ফাগুন প্রেম পর্বঃ ১৮

0
458

#__ফাগুন_প্রেম__
লেখনীতে: Bornali Suhana
পর্ব: ১৮
💛
ইভান বর্ণালীর হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে একেবারে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। বুকের ধুকপুকানি আওয়াজটা বেড়ে গেছে। নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। ইভানের চোখের দিকে তাকাতেই প্রচন্ড রাগ দেখতে পাচ্ছে বর্ণালী। এই রাগের কারণ খুঁজে পাচ্ছেনা ও। ইভান বর্ণালীর হাত পেছনে মুড়িয়ে পিঠের মাঝে ঠেকিয়ে শক্ত করে ধরে আছে। হাতের ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে নেয় বর্ণালী।
-“ইভান ব্যাথা পাচ্ছি আমি।”
ইভানের কানে যেনো ওর কথাই পৌঁছাতে পারছেনা। এখনো এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ডান হাতটা তুলে বর্ণালীর কানের পেছনে রাখলো। ইভানের কেমন ঘোর লেগে যাচ্ছে। এমনিতেই বর্ণালীর ড্রেস আর প্লাজো ভিজে শরীরের সাথে চিপকে আছে। আর এদিকে ইভান এভাবে ধরে আছে। ইভান আলতো করে ওর কানের পেছনে বৃদ্ধাঙ্গুলী দিয়ে স্লাইড করতে লাগলো। ধীরে ধীরে মুখটা কানের কাছে নিয়ে আসে। বর্ণালীর যেনো নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তারউপর এমনভাবে হাত ধরেছে যে হাতের ব্যাথায় নড়তে পারছেনা। ওকে আটকানোর আর কোন পথ খোলা না দেখে বলে,
-“ই…..ইভান তুমি তোমার প্রমিজ ব্রেক করছো। আমার লাগছে খুব।”
বর্ণালীর চোখে জল দেখে ইভানের চোখগুলো শান্ত হয়ে আসে। চোখের এক ফোটা জলের সাথে কেমন যেনো একটা মায়া ঝড়ে পড়লো। বর্ণালীর হাত ছেড়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। কেমন অপরাধবোধ অনুভব করছে। রাগের মাথায় এসব কি করে ফেললো ও! এতো বড় ভুল কিভাবে করলো ও?
ওর জন্য সে কাঁদছে! হ্যাঁ ওর জন্যই কাঁদছে।
কিভাবে কষ্ট দিয়ে ফেললাম আমার বর্ণালীকে? কিভাবে?
ইভান নিজেকে সামলে বিছানায় বসে গেলো। বর্ণালী চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে এক হাতে আরেক হাতের মাঝে নিয়ে ঘসে যাচ্ছে। ব্যাথা করছে খুব। ধবধবে ফর্সা হাতের কব্জির পাশে লাল হয়ে গেছে।
-“একটু পানি পাওয়া যাবে?”
ইভানের কথা শুনে বর্ণালী চোখ মুছে ধীর পায় এগিয়ে ওর পানির বোতলটা পড়ার টেবিল থেকে নিয়ে আসে। অল্প একটু পানি আছে ইভানের দিকে এগিয়ে দেয়। এক নিশ্বাসে পানি খেয়ে তারপর লম্বা একটা নিশ্বাস নেয়।
-“আ…….আই এম সরি। আ…..আসলে তোমাকে ছোঁয়ার কোন অধিকার নেই আমার কথাটা ভুলে গিয়েছিলাম।”
বর্ণালী কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। চুপ হয়ে আছে। ইভানের চোখের কোনে জল দেখতে পাচ্ছে ও।
-“স…সরি বর্ণালী তোমার সাথে এমন ব্যাবহার করা একদমই ঠিক হয় নি। আই এম রিয়েলি সরি। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও বর্ণালী প্লিজ প্লিজ প্লিজ।”
ইভান এই প্রথম কারো কাছে মাথা নিচু করেছে। কাউকে সরি বলেছে। ভুল করলেও কখনো কাউকে সরি বলে নি। নিজের জন্য না ভেবে আজ বর্ণালীর জন্য ভেবেছে ও। আজ যে সত্যিই সে ভুল করে ফেলেছে। না চাইতেও তার ভালোবাসার মানুষটাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। সরি তো বলারই ছিলো। ইভান ফ্লোরে বসে পড়ে। ভীষণ কান্না পাচ্ছে ওর। কিভাবে বর্ণালীকে এতোটা খারাপ কথা শুনাতে পারলো ও? কিভাবে? বর্ণালী কি আমাকে মাফ করবে? নাহ যতক্ষণ না মাফ করছে ততক্ষণ তো ক্ষমা চাইতেই হবে।
-“ক্ষমা করবে না? এইযে প্রমিজ করছি আর কোনদিন আমি তোমাকে কোন কিছু প্রশ্ন করবো না। কোন বাজে কথা বলবো না। জানি অধিকার দাও নি তবুও আজকে ভুলটা করে ফেলেছি তার ক্ষমা কি পাবো না?”
বর্ণালী ইভানকে যত দেখছে ততই অবাক হচ্ছে। ও কেমন পাগলের মত ব্যাবহার করছে এখন। ফ্লোরে বসে ওর দিকে তাকিয়ে দু’হাত জোর করতে যেতেই বর্ণালী হাত ধরে ফেলে।
-“প্লিইইজ।”
-“ইভান ইট’স ওকে। আমি তোমার কথায় কোন কিছুই মনে করিনি। প্লিজ উঠে দাঁড়াও।”
-“আগে বলো ক্ষমা করেছো?”
-“হ্যাঁ করেছি।”
-“সত্যি ক্ষমা করেছো?”
-“হ্যাঁ তো প্লিজ উঠো এখন।”
ইভান উঠে দাঁড়ায়।
-“চলি।”
-“কই?”
-“বাসায় যাবো না নাকি?”
-“ওহ হ্যাঁ যাবেই তো। দাঁড়াও এক মিনিট।”
বর্ণালী ইভানের সিম এনে ওর সামনে ধরে।
-“তোমার সিম কার্ড।”
-“ওহ থ্যাংকস ভালোই হলো আর তুলতে হবে না সিম কার্ডটা।”
-“হুম। ইভান একটা কথা বলার ছিলো।”
-“হ্যাঁ বলো।”
-“ইয়ে মানে…… নিজের রাগটা কন্ট্রোল করার একটু চেষ্টা করো প্লিজ। কোন কথায় কার কখন কতটা কষ্ট লাগে তা যে কষ্ট পায় সে ছাড়া অন্য কেউ আন্দাজও করতে পারেনা।”
-“জানিনা পারবো কিনা কিন্তু চেষ্টা করবো। আসি।”
ইভান দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ভালো লাগছেনা আর।
কিভাবে বর্ণালীকে এসব কথা বলতে পারলাম? কিভাবে ওকে ভুল বুঝতে পারলাম? কিছু বলার আগে কেন একটাবার ভেবে দেখলাম না?
কিভাবে ওর সামনে মুখ দেখাবো? নাহ আমি আর ওর সামনে আসবো না। কিন্তু আমি কি পারবো ওকে না দেখে থাকতে?
ইভানের পিছু পিছু বর্ণালী বেলকনি পর্যন্ত এগিয়ে যায়। রেলিঙ টপকে ওইপাশে গিয়ে একবার বর্ণালীর দিকে তাকায় ইভান।
-“সরি। ক্ষমা করে দিও। আ…..আর কখনো তোমাকে কষ্ট দিবো না। আসলে হয়তো কষ্ট দেয়ার মত কোন পরিস্থিতি আসবেই না। চলি। ভালো থেকো খুব বেশি।”
বর্ণালী ইভানের কথার ঠিক অর্থটা বুঝতে পারলো না। ইভান ততক্ষণে সেখান থেকে চলে গেলো। চোখ মুছে বাইক স্টার্ট দিয়ে বাসার দিকে রওয়ানা দিলো। তার জন্য বর্ণালী কষ্ট পায় এটা সে চায় না। কখনোই না। এতে যদি নিজে কষ্ট পেতে হয় সেটাও সে মেনে নিবে। নিঃশব্দে ইভানের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। বার বার হাতের উল্টো দিক দিয়ে জল মুছে যাচ্ছে কিন্তু পরক্ষনেই আবারো জল গড়িয়ে পড়ছে। হ্যাঁ এটা তার প্রাপ্য। বর্ণালীকে কষ্ট দেয়ার ফল এটা।
`
সজিব অনেক্ষণ ধরে বসে চাকুরী বার্তা পড়ছে। কোন একটা ভালো সার্কুলার এসেছে কিনা দেখছে। অবশ্য এতো ভালো সার্কুলারও খুঁজছে না। কোনরকম একটা জব হলেই হতো সেটাও তো পাচ্ছেনা। বোনটাও বিয়ের উপযুক্ত হয়েছে ওকে আর এভাবে কত দিন বসিয়ে রাখবে। অনেক দ্বায়িত্ব রয়েছে ওর উপর। সেগুলো কবে কিভাবে পালন করবে ভেবে পাচ্ছে না। ফোনটা সারাদিনে একবারও বের করে দেখা হয় নি। বিছানা এপার ওপার করে মোবাইল খুঁজে যাচ্ছে ও। অবশেষে বিছানায় এক যুদ্ধের পর মোবাইল খুঁজে পেলো সজিব। কিন্তু ফোন হাতে নিয়েই এতোটা কল দেখে মাথাই হ্যাং হয়ে গেলো। প্রতিরাতে আসা সেই আননউন নাম্বার যেটা Unknown লিখেই সেইভ করে রেখেছি সেটা থেকে ৫টা কল, ঈশার দুটো কল আর আরেকটা নতুন একটা আননউন নাম্বার থেকে দুটো কল এসেছে। সবার আগে এই নতুন আননউন নাম্বারে কল দিলাম।
-“আসসালামুয়ালাইকুম কে বলছেন?”
-“ওয়ালায়কুমআসসালাম। আপনি কি সজিব হাসান?”
-“জ্বি হ্যাঁ।”
-“আপনার কুরিয়ারযোগে একটা চিঠি এসেছে দয়া করে কালেক্ট করে নেবেন।”
-“জ্বি আচ্ছা। ধন্যবাদ।”
আমার নামে কুরিয়ার কোথা থেকে আসবে? হ্যাঁ কয়েকদিন আগেই তো HSBC ব্যাংক আর পূবালী ব্যাংকে চাকুরির আবেদন করলাম হয়তো চাকুরির ইন্টারভিউয়ের জন্য ডেকেছে। অবশ্য এ আর নতুন কি। প্রায়ই তো চাকুরির ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকে কিন্তু ঘুষের অভাবে চাকুরীটা তো আর হয়ে ওঠে না। আজকাল চাকুরী যে সোনার হরিণ। মামা-চাচা থাকলেই চাকুরী পাওয়া সম্ভব নাহলে কোন ব্যাবসা বা সিএনজি কিনে ড্রাইভিং অথবা বিদেশে পাড়ি জমাতে হবে। যাই হোক সকালে গিয়েই কালেক্ট করতে হবে চিঠিটা। আরো কয়েকবার চেষ্টা করে দেখতে হবে। এতো দ্রুত ভেঙে গেলে চলবেনা। হুম ঈশা ঠিকই বলে সোনার হরিণ বলে কথা এতো দ্রত ধরা দেবে নাকি! unknown নাম্বারে আর কল দিলাম না। ঈশাকেও কল দিলাম না। কি প্রয়োজন শুধু শুধু কারো উপর মায়া বাড়ানোর। ভালোই তো আছি। সে না হয় তার মতোই কাউকে খুঁজে নেবে। ঈশার মতো বড়লোকের মেয়ে আমার জন্য নয়।
`
বর্ণালী চুপচাপ বিছানায় শুয়ে আছে। মনটাকে কেন জানি শান্ত করতে পারছেনা। ঘুম ভেঙে গেছে সেই ৩টার দিকে আর ঘুম আসলোই না। তার চেয়ে বরং তাহাজ্জুদের নামাজটা পড়ে নেই। তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ তেলাওয়াত করতেই ফজরের আজান কানে এলো। ফজরে নামাজটা আদায় করে চলে গেলো রান্নাঘরে। শারমিন বেগম খুব মনযোগ দিয়ে রান্না করছেন। এই তো সেই মা যে কিনা ভালোবেসে বিয়ে করে আজ দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কষ্ট করে যাচ্ছেন। একটাদিন অল্প একটুও সুখের দেখা পেলেন না। যেখানে মা ভালোবেসে বিয়ে করে সুখের দেখা পান নি সেখানে মেয়ে পাবে এই আশা কিভাবে করা যায়! নাহ আমি এই আশা করিনা। তাই তো এসব থেকে যতদূর সম্ভব দূরেই থাকার চেষ্টা করছি আর দূরেই থাকবো ইনশাআল্লাহ।
-“কিরে ওইখানে দাঁড়িয়ে কি করিস? আজ যে এতো তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলি?”
মায়ের আওয়াজে ঘোর কাটে আমার।
-“এইতো মা ঘুম ভেঙে গেলো তাই উঠে গেলাম। তুমি কি করছো?”
-“খিচুড়ি রান্না করি। তোর আর সজিবের তো খুব পছন্দ খিচুড়ি ভুনা তাই তো রান্না করছি।”
-“আর ডিম সিদ্ধ?”
-“ওই দেখ ভুলে গিয়েছিলাম। এখনি বসিয়ে দিচ্ছি।”
-“আমি বসাচ্ছি মা। তুমি তোমার কাজ করো।”
অনেকদিন পর খিচুড়ি ভুনা আর ডিম সিদ্ধ খাবো। সাথে শসা আর লেবু হলে তো হয়েই গেলো। বেশ লাগে খেতে। ইভানের কথা মাথা থেকে সরাতেই পারছিনা। এই ছেলেটা মাথার মাঝে পোকার মতো ঢুকে বসছে। নাহ আজেবাজে ভাবনা রেখে কাজে মনযোগ দেই।
`
দরজায় কারো নক শুনতে পাচ্ছে ইভান।
-“হেই হ্যান্ডসাম কয়টা বাজে দেখেছো? উঠে যাও বাবা। দরজা খোল তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।”
ইভান টিপটিপ করে চোখ খুলে তাকায়। সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো কাল রাতে বলতেই পারেনা। বাবা আজ এই সময় আমাকে ডাকছেন! বাবা তো কোনদিন আমায় ডাকেন না। হুড়মুড় করে উঠে ইচ্ছাকৃতভাবে বিছানাটা একটু এলোমেলো করে দরজা খুলে দেয় ইভান। চোখ কচলে বাবার দিকে তাকায়। ফারহান আহমেদের মুখে এক পশলা হাসি ঝুলে আছে। এই হাসির রহস্য অনুমান করতে পারছেনা ইভান। বাবা খুব খুশি হলেই এমন হাসি দেন। কিন্তু আজকে এমন কি যে বাবাকে এতো খুশি লাগছে!
-“কয়টা বাজে ইভান সাহেব?”
-“এতোবড় কোম্পানির মালিকের বাড়িতে একটা ঘড়ি নেই? তিনি কিনা আমাকে এসে টাইম জিজ্ঞেস করছেন?”
-“ছাড় বজ্জাত ছেলে। দুপুর ২টা বেজে গেছে আজকে ঘুম থেকে উঠার কোন নাম নেই কেন?”
-“রুমের ভেতর দুপুর না রাত কিছুই বোঝা যায় নাকি? আর আমাকে তো কেউ ডাকেও নি আজকে। তাই আর ঘুম ভাঙেনি।”
-“আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে এসো তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।”
-“আমার জন্য এখন আবার কিসের সারপ্রাইজ বাবা?”
-“আসলেই তো দেখবি। কাম ফাস্ট মাই চাইল্ড।”
ইভান কিছুটা হাসার চেষ্টা করলো। ফ্রেশ হয়ে নীচে এসে দেখে সবাই দুপুরের খাবার নিয়ে বসেছেন। ও চুপচাপ একটা প্লেট নিয়ে বসে গেলো।
-“বুমনি কোথায় মা?”
-“ও তো ভার্সিটি গেলো আজকে।”
-“ওহ আচ্ছা।”
-“বাবা এই সময় বাড়িতে যে?”
-“তোমার সারপ্রাইজ নিয়ে এলাম। দ্রুত খাওয়া শেষ করো।”
ইভান অল্প একটু খেয়ে নেয়। মায়ের জন্য না খেয়ে থাকতে পারবে না। জোর করে হলেও খেতে হয়। তাই আর জোরাজুরিতে না গিয়ে নিজেই খেতে বসে গেলো।
ফারহান আহমেদ ডাইনিং রুমে বসে আছেন। ছেলে খেয়ে আসার অপেক্ষা করছেন বসে বসে। আজকে যে তিনি তার ছেলেকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্যই এই সময় বাসায় এসেছেন।
-“বাবা কি সারপ্রাইজ?”
-“সোজা হেঁটে বাইরে চলে যাবে যা দেখবে তাই তোমার সারপ্রাইজ।”
ইভান কিছুটা ব্রু কুচকে তাকালো বাবার দিকে। বাবা এখন আবার এসব কি শুরু করলেন! সাহারা ইসলাম সোফায় বসে মিটিমিটি হাসছেন বাপ ছেলের কাণ্ড দেখে। তখনি ফারহান আহমেদ বলেন,
-“কি হলো যাও।”
-“হুম যাচ্ছি।”
ইভান বারান্দায় আসতেই বড়রকমের একটা ধাক্কা খায়। ব্ল্যাক কালারের কার দাঁড়িয়ে আছে। কাছে গিয়ে মডেল দেখলাম “মার্সিডিজ বেঞ্জ মেব্যাচ এক্সেলেরো” আরেকবার তাক লেগে গেলাম। এতো এক্সপেন্সিভ গাড়ি কেন আনলেন বাবা! দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি বাবা চাবি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। বাবার কাছে এগিয়ে গিয়ে টাইট একটা হাগ দিলাম। বাবা আদর করে পিঠের মাঝে কয়েকটা চাপড় মেরে দিলেন।
-“এখন আর তার তোমার সাথে ড্রাইভে যেতে কোন প্রব্লেম হবে না।”
বাবার কথা শুনে ভেতরটা খচ করে উঠলো। বাবা যাকে নিয়ে ড্রাইভে যাওয়ার কথা বলছেন আমি তো তাকে এই মুখ দেখাবো না বলে নিয়ত করেছি।
-“কি হলো? পছন্দ হয়েছে?”
-“বাবা! অনেক বেশি পছন্দ হয়েছে কিন্তু এতো এক্সপেন্সিভ গাড়ি কেন আনতে গেলে?”
-“আমার ছেলের মুখের হাসির চাইতে এটা কোন বড় কিছু নয়।”
গাড়িটা গিফট পেয়ে ও যতটা খুশি হয়েছে তার চেয়ে বেশি চিন্তায় পড়ে গেছে। বর্ণালী তো কখনোই ওর সাথে গাড়িতে উঠবে না। আর ও কিভাবে বর্ণালীর সামনে গিয়ে দাঁড়াবে! বড় বেশি অপরাধী লাগছে যে নিজেকে। না না বর্ণালীর সামনে কিছুতেই যাওয়া যাবে না।
-“কি হলো এভাবে দাঁড়িয়ে কি দেখছিস? যা ড্রাইভ দিয়ে আয় একটা।”
-“কিন্তু বাবা…”
-“কোন কিন্তু না যাও।”
তখনি ঈশা বাসায় এসে ঢুকে। গাড়িটা ভালো করে ঘুরে দেখে নিলো। গাড়ির সামনের দরজা খুলে হ্যান্ড ব্যাগটা গাড়ির ভেতর ঢুকিয়ে নিজেও বসে গেলো।
-“এটা কি হলো?”
-“আরে নতুন গাড়ি পেলি ড্রাইভে নিয়ে যাবিনা? আমার তো কপাল মন্দ এতো এক্সপেন্সিভ গিফট জোটে না।”
সবাই একসাথে হেসে দেয়।
-“আমার মামনির কি লাগবে বলো?”
-” বারেহ বাহ!!!! না চাইতেও নিজের ছেলেকে দিয়ে দিলে আর আমি চাইবো তারপর দিবে?”
-“আচ্ছা! আমার মামনির জন্য আরো বেশি স্পেশাল গিফট রেডি করছি। কয়েকটা দিন সময় দাও তোমার বাবাইকে।”
ঈশা কিছুটা অবাক হয়। বাবাই ওকে কি এমন গিফট দিতে চাইছেন। থাক যখন দেবেন তখন জেনে নেয়া যাবে। এখন ইম্পর্ট্যান্ট হলো একটা লং ড্রাইভ।
ইভান একবার বাবা আর মায়ের দিকে তাকিয়ে একটা দৌড় দিয়ে উপরে চলে গেলো। ক্যামেরা হাতে নিয়ে নিচে নেমে এসে বাবা আর মাকে টেনে গাড়ির সামনে যায়। গাড়ির দরজা খুলে বলে,
-“উঠে বস।”
-“মানে?”
-“মানে আমরা সবাই এখন লং ড্রাইভে যাচ্ছি।”
-“আরে আমরা গিয়ে কি করবো? তোরা ভাইবোন যা গিয়ে ঘুরে আয়।”
-“আরে না না প্লিজ মা-বাবাই চলো একসাথে অনেকদিন কোথাও যাওয়া হয়না। দেখো অনেক মজা হবে।”
বলেই ঈশা গাড়ি থেকে বের হয়ে মা বাবাকে জোর করে গাড়িতে তুলতে যায়। তখনই ফারহান আহমেদের কল আসে। উনি কথা বলে এসে বলেন,
-“সরি ডিয়ার আমি যেতে পারছিনা আমার ইম্পর্ট্যান্ট একটা মিটিং পড়ে গেছে। আমাকে এখনি অফিসে যেতে হবে।”
কথাটা শুনে সবার একটু মন খারাপ হয়ে গেলো।
-“আরে মন খারাপ করছো কেন? আমি না হয় পরে একসময় যাবো। দ্রুত একটা ফ্যামিলি ট্রিপের ব্যাবস্থা করছি। এখন যাও তো তোমরা।”
সাহারা বেগম বললেন,
-“তাহলে আমি গিয়ে কি করবো?”
-“তোমাকে তো যেতেই হবে।”
ইভান জোর করে মাকে গাড়তে তুলে দিতে যায়।
-“আরে এই বেশেই যাবো নাকি?”
-“মা তোমাকে এভাবেও দারুণ লাগছে। আরেকটা বিয়ে দেয়া যাবে।”
-“যাহ ফাযিল মেয়ে।”
সাহারা ইসলাম মেয়ের গাল টেনে দিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলেন। ইভান ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে গাড়ি স্টার্ট দিতে যাবে তখনি ঈশা বলে,
-“রানীসাহেবা আর রাজাসাহেবকে ছাড়াই যাবো?”
-“আরে হ্যাঁ ভুলেই গিয়েছিলাম ওদের কথা।”
-“আমি যাচ্ছি নিয়ে আসছি ওদের।”
-“হুম যা ওদের ডেকে নিয়ে আয়।”
ঈশা গিয়ে ওদের দুজনকে নিয়ে আসে। দুজন আসার সাথে সাথেই ইভান গাড়ি স্টার্ট দেয়। কুড়িল বিশ্বরোড দিয়ে গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে উদ্দেশ্য পূর্বাচল যাওয়া। সেখানের হাটে বাজার করবে আর ভালো কোন রেস্তোরাঁয় চাইনিজ খাবে সবাইকে নিয়ে। শা শা করে বাতাসগুলো কেমন এসে গভীরভাবে ভেতরটা ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে। ঈশা ইচ্ছে করেই গাড়ির জানালাটা খুলে দিলো।
💛
#_____চলবে………
.
গত পর্ব – https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122898726047153&id=103632171307142

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here