ফাগুন প্রেম পর্বঃ ১১

0
530

#__ফাগুন_প্রেম__
লেখনীতে: Bornali Suhana
পর্ব: ১১
💛
আয়নার সামনে এসে চুলগুলো ঠিক করে হাতে, গলায়, পায়ে অল্প লোশন মেখে ঈশার দিকে ফিরে তাকায় বর্ণলী। ঈশা ওকে হা হয়ে দেখছে। এই মেয়েটা আসলেই অনেক সুন্দর তাই তো তার ভাই ওকে এভাবে ভালোবাসে। এই মুহুর্তে ইভান বর্ণালীকে দেখলে নিশ্চয়ই পাগল হয়ে যেতো। হয়তো কবিতার কয়েকটা লাইন ও লিখে ফেলতো বর্ণালীকে উদ্দেশ্য করে।
-“কিরে এভাবে কি দেখছিস?”
-“তোকে অনেক সুন্দর লাগছে তাই দেখছি।”
-“হাহাহা পাগল নাকি? তুই তো আমার থেকেও সুন্দর।”
-“হয়েছে মিথ্যে বলতে হবে না। আচ্ছা বর্ণ একটু আগে যে রুমে এসেছিলেন উনি তোর ভাই?”
-“হ্যাঁ আমার বড় ভাই সজিব। আচ্ছা এখন খেতে চল অনেক দেরি হয়ে গেছে।”
ঈশা আর কথা বাড়ালো না। বর্ণালীর সাথে এসে খাবার টেবিলে বসলো। সে সময় সজিবও চলে আসে।
-“ভাইয়া, ও আমার বান্ধবী ঈশা।”
-“ওহ। হাই।” (সজিব)
-“হ্যালো।” (ঈশা)
-“কেমন আছেন?”
-“আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?”
-“আমিও আলহামদুলিল্লাহ।”
আর কোন কথা ছাড়াই সবাই চুপচাপ খেতে লেগে যায়। ঈশা সব খাবারে একবার চোখ বুলায়। ভর্তা দেখেই ওর জিহ্বায় জল এসে যায়। চট করে আগ পিছ না দেখে ভর্তার বাটিটা নিয়ে খাওয়া শুরু করে দেয়। সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে কিন্তু সজিব তো পুরাই শক। সে ভাবছে কেউ কারো বাড়িতে নতুন এসে এভাবে খায় নাকি? হুট করে ঈশা খেয়াল করলো সবাই ওর দিকেই তাকিয়ে আছেন। হাত থেকে বাটি রেখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। এভাবে না করলেও পারতো ও। ছিঃ কি লজ্জাটাই না পেতে হচ্ছে। ইচ্ছে করছে মাটির নিচে ঢুকে যেতে। সবাই একসাথে হোহো করে হেসে উঠলো। বর্ণালী হেসে বললো,
-“তুই ভর্তা খুব পছন্দ করিস নাকি?”
-“আসলে বাসায় মা কখনো ভর্তা বানায় না। মা এই ভর্তা বানাতে পারেনা তাই। কিন্তু আমি এটা দেখলে নিজেকে সামলে রাখতে পারিনা।”
-“তোমার যখনি ইচ্ছে হবে তুমি চলে এসো মা। তোমার আরেক মা তো আছে যে তোমাকে এই ভর্তা করে খাওয়াবে।”
বর্ণালীর মায়ের এমন কথায় ঈশা এক রাজ্যের হাসি দিলো। ও যেনো এই প্রস্তাবের অপেক্ষায়ই ছিলো।
-“প্রতিদিন তো আসতে পারবো না আন্টি কিন্তু আমি যখনি আসি আপনি আমাকে এটা করে খাওয়াতে হবে বলে দিলাম।”
ঈশা কথাটা বলেই দেখলো সজিব ওর দিকে না তাকিয়েই মিটিমিটি হাসছে আর আপন মনে খাচ্ছে। এই ছেলেটা এমন কেন? কোন কিছুর দিকেই ওর কোন খেয়াল নেই! আজব তো! হুহ আমার কি। শারমিন বেগম নিজের মনেই ভাবছেন উনার ছেলেমেয়ে অনেক সময় ভালো খাবার খেতে পায়না। এই শুটকি ভর্তা উনাদের প্রায় নিত্যকার খাবার। আর ওদের মতো বড়লোকের ছেলেমেয়েরা ভালো খাবার থাকা সত্তেও খেতে চায় না। তারা এমন শুটকি ভর্তা খাবার জন্য পাগল ভাবা যায়?
একটু মৃদু হাসলেন শারমিন বেগম। খুব ভালো করে খাওয়াচ্ছেন ঈশাকে। কিন্তু খাবার গলা দিয়ে নামছেনা বর্ণালীর। বারবার ইভানের মায়াবী আকুতিভরা চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে আসছে।
ওর সাথে কেন এমন হতে হলো?
ইভান তো অন্য কাউকেও ভালোবাসতে পারতো।
কেন এলো ইভান ওর জীবনে?
কাউকে বুঝতে দিচ্ছে না ঠিকই কিন্তু ওর মনটা ছটফট করছে একবার জানার জন্য ইভান ওর হাতের ব্যান্ডেজ করেছে কিনা। অনেক রক্ত পড়ছিলো ওর হাত থেকে। একদিকে ইভানকে কষ্ট দিয়েছে আরেক দিকে রুমুকে।নিজেকে খুব বড় অপরাধী মনে হচ্ছে। বর্ণালীর চোখের কোনে জল টইটুম্বুর করছে। কেউ দেখার আগেই আঙুল দিয়ে পানি ঝেড়ে ফেলে দেয়। নাহ ওর খাওয়া আজ হবেনা। গলায় খাবার আটকে যাচ্ছে। অনেক্ষণ প্লেটে নাড়াচাড়া করে পানি ঢেলে দেয়। সবটাই ঈশা খুব ভালো করে খেয়াল করলো। কিন্তু কিছু বললো না।
`
ঈশা একা একা হেটে হেটে পুরো ঘর ঘুরে দেখছে। একটা রুমের সামনে আসতেই ওর পা থমকে যায়। হার্ট দ্রুত বিট করছে। কোন কিছু না ভেবেই রুমের ভেতর চলে গেলো। রুমটা খুব একটা গোছালো না আবার অগোছালোও না। রুমের মাঝখানে একটা খাট, খাটের পাশে সাইড টেবিল তার উপর একটা পানির জগ আর গ্লাস। কিন্তু ও ভাবছে এখানে একটা টেবিল ল্যাম্প হলে ভালো হতো। বালিশের পাশে হুমায়ুন আহমেদের অপেক্ষা বইটা রাখা।
ঈশা ভাবছে সজিব কার জন্য অপেক্ষা করছে?
আরেকপ্রান্তে একটা আলমিরা খুব একটা নতুন না হয়তো বছর দুয়েক আগ বানানো। একটা সোফা রাখা তার উপর টাওয়েলটা পরে আছে যেটা কিছুক্ষণ আগে সজিবের কাধে ছিলো। কি যেনো ভেবে ঈশা টাওয়েলটা হাতে নিলো। নাকের কাছে নিতেই একটা সুন্দর গন্ধ এসে নাকে লাগছে। আপনা আপনি চোখজোড়া বন্ধ হয়ে এলো। এতো ভালো লাগছে কেন এই গন্ধটা? পাগল করা স্মেলটা ওর সাথে মিশে যাচ্ছে। টাওয়েলটা নাকের সাথে লাগিয়ে জড়িয়ে ধরে আছে বুকের মাঝে। আলতো করে চোখ খুলতেই চোখ গেলো এক পাশে রাখা স্কেচ বোর্ডের দিকে। যার মাঝে সাদা কাগজ টানানো। তার নিচে কয়েকটা কাগজ দেখতে পাচ্ছে। ঈশা টাওয়েলটা সোফায় রেখে স্কেচ বোর্ডের দিকে এগিয়ে গেলো। উপরের সাদা কাগজটা তুলে যা দেখলো তাতেই ওর চোখ থমকে গেছে। এক এক করে সবকটি কাগজ উলটে পালটে দেখতে লাগলো ঈশা। তখনি রুমে সজিবের প্রবেশ।
-“আপনি এখানে?”
ঈশা কিছুটা হচকচিয়ে গেলো। ওর হাতের কাগজগুলো নিচে পড়ে গেলো। সজিব এসে কাগজগুলো তুলে নিয়ে ভাঁজ করে সাইড টেবিলের ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রাখে। সজিব যেনো কিছুটা অপরাধবোধে ভুগছে। খুব লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়ে গেছে এই মুহুর্তে।
এখন যদি ঈশা জিজ্ঞেস করে এগুলো কি?
তাহলে কি জবাব দেবে ও?
নিজের মনেই নিজের জবাবটা প্রস্তুত করছে। বেশিক্ষণ এভাবে আর গেলো না মনের আশংকাটাই সত্যি হলো।
-“এগুলো কি ছিলো?”
-“ভালোলাগাকে নিজের স্কেচের মাঝে বন্দি করা আমার অভ্যাস আর কিছু না।”
-“আমি কি আপনার ভালোলাগা?”
হ্যাঁ স্কেচগুলো ঈশারই। ও অবাকের সপ্তম আকাশে এই মুহুর্তে। কোন স্কেচে ওর চোখ, কোনটায় ওর ঠোঁট। কোনটায় চেহারার এক পাশ আর শেষের স্কেচে ওর সম্পূর্ণ একটা চেহারা। যে চেহারায় অফুরন্ত হাসি ফোটানো হয়েছে।
সজিব কেন আমার স্কেচ আঁকতে গেলো?
ওকি আসলেই আমায় নিয়ে ভাবে?
ওর ভালোলাগা আমি?
ভাবনায় ছেদ পরে বর্ণালী রুমে আসায়। বর্ণালী ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“চল তোকে আমাদের বাড়ির বাহির দেখিয়ে আনি। অনেক ভালো লাগবে দেখিস।”
-“হুম চল।”
ঈশা একবার সজিবের দিকে তাকিয়ে বর্ণালীর সাথে বাইরে চলে যায়।
`
-“আমাকে যেতে হবে রে দেখ ৫ঃ৪০ বেজে গেছে। যেতে যেতে সন্ধ্যার আজান হয়ে যাবে।”
-“কিন্তু এই বেলায় একা যাবি কিভাবে?”
-“আরে টেনশন নিস না। পারবো সমস্যা হবেনা।”
-“আরে তুই এমনিতেই এলাকায় নতুন। দাড়া আমি আসছি। দেখি ভাইয়াকে তোকে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে।”
সজিবের কথা শুনে ঈশা আর না করে না। ওর যেনো মনের মাঝে এমন কোন ইচ্ছেই ছিলো। কিভাবে যে বর্ণালী তা বুঝে নিলো? কিন্তু সজিব আমাকে পৌঁছে দিতে যাবে তো আমি কেন এতো খুশি হচ্ছি? আমি কেন চাইছি যে সজিবই আমায় পৌঁছে দিক!
তাহলে কি আমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি?
আচ্ছা সজিবকি আমায় ভালোবাসে?
হ্যাঁ বাসে হয়তো নাহলে কি ও আমার স্কেচ আঁকতো নাকি? আর নিজের মুখেই তো বললো ভালোলাগাকে তার স্কেচের মাঝে বন্দি করে। ভালোলাগা থেকেই তো ভালোবাসা হয়।
ভালোবাসা শব্দটা ভাবতেই মনের অজান্তে ঈশার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে।
-“কিরে চল।”
এতোক্ষণে ঈশার ভাবনার ঘোর ভাঙে।
-“হ্যাঁ হ্যাঁ চল। কি বললো তোর ভাইয়া?”
-“কি আর বলবে।”
ঈশার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। তাহলে কি সজিব ওর সাথে যাবে না? ধ্যাৎ।
-“আসি আন্টি আবার দেখা হবে। আংকেল কে তো পেলাম না অন্যদিন আসলে দেখা করে নেবো।”
-“পারলে প্রতিদিন আসবে মা। রুমু আর তুমি আমার মেয়ের মতোই। কোন সংকোচ করবে না আসতে।”
-“জ্বি আন্টি। আসি আসসালামুয়ালাইকুম।”
-“কই ভাইয়া বিয়ে করতে যাচ্ছ নাকি যে এতো সময় লাগাচ্ছো আসতে? ওর দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।”
বর্ণালীর কথা শুনে ঈশার চোখ মুখ খুশিতে চিকচিক করে উঠে। তাহলে সজিব ওর সাথে যাচ্ছে। উফ কি যে খুশি লাগছে বলে বুঝাতে পারছিনা।
-“এইতো এসে গেছি। চলেন।”
-“আসি বর্ণ। ফোন দিয়ে যোগাযোগ রাখিস আর নিজের খেয়াল রাখিস।”
-“হ্যাঁ অবশ্যই। তুইও ভালো থাকিস।”
-“আল্লাহ হাফেজ।”
`
ঈশা আর সজিব পাশাপাশি হাটছে। দুজনেই খুব চুপচাপ।
সজিব ভেবে পাচ্ছেনা এই মেয়েটা এতো ধীরে কেন হাটছে? ওর কি বাসায় যাওয়ার কোন ইচ্ছে নেই নাকি ও এভাবেই হাটে?
মনের সাথে কথা বলে কোন উত্তর পাচ্ছে না সজিব হয়তো ঈশাকে জিজ্ঞেস করলেই জবাবটা পেয়ে যেতো। আর জবাবটা কিছুটা এরকম হতো যে,
“তোমার পাশে এভাবেই হাটতে চাই জনম জনম ধরে।”
ঈশা ইচ্ছে করেই ধীরে হাটছে কি জানি রাস্তাটা শেষ হয়ে যায়৷ তাহলে তো আর সজিবকে দেখতে পাবেনা এতো কাছে থেকে। সজিব ওর থেকে খুব বেশি লম্বা না। সজিবের কাঁধ বরাবর ওর উচ্চতা হবে। আড় চোখে এসব খেয়াল করছে ঈশা। হুট করেই ড্রেনের উপর উঠে গেলো ঈশা। হুম এখন দুজনের উচ্চতা সমান হয়েছে। অন্যপাশে তাকিয়ে লজ্জামাখা একটা হাসি দিলো ঈশা। কেন জানি ওর ইচ্ছে করছে সজিবকে ঠিক আগের মতো খালি গায় দেখতে। ইচ্ছে করছে ওর উন্মুক্ত বুকের মাঝে নিজের মাথা রাখার জায়গা করে নিতে।
ইস কি নির্লজ্জ হয়ে গেছি৷ কখন কিভাবে ওর প্রেমে পড়লাম নিজেই বুঝতে পারলাম না! ডানা মেলে আকাশে উড়তে ইচ্ছে করছে। সজিব আমার প্রথম প্রেম। আহা এতো সুখ কোথায় রাখি!
সজিব পেছনে তাকিয়ে দেখলো একটা রিকশা আসছে।
যাক ভালোই হলো এখন তাড়াতাড়ি যাওয়া যাবে। সজিব যেই রিকশাকে দাঁড় করালো ঈশার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো৷ কে বলেছে ওভাবে রিকশা ডাকতে। ওর এমন ভাব যেনো আমাকে বাসায় দিয়ে আসতে পারলেই বাঁচে। আমি গেলে তো তুমি রিকশায় উঠবে বাবু। দাঁড়াও উঠাচ্ছি তোমায় রিকশাতে।
-“আমি রিকশায় যাবো না।”
-“কেন?”
কিছুক্ষণ ভেবে মিথ্যা বলে দিলো।
-“আ….আমার কাছে ভা…..ভাড়া নেই।”
-“ভাড়া আমি দেবো উঠেন।”
-“আমি অন্যের কাছ থেকে টাকা নেইনা।”
-“আচ্ছা ধার নিয়ে নেন পরে আবার দিয়ে দিবেন।”
-“ছিঃ লজ্জা করেনা? আমাকে আপনি এই সামান্য কয়টা টাকা ধার দিয়ে আবার ফেরতও নিতে চান?”
ঈশা ন্যাকামি শুরু করে দিলো সজিবের সাথে৷ ইচ্ছে করেই এমন করছে যাতে হেটে যেতে পারে আর অনেকটা সময় ওর সাথে থাকতে পারে।
-“আচ্ছা এমনিতেও টাকা নিবেন না ধারও নিবেন না তাহলে কিভাবে নিবেন?”
-“রাখেন আপনার টাকা আমি যাবো না রিকশায়। আমি হেটেই যাবো।”
-“কিন্তু আপনার বাসা তো অনেক দূর আর যেভাবে হাটছেন সন্ধ্যার পর হবে বাসায় যেতে। তখন সবাই টেনশন করবে। দেখেন এমনিতেই সন্ধ্যা ৬টার উপর হয়ে গেছে।”
-“আমার টেনশন আমি করবো আপনাকে করতে হবে না৷ চলুন। আর মামা আপনি যান তো লাগবে না রিকশা।”
বলতে না বলতেই চারদিক থেকে আজানের ধ্বনি শোনা গেলো। কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে একটা মসজিদের সামনে এসে থামলো সজিব।
-“আপনি কি এখানে একটু অপেক্ষা করতে পারবেন? আমি নামাজটা পড়ে আসতাম।”
ঈশার ঠোঁটে রাজ্যের হাসি চলে আসে। এমন ছেলে খুব কমই দেখা যায় যে কিনা সব ব্যাস্ততা রেখে ঠিকই নামাজ পড়ে। ঈশা এখন পুরো শিওর যে সজিবকেই ওর জীবনসঙ্গী হিসেবে চাই।
-“কি হলো? তাড়াতাড়ি চলে আসবো জাস্ট ১০মিনিট।”
-“অবশ্যই যান। আমি অপেক্ষা করছি।”
-“ভয় পাবেন না তো?”
আসছে আমার টেনশনওয়ালা হুহ।
-“উহু ভয় পাবো না। নামাজ আদায় করে আসেন আপনি। আর হ্যাঁ আমার জন্য দোয়া করবেন।”
-“কি দোয়া?”
-“আমি এখন মন থেকে যা চাইছি তাই যেনো আল্লাহ আমাকে দেন।”
-“আচ্ছা ইনশাআল্লাহ। এদিকে এসে দাঁড়ান। আর এই নিন আমার ফোনটা রাখেন। কোন প্রব্লেম হলে জোরে একটা চিৎকার দিবেন।”
ঈশা একটু ব্রু কুচকে তাকালো। পরক্ষণেই হোহো করে হেসে দিলো। তারপর মাথা নেড়ে হুম বললো। সজিব মসজিদের ভেতর চলে গেলো। ঈশা দাঁড়িয়ে আছে। আসলেই ও একটু বেশি কেয়ারিং। আঁধার নেমে আসছে চাঁদটা এখনো পুরো হয়নি। আজকাল চাঁদকে বিকেলের দিকেও আকাশে দেখা যায়। এমন কেন হয় বুঝিনা। চাঁদ তার আকাশকে এক মুহুর্তের জন্যও একা ছাড়তে চায়না মনে হয়। এতো ভালোবাসা এরা রাখে কেমনে?
সজিব নামাজ পড়ে আসতেই ঈশা আর সজিব আবারো হাটছে। ঈশা আনমনে একটা গানের কয়েকটা লাইন গেয়ে উঠে,

নীল আকাশের ওই দূর সীমা ছাড়িয়ে,
এই গান যেন যায় আজ হারিয়ে
প্রাণে যদি এ গানের রেশ হয়,
পৃথিবীটা যদি স্বপ্নের দেশ হয় ।।
তবে কেমন হতো তুমি বলোতো

এ পথ যদি না শেষ হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলোতো?

-“বাহ! সুন্দর গান গাইতে পারেন তো।”
-“শুধু গানটাই দেখলেন?”
-‘মানে?”
-“ছোট মানুষ বুঝবেন না আগে বড় হোন তারপর বুঝবেন। হিহিহিহি।”
-“আচ্ছা আপনি কি সবসময় এমন?”
-“কেমন ছোট ভাই?”
-“ছোট ভাই?”
-“তা নয়তো কি? কখন থেকেই আপনি আমাকে আপনি করে বলছেন তাহলে তো সেই সম্পর্কে আপনি আমার ছোট ভাই হলেন।”
সজিব শব্দ করে হেসে উঠলো। মেয়েটা যতটা সুন্দর ততটাই রসিক। কি সুন্দর কথা বলে। ঈশা দাঁড়িয়ে হা হয়ে তাকিয়ে সজিবের হাসি দেখছে। সজিবও থেমে এক হাত পেটের উপর ধরে হেসেই যাচ্ছে। বর্ণালীর হাসিটার মতোই সজিবের হাসি অনেক সুন্দর। ঈশা এক ঘোরের মাঝেই নিজের হাত নিয়ে সজিবের একটা গালে রাখলো। সজিব আচমকাই চমকে উঠলো। ওর শরীরে যেনো ৪৪০ভোল্টের শক লাগলো। একটা শিহরণ বয়ে গেলো পুরো শরীরে। সাথে তার হাসিটা হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। ঈশার দিকে চোখ তুলে তাকাতেই ঈশা বলে,
-“হাসি থামালে কেন? আগেই তো ভালো লাগছিলো। আমি তোমার ওই হাস্যজ্বল মুখটাই বারবার দেখতে চাই। কোন ছেলেদের হাসি এতো সুন্দর আমার জানা ছিলো না।”
সজিব ঈশা থেকে কিছুটা সরে দাঁড়ালো। ওমনি ঈশার হাত ওর গাল থেকে আলগা হয়ে গেলো। ঈশার ঘোর যেনো এখন কাটলো। লজ্জায় মাথা তুলে তাকাতে পারছেনা সজিবের দিকে। ঈশা স্বাভাবিক হতে পারছেনা।
কি করে দিলো ও এসব?
কিভাবে বললো এসব কথা?
শিট!!!! এমন কেনো করতে গেলি ঈশা!
না জানি সজিব কি ভাবছে এখন তোর ব্যাপারে। একটু জাস্ট একটুখানি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলিনা?
এদিকে ওদিক তাকিয়ে যাচ্ছে ঈশা আর এক হাতে আরেক হাত কচলে যাচ্ছে।
সজিব পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করার জন্য বললো,
-“চ….চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে৷ আ….আর একটু তাড়াতাড়ি হাটো।”
বলেই হাটা ধরলো দুজনে।
ঈশার বাসার সামনে এসেই থামলো সজিব। ঈশা যে বাসায় চলে এসেছে সেদিকে ওর কোন খেয়ালই নেই।
-“আসি তাহলে। ভালো থাকবে।”
-“হু? ওহ চলে এসেছি? আরে ভেতরে চলেন। বাসার সামনে এসে বাসায় না গিয়েই চলে যাবেন সে কি করে হয়?”
-“অন্যদিন আসবো ইনশাআল্লাহ। আসলে আমার একটা টিউশন আছে স্টুডেন্ট হয়তো অপেক্ষা করছে।”
-“ওহ আচ্ছা তাহলে পরবর্তীতে আসলে অবশ্যই বাসায় যেতে হবে৷”
-“হুম আচ্ছা তাহলে আসি।”
সজিব চলে যাচ্ছে। ঈশার কেন জানি ইচ্ছে করছে খুব শক্ত করে সজিবকে জড়িয়ে ধরতে। খুব কষ্ট হচ্ছে আবার ওর সাথেই চলে যেতে মন চাইছে। আবার কবে দেখা হবে কে জানে! বুকটা ধুকপুক করছে। প্রতিটা হার্টবিট যেনো বারবার বলছে তোর সজিবকে আটকা ঈশা আটকা। বলে দে তোর মনের কথা।
-“সজিব।”
সজিব কিছুটা দূরে চলে এসেছিলো। ঈশার এমন ডাকে পেছন ফিরে তাকায়৷ ঈশা ওকে নাম ধরে ডাকছে! অবাক হচ্ছে সজিব এই মেয়ে কি চায়?
ঈশা আশেপাশে না তাকিয়ে দৌড়ে এসে সজিবের বুকে ঝাপটে পড়ে। সজিব পড়ে যেতে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয়। ঈশা খুব ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে। ওর উষ্ণ নিশ্বাস এসে সজিবের বুকে লাগছে। সজিব নিজেকে সামলে রাখতে পারছেনা। তবুও নিজেকে সামলে রাখার চেষ্টা করছে। ঈশা বুঝতে পারলো সজিব ওকে জড়িয়ে ধরে নি। ওর বুকে মাথা রেখেই আলতো করে হাত দুটো নিয়ে তার কোমড়ে রাখলো। পা মাটি থেকে একটুখানি আলগা করে সজিবের ঘাড়ে মাথা রেখে আরেকটু শক্ত করে ওর গলা জড়িয়ে ধরলো ঈশা। সাথে সাথে আরেকটা ভারী নিশ্বাস নিলো ও। সজিবের স্পর্শ যে ওকে পাগল করে দিচ্ছে। সজিব বুঝতে পারছেনা ওর কি করা প্রয়োজন। কিন্তু এভাবেই থাকতে ভালো লাগছে ওর।
-“ভালোবাসে ফেলেছি সজিব তোমায়। হ্যাঁ আমি ভালোবাসি তোমায়।”
সজিব ঈশার দু’বাহু ধরে বুক থেকে তুলে সোজা করে দাঁড় করায়। ঈশা সজিবের দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে তার জবাবটা পাওয়ার আশায়। সজিব চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা নিশ্বাস নিয়ে বললো,
-“বাসায় যাও। আল্লাহ হাফেজ।”
-“কি…..কিন্তু আমার জবাব?”
সজিব আর একটা কথা বলার জন্যও সেখানে দাঁড়ালো না। দ্রুত হাটা ধরলো। ঈশা পেছন থেকে আরেকবার সজিব বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো,
-“তোমার জবাব না পাওয়া পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করবো। কিন্তু জবাবটা পজিটিভ আসা চাই।”
ঈশার কথাগুলো সজিবের কানে আসলো ঠিকই কিন্তু কোন উত্তর দিলো না। চোখের জল আড়াল করে হেটে চলে যাচ্ছে৷ গন্তব্য তার স্টুডেন্টের বাসা। আজকে বেতন দেয়ার কথা আছে৷ বেতন পেয়েই একটা মুরগী নিয়ে যাবে ভাবছে। অনেকদিন হলো মা মুরগী রান্না করেনা। একটা মৃদু হাসি চলে এলো ওর ঠোঁটে।

`
বেলকনির একপাশে রেলিঙ দেয়া নেই ইভান অনেক্ষণ ধরে সেই পাশেই গিয়ে ফ্লোরে বসে পা দুটো ঝুলিয়ে বসে আছে। আনমনে পা দুটো নড়ছে। দুপুরেও খায় নি রাতেও খাবার নামবে না ওর গলা দিয়ে এটা সে ভালো করেই জানে। সিগারেটের প্যাকেটটা হাতের মাঝে রেখে নেড়েচেড়ে দেখছে। কোনদিন খাওয়া তো দূরের কথা ছুঁয়েও দেখেনি। মানুষ নাকি খুব বেশি কষ্ট পেলে সিগারেট খায়। কেননা সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে কষ্টটাও উড়ে ছাই হয়ে যায়। রাত বাড়ছে সাথে কষ্টটাও বাড়ছে।
কেন এমন করছে বর্ণালী?
আমি কি আসলেই ওর এতোটা অযোগ্য?
আজ পর্যন্ত কত মেয়েই না ওর জন্য পাগল ছিলো কাউকে পাত্তা দেয় নি। আর ও কিনা যার জন্য পাগল হলো সে তাকে ফিরেও দেখছে না?
অনেক্ষণ নীরব হয়ে বসে থাকার পর হুট করেই ইভান উঠে দাঁড়ায়। নাহ ওকে আমায় ভালোবাসতেই হবে।
কি ভেবেছে ও এতো সোজা?
আমাকে পাগল করে নিজে অন্যের সাথে ভালো থাকবে?
আমি তা কখনোই হতে দিবো না৷ ও ভালো থাকলে আমার সাথেই থাকবে। ভালো না থাকলেও আমার সাথে থাকতে হবে। ইভান রুমের দরজা খুলতেই দেখলো ঈশা হাত উপরে তুলে মুঠি বেধে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো এখনি নক করতে চেয়েছিলো আর ও দরজা খুলে দিয়েছে।
ইভানের চেহারাটা কিছুটা কালো হয়ে আছে। চোখ এখনো লাল। নিচ কালো হয়ে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভাইটা আমার খুব কেঁদেছে।
-“কোথাও যাচ্ছিস?”
-“হ্যাঁ।”
-“বর্ণালীর কাছে?”
-“হু।”
মাথাটা নিচু করে বললো ইভান।
-” ঠিক আছে যা। কিন্তু অল্প ভাত খেয়ে যা। সারাদিন থেকে তো কিছুই খাস নি।”
-“না বুমনি ক্ষুধা নেই আমার।”
-“আচ্ছা আমার কথাও রাখবি না?”
ইভান কিছুক্ষণ ভেবে বললো,
-” এসে খাই?”
-“আচ্ছা ঠিকাছে যা।”
ইভান দাঁড়িয়ে আছে বর্ণালীর বাড়ির সামনে। রাতটা কেমন ঘুটঘুটে আঁধারে ছেয়ে আছে। একটুও জোছনা নেই। সন্ধ্যার দিকেও আকাশে চাঁদ দেখা গিয়েছিলো এতো তাড়াতাড়ি মেঘের আড়ালে লুকিয়ে গেলো কেন?
চাঁদ মনে হয় লুকোচুরি খেলছে। কিন্তু কার সাথে? সেটা ইভান জানেনা।
একবার মোবাইলটা বের করলো আবার কি যেনো ভেবে মোবাইল পকেটে ঢুকিয়ে চুপিচুপি বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলো। বর্ণের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। রেলিঙ ডিঙিয়ে বেলকনিতে এসে বর্ণের রুমের পাশে উঁকিঝুঁকি মারছে যদি একবার দেখা যায়। বেলকনির দরজাটা লাগানো। যদিও দরজাটা কাঁচের। ভেতর দিয়ে দরজার ওইপাশে সাদা পর্দা টানানো কিন্তু এখন পর্দাটা সামান্য সরিয়ে দরজার এক পাশে ফিতা দিয়ে বেঁধে রেখেছে। এই মেয়েটা কি রুমে নেই নাকি?
হঠাৎ ইভান যেনো কারো ছায়া দেখতে পেলো। চোখ লাগিয়ে ভালো করে দেখলো বর্ণালী আলমিরা থেকে সাদা টি-শার্ট আর লং টাউজার এনে বিছানায় ছড়িয়ে রেখেছে। দেখে মনে হচ্ছে ড্রেস চেঞ্জ করতে লাগছে। নো নো নো বর্ণালী ডোন্ড ডু দ্যাট।
ইভানের চোখ কপালে উঠে যায়৷
এখনই কেন ওর ড্রেস চেঞ্জ করতে হচ্ছে?
বর্ণালী চুলগুলো খোঁপা বেঁধে বুকের ওড়না টা বিছানায় রেখে ড্রেস খুলতে যাচ্ছে।
💛
#_____চলবে______
.
গত পর্ব – https://www.facebook.com/103632171307142/posts/121119059558453/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here