প্রেমের_উড়ান #পর্বঃ১৮

#প্রেমের_উড়ান
#পর্বঃ১৮
#লেখিকাঃদিশা_মনি

সুহানির রুমে খুব সাবধানে প্রবেশ করলো মিরা এবং সীমান্ত। সীমান্ত তো ছুটে গিয়ে সুহানিকে জড়িয়ে ধরল। সুহানির কপালে চুমু খেয়ে বলল,
‘আল্লাহর লাখ লাখ শুকরিয়া যে তুই বেঁচে আছিস। নাহলে তো আমি এক মুহুর্তের জন্য ভেবেই নিয়েছিলাম যে তুই আর আমাদের মাঝে নেই। শোকর আলহামদুলিল্লাহ যে তুই বেঁচে আছিস। মিরা আমাকে সবটা বলেছে।’

সুহানি মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘আমার ভাগ্য ভালো ছিল যে ভাবি সঠিক সময় পৌঁছে গিয়েছিল। নাহলে হয়তো আজ আমি ওখানে জ্ব’লে ম’রে যেতাম।”

সীমান্ত অধৈর্য হয়ে প্রশ্ন করে,
‘ওখানে কি হয়েছিল আমায় সঠিক ভাবে বল তো! কিভাবে গা’ড়িতে আগুন লাগল আর তুই কিভাবে বেঁচে গেলি?’

সুহানি একটু দম নিয়ে বলতে শুরু করে,
‘আমি আমার বান্ধবী ডক্টর মেঘলার কাছে যাই। ও একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর ছিল। ওকে দেখানোর পর যখন ও আমার বিয়ের ব্যাপারে জানতে পারে তখন খুব অভিমান করে যে কেন আমি ওকে আগে জানাই নি। আমি তখন ওকে আমার বিয়েতে ইনভাইটেশন দেই এবং ওকে জোরপূর্বক নিজের সাথে নিয়ে আসি। উদ্দ্যেশ্য ছিল ওকে আমার বিয়েতে নিয়ে যাব। কিন্তু আমি যদি আগে জানতাম ওকে এভাবে ম’রতে হবে তাহলে ওকে কখনো নিয়ে আসতাম না।’

সীমান্ত হতবাক হয়ে বলে,
‘তার মানে গাড়িতে যেই দুটো লা’শ পাওয়া গেছে তার একটা ড্রাইভারের আর একটা তোর বান্ধবী ডাক্তার মেঘলার!’

সুহানি মাথা দুলায়। কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে,
‘আমরা কমিউনিটি সেন্টারের দিকেই যাচ্ছিলাম এমন সময় হঠাৎ করে কোথা থেকে একটা ট্রাকটি এসে আমাদের গাড়িতে ধা’ক্কা দেয়। যার ফলে আমাদের গাড়ি পাশের একটি খা’দে পড়ে যায়। আমি গাড়ি থেকে ছি’টকে পড়ে যাই। আমার মাথায় খুব আ’ঘাত লেগেছিল। আমি হঠাৎ চোখ তুলে খেয়াল করি একটা লোক এগিয়ে এসে গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে গেল। আমি হাজার চেষ্টা করেও উঠতে পারলাম না। লোকটা হয়তো আমায় খেয়াল করে নি কারণ আমি খানিকটা দূরে ছিটকে গেছিলাম। তাই হয়তো আমি এখনো অব্দি বেঁচে আছি। তারপর আমি খেয়াল করি ভাবি হন্তদন্ত হয়ে দৌঁড়ে দৌঁড়ে আমার দিকে আসছে এরপর আর কিছু মনে নেই। তখনই আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।’

এরমাঝে মিরা বলে ওঠে,
‘আমি যখন সুহানিকে খুঁজতে যাই তখন খেয়াল করি একটা লোক গাড়িতে আ’গুন লাগিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। আমি তখন ভয় পেয়ে যাই। লোকটাকে ফলো করতে যাই কিন্তু সে হঠাৎ করেই চোখের নিমেষে পালিয়ে যায়। অতঃপর আমি দিগবিদিক শূণ্য হয়ে গাড়ির দিকে ছু’টতে থাকি। তখনই আমি একটু দূরে কাউকে পড়ে থাকতে দেখতে পাই। একটু এগিয়ে যেতেই বুঝতে পারি ওটা সুহানি। এরপর আমি দৌড়ে ওর কাছে যাই। ততক্ষণে ও অজ্ঞান হয়ে গেছিল। আমি সুহানিকে নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে যাই। তারপর সেখান থেকে এখানে নিয়ে এসে গোপনে লুকিয়ে রেখেছি।’

সীমান্ত প্রশ্ন করে,
‘কিন্তু ওকে এভাবে লুকিয়ে রাখার কারণ টা কি? আর তুমি সবার থেকে সত্যটা কেন লুকাতে চাইছ? কেন সবাইকে এটা বিশ্বাস করাতে চাইছ যে সুহানি মা’রা গেছে?’

‘কারণ আমার মনে হয় সুহানির বিপদ এখনো দূর হয়নি। যে বা যারা ওকে মা’রার চেষ্টা করেছে তারা আবার ওকে মা’রার চেষ্টা করতে পারে। সেইজন্য এটাই ভালো হবে যে সবাই জানুক সুহানি মা’রা গেছে। যতদিন আসল খু’নি না ধরা পড়ে ততদিন সুহানির আত্মগোপনে থাকাই ভালো।’

‘কিন্তু সুহানি এই ঘরের চার দেয়ালে এভাবে আর কতদিন লুকিয়ে থাকবে?’

মিরা একটু ভেবে উত্তর দেয়,
‘ওকে এখানে বেশিদিন থাকতে হবে না। ওর এখানে থাকাও রিস্কি। তাই আমি ভেবেছি ওকে আমার বাবার বাড়ি মানে চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দেব। চট্টগ্রামে গিয়ে ও কিছুদিন থাকুক। আসল খু’নিকে খুঁজে পাওয়ার পর নাহয় ও আবার ফিরে আসবে।’

সুহানি হঠাৎ করে বলে ওঠে,
‘আমার মনে হয় ধ্রুবকে সত্যটা জানানো দরকার। আমার মৃত্যুর খবরে ও নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট পাচ্ছে।’

মিরা সুহানির কথা নাকচ করে দিয়ে বলে ওঠে,
‘এই ভুল একদম করা যাবে না। আমার সন্দেহের বাইরে কেউ নও। বিশেষ করে ধ্রুবর মাকে আমার সন্দেহ হয়। ঐ মহিলা মোটেই সুবিধার নয়। তাই ভালো হবে কিছুদিন তোমার সত্যটা শুধু আমাদের কয়েকজনের মধ্যেই থাকুক।’

সীমান্ত মিরার সাথে তাল মিলিয়ে বলে,
‘আমারও মনে হয় মিরার কথায় যুক্তি আছে। সত্যটা আমাদের মাঝেই থাকুক। আর মিরা তুমি যত দ্রুত সম্ভব সুহানিকে চট্টগ্রামে পাঠানোর ব্যবস্থা করো। আমি ওকে নিয়ে আর কোন রিস্ক নিতে চাইনা।’

সুহানি নিজের ভাই ও ভাবির কথা মেনে নেয়। অতঃপর মনে মনে বলে,
‘তুমি একটু ধৈর্য ধরে আমার জন্য অপেক্ষা করো ধ্রুব। আমি আবার ঠিক তোমার জীবনে ফিরে আসব। শুধু পরিস্থিতিকে একটু স্বাভাবিক হতে দাও।’

★★★
এক সপ্তাহ পর,
ধ্রুবর জীবন যেন একই জায়গায় থমকে আছে। সুহানিকে হারানোর পর থেকে সে নিজেকে নিজের রুমের মধ্যেই আবদ্ধ করে গেছে। পাগলপ্রায় অবস্থা ধ্রুবর। কারো সাথে সেরকম কথা বলে না। মাঝে মাঝেই সুহানিকে নিয়ে হ্যালোজিনেট করে। অনেক ডাক্তারও দেখানো হয়েছে তাকে কিন্তু কোন লাভ হয়নি৷ ধ্রুবর এই অবস্থা দেখে ধীরাজ, অহনা খন্দকার সবাই খুব চিন্তিত। বিশেষ করে অহনা খন্দকার এখন ধীরে ধীরে অপরাধবোধে ভুগতে শুরু করেছেন। তার কাছে মনে হতে থাকে তিনি নিজ হাতে নিজের ছে’লের জীবন ন’ষ্ট করে দিয়েছেন।

ধীরাজ একটু আগেই পুলিশ স্টেশন থেকে ফিরল। সুহানির মৃত্যুর এক সপ্তাহ হয়ে গেল কিন্তু এখনো তার খু’নির কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না এটা ভেবেই ধীরাজের খুব রাগ হচ্ছে।

বাড়িতে এসে নিজের রুমে গিয়ে একটা ফুলদানি ছু’ড়ে মা’রে। অর্পা রুমে এসে বলে,
‘তুমি এত রাত করছ কেন ধীর?’

‘রাগ করবোনা মানে? সুহানি আপুর মৃত্যুর এক সপ্তাহ হয়ে গেল,ভাইয়ার কিরকম পাগলপ্রায় অবস্থা। অথচ খু’নি এখনো গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরছে।’

‘সুহানি আপুর মৃত্যুতে আমিও অনেক কষ্ট পেয়েছি। কিন্তু আমাদের তো জীবনে এগিয়ে যেতে হবে।’

‘মানে কি বলতে চাইছ তুমি?’

‘বলছিলাম যে আমরা বিয়ের পর তো কোথাও ঘুরতে যাইনি। চলো না বাইরে কোথা থেকে ঘুরে আসি।’

ধীরাজ প্রচণ্ড রাগী গলায় বলল,
‘তোমার মতো স্বার্থপর মেয়ে আমি আর দুটো দেখিনি। সুহানি আপু মারা গেছে, ভাইয়ার এই অবস্থা আর তুমি ঘুরতে যেতে চাইছ!’

‘তুমি ভুল ভাবছ ধীর। আমি আমাদের জন্য বলছি না। ধ্রুব ভাইয়ার জন্য বলছি। ওনার মানসিক অবস্থা ভালো না কোথাও ঘুরতে গেলে ভালো লাগবে।’

ধীরাজ একটু চিন্তা করে দেখল অর্পা ভুল কিছু বলছে না। এদিকে অর্পা ধীরাজের উপর মন খা’রাপ করে চলে যেতে নিলে ধীরাজ পিছন থেকে বলে ওঠে,
‘সরি। আসলে আমার মন মেজাজ ঠিক ছিল না তাই ওভাবে বলে ফেলেছি। তোমার পরামর্শটা খা’রাপ না। আমি আজই আম্মুর সাথে এই নিয়ে কথা বলব।’

অর্পা স্মিত হেসে বলে,
‘তুমি আমায় ভুল বুঝেই জীবন কা’টিয়ে দিও ধীর। কারণ আমাকে বোঝার চেষ্টা তুমি কখনো করবেনা!’

অর্পার কথার মানে বুঝতে পারল না ধীরাজ। অতঃপর অহনা খন্দকারের রুমে গিয়ে তাকে ধ্রুবর ঘুরতে যাওয়ার কথাটা বলল। অহনা খন্দকার দ্রুত রাজি হয়ে গেলেন। কারণ তিনি চান ধ্রুব যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here