয়ে বেরিয়ে আসে তনিমা ও বৃষ্টি। ওদের দেখে কপাল কুঁচকে ভ্রু উঁচু করে প্রশ্ন করে।

রিমা- তাপ্পি তোমাকে আর বৃষ্টি কে দেখে মনে হচ্ছে তোমরা খুব কেঁদেছো?
বর্ষা- আমারও তাই মনে হচ্ছে!

তনিমা- হুম আমার কলিজা টা কে দুইদিন পর দেখছি তো তাই।
রিমা- ও সব ভালোবাসা শুধু বৃষ্টির জন্য আমরা তো বানের জলে ভেসে আসছি।
তনিমা- তোরাও আমার কলিজা।
বৃষ্টি- হিংসুটে!

চার বোন চারজনকে জরিয়ে ধরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল।
ওইদিকে জামাই আদর কাহাকে বলে। বিয়া যে কত্তো মজা গো খালি খাওন আর খাওন। শুধু খাবারের উপরেই রাখা হয়েছে তাদের।
_____

রাত প্রায় ১০ টা রুমের মধ্যে প্রবেশ করে তাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না। কান পেতে শুনতে পেলো বাথরুম থেকে টপটপ পানির আওয়াজ নিশ্চয়ই গোসল করছে। ওর অভ্যেস যখন তখন গোসল করার। কিন্তু তাকে তো এত শান্তিতে কোনো কিছুই করতে দিবে না। তাই হেঁটে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো আর জোরে জোরে ডাকতে শুরু করে বলে উঠে…

বৃষ্টি: ওই নষ্টা দরজা খোল এত রাতে গোসল করিস কেন? ‘
রিমন: বৃষ্টি সমস্যা কি তোমার?
বৃষ্টি: আমার কোনো সমস্যা নাই তুই দরজা খোল
রিমন: তুমি এখন বাথরুমে এসে কি করবা?
বৃষ্টি: নাচমু আমি! আরে আমার রুম আমার বাথরুম আমি যা ইচ্ছা করমু তুই দরজা খোল।

পেছন ঘুরে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নখ কামড়াচ্ছিল আর তখনই শুধু টাওয়াল পরে ভেজা গায়ে দরজা খুলে ঠাসস করে দরজা টান দিলো। নিজের সম্পূর্ণ ভাড় দরজার উপর দিয়ে রেখেছিল বৃষ্টি ভাবেওনি রিমন হুট করে দরজা খুলে দিবে। দরজা টান দিতেই বৃষ্টি পেছন দিকে পরতে নিবে তখন রিমন বৃষ্টি কে ধরে ফেলে। রিমনের লম্বা লম্বা কাকের বাসা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল বৃষ্টির মুখের উপর পরছে।
কাকের বাসা মানে (চুল)…
রিমনের দিকে সরু চোখে তাকাতেই রিমন বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে ধরে দাঁড় করালো। বৃষ্টি রিমনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে কিছু বলতে যাবে তার আগেই বৃষ্টির কোমড়ে হাত রেখে টান দিয়ে নিজের সামনে নিয়ে আসল। রিমনের গরম নিঃশ্বাস এসে পরছে বৃষ্টির মুখের উপর রিমনের দিকে তাকিয়ে থাকতে না পেরে খিঁচে দুই চোখ বন্ধ করে নেয়। দু কদম পা সামনে এগিয়ে হঠাৎ শাওয়ার অন করে দেয়। শাওয়ার থেকে ঝিরিঝিরি পানি এসে পরল বৃষ্টির মুখের উপর টুক করে চোখ বড়বড় করে তাকালো। বৃষ্টি নড়াচড়া করতে শুরু করল শাওয়ারের নিচ থেকে সরতে চাইলে রিমন তার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয় দু’জনেই এক সাথে ভিজতে শুরু করে।

রিমন: তোমার বাথরুম রাইট..?
বৃষ্টি: ———–
রিমন: তো তোমার বাথরুমে আমি একা কি করে শাওয়ার নেই বলো? দু’জনে এক সাথে নিচ্ছি এটা বেশ। দেখো পানির ফোঁটায় তোমাকে কত বেশি হ***ট লাগছে। ইচ্ছে করছে এখন তোমার ভেজা গোলাপী রাঙা ঠোঁটে চুমু একে দিতে।
বৃষ্টি: নষ্টা সর!

এক ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে রিমনকে দূরে সরিয়ে দিলো। রাগ দেখিয়ে দরজা মেলে বের হয়ে গেল বৃষ্টির পেছনে সেও বের হলো পেছন থেকে বৃষ্টির হাত ধরে টান দিলো। বৃষ্টি ভেজা ছিল আর শরীর বেয়ে পানি নিচে পরে ফ্লোর একটু পিছলে হয়ে যায়। রিমন হাত ধরে টান দিতেই দু’জনে এক সাথে ফ্লোরে পরে যায়। বৃষ্টি নিচে রিমন উপরে আর তখনই রুমের মধ্যে ঢুকে পরল রিমা ওদের দুজন কে এই অবস্থায় দেখে দুই হাত দিয়ে চোখ ঢেকে নিয়ে বলে উঠে…

রিমা: সরি সরি আমি কিছু দেখিনি!
দু’জনেই লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো রিমন বাথরুমে চলে গেলো। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মেলে বৃষ্টি রিমার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ল…

বৃষ্টি: কি হয়েছে?
রিমা: কিসের জন্য আসছিলাম আমি ভুলে গেছি!
বৃষ্টি: তো যা মনে পরলে পরে আসিস!
রিমা: আচ্ছা আমি গেলাম। কিন্তু বোন টুসটুস আমি কিন্তু কিছু দেখিনি…!
বৃষ্টি: রিমাহহহহ….
____

বিছানার উপর আধ শোয়া হয়ে ফোন স্ক্রল করছিল। তখন বৃষ্টি হাঁটু সমান একটা প্যান্ট আর শর্ট হাতার একটা টি-শার্ট পরে বের হয়ে আসলো ওয়াশরুম থেকে বুক পর্যন্ত গোতাম খোলা। দেখতে তো মাসা আল্লাহ লাগছে কিন্তু বৃষ্টি কে এমন দেখতে রিমনের অতিরিক্ত রাগ হচ্ছে। ইচ্ছে করে এমন করছে শুধু জ্বালানোর জন্যে কথায় আছে না। ‘ দেখবে আর জ্বলবে লুচির মতো ফুলবে ‘ ঠিক এমনটাই হচ্ছে রিমনের সাথে। চুলে খোঁপা বাধতে বাধতে বিছানায় এসে শুয়ে পরল। এক নজর রিমনের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠে..

বৃষ্টি: নষ্টা এভাবে তাকাইস না নজর লাগবো আমার।
রিমন: বলেছিলাম আমার সামনে এইসব ড্রেস পরে না আসতে তবুও কেনো আসো?
বৃষ্টি: আমিও বলেছিলাম এসব না পরে আমি ঘুমাতে পারি না। এখন আমাকে বিরক্ত করবেন না আমি ঘুমাবো!.
রিমন: পাগল!
বৃষ্টি: কি বললেন?
রিমন: কিছু না যা ঘুমা।

রিমনের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পরল। রাতে বৃষ্টির ঘুম ভেঙে যায় চোখ খুলে ভাবছে না জানি রাত কয়টা বাজে এক হাত দিয়ে চোখ ঢলতে ঢলতে মোবাইল হাতে নেয় টাইম দেখে মাথায় জেনে পাহাড় ভেঙে পরে। যখন ঘুমিয়ে ছিলো তখন বেজে ছিলো ১২টা বেজে ১০মিনিট আর এখন বাজে ১২টা ২৫মিনিট মানে কি কখন ঘুমালো। ভাবতে ভাবতে পেছনে ঘুরলে বিছানায় রিমনকে দেখতে পেলো না। বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমের সামনে গেলো সেখানেও রিমন ছিল না। বেলকনি থেকে কারো কন্ঠস্বর ভেসে আসছে। শুরুতে ভূত মনে করে ভয় পেয়ে যায়। পরক্ষণেই রিমনের ভয়েস শুনে বেলকনির সামনে যায়। এত রাতে ফোনে কার সাথে কথা বলছে আড়ি পেতে শোনার চেষ্টা করল। তেমন কোনো কথাই শুনতে পেলো না। রাগ নিয়ে রিমনের কাছে গিয়ে হাত থেকে টান দিয়ে মোবাইল টা ছুঁ মেরে নিয়ে নিলো। ফোনটা নিয়ে লাউডস্পিকার দেয় ফোনের অপর পাশ থেকে একটা মেয়ের ভয়েস শোনা যাচ্ছে সে বলছে…

– সোনা আই মিস ইউ সো মাচ্.! তোমার বিয়ে হয়েগেছে তাতে আমার কিছুই যায় আসে না আমি আজও তোমাকে ভালোবাসি। তোমার বউয়ের জায়গায় ও থাকবে আর আমি আমার জায়গায় কিছু বলো জান তুমি কি আমাকে একটুও মিস করো না জান।
কিছু তো বলো আই লাভ ইউ জান মিস ইউ!

কথাগুলো শুনে বৃষ্টির মাথায় রক্ত উঠে যায় মাত্রারিক্ত রাগ ও ক্ষোপ নিয়ে কল কেটে দেয়। রিমনের দিকে তাকিয়ে চেচিয়ে বলে।

বৃষ্টি: এইসব চলে মোবাইলে এত রাতে বেলকনিতে এসে। ভেবেছিলাম ভালো হয়ে গেছিস কিন্তু ভুলে গেছিলাম তুই নষ্টা আর কখনো ভালোও হবি না। কুত্তার লেজ কখনো সোজা হয় না তোর পক্ষেও ভালো হওয়া সম্ভব না ছিহহ..!
মোবাইল টা হাতে ধরিয়ে দিয়ে রুমে চলে আসলো। বিছানার উপর থেকে বালিশ নিয়ে সোফার উপর গিয়ে শুয়ে পরল। রিমনকে ওর পক্ষে কিছু বলার সুযোগই দিলো না। পুরো রাত বেলকনিতেই দাঁড়িয়ে পার করে দিলো।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বিছানার উপর তাকালে কোথাও রিমনকে দেখতে পেলো না। রুমের দরজা ভেতর থেকেই লক করা ছিলো ওয়াশরুমেও যায়নি। সোফা থেকে উঠে বেলকনিতে গিয়ে দেখল চেয়ারে বসে ঘুমাচ্ছে! রিমনের দিকে তাকালো খানিকটা সময় তার চেহারার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো রিমন এখনও বেলকনিতেই। কিচেন থেকে কড়া করে কফি বানিয়ে নেয়।
বেলকনির সামনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ভেতরে ঢুকে বলে উঠে…

বৃষ্টি: রিমন…

এক ডাকেই ঘুম ভেঙে গেলো। উঠে এক হাত দিয়ে চোখ ঢলতে ঢলতে বৃষ্টির দিকে তাকালো। পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হুট করেই উঠে দাঁড়ালো আর বলতে শুরু করল।

রিমন: সরি কাল রাতে এখানে বসেই ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
বৃষ্টি: আমি জানতে চাইনি নিন আপনার কফি..

কফির মগ তার দিকে বাড়িয়ে দিলো। কফির মগের দিকে একবার তাকিয়ে আবারও বৃষ্টির দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকালো সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কফির মগ বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রিমন কফির মগ হাতে নিলে বৃষ্টি চলে যেতে নেয় তখন বৃষ্টির হাত ধরে রিমন বলে উঠে…

রিমন: বৃষ্টি তুমি আমাকে ভুল বুঝছো কাল রাতের মেয়ে টা কে আমি নিজেও জানি না আমি আগের মতো নেই বিশ্বাস করো আমি পাল্টে গেছি। আগের সব কিছু আমি অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি। রাতে তখন তুমি ঘুমিয়ে গিয়েছিলে হুট করে কল আসে তোমার ঘুমের ডিস্টার্ব হবে ভেবে আমি বেলকনিতে আসি। কল রিসিভ করে শুনি ওই মেয়ে ওইসব বলছিল। আমি তাকে বলছিলাম সে রং নাম্বারে কল দিয়েছে কিন্তু সে মেয়ে কথা মান ছিলোই না। তখনই তুমি চলে আসো আর ওইসব কথা শুনো৷ বিশ্বাস করো বৃষ্টি আমি তাকে চিনি না।

বৃষ্টি: হইছে বলা? সারারাত বসে বসে ভাবছেন না সকালে বানিয়ে কি মিথ্যা বলবেন। ও সরি আপনার তো ভাবতেও হয় না। সব কিছু আপনার মাথায় আগে থেকেই সেট করা থাকে। আপনি কি মনে করেছেন আমি ওই আগের মতো আছি যা যখন যা বলতেন সব বিশ্বাস করতো আপনার প্রতিটা মিথ্যা কথা সত্য মনে করতো কিন্তু না আমি নেই আগের মতো বিশ্বাস করি না আপনাকে আর ভালোও বাসি না আপনার মতো নষ্টাকে। কফি খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন। তারপর ফ্রেশ হয়ে নিচে আসবেন সবাই অপেক্ষা করছে।

রিমন: বৃষ্টি…

সে আর কিছু শোনার জন্য দাঁড়ালো না চলে গেলো। কফির মগ হাতে নিয়ে গ্রিল ধরে দাড়িয়ে বাহিরটা দেখছে ঠিক তখনই পেছন থেকে বলে উঠে…

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here