ফাগুন প্রেম পর্বঃ ১৪

0
528

#__ফাগুন_প্রেম__
#_লিখাঃ Bornali Suhana
#_পর্বঃ ১৪
💛
ভালোই লাগছিলো ইভানের সাথে এভাবে ফিসফিসিয়ে কথা বলাটা। জীবনের প্রথম কোন ছেলের সাথে এভাবে নিজের ঘরে বসে চুপিচুপি ফিসফিস করে কথা বলেছে, সময় কাটিয়েছে, হাতে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে এমনকি নিজের হাতে খাইয়েও দিয়েছে। ভাবতেও পারছেনা এসব ও করেছে! কিন্তু কেন করলো?
তাহলে কি রুমু আর ঈশার কথাটা সত্যি হতে চলেছে?
আসলেই কি ও তার প্রেমে পড়ে গেছে?
প্রশ্নটা প্রশ্নই থেকে যায় মনটা উত্তর দিতে ব্যার্থ নাকি ও মনের কথা বুঝতে ব্যার্থ অজানাই থেকে গেলো।
`
ঈশা বাবার কেবিনে বসে আছে। এতবছরে মেয়েটা একবারও অফিসে আসেনি। ফারহান আহমেদ চিন্তায় পড়ে গেলেন এই বিষয়টা নিয়ে। কোনরকম মিটিং শেষ করে কেবিনের দিকে পা বাড়ান। আজ কি এমন হলো যে মেয়েটা অফিসে এলো? এক গাদা ভাবনা নিয়ে কেবিনে ঢুকেন ফারহান আহমেদ।
-“গুড আফটারনুন প্রিন্সেস।”
-“গুড আফটারনুন বাবাই।”
-“কি নেবে বলো? কফি?”
-“হুম কোল্ড কফি।”
ফারহান আহমেদ ২টা কোল্ড কফি অর্ডার দেন। মেয়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। তার মনের অবস্থা মুখ দেখে পড়ার বৃথা চেষ্টা করছেন। ঈশা মোবাইল ঘুরাঘুরি করতে ব্যাস্ত। মনের অবস্থাও ভালো না। বাবাকে কিভাবে কথাগুলো বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।
-“মামনি কি চাই বলো?”
ঈশা ফারহান আহমেদের কথায় কিছুটা থমকে যায়। বাবা কিভাবে বুঝলেন আমি কিছু চাই?
-“আসলে বাবা….”
-“হ্যাঁ মামনি বলো আসলে কি? কোন চিন্তা ভাবনা ছাড়া বলে ফেলো চাঁদের দেশে যেতে চাইলে সেখানেও পাঠানোর ব্যাবস্থা করে দিতে পারবে তোমার এই বুড়ো বাবাই।”
ঈশা কিছুটা মৃদু হাসলো। পিয়ন কফি দিয়ে যেতেই ঈশা কফিতে একটা চুমুক দিয়ে বললো,
-“বাবা একটা ভালো বেতনের জব চাই।”
-“কার জন্য মামনি? আমি যতদূর জানি আমার মামনির জব করার কোন প্রয়োজন নেই তাহলে এই জবটা কার জন্য চাইছেন?”
-“সত্যি বলবো না মিথ্যে?”
-“আমার মামনি তার এই বুড়ো বাবাইকে কখনো মিথ্যে বলবে না। আর জানোই তো সত্যিটা বললে বাবাই খুশি হবেন।”
-“আমি একজনকে ভালোবাসি বাবা।”
-“নাম কি সেই সুপুরুষের?”
-“সজিব হাসান।”
-“প্রেম চলছে নাকি?”
-“আরে না বাবাই সে আমার প্রপোজালটা এখনো এক্সেপ্টই করেনি। অনেক সেল্ফ রেস্পক্টেড ও। আমি বুঝতে পেরেছি বাবাই ও নিজের অবস্থান চিন্তা করে কখনোই আমার সাথে প্রেমের পথে এগুবে না।”
-“হুম যা বললে বুঝলাম মামনি কিন্তু এমন সেল্ফ রেস্পক্টেড মানুষ কি কখনোই আমার অফার করা জব এক্সেপ্ট করবে? কখনোই করবে না। আমাদের অন্যরকম কিছু একটা করতে হবে।”
ঈশা বাবার এমন জবাব হবে আশাও করেনি। হয়তো বাবা ওর মনের কথা বুঝতে পারছেন তাই তো সবকিছু এতো সহজে নিলেন। অনেকটা খুশি আর অবাক হয়ে বাবাকে বললো,
-“মানে?”
-“মানে হলো সাপও মারবো আর লাঠিও ভাঙবো না।”
-“বুঝিয়ে বলো না বাবাই।”
-“ওকে আমাদের কোম্পানিতে জব দিবো না। দিলে সন্দেহ করবে। অন্য কোন কোম্পানিতে জব দেয়ার ব্যাবস্থা করতে হবে। আর জব দেয়ার পর তো বিয়ের প্রস্তাবও নিয়ে যেতে হবে না? আমার পিচ্চি মামনিটা যে অনেক বড় হয়ে গেছে।”
ঈশার চোখে পানি এতো খুশি সে ধরে রাখতে পারছেনা। ভাবতেও পারেনি সবকিছু বাবাই এতো সহজে মেনে নেবে। চেয়ার ছেড়ে বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
-“বাবাই আই লাভ ইউ।”
-“লাভ ইউ টু মামনি। ওর নাম্বারটা দিয়ে যাও।”
-“জ্বি বাবাই।”
`
ইভান বসে আছে ক্লাসে। যদিও ক্লাসে ওর কোন মনোযোগ নেই। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। সামনের মাসেই এইচ.এস.সি পরীক্ষা অথচ ও এখন কারো প্রেমে উড়ো চিঠি লিখছে। বর্ণালীকেও দেখা হলো না এখনো। মেসেজ দিলো কিন্তু রিপ্লেটা পর্যন্ত পেলো না। একটা মেসেজের রিপ্লেও কি ও আশা করতে পারেনা?
-“স্যার কখন ক্লাস থেকে বের হয়ে গেছেন সেদিকে খেয়াল আছে জনাবের?”
কারো কথায় ওর আকাশ দেখায় ব্যাঘাত ঘটে। পাশ ফিরে দেখে রাফাত, হিমেল, আসাদ, মিথি আর মালিহা ওকে ঘিরেই দাঁড়িয়ে আছে।
-“জনাবের কি এখনো প্রেম প্রেম পাচ্ছে?”
-“হুম আর প্রেম প্রেম আগাচ্ছে।”
বলেই ইভান চোখ মারে রাফাতকে।
-“তুই কি এখনো ম্যামের পিছু পড়ে আছিস?”
-“হুম থাকবো না কেন? যতক্ষণ না ভালোবাসি বলবে ততক্ষণ তো থাকবোই অবশ্য এর পড়েও পিছু লেগে থাকবো।”
মালিহা এমন কিছু উত্তর আশা করেনি ইভানের কাছ থেকে।
-“তুই কি আর মেয়ে পাবিনা? ওই মহিলাকে ছেড়ে ভালো কোন মেয়ের সাথে প্রেম কর। কি আছে ওর মাঝে?”
ইভান মালিহার এমন কথায় রীতিমতো রেগে যায়।
-“দেখ মালিহা প্রথমত বর্ণালী বিবাহিত নয় যে তুই তাকে মহিলা বলবি। আর দ্বিতীয়ত ও এখনো হাই স্কুল লেভেলের মেয়েদের মতোই সুন্দর, কিউট আর মায়াবী। এখনো দেখতে ঠিক ১৫-১৬বছরের কিশোরীর মতন। আর কি আছে ওর মাঝে? ওর মাঝে যা আছে তা আজকালকার মেয়েদের মধ্যে মেলানো কঠিন। আমি সবাইকে একটা কথা ক্লিয়ারলি বলে দিচ্ছি। তোরা আমার ফ্রেন্ড যদি পারিস আমাকে সাপোর্ট করবি আর না পারলে প্লিজ এই ব্যাপারে কেউ আমাকে কোন কিছু বলবিনা। আমি ওকে ভালোবাসি আর সবদিক থেকেই ভালোবাসি তাতে ও যেমনি হোক না কেন। হোক বয়সে আমার থেকে বড়। আই ডোন্ট কেয়ার বিকয এই লাভ হার এজ শী ইজ।”
কথাটা বলেই ইভান হনহনিয়ে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে গেলো। পেছন থেকে রাফাত, আসাদ আর হিমেল কত ডাকলো শুনলোই না।
-“মিথি চল।”
মালিহা আর মিথি ক্লাস থেকে বেড়িয়ে গেলো। মিথি মালিহার মনের অবস্থা কিছু হলেও আন্দাজ করতে পারছে।
-“মালিহা তুই কি কোনভাবে ইভানকে….”
মিথি কথাটা সম্পূর্ণ করার আগেই মালিহা হাটা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে যায়।
-“হ্যাঁ আমি ইভানকে পছন্দ করি শুধু পছন্দ না ভালোবাসি ওকে। আর ও ওই মহিলাকে নিয়ে আমায় কথা শুনিয়েছে না? এবার দেখবি ওই মহিলার এমন অবস্থা করবো না যে স্কুলে বা কলেজে মুখ দেখাতে পারবেনা। নিজের থেকে ছোট ছেলেকে ফাঁদে ফেলে ফাসিয়ে প্রেম করতে যাবে তাই না? খুব করে প্রেম করাবো আমি ওই মহিলাকে।”
-“দেখ মালিহা ম্যাডামের তো কোন দোষ নেই। তাছাড়া ম্যাডাম এখনো ওকে ভালো বাসেন বলেন নি। প্রেম কিভাবে করবেন? তুই বরং ইভানের পিছু ছেড়ে…..”
-“একদম এমন কথা বলবি না। এই মালিহা যা চেয়েছে তাই পেয়েছে। আর ইভানকে যখন একবার চেয়েছি তখন ওকে আমার করেই ছাড়বো। এট এনি কোস্ট।”
`
বর্ণালীর আজ প্রথম কোচিং ক্লাস। স্কুল থেকে বের হয়ে কোচিং সেন্টারে চলে আসে। খুব নার্ভাস লাগছে। এক্সট্রা কিছু টাকা পাওয়া যাবে ভেবেই কোচিং সেন্টারে জয়েন করা। পরিবারের খরচ আর নিজের পড়ার খরচটা দিনদিন বেড়েই চলছে। ভাইয়াকে একটু সাহায্য করতে পারলে ভালোই হয়। ভাইয়ার উপর এমনিতেও অনেক বেশি চাপ পড়ে যায়।
ক্লাসে ঢুকেই বর্ণালী অবাকের সপ্তম আকাশে উঠে যায়। ইভান এখানে কি করছে? আসলেই এসে গেলো নাকি পড়তে? ওকে দেখেই এক গাল হেসে দিলো ইভান। বর্ণালী স্টুডেন্টদের উদ্দেশ্যে নিজের পরিচয় দিয়ে ক্লাস নিয়ে নিলো। ইভান পুরো ক্লাসেই ওকে দেখে গেছে। যার জন্য বর্ণালীর খুব অসস্থি লাগছিলো। পড়া তো একটা বাহানা ছিলো ওর কাছে। উদ্দেশ্য তো বর্ণালীকে দেখা। ক্লাস থেকে বাইরে যেতেই ইভানও ওর পিছু পিছু দৌড় লাগায়।
-“একটু সময় হবে ম্যাডামের?”
-“নাহ আজকে সময় নেই। খুব ক্ষুধা পেয়েছে বাড়িতে যাবো এখন।”
ইভানের মন কিছুটা খারাপ হয়ে যায়। মুখ কাচুমাচু করে বলে,
-“কিন্তু তুমি তো বলেছিলে….”
-“কাল দেখা করিনা প্লিজ। সত্যিই আজকে অনেক ক্ষুধা লেগেছে।”
-“চলো আমার সাথে।”
-“কোথায়?”
-“চলো না গেলেই তোমার ক্ষুধা মিটে যাবে।”
ইভান ওর হাত ধরতে যাবে তখনি বর্ণালী এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছুটা পিছনে সরে যায়। কিছু একটা ভেবে বলে,
-“কিন্তু.. আচ্ছা চলো।”
বর্ণালী জানে ও এই ছেলের সাথে কথা বলে পারবেনা। তাই আর কথা না বাড়িয়ে ওর সাথে চলছে। যাবোনা বললে না জানি আবার কোন সিন ক্রিয়েট করে দেয়। ইভানের সাথে কিছুদূর এগিয়ে বাইকের সামনে এসে বর্ণালী থেমে গেলো।
-“ইভান আমি তোমার সাথে বাইকে যেতে পারবো না।”
-“কেন কেন? গেলে কি হবে?”
-“প্লিজ ইভান এই বিষয় নিয়ে জোর করো না।”
ইভান বাইক রেখেই দাঁড়ালো। ওর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“রিকশা চলবে?”
বর্ণালী কিছুক্ষণ ভেবে বললো,
-“ঠিকাছে।”
দুজনে প্রখর রোদের মাঝে রিকশায় উঠে বসেছে। বর্ণালীর সাইড ব্যাগটা ওদের মাঝখানে রাখতে দেখে ইভানের খুব খারাপ লাগলো। কিন্তু কিছু বললো না সবকিছুর পরেও তো তার সাথেই আছে। সূর্যটা মাঝে মাঝে কোথাও লোকাচ্ছে আবার অনেক গর্বের সাথে মাথা উঁচু করে রোদ ছড়াচ্ছে। খারাপনা দিনটা ভালোই লাগছে। মৃদুমন্দ বাতাসে বর্ণালীর চুলগুলো উড়ে ইভানের মুখে এসে পড়ছে। বড্ড বেহায়া চুলগুলো। ওর হাজার বাঁধা মানতে রাজি না। চুলগুলো তার নিজের মাঝেই মেতে আছে। মাঝেমধ্যে বর্ণালীর আঙুলের সাথে খেলা করছে। ইভান যেনো এই রুপের মুগ্ধতায় ডুবে যাচ্ছে। বর্ণালী চোখ দিয়ে ইশারা করে জিজ্ঞেস করে কি? ইভান মাথা দু’দিকে নেড়ে ইশারায় বলে দেয় কিছুনা।
মিরপুর পল্লবীতে হটপ্লেট রেস্টুরেন্টের সামনে এসে রিকশা থামায় ইভান। এমন একটা রেস্টুরেন্টে যাওয়ার কোন ইচ্ছাই ছিলো না বর্ণালীর। ভেতরে ঢুকেই একটা কর্ণার টেবিল দেখে বসে পড়ে দূজন। লাঞ্চের জন্য চিকেন স্টেইক রাইস অর্ডার দেয় ইভান।
-“এটা আমার একটা প্রিয় রেস্টুরেন্ট। ভালোই লাগে এখানে আসতে। নিরিবিলি পরিবেশ। আর এখানের খাবারটাও ভালো। ঢাকাতে এখন সিফট হলে কি হলো আমার আসা যাওয়া প্রায়ই হতো।”
-“একা আসো নাকি সবসময়?”
-“প্রথম এসেছিলাম একটা গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে। দেন বন্ধুদের সাথেও অনেকবার এসেছি। গার্লফ্রেন্ড দের সাথেও দেখা করতে অনেকবার এসেছি। তবে সবসময় এই রেস্টুরেন্টেই না অন্যান্য রেস্টুরেন্টেও গিয়েছি।”
বর্ণালী খালি গলায় বিষম খেলো। গার্লফ্রেন্ডদের সাথে দেখা করতে এসেছে? বাহ! না জানি কতটা গার্লফ্রেন্ড ছিলো এই ছেলের।
ইভান একটু হেসে বললো,
-“কিন্তু জানো, আজকে এটা আমার কাছে অন্যদিনের চাইতে বেশি ভালো লাগছে কারণ তুমি পাশে আছো।”
বলেই লজ্জামাখা একটা হাসি দিলো ইভান। বর্ণালীও কেন জানি কিছুটা লজ্জা পেলো। ওর কথায় হার্ট দ্রুত বিট করতে লাগলো। ইভানের দিকে না তাকিয়ে অন্য দিকে দৃষ্টি দিলো। ব্যাকগ্রাউন্ডে একটা রোমান্টিক গান চলছে যা এই পরিবেশকে আরো বেশি রোমান্টিক করে দিচ্ছে।
💛
#____চলবে………

Part 13
https://www.facebook.com/103632171307142/posts/122123832791309/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here