প্রেমের_উড়ান # ২০ অন্তিম পর্ব

#প্রেমের_উড়ান
#পর্বঃ২০(অন্তিম পর্ব)
#লেখিকাঃদিশা_মনি

সুহানি মল্লিকা বেগম ও হাসান রহমানের সাথে সাজেক ভ্যালিতে এসে উপস্থিত হয়েছে। সাজেক ভ্যালির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে সুহানি। চারিদিকে কত সুন্দর দৃশ্য। সুহানির ইচ্ছা করছিলে এখানেই আজীবন অবস্থান করতে। মল্লিকা বেগম সুহানির হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রী দেখে বলেন,
‘কি হলো সুহানি? তোমার কি জায়গাটা খুব পছন্দ হয়েছে?’

‘অনেক।’

‘এনজয় করো মা। এই ক’দিন তোমার উপর দিয়ে যা ঝড় বয়ে গেছে তারপর তোমার একটু আনন্দ করা উচিৎ।’

সুহানি স্মিত হাসে। হাসান রহমান বললেন,
‘চলো আমরা একটু সামনের দিকে যাই।’

মল্লিকা বেগম তালে তাল মিলিয়ে বললেন,
‘হ্যাঁ, চলো চলো।’

★★★
ধ্রুব, ধীরাজ ও অর্পার সাথে মিলে ঘুরতে চলে এসেছে। তবে তার এখানে আসার একদম মত ছিল না। তখন সুহানিকে দেখেছে থেকেই তার মনটা একদম ই ভালো নেই। তাই ধ্রুব কিছুক্ষণ একা থাকতে চাইছিল। কিন্তু ধীরাজের জোরাজুরিতে তাকে এখানে আসতে হলো।

ধীরাজ ধ্রুবর উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘ভাইয়া তুমি তো এখানে আসতেই চাও নি। এখন সিনারি কেমন লাগছে? নিশ্চয়ই খুব ভালো তাইনা?’

ধ্রুব রাগী স্বরে বলল,
‘আমার এসব কিছু ভালো লাগছে না। তোরা নিজেদের মতো আনন্দ কর আমি আসছি।’

কথাটা বলেই ধ্রুব রওনা দেয় বিপরীত দিকে। ধীরাজ তার পেছনে যেতে চাইলে অর্পা তাকে আটকে দিয়ে বলে,
‘ভাইয়া কে নিজের মতো থাকতে দাও ধীরাজ। এটাই ওনার জন্য ভালো হবে।’

ধীরাজ বুঝল অর্পা ঠিক বলছে। তাই সে সহমত প্রকাশ করে অর্পার সাথে সামনের দিকে এগিয়ে এলো।

এদিকে ধ্রুব মন খা’রাপ করে হাটতে হাটতে হঠাৎ করেই থমকে গেল। কারণ সে আবার সুহানিকে দেখল। ধ্রুব কিছুটা ক্রোধের সাথে বলে উঠল,
‘কেন তুমি বারংবার এভাবে আমার সামনে আসছ সুহা? আমি তো এই সত্যটা মেনে নেওয়ার চেষ্টা করছি যে তুমি আর নেই। কিন্তু তুমি বারবার আমার সামনে এসে আমার কষ্টগুলো মনে করিয়ে দিচ্ছ।’

ধ্রুব চোখ বন্ধ করে রাখল কিছুক্ষণ। অতঃপর চোখ খুলে। চোখ খোলার পর ধ্রুব চরম পর্যায়ের অবাক হয়। কারণ সে সুহানিকে এখনো নিজের চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিল। ধ্রুবর নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছিল না৷ সে দৌড়ে চলে যায় সুহানির কাছে। সুহানির মুখোমুখি দাঁড়ায় ধ্রুব।

অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকায় সুহানির দিকে। সুহানিও ধ্রুবকে এভাবে দেখে অবাক হয়ে গেছে। ধ্রুব সুহানিকে শুধায়,
‘তুমি বেঁচে আছ?’

সুহানি আর নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করে না। জড়িয়ে ধরে ধ্রুবকে। প্রিয়তমের বুকে আশ্রয় খোঁজে। ধ্রুবও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সুহানিকে।

ধ্রুব হঠাৎ করেই সুহানিকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলে,
‘তুমি যদি বেঁচেই থাক তাহলে ম’রে যাওয়ার অভিনয় কেন করলে? কেন এত কষ্ট দিলে আমায়?’

সুহানি উত্তর দেওয়ার মতো কিছু খুঁজে পায়না। এরমধ্যেই ধীরাজ ও অর্পাও চলে আসে। তারা দুজনেও সুহানিকে দেখে চরম পর্যায়ের অবাক হয়েছে। ধীরাজ বলে ওঠে,
‘সুহানি আপু তুমি…’

সুহানি কিছু বলতে যাবে তার আগেই ধীরাজ বলে ওঠে,
‘থ্যাংকস গড তুমি সেফ আছ। আম্মু যে এত জঘ’ন্য খেলা খেলবে আমি ভাবিও নি।’

ধ্রুব অবাক গলায় বলে,
‘মানে?’

ধীরাজ তার ফোন বের করে একটি নিউজ দেখায় ধ্রুবকে। নিউজে বলছে অহনা খন্দকার নিজের সব অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি লোক লাগিয়ে নিজের হবু পুত্রবধূকে মে’রে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন। যেই লোককে তিনি এই কাজে নিয়োজিত করেছিলেম(কালাম) তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ধ্রুব সম্পূর্ণ হতবাক হয়ে যায় এই নিউজ দেখে। সুহানি যদিওবা অহনা খন্দকারকে সন্দেহ করছিল কিন্তু তিনি যে এত নিচে নামবেন সেটা কখনো আশা করে নি।

★★★
রাঙামাটি থেকে ঢাকায় ফিরে এসেছে প্রত্যেকে। ধ্রুব সুহানি, সীমান্ত ও মিরার মুখোমুখি বসে আছে। মিরা ধ্রুবর উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘তুমি কিছু মনে করো না ধ্রুব। সুহানির সেফটির জন্য আমরা এই মিথ্যা নাটক সাজিয়েছিলাম।’

‘আপনারা একদম ঠিক করেছিলেন। আপনাদের জন্যই সুহানি এখনো সেফ আছে। আমি আমার আম্মুর কৃতকর্মের জন্য আপনাদের সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া যে সুহানির কিছু হয়নি।’

সুহানি বলে ওঠে,
‘কিন্তু তোমার মায়ের জন্য দুজন নিরপরাধ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। যাদের একজন গরীব ড্রাইভার। আরেকজন আমার বান্ধবী।’

‘আমি তো তাদের জীবন ফিরিয়ে দিতে পারবোনা কিন্তু আম্মু যাতে তার কৃতকর্মের উপযুক্ত শা’স্তি পায় সেটা আমি এনসিউর করব।’

★★★
ধ্রুব জেলখানায় এসেছে অহনা খন্দকারের সাথে দেখা করতে। ধ্রুব তার মুখোমুখি হয়ে প্রশ্ন করে,
‘কেন এমন করলে আম্মু? এসব করে তুমি কি লাভ পেলে?’

‘ভুল করেছি আমি বেটা। এখন সেই ভুলের শাস্তি ভোগার জন্য আমি প্রস্তুত।’

‘ভুল নয় অপ’রাধ। তোমার জন্য দুজন নিরপরাধ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।’

অহনা খন্দকার আর কিছু বলতে পারলেন না। ধ্রুব বলল,
‘আজ থেকে তুমি আমার কাছে মৃ’ত।’

কথাটা বলেই সে রওনা দেয়। অহনা খন্দকার ডুকরে কেঁদে ওঠেন। এভাবেই হয়তো এখন নিজের পাপের ফল পাবেন তিনি। কথায় আছে না, “পাপ কারো বাপকেও ছাড়ে না।”

★★★
কয়েক মাস পর,
আজ অহনা খন্দকারের মামলার রায় হলো। তাকে এবং কালামকে যাবজ্জীবন কা’রাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে।

ধ্রুব ও ধীরাজ যদিও এই সিদ্ধান্তে খুশি কিন্তু কোথাও না কোথাও তাদের কষ্টও হচ্ছে। হাজার হোক, অহনা খন্দকার তাদের নিজের মা।

ধীরাজ মন খা’রাপ করে নিজের রুমে বিছানায় বসল। অর্পা তার কাছে বসল। ধীরাজের হাতে হাত রেখে বলল,
‘তুমি একদম মন খা’রাপ করো না ধীর। দেখবা সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি জানি তোমার মায়ের জন্য তুমি কষ্ট পাচ্ছ। কিন্তু তিনি এটা ডিজার্ভ করেন।’

‘একদম ঠিক বলেছ তুমি অর্পা। বাট জানো আমি এখন অনেক একা ফিল করছি। আমার কারো সঙ্গর প্রয়োজন। তুমি আমাকে সঙ্গ দেবে তো?’

অর্পা স্মিত হেসে জবাব দেয়,
‘অবশ্যই। আমি সবসময় তোমার সাথে আছি। বাই দা ওয়ে,আমি তাহলে চ্যালেঞ্জটা জিতেই গেলাম।’

‘কিসের চ্যালেঞ্জ?’

‘ভালোবাসার।’

‘আমি কখন বললাম আমি তোমাকে ভালোবাসি?’

অর্পার মুখটা চু’পসে গেল। সে বলল,
‘তার মানে ভালোবাসো না?’

‘না।’

অর্পা মন খা’রাপ করে চলে যেতে চাইলে ধীরাজ তার হাত আটকে ধরে বলে,
‘ভালোবাসি না কিন্তু বাসতে চাই। তোমার সাথে #প্রেমের_উড়ান দিতে চাই।’

অর্পা খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরে ধীরাজকে। একে অপরের ভালোবাসায় সিক্ত হয় তারা।

★★★
‘হ্যালো মিস এয়ার হোস্টেজ? উইল ইউ বি মাই মিসেস?’

ধ্রুবর মুখে এমন প্রস্তাব শুনে হেসে দেয় সুহানি। বলে,
‘আমি তো রাজি।’

‘তাহলে আমি ডাকি কাজি?’

সুহানি খিটখিট করে হেসে বলে,
‘তুমি কি চাও আমরা এই বিদেশে বিয়ে করি?’

‘কেন প্রব্লেম কোথায়? অনেকেই তো দুবাইয়ে বিয়েশাদি করে।’

‘বাট আমরা তো এখন ডিউটিতে আছি। তাছাড়া আমাদের কোন রিলেটিভও নেই।’

‘কোথায় লেখা আছে যে ডিউটিতে থাকলে বিয়ে করা যাবে না? আর রিলেটিভ নেই কে বলল?’

‘মানে?’

হঠাৎ করে ধীরাজ,অর্পা, মিরা, সীমান্ত সবাই চলে এসে সুহানিকে চমকে দিল। ধীরাজ বলল,
‘চলো আপু আজ তোমাদের বিয়ে হয়েই যাক।’

সুহানি অবাক হয়ে ধীরাজের দিকে তাকায়। ধীরাজ বলে,
‘আমাদের বিয়েটা স্মরণীয় করে রাখার ক্ষুদ্র প্রয়াস।’

দুবাইয়ে খুব ধুমধাম করে দুজনের বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যায়। অতঃপর ধ্রুব সুহানির হাতে চুমু খেয়ে বলে,
‘চলো এয়ার হোস্টেজ এখন এই পাইলটের সাথে আজীবনের জন্য #প্রেমের_উড়ান দিতে হবে।’

সুহানিও হেসে বলে,
‘আপনি প্রস্তুতি নিয়ে নিন পাইলট। #প্রেমের_উড়ান দেওয়ার যাত্রাটা কিন্তু শুরু হয়ে গেছে।’

এভাবেই সুন্দর মুহুর্তের সাথে একটি সুন্দর গল্পের সমাপ্তি ঘটে!

✨সমাপ্ত✨

[এই গল্পের জার্নি এখানেই শেষ হলো। গল্পটা নিয়ে আপনাদের সকল অনুভূতি আজকে প্রকাশ করার আর্জি পেশ করলাম। পুরো গল্পটা সম্পর্কে আপনাদের মূল্যবান মতামত ও রিভিউ দিতে ভুলবেন না। খুব শীঘ্রই নতুন গল্প নিয়ে ফিরব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ হাফেজ ❤️✨]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here