পারমিতা” পর্ব-৪২

0
1603

#পারমিতা
পর্ব ৪২
_নীলাভ্র জহির

সকালবেলা পারমিতা অফিস যাওয়ার জন্য বেরিয়েছে। এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো। দরজা খুলতেই রোদ পারমিতাকে বুকে জড়িয়ে ধরে গভীর ভাবে চুমু খেলো। ভীষণ হকচকিয়ে গেছে পারমিতা।
নিজেকে সামলে নিয়ে পারমিতা বললো, এসব কি? ঘরে প্রীতুল আছে।
পিছন থেকে দৌড়ে এসে প্রীতুল রোদের হাত ধরে বলল, রোদ তুমি এসেছো?
রোদ প্রীতুলকে কোলে নিয়ে ওর গালেও আলতো করে চুমু খেলো।
তারপর পারমিতাকে বলল, আজকে অফিসে যেতে হবে না। দ্রুত রেডি হয়ে নাও। আমার সঙ্গে আমাদের বাসায় যাবে।
পারমিতা এবার আরো বেশি অবাক হল। রোদ তাদের দুজনকে জড়িয়ে ধরে বলল, আমার মা অবশেষে তোমার সঙ্গে দেখা করতে রাজি হয়েছে। মা বলেছে তোমাকে বাসায় নিয়ে যেতে। প্লিজ তাড়াতাড়ি তুমি একটা শাড়ি পড়ে সুন্দর করে সেজেগুজে রেডি হয়ে নাও।
স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল পারমিতা। সে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। রাসিফের কথা রোদকে বলবে কিনা সেটা নিয়েও চরম দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে। রোদ জানতে চাইল, কি হয়েছে তোমাকে এমন শুকনো দেখাচ্ছে কেন?
– কিছুই হয়নি রোদ। আজকে বাসায় যাবো না। অফিসে আমার কিছু কাজ আছে। সেই কাজগুলো আমাকেই করতে হবে। প্লিজ এখন আমরা অফিসে যাব।
– আমি ঘুম থেকে উঠে এখানে ছুটে চলে এসেছি। ব্রেকফাস্ট টেবিলে মা আমাকে জোর করে খাইয়ে বলল, মেয়ে টাকে এত ভালবাসিস? যার জন্য মায়ের উপর রাগ করে আছিস। অফিসে যাওয়ার আগে মাকে বলে যাচ্ছিস না, বাসায় এসে মাকে জড়িয়ে ধরিস না। মায়ের কথা শুনে আমি বললাম, মা তুমি ওর সঙ্গে দেখা করবে প্লিজ। কথা বললে তোমার ওকে খুব ভালো লাগবে। তারপর মা বলল ঠিক আছে। বাসায় নিয়ে আয়। আর কি দেরি করা যায় তুমি বলো? প্লিজ এখনই চলো। যত দ্রুত সম্ভব আমি তোমাকে আমার করে নেব। অফিসের চিন্তা আপাতত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও। তোমাকে আর অফিসে যেতে হবে না।
– এভাবে হুটহাট করে কিছু একটা বললেই হয় না। এতটা ছেলেমানুষি করা আপনাকে মানায় না। আজকে আমাকে অফিসে যেতে হবে। কাজগুলো গুছিয়ে নিতে হবে। কাজের সঙ্গে আমি কখনো কম্প্রোমাইজ করিনা।
– পারমিতা কি হয়েছে তোমার? কেন এরকম করছ? মা তোমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছে তুমি কি এটা শুনে খুশি হওনি-
পারমিতা বলল – হ্যাঁ খুশি হয়েছি।
– তোমার চোখে মুখে কোন আনন্দই তো দেখতে পাচ্ছি না। সত্যি করে বলতো কি হয়েছে তোমার? কাল সকাল থেকে তোমাকে খুব অন্য মনস্ক দেখাচ্ছে।
পারমিতা বলল, আরে ধুর। আমার কিছু হয়নি। চলুন আমরা এখন অফিসের দিকে বের হব। প্রীতুল কে স্কুলে রেখে যেতে হবে।
– আর আমার বাসায় কবে যাবে?
– যাব । সময় হলেই যাব।
রোদ ভীষণ হতাশ হলো। তার এই ছুটে আসা পারমিতার কাছে কি কোন পাত্তাই পেল না। নিজেকে বড্ড মূল্যহীন মনে হচ্ছে রোদের। তার ছোট ছোট আবেগ, ছোট ছোট পাগলামিগুলো কে কি পারমিতা গুরুত্ব দিচ্ছে না? ভালোবাসার সম্পর্কে পাগলামি গুলোকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হয়। এর ব্যতিক্রম হলে ভালো লাগেনা রোদের।
শুকনো মুখে রোদ বাসা থেকে বের হলো। একসঙ্গে গাড়িতে উঠলো তারা। প্রীতুলকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে পারমিতাকে নিয়ে অফিসের দিকে রওনা দিল। গাড়িতে পারমিতা চুপচাপ বসে আছে। তাকে অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে। বিষন্নতার কারণ জানতে ইচ্ছে করছে রোদের। কিন্তু কিছুটা অভিমান থাকায় রোদ কোন কথা বলল না।

অফিসের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার পর পারমিতা নিজে থেকে বলল, রাগ করেছেন?
– না, আমি রাগ করতে জানিনা।
– জানেন না?
– না, জানি না। অথবা বলতে পারো জানিনা কার সঙ্গে আমার রাগ করার অধিকার আছে।
পারমিতা চমকে উঠে রোদের দিকে তাকালো। অবাক হল পারমিতা। রোদ এর কন্ঠে স্পষ্ট অভিমান টের পেল সে। নিজেকে তার বড্ড অপরাধী মনে হল। কিন্তু কিইবা করবে সে। বড্ড দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে পারমিতা। এই দোটানা তার সন্তানকে নিয়ে, তার অতীতকে নিয়ে। একই সঙ্গে তার ভবিষ্যৎ কে নিয়েও।
গতকাল রাসিফের কথাগুলো শোনার পর থেকে পারমিতার মনে এক অদ্ভুত পরিবর্তন ঘটে গেছে। রাসিফের প্রতি এক ধরনের সহানুভূতি অনুভব করছে পারমিতা। রাসিফ তার ভালোবাসার মানুষ ছিল বলে নয়। কিংবা রাসিফের সঙ্গে তার খুনসুটিভরা সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ছিল বলেও নয়। পারমিতার খারাপ লাগার কারণ হচ্ছে রাসিফ তার সন্তানের বাবা। পৃথিবীতে সব কিছু পরিবর্তন হয়ে গেলেও সে কখনো প্রীতুল এর বাবার এই পরিচয় বদলাতে পারবে না। রাসিফ আজীবন প্রীতুলের বাবা হয়েই থাকবে। প্রীতুলের অধিকার আছে তার বাবার পরিচয় জানার। রাসিফকেও এই একই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা সমীচীন মনে হচ্ছে না। সারা জীবন এই দায়টা তাকে ভোগান্তিতে ফেলে রাখবে। পারমিতা কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না।

অফিসের গেটে পৌঁছে গেছে তারা। পারমিতা বলল, গাড়ি থামান। আমি এখানে নেমে যাব।
– এখানে কেন নামতে হবে? ভেতরে চলো। দুদিন পরে তুমি আমার স্ত্রী হয়ে যাচ্ছ। এখন আর কারো সামনে সম্পর্কটাকে লুকোচুরি করার কোন মানে হয় না।
– লুকোচুরি নয়। আমি আমার আত্মসম্মান নিয়ে চলতে চাই।
– এতই যখন আত্মসম্মান তাহলে আমার গাড়িতে না এলেই পারতে।
কথাটা বলেই রোদ গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে দিল। ভীষণ অবাক হল পারমিতা। এই প্রথম রোদের মুখ থেকে এমন কথা শুনল সে। রোদ কোনদিনও তার সঙ্গে এতটা রেগে কিংবা এই ধরনের কটু কথা শোনায় নি। পারমিতার চোখে পানি চলে এলো। সম্পর্কের কয়েক দিন যেতে না যেতেই এত বড় কথা বলে ফেলল রোদ? ভবিষ্যতে না জানি আরো কত কি সইতে হবে তাকে!
দুঃখ ভরা মন নিয়ে পারমিতা দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পড়ল। রোদের সঙ্গে কোনো কথা না বলে হনহন করে অফিসের ভিতরে ঢুকে গেল পারমিতা। রোদ নিজের কথায় নিজেই ভিরমি খেয়ে গেছে। রাগের বশে এই ধরনের কথা সে পারমিতাকে বলে ফেলতে পারে এটা কখনোই কল্পনাও করেনি সে। নিশ্চয়ই পারমিতা অনেক কষ্ট পেয়েছে। তার চলে যাওয়ার ধরনই বলে দিচ্ছে সেটা। এরপর সম্পর্কটা আদৌ টিকে থাকবে কিনা সেটা নিয়েই সন্দেহ হচ্ছে রোদের।
রোদ নিজের চেম্বারে চলে এলো। পিয়নকে পাঠিয়ে দিলো পারমিতাকে ডাকতে? কিন্তু পারমিতা সাফ জানিয়ে দিল, সে এখন আসতে পারবে না। কিছুক্ষণ পর রোদ নিজেই এল পারমিতার ডেস্কে।
বলল, আই এম সরি পারমিতা। আমি রাগের বশে তোমার সঙ্গে..
পারমিতা রোদকে থামিয়ে দিয়ে বলল, চুপ করেন। আমি আপনার কোন কথা শুনতে চাই না। প্লিজ আপনি আপনার চেম্বারে ফিরে যান। এখানে কোন রিয়াক্ট করবেন না।
রোদ বলল, কেন করব না। তুমি আমাকে একটু বোঝার চেষ্টা করো। তখন আমার মাথায় অনেক রাগ উঠে গিয়েছিল। তোমার কাটাকাটা কথা শুনে তাই আমিও নিজেকে সামলে রাখতে পারিনি। প্লিজ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
পারমিতা বলল, এসব ন্যাকামো বাদ দিন। আমাকে আমার মত থাকতে দিন। প্লিজ আপনি এখান থেকে যান।
রোদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। তার সন্দেহ ঠিক। সত্যিই কি তবে পারমিতা এই সামান্য কারণে তার জীবন থেকে হারিয়ে যাবে? রোদের ইচ্ছে করলো চিৎকার করে কাঁদতে। সে বলল, পারমিতা প্লিজ। আমাকে আর কষ্ট দিও না। আজকের মত মাফ করে দাও। আর কোন দিনও আমি তোমার সঙ্গে এই ধরনের কথা বলবো না।
– সত্যি টাই তো বলেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে। আসলে আমার যা প্রাপ্য সেটা আমি কখনই ভুলে যেতে পারিনা। হয়তো ক্ষণিকের জন্য ভুলে গিয়েছিলাম। আপনি আবার সেটা স্মরণ করিয়ে দিলেন।
– তুমি আমাকে ভুল বুঝছো পারমিতা। আমার মনে হয় তুমি আমাকে এখনো ভালোবাসতেই পারোনি।
– আমারও সেটাই মনে হয় জানেন। আমি হয়তো আপনাকে ভালোবাসি না। আর ভালোবাসি না বলেই আপনার জন্য আমার মনে কোন মায়া নেই। আপনি কিসে কষ্ট পান আপনি কিসে আনন্দ পান সেসব ভাবার সময় আমার নেই। আমার পার্সোনাল লাইফে আপনি আর নাক গলাবেন না। প্লিজ এখান থেকে যান। আমাকে একা থাকতে দিন।
রোদের বুক ভেঙে যেতে লাগলো। ভীষণ কষ্ট হল তার। পারমিতা আজ তার সঙ্গে এরকম আচরণ করছে যা কল্পনাও করতে পারবে না রোদ। রোদ সেখান থেকে সরে এসে অফিসের মাঝখানে দাঁড়ালো। পুরো অফিসের সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলল, এক্সকিউজ মি। আজকে আমি সবার সামনে একটা কথা অ্যানাউন্স করতে চাই।
পারমিতা অবাক হল। ইশারায় সে রোদকে নিষেধ করতে চেষ্টা করল। কিন্তু রোদ পারমিতার দিকে ভ্রুক্ষেপ করলো না। সে সবার উদ্দেশ্যে বলল, আপনার নিশ্চয়ই সবাই মিস পারমিতা কে চেনেন? তিনি একজন অসম্ভব প্রতিভাবান এবং সম্ভাবনাময়ী নারী। আপনারা অনেকেই হয়তো তাকে খুব ভালো করে জানেন। সবাই কি তাকে চেনেন?
সকালে এক বাক্যে বলে উঠলো জি স্যার।
-উনার সম্পর্কে দু একটা কথা বলুন।
ধীরে ধীরে দু-একজন দাঁড়িয়ে পারমিতার সম্পর্কে ভালো ভালো কয়েকটা কথা বলল। ডেস্কে মাথা নিচু করে বসে আছে পারমিতা।
রোদ বলল, ধন্যবাদ, ধন্যবাদ সবাইকে। আপনারা সবাই সত্যিটাই বলেছেন। পারমিতা সত্যিই অনেক মেধাবী একজন মেয়ে। তার আচার-আচরণ, সবদিক থেকেই তিনি খুব ভালো মনের একজন মানুষ। আপনাদের সবার মতোই অফিসের একজন কর্মী হিসেবে আমি তাকে অনেক পছন্দ করি। এবার এর বাইরে একটা কথা বলতে চাই। পারমিতাকে আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি সে এই অফিসে জয়েন করার অনেক আগে থেকেই চিনি। ব্যক্তিগতভাবে আমি তাকে মন থেকে ভীষণ পছন্দ করি। সে যখন অন্য একটা অফিসে চাকরি করতো, আমার বাবা পারমিতা কে আমার পাত্রী হিসেবে পছন্দ করেছিলেন। কিন্তু মিস পারমিতা রাজি হননি। প্রত্যেকের জীবনে ব্যক্তিগত কিছু কারণ থাকে। পারমিতার হয়তো বিলাসবহুল জীবন পছন্দ নয়। সে সাধারন জীবন পছন্দ করে। তাই সে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়নি। গত কয়েক মাস ধরে আমি আমার বাবার প্রস্তাবের বাইরে গিয়েও পারমিতাকে একজন প্রেমিক হিসেবে ইমপ্রেস করার অনেক চেষ্টা করেছি। সে আমাকে পছন্দ করে বলে আমার মনে হয়। কিন্তু আমার এই ধন-সম্পদ, আমার স্ট্যাটাস আমার আর্থিক অবস্থা এসবের কারণে সে আমার সঙ্গে সারা জীবনের জন্য থাকতে পছন্দ করবে না। ঠিক এই কারণেই সে আমার সঙ্গে ঘর বাঁধতে রাজি নয়। তাই আমার প্রেমটা কেও সে নিতান্তই অবহেলার চোখে দেখছে। আপনারা তাকে বোঝান। তাকে বলুন আমি তাকে পাগলের মতো ভালোবাসি। সমস্ত স্ট্যাটাস সবকিছু ভুলে আমি সারাজীবন তাকে শুধু ভালোবেসে যেতে চাই। তার এই দ্বিধাদ্বন্দ্বের কারণে আজকে আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি আমার বাবা মায়ের সম্পত্তি কিংবা বাবার কোম্পানি থেকে সমস্ত অধিকার নিজ দায়িত্বে ছেড়ে দিচ্ছি। আমি কখনো বাবার অফিসে বসব না আর বাবার কাছ থেকে কোনো আর্থিক সহায়তা নেব না। আমি আমার নিজের যোগ্যতায় একটা চাকরি কিংবা ব্যবসা করব এবং নিজের উপার্জনে আমি আমার স্ত্রীকে খুশি রাখতে এবং ভালো রাখতে চেষ্টা করব। সেখানে হয়তো বিলাসিতা কিংবা জৌলুস থাকবে না তবে আমার ঘর ভর্তি ভালোবাসা থাকবে।

পুরো অফিস হাততালি দিয়ে উঠলো। কয়েকজন মেয়ে গিয়ে পারমিতাকে ডেক্স থেকে তুলে এনে রোদের পাশে দাঁড় করিয়ে দিল। মাথা নিচু করে রেখেছে পারমিতা। লজ্জায় এবং বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে সে মাথা তুলতে পারছে না। রোদের এই সিদ্ধান্ত এবং কর্মকাণ্ডে পারমিতা বরাবরের মতোই অবাক হয়েছে।
রোদ বলল, আজকে আমি আপনাদের সবাইকে মিষ্টি খাওয়াবো। পারমিতা যদি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয় তবে আমি হয়তো আর এই অফিসে চাকরি ও করবো না। সে যেন তার স্বাচ্ছন্দ মত এই অফিসে আসতে পারে। আমি যেন কখনো তার অস্বস্তির কারণ না হই। সে যেন তার আত্মসম্মান নিয়ে মাথা উঁচু করে সবসময় চলতে পারে।
পারমিতা চমকে উঠলো। অবাক দৃষ্টিতে রোদের দিকে তাকিয়ে রইলো পারমিতা। তার সমস্ত রাগ গলে গিয়ে চোখে পানি চলে আসতে লাগলো। রোদের সঙ্গে কিছুক্ষণ আগে সে অত্যন্ত খারাপ আচরন করেছে। সেগুলোর জন্য ভেতরে ভেতরে অনুতাপ জাগতে লাগলো। কাজটা সে একদমই উচিত করেনি। রোদ তাকে সত্যিই নিঃস্বার্থভাবে ভালবাসে সেটা পারমিতার আর বুঝতে বাকি নেই। পারমিতার ইচ্ছে করছিল ছুটে এসে রোদের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার কাছে ক্ষমা চাইতে। তার চোখের জলে রোদের বুকটা ভিজিয়ে দিতে। কিন্তু অফিস ভর্তি লোকের সামনে সে এই কাজটা করতে পারলো না। তার জায়গায় রোদ থাকলে নিশ্চয়ই করত। রোদ অনেক পাগলামি করতে পারে। সে পারে না। রোদের প্রতি তার আর কোন অভিমান রইল না। নিজের ডেস্কে ফিরে গেল পারমিতা।
রোদ বলল, আমাদের পিয়ন সবাইকে মিষ্টি দিয়ে যাবে। আর আপনারা অবশ্যই আপনাদের পারমিতা ম্যাডামকে একটু ভালো করে বুঝাবেন। সবাই ভাল থাকবেন। আর আমার জন্য এবং বিশেষ করে আমাদের জন্য দোয়া করবেন। যেন পারমিতা ম্যাডামের হৃদয়টা গলে এবং সে আমার ভালোবাসাকে বুক পেতে গ্রহণ করে।

আবারো হাততালি দিল সবাই। রোদ পারমিতার দিকে এক পলক তাকিয়ে নিজের চেম্বার এ চলে গেল। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে বসে রইল পারমিতা। একে একে কয়েকজন কলিগ এসে তার পাশে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো, রোদ স্যার অনেক ভালো মনের মানুষ। কাউকে কতটা ভালবাসলে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া যায় সেটা আমাদের জানা নেই। উনি আপনাকে অনেক ভালোবাসেন। আমরা এখন বুঝতে পারছি কেন উনি আপনার জন্মদিনে সারপ্রাইজ দিয়েছেন।

সবাই এভাবে পারমিতার সামনে রোদের অনেক প্রশংসা করে চলে চলে গেল। মাথা নিচু করে বসে রইল পারমিতা। তার ভীষণ মাথাব্যথা করছে। অফিস থেকে বেরিয়ে যেতে ইচ্ছা করছে। দ্রুত সব কাজ গুছিয়ে মাহাতাব স্যারের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল পারমিতা।

বাসায় ফিরে মোবাইল বন্ধ করে বালিশের নিচে রেখে পারমিতা অনেকক্ষন ধরে শাওয়ার নিল। গোসল থেকে বেরিয়ে অস্বস্তিভাব কিছুটা কমলো তার। বাথরুমে ঝরনার নিচে বসে সে অনেকক্ষণ কান্না করেছে। চোখ দুটো লাল হয়ে ফুলে আছে তার। বুকে বালিশ জড়িয়ে ধরে পারমিতা বিছানায় শুয়ে রইলো। কিছু সিদ্ধান্ত সে সময়ের উপর ছেড়ে দিতে চায়।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here