ফাগুন প্রেম পর্বঃ ২৮

0
410

#ফাগুন_প্রেম
#_লিখাঃ Bornali Suhana
#_পর্বঃ ২৮
💛
রুমু পানির বোতল হাতে নিয়ে বর্ণালীর রুমে যাচ্ছে তখনি দেখলো সজিব এখনো কারো সাথে কথা বলছে। রুমু একবার পানির বোতলের দিকে তাকালো আরেকবার সজিবের দিকে তাকালো। একটা দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে ইয়েএএএএ বলে চিৎকার করতে চেয়েও নিজের মুখ নিজেই চেপে ধরে।
চুপিচুপি পা টিপে রুমে ঢুকে রুমু। তারপর নিজের কাজ সেরে আবারো চুপিচুপি বাইরে চলে আসে। বিজয়ের একটা হাসি দিয়ে রুমে চলে যায়।
-“কিরে বললাম পানি নিয়ে আসতে খালি বোতল কেন নিয়ে আসলি?”
বর্ণালীর কথা শুনে রুমু কিছু বলতে যাবে তখনি বাইরে থেকে চিৎকার ভেসে আসে।
-“রুমুউউউউউউ।”
বর্ণালীর কন্ঠটা চিনতে বেশিক্ষণ লাগলো না। সজিব চিৎকার করছে। রুমু বিছানায় পা তুলে একটু নড়েচড়ে বসেছে। বর্ণালী রুমুকে ওর দিকে ফিরিয়ে বলে,
-“কি করেছিস রুমু?”
-“কই কি করলাম?”
-“তো ভাইয়া এভাবে চিল্লাচ্ছে কেন?”
-“আমি কি জানি? সবজিওয়ালাদের অভ্যাসই তো চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে সবজি বিক্রি করা। এই যেমন-
এই আপা শাঁক নেন তাজা তাজা শাঁক, লাউ নেন, পটল নেন, আলু নেন, কপি নেন কপি নতুন জিনিস।”
বর্ণালী রুমুর কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। সজিব হনহন করে নিজের রুম থেকে বের হয়ে বর্ণালীর রুমে আসে।
-“রুমু কি করেছিস এইটা?”
-“কি করলাম?”
-“জানিস না কি করেছিস?”
-“কই নাতো। আমি আবার কি করলাম?”
-“আমার বিছানায় পানি কোত্থেকে আসলো?”
-“ছিঃ সবজিওয়ালা তুমি এখনো বিছানা ভেজাও? ইউউউ এতো বড় ছেলে হয়ে কিভাবে করলে এমন কাজ? মুত্র বিসর্জন করবে তার জন্য কি শৌচাগার নেই তোমার রুমে?”
সজিব দাঁত কটমট করে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। বর্ণালী এই মুহুর্তে নীরব দর্শক ও শ্রোতা। রুমু আবারো বললো,
-“আজ বাদে কাল বিয়ে করবে তখন কই তোমার বাচ্চা বিছানা ভেজাবে তা না। তুমি নিজেই এখনো বিছানা ভেজাও। ইয়াক।”
-“রুমাল!!! একে তো আমার বিছানায় পানি ঢেলে আসছিস তারউপর এখন এভাবে পাকনামি কথা বলছিস?”
-“তো কি করবো? তুমি আমার সাথে তুই তুই করে কেন কথা বলো? আমি কি তোমার ছোট বোন লাগি?”
-“এটার সাথে বিছানা ভেজানোর মানে কি?”
-“মানে হচ্ছে আমি তোমার বোনের বান্ধবী। বোন না সো মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ মি. সবজিওয়ালা। হুহ।”
সজিবের গা রাগে জ্বলে যাচ্ছে। প্রচন্ড রাগ উঠছে রুমুর উপর।
-“এখন আমি ঘুমাবো কীভাবে?”
-“কেন? চোখ বন্ধ করে ঘুমাবে সেটাও জানো না। হাহাহাহা।”
-“তবেরে রুমাল।”
-“কিরে সবজিওয়ালা।”
সজিব আশেপাশে তাকিয়ে বাইরে চলে গেলো কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে ঠাস করে রুমুর মাথায় এক জগ পানি ঢেলে দেয়। রুমু ভিজে জুবুথুবু হয়ে গেছে। হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
-“এটা কি করলি সবজিওয়ালার বাচ্চা।”
-“চুপ বেয়াদব মেয়ে একে তো নিজের থেকে বড় মানুষের সাথে দুষ্টুমি করিস তার উপর তুই করে কথা বলিস। তোর সাথে এটাই করা উচিত।”
কথাটা বলেই সজিব রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
বর্ণালী এতোক্ষণ চুপচাপ দেখছিলো এখন আর নিজেকে আটকে রাখতে না পেরে হোহো করে হেসে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। রুমু বর্ণালীর হাসি দেখে আর নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারেনা। এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করে। তবুও বর্ণালীর হাসি থামছে না। খুব কষ্টে নিজের হাসি থামিয়ে বললো,
-“এখন আমরা ঘুমাবো কোথায়? তোদের সপ্তম বিশ্বযুদ্ধের কারণে যে বিছানা ভিজে গেলো।”
-“নিচে বিছানা কর। ওই সবজিওয়ালাকে তো আমি দেখে নিবো। আজকে ছেড়ে দিলাম।”
রুমু চেঞ্জ করতে চলে যায়। এদিকে সজিবও নিচে বিছানা করে শুয়ে পড়ে। আজকে তাদের কপালে নীচে ঘুমানোই লেখা ছিলো।

বর্ণালী স্কুলে এসেই কাজে লেগে গেছে। রুমুকে বাসায় রেখে এসেছে না জানি এই মেয়ে আরো কি কান্ড ঘটায় তার ভয়েও আছে। সজিব সবসময় রাগেনা কিন্তু অনেক সময় অল্পতেই রেগে যায়। ইভান কলেজে ওর আগেই এসে বসে ছিলো। এখন ওকে এটা ওটা করে সাহায্য করেই যাচ্ছে। বাকি সবাইও যার যার কাজে ব্যাস্ত। কিন্তু মালিহা এটা নিতে পারছে না। সারাক্ষণ কেন ইভান বর্ণালী ম্যামের সাথে থাকতে হয়! বন্ধুদের তো ও ভুলেই যায়। দাঁড়াও তোমাকে দেখাচ্ছি ইভানের সাথে ঘেঁষাঘেঁষি করার পরিণতি। মালিহা মিথির কাছে গিয়ে সম্পূর্ণ প্ল্যান বুঝিয়ে দেয়। কিন্তু মিথি এতে রাজি হচ্ছিলো না। যখন বন্ধুত্ব ভেঙে দেয়ার কথা বলে আর কোন উপায় না দেখে মিথিও রাজি হয়ে যায়। এদিকে মালিহা ওর অন্য একটা ছেলে বন্ধুকে কল দিয়ে তাকে এই কাজে সাহায্য করার জন্য বলে। এদের মধ্যে কেউ ওর সাহায্য করবে না জানে কেননা সবাই ইভানকে খুব ভালোবাসে। তাই তো অন্য বন্ধুর সাহায্য নিতে হচ্ছে।
বর্ণালীর দিকে তাকিয়ে মালিহা বলে,
-“আমার ইভানকে কেড়ে নিতে চাও না? এবার বুঝবেন ম্যাম এই মালিহার জিনিসে হাত দেয়ার পরিনাম।”
বর্ণালী বুঝতেও পারছে না ওর জন্য সামনে কত বড় একটা দূর্ঘটনা অপেক্ষা করছে৷ ওর জীবনে এমন কিছু হতে চলছে যে ওর জীবনের রুখটাই বদলে যাবে।
বর্ণালী মোবাইল বের করে টাইমটা দেখে ইভানকে বলে,
-“ইভান আমি চলে যাচ্ছি তোমরাও আজকের মতো চলে যাও। কাল আবার এখান থেকে শুরু করবো।”
-“আমি তোমাকে পৌঁছে দেই?”
-“না ইভান থাক আমি যেতে পারবো।”
-“আমিও তো ওইদিকেই যাবো তাহলে একসাথে গেলে সমস্যা কোথায়?”
বর্ণালী কিছু একটা ভেবে বললো,
-“আচ্ছা ঠিকাছে চলো।”
ইভান আর বর্ণালী সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। তাড়াহুড়ো করে হাঁটতে গিয়ে বর্ণালী পড়ে যেতে নিলেই ইভান ধরে ফেলে। এসব কিছুই মাইশার চোখ এড়ায় না। কিন্তু আজব ব্যাপার হলো এসব দেখে মাইশা যতটা রাগ করার কথা তার এক বিন্দুও করেনি বরং ওদের এভাবে দেখে একটা রহস্যময়ী হাসি দেয়।

কলিংবেলের শব্দ শুনে রুমু গিয়ে দরজা খুলে দেয়
-“আরে ঈশা তুই?”
রুমু এই মুহুর্তে ঈশাকে দেখে কিছুটা অবাক হয়।
-“হ্যাঁ আমি। কেমন আছিস?”
-“এইতো ভালো। তুই কেমন? আয় ভেতরে আয়।”
-“আমি ভালো আছি দেখেই তো এলাম বেবিই।”
-“হাহাহা হু তা অবশ্য ঠিক বলেছিস।”
রুমু ঈশাকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসে পড়ে আড্ডায়। ঠিক তখনি বর্ণালীর আবির্ভাব হয় দরজার ওইপাশে। কলিংবেল বাজতেই রুমু আবারো গিয়ে দরজা খুলে দেয়। বর্ণালীকে দেখেই ওর ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে। একা একা সে অনেক বোরিং ফিল করছিলো। অন্যদিকে সজিবও অফিসে বাসায় থাকলে না হয় ওর পিছে আঠার মতো লেগে থাকতো। খুব করে জ্বালাতো। এমনিতেই সময় ভালো কাটতো। রুমু বর্ণালীকে জড়িয়ে ধরে বলে,
-“উফফফ জান এসেছিস। জানিস পুরোটা দিন আমার শারমিন বেগমের সাথে অনেক খারাপ কেটেছে।”
বর্ণালীর রুমুর গাল টেনে হেসে বলে,
-“জানি সোনা।”
-“বাই দা রাস্তা ঈশা এসেছে।”
-“হ্যাঁ কালকে ওকে কল দিয়ে বলেছিলাম আসার কথা।”
বর্ণালী রুমে ঢুকেই ঈশাকে জড়িয়ে ধরে।
-“কেমন আছিস ঈশু?”
-“এইতো রে ভালোই। তুই আর তোর বসন্তপথিক কেমন?”
-“হুম আমি তো ফিট এন্ড ফাইন আর ও নিজেও ভালো।”
-“বাহ ভালোই খবর রাখিস।”
-“আরে সে আর তার বন্ধুরা আমায় কলেজের কিছু কাজে হেল্প করছে। আর এখন আমায় ড্রপ করে দিয়ে গেলো।”
-“প্রেম কি এগিয়েছে?”
-“সে এ জনমে হবার নয় জান।”
-“থাপ্পর খাবি। ও তোকে আসলেই অনেক ভালোবাসে।”
-“আরে ছাড় তো। এসব কথা বাদ দে। তোরা বসে গল্প কর আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
-“কিন্তু রুমু তো নেই। ও আন্টির সাথে রান্নাঘরে। আমি একা একা বসে কি করবো?”
-“আচ্চা চল আমার রুমে।”
ঈশা বর্ণালীর সাথে যায় ওর রুমে। কিন্তু ওর চোখ শুধু সজিবকে খুঁজছে। কাল থেকে সজিব ওর সাথে কথা বলছে না। কতবার কল আর মেসেজ দিয়েছে তার কোন হিসেব নেই। কিন্তু সজিব একটারও রিপ্লে করেনি। ঈশা পুরো রাত কান্না করে কাটিয়েছে। বর্ণালী ফ্রেশ হয়ে আসতেই জিজ্ঞেস করে,
-“কিরে মন খারাপ কেন?”
ইশার ঘোর কাটে বর্ণালীর কথায়।
-“হু?”
-“মন খারাপ?”
-“কই নাতো।”
ঈশা কথা ঘুরানোর জন্য বলে,
-“আচ্ছা রুমু খুব ভালো না? কত সুন্দর করে আন্টিকে হেল্প করছে। আর তোদের সাথে ওর কত ভালো সম্পর্ক।”
-“হ্যাঁ রে তোকে একটা কথা শেয়ার করার ছিলো।”
-“কি?”
-“আমি ভাবছি রুমুকে ভাইয়ার বউ করে আনবো। কেমন হবে বল তো?”
রুমু খালি মুখে বিষম খায়। ও এসব কি শুনছে? নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছেনা। ওর শরীর কাঁপছে। উপরে ফ্যান চলছে ঠিকই কিন্তু তারপরও সে ঘামছে।
-“কি রে কিছু তো বল।”
ঈশা নিজেকে সামলে বলে,
-“হু ভালো হয়।”
রুমু নাশতা নিয়ে রুমে আসে। দুজিনেই চুপ হয়ে যায়। রুমু ঈশার দিকে নাশতা এগিয়ে দেয়। তারপর আবারো সবাই আড্ডায় জমে উঠে। কিন্তু ঈশা কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছেনা। মনকে শান্ত করতে পারছেনা। ঈশা বসা থেকে উঠে বলে,
-“বর্ণালী আমার যেতে হবে রে। একটা কাজ আছে।”
-“আরে এখনই তো এলি। পাগল নাকি?”
-“নারে অন্য দিন আসবো প্লিজ আমি যাচ্ছি। আন্টিকে বলিস আমি চলে গিয়েছি। রুমু আসিরে। বাই।”
ঈশা আর একটুও দাঁড়ালো না। দৌড়ে বাইরে চলে এলো। ওর চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি ঝরে পড়ছে। হাত দিয়ে চোখের জল মুচছে পরক্ষণেই আবারো জল এসে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে চোখ।

আজ অনেক দিন পর বর্ণালীর বাবা সবার সাথে রাতের খাবার খেতে বসেছেন। ঠিক কবে ওরা সবাই একসাথে বসে খেয়েছিলো মনেই নেই। এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠে। শারমিন বেগম বর্ণালীর দিকে তাকিয়ে বলেন দরজা খুলে দিতে।
বর্ণালী দরজা খুলে দুজন অপরিচিত মানুষ দেখতে পায়। মহিলাটা খুব স্মার্ট গোলাপি রঙের শাড়ি পড়ে আছেন ধবধবে ফর্সা শরীরে দারুণ লাগছে। মনে হচ্ছে এখন চাইলে আবারো বিয়ে দিতে পারবে। বয়সটা বোঝার কোন ক্ষমতা নেই। পাশে দাঁড়ানো লোকটার দিকে একবার তাকালো। কালো কোট প্যান্ট পরিহিত লোকটাও বেশ স্মার্ট। যদিও মাথায় চুল অনেকটা কম। ভদ্র মহিলাটি বললেন,
-“ভেতরে আসতে বলবে না মা?”
বর্ণালী বিষ্ময় কাটিয়ে বলে,
-“আপনারা? আপনাদের তো চিনলাম না?’
-“ভেতরে নিলেই চিনতে পারবে।”
বর্ণালী দরজা ছেড়ে দাঁড়ায়। দুজনে ভেতরে আসতেই একটা লোক নানারকম খাবার জিনিস নিয়ে আসে। লোকটাকে দেখে ড্রাইভার মনে হচ্ছে। বর্ণালী তাদের বসিয়ে মা বাবাকে ডেকে আনে। তারা খাবার রেখেই উঠে আসেন।
ভদ্রলোকটা বর্ণালীর বাবার সাথে হাত মিলিয়ে বলে,
-“আসসালামুয়ালাইকুম। কেমন আছেন?”
-“ওয়ালাইকুমআসসালাম। জ্বি ভালো। কিন্তু আপনাদের তো চিনলাম না?”
-“পরিচয় দিলেই তো চিনবেন।”
রুমু আর বর্ণালী রুমের দরজার পাশে দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনছে। সজিব উনাদের সামনেই ওর মায়ের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ভদ্রমহিলাটি বলে উঠেন,
-“আসলে আমরা ঈশার মা-বাবা। আমরা আমাদের মেয়ের জন্য এখানে এসেছি।”
বর্ণালী রুমুর দিকে একবার তাকায় আবার উনাদের দিকে তাকায়। উনারা আবার বলতে শুরু করেন।
-“আমরা আপনার ছেলের জন্য আমাদের মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।”
সজিব এসব শুনে বিশ্বাস করতে পারছেনা। এই মেয়ে এসব কি করেছে? ও তো এই পরিবারের সাথে মানিয়ে নিতে পারবে না। আমাদের সাথে সে কখনোই সুখী থাকবেনা। কেন বুঝেনা এই মেয়েটা।
💛
#_____চলবে……

27
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=126798905657135&id=103632171307142

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here