ফাগুন প্রেম পর্বঃ ০৬

0
631

#___ফাগুন_প্রেম___
#_লিখাঃ Bornali Suhana
#_পর্বঃ ০৬
নিজের দিকে একবার তাকিয়ে সাথে সাথে খপ করে দু’হাত দিয়ে ক্রস করে ঘাড় অবধি নিয়ে বুক ঢেকে নেয়। একবার ইভানের দিকে তাকিয়ে আর এক সেকেন্ডও না দাঁড়িয়ে উল্টো ঘুরে এক দৌড় দেয়।
ছিঃ ছিঃ বর্ণালী কিভাবে তুই এতো বড় ভুল করলি? কিভাবে?
লজ্জায় মাথা কাটা গেছে। কিভাবে দাঁড়াবি এবার ইভানের সামনে? নিজেকে একনাগাড়ে বকেই যাচ্ছে।
কিন্তু সবচেয়ে বড় বিপত্তি তো ঘটে রেলিঙের পাশে গিয়ে।
আসার সময় তো রেলিঙের উপর বসে লাফ দিয়ে নিচে নেমে এসেছিলাম।
কিন্তু এখন যাবো কিভাবে?
এতোটা উপরে উঠবো কিভাবে?
বর্ণালী একবার নিচের দিকে তাকাচ্ছে একবার রেলিঙের দিকে। উঠানটা নিচু হওয়ায় এখন রেলিঙের উচ্চতা প্রায় নিজের বুকের সমান মনে হচ্ছে। কিন্তু যেভাবেই হোক যেতে তো হবেই। ইভানের দেয়া প্যাকেটটা আগে রেলিঙের উপর দিয়ে নিচে ফেললো। তারপর জুতো খুলে ফেললো। এখন নিজেকে যদি এভাবে ফেলা যেতো! আরে ধুর কি সব ভাবছি আমি! উফ বর্ণালী নিজেকে শান্ত কর। চেষ্টা কর তুই পারবি। নাহলে যে আজ রাত তোকে এখানেই থাকতে হবে। এসব ভেবে ভেবে রেলিঙের পাশে এক পা তুলে উঠার চেষ্টা করছে। ইভান পেছন থেকে তা খুব করে লক্ষ্য করছে আর মিটিমিটি হাসছে। ইভান ওর দিকেই এগিয়ে এসে বললো,
-“May I help you?”
-“yes please….”
একধ্যানে এ কথা বলেই খেয়াল করে সে কার সাথে কথা বলছে! পিছিন ফিরে তাকাতেই যেনো দম যায় যায় অবস্থা। বুকের ধুকপুকানি আওয়াজটা আবারো বেড়ে গেছে। একটু আগের কথা খেয়াল হতেই আবারো দু’হাতে বুক ঢেকে পেছন ফিরে যায়। ইভান মুখ চেপে হাসছে। বর্ণালী পিছন দিকে না তাকিয়েই নিজেকে একটু সামলে বললো,
-“No…. no need. please you can go now.”
-“Are you sure?”
-“y….yeah please.”
-“okay…. I’ll leave but আগে তুমি ভেতরে যাও তারপর আমি চলে যাবো।”
হুহ আগে তুমি চলে যাও তারপর আমি যাবো। শখ কত! এতটুকুন একটা ছেলে আর আসছে ভালোবাসা দেখাতে! হুহ ঢংয়ে আর বাঁচিনা। একা একাই বিরবির করে কথাগুলো বলছে আর কখনো আকাশের তারা গুনছে তো কখনো পা দিয়ে নিচের ঘাস নাড়াচাড়া করছে। ইভান ভালো করেই বুঝতে পারছে বর্ণালীর মনের অবস্থা। হুট করেই মাথা নিচু করে রেলিঙের পাশে হাটুর উপর ভর দিয়ে বসে গেলো।
-“বর্ণালী আমার কাধের উপর পা রাখো।”
এমন কথা শুনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। এই ছেলে এসব কি বলছে? পাগল হয়ে গেলো নাকি? হওয়ার কি আর বাকি আছে? ও তো এমনিতেই পাগল।
-“মানে কি?”
-“তুমি কি রুমে যাবে না? এখানেই থাকবে?
নাকি আজই শশুর বাড়ি যাবে আমার সাথে?”
আমি এখনো ওর দিকে তাকাইনি অন্য দিকে চেয়ে আছি। কি করবো ভেবে পাচ্ছি না।
-“মজা করছিলাম বর্ণালী। এসো পা দাও আমার হাতের উপর। কাধের মাঝে এক হাত দিয়ে ভর দিয়ে উঠে যাবে।”
-“ভয় করছে পরে যাবো আমি।”
-“এটুকু বিশ্বাস রাখতেই পারো বর্ণালী। আমি থাকতে তোমাকে পড়তে দিবো না।”
একটু ঘাড় ঘুরিয়ে ওর দিকে তাকালাম। ও আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। এক হাতের উপর আরেক হাত দিয়ে এক হাটু ভাজ করে বসে আছে। জানিনা কেন কিন্তু আমার খুব খারাপ লাগছে এভাবে ওর হাতের উপর পা রাখতে।
-“কি হলো? আর কত ভাববে? বৃষ্টি বেড়ে যাচ্ছে তো। তাড়াতাড়ি করো। একবার বিশ্বাস করে দেখো শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত এই বিশ্বাস ভাঙবো না।”
কি মনে করে ইভান এমন কথা বলছে তা আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি এসব কোন কিছু নিয়ে ভাবতে চাই না। আপাতত এখান থেকে রুমে যেতে পারলেই বেঁচে যাই। সেই কখন থেকেই বর্ণালী মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে এক হাতে আরেক হাত কচলে যাচ্ছে। বারবার চুলগুলো কানের পেছনে নিয়ে ঠিক করছে। কিন্তু পুনরায় বাতাস এসে উড়িয়ে এলোমেলো করে দিয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির পানি এসে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে ওকে। কিছু কিছু চুল কপালের সাথে লেপ্টে আছে। কি সুন্দর লাগছে দেখতে বর্ণনা করার মতো না। ওর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বললাম,
-“এর চেয়ে বেশি বিশ্বাস তো অপরিচিত যখন ছিলাম তখনো করেছিলে বর্ণালী। আজ তো একটু হলেও আমাকে চিনো তবে কেন বিশ্বাস করতে পারছো না?”
এমন কথা শুনে বর্ণালী কেন জানি আর কিছুই বলতে পারলো না। নিজেরই খারাপ লাগতে শুরু করলো ওর। আসলেই তো প্রথম দিন তো এর চাইতে বড় বিশ্বাস করেছিলো তাহলে আজ কেন নয়? না এখানে বিশ্বাসের প্রশ্ন আসছে না। এখানে অন্য কিছু বাঁধা দিচ্ছে ওর মনকে।
কিন্তু সেটা কি? তা বর্ণালীর জানা নেই। আর কিছু না ভেবেই ডান পা ওর হাতের উপর তুলে দিলো। এক হাতে ওর কাঁধ চেপে ধরলো। এমন স্পর্শ পেতেই ইভানের শরীরে যেনো এক অজানা শিহরণ বয়ে গেলো। বুক ধুকপুক করছে। নিজের হার্টবিট খুব ভালো করেই সে শুনতে পারছে। কিন্তু নিজেকে একটু শান্ত করতে লম্বা একটা নিশ্বাস নিলো। এই প্রথম ওর এমন অনুভূতি হচ্ছে তাও তার ভালোবাসার মানুষের জন্য। ইভান একটু উঁচু হয়ে উঠলো। বর্ণালী সাথে সাথে ভয় পেয়ে ইভানের কাঁধ খামচে ধরে। মনে হয় পাঁচ আঙুলের নখের আঁচড় বসিয়েই দিলো।
-“নামাও নামাও প্লিজ আমি পড়ে যাবো।”
-“এই মেয়ে এভাবে ভয় পেলে হবে নাকি? আর এইটুকু জায়গা থেকে পড়লে কিছুই হবে না। এক হাত দিয়ে রেলিঙে ধরো।”
-“না না আমি পারবো না।”
ইভান ওকে নামিয়ে দিলো। আস্তে আস্তে ওর কাঁধ ছেড়ে দাঁড়ালো। ইভান খেয়াল করলো বর্ণালী এখনো কাঁপছে।
-“ওকে আমার কাছে অন্য একটা উপায় আছে তোমাকে ওইপাশে পাঠানোর।”
-“ওকে তাহলে সেভাবেই পাঠাও।”
-“আর ইউ শিওর?”
-“হ্যাঁ হ্যাঁ শিওর। অন্ততপক্ষে এটা থেকে তো ভালোই হবে।”
-“হুম তা হবে।”
কথাটা শেষ করেই ইভান রেলিঙ টপকে ভেতরে চলে গেলো। বর্ণালী হা হয়ে তাকিয়ে আছে কিভাবে গেলো এই ছেলে কিছুই বুঝতে পারলো না। বর্ণালীর দিকে হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বর্ণালী চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। কি করছে এই ছেলে?
-“কি?”
-“আরে বাবা হাত দাও।”
-“কে….কেন?”
-“আরে ভয় নেই। হাত দাও ভেতরে আসবে না?”
-“কিন্তু?”
-“দেখো এর চেয়ে ভালো কোন উপায় আমার জানা এই। তোমার জানা থাকলে বলো?”
বর্ণালী এখনো অবিরত হাত কচলে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ ভেবে হাত বাড়িয়ে দিলো ইভানের হাতের উপর। ইভান খুব শক্ত করেই ওর হাত ধরে নেয়। যেনো হাত ছাড়লেই হারিয়ে যাবে। কখনোই ভাবতে পারেনি এভাবে নিজে থেকে ও হাত বাড়িয়ে দিবে। হাত ধরে একটু উপরে তুলে নিলো। রেলিঙের ফাঁকে পা ঢুকিয়ে বর্ণালী উপরে উঠে। ইভান হুট করেই বর্ণালীর হাত নিয়ে নিজের দু কাঁধের মাঝে রাখে। বর্ণালী চোখ বড় বড় করে চেয়ে আছে। ইভান বর্ণালীর পেটের দু’দিকে দু’হাত দিয়ে ধরে। সাথে সাথে ও চোখ কুচকে বন্ধ করে নেয়। হার্টবিট ১০০গতিতে দৌড়াচ্ছে। ওর হার্ট খুব দ্রুত বিট করছে তা স্পষ্ট শুনতে পারছে। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে মনে হয় মারাই যাবে এখন। কিছুই বুঝতে পারছেনা কি হচ্ছে! নিশ্বাস ভেতরে নিয়ে আটকে ধরে রেখেছে কিন্তু নিশ্বাস ফেলার মতো শক্তি পাচ্ছেনা।
এমন অনুভূতি কেন হচ্ছে ওর?
ইভান ওকে উঁচু করে শুন্যে তোলে এক ঝটকায় ভেতরে নিয়ে আসে। তাল সামলাতে না পেরে বর্ণালী ইভানের বুকে এসে পড়ে। ইভানের পিঠ দেয়ালে গিয়ে ঠেকেছে। বর্ণালী জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। ইভানের বুকে এসে লাগছে ওর উষ্ণ নিশ্বাস। মাতাল করা ওর চুলের সেই গন্ধ। বর্ণালীর ঘোর কাটতেই চট করে সরে দাঁড়ায় ইভানকে ছেড়ে। চুপচাপ নিচের দিকে চেয়ে আছে।
-“সরি।”
ওর মুখ থেকে সরি শুনে ইভান ব্রু কুচকে তাকায়। বর্ণালীর হাত ধরে এক টানে আবারও ওর বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। ও চোখ বড় বড় করে চেয়ে আছে আর ইভান ঠোঁট বাকা করে দুষ্টুমি ভরা চোখ নিয়ে মিটিমিটি হাসছে।
-“এ….এই ছাড়ো আমাকে। কি করছো কি এসব?”
-“সবসময় এমন ছাড়ো ছাড়ো বলো কেন বাসন্তী?”
-“দেখো….”
-“দেখাও কি দেখাবে? আমি চোখ খুলে আছি। এভাবে কিন্তু তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। আমি ছাড়া অন্য কারো সামনে ভুলেও এভাবে যেও না।”
-“প্লিজ ছাড়ো বলছি।”
-“এতো বেশি বকবক করো কেন? চুপচাপ থাকতে পারো না?”
বর্ণালী ভয় পেয়ে চুপ মেরে যায়। ইভানের কাধ খামছে ধরে আছে। কাঁধ খুব জ্বালা করছে কিন্তু এতো বড় সুখের কাছে এই জ্বালা তেমন কিছুই না।
-“যাবে বর্ণালী।”
-“হু”
-“একবার বলবে ভালোবাসি?”
-“আমি তোমাকে ভালোবাসি না।”
-“ভালো তো তোমাকে বাসতেই হবে বাসন্তী। সেটা হোক আজ বা কাল।”
কথাটা বলেই ইভান বর্ণালীকে ছেড়ে দেয়। এবার একটা স্বস্থির নিশ্বাস নিলো বেচারি। জুতো পড়ে প্যাকেটটা হাতে নিয়েই রুমের দিকে দৌড় দিচ্ছিলো তখনি ইভান বলে,
-“এই শুন?”
বর্ণালী পিছন না ফিরেই দাঁড়িয়ে যায়।
-“ভালোবাসি তোমায়।”
বলেই রেলিং টপকে বাইরে এসে হেসে দিলো। বর্ণালী তো ওর কথা শুনে রীতিমতো কাঁপছে। রাগ করতে চাইছে কিন্তু পারছে না। ওর মাঝে যে রাগ জিনিসটা নেই। আর কখনো ছিলোও না। আর না দাঁড়িয়ে ভেতরে গিয়েই দরজা লক করে দেয়। জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। এতো সময় যা হয়ে গেলো আসলেই হয়েছে নাকি স্বপ্ন ছিলো? নিজেকে একটা চিমটি কেটে দিলো। ধ্যাৎ সব সত্যিই হয়েছে। চুল ও ড্রেস প্রায় অর্ধেকটা ভিজে গেছে বৃষ্টিতে। এই তো ইভানের দেয়া প্যাকেট। কি আছে এইটাতে? যাই আগে ড্রেস চেঞ্জ করে নেই নাহলে আবার ঠান্ডা লেগে যাবে।
`
ইভান বাসায় ঢুকেই চকলেটের বক্স আর আইসক্রিমের বক্সটা ঈষার হাতে ধরিয়ে দেয়।
-“কি কি হলো ভাই?”
কথাটা শুনেই ইভান যেনো আকাশ থেকে পড়লো। ওকে এসব কথা জিজ্ঞেস করায় লজ্জায় পরে গেছে? যদিও ছোটবেলা থেকে সবকিছু ওর সাথে শেয়ার করেছে তবুও কেমন যেনো লজ্জা লাগছে কিভাবে বলবে এসব? পুরোটা রাস্তা বেচারা লজ্জায় হাসতে হাসতে এসেছে। এখনো সেই লজ্জামাখা হাসিটা ওর ঠোঁটের কোণে ঝুলে আছে। কি জবাব দিবে ভেবেই পাচ্ছেনা। কিন্তু যা যা হয়েছে তা স্বপ্নের চেয়েও বেশি ছিলো আজ ওর কাছে। মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পাওয়ার মতো বিষয়টা। যাবার আগে সে ভাবতেও পারেনি এমন কিছু পাবে। এতোটা কাছে থেকে আজ তার বাসন্তীকে অনুভব করলো।
-“কিরে বল না? নাকি এখনি সিক্রেট রাখতে শিখে গেলি?”
-“আরে না বুমনি সব বলবো তোকে। তোকে না বললে কাকে বলবো? আমার যে বেস্ট বোন বেস্ট ফ্রেন্ড একমাত্র তুই।”
-“আচ্ছা যা আগে চেঞ্জ করে নে। নয়তো ঠান্ডা লেগে যাবে। ডিনারের পর কফি খেতে খেতে সব শুনবো।”
-“ওকে বুমনি। লাভ ইউ।”
বলেই ইভান ঈশার মাথার চুলের উপর একটা চুমু একে চলে যায়। ঈশা বসে বসে ভাইয়ের কান্ডে হাসছে। যদিও ভাইয়ের জন্য আজ ওর মনটা অনেক ভালো।
`
চেঞ্জ করে এসে বর্ণালী বারবার প্যাকেটটা নেড়েচেড়ে দেখছে। খুলবে কি খুলবে না ভাবছে। ভাবতে ভাবতেই খুলে নিলো। খুব করে হাত কাঁপছে ওর। বুক ধুকধুক করতে লেগেছে। প্যাকেট খুলে দেখে একটা চকলেট বক্স। একটা আইসক্রিমের বক্স। আরেকটা প্যাকেটে একটা নথ দেখে চমকে যায়। নথটা খুব বেশি বড় না আবার খুব বেশি ছোট না। রাউন্ড করা নথের চারপাশে অনেকটা ডায়মন্ড বসানো। চেইনের মাঝে ছোট ছোট আরো কিছু ডায়মন্ড বসানো রয়েছে। সাথে একটা চিরকুট। একবার চোখ বন্ধ করে খুলে নথটা বিছানার উপর রেখে কাঁপা কাঁপা হাতে চিরকুটটা খুলে পড়তে লাগলো। ওটাতে কিছুটা এমন লেখা,
-“””প্রথম যেদিন তোমায় দেখে প্রেমে পড়ি সেদিন অনেকটা তোমার সৌন্দর্য দেখেই প্রেমে পড়েছিলাম। কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে পারছি আমার ভালোলাগা হয়তো প্রথম তোমার সৌন্দর্য ছিলো কিন্তু এখন এমন না৷ এখন তোমার সৌন্দর্যের চেয়ে তোমার মনকে অনেকবেশি ভালোবেসে ফেলেছি। জানো সেদিন তুমি সব দিকেই সম্পূর্ণা ছিলে কিন্তু তোমার মাঝে সবকিছু থেকেও কিছু একটার কমতি ছিলো৷ আর এই নথটাই সেই কমতি জিনিস৷ পরেরবার যখন শাড়ি পড়বে প্লিজ নাকের মাঝে এই নথটা পড়ে নিও। তোমাকে অনেক মানাবে। জানিনা কিভাবে নিচ্ছো আমার এমন কাজ কিন্তু সত্যি বলছি প্লিজ আমার ভালোবাসার দেয়া প্রথম উপহারটা গ্রহণ করে আমাকে ধন্য করো।”
এসব পড়তেই ওর বুক আবারো ধুকপুক করছে। এই হার্টবিট তার একদম ভালো লাগেনা। নিজের কন্ট্রোলএ থাকেনা। ইচ্ছেমতো বিট করেই যায় যখন তখন।
কিন্তু এসব কি করেছে এই ছেলে?
এতো এক্সপেন্সিভ গিফট কিভাবে আমাকে দিতে গেলো?
কিভাবেই ভাবলো আমি ওর এই গিফট নেবো? কালকেই ওকে ওর গিফট ফেরত দিতে হবে। এটা আমি কখনোই রাখতে পারবো না।
`
ইভান ঈশার কোলে একটা কুশন রেখে তারউপর মাথা রেখে শুয়ে আছে। আর ঈশা পরম আদরে চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। ইভান প্রায়ই এমন বাচ্চামো করে। হুটহাট এসেই তেল নিয়ে ঈশার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়বে। মাথায় তেল লাগিয়ে মালিশ করে দেয়ার জন্য। আবার ঝগড়া লাগতেও ওর সময় লাগেনা। টম এন্ড জেরি টাইপের। কিন্তু ঝগড়াটা খুব কম হয় বন্ধুত্তটা বেশি। কিছু কিছু জিনিস ছাড়া বাকি সবকিছু খোলে বলে দিয়েছে বোনকে। ঈশা তো সব শুনে অবাক।
ওর ভাই এতো রোমান্টিক? কিভাবে?
এতো সুন্দর গিফট দিলো?
ভাবতেও পারেনি এমন কিছু গিফট করতে পারে এই পিচ্চি ভাইটা।
-“কিরে আমাকে তো কখনো একটা চুড়িও গিফট করিস নি আর না হওয়া বউয়ের জন্য এখনি ডায়মন্ডের নথ গিফট করে আসলি?”
-“তুই কি এখনি স্টার জলসার ননদের পার্ট নিতে লেগে গেলি?”
ভাই-বোন দুজনেই হোহোহোহো করে হেসে দিলো।
-“যাও রোমিও সাহেব এখন গিয়ে ঘুমাও। কাল আবার না হওয়া বউয়ের ডিউটি করতে হবে।”
-“বুমনি তুইও না।”
-“সত্যিই তো বললাম।”
-“হুম কিছুটা ঠিকই বলেছিস। কিন্তু জানিস বুমনি ও সবার চাইতে অন্যরকম। জানিনা কবে আর কিভাবে ওকে রাজি করাতে পারবো।”
-“আরে ডোন্ট ওরি। দেখিস খুব শিঘ্রীই ও রাজি হয়ে যাবে। তোর ফাগুন প্রেমে ওকে সাড়া দিতেই হবে।”
-“হবে তো এমন বুমনি?”
-“আলবাত হবে। যা তো এখন আর আমাকে জ্বালাস নে।”
-“হুহ যা তোকে কে জ্বালাচ্ছে? সর আমাকে উঠতে দে।”
-“এক চাপড়ে সবকটি দাঁত ফেলে দিবো।”
-“ইইইইইইই নে নে ফেলে দেখা।”
সবকটি দাঁত বের করে ঈশার মাথায় একটা চাপড় মেরে দৌড় দেয়। ঈশা ওখানেই বেকুব হয়ে বসে থাকে। কিছুক্ষণ পর একা একাই হেসে বলে,
-” পাগল একটা।”
কিন্তু ওর মাথায় অন্য ভাবনা।
আচ্ছা এখন সজিব কি করছে?
কি জানি খুব ইচ্ছে করছে ওকে দেখতে।
কিন্তু কেন এমন হচ্ছে আমার সাথে?
আমি ওর প্রেমে পড়ে গেলাম নাতো?
প্রেমে পড়েছি কিনা জানিনা কিন্তু ওকে আমার ভালো লাগতে শুরু করেছে। বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে সাথে চারজন মানুষের মনের মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু সবার বৃষ্টির ধরন আলাদা।
ইভানের মনে চলছে তার বাসন্তী কি তাকে আপন করে নেবে? কবে আসবে সেদিন?
আর বর্ণালীর মনে ইভানকে নিয়ে নানারকম দ্বিধা কাজ করে যাচ্ছে। কেন করছে এই ছেলে এমন?
আমি তো কখনোই ওকে ভালোবাসতে পারবোনা।
কেন এভাবে আমার পিছু পরে আছে?
অন্যদিকে ঈশার মনে যা হচ্ছে ভালোবাসা নাকি শুধুই ভালোলাগা তা বুঝতে পারছেনা।
আর সজিব সেতো ভেবেই মরে যাচ্ছে আজকে কেন মেয়েটা এমন করলো? ও তো মেয়েটাকে মন থেকে সরিয়েই ফেলেছিলো তাহলে কেন আবার ওর সামনে এলো?
#______চলবে………..

Part 5
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=119667569703602&id=103632171307142
💛

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here