প্রেমের_উড়ান পর্বঃ১১

#প্রেমের_উড়ান
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ধ্রুব ও সুহানি আজ প্রায় সপ্তাহ খানেক বাদে একে অপরের মুখোমুখি হলো। এতদিন তাদের আলাদা আলাদা ফ্লাইট ছিল তাই দেখা হয়নি। তবে আজ তাদের একই ফ্লাইটে যেতে হবে।

সুহানি ধ্রুবকে এড়িয়ে যেতে চাইছিল কিন্তু ধ্রুব সুহানির পথ আটকে দাঁড়ালো। সুহানি ধ্রুবর দিকে তাকালো। ধ্রুব সুহানির হাতে একটি কার্ড তুলে দিয়ে তার উদ্দ্যেশ্যে করে বলল,
‘এই নাও, আগামীকাল আমার এনগেজমেন্ট। চেনা জানা প্রায় সকলকেই invitation card দিয়েছি। তাই ভাবলাম তোমাকেও দেই। আফটার অল, আমি যে মুভ অন করছি সেটা তো তোমাকেও দেখতে হবে।’

সুহানির মনে আলোড়ন তৈরি হয়৷ ভীষণ কষ্ট লাগে তার। কিন্তু সে বলে,
‘আপনার ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা। বাট,সরি আমি কাল যেতে পারব না।’

‘আসবে। তোমাকে কাল আসতেই হবে। যদি তুমি না আসো তাহলে আমি মনে করবো আমার প্রতি তোমার দূর্বলতা আছে এখনো।’

কথাটা বলেই ধ্রুব সুহানির সামনে থেকে প্রস্থান করল। এদিকে সুহানি অনিমেষ চেয়ে রইল ধ্রুবর যাওয়ার পরে। ধ্রুবর এবং তার রাস্তা যে এবার চিরতরে আলাদা হতে চলেছে। সুহানি নিজেকে সামলায়। এখন দূর্বল হলে চলবে না। এটা তো এক সময় হওয়ারই ছিল।

★★★
আজ ধ্রুব ও অর্পার এনগেজমেন্ট। এতদিন তাদের মধ্যে দেখা হয়নি। অহনা খন্দকার ও আজাদ চৌধুরী মিলে ঠিক করেছিলেন একেবারে এনগেজমেন্টের দিন তাদের দেখা হবে।

ধ্রুব এনগেজমেন্ট উপলক্ষে খুব সুন্দর ভাবে সেজেছে। অর্পাও তৈরি হয়ে নিয়েছে। আর মাত্র কিছুক্ষণ পর তারা একে অপরের মুখোমুখি হতে চলেছে।

ধীরাজ আজকেই প্রথম অর্পাকে দেখল। দূর থেকে অর্পাকে তার কিছু বান্ধবীর সাথে আড্ডা দিতে দেখে নিল। অতঃপর বলল,
‘এই টাই তো সেই মেয়েটা যে আমাকে সেদিন গা’ড়ি দিয়ে ধা’ক্কা দিতে যাচ্ছিল। যাইহোক, এই এনগেজমেন্টটা আমি হতে দেব না। সুহানি আপু ও ধ্রুব ভাইয়াকে আমি কিছুতেই আলাদা হতে দেব না। তার জন্য আমাকে যাই করতে হোক আমি করব।’

ধীরাজ সরাসরি গিয়ে তার মায়ের সাথে দেখা করে। অহনা খন্দকার তখন কিছু রিলেটিভের সাথে কথা বলছিলেন। ধীরাজ তাদের সকলের মাঝে গিয়ে বলে,
‘আম্মু, তুমি প্লিজ একটু আমার সাথে আসবা? তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে।’

অহনা খন্দকার ধীরাজের সাথে আসে। ধীরাজ অহনা খন্দকারের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘তুমি প্লিজ এই এনগেজমেন্টটা ভে’ঙে দাও আম্মু।’

অহনা খন্দকার ভীষণ রেগে যান। বলেন,
‘এ কি কথা! তুমি কি বলতে চাইছ ধীরাজ?’

‘আমি সব কিছু জানতে পেরেছি আম্মু। তুমি কিভাবে ধ্রুব ভাইয়া ও সুহানি আপুকে আলাদা করেছ সেটা আমি জেনে গেছি। তুমি কাজটা একদম ঠিক করো নি। প্লিজ তুমি সবকিছু ঠিক করে দাও। সুহানি আপুর সাথে যেসব অন্যায় করেছ তার জন্য ক্ষমা চাও। আর প্লিজ ভাইয়া ও সুহানি আপুকে মিলিয়ে দাও।’

‘আর ইউ ম্যাড? এসব কি বলছ তুমি? আমি কেন ঐ সামান্য মেয়েটার কাছে ক্ষমা চাইব। আর ধ্রুবর সাথে ওর মিল হবেই বা কেন? ঐ মেয়ে আমার ধ্রুবর যোগ্য নয়। ধ্রুবর যোগ্য মেয়ের সাথেই আমি ওর বিয়ের ব্যবস্থা করেছি। তাই তুমি এসব কথা না বলে চুপচাপ নিজের ভাইয়ের এনগেজমেন্ট এনজয় করো।’

ধীরাজ হাতজোড় করে বলে, ‘প্লিজ আম্মু। তুমি এইভাবে দুজন ভালোবাসার মানুষকে আলাদা করিও না। আমি রিকোয়েস্ট করছি।’

অহনা খন্দকারের মন কিছুতেই গলে না। তিনি নিজ অহংকার বজায় রেখে বলেন,
‘আমি যা চাই তাই হবে। তোমার জন্য এটাই ভালো হবে যদি তুমি চুপচাপ সব মেনে নাও।’

কথাটা বলে তিনি চলে আসেন। ধীরাজ এবার স্বগোতক্তি করে বলে,
‘আম্মু যখন আমার কথা শুনল না তাহলে এখন আর আমার কাছে কোন উপায় নেই। এবার আমি ভাইয়াকে সব সত্য জানাবো। আমাকে ক্ষমা করে দিও সুহানি আপু। তোমাকে দেওয়া কথা আমি রাখতে পারলাম না। ভাইয়া আর তোমাকে এক করার জন্য এবার আমাকে সব সত্য ভাইয়ার সামনে তুলে ধরতেই হবে।’

★★★
অর্পার বেস্ট ফ্রেন্ড সুইটি তার কানে কানে ফিসফিস করে বলে,
‘তোর হবু জামাই মানে আমার জিজুকে দেখে আসলাম। কি হ্যান্ডসাম দেখতে। আমি তো নিজেই ক্রা’শ খেয়ে গেলাম।’

অর্পা চোখ রাঙিয়ে বলল,
‘একদম আমার উডবির দিকে নজর দিবি না। ও শুধু আমার।’

সুইটি নিজের ফোন বের করে ধ্রুবর ছবি অর্পাকে দেখিয়ে বলে,
‘আচ্ছা এই নে, তোর হবু বরকে দেখে তুই নিজে ক্রাশ খা।’

অর্পার চোখ যায় ছবিটির দিকে। সাথে সাথেই সে বিস্ফো’রিত নয়নে তাকায়। ফোনটা হাতে নিয়ে ছবিটা ভালো করে দেখে বলে,
‘এটা কার ছবি?’

‘কেন তোর হবু বর এহসান ধ্রুবর।’

‘হোয়াট? কিন্তু এটা কিভাবে হতে পারে? ও তো এমন নয়।’

‘মানে? কি বলতে চাইছিস তুই?’

অর্পা সাথে সাথে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। দৌড়ে চলে গেল নিজের বাবা আজাদ চৌধুরীর কাছে। তাকে গিয়ে ধ্রুবর ছবি দেখিয়ে বলল,
‘ড্যাড, এই ছেলেটা কি আমার হবু বর?’

‘হ্যাঁ, এটাই তো ধ্রুব।’

অর্পার চোখ গোল হয়ে আসলো। সে বলল,
‘আচ্ছা অহনা খন্দকারের কি আরো ছেলে আছে?’

‘হ্যাঁ, ওনার তো দুই ছেলে। বড় ছেলে ধ্রুব আর ছোট ছেলে ধীরাজ।’

অর্পার কাছে এতক্ষণে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যায়। সে আজাদ চৌধুরীর উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘ড্যাড, কাইন্ডলি আমার সাথে এক্ষুনি অহনা খন্দকারের কাছে চলো। অনেক বড় ব্লান্ডার হয়ে গেছে।’

‘মানে?’

‘তুমি প্লিজ চলো আমার সাথে। আমি যেতে যেতে তোমায় সব বলছি।’

আজাদ চৌধুরীকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে অর্পা তাকে একপ্রকার টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে।

★★★
ধ্রুব নিজের ঘরে বসে ছিল। তার কাছে থাকা সুহানির সকল ছবি এবং চিহ্ন সে একসাথে জমা করেছে। হাতে একটি দিয়াশালাই। ধ্রুব বিড়বিড় করে বলল,
‘আজ তোমার সব স্মৃতি আমার জীবন থেকে চিরতরে মুছে দেব সুহানি। আজ আমি সত্যিকার অর্থেই মুভ অন করব।’

কথাটা বলে ধ্রুব আগু’ন জ্বা’লিয়ে দিতে যাবে এমন সময় ধীরাজ তার রুমে এসে বলে,
‘ভাইয়া দাঁড়াও। এসব কি করছ তুমি?’

‘একজন ঠক’বাজের চিহ্ন নিজের জীবন থেকে মুছে দিচ্ছি।’

‘তুমি ভুল ভাবছ। সুহানি আপু ঠকবাজ নয়। সে পরিস্থিতির স্বীকার।’

‘মানে?’

ধীরাজ এবার ধ্রুবকে সব সত্য খুলে বলে। সুহানির সাথে অহনা খন্দকার কি কি অন্যায় করেছিল সব খুলে বলে সে। সব শুনে ধ্রুব চরম পর্যায়ের হতবাক হয়। বিস্মিত সুরে বলে,
‘আম্মু এমনটা করতে পারল? এভাবে সুহানি আর আমাকে আলাদা করল!’

ধীরাজ বলল,
‘আমিও প্রথমে তোমার মতোই অবাক হয়েছিলাম। কিন্তু মানতে কষ্ট হলেও এটাই সত্য।’

‘আমি এক্ষুনই আম্মুর সাথে কথা বলব। আম্মুর কাছে আমার অনেক প্রশ্নের জবাব চাই।’

ধীরাজ ধ্রুবকে আটকিয়ে বলে,
‘আম্মুর সাথে পরে কথা বলবে আগে সুহানি আপুকে সামলাও।’

‘সালমাবো মানে?’

‘তোমার এনগেজমেন্টের খবর শুনে সুহানি আপু অনেক কষ্ট পেয়েছে। তাই আপু অনেক কাঁদছে। আমি আপুর বান্ধবী ইশার কাছ থেকে সব শুনেছি।’

ধ্রুব সুহানির ফ্ল্যাটের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয়।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here