ফাগুন প্রেম পর্বঃ ২৯

0
409

#__ফাগুন_প্রেম__
#_লিখাঃ Bornali Suhana
#_পর্বঃ ২৯
💛
-“আমরা আপনার ছেলের জন্য আমাদের মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।”
সজিব এসব শুনে বিশ্বাস করতে পারছেনা। এই মেয়ে এসব কি করেছে? ও তো এই পরিবারের সাথে মানিয়ে নিতে পারবে না। আমাদের সাথে সে কখনোই সুখী থাকবেনা। কেন বুঝেনা এই মেয়েটা।
বর্ণালীর চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। এখানে কি হচ্ছে কিছুই ওর মাথায় আসছেনা।
সজিবের বাবা একবার তার দিকে তাকিয়ে উনাদের উদ্দেশ্য করে বলেন,
-“মানে বুঝলাম না?”
-“আসলে আমার মেয়ে ঈশা আপনার মেয়ের বান্ধবী। আর ও সজিবকে অনেক পছন্দ করে। তাই…”
বর্ণালী প্রায় আকাশ থেকে পড়ে। ঈশা ভাইয়াকে ভালোবাসে? এটা কিভাবে সম্ভব? ও তো কখনোই এমন কিছু বলে নি। হ্যাঁ আজকে যখন রুমুর সাথে ভাইয়ার বিয়ের কথা বলেছিলাম ওর তখন মন খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। হুট করে চলেও গিয়েছিলো। কিন্তু ভাইয়াও কি ঈশাকে ভালোবাসে!!! বর্ণালীর ভাবনায় ছেদ পড়ে ওর বাবার কথায়।
-“তাই আপনারা চাইছেন আপনাদের মেয়েকে আমার ছেলের বউ করে আনবো?”
-“জ্বি ভাইসাহেব।”
-“সজিবের যদি এতে মত থাকে তাহলে আমাদের কোন আপত্তি নেই।”
সজিব এতোক্ষণ চুপচাপ শুনছিলো।
-“দেখুন আংকেল ঈশা আমার সাথে মানিয়ে চলতে পারবেনা। আমি কখনোই ওর বড় কোন চাওয়া পূরণ করতে পারবো না।”
ঈশার বাবা-মা একে অপরের দিকে তাকিয়ে খানিকটা হাসলেন। তারপর ঈশার মা বললেন,
-“আমরা কখনোই আমাদের মেয়েকে কোন কিছুর কমতি রাখিনি। আর ঠিক তোমার বলা এই কথাটাই একটু আগে আমি ওকে বলেছিলাম। কিন্তু ওর একটাই উত্তর। সে মানিয়ে নিতে পারবে।”
-“আসলে বাবা আমার মেয়েটা অনেক ধৈর্যশীল। ও কখনোই তোমার কাছে কোন দামী উপহার চাইবে না। যে মেয়ে আমাদের কাছেই কিছু চায় না সে তোমার কাছে কিভাবে চাইবে? আমি তো ওর বাবা আমি ওর মুখ দেখেই বুঝতে পারি ওর কখন কি চাই। আর আমার মেয়ে ওর জীবনে এই দ্বিতীয়বার কোন একটা জিনিস চেয়েছে। তুমিই বলো আমরা ওকে কীভাবে না করি?”
ঈশার বাবা কথাগুলো বলে একটা গভীর নিশ্বাস নিয়ে বসলেন। সজিবের উত্তরের অপেক্ষায় সবাই ওর দিকেই তাকিয়ে আছে৷ কারো বুক ধুকপুক করছে। হার্ট দ্রুত বিট করছে। কোন একটা কথা শোনার জন্য কৌতুহলী হয়ে তাকিয়ে আছে।
-“আমি ঈশাকে বিয়ে করতে রাজি কিন্তু একবার ওর সাথে কথা বলতে চাই।”
বর্ণালী খুশি হবে কি হবেনা কিছুই বুঝতে পারছেনা। ওর যতটা না খারাপ লাগছে কেন জানি মনের মাঝে একটা ভালোও লাগছে। কিন্তু ওর কোনটা উপভোগ করা উচিত তা বুঝতে পারছেনা।
ঈশার মা বললেন,
-“আমরা আপনাদের কাছে আমাদের মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব রাখলাম। আর কালকে আপনাদের সবার দাওয়াত রইলো। কাল যদি আপনারা চলে আসেন আমাদের বাসায় তাহলে মনে করবো আপনাদের কোন আপত্তি নেই এই বিয়েতে। তাহলে কালকেই এনগেজমেন্ট করিয়ে বিয়ের তারিখ ঠিক করে নিবো। আমরা আপনাদের অপেক্ষায় থাকবো।”
কথাটা বলেই তারা উঠে দাঁড়ান চলে যাওয়ার জন্য। তখনি বর্ণালীর মা বলেন,
-“কোথায় যাচ্ছেন? আপনারা বসেন প্লিজ। কিছু না খেয়ে যেতে নেই।”
-“এ বাড়িতে আর নিজের মেয়েকে দিয়ে তবেই কিছু খাবো আপা। আর সবচেয়ে বেশি মিষ্টিটাই খাবো।”
সাহারা ইসলাম কথাটা বলেই একগাল হাসলেন। সজিবের কাছে এসে বললেন,
-“আমার মেয়ে অনেক ভালো বাবা। তোমাকে আর তোমার পরিবারকে অনেক সুখেই রাখবে।”
-“আমরা শুধু আমাদের মেয়ের সুখ চাই। আর আমার মেয়ের সুখ আপনাদের পরিবারের মাঝেই। বেয়াই বানানোর অপেক্ষায় রইলাম।”
ফারহান সাহেব কথাটা বলেই বর্ণালীর বাবার সাথে হাত মিলিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন। সাহারা বেগমও তার পিছু পিছু বেরিয়ে গেলেন।
এই মুহুর্তে পরিবেশটা কেমন থমথমে হয়ে আছে। সজিব আর না দাঁড়িয়ে নিজের রুমে চলে যেতে চাইলেই ওর মা বলেন,
-“তুই কি ঈশাকে পছন্দ করিস?”
সজিব কোন কথাই বলছেনা চুপ হয়ে আছে। তার এই মুহুর্তে কি বলা উচিত ভেবে পাচ্ছেনা। কিন্তু সে তো ঈশাকে পছন্দ করে। তাহলে কেন বললে কি সমস্যা?
-“কি হলো কিছু তো বলো? তুমি কি ঈশাকে পছন্দ করো?”
সজিবের বাবা খুব শান্ত গলায় কথাটা বললেন। সজিব আর চুপ না থেকে বললো,
-“হ্যাঁ করি।”
-“তাহলে কাল আমরা ঐ বাড়িতে যাচ্ছি। সব রেডি করো সজিবের মা। তোমার ছেলের যে বিয়ে।”
সজিবের মা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে হেসে খেতে চলে গেলেন। বর্ণালী ভাইয়ের দিকে এগিয়ে আসছে। ওর যে মনটা কেমন খচখচ করছে। সবটা যে জানা প্রয়োজন। রুমু বর্ণালীর দিকে তাকিয়ে হেসে আলতো করে দরজা থেকে সরে রুমের ভেতর চলে গেলো।
-“ভাইয়া কিছু কথা ছিলো।”
-“রুমে আয়।”
বর্ণালীর মা-বাবা খাবার টেবিলে বসে খাচ্ছেন আর কালকের দিন নিয়ে আলোচনা করছেন কিভাবে কি করবেন। রুমু বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে মোবাইলটা হাতে নিলো।
বর্ণালী সজিবের রুমে এসেই জিজ্ঞেস করলো,
-“এসব কবে শুরু হয়েছে?”
-“ও আমাকে ভালোবাসে আমিও ওকে ভালোবাসি। কিন্তু আমাদের মাঝে প্রেম বা ভালোবাসার কোন সম্পর্ক কখনোই তৈরি হয় নি। ওদের এতো ভালো অবস্থা দেখে আমি কখনোই এগুতে চাই নি। কিন্তু ও জোর করেছে অনেক বার। জানিনা আজ হুট করে কেন এভাবে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়ে বসলো।”
-“আমি জানি।”
-“মানে?”
-“কিছুনা। আচ্ছা ভালোই হয়েছে তোমরা দুজন দুজনকে যখন ভালোবাসো তাহলে তো হয়েই গেলো।”
-“কিন্তু আমি কি ওকে সুখী রাখতে পারবো?”
-“কেন পারবে না? আর আমি যতদূর ঈশাকে চিনেছি ও ওইসব মেয়েদের মতো না যাদের দামী গিফট, দামী রেস্টুরেন্টে খাওয়া, সপ্তাহে একদিন ঘুরাঘুরি আর তিনদিনে একদিন শপিং এসব কিছুই ওর মাঝে নেই। ও অনেক ভালো তুমিও সুখী হবে আর ঈশাও আমার ভাইকে পেয়ে অনেক সুখী হবে। আমি জানি আমার ভাই তার বউকে কখনোই কোন অপ্রাপ্তিতে রাখবে না।”
সজিব চুপ করে তার বোনের কথা শুনে গেলো। তার বোনটা অনেক বড় বড় কথা বলতে শিখে গেছে। যত দেখছে ততোই অবাক হচ্ছে ও। বর্ণালী একগাল হেসে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। আজ ওর মনটা বড় অশান্ত। কিছুতেই বুঝাতে পারছেনা। ঈশাকে নিজের ভাইয়ের বউ হিসেবে কেন যেনো মানাতে পারছেনা। ও তো রুমুকে ওর ভাইয়ের বউয়ের সাজে দেখতে চেয়েছিলো। ভাবী হিসেবে রুমুর প্রতিচ্ছবিই এঁকেছিলো।

-“নতুন জীবনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো।”
সজিব মোবাইল হাতে নিতেই এমন একটা মেসেজ ভেসে আসলো সেই আননউন নাম্বার থেকে। অনেক বেশি অবাক হলো সজিব। কে এই মানুষ? সবসময় আমার এতো খবর রাখে কিভাবে? কেন এই মানুষটা আমাকে সবসময় মেসেজ করে? কেন কল দেয়?
কল দিলেও তো কথা বলেনা। নানা ধরনের প্রশ্ন ঘুরঘুর করছে সজিবের মাথায়। ঠিক তখনই কল আসে। ফোনের স্ক্রিনে ঈশার নাম দেখে সজিব রিসিভ করে। দুজনেই এই মুহুর্তে নিশ্চুপ হয়ে আছে। কেউ কারো সাথে কথা বলছেনা। কিছুক্ষণ পর নিশ্চুপতাকে মুছে দিয়ে সজিবই হলে,
-“কেমন আছো?”
কথাটা বলতেই ঈশা হাউমাউ করে কেঁদে দেয়। সজিব অনেক কথাই বলছে ওকে চুপ করানোর জন্য। এবার একটু রেগেই বললো,
-“এই মেয়ে চুপ করবে নাকি কল কেটে দিবো?”
ঈশা কান্না বন্ধ করে হেচকি তুলতে তুলতে বলে,
-“আয়ায়ামি আসলে কাল ওই কথা এমনি বলেছিলাম। সরি।”
-“হুম আমিও তোমাকে না বুঝে মারাটা উচিত হয় নি। ভুল আমারো হয়েছে সরি।”
-“না তুমি কেন সরি বলবে ভুল তো আমার হয়েছে।”
-“আচ্ছা যাও দুজনেই সরি। এখন এসব বাদ দিয়ে ঘুমাও।”
-“সজিব তুমি আসবে তো কাল?”
-“খেয়ে ভালো মেয়ের মতো এখন ঘুমাবে তুমি। যাও বলছি।”
-“আমি অপেক্ষা করবো সজিব।”
-“শাড়ি পড়ো কেমন?”
-“আচ্ছা।”
ঈশা কথাটা বলেই ৪৪০ ভোল্টের শক খায়। বসা থেকে উঠে চোখ বড় বড় করে আবারো জিজ্ঞেস করে,
-“কি বললে? সত্যি তুমি আসবে সজিব?”
-“হুম আসবো। না এসে যাবো কোথায়?”
-“আই লাভ ইউ সজিব আই লাভ ইউ সো মাচ।”
-“হুম এবার ঘুমাও।”
-“তুমি বলবে না?”
-“কি?”
-“আমার কথার জবাব?”
-“কাল সামনে এসে বলবো। রাখছি এখন তুমি খেয়ে ঘুমাবে।”
ঈশা লজ্জায় লাল হয়ে উঠে। কাল ওর স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে। মোবাইলটা রেখে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ে ঈশা। আজকে রাত ৩জন মানুষের ঘুম হবে না। ঈশার ঘুম হবেনা এই ভেবে,
কখন কাল ওর সজিব এসে ওকে ভালোবাসি কথা বলবে।
সজিবের ঘুম হবেনা এই ভেবে,
কখন সকাল হবে আর কখন ওর ভালোবাসার মানুষকে ভালোবাসি কথা বলবে।
আরেকজন সেই অপরিচিতা,
যার ঘুম হবেনা এই ভেবে যে ও যাকে ভালোবাসলো তাকে তো ভালোবাসি কথাটাও বলতে পারলো না। এর আগেই অন্য কেউ এসে তার থেকে তার ভালোবাসাটা চুরি করে নিয়ে গেলো।

বর্ণালী ফোন দিয়ে স্কুল থেকে ছুটি নিয়েছে। আজকে তার ভাইয়ের এনগেজমেন্ট তাকে তো যেতেই হবে। রুমু থাকায় ভালোই হলো ওকেও সাথে নিয়ে যাবে। কিন্তু বর্ণালী একটুও আঁচ করতে পারছেনা আজকে ওর জন্য কত বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।
আর এই সারপ্রাইজটা যে ওর জন্য একটা বড় ধরনের ধাক্কা হবে তা তো ও কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি।
💛
#______চলবে………

…….

28
https://www.facebook.com/103632171307142/posts/127113428959016/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here