প্রেমের_উড়ান #পর্বঃ১৯

#প্রেমের_উড়ান
#পর্বঃ১৯
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ধ্রুবর রুমে প্রবেশ করে ধীরাজ। ধ্রুব তখন উদাস মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। ধীরে ধীরে বাস্তবতাটাকে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করছে ধ্রুব। সুহানির কথা ভুলে যাওয়ারও চেষ্টা করছে সে। কিন্তু পারছে না।

ধীরাজ ধ্রুবর কাধে হাত রাখে। ধ্রুব পিছনে ফিরে বলে,
‘সুহানি তুমি ফিরে…’

পুরো কথা সম্পূর্ণ করার আগেই থেমে যায়। ধীরাজ ধ্রুবকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
‘বাস্তবতাটাকে মেনে নাও ভাইয়া। সুহানি আপু আর নেই। সে আর কখনো ফিরে আসবে না।’

ধ্রুব মলিন হেসে বলে,
‘মেনে নেওয়ার চেষ্টাই তো করছি কিন্তু পারছি কই!’

‘তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।’

‘হ্যাঁ বল।’

‘চলো না আমরা বাইরে কোথাও থেকে ঘুরে আসি।’

‘আমি পারবোনা। আমার এখন এসবের মুড নেই।’

‘দেখ ভাইয়া নিজের জন্য না হলেও সুহানি আপুর জন্য চলো। আপু যদি বেঁচে থাকত নিশ্চয়ই তোমার এরকম অবস্থা দেখে অনেক কষ্ট পেত।’

ধ্রুব একটু ভেবে বলল,
‘তুই হয়তো ঠিকই বলছিস, আচ্ছা আমি ভেবে দেখছি।’

ধীরাজ কিছুটা নিশ্চিত হয়ে রুমের বাইরে চলে যায়৷ ধ্রুব নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে সুহানির একটি ছবির দিকে তাকিয়ে বলে,
‘আমাকে ছেড়ে গিয়ে তুমি কেমন আছ সুহা? নিশ্চয়ই খুব ভালো। এটাই তো চেয়েছিলে তুমি যে আমি কষ্টে থাকি তাইনা? কিন্তু আমি এটা হতে দেব না। আমি সুখী থাকব। তোমাকে দেখিয়ে দেব যে তোমাকে ছাড়াও আমি ভালো থাকতে পারি।’

★★★
সুহানি চট্টগ্রামে অবস্থান করছে। মিরার বাবার বাড়িতেই থাকছে সে৷ মিরার মা মল্লিকা বেগম সুহানিকে দেখে অনেক খুশি হয়েছেন। তিনি সুহানির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
‘কত দিন পর তুমি আমাদের বাড়িতে এলে। আমি খুব খুশি হয়েছি। এই খুশিতে এই নাও মিষ্টি মুখ করে নাও।’

সুহানি একটু মিষ্টি খেয়ে নেয়। অতঃপর মল্লিকা বেগম বলেন,
‘জানো তোমার আঙ্কেল আর আমি মিলে প্ল্যান করেছিলাম রাঙামাটিতে ঘুরতে যাব। কিন্তু হঠাৎ করে তুমি চলে আসায় আমাদের প্ল্যান ক্যান্সেল করতে হলো। তবে তুমি যদি চাও তাহলে আমরা এখনো রাঙামাটি যেতে পারি। যদি তুমি রাজি থাকো তাহলে।’

সুহানি একটু ভেবে দেখল তার জন্য কেন শুধু শুধু দুজন মানুষের ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান নষ্ট হবে। তাই সুহানি বলল,
‘আচ্ছা কবে যেতে হবে বলুন আমিও আপনাদের সাথে যাব।’

মল্লিকা বেগম খুশি হয়ে বলেন,
‘পরশুই আমরা সবাই বেরোবো। তুমি তৈরি থেকো।’

সুহানি স্মিত হাসে।

★★★
৪ দিন পর,

ধ্রুব, ধীরাজ-অর্পা সবাই তৈরি হয়ে নিচ্ছে। আজ তারা সকলে মিলে রাঙামাটিতে ঘুরতে যাচ্ছে। ধ্রুবর যদিও যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না কিন্তু অনেক ভেবে দেখল তার এখন যাওয়া উচিৎ। কোথাও ঘুরতে গেলে অন্তত মনটা ভালো হবে।

যাওয়ার আগে অহনা খন্দকারের সাথে মিট করে সবাই। অহনা খন্দকার ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘বেটা তুমি একটু স্বাভাবিক হয়ে ফিরো৷ তোমার জন্য আমার অনেক টেনশন হয়।’

‘তুমি চিন্তা করো না আম্মু। আমি চেষ্টা করব স্বাভাবিক হয়ে ফিরে আসার।’

সবাই বেরিয়ে যায়। অতঃপর অহনা খন্দকার সোফায় বসে পড়েন। নিজের অপরাধবোধের জন্য অনেক পস্তাচ্ছেন তিনি। তার ইগোর জন্য দুজন মানুষের মৃ’ত্যু হয়েছে এটা ভেবেই কয়দিন থেকে তার ঘুম উড়ে গেছে। আসলে অনুশোচনা আর বিবেকের দংশনের কাছে সব মানুষ অসহায়। অহনা খন্দকার নিজের কাছে নিজে প্রতিজ্ঞা করে বললেন,
‘ধ্রুব স্বাভাবিক হয়ে ফিরে আসুক তারপর আমি নিজে নিজের সব দো’ষ স্বীকার করে নেবো।’

এরমধ্যে হঠাৎ করে তার কাছে কল আছে। অহনা খন্দকার ফোন রিসিভ করতেই বিপরীত দিক থেকে কালাম বলে ওঠে,
‘ম্যাডাম আমি অনেক ঝুঁকির মধ্যে আছি। বর্ডার এলাকা থেকে অনেক দূরে আছি আর পুলিশ আমার পেছনেই পড়ে আছে। মনে হয়না আর খুব বেশিদিন এভাবে পালিয়ে বেড়াতে পারব। হয়তো খুব তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে যাব।’

অহনা খন্দকার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন,
‘পৃথিবীর আইন থেকে এভাবে পালিয়ে বেড়িয়ে কি কোন লাভ আছে? আল্লাহর আইন থেকে তো আমরা পালাতে পারি না।’

‘ম্যাডাম আপনি এসব কি বলছেন?’

‘আমি এই ক’দিন এসব নিয়ে অনেক ভেবেছি কালাম। নিজের অপরাধ আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি৷ আমার খুব আফসোস হয় জানো, আল্লাহ যদি একবার সুযোগ দিত তাহলে আমি অতীতে গিয়ে সবকিছু ঠিক করে দিতাম কিন্তু সেটা আর হওয়ার নয়। এই ক’দিন নিজের ছেলেকে তড়পাতে দেখে আমি বুঝতে পেরেছি আমি কত বড় অন্যায় করেছি। এখন আমি আর নিজের পাপের বোঝা বাড়াতে চাই না। কালাম তুমি পুলিশের কাছে স্যালেন্ডার করে নাও আর আমার কথাও বলে দাও। তারপর যা হওয়ার হবে।’

কালাম ফোন রেখে দেয়। সে এখন কি করবে সেটাই ভাবতে থাকে।

★★★
ধ্রুব, ধীরাজ ও অর্পা রাঙামাটিতে পৌঁছে গেছে। রাঙামাটিতে পৌঁছেই একটি হোটেলে চলে আসে তারা। ধীরাজ ও অর্পা এক রুমে আর ধ্রুব আরেকটি রুমে অবস্থান করছিল।

ধ্রুবর রুমে ভালো লাগছিল না তাই সে বাইরে ঘুরতে বের হয়। ঘুরতে ঘুরতে একটু দূরে চলে আসে সে। এমন সময় সে দেখতে পায় একটা বাচ্চা বসে বসে কাঁদছে। ধ্রুব বাচ্চাটির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘কে তুমি? এভাবে কাঁদছ কেন?’

‘আমি আমার মা-বাবার সাথে এখানে ঘুরতে এসেছিলাম। কিন্তু তাদের হারিয়ে ফেলেছি।’

‘দেখো তুমি কেঁদো না তোমার মা-বাবা নাম্বার দাও আমি যোগাযোগ করছি।’

বাচ্চাটি তার বাবার নাম্বার দিলে ধ্রুব ওনার সাথে কথা বলেন। অতঃপর বাচ্চাটিকে বলে,
‘তোমার বাবার সাথে কথা হলো। উনি ওনার ঠিকানা দিয়েছেন। তুমি চলো আমার সাথে আমি পৌঁছে দিচ্ছি।’

‘আপনি ছেলেধরা ননতো?’

বাচ্চাটার কথা শুনে ধ্রুব হেসেই ফেলে। তাকে অনেক বুঝিয়ে তারপর রাজি করিয়ে নিজের সাথে নিয়ে যায়।

বাচ্চাটিকে তার বাবার কাছে পৌঁছে দিয়ে ফেরার সময় হঠাৎ করে ধ্রুব থমকে যায়। কারণ সে রাস্তার বিপরীত পাশে সুহানিকে দেখে। ধ্রুবর মনে হচ্ছিল সে স্বপ্ন দেখছে৷ তাই চোখ বন্ধ করে বলে,
‘আমি জানি সুহানি এটা আমার স্বপ্ন। চোখ খুললেই আমি দেখব তুমি আর নেই। জানি না কেন তুমি বারবার এভাবে আমার সামনে আসো। আসল সত্য তো এটাই যে আমাদের মধ্যে চিরতরে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে।’

কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে ধ্রুব দেখে সুহানি নেই। তারপর স্মিত হেসে বলে,
‘আমি জানতাম এটা স্বপ্ন ছিল।’

অতঃপর ধ্রুব চলে যেতে থাকে। ধ্রুব যাওয়ার পর সুহানি আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে। তার চোখ জলে ভিজে গেছে। সুহানি স্বগোতক্তি করে বলে,
‘আমি জানি ধ্রুব তুমি আমার জন্য অনেক কষ্ট পাচ্ছ কিন্তু আমার যে এখানে কিছু করার নেই। আল্লাহর কাছে শুধু এটুকুই চাই যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সবকিছু ঠিক হয়ে যাক। এই লুকোচুরি খেলা বন্ধ হোক। আবার আমাদের পূনমির্লন ঘটুক।’

মল্লিকা বেগম এসে সুহানির মাথায় হাত রাখেন। অতঃপর বলেন,
‘আল্লাহর উপর ভরসা রাখো সুহানি। দেখবে তিনি সব ঠিক করে দেবেন। আচ্ছা এখন আর মন খারাপ করে থেকো না। এখন তো আমাদের সাজেক ভ্যালি দেখতে যেতে হবে। চলো তাড়াতাড়ি।’

সুহানি মল্লিকা বেগম ও তার স্বামী হাসান রহমানের সাথে রওনা দেয় সাজেক ভ্যালির দিকে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here