ফাগুন প্রেম পর্বঃ ১৯

0
480

#___ফাগুন_প্রেম___
#_লিখাঃ Bornali Suhana
#_পর্বঃ ১৯
💛
কুড়িল বিশ্বরোড দিয়ে গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে উদ্দেশ্য পূর্বাচল যাওয়া। সেখানের হাটে বাজার করবে আর ভালো কোন রেস্তোরাঁয় চাইনিজ খাবে সবাইকে নিয়ে। শা শা করে বাতাসগুলো কেমন এসে গভীরভাবে ভেতরটা ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে। ঈশা ইচ্ছে করেই গাড়ির জানালাটা খুলে দিলো। এই পাগলা হাওয়ায় নিজেকে নিয়ে মিলিয়ে যেতে মন চাইছে।
৩০০ফুট পার হয়ে বোয়ালিয়া ব্রিজ এসেছে গাড়ি। সামনেই বালু ব্রিজ পড়বে। এখানে ইভান আরো দু’বার এসেছিলো। পথঘাট ভালো করেই চেনা। কোন যানযট নেই রাস্তায় এমন রাস্তা লং ড্রাইভের জন্য একদম পারফেক্ট। ইভান অন্যদিন ড্রাইভ করতে কত এনজয় করে কিন্তু আজ তা পারছেনা। বারবার বর্ণালীর মুখ ভেসে আসছে চোখের সামনে। ওর সেই কান্নাভেজা চোখ দুটো ভেতর থেকে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে। কিভাবে কাঁদাতে পারলো তার বাসন্তীকে। আজ যে না চাইতেও ওর কাছে অপরাধী হয়ে গেলাম। যাও ভালোবাসার একটা সুযোগ ছিলো তাও হারিয়ে ফেললাম। বর্ণালী তো জেনেশুনে কখনোই আমার মতো বদরাগী খারাপ ছেলেকে এক্সেপ্ট করবে না। কেন করবে এমন ছেলেকে এক্সেপ্ট যে কিনা কোন কিছু না বুঝেই তাকে কষ্ট দেয়। কষ্ট হচ্ছে খুব। তাকে কষ্ট দিয়ে যে নিজেই কষ্ট পাচ্ছে। রানুর কথায় ইভান ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আসে।
-“দাভাই আমরা যাইতেছি কই?”
-“গেলেই দেখতে পাবে। আর বেশি দেরি না। অপেক্ষা করো একটু।”
রানু আর কিছু না বলেই চুপ হয়ে যায়। মাঝখানে বসায় ভালো করে নড়তে পারছেনা বেচারি। সাহারা ইসলাম ভালোই উপভোগ করছেন এই লং ড্রাইভটা। জানালার দিকে তাকিয়ে বাইরের শান্ত পরিবেশ দেখতে মগ্ন তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই বালুব্রিজ পার হয়ে ডানে টার্ন নিলো গাড়িটা। ব্রিজগুলো খুব বড় আর সুন্দর ছিলো দেখতে। আর আশেপাশের পরিবেশ আরো বেশি সুন্দর।
কিছুদূরেই দেখা যাচ্ছে ভোলানাথ কবরস্থান। ঈশা ভালো করে মাথায় ওড়না পেচিয়ে দেয়। সবাই মনে মনে কবরস্থানের দোয়াটা পড়ে নিলো । কবরস্থানের ভেতরের পথ দিয়ে গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে।
ইভান গাড়ি একটা জায়গায় থামালো। বাইরের পরিবেশটা দেখে বুঝা যায় না ভেতরটা অনেক সুন্দর হবে। সাহারা ইসলাম গাড়ি থেকে নেমেই প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন ইভানের দিকে।
-“কোথায় নিয়ে এলি ইভু?”
মায়ের সাথে পাল্লা দিয়া ঈশাও মুখ খুললো।
-“ইভু এটা কোন জায়গা?”
-“এটা নকশিপল্লী রেস্তোরাঁ। এখানের খাবার অনেক ভালো। আজকে আমরা এখানে চাইনিজ খাবো।”
-“দাভাই আগে কইবেন না চাইনিজ খাওয়াইবেন একটু ভালো রাহম রেডি হইয়া আসতুম।”
-“রানীসাহেবা তোমাকে এমনিতেই রানী লাগছে আরো রেডি হলে তো উপায় ছিলো না। লোকে রানী এলিজাবেথ ভেবে ধরে নিয়ে যেতো।”
-“কি যে কন না। মানুষে আমাগর এই অবস্থায় দেইহা কিডা কইবো কন তো।”
-“রানীসাহেবা কতদিন না বলেছি আমার সাথে থাকলে এই ভাষায় কথা না বলতে।”
-“সরি বুমনি। একচুলি ভুলে ভুল করে মিচটেক হয়ে যায়।”
-“উফফফফ রানীসাহেবা এই ভাষায় কথা বলবে না মানে হলো গ্রামের ভাষায় না বলে শুদ্ধ ভাষায় বলবে আর প্লিজ তোমার ওই ইউনিক ইংলিশে কথা বলো না। আশেপাশের মানুষ সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেলে তুমি দায়ী থাকবে।”
-“বুমনি আপনার আমার সব কথাতেই প্রুব্লেম। যান আর কোন কথাই কইতাম না।”
-“এগেইন!!!!”
-“ইস ঈশা চুপ কর। রানু যেভাবে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে তাকে সেভাবেই কথা বলতে দে।”
-“হু তাই বলে এই ভাষায়?”
-“বাদ দাও না বুমনি আর দেখো রানীসাহেবা কোন মানুষটা কি বললো তাতে আমাদের কিচ্ছু যায় আসেনা। আমরা এখানে মানুষকে দেখাতে আসিনি আমরা এসেছি ঘুরতে আর খেতে। ঠিকাছে?”
-“হু তবুও একটু লিবিস্টিক তো লাগাইতে পারতুম। সেল্ফি তুলনের সময় যে বিচ্ছিরি লাগবো।”
-“হো তোমার আর সেল্ফি তুলা লাগবো না। আমি দেখলেই হইবো।”
-“বাহবা!!! রাজাসাহেব তো দেখি সেই লেভেলের রোমান্টিক পারসন।”
দীপু লজ্জায় লাল বেগুনী হিয়ে যাচ্ছে এটা দেখে
ইভান ঈশা দুজনেই হেসে দিলো। সাহারা বেগমও তাদের সাথে হাসিতে তাল মেলান।
বেশ বড় জায়গা। বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে যেতে হয়। সাঁকোটা ঠিক একটা রাস্তার মতো বড়। চারপাশে শুধুই পানি। এখানে সবকিছুই বাঁশ আর কাঠের তৈরি। অনেক সুন্দর করে সজিয়ে রেখেছে। পাশেই নদী আছে। ইচ্ছে হলে নদীর পাড়ে বসে সময় কাটানো যাবে। রেঁস্তোরার ভেতরে ঢুকে একটা টেবিলে বসে পড়লো সবাই। ঈশা আর রানু সেল্ফি তুলতেই ব্যাস্ত। এখন ঈশাও ভাবছে আগে বুঝলে ভালো ড্রেস পড়ে আসা যেতো। এতো ভালো একটা জায়গায় এসেছে। কত স্মৃতি নিয়ে যাবে এখান থেকে। সাহারা ইসলাম একবার নিজের দিকে তাকালেন। অন্য দিন ভালোই কাপড় পড়া থাকে কিন্তু আজ একটা কাতান শাড়ি পড়া। এমন পরিবেশের সাথে ঠিক মানাচ্ছেনা উনাকে। ওরাই জোর করে নিয়ে এলো নাহলে তো ভালোভাবে তৈরী হয়ে আসা যেতো।
ইভান বসে আছে এখানে ঠিকই কিন্তু মনটা তার বর্ণালীর কাছে পড়ে আছে। থেকে থেকে বারবার ওর কথাই মনে পড়ছে। ঈশা উঠে ক্যামেরা নিয়ে সবার ছবি তুলেই যাচ্ছে। আশেপাশের সবকিছুরও ছবি তুলছে।
`
কোচিং থেকে বের হয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে বর্ণালী। আজকেও ইভানকে কোচিং-এ দেখলো না। কোথায় আছে ছেলেটা। একটা কল দিয়ে দেখলে তো মন্দ হয় না। কল দিয়ে কোন লাভ হলো না ইভানের নাম্বারটা বন্ধ। হয়তো এখনো মোবাইল কিনে নি আর সিমও এক্টিভ করেনি। কিন্তু আমার এতো টেনশন হচ্ছে কেন ওর জন্য। একটা রিকশায় উঠে বসে বর্ণালী। ভালো লাগছেনা কিছুই। মনটা কাল রাত থেকেই অশান্ত হয়ে আছে। ফোন বের করে রুমুকে কল দেয়।
-“হ্যাঁ রে কই তুই? বাসায়?”
-“হ্যাঁ জান বাসায়ই তো থাকবো আর কই যাবো। কেন? তুই কই?”
-“এইতো রাস্তায় তোর বাসায় আসছি।”
-“আচ্ছা জান আয় কথা হবে।”
-“আচ্ছা রাখছি।”
রুমুর সাথে বসে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায় যাই। মনটাও ভালো হয়ে যাবে। বর্ণালী শারমিন বেগমকে কল দিয়ে বলে দিলো সে রুমুর বাসায় যাচ্ছে আসতে দেরি হবে।
`
কুরিয়ারে আসা চিঠি হাতে নিয়ে একটা চায়ের দোকানে বসে আছে সজিব। খুলে দেখলো HSBC ব্যাংকের চিঠি। ইন্টারভিউয়ের জন্য ডেকেছে। আজ বৃহস্পতিবার শনিবারেই ইন্টারভিউ। এতো দ্রুত! তেমন কোন প্রস্তুতিও নেই ওর। কিভাবে কি দেবে ইন্টারভিউ। সামনে এমবিএ এক্সাম তার জন্যও প্রচুর পড়তে হয়। এমবিএ কম্পলিট হয়ে গেলে ভালো পোস্টের জবে এপ্লাই করা যাবে। এক কাপ লাল চা আর একটা পড়টা অনেক মজা করে খাচ্ছে সজিব আর এদিকে ঈশা দামী রেস্তোরাঁয় বসে চাইনিজ খাচ্ছে আর ভাবছে সজিব আমাকে এতো কেন অবহেলা করছে! সকালেও কতটা কল দিলাম সজিবকে কিন্তু রিসিভ করলো না। মনটা ভিষণ খারাপ। এই সজিবকে সামনে পেলে ইচ্ছেমতো ধোলাই দিতাম। আর জীবনেও সাহস হতো না আমার কল রিসিভ না করার। ভাইবোন দুটোই একরকম। আত্মসম্মানের ভাণ্ডার একেকটা। অসহ্যকর এদের আত্মসম্মান। সব আত্মসম্মান যেনো আমাদের বেলায়ই প্রযোজ্য।
`
সামনের টেবিলে চোখ যেতেই মাঈশা অবাক। ইভান এখানে?
পরিবারের সাথে এসেছে নাকি! নাহ কাপড়চোপড় দেখে তো মনে হচ্ছেনা ওরা ওর পরিবার হবে। সাথের মেয়েটার পড়নে শুধু একটু ভালো কাপড় দেখা যাচ্ছে। এই মহিলারও শাড়ি পুরোনো লাগছে। কাজের মানুষ নাকি সবগুলো? এগিয়ে যাবো নাকি! হুম গিয়েই দেখি।
-“হেই ইভু।”
-“হাই মালিহা তুই এখানে?”
-“হ্যাঁ রে ওইতো আপু আর উনার হাজবেন্ডের সাথে এসেছি। তুই এখানে? সাথে কারা?”
-“ওহ হ্যাঁ পরিচয় করিয়ে দেই দাঁড়া। এই আমার মা মিসেস ফারহান আহমেদ। এই আমার বুমনি মানে বড় আপু। এই যে হলো রাজাসাহেব আর এই রানীসাহেবা আমার বড় ভাই-বোনের মতোই। আমাদের বাড়ির প্রাণ এরা দুজন।”
ইভানের শেষ কথাটা শুনে কেউই অবাক হয় নি কারণ ইভান আর ঈশা ছোট বেলা থেকেই রানুকে বড় আপুর পরিচয় দিয়ে এসেছে। আর যখন রানুর বিয়ে হলো সেইরকম ধুমধামে বিয়ে করিয়েছিলেন মি. এন্ড মিসেস আহমেদ। ঠিক যেনো নিজের মেয়েরই বিয়ে করাচ্ছেন। সেদিন থেকে ওরা দীপুকে বড় ভাইয়ের পরিচয় দেয়। কাজের মানুষ বলে কখনোই কারো কাছে পরিচয় দেয় নি।।
মালিহা সবার দিকে চোখটা কেমন বাকা করে তাকালো। ইভানের কথার আগামাথা কিছুই বুঝলো না। ইভান তো বলেছিলো তার বাবা আহমেদ গ্রুপের মালিক। তাহলে ওর পরিবার এমন কেন দেখতে। বোনটা যাই হোক স্মার্ট আছে কিন্তু মা আর এই যে বড় ভাই-বোনের পরিচয় দিচ্ছে এরা তো অনেকটা ক্ষ্যাত টাইপের। এদের দুজনকে দেখে তো মনে হচ্ছে কাজ করে।
-“আর এ হচ্ছে মালিহা আমার এখানের কলেজ ফ্রেন্ড।”
মালিহা নিজেকে সামলে সবাইকে হাই হ্যালো বলে নিলো। কিন্তু রানু আর দীপুর সাথে কথা বললো না।
-“কেমন আছেন আন্টি?”
-“আলহামদুলিল্লাহ ভালো মা তুমি?”
-“অ্যাম ফাইন। আপনি কেমন আছেন বুমনি?”
-“হুম ভালো। তুমি আমায় বুমনি না ডেকে আপু ডেকো।”
-“জ্বি আপু।”
ঈশার এই মেয়ের মুখে বুমনি ডাকটাকে একদম ভালো লাগেনি। মালিহাকে ওর অতোটা ভালো লাগেনি। এতো মর্ডাণ ড্রেস না পড়লেও পারতো। স্মার্টনেস কি এসব নোংরামোকে বলে নাকি? আজব মেয়ে তো। কি শর্ট একটা টপ্স পড়েছে! টপ্স পড়বে ভালো কথা একটা জিন্স পড়লেও তো পাড়তো এই লম্বা ঠ্যাং দেখানোর কি কোন মানে হয় নাকি। এদিকে রানু আর দীপুরও মেয়েটাকে ভালো লাগেনি।
-“আচ্ছা আন্টি আপনারা থাকেন আমি আসছি। অন্যদিন দেখা হবে। আপু দুলাভাই অপেক্ষা করছে।”
-“বাসায় এসো মা। ভালো করে বসে গল্প করা যাবে।”
মা এই মেয়েটাকে বাসায় আসার কথা বলতে হলো কেন? ভাল্লাগেনা। ইভানকে বলতে হবে এই মেয়ে থেকে দূরে থাকতে।
-“অবশ্যই আন্টি। আসি বাই। ইভান আয় একটু আমার সাথে।”
-“মা আমি ওকে একটু এগিয়ে দিয়ে আসছি।”
মালিহা ইভানকে নিয়ে ওর আপু আর দুলাভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। ইভান উনাদের সাথে কুশল বিনিময় করে মালিহার থেকে বিদায় নিতে যেতেই মালিহা ইভানকে ধরে কয়েকটা সেল্ফি তুলে নিলো সবার সাথে মিলে। নিজে একাও উঠলো ইভানকে বিভিন্নভাবে ধরে। ইভানের বিরক্ত লাগলেও ফ্রেন্ড হিসেবে আর পাবলিক প্লেস তাই কিছু বললো না।
-“আচ্ছা আসিরে। কল দিবো তোকে কথা হবে।”
-“আচ্ছা যা। আল্লাহ হাফেজ আপু দুলাভাইকে নিয়ে বাসায় আসবি একদিন।”
-“আচ্ছা। বাই।”
মালিহা যাবার সময় ইভানকে একহাতে হাগ করে যায়। দূর থেকেই এসব দেখে তো ঈশা, রানু আর দীপু সবার মুখ হা হয়ে যায়। সাহারা ইসলাম একটা মিষ্টি হাসি দেন। মেয়েটা মনে হয় আমার ছেলেকে পছন্দ করে, হয়তো ইভানও করে। দেখতে ভারী সুন্দর আর স্মার্ট পছন্দ করারই কথা। ছেলে মনে হয় বউ পছন্দ করেই রেখে দিয়েছে আমার আর কষ্ট করতে হবেনা। এবার আমার মেয়েটার একটা ব্যাবস্থা করতে পারিলেই শান্তি ছেলের যখন ইচ্ছে বিয়ে করুক। সাহারা ইসলাম মনের মাঝে নিজে নিজেই স্বপ্ন বুনে চলেছেন। কিন্তু সবচেয়ে বড় বাস্তবতা থেকে তিনি এখনো অজ্ঞাত আছেন।
ইভান খাবার অর্ডার দিয়ে সবার সাথে এসে বসে।
`
কলিংবেলের শব্দে রুমান এসে দরজা খুলে দেয়।
-“কেমন আছেন ভাইয়া?”
-“এইতো বর্ণ ভালো আছি। তুমি?”
-“আমিও ভালো আছি। ভাবী, মামা আর মামি কোথায়?”
-“বাবা-মা গেছেন নানুবাড়ি আর তোমার ভাবী ভেতরেই আছেন।”
-“ওহ সানি কই”
-“সানি এইতো দেখো গিয়ে গেম খেলছে হয়তো। ওর আর কি স্কুল থেকে এসেই ট্যাব নিয়ে বসে যায়।”
-“বাচ্চা মানুষ তো ভাইয়া। সব বাচ্চারাই এখন এমন। আপনি এই সময় বাসায় যে?”
-“হুম আর বলোনা বর্ণ অফিসেও শান্তি নেই। এসেছিলাম তোমার ভাবীর জন্য বাজার নিয়ে।”
-“কি বলছো এসব তুমি?”
তখনি পলি এসে চোখ রাঙিয়ে তাকায় রুমানের দিকে। বেচারা ভয়ে আর কথাই বলতে পারছে না। বর্ণালীর বেশ মজাই লাগছে বিষয়টা। ওদের সম্পর্কটা কত সুন্দর। প্রেম করেই বিয়ে কিন্তু কত সুখী দুজনে। ৫বছরের প্রেমের পর বিয়ের আজ প্রায় ৭বছর। রুমান তখনি বলে উঠে,
-“আরে রুমু কই? বর্ণ সেই কখন থেকে বসে আছে এসব হাবিজাবি আলাপ করছিলাম।”
-“আমি মনে হয় অন্য কিছু শুনলাম।”
-“আ…..আরেই না না ভুল শুনেছো হয়তো তুমি। আচ্ছা আমি রুমে যাচ্ছি।”
রুমান আর দাঁড়িয়ে না থেকে পগারপার হয়ে যায়। পলি বর্ণালীকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসায়। এ বাসায় কত এসেছে কত থেকেছে বর্ণালী তার কোন হিসেব নেই। রুমুর বাবা মা চেয়েছিলেন বর্ণালীকে উনাদের বাড়ির বউ করে আনতে। কিন্তু রুমান সরাসরি বলে দেয় বর্ণালীকে ও শুধুই নিজের ছোট বোন হিসেবে দেখে এসেছে। তাছাড়া সে অন্য কাউকে ভালোবাসে।
যখন ছেলের সম্পর্কের কথা জানেন আর আগ বাড়িয়ে সাহস করেন নি বর্ণালীর বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার। বড় আশা ছিলো উনাদের কিন্তু ছেলের পছন্দও খারাপ না। ঠিক বর্ণালীর মতো মেয়েই বউ হিসেবে পেয়েছেন। রুমু হাই তুলে ড্রয়িংরুমের দিকে এগিয়ে আসে। এসেই উপুড় হয়ে বর্ণালীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।
-“এসেছিস জান?”
-“হুম তা তো এসেছিই। তুই এই সময় ঘুমাচ্ছিলি কেন?”
-“এমনিতেই। বাসার সবাই ভালো আছেন? বড় আব্বু, বড় আম্মু আর সজিব…..ভাইয়া?”
-“আব্বুর শরীর তেমন একটা ভালো না। আম্মু ভালো আছেন মাঝে মাঝে হাই প্রেসারটা একটু বেড়ে যায়। আর ভাইয়া তো ভালো থাকার অভিনয় করেই যাচ্ছে।”
রুমু শক্ত করে বর্ণালীর কোমর জড়িয়ে ধরে মাথা গুজে আছে। বান্ধবী তো দূরেই থাক এমন ভালোবাসা মায়ের পেটের বোনের মাঝেও দেখা যায় না।
-“হাহাহাহা আরে আরে কি করছিস? পেটের মাঝে সুড়সুড়ি লাগছে তো। ছাড় উঠ রে বাবু।”
-“উহু সুড়সুড়ির মা উঠবো না। আমাকে দিয়ে অভ্যাস করা এখন থেকেই। ইভান যখন এভাবে তোর পেটের মাঝে মুখ গুজে আদর করবে এখানে ছুঁবে ওইখানে ছুঁবে তখন সুড়সুড়ি লাগলে তো বেচারার রোমান্টিক মুডের ১২টা বাজিয়ে দিবি।”
বর্ণালী রুমুর কথা শুনে কাঁপতে শুরু করে। এসব কি বলছে এই মেয়ে! আর ইভানের কথাই বা এখানে কেন এলো?
-“আরে এভাবে কাঁপাকাঁপি বন্ধ কর। এখনো তো তোকে ছুঁয়েই দেখেনি। ওর কথা শুনেই যদি এভাবে কাঁপতে থাকিস যখন তোকে আসলেই ছুঁবে তখন তো তুই কাঁপতে কাঁপতে অজ্ঞান হয়ে যাবি।”
-“র….রুমু প্লিজ চুপ কর তো।”
-“ইস আমার লজ্জাবতীরে।”
-“দে….দেখ আমি লজ্জা পাচ্ছিনা। এসব বাজে কথা ছেড়ে যা উঠ।”
-“বারেহ!!! এখন এসব বাজে কথা হয়ে গেলো? বাজে না সোনা এসব রোমান্স।”
-“তুই এমন ভাবে কথা বলছিস যেনো তোর এসবে অনেক অভিজ্ঞতা আছে।”
-“এসব জানতে অভিজ্ঞতা করতে হয় না জান। এমনিতেই আইডিয়া হয়ে যায়।”
-“ছাড়। মামিকে বলতে হবে তোকে দ্রুত বিয়ে দেয়ার ব্যাবস্থা করতে হবে।”
-“আরে এই উপকারটা কর বান্ধবী তোর কাছে চিরকাল ঋণী হয়ে থাকবো।”
-“এই মেয়ে তুই এভাবে বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গেছিস কেন?”
-“আরেহ বয়স বাড়ছেনা আর কবে করবো? আম্মু আব্বু তো বুঝেই না উনাদের মেয়ের যে বিয়ের বয়স হয়েছে।”
-“কি নির্লজ্জ মেয়েরে বাবা।”
-“হ্যাঁ তোর মত না আমি।”
পলি টেবিলে খাবার লাগিয়ে দিয়ে ওদের ডেকে যায়।
-“তুই এখনো দুপুরের খাবার খাস নি?”
-“আরে না ভালো লাগছিলো না তাই খাই নি শুয়ে ছিলাম।”
-“তোর শরীর ঠিক আছে তো রুমু?”
-“হ্যাঁ জান শরীর একদম ঠিক আছে। ঠিক তো এই মনটা নেই।”
-“মানে? কিছু কি হয়েছে রুমু?”
-“হয়েছে বিয়ের অসুখ।”
-“ধ্যাৎ পাগলী মেয়ে একটা।”
হোহো করে একসাথে হেসে উঠে দুজনে।
দুজনেই বসে খাচ্ছে কিন্তু রুমুর খাওয়া তো অপশনাল। ডানহাতে খাচ্ছে আর বাম হাতে মোবাইল টিপছে অনবরত।
-“সারাদিন এতো কি মোবাইলে গুতোগুতি করিস রুমু? খাওয়ার সময় অন্তত এটা সাইডে রেখে খা।”
-“আর বলো না বর্ণালী রুমু সবসময়ই এমন।”
পলি কথাটা শেষ করতেই রুমান ওকে ডাক দেয়।
-“পলিইইইইই।”
-“আসছিইই।”
-“তুমি আর কথা না বাড়িয়ে যাও তোমাদের রোমান্সের সময় চলে যাবে। এতো বছর হলো বিয়ের এক বাচ্চার মা হয়ে গেছো এখনো তোমার রোমান্স কমে নি।”
-“ননদিনী তোমার বিয়ে হলে দেখবো তুমি কি করো। আমারও সামনে সময় আসবে দেখে নিও আমিও একটা সুযোগও ছাড়বো না।”
-“ইস আগে বিয়ে তো দাও তারপর না হয় যা ইচ্ছে বলো।”
রুমুর কথায় বর্ণালী আর পলি দুজনেই হেসে দেয়।
-“আচ্ছা তোমরা খাও আমি আসছি।”
-“হ্যাঁ হ্যাঁ যাও নিজের হাজবেন্ডকে গিয়ে শান্ত করে আসো।”
-“ছিঃ রুমু লজ্জা করে না তোর ভাই হয়। ভাইয়ের সম্পর্কে এসব কথা কেন বলিস?”
-“না তো আমার লজ্জা নেই।”
রুমু মোবাইলে চোখ রেখেই আবারো বলে,
-“আচ্ছা ইভান কোথায়?”
বর্ণালী ভাত মুখে দিতেই বিষম খেয়ে বসে।”
রুমু জলদি করে বর্ণালীকে পানি ঢেলে দেয়। ঢকঢক করে পানি খেয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগে।পিঠের মাঝে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে রুমু। বর্ণালী কিছুটা শান্ত হয়ে বলে,
-“আমি কি জানি ও কোথায়? আমাকে কেন জিজ্ঞেস করলি?”
-“তুই জানার কথা নয় তো আর কে জানবে?”
-“না জানিনা আমি।”
-“এই দেখ।”
রুমু মোবাইলটা বর্ণালীর দিকে এগিয়ে দেয়। মোবাইল হাতে নিতেই সামনে কয়েকটা ছবি ভেসে উঠে। আর সেই ছবিতে ইভান আর মালিহা খুব ক্লোজ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বর্ণালী মোবাইল হাতে নিয়ে ছবিতে ক্লিক করে ওপেন করে দেখে কোন এক রেস্টুরেন্টে ছবিগুলো উঠেছে ওরা। ১ঘন্টা আগে ছবিগুলো কলেজ গ্রুপে আপলোড করেছে মালিহা। বুকের ভেতরটা যেনো খচ করে উঠলো। কেমন অস্থিরতা কাজ করছে। শরীর কাঁপছে, মাথাটা ধরে আসছে। মোবাইল টেবিলে রেখে আরেক গ্লাস পানি খেয়ে নিলো। ইভানকে এই মেয়ের সাথে এভাবে দেখে আমার কেন এমন করছে! আমি কেন বিষয়টাকে নরমালি নিতে পারছিনা।
-“তুই ঠিক আছিস?”
-“হু! হ্যাঁ হ্যাঁ আমি ঠিক আছি। আমার আবার কি হবে?”
-“ইভানের সাথে শেষ কবে কথা হয়েছিলো তোর?”
-“কাল রাতে।”
-“কোথায়?”
-“বা….বাড়িতে এসেছিলো। ইভান আমায় জয়কে নিয়ে ভুল বুঝেছিলো। তারপর আমি আমার আর জয়ের সম্পর্কে সব বলে দিয়েছি।”
-“ইভান কি বললো?”
বর্ণালী সবকিছু খোলে বললো রুমুকে।
-“ইভান অনেক কষ্ট পেয়েছে মনে হয়।”
-“হুহ কষ্ট পেলে এরকম রেস্টুরেন্টে আড্ডা দিতো নাকি?”
-“সুইটহার্ট আর ইউ ফিলিং জেলাস?”
বর্ণালীর চোখ বড় বড় করে তাকায়। আসলেই কি ও জেলাস হচ্ছে নাকি? না না এমন কেন হবে।
-“আমার খেয়ে কোন কাজ নেই তো যে আমি জেলাস হবো। আচ্ছা আমার খাওয়া হয়ে গেছে।”
বর্ণালী আর খেতে পারলো না। কেন জানি ওর মুখ দিয়ে খাবার ঢুকছিলোই না। ইভানের সাথে কথা বলার জন্য মনটা ছটফট করছে। ফোন বের করে আবারো কল দিলো এখনো ফোন বন্ধ। রুমু পেছন থেকে এসে ভুউউউ বলে ভয় দেখিয়ে দেয় ওকে।
-“উফফফ রুমু ভয় পাইয়ে দিলি তো।”
-“তা কাকে ফোন দেয়া হচ্ছিলো?”
-“কই কাউকে না তো।”
চট করে রুমু ওর কাছ থেকে ফোনটা কেড়ে নেয়।
-“আহা ইভানকে কল দেয়া হচ্ছিলো? তুই যতই বলিস না কেন ইভানকে নিয়ে তোর মনের মাঝে কোন ফিলিংস নেই সবই ভুল। তুই ইভানকে ভালোবেসে ফেলেছিস কিন্তু বুঝতে পারছিস না। দেখ এই বুঝাবুঝির কারণে না আবার অনেক দেরি হয়ে যায়।”
বর্ণালী চুপচাপ শুধু ওর বলা কথাগুলো শুনে গেলো কিছুই বললো না।
`
খাওয়া দাওয়া শেষ করে অনেক্ষণ নকশিপল্লীতে ঘুরে বেড়ায় সবাই। বিকেল নেমে এসেছে সবাইকে এখন বাসার দিকে রওয়ানা দিতে হবে।
-“হয়েছে অনেক ঘুরাঘুরি এবার ব্যাক করতে হবে।”
-“হ্যাঁ চলো।”
হাট থেকে কিছু বাজার করে নিলো ইভান। সবাই গাড়িতে উঠে বাসার উদ্দেশ্য রওয়ানা দেয়। গাড়ি চলছে তার গতিতে। একটা শপিংমলের সামনে এসে ইভান গাড়ি থামায়।
-“এখানে কি করবি?”
-“একটা মোবাইল নিবো মা।”
-“আচ্ছা তাড়াতাড়ি আয়।”
ইভান মোবাইল কিনে দ্রুত এসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
`
-“আমায় যেতে হবে রুমু।”
-“হুম আচ্ছা চল আমি দিয়ে আসি তোকে।”
-“না আমি বাচ্চা নাকি যে যেতে পারবো না?”
-“আচ্ছা আয় নিচে দিয়ে আসি।”
-“আচ্ছা চল।”
পলি আর রুমানও চলে আসে ততক্ষণে ।
-“কি বর্ণালী চলে যাচ্ছ?”
-“হ্যাঁ ভাইয়া। সানি কই? ওকে দেখলাম না যে?”
-“খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে পড়েছে। আর আজকে থেকে গেলেও তো পারো।”
-“না ভাবী অন্য দিন এসে থাকবো আজ চলি।”
-“আচ্ছা চলো আমিও অফিসে যাচ্ছি তোমাকে রিকশা ঠিক করে দিবো।”
-“ঠিকাছে ভাইয়া চলেন।”
রুমু আর পলি বর্ণালীকে নিচে দিয়ে উপরে চলে আসে। রুমান বর্ণালীকে রিকশায় তুলে দিচ্ছে ঠিক তখনি ইভানের চোখ বর্ণালীর উপর গিয়ে ঠেকে। সাথে সাথে গাড়ির ব্রেক কষে নেয়। ছেলেটা কে? বর্ণালীকে রিকশায় তুলে দিচ্ছে কেন?
রুমানকে বারবার না করা সত্তেও রিকশা ভাড়া দিয়ে দেয়। ছোট বোন বলে কথা। এদিকে ইভান এসব দেখে জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে। ঈশা ভালো করেই খেয়াল করলো বিষয়টা। বর্ণালীর রিকশা চোখের আড়াল হয়ে গেছে কিন্তু ইভান তখনো সেদিকেই তাকিয়ে আছে।
-“ইভান চল।”
-“হুম।”
কিছুদুর গাড়ি যেতেই বর্ণালীর রিকশা দেখতে পায় আবারো। খুব স্লো করে গাড়ি রিকশা পাশ কাটিয়ে এগিয়ে নিয়ে চলে যায় ইভান। বর্ণালী নিজের বুকের বা পাশে আলতো করে হাত রাখলো। কেন জানি ওর হার্ট দ্রুত বিট করছে। এমনটা তো ইভান কাছে আসলেই হয়। কিন্তু এখন কেন এমন হচ্ছে! ইভান তো এখন ওর কাছে তো দূরেই থাক আশেপাশেও নেই।
অনেক কাছ থেকে বর্ণালীকে দেখলো ইভান। হার্টবিট বেড়ে যায় ওকে দেখলেই। ইচ্ছে করে আলতো করে বুকের মাঝে ওর মাথাটা নিয়ে নিজের প্রত্যেকটা হৃদস্পন্দনের শব্দ শুনাই। আমার প্রতিটা হৃদস্পন্দন যে শুধু ওর কথাই বলে। কিন্তু কখনো কি তা সম্ভব হবে? হয়তো না। বর্ণালীকে হয়তো কখনোই এই বুকে নিতে পারবে না। ও যে কোনরকমই রাজি হচ্ছে না আর হবেও না। আজকেও বর্ণালীকে প্রতিদিনের মতো অনেক সুন্দর লাগছে। পৃথিবীর বুকে যত সৌন্দর্য আছে আল্লাহ সবটাই ওর চেহারায় ঢেলে দিয়েছেন। কিভাবে পারবো আমি এই বাসন্তীকে না দেখে থাকতে? কিভাবে পারবো? না না আমি তা কখনোই পারবো না। ওর সামনে নাই যাই আমার চেহারা ওকে নাইবা দেখাই নিজে তো ওকে আড়াল থেকে দেখতে পারবো। হ্যাঁ তাই করবো। কথাটা ভাবতেই ইভানের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।
💛
#____চলবে……..

…….
Part 18
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=123073532696339&id=103632171307142

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here