ফাগুন প্রেম পর্ব: ০৫

0
659

#____ফাগুন_প্রেম_
লেখনীতে: Bornali Suhana
পর্ব: ০৫
💛
বর্ণালী বই রেখে চশমা চোখে নিয়েই এক দৌড়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। আশেপাশে তাকিয়ে দেখছে আসলেই এই পাগলটা এসেছে কিনা?
নাকি ওকে মিথ্যে বলছে?
কোথাও তো দেখতে পাচ্ছেনা। কিন্তু ইভান ঠিকই বর্ণালীকে দেখতে পাচ্ছে।
-“এদিক-ওদিক না তাকিয়ে তারাতাড়ি এসো।”
-“মানে! তুমি কোথায়?”
-“এই তো সুপারি বাগানে।”
-“প্লিজ তুমি চলে যাও। কেউ দেখলে অনেক বড় প্রবলেম হয়ে যাবে।”
-“তাহলে আসবে না তুমি?”
-“নাহ আমি আসছিনা। তুমি প্লিজ চলে যাও।”
-“ঠিক আছে তাহলে আমি এখন মেইন দরজায় এসে নক করবো। তখন কাকে কি বলবে ঠিক করে রাখো।”
-“এই এই প্লিজ প্লিজ এমন কিছুই করো না।”
-“তাহলে এসো। ২মিনিট সময় দিলাম।”
বর্ণালী ভয়ে এখনো কাঁপছে। শীতের মাঝেও ঘামতে লেগেছে। মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
-“দে…..দেখো একবার বোঝার চেষ্টা করো প্লিজ। আমি কিভাবে আসবো এতো রাতে?”
-“তা জানিনা। কিন্তু এখন তুমি না আসলে সত্যি বলছি আমি চলে আসবো।”
কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। একদিকে ভয়ে কাঁপছে অন্য দিকে ইচ্ছে করছে এই ছেলেটাকে থাপরে সবকটি দাঁত ফেলে দিতে। কিন্তু ও তো তা পারবে না। এতো সাহস ওর কখনোই ছিলো না আর হবেও না। ছোট থেকেই একটু চাপা স্বভাবের। কেউ কিছু বললে পালটা জবাব দিতে শেখেনি। চুপচাপ দাঁড়িয়ে হাজারও কথা শুনে চোখের জল ফেলে চলে আসতো।
-“কি হলো? আসছো নাতো? ঠিকাছে আমিই আসছি।”
-“এই এই না না। আ…..আমি আ….আসছি।”
-“কি বললে?”
-“আ…আসছি।”
বলেই বর্ণালী ফোন কেটে দেয়।
কিন্তু এখন কি করবে ও?
কিভাবে যাবে বাইরে?
তাও এতো রাতে! ভাবতেই শরীর অসার হয়ে আসছে। এই ছেলেটা কবে ওকে হার্ট অ্যাটাক করিয়ে ছাড়বে।
তাড়াহুড়োর মাঝে দরজা ভেতর দিয়ে লক করে বেলকনিতে এসে দাঁড়ায়।
ভাবছে কিভাবে এই রেলিং পার করে যাবে?
যদিও রেলিংটা কোমড় সমান তবুও ভয় কাজ করছে। নাহ যেতে তো হবেই তাকে। রেলিঙের বাইরে জুতো খুলে নিচে ফেলে দেয়। তারপর খুব খেয়ালে রেলিঙের উপর বসে।
“হে আল্লাহ এবারের মতো বাঁচিয়ে নিও। প্লিজ প্লিজ প্লিজ।”
এটুকু জায়গা লাফ দিতেই বেচারির অবস্থা একেবারে শেষ। চোখ বন্ধ করে দিয়ে মুখে হাত দিয়ে লাফ দেয়। মাটিতে পড়ে চিৎকার দিতেই চেয়েছিলো পরক্ষণেই নিজের মুখ নিজের হাতে চেপে ধরে। একবার আকাশের দিকে তাকায়। আকাশের অবস্থা ভালো না। বারবার বিজলী চমকাচ্ছে। মেঘ ঘুরঘুর শব্দ করে ডাকছে। যেকোন সময় বৃষ্টি নেমে আসবে পৃথিবীর বুকে। পৃথিবীকে সতেজ, নির্মল ও প্রানবন্ত করে দিয়ে যাবে। জুতো পড়ে একবার এদিক-ওদিক তাকিয়ে একটা দৌড় লাগায় সুপারি বাগানের দিকে।
সামনে এসেই দেখে ইভান পায়ের উপর পা তুলে এক হাত মাথার নিচে দিয়ে নারকেল গাছের নিছে শুয়ে আছে। উঠান থেকে একেবারে সরাসরি ওকে দেখা যাচ্ছিলো। পরনে ব্ল্যাক প্যান্ট আর হোয়াইট টি-শার্টের উপর ব্ল্যাক জ্যাকেট। বুকের পাশে টি-শার্টের মাঝে চশমা টাঙিয়ে রেখেছে। বর্ণালী ইভানের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।
`
ইভান বর্ণালীকে দেখে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। গোলাপী রঙের একটা ড্রেস আর সাদা রঙের একটা ধুতি পায়জামা পরে আছে। কিন্তু মেয়েটা এতোটাই পাগল ওড়নাটা পর্যন্ত পড়ে আসে নি। একদম হাঁপিয়ে গেছে। একবার পেছনে তাকাচ্ছে তো একবার তার দিকে তাকাচ্ছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে তার শরীর কাঁপছে। শীতে কাঁপছে নাকি ভয়ে কাঁপছে কিছুই বুঝে ওঠার আগে ইভানের টি-শার্ট খামচে ধরে নারকেল গাছের ওপর প্রান্তে নিয়ে যায়।
সজিবকে এইসময় দেখে বর্ণালীর প্রাণ যেনো বেড়িয়েই যাচ্ছে। যদি দেখে ফেলে তাহলে আজ আর ওর রক্ষে নেই। বর্ণালীর দৃষ্টি অন্য দিকে কিন্তু পাশে যে একটা পাগল আছে তার দৃষ্টি যে এই ছায়াবতীর থেকে সরছেই না। ফাগুনের হালকা হাওয়ায় ওর চুলগুলো উড়ে এসে মাঝে মাঝে ইভানের মুখ স্পর্শ করে দিয়ে যাচ্ছে। সে কি মাতোয়ারা গন্ধ। চুলের এমন গন্ধেই বেচারার পাগল হওয়ার উপক্রম। বর্ণালী ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে। কপাল কুচকে চোখ ছোট ছোট করে ঠোঁট দুটো চেপে মুখের ভেতর নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু চশমা পড়ার কারনে তার মায়াবী চোখ দুটো ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না। হাত দুটো এখনো ইভানের বুকের টি-শার্ট খামচে ধরে আছে। ইভান একবার নিজের বুকের দিকে তাকালো একটু হেসে আবারো বাসন্তীকে দেখতে মগ্ন হয়ে গেলো। একটা ঘোরের মাঝে চলে গেছে। এরকম অবস্থায় নিজেকে সামলে রাখা দায়৷ এই প্রথম ওকে এতো কাছ থেকে দেখছে। বুকের ধুকপুকানি আওয়াজটা আরো বেড়ে গেছে।
সজিব কলিংবেল বাজাতেই শারমিন বেগম এসে দরজা খুলে দেন।
-“কিরে এতো দেরি করলি যে?”
-“এই তো মা হয়েগেলো।”
-“খেতে আয় টেবিলে খাবার দিচ্ছি।”
-“বর্ণ খেয়েছে?”
-“হ্যাঁ খেয়েছে।”
সজিব মায়ের সাথে কথা বলতে বলতে ভেতরে চলে গেলো। আর ভাইটা ভেতরে যেতেই যেনো বেচারি প্রাণে বেঁচে গেলো। চোখ বন্ধ করে মনে মনেই বললো,
“উফ যাক বাবা এখন একটু স্বস্থির নিশ্বাস নিতে পারবো।”
অজান্তেই ইভানের দু’হাত বর্ণালীর কোমড়ে চলে গেছে। বর্ণালী চোখ বড় বড় করে নেয়। নিশ্বাস যেনো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কি করছে এই ছেলেটা। ইভান আবেশে চোখ বন্ধ করে বর্ণালীর চুলে মুখ ডুবিয়ে গন্ধ নিতে লাগে। বর্ণালীরও চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। শরীরের কাঁপন আরো বেড়ে গেছে। বুক ধুকপুক করছে মনে হচ্ছে এখনি হার্ট বেড়িয়ে আসবে। হুট করেই ইভানের নাক এসে গলার মাঝে লাগে। আকাশে বিজলী চমকে উঠে বজ্রপাতের আওয়াজ ভেসে আসতেই বর্ণালীর ঘোর কাটে। বাস্তবে ফিরে আসে সে।
এসব কি হচ্ছে!
একদম ঠিক হচ্ছেনা এসব। ছিঃ ছিঃ কিভাবে এসব করতে দিচ্ছে ও! নিজেই নিজেকে বকে যাচ্ছে। আজ নিজেকে যেনো নিজের কাছেই অনেক ছোট মনে হচ্ছে। চোখ কুচকে বন্ধ করে উপরের ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে ধরে জোরে এক নিশ্বাস নিয়ে ইভানকে ধাক্কা দিয়ে দেয়। ইভান পড়তে গেলেই ও ভয় পেয়ে এক পা এগিয়ে যাই তাকে ধরতে। কিন্তু সে নিজেই নিজেকে সামলে নেয়। বর্ণালী নিচের দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে।
-“আ…….অ্যাম সো সরি। একচুয়েলি আ….আই কান্ট…..।”
ইভান ভেবেছিলো বর্ণালী খুব বেশি রিয়েক্ট করবে কিন্তু না পরক্ষণেই ওর ধারণা ভুল প্রমাণিত হয় বর্ণালীর কথায়।
-“এ…..এখানে কেন এসেছো?”
-“হু! না মানে…. তুমি আমায় ফাঁকি দিয়ে চলে এলে কেন?”
-“ক….কই ফাঁকি দিলাম?”
-“আচ্ছা? দাওনি?”
-“আ….আমার একটু তাড়া ছিলো তা….তাই চলে এসেছি।”
-“তাই নাকি? তাহলে তো আমি এসেছি ভালোই হয়েছে।”
-“দেখো প্লিজ চলে যাও। অল্পের জন্য আজ বেঁচে গেছি একটুর জন্য ভাইয়া দেখে নিতো। আর এখনি বাবা এসে পড়বেন যদি এভাবে দেখেন তাহলে অঘটন ঘটে যাবে।”
-“আমিও তো চাই অঘটন ঘটুক। তাহলে তোমায় আমার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবেন।”
ওর মুখে এমন কথা শুনে আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা। এতো পাগল মানুষ হয় নাকি! হয়ই তো হুম হয়।
নাহলে আল্লাহ হয়তো ওকেই এক পিচ বানিয়েছেন।
-“পা…..পাগল নাকি?”
-“হুম তোমার পাগল। প্লিজ বর্ণালী আমায় একটা সুযোগ দাও।”
-“তোমার রেলগাড়ী এখনো ওইখানেই আটকে আছে?”
-“হ্যাঁ আছে আর এখানেই আটকে থাকবে সারাজীবন।”
-“দেখো এটা কখনোই সম্ভব না।”
-“কেন সম্ভব না।”
-“তুমি ভালো করেই জানো কেন সম্ভব না।”
-“এটা কোন কারণ হলো? আগের যুগ থেকেই বড় ছোট বিয়ে হয়ে আসছে। আর তুমি এখনকার যুগের মেয়ে হয়ে এমন কথা বলছো? কোন হাদিসে নেই যে ছেলে বড় আর মেয়ে ছোট হতেই হবে।”
-“হ্যাঁ বলছি। আমাদের সমাজ কখনোই এমন কিছু মেনে নেয়না ইভান।”
-“চাইনা আমার সমাজ। তুমি মেনে নিলেই হলো। আমি তোমায় নিয়ে আমার আলাদা একটা সমাজ তৈরী করবো যেখানে শুধু তুমি, আমি আর আমাদের গভীর ভালোবাসা থাকবে।”
-“আমি পারবোনা। দয়া করে আমার পিছু ছেড়ে দাও। আর এখান থেকে চলে যাও।”
বলেই বর্ণালী পিছন ফিরে যেতে নিলেই ইভান ওর হাত ধরে নেয়। বর্ণালী পিছনে তাকিয়ে দেখে ইভান ছলছল চোখে মাটিতে বসে আছে। যে কোন সময় এই জল গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়বে।
-“পি….প্লিজ বর্ণালী আ…আমাকে এভাবে কষ্ট দিও না। আ….আমি পারবো না তোমাকে ছাড়া আমার জীবন সাজাতে।”
-“হাত ছাড়ো প্লিজ।”
-“না ছাড়বো না।”
-“কেন ইভান? কেন এমন করছো? কেন বুঝতে পারছো না? এটা কখনই সম্ভব না। প্লিজ আমাকে আর ডিস্টার্ব করো না। আর কখনোও আমার সামনে এসো না।”
ইভান আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনা। চোখে জমে থাকা জল নিজের অজান্তেই গড়িয়ে পড়ে।
-“কেন পারবে না হ্যাঁ? কেন? তোমার কাছে আমার ভালোবাসার একটুও মূল্য নেই?”
-“না পারবো না আমি তোমার ভালোবাসার মূল্য দিতে।”
ইভান চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়ালো। বললেই হলো নাকি! কখনোই না। আমি তোমাকে কখনোই ছাড়বোনা। তুমি আমারই হবে। আল্লাহ তোমাকে আমার জন্যই পাঠিয়েছেন নয়তো কেন তোমাকে আমি আমার স্বপ্নে দেখতাম! আর কেনই বা ভাগ্য আমাকে তোমার কাছে নিয়ে আসতো? অবশ্যই আল্লাহ আমাদের দুজনের ভাগ্য এক কলমেই লিখেছেন। আল্লাহ তোমার নামই আমার বুকের পাজড়ের মাঝে খোদাই করে লিখে দিয়েছেন।
-“তোমাকে আমায় ভালোবাসতেই হবে।”
কথাটা বলেই ইভান বর্ণালীর হাত ধরে একটানে বুকের মাঝে নিয়ে নেয়। বর্ণালীর হার্ট দ্রুত বিট করছে। এমন কেন হচ্ছে! কিছুই বুঝতে পারছেনা।
-“ক….কি ক….করছো কি ইহ….ইভান? ছা…..ছাড়ো পি…..প্লিজ। এ…..এসব একদম ঠি…..ঠিক হ…..হচ্ছেনা।”
ছোটাছুটি করছে ইভানের কাছ থেকে ছোটার জন্য। কিন্তু পারছেনা।
বেচারি নিজেই নিজের মনে মনে বলছে,
এমন গন্ডারের মতো বডি বানালে কি আর পারা যায়! কখন থেকে ছুটোছুটি করছি কিন্তু পারছিনা। তার উপর ওর কাছে আসতেই বুকের মাঝে কেমন একটা শীতল হাওয়া বয়ে যায়। বুকটা ধুকপুক করে। শরীরের মাঝে যেনো কম্পন শুরু হয়ে যায়।
কেন এমন হয়?
এই কথার উত্তর ওর জানা নেই।
এক দিকে আকাশে মেঘ মেঘের সাথে সংঘর্ষে থেমে থেমে বিরাট শব্দ করছে অন্যদিকে বর্ণালীর মনের মাঝেও থেমে থেমে ধুকপুক শব্দ করে উঠছে।
-“ঠি…..ঠিক হচ্ছেনা ব….বলে দিচ্ছি।
-“আর তুমি যা করছো তা ঠিক হচ্ছে?”
-“আ…..আমি কি করলাম?”
-“আমাকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছো এটা কোন দিক দিয়ে ঠিক?”
-“দে…..দেখো…..”
-“হুম দেখছি তো।”
কথাটা বলেই ইভান বর্ণালীর দু’হাত ছেড়ে দিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে আরো কাছে নিয়ে আসে। যতটা কাছে থাকলে একে অপরের নিশ্বাসের কথা শুনা যায়। ইভান যেনো বর্ণালীর প্রতিটা নিশ্বাসে নিজের নামটাই শুনতে পাচ্ছে আর বর্ণালী ইভানের। কিন্তু এই মেয়ে তা মানতে নারাজ। নিজের অনুভূতিটা বুঝতে পারছেনা। বুঝবেই বা কিভাবে তার মন বুঝলেও মস্তিষ্ক সেখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। একে অপরের উষ্ণ নিশ্বাস অনুভব করতে পারছে। ইভানের নিশ্বাস এসে পুরো মুখে ছড়িয়ে পড়ছে। লম্বা হলে যা হয় আরকি। ছয় ফুটি জিরাফের সামনে ও মিষ্টি একটা মেয়ে মাত্র।
`
চোখ থেকে চশমাটা খুলে নিলো ইভান। মুখের মাঝে আলতো করে একটা ফু দিয়ে চুলগুলো সরিয়ে দিলো। কিন্তু খুব বেশি লাভ হলোনা ফাগুনের শীতল হাওয়ায় আবারো চুল এসে ওর মুখে ছড়িয়ে পড়ছে। উষ্ণ নিশ্বাসের ছোঁয়া এসে মুখে পড়তেই বর্ণালীর পুরো শরীর কেঁপে উঠল। চোখ নিচের দিকে করে বললো,
-“ছে…..ছেড়ে দাও প্লিজ।”
-“ছাড়ার জন্য তো ধরি নি। সারাজীবন এভাবেই আগলে রাখবো।”
ইভান আঙুল দিয়ে বর্ণালীর মুখে স্লাইড করে চুলগুলো কানের পেছনে গুজে দিলো। বর্ণালী সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেয়। নিশ্বাস নেয়া কষ্ট হয়ে যাচ্ছে ওর। এমন কেন করছে! আমাকে কেন এভাবে পাগল বানাচ্ছে! না না এসব পাপ। এসব কখনোই ঠিক না। সব ভুল হ্যাঁ এইসবকিছু ভুল সব সব সব।
ইভান আর আমার কখনোই কোন কিছু সম্ভব না কখনোই না। আমাকে ওর থেকে দূরে থাকতে হবে। চোখ খুলতেই দেখি ইভান চোখ বন্ধ করে মুখ আমার মুখের একদম কাছে নিয়ে এসেছে। কিঞ্চিৎ পরিমান ফাঁকা নেই। ওকে আমার থেকে সরানোর জন্য গায়ের সব শক্তি দিয়ে ধাক্কা দেই। ওর হাত একটু ধীর হয়ে ছিলো বলে ধাক্কার সাথে সাথে দূরে সরে যায়। চোখ খুলে আমার দিকে কেমন ভাবে তাকিয়ে আছে।
-“দেখো…..”
-“আরে দেখালে না দেখবো। আগে দেখাও। অবশ্য যা দেখছি তা কিন্তু অনেক সুন্দর। রাতের চাঁদটাকেও হার মানিয়েছে। দেখো না তাইতো আকাশে আজ লজ্জায় চাঁদটাও উঠে নি। ”
-“আ…..আমি গেলাম।”
-” আচ্ছা? আমি যেতে দিলে না যাবে। একদম নড়বে না চুপ করে দাঁড়াও নয়তো আমি চিৎকার করবো বলে দিলাম।”
ওর এমন হুমকি শুনে আমি তো অবাক! এই আসলেই পাগল শুধু পাগল না ঘোর পাগল। এদিকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। ইভান আবারো আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি পিছিয়ে যাচ্ছি। এক সময় পিছিয়ে যেতে যেতে নারকেল গাছের নিচের দিকে পা লাগতেই ওখানে বসে পড়ি। ইভান আমার দিকে মাথাটা একটু ঝুকিয়ে তাকালো। কি করতে চাচ্ছে ও?
আমি খালি গলায় ঢোক গিলছি। কিন্তু ও আর না এগিয়ে একটুখানি পিছিয়ে গিয়ে নিচ থেকে একটা প্যাকেট বের করে আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো।
বর্ণালী একবার আমার হাতের দিকে তাকিয়ে আবার আমার দিকে ব্রু কুচকে আমার জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।
-“নাও।”
-“কি এটা?”
-“রুমে গিয়ে খুলে দেখো।”
-“আমি নিতে পারবো না।”
-“দেখো না নিলে কিন্তু আমার দেয়ার অন্য উপায় আছে।”
-“না না নিচ্ছি।”
বর্ণালী ভয়, ঠান্ডা তারউপর বৃষ্টিতে ভিজে জবুথবু হয়ে বসে আছে। কেমন অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে ইভানের দিকে। বার বার এদিক-সেদিক তাকাচ্ছে। হুট করেই ইভান বর্ণালীর এক হাত ধরে হাতের ঠিক মাঝখানে চুমু একে দেয়। ইভান এমন কিছু করবে আমি ভাবতেও পারিনি। বরফের মতো জমে বসে আছি ওখানেই। নিশ্বাস নিয়েছি কিন্তু ফেলতে পারছিনা। চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস ফেলতে চাইতেই ইভান আমার চোখে চশমা পড়িয়ে দিলো।
-“তোমাকে চশমায় অনেক কিউট লাগে। কিন্তু ওই মায়াবী চোখ দু’টি ঢেকে রেখে দেয় তাও ঠিক ভালো লাগেনা। তাই আমি যখন যেভাবে দেখতে চাইবো সেভাবেই আমার সামনে দেখা দেবে।”
-“পা…..পারবো না। আ….আমার কি আর খেয়ে কোন কাজ নেই?”
-“কি বললে?”
-“না না কিছুনা। প্লিজ আমি যাই? দেখো ভিজে যাচ্ছি আর তুমিও ভিজে যাচ্ছ। তুমি বরং বাসায় যাও। সবাই হয়তো টেনশন করছেন।”
-“বাহ আমার বাসন্তী দেখছি আমায় নিয়ে ভাবে!”
-“আরে না ওইরকম কিছুনা।”
-“ঠিকাছে চলে যাচ্ছি। তুমি যাও আগে।”
কথাটা বলতে দেরি হলো কিন্তু ওর ইভানের পাশ থেকে দৌড় দিতে দেরি হলো না।
-“এই শুনো?”
-“হুস।”
ইভান প্রায় অনেকটা জোরেই আওয়াজ দেয় বর্ণালীকে। বর্ণালী ওখানেই থেমে যায়। ঠোঁটের মাঝে আঙুল দিয়ে ইশারা করে চুপ করতে। এই দৃশ্য দেখে তো ইভান পাগল হয়ে যাচ্ছে। এই প্রথম ওর ঠোঁট দুটো ভালো করে দেখলো। লিপস্টিক ছাড়াই ওর ঠোঁট হালকা গোলাপি রঙের। বর্ণালী একটু এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,
-“আবার কি?”
-“ইয়ে মানে, তোমাকে না ওড়না ছাড়া অনেক এট্রাক্টিভ লাগছে। আমার মাথা নষ্ট করে দিয়ে এখন চলে যাচ্ছ এটা কিভাবে পারো তুমি?”
বর্ণালী এতোক্ষণ সেদিকে খেয়ালই করেনি। ইভানের এমন কথা শুনে চোখ বড় বড় করে নেয়। নিজের দিকে একবার তাকিয়ে সাথে সাথে খপ করে দু’হাত দিয়ে ক্রস করে ঘাড় অবধি নিয়ে বুক ঢেকে নেয়। একবার ইভানের দিকে তাকিয়ে আর এক সেকেন্ডও না দাঁড়িয়ে উল্টো ঘুরে এক দৌড় দেয়।
ছিঃ ছিঃ বর্ণালী কিভাবে তুই এতো বড় ভুল করলি? কিভাবে?
লজ্জায় মাথা কাটা গেছে। কিভাবে দাঁড়াবি এবার ইভানের সামনে? নিজেকে একনাগাড়ে বকেই যাচ্ছে।
কিন্তু সবচেয়ে বড় বিপত্তি তো ঘটে রেলিঙের পাশে গিয়ে।
#______চলবে……….
💛
.
গত পর্ব – https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=119575589712800&id=103632171307142

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here