পার্থক্য পর্ব-৪

0
1398

পার্থক্য ৪ পর্ব। #রিফাত_হোসেন। সারারাত জেগে ছিলো তাই তারিনকে আর ডাকলো না রিফাত। কিছুক্ষনের মধ্যে রিফাত ও ঘুমিয়ে পড়লো। রংপুর পৌঁছানোর কিছুক্ষন আগে রিফাতের ঘুম ভেঙে গেলো। পাশে তাকিয়ে দেখে এক মায়াবী চেহারার মেয়ে তার কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিফাত। রিফাত ভাবছে, মেয়েটা কত সহজেই আমার সাথে মিশে গেলো। খুব তাড়াতাড়ি বিশ্বাস করে ফেলে সবাইকে। সারারাত একটা অপরিচিত ছেলের সাথে থাকার পরেও মুখে কোন ভয়ের ছাপ ছিলো না। এইরকম একটা মেয়ের সাথে খারাপ কিছু করার চিন্তা একমাত্র আশিকের মতো মানুষদের মনে আসতে পারে। তারিনের দিকে একবার তাকালে আর চোখ সরাতে পারবে না কেউ। রিফাত খুব সুন্দর করে তারিনের মায়াবী রূপের প্রসংশা করছে। সব দিক দিয়ে রোমান্টিকতা থাকলেও কিছু একটা নেই নেই মনে হচ্ছে রিফাতের। এদিক ওদিক তাকিয়ে রোমান্টিকতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে কিন্তু তেমন কিছু পেলো না।বাসের সবাই মরার মতো ঘুমাচ্ছে। পিছনে থাকা লোকটার দিকে তাকিয়ে দেখে,সেও ঘুমাচ্ছে। লোকটার মাথার মাঝখানে কোন চুল নেই। রিফাত মনে মনে লোকটা কে টাকলা বস বলছে, আর হাসছে। লোকটার দিক থেকে মনোযোগ সরিয়ে আবার তারিনের মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো রিফাত। তারিনের পাশের জানালাটা খুলে দিতেই কিছুটা ঠান্ডা হাওয়া ভিতরে এসে গেলো। তারিন শিউরে উঠলো, কাধে মাথা রেখেই রিফাত কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। রিফাতের হার্টবিড উঠানামা করতে শুরু করলো। তারিন এখনও ঘুমিয়ে আছে। চুলগুলোর জন্য এখন ভাল করে তারিনের মুখ দেখা যাচ্ছে না। রিফাতের ইচ্ছে করছে নিজের হাত দিয়ে তারিনের মুখের সামনে থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিতে। কিন্তু সাহস পাচ্ছে না। বার বার হাত কেঁপে উঠছে। কাঁপা কাঁপা হাতে তারিনের মুখের সামনে হাত নিলেও চুলগুলো ধরার সাহস পাচ্ছে না রিফাত। হঠাৎ তারিন রিফাতের হাত ধরে ফেললো। লজ্জায় আর ভয়ে রিফাত চুপ করে রইলো। তারিন বলল – ‘আপনাকে যা ভেবেছিলাম আপনি তার থেকেও বেশি লুচ্চা।’ তারিনের কথায় রিফাত চমকে উঠলো। কী বলবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না রিফাত। তাই চুপ করেই রইলো। তারিন অন্য দিকে মুখ নিয়ে মিটমিট করে হাসছে। আর ভাবছে ছেলেটা কত ভাল। সারারাত একটা মেয়েকে একা পেয়েও খারাপ কোন চিন্তা মাথায় আনেনি। আমি ঘুমিয়ে থাকার সময় চুপ করে শুধু আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। চুলগুলো সরিয়ে দেওয়ার সাহস ও পাচ্ছিলো না। তারিন রিফাত কে আবার জিজ্ঞেস করলো – ‘কী হলো বলুন, আপনি আমার চুলে হাত দিচ্ছিলেন কেন?’ – ‘না মানে। চুলগুলো দিয়ে আপনার মুখ ডেকে যাচ্ছিলো, তাই সরিয়ে দেওয়ার জন্য হাত দিচ্ছিলাম।’ – ‘আমি তো দেখলাম আপনি ইচ্ছে করেই জানালা খুলে দিছেন। যেন আমার চুলগুলো মুখে এসে পড়ে।’ – ‘তারমানে আপনি এতক্ষণ জেগে ছিলেন।’ রিফাতের কথা শুনে তারিন মাথা নিচু করে ফেললো। তারপর বলল- ‘আসলে ঠিক তা না।’ রিফার তারিনকে বলল – ‘আসলে এটাই ঠিক। আপনি তো আমার থেকেও লুচ্চা।’ – ‘আমি মোটেও লুচ্চা নই।’ – ‘দেখলাম তো সব।’ তারিন আমতা আমতা করতে করতে বলল -‘কী দেখলেন?’ – ‘জেগে জেগে একটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরেন। আবার আমাকে বলছেন আমি নাকি লুচ্চা।’ – ‘আমি তো শুধু দেখতে চেয়েছিলাম, আমি আপনাকে জড়িয়ে ধরার পর আপনি কী করেন।’ – ‘সারারাত আমার সাথে থেকেও আপনি বুঝলেন না।’ – ‘কী বুঝবো?’ – ‘শুনুন আমি কিউট একটা ছেলে। আর কিউট ছেলেরা কখনও খারাপ হয় না।’ রিফাতের কথা শুনে তারিন হাসতে শুরু করলো। রিফাত আবার একমনে তারিনের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসি দেখছে। তারিন হাসি থামিয়ে বলল – ‘দেখলেন তো আপনি কতটা লুচ্চা।’ – ‘আবার কী করলাম।’ – ‘আপনি হলে একটা কিউটের ডিব্বা।’ – ‘এটা আবার কী?’ – ‘আপনি এমনিতেই সাধু সেজে থাকেন, কিন্তু আড়ালে ঠিকই লুচ্চামি করেন।’ – ‘আপনি কিন্তু এবার বেশি বেশি করছেন।’ – ‘সত্যি কথা বললেই দোষ, তাই না।’ – ‘কী সত্যি কথা?’ – ‘আমরা যখন ওই দোকানে আগুনের কাছে ছিলাম। তখন আপনি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তারপর আমি যেই আপনার দিকে তাকিয়েছি, তখনই আবার চোখ সরিয়ে নিয়েছেন। আবার আমি ঘুমিয়ে পড়ার পর আপনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। এখনও আপনি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। – ‘দেখুন, আপনি যদি আর একটা কথা বলেন। তাহলে এই জানালা দিয়ে আপনাকে ফেলে দেবো। – ‘ইহ্, আমি কী চুপ করে বসে থাকবো নাকি। আমিও আপনাকে দরজা দিয়ে ফেলে দেবো।’ এগুলো বলে রিফাত আর তারিন ঝগড়া শুরু করে দিলো। এদের ঝগড়া শুনে পিছনের সিটে বসা লোকটা জেগে গেলো। তারপর বলল -‘ আচ্ছা তোমাদের সমস্যা কী বলতো। সেই কখন থেকে ঝগড়া শুরু করছো। এই আজকাল কার পোলাপান গুলোর একটাই সমস্যা, শান্তি মতো যে একটু বসে থাকবে, তা না। লোকটার কথা শুনে রিফাত রাগে গজগজ করে বলল -‘আমাদের যা ইচ্ছে আমরা তাই করবো, তাতে আপনার কী? বাস কী আপনি কিনে রেখেছেন নাকি? রিফাতের কথা শুনে লোকটা আরও রেগে গেলো। শুরু হয়ে গেলো দু’জনের মধ্যে ঝগড়া। তারিন কানে হাত দিয়ে হাসছে। বাসের কন্টাকদার এসে দু’জনের ঝগড়া থামিয়ে দিলো। তারিন এখনও হাসছে। তারিনের হাসি দেখে রিফাত জিজ্ঞেস করলো -‘আপনি এত হাসছেন কেন?’ – ‘আপনাদের ঝগড়া দেখে।’ – ‘এতে হাসার কী হলো।’ – ‘না কিছুনা।’ – ‘শুনুন আমরা প্রায় চলে এসেছি। আপনি স্ট্যান্ড থেকে বাড়ি যেতে পারবেন তো।’ – ‘আরে সমস্যা নেই। স্ট্যান্ড এর পাশেই আমাদের বাড়ি। কিন্তু আপনি যাবেন কোথায়?’ – ‘জানিনা, কোন দোকান থেকে ফোন দিতে হবে বন্ধুদের। তারপর ওরা এসেই নিয়ে যাবে।’ – ‘ওহ্ আচ্ছা। – ‘আপনার সাথে তো আর দেখা হবে না আমার।’ – ‘আপনার ফোন নম্বর টা দিয়ে যান। আমার ফোন তো আশিক ভেঙে ফেলেছে।’ – ‘ওহ্। তাহলে আমার নম্বর টা আপনি নিয়ে যান।’ – ‘ হু দিন।’ রিফার কন্টাকদারের কাছ থেকে একটু কাগজ আর কলম নিয়ে নম্বর লিখে তারিনকে দিলো। কিছুক্ষন পর গাড়ি স্ট্যাডে থেমে গেলো। রিফাত আর তারিন বাস থেকে নেমে দাঁড়িয়ে রইলো। কেউ কোন কথা বলছে না। দু’জনেই চুপ করেই দাঁড়িয়ে আছে। নীরবতা ভেঙে রিফার বলল – ‘তাহলে যান আপনি।’ – ‘আপনি এখানে একা দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি।’ – ‘দেখি আশেপাশে কোন দোকান থেকে একটা ফোন করতে পারি নাকি।’ – ‘এখানে তো কোন দোকান নেই, একটু ভিতরে যেতে হবে।’ – ‘আপনি কোন দিকে যাবেন।’ – ‘আমিও ওদিকে যাবো।’ – ‘তাহলে চলুন, একসাথেই যাওয়া যাক।’ – ‘ হ্যাঁ আসুন।’ কিছুদূর যাওয়ার পর সামনে একটা বড় বাজার দেখতে পেলো রিফাত। তারিন রিফাত কে বলল – ‘আপনি একটু পিছনে পিছনে আসুন।’ – ‘কেন?’ – ‘সামনে কয়েকটা বখাটে ছেলে আড্ডা দেয়। ওরা আমার সাথে কোন ছেলেকে দেখলে উল্টো পাল্টা বলবে। – ‘আচ্ছা।’ তারপর তারিন একটু এগিয়ে গেলো। রিফাত পিছনে পিছনে আসছে। হঠাৎ রিফাত দেখলো, তারিনের সামনে কয়েকটা ছেলে এসে দাঁড়ালো। তারিন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেগুলো তারিন কে কী বলছে রিফাত বুঝতে পারছে না। শুধু দূর থেকে তাকিয়ে দেখছে তারিন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। লোকগুলো তারিন কে নিয়ে হাসাহাসি করছে। কিন্তু তারিন কোন প্রতিবাদ না করে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। রিফাতের আর সহ্য হলো না। তাই আর দাঁড়িয়ে না থেকে ওদের সামনে গেলো। ওখানে গিয়ে লোকগুলো কে বলল – ‘কী সমস্যা ভাই আপনাদের।’ ওদের মধ্যে থেকে একটা ছেলে বলল -‘তুই আবার কে?’ রিফাত খুব সহজেই বুঝে গেলো, লোকগুলো খুব অভদ্র। কিন্তু এদের সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করলে চলবে না। পরে নিজেই বিপদে পড়তে হবে। তাই খুব ভদ্রভাবে বলল -‘আমি ঢাকা থেকে এসেছি। আপনাদের এই এলাকায় একটা গানের পোগ্রাম করতে। এখান দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম আপনারা মেয়েটিকে বিরক্ত করছেন।’ রিফাতের কথা শুনে ওরা সবাই একসাথে হেসে দিলো। এমন ভাবে হাসছে মনে হয় রিফাত জোক্স বলেছে। হাসি থামিয়ে ওদের মধ্যে থেকে একজন বলল -‘আমাদের এলাকার মেয়ের সাথে আমরা যাই করি না কেন? তাতে তোর কী?’ – ‘এলাকা যার ই থাক না কেন? ওনি তো একটা মেয়ে। মেয়েরা মায়ের জাত। আর আমাদের উচিত সমস্ত মেয়েদের সম্মান করা।’ হঠাৎ ওদের মধ্যে থেকে একজন রিফাতের শার্টের কলার ধরে বলল – ‘তোর তো সাহস কম না, আমাদের এলাকায় দাঁড়িয়ে আবার আমাদের জ্ঞান দিচ্ছিস।’. রিফাতের প্রচুর রাগ হলো, কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। কারণ এটা ওদের এলাকা। আর আমাদের এখানে কিছুদিন থাকতে হবে। তাই চুপ করে থাকা ছাড়া কোন উপায় নেই। তারিন ওই লোকটার উদ্দেশ্যে বলল – ‘প্লিজ ভাইয়া, ওনি আপনাকে চিনে না তাই এইরকম করে ফেলেছে। ওনার কোন দোষ নেই। ওনাকে ছেড়ে দিন প্লিজ। লোকটা তারিনকে বলল – ‘ঠিক আছে।কিন্তু ওকে বলে দিও কখনও যেন আমাদের সাথে গলা উঁচু করে কথা না বলে। – ‘ আচ্ছা আমি বলে দেবো।’ তারপর লোকটা রিফাতের কলার ছেড়ে দিলো। তারিন রিফাত কে বলল – ‘আপনি আমার সাথে আসুন।’ রিফাত আর কোন কথা না বলে তারিনের সাথে যেতে শুরু করলো। লোকগুলোর কাছ থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে তারিন বলল – ‘আপনাকে কে বলেছিল ওদের সামনে গিয়ে কথা বলতে। – ‘আপনি দেখেলেন না, ওরা আপনাকে নিয়ে হাসাহাসি করছিল।’ – ‘আরে এটা ওরা প্রতিদিন করে। আপনি কী ভেবেছেন ওদের বলবেন আর ওরা ভাল হয়ে যাবে।’ – ‘এদের কেউ কিছু বলে না।’ – ‘ওদের মধ্যে যে লিডার । সে এই এলাকার চেয়ারম্যান এর ছেলে। তাই ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারে না। – ‘হুম এই কারণেই এত পাওয়ার দেখায়।’ – ‘হুম। বাদ দিন এই কথা। সামনে যে দোকান দেখতে পাচ্ছেন। ওখান থেকে ফোন করুন।’ – ‘আচ্ছা আপনি তাহলে বাড়িতে যান।’ – ‘ওকে।সাবধানে যাবেন।’ তারপর তারিন চলে গেলো। আর রিফাত দোকান থেকে বন্ধুদের ফোন করে ঠিকানা নিয়ে নিলো। চলবে…………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here