ফাগুন প্রেম পর্বঃ ১৫

0
594

#__ফাগুন_প্রেম_
লেখনীতে: Bornali Suhana
পর্ব: ১৫
💛
-“কিন্তু জানো, আজকে এটা আমার কাছে অন্যদিনের চাইতে বেশি ভালো লাগছে কারণ তুমি পাশে আছো।”
বলেই লজ্জামাখা একটা হাসি দিলো ইভান। বর্ণালীও কেন জানি কিছুটা লজ্জা পেলো। ওর কথায় হার্ট দ্রুত বিট করতে লাগলো। ইভানের দিকে না তাকিয়ে অন্য দিকে দৃষ্টি দিলো। ব্যাকগ্রাউন্ডে একটা রোমান্টিক গান চলছে যা এই পরিবেশকে আরো বেশি রোমান্টিক করে দিচ্ছে।

তুমি আমার এমনি একজন
যারে এক জনমে ভালোবেসে
ভরবে না এ মন
এক জনমের ভালোবাসা
এক জনমের কাছে আসা
একটু চোখের পলক পড়তে
লাগে যতক্ষণ
তুমি আমার এমনি একজন
যারে এক জনমে ভালোবেসে
ভরবে না এ মন…….
ভালোবাসার সাগর তুমি
বুকে অথৈ জল
তবু পিপাসাতে আঁখি
হয়রে ছলছল….হয়রে ছলছল
আমার মিলনে বুঝি গো জীবন
বিরহে মরণ….বিরহে মরণ
তুমি আমার এমনি একজন….
যারে একজনমে ভালোবেসে ভরবে না এ মন।
প্রাণের প্রদীপ হয়ে তুমি
জ্বলছ নিশিদিন
কোন মোহরে শোধ হবে গো….
এত বড় ঋণ….এত বড় ঋণ
আমার ভালোবাসার ফুলে তোমার
ভরাবো চরণ….ভরাবো চরণ
তুমি আমার এমনি একজন
যারে একজনমে ভালোবেসে ভরবে না এ মন।

`
বর্ণালী খাচ্ছে আর ইভান মুগ্ধ নয়নে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। ওর খাওয়া পর্যবেক্ষণ করছে। কত সুন্দর করেই না খায়। ইচ্ছে করে সারাদিন এভাবেই সামনে বসে খেয়ে যাক আর আমি দেখি।
-“এতো সুন্দর করে কেমন করেই খাও বর্ণালী?”
এমন কোন কথা ও আশাই করেনি। কথাটা শুনেই বর্ণালীর গলায় খাবার আটকে যায়। ইভান দ্রুত পানি এনে ওর হাতে দেয়। আর পিঠে ও মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আশেপাশের সবাই ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে। বর্ণালীর প্রায় নিশ্বাস আটকে যাচ্ছিলো। চোখ লাল হয়ে পানি চলে এসেছে।
-“সরি বর্ণালী ভুল হয়েছে আমার। ধ্যাৎ খাওয়ার সময় কেন যে তোমাকে ডিস্টার্ব করতে গেলাম। এখন যদি কিছু হয়ে যেত।”
ওকে নিয়ে ইভানের এমন কেয়ার আর ব্যাস্ততা এই প্রথম দেখছে বর্ণালী। এসব ওকে মন থেকে খুব করে ভাবাচ্ছে। কেন হচ্ছে এসব!
– সরি বর্ণালী। তুমি ঠিক আছো তো?”
-“ইভান তুমি বসো প্লিজ। সবাই আমাদের দেখছে।”
-“তাতে আমার কি? তুমি ঠিক আছো? এই নাও পানি খাও।”
ইভানের চোখের কোনে জল জমে গেছে। চেহারার মাঝে স্পষ্ট ওকে নিয়ে চিন্তার ছাপ দেখতেই পাচ্ছে।
-“আমি ঠিক আছি ইভান। প্লিজ তুমি ঠিক হয়ে বসো।”
-“হুম বসছি। অ্যাম রিয়েলি সরি বর্ণালী।”
-“তুমি বারবার সরি কেন বলছো? এতে তোমার কি দোষ?”
-“আমারই তো দোষ। তখন আমি এমন কথা না বললে তো…”
-“ইভান ইট’স ওকেই। শান্ত হও। কিছুই হয়নি দেখো।”
-“হুম দেখেছি।”
বর্ণালী প্রসঙ্গ পালটাতে বলে,
-“আচ্ছা ইভান বিলটা দু’জনে শেয়ার করে দেই?”
-“কেন? তুমি কি নিজের টাকা শেষ করতে চাও নাকি? আমাকে খাওয়াতে চাও না কিছু?”
-“মানে?”
-“মানে হলো এখানের খাবারটা আমার তরফ থেকে আর বাইরে বের হয়ে আমি যা চাইবো তুমি আমাকে তাই খাওয়াতে হবে। সো টাকাটা বাঁচিয়ে রাখো।”
বর্ণালী বরাবরই রেস্টুরেন্টে টাকা খরচ করে না। ও ভাবতো এই টাকা দিয়ে একটা মাছ বা মুরগী কিনে নিয়ে গেলে বাড়িতে সবাই মিলে খেতে পারবো। কিন্তু এখানে তো নিজে একা অল্প একটু খাবো আর টাকা যাবে বেশি। তারচেয়ে সবাই মিলেই খাওয়া ভালো। মাঝে মাঝে রুমুর সাথে আসলে রুমুই খাওয়াতো কখনোই ওকে বিল দিতে দিতো না। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে হাঁটতে লাগলো দু’জনে।
-“এভাবে রেস্টুরেন্ট না নিয়ে গেলেও পারতে।”
-“বারে তোমার না ক্ষুধা লেগেছিলো?”
-“না অতোটাও লাগেনি।”
-“তাই নাকি? আমাকে কি মিথ্যে বলা হয়েছিলো নাকি এখন মিথ্যে বলা হচ্ছে?”
-“কোনটাই না।”
ইভান হোহো করে হেসে দিলো। মনে এক মুখে এক তা খুব ভালো করেই টের পেয়েছে ও। বর্ণালী ব্রু কুচকে এই হাসি দেখছে। এই হাসিটা ওকে খুব করে টানছে ইচ্ছে করছে চেয়ে চেয়ে দেখতে। কিন্তু ও তা করতে পারবেনা। তাই আর বেশিক্ষণ না তাকিয়ে অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
-“তুমি না বলেছিকে কিছু খাবে?”
-“নাহ আজ থাক এমনিতেই এসব খেয়ে পেট উপুর্যুপরি হয়ে গেছে। কাল খাওয়াবে তুমি।”
-“ঠিকাছে।”
`
ঈশা ফোন হাতে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। খুব ইচ্ছে করছে সজিবের সাথে কথা বলতে। কিন্তু সজিব ব্যাপারটা কিভাবে নেবে সেটা ভেবেই কল করছেনা। মনটা কোন কারণ ছাড়াই খারাপ লাগছে। নাহ আর থাকতে পারবেনা। ও যা ভাবে ভাবুক তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। কল দিয়েই বসে ইভানকে। রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছেনা। কয়েকবার রিং হয়ে কলটা কেটে গেলো। আরেকবার কল দিতে গিয়েও দিলো না। সামনের রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে এক ধ্যানমগ্ন হয়ে। কত রকমের মানুষ যাতায়াত করছে এই রাস্তা দিয়ে৷ বুড়ো, যুবক-যুবতী, বাচ্চাসহ কিশোর-কিশোরীর আড্ডায় মেতে উঠে রাস্তা। প্রতিদিনই এমন ব্যাস্ত এই রাস্তা যদিও গাড়ির আনাগোনা খুব বেশি না। ভালোই লাগে পরিবেশটা বেশ শান্ত। চোখ বন্ধ করে নেয় ঈশা।
সজিবের কলটা রিসিভ করতে করতেই কলটা কেটে গিয়েছে। ভাবছে আবার কল দেবে। কিন্তু ঈশা আর কল দিচ্ছেনা। নিজেও কল দিবে তার ব্যালেন্স ওর ফোনে নেই। হুট করেই খেয়াল হলো ইমারজেন্সি ব্যালেন্স কবে কাজে আসবে? ইমারজেন্সি ব্যালেন্স এনেই ওকে কল ব্যাক করে।
একটা দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়াতেই ফোনটা বেজে উঠে। ঈশার চোখে-মুখে রাজ্যের হাসি ফুটে ওঠে। ইভান ওকে কল ব্যাক করেছে! ভাবতেও পারছেনা।
-“আসসালামুয়ালাইকুম।”
-“ওয়ালায়কুম আস সালাম।”
-“কেমন আছেন?”
-“আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?”
-“আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো। কি করছেন? আমি কল দিতে রিসিভ করলেন না যে?”
-“ব্যস্ত ছিলাম একটু।”
-“আচ্ছা এক মিনিট আমি একটু পর কলটা ব্যাক করছি ওয়েট।”
-“কোন প্রব্লেম?”
-“না তেমন কিছুনা। ওয়েট প্লিজ।”
ঈশা না বুঝেই কলটা রিসিভ করে নিয়েছিলো। হঠাৎ করেই খেয়াল হলো সজিবের ফোনে তো ব্যালেন্স নাও থাকতে পারে। তাই কল কেটে দিলো। ২মিনিট অপেক্ষা করে আবারো কল দিলো। মিথ্যা বলতে হবে এখন ওকে নাহলে সজিব বুঝে যাবে ও ইচ্ছে করেই কল কেটে ব্যাক করেছে। সজিবের ফোনটা বেজে উঠতেই রিসিভ করে।
-“হ্যাঁ বলো।”
-“মনে হচ্ছে আমি কোন প্রয়োজনে আপনাকে কল দিয়েছি?”
-“না মানে আসলে এটা বুঝাতে চাই নি।”
-“কি করছিলেন?”
-“স্কেচ আঁকছিলাম।”
-“কিসের?”
-“এইতো খাঁচার ভেতর অচিন পাখির।”
ঈশা হেসে দেয় কথাটা শুনে। ও ভাবতেও পারেনি সজিব ওর সাথে এভাবে কথা বলবে। মন খারাপের কারণ অজানা থাকলেও মন ভালো হওয়ার একমাত্র কারণ তার ভালোবাসার মানুষের সাথে বলা কয়েকটা কথা। এটা ঈশা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।
`
বর্ণালী সিএনজিতে যেতে চেয়েছিলো সিএনজিতে গেলে ভাড়া কম লাগে। আর এই সময় খরচ করার মতো এতো টাকা কাছে নেই। কিন্তু ইভান রিকশা ধরে দিয়ে দিলো। কিন্তু ধাক্কা খেলো ইভানকে রিকশা ভাড়া দিতে দেখে।
-“ইভান প্লিজ।”
-“কি প্লিজ?”
-“তুমি ভালো করেই বুঝতে পারছো আমি কি বলতে চাইছি।”
-“না তো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”
বর্ণালী রিকশা থেকে নেমে আসে।
-“এদিকে এসো।”
ইভানকে হাত ধরে টেনে অন্যপাশে নিয়ে যায়।
-“আরে এভাবে টেনে আনলে কেন? লোকে কি বলবে? এতো ভালোবাসা পাব্লিক প্লেসে না দেখালেও চলবে। কোন পার্কে যাই চলো ওইখানে দেখিয়ে দিও সব ভালোবাসা।”
বলেই চোখ মারে ইভান। বর্ণালী চট করে ইভানের হাত ছেড়ে দিয়ে দাঁড়ায়। কোন এক্সপ্রেশন ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছে। এই ছেলেটা আসলেই পাগল। ও এই মুহুর্তে মজা করছে!
-“ইভান।”
-“আচ্ছা আচ্ছা সরি বলো কি বলবে?”
বর্ণালী ব্যাগ থেকে টাকা বের করে বলে,
-“ধরো এটা।”
-“কি এটা?”
-“যা দেখছো তাই। তুমি আমার রিকশা ভাড়া কেন দিলে?”
-“আরে আজকে আমি দিয়েছি কাল তুমি আমার ভাড়া দিয়ে দিও। এটা কোন বড় কথা হলো নাকি? ফ্রেন্ডদের মাঝে কি কখনো টাকা আসে নাকি? না তুমি আমাকে এখনো ফ্রেন্ডই ভাবো নি?”
-“ইভান তুমি যা ভাবছো তা নয়। আমি এভাবে কারো কাছ থেকে টাকা নেই না।”
-“বাহ! ভালোই বললে। বলা শেষ হয়েছে?
এবার আমার শুনো, বর্ণালী আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি তুমি আমাকে এখনো ফ্রেন্ড ভাবতেই পারো নি।”
-“কি বলছো এসব ইভান?”
-“যাচ্ছি বর্ণালী। তুমি আমাকে যেদিন মন থেকে ফ্রেন্ড মনে করবে সেদিন আমাকে ডেকো তার আগে আমিও তোমার সামনে আসবো না।”
ইভান আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে উল্টো ঘুরে হাঁটতে লাগলো।
-“ইভান শুনো প্লিজ। দাঁড়াও তুমি আমায় ভুল বুঝতেছো।”
ইভান শুনেও মিটিমিটি হেসে দ্রুত হেঁটে চলে গেলো। মনে মনে ভাবছে ঠিক জায়গায় ঢিল ছুঁড়েছে।
এবার বুঝা যাবে তুমি কি আসলেই আমার জন্য কোন টান অনুভব করছো কিনা।
বর্ণালী কিছুই বুঝতে পারলো না কিছুক্ষনের মধ্যেই কি থেকে কি হয়ে গেলো। কত করে ইভানকে ডাকলো কিন্তু ইভান শুনলো না।
মনটাই খারাপ হয়ে গেলো ধ্যাৎ। এতো বাচ্চামো কেন করে এই ছেলেটা! অবশ্য বাচ্চা ছেলে তো বাচ্চামো করবেই। বর্ণালী আর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে রিকশায় চড়ে বসলো।
বাড়িতে আসতেই বর্ণালী মায়ের সামনে পড়লো। কেন জানি একটা ভয় পেয়ে যায়। এই প্রথম ও তার মাকে ভয় পাচ্ছে। এর আগে কখনোই এমন হয়নি। কিন্তু ও তো কোন খারাপ কাজ বা চুরি করেনি তাহলে কেন এতো ভয় পাচ্ছে?
-“কিরে এতো দেরি হলো যে?”
-“এ…এইতো মা ক….কোচিং-এ একটু দেরি হয়ে গেছে।”
মায়ের কাছ থেকে চোখ লুকিয়ে ব্যাগ সোফায় রাখতে রাখতে কথা বলছে বর্ণালী। কিন্তু কথাটা বলেই কিছুটা থমকে গেলো। ও আবারো মাকে মিথ্যে বললো আর এবারো ইভানের জন্য! কিন্তু কেন বলছে এসব মিথ্যে? মায়ের কথায় ভাবনায় ছেদ পরে।
-“যা হাত মুখ ধুয়ে খেতে আয়। তোর স্টুডেন্টরা এসে বসে আছে।”
-“ওহ হ্যাঁ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। আজকে ওরা একটু তাড়াতাড়িই চলে এলো। আচ্ছা মা আমি খাবো না।”
-“কেন রে? এতোক্ষণে তো তোর পেটে ইঁদুর দৌড়ে কিন্তু আজ কি হলো যে খাবিনা?”
-“ক্ষিদে নেই মা। ইয়ে র….রুমু খাইয়েছে আমায়।”
আবারো মিথ্যে! এসব কি করছি আমি?
কেন বলছি এতো মিথ্যে? এতো কিছুর ভেতর রুমুর রাগ ভাঙানোর কথা ভুলেই গিয়েছিলো। এদিকে ইভানও রাগ করে বসে আছে। কার রাগ ছেড়ে কার রাগ ভাঙাবে! নাহ আর ভাবতে পারছেন ও।এখন এসব না ভেবে যাই আগে ওদের পড়িয়ে নেই।
বিকেল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ক্লাস ফাইভ ও ক্লাস এইটের ৬টা স্টুডেন্ট পড়ায়। আবার সন্ধ্যার পর ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ক্লাস নাইন ও টেনের ৮টা স্টুডেন্ট পড়ায়। সবাই ইংলিশ পড়ে ওর কাছে শুধু ফাইভের স্টুডেন্টরা গণিত ও ইংলিশ দুই সাবজেক্ট পড়ে। সপ্তাহে তিনদিন বিকেলে পড়ায় আর তিনদিন রাত্রে। এতে ভালোই ইনকাম হয় ওর সাথে রেস্টও নিতে পারে তিনদিন বিকেলে আর তিনদিন রাত্রে। আর আজকের প্রাইভেট বিকেলে। তাই ভাবলো রাতেই কল করে রাগ ভাঙানোর মিশনে নামতে হবে।
`
রাত প্রায় ১০টা বাজে।
রুমুকে কল দিতেই রুমু কম কেটে দেয়। বর্ণালী জানে এই কল কাটার মানে। রুমুর কল দেখেই বর্ণালী হাসছে। সবসময় এই মেয়েটা এমন করে। কখনোই ওর কল রিসিভ করেনা। সবসময় কল কেটে ব্যাক করে।
-“কেমন আছিস জানটা?”
-“হুম আছি।”
-“রেগে আছিস?”
-“না”
-“কি করছিস?”
-“ডান্স করছি করবি নাকি?”
-“উহু জানিসই তো আমি ডান্স করতে পারিনা জান। কিন্তু তোর বিয়েতে পারি আর নাই পারি ডান্স করবো ঠিকই।”
-“একদম ঢং করবিনা বলে দিলাম।”
-“আরে বাবা ঢংয়ের কি হলো? সত্যি বলছি দেখে নিস আমি আমার জানের বিয়েতে খুব করে নাচবো।”
-“মেজাজ খারাপ করিস না।”
-“সরি তো রে বাবা। দেখ তুই যাই বলবি তাই করবো তবুও প্লিজ রাগ করে থাকিস না। আর কোনদিন এমন হবেনা প্রমিজ।”
-“হুম ঠিকাছে আর সরি বলতে হবেনা। ইভানের সাথে আর কথা হয়েছে?”
-“হ্যাঁ আজকে দেখাও হয়েছে আবার রাগ করে চলেও গেছে। কিন্তু জানিস ওর সাথে আমার ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গেছে।”
-“কিভাবে?”
বর্ণালী সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বললো রুমুকে।
-“সেদিন তো খুব বড় বড় কথা বললেন ম্যাডাম। আর এখন এক মাসের সময়ও দিয়ে দিলেন?”
-“আসলে ও এমন ভাবে বলছিলো যে না করতে পারছিলাম না।”
-“আচ্ছা সেটা না হয় মানলাম। কিন্তু রাতে রুমে ঢুকানো, হাত ব্যান্ডেজ করে দেয়া, মুখে তুলে খাওয়ানো এসব কি ছিলো হুম?”
-“আরে ওইসব তো আমার জন্যই হয়েছে তাই এটুকু হেল্প তো করতেই পারি না?”
-“হুম বুঝতেছি জান সবই বুঝতেছি। কিন্তু এখন আমার সাথে কথা না বলে যাও প্রান পাখির সাথে কথা বলে রাগ ভাঙাও।”
-“আরেই হি ইজ জাস্ট মাই ফ্রেন্ড ইয়ার।”
-“বুঝি বুঝি। আচ্ছা বর্ণালী একটা সত্যি কথা বলবি?”
-“তোকে কখনো মিথ্যে বলেছি?”
-“হুম তা না। সত্যি করে বলতো এক মাসের ভেতর যদি তোর মনে ওর জন্য ভালোবাসা জাগে তাহলে কি করবি?”
বর্ণালী এমন কথা শুনে চুপ হয়ে গেছে। কি বলবে বুঝতে পারছেনা। কিন্তু এমনটা তো কখনোই হবেনা। না না শুধু শুধু কেন ভয় পাচ্ছি আমি!
-“আরে না এমনটা হবেনা।”
-“আর যদি হয়?”
-“হবেনা বলেছি তো।”
-“আচ্ছা রাখছি তুই ইভানের সাথে কথা বলে নে।”
-“হ্যাঁ ওর রাগ ভাঙাতে না জানি এখন কত কাঠখড় পোহাতে হয়।”
-“হাহাহা আচ্ছা দেখ। কথা হবে অন্যসময় রাখছি। আল্লাহ হাফেজ।”
-“আল্লাহ হাফেজ।”
তুই যতই বলিস না কেন বর্ণালী এই অল্প কয়দিনেই তোর মনে ইভানের জন্য জায়গা হয়ে গেছে। আজকে ওর রাগের জন্য এত টেনশনে আছিস আর সেদিন রাতে ওর জন্য এতোকিছু করলি। আন্টিকেও এতো মিথ্যে বলছিস। সব কিছুই তোর ভালোবাসায় পদার্পণের লক্ষণ। যদিও তুই এখনো এসব বুঝতে চাইছিস না। কয়েকদিনেই এই অবস্থা একমাসে তো তুই ইভানের জন্য পাগল হয়ে যাবি। হাবুডুবু খাবি ওর ফাগুন প্রেমে।
`
ইভান ফোন হাতে নিয়েই অপেক্ষা করছে ও জানে বর্ণালী ওকে ফোন দেবে।
-“কিরে ইভু আসবো?”
-“হ্যাঁ বুমনি এসো না।”
-“কার কলের অপেক্ষা করছিস?”
-“যার ভাবছো তারই।”
-” ও কি কল দেবে?”
-“আলবাত দেবে। একটু অপেক্ষা করো।”
-“বাহ! ভালো। কনফিডেন্ট থাকা ভালো।”
-“হু সে না হয় বুঝলাম ভালো। বাই দা ওয়ে এই সজিবটা কে বুমনি?”
-“যা ভাবছিস তাই।”
-“হাহাহাহা বাহ! আমার কথা আমাকেই ফেরত। তা কবে থেকে চলছে?”
-“চলছে না চলবে বিয়ের পর।”
-“তাই নাকি? তাহলে শপিংয়ে লেগে যাই?”
-“তা পারিস। জানতে চাস না কে এই সজিব?”
-“হ্যাঁ বললে তো জানবো।”
-“তোর বাসন্তীর ভাই।”
-“কিহ?”
-“জ্বিহ।”
ইভান প্রায় অনেকটা অবাক হয় সাথে অনেক খুশিও। বুমনিরটা হয়ে গেলেই যে ওর পথ ক্লিয়ার। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।
-“এতো আনন্দ করো না ওকে?”
-“তুমি কীভাবে বুঝলে যে আনন্দ কাজ করছে?”
-“তোর বোন হই। চেহারা দেখলেই বুঝতে পারি।”
-“হুম কিন্তু একটু তো আনন্দ করতেই পারি।”
-“তা পারিস। তবে এখনো বসন্তপথিকের পথ ধরে চলতে শুরু করেনি বাসন্তী শুধুমাত্র সে পথে পা বাড়িয়েছে।”
-“পা বাড়ালেই তো চলার শুরু তাই না বুমনি?”
-“হুম চলতে তো হবেই। পথ তো এই একটাই।”
ইভানের ফোন বেজে উঠে। চিরচেনা নামটি ভেসে উঠেছে স্ক্রিনে “বাসন্তী”।
-“আসসালামুয়ালাইকুম।”
ইভান ফোন রিসিভ করে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। টুপ করে ঈশা ফোনটা ওর কাছ থেকে নিয়ে নেয়। একটু দুষ্টুমি করলে মন্দ হয়না। ইভান হা হয়ে তাকিয়ে আছে ঈশার দিকে। কি করছে বুমনিটা? বর্ণালী ওইপাশ থেকে বার বার হ্যালো হ্যালো বলেই যাচ্ছে।
-“হ্যালো ইভান আছো? কথা শুনা যাচ্ছেনা? রেগে আছো এখনো?”
বাহ তা ভাই আমার রেগে থাকার অভিনয় করছে। ভালোই অভিনয় করতে পারে। ও গলাটা একটু ভারী করে বললো,
-“হ্যালো কাকে চাই? এতো রাতে কি কোন ভালো মানুষ কল করে নাকি? কেন কল দিয়েছেন? কি চাই?”
বর্ণালী ভয়ে টুপ করে কল কেটে দেয়। বাপরে এই কোন মেয়ে কল রিসিভ করলো? তাও ইভানের? ওহ হ্যাঁ বোনই হবে হয়তো। ওর বোন আর মা ছাড়া তো আর কেউ নি এত রাতে কল রিসিভ করার জন্য। ভয়ের জ্বালায় কথাগুলো ভালো করে শুনতে পায়নি বর্ণালী। হাত পা কাঁপছে এখন। কেন যে কল করতে গেলাম। বর্ণালীর মোবাইলটা ভু ভুউ শব্দ করতেই চমকে উঠে ও। হার্ট অ্যাটাক করার মতো অবস্থা। কল রিসিভ করবে কি করবে না দ্বিধায় পড়ে গেলো।
💛
#______চলবে………..
গত পর্ব – https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122309512772741&id=103632171307142

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here