প্রতিশোধ পর্ব_১৪
💘
#লেখিকা_সুপ্রিয়া_নস্কর
আয়ুসী বাসে ওঠার পর লক্ষ্য করে কতগুলো ছেলে তার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে।আয়ুসীর ভয় করতে থাকে।ছেলেগুলো দেখতে গুণ্ডার মতো।চোখের ভাব খুব খারাপ।আয়ুসী চুপ করে নিজের সিটে বসে থাকে।এদিকে দেখে ছেলেগুলোও ঠিক কেউ ওর পিছনের সিটে বসেছে।আবার কেউ ওর পাশে দাঁড়িয়ে।ওর দিকে চেয়ে আছে।আয়ুসী কী করবে বুঝতে পারে না।একবার ভাবে আয়ানকে ফোন করবে।কিন্তু করে না।যে ওকে কষ্ট দিতে চায় তার কাছে কষ্টের কথা কী করে বলবে।বাসের ঝাঁকুনিতে ছেলেগুলো আয়ুসীর গায়ের কাছাকাছি আসতে থাকে।আয়ুসী সিট ছেড়ে উঠে বাসের সামনের দিকে এগিয়ে যায়।ভয়ে ভয়ে পিছনে ফিরে দেখে ছেলেগুলোকে।আয়ুসী দেখে ছেলেগুলো ওখানেই দাঁড়িয়ে।আয়ুসী নিশ্চিন্ত হয়।
আয়ুসীর স্টপেজ এসে পরে।আয়ুসী নেমে যায়।কিন্তু আয়ানের বাড়িটা বড় রাস্তার কাছে নয়।তাই আয়ুসী হাঁটতে থাকে।রাস্তাটা একটু অন্ধকার।আর এদিকে আকাশও ডাকছে।আয়ুসী জোরে পা চালায়।
মনে মনে বলতে থাকে-ভালো লাগে না প্রত্যেকদিন বৃষ্টি।
এদিকে আয়ুসীর সন্দেহ হয়।সে একবার পিছনে ফিরে তাকায়।মনে হয় কেউ যেন তাকে ফলো করছে।কিন্তু পিছন ফিরে দেখে কেউ নেই।সে ভাবে হয়ত মনের ভুল।তাই এগিয়ে যেতে থাকে।হঠাৎ তার পাশের রাস্তার এপার ওপার থেকে কতোগুলো ছেলে এসে তার সামনে দাঁড়ায়।
আয়ুসীর হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়।আয়ুসী দেখে সেই ছেলেগুলোই।কী বিচ্ছিরি ভাবে হাসছে।আয়ুসী পিছনের দিকে ঘুরে পালাতে যাবে দেখে পিছনেও কিছু ছেলে।
আয়ুসীর ভয়ে কান্না এসে যায়।কিন্তু তাও মনে সাহস এনে বলে-তোমরা কারা?কী চাও?
ছেলেগুলো সবাই একসাথে হাসতে থাকে আর বলে-তোমাকে সোনা।
একজন বলে-দেখতে কিন্তু হেবি রে,পুরো হট।এই বৃষ্টির রাতে পুরো জমে যাবে।
আয়ুসীর শুনে ভয় পেয়ে যায়।বলে-কী বলছ?আমি কিন্তু চিৎকার করব।
করো মামনি যত জোরে পারো চেঁচাও।-ওদের মধ্যে একজন বলে।
আয়ুসী ভয়ে ভয়ে ফোনটা নিয়ে আয়ানকে কল করতে যাবে একজন ফোন কেড়ে নেয়।আয়ুসীকে চড় মারে।
—-এতো সাহস।
আয়ুসী কেঁদে ফেলে।
একটি ছেলে আয়ুসীর সাথে জোরজবরদস্তি করতে থাকে।আয়ুসী ছেলেটিকে ঠেলে ফেলে দিয়ে ছুটতে শুরু করে।ছেলেগুলোও আয়ুসীর পিছু নেয়।কিন্তু বেশিদূর যেতে পারে না।পড়ে যায়।ছেলেগুলো হাসতে থাকে।
আয়ুসীর দিকে একজন এগোতে থাকে।সবে আয়ুসীর গায়ে হাত দিতে যাবে।হঠাৎ একজন হাত ধরে নেয়।ছেলেটির হাত টাকে পিছনের দিকে ঘুরিয়ে বলে-মেয়ে দেখলেই বুঝি এরকম করার ইচ্ছা হয়।
আয়ুসী উঠে দাঁড়ায়।আয়ুসী দেখে একটি ছেলে তার চোখে চশমা।দেখেলেই ভদ্র ঘরের মনে হয়।
অন্য বাজে ছেলেগুলোও ছেলেটিকে ঘিরে ধরে।আর ছেলেটিকে কাউকেই ছাড়ে না।সবাইকে উত্যম মধ্যম দিতে থাকে।আয়ুসী দেখে ছেলেটির কাছে কেউ পারে না।সবাই মার খাচ্ছে।এদিকে মার খেয়ে সবাই পালিয়ে যায়।
আয়ুসীর সামনে এসে বলে-আপনি ঠিক আছেন তো।
—-হ্যাঁ,ঠিক আছি।আপনি না এলে তো আমার যে কী হত?
না,না,কী হবে।চলুন আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দি।—-
আয়ুসী আর না করে না।সে খুব ভয় পেয়ে আছে।
দুজন চুপচাপহাঁটতে থাকে।
আয়ুসী প্রথম বলে-আমাকে যে এতো বড় সাহায্য করল তার নামটা আমি তো জানতেই পারি?
ছেলেটি হাসে-অবশ্যই,আমার নাম কুনাল।
ওও,তা আপনার বাড়ি কী এই দিকে?-আয়ুসী
না,এ দিকে নয়।আমি একটা কাজে এসছিলাম।-কুনাল
ওও-আয়ুসী
এদিকে বৃষ্টি পরতে শুরু করে দিয়েছে।আয়ুসী নিজের ব্যাগ থেকে ছাতা বার করে।
আপনি আমার ছাতায় আসুন।না হলে ভিজে যাবেন।-আয়ুসী
না,না,ঠিক,আছে।-কুনাল
প্লিজ আসুন,না হলে আমার খুব খারাপ লাগবে-আয়ুসী
কুনাল আয়ুসীর ছাতার তলায় আসে
আপনি একা এতো রাতে বাইরে?-কুনাল
আজ একটু দেরি হয়ে আছে।-আয়ুসী
ওও-কুনাল
আয়ুসী বাড়ির কাছে এসে পরে।
এই,আমার বাড়ি।-আয়ুসী
আচ্ছা-কুনাল
আপনি আমার ছাতাটা নিন।না হলে ভিজে যাবেন।-আয়ুসী
কিন্তু—-কুনাল
নিন,না হলে ভিজে যাবেন-আয়ুসী
কুনাল ছাতা নিয়ে চলে যায়।
আয়ুসী মনে মনে বলে আপনাকে হয়তো আমি ভিতরে আসতে বলতে পারলাম না।
আয়ুসী কিছুক্ষণ বৃষ্টি ভেজা অন্ধকার রাতের দিকে চেয়ে থাকে।তারপর ঘরে চলে আসে।
আয়ুসী বাড়ি আসতেই লাভা ছুটে আসে।আয়ুসীর পায়ে পায়ে জড়াতে থাকে।আয়ুসী নীচু হয়ে লাভার গায়ে হাত বোলতে থাকে।তারপর ভয়ে ভয়ে লাভাকে কোলে তুলে নিয়ে সোফায় গিয়ে বসে।লাভার নরম গায়ে হাত বোলতে থাকে।লাভা চুপ করে থাকে।
আয়ান ভিতরে ছিল।আয়ুসীর কোলে লাভাকে দেখে সে হতচকিয়ে যায়।সে আর একটি সোফাতে বসে।সে একটু রেগেও যায়।তাই লাভাকে ডাকতে থাকে।কিন্তু লাভা তো যায় না।তার উপর আয়ানের উপর চেঁচাতে থাকে।আয়ান আরো রেগে যায়।
লাভা আয়-এই বলে আয়ান একটি বল লাভাকে দেখায়।
লাভা ঘেউ ঘেউ করে কিন্তু আয়ানের কাছে যায় না।
আয়ুসী বুঝতে পেরে লাভাকে নামিয়ে দেয়।কিন্তু লাভা যায় না।আয়ুসীর পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে থাকে।আয়ানের দেখে মাথা গরম হয়ে যায়।
তুই ওখানেই থাক।দেখব কখন আসিস।-আয়ান
লাভা একবার আয়ানের কাছে গিয়ে আয়ানের উপর চীৎকার করে আবার আয়ুসীর কাছে ফিরে আসে।আয়ান রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায়।এদিকে আয়ুসীকে লাভাকে কোলে তুলে নেয়।লাভার গলায় হাত বোলতে থাকে।
আয়ুসী ভাবে আয়ানকে আজকের কথা কী বলবে।কিন্তু তার মনে হয় ওনাকে বলে কী লাভ।
আয়ুসী আয়ানকে কিছু বলে না।রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নিয়ে ডিনারের ব্যব্স্থা করে।আর লাভা সারাক্ষণ আয়ুসীর পিছনে পিছনে ঘরে।আয়ান তা দেখে লাভার উপর রেগে যায়।
রাত হয়ে গেলে ডিনার করে শুয়ে পরে।
এরকম ভাবেই দিন যেতে থাকে।কিন্তু আয়ুসী সেই লোকটিকে খুঁজতে যেতে পারে না।
আজ রবিবার।অফিস ছুটি।আর আজ শ্রেয়ার জন্মদিন তাই রাতের পার্টিতে দুজনের নিমন্ত্রণ।
সকাল উঠে আয়ুসী ব্রেকফ্রাস্টের আয়োজন করে।আয়ান এখন জোর করে লাভাকে নিজের কাছে আটকে রাখে।আজ ও তাই।লাভা আয়ুসীর কাছে যেতে চায়।কিন্তু আয়ান যেতে দেয় না।
আয়ান খেতে আসার আগে লাভাকে ওর জায়গায় রেখে খেতে দিয়ে আসে।
আজ বিপ্লব আঙ্কেলের বাড়িতে যেতে হবে।শ্রেয়ার জন্মদিন-আয়ান
বিপ্লব আঙ্কেলের বাড়ি শুনে চমকে ওঠে।সেই সাথে আনন্দ হয়।কারন তার মনে হয় আজ বিপ্লব আঙ্কেলের বাড়ি গেলে সে হয়তো কিছু প্রমাণ খুঁজে পাবে।একবার ভাবে বিপ্লব আঙ্কেলকে কী কিছু জিজ্ঞাসা করবে।কিন্তু ভাবে উনি আমাকে ভুল বুঝতে পারেন।ওনার রিলেটিভদের আমি সন্দেহ করছি।তিনি হয়তো মেনে নেবেন না।
কী হল?-আয়ান
আয়ানের কথায় আয়ুসীর ভাবনার ছেদ ঘটে।
হ্যাঁ,কিছু বলছেন।-আয়ুসী
তুমি এতোক্ষণ কিছুই শোনোনি-আয়ান
হ্যাঁ,হ্যাঁ যাব-আয়ুসী
হুম,আর শোনো আজ ঘরের ধুলো ময়লা ঝারবে।ঘরে বসে কী করবে।ঘর পরিষ্কার করবে।-আয়ান
হুম,ঠিক আছে-আয়ুসী
আয়ান উঠে রুমে চলে যায়।আর আয়ুসীও লাঞ্চ রেডি করে লেগে পরে ঘর পরিষ্কার করতে।
কিন্তু সে তো হাত পায় না।তাই একটা টুলের উপর উঠে ঘরের উপরের ধুলো ঝারতে থাকে।মনের আনন্দে সে কাজ করতে থাকে।তার সাথে গান করতে থাকে।
মার ঝাড়ু মার
ঝাড়ু মেরে ঝেটিয়ে বিদায় কর
মার ঝাড়ু মার
ঝাড়ু মেরে ঝেটিয়ে বিদায় কর
যত আছে নোংরা সবই
খেঁঙড়া মেরে ঘর থেকে দূর কর
ঘরের ফিরিয়ে দে না হাল
এদিকে আয়ুসীর গানের ঠেলায় আয়ান রুম থেকে বেড়িয়ে আসে।
আয়ুসী যেখানে তার নীচে সে দাঁড়ায়।
এই কী করছ?-আয়ান
আয়ুসী দেখে আয়ানকে।
কেন আপনি বললেন তো ঘর পরিষ্কার করতে।-আয়ুসী
কিন্তু গলাটা আস্তে।-আয়ান
আয়ুসী মাথা নাড়ায়।কিন্তু রেগে যায়।আয়ুসী উপরের দিকে ঝাড়ু মারলে সেই ময়লা নীচে আয়ানের চোখে পরে।
উফ্ফ-চোখে হাত দিয়ে আয়ান বলে।
কী হল।-আয়ুসী নীচে নেমে আসে।
দেখি কী হল-আয়ুসী
এদিকে আয়ান চোখে চাইতে পারছে না।আয়ুসী আয়ানের কাছে গিয়ে বলে-হাতটা সরান।
আয়ান বুঝতে পারে আয়ুসীর সাহায্য নিতেই হবে।সে হাত সরিয়ে দেয়।আয়ুসী আয়ানের চোখটা আস্তে আস্তে খুলে দেখে।দেখতে পায় চোখে ছোটো মতো কী পড়েছে।আয়ুসী বার করে দেয়।আর আয়ানের চোখে ফু দিতে থাকে।
আয়ান চোখ খুলে আয়ুসীর দিকে তাকিয়ে থাকে।সাড়া শরীরে ময়লা লেগে।আর মাথাতে তো ধুলোতে ভর্তি।আয়ান হেসে ফেলে।
আয়ুসী-হাসছেন কেন?
তোমাকে তো পুরো পরীর মতো লাগছে তাই।-আয়ান
আয়ুসী বুঝতে পারে।বলে-কারোর ভালো করতে নেই।
আয়ান কী বলবে ভেবে পায় না।ভাবে সত্যি বলা উচিত হয়নি।আবার ভাবে ঠিক বলেছি,একদম ঠিক।আয়ান চলে যায়।আয়ুসী চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।জানলার ধারে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে চোখ রাখে।আর আয়ুসীর গলায় ফুটে ওঠে-
❤
প্রাণ দিতে চাই,মন দিতে চাই
সবটুকু ধ্যান সারাক্ষণ দিতে চাই
তোমাকে,ও তোমাকে।
💗
স্বপ্ন সাজাই,নিজেকে হারাই
দুটি নয়নে রোজ নিশুতে যাই
তোমাকে,ও তোমাকে।
💗
জেনেও তোমার আঁখি চুপ করে থাকে
রোজ দুইফোঁটা যেন আরো ভালো লাগে
গানে,অভিসারে,চাই শুধু বারে-বারে
তোমাকে,ও তোমাকে।
💗
সেদিন কানে কানে সব বলব তোমাকে
বুকের মাঝে জাপটে জড়িয়ে ধরব তোমাকে।
💗
পথ চেয়ে রই,দেরি করো না যতই
আর ভোলা যাবে না জীবনে কখনোই,
তোমাকে,ও তোমাকে।
তুমি হাসলে আমার ঠোঁটে হাসি
—
আয়ুসী এই লাইনটা গেয়ে পিছনে ফিরেছে দেখে আয়ান তার ঠিক পিছনেই দাঁড়িয়ে আছে।আয়ুসী যখন গানটা গাইছিল তখন আয়ান এসে দাঁড়িয়েছে।আয়ুসীর চুলগুলো বাতাসে উড়ছে।আয়ান মন্ত্রমুগ্ধের মতো আয়ুসীকে দেখতে দেখতে আর ওর গান শুনতে শুনতে কখন যে ওর কাছে এসে দাঁড়িয়েছে সে নিজেই জানে না।
আয়ুসী আয়ানকে দেখে অবাক হয়ে যায়।পাশ কাটিয়ে চলে যাবে কিন্তু নীচে জল পরে থাকায় সে পিছলে যায়।আয়ান আয়ুসীকে ধরে ফেলে।দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে।কারোর চোখের পাতা যেন পড়তেই চায় না।
কলিংবেল বেজে ওঠে।তাতে দুজনের ঘোর কেটে যায়।আয়ান আয়ুসীকে ছেড়ে দরজা খুলতে যায়।দেখে ধ্রুব এসেছে।
এই তোর কাছে একটা ফাইল ছিল।কাল সকালে দরকার।আমাকে কাল অনেক আগে বার হতে হবে।তাই আজ নিতে এলাম-ধ্রুব
এতো কিছু বলার কী দরকার।চলে আয়।-আয়ান
এদিকে আয়ুসী রুমে চলে গেছে।স্নান করতে।
ধ্রুব ড্রয়িং রুমে বসে।আয়ান ফাইলটা এনে বলে-তুই কিন্তু এখন যেতে পারবি না।লাঞ্চ করে যাবি।
কিন্তু—-ধ্রুব
চুপ করে বস।-আয়ান
এদিকে ধ্রুব বলে-তোদের ঘুরতে যাওয়ার কী খবর?
আয়ান-তোর দায়িত্বে তো সব।
ধ্রুব-তাই
আয়ান-হুম
ধ্রুব মনে মনে বলে-ঠিক আছে বেটা তোমার দেখাচ্ছি মজা।
আয়ুসী চলে আসে।ধ্রুবকে দেখে ওর খুব ভালো লাগে।
আয়ুসী ধ্রুব আজ এখানেই খাবে।-আয়ান
হুম,অবশ্যই-আয়ুসী
ধ্রুব বুঝতে পারে না।কারন ওদের কথাবার্তায় কিছু ধরা পড়ে না।ভাবে হয়তো দুজনেই ভালো আছে।
চলবে—-