ফাগুন প্রেম পর্বঃ ২৭

0
446

#__ফাগুন_প্রেম__
#_লিখাঃ Bornali Suhana
#_পর্বঃ ২৭
💛
ঠোঁটের আশেপাশে চিপ্সের গুড়ো লেগে আছে। কেমন যেনো ঘোর লেগে যাচ্ছে ওর। এক ঝটকায় ভেতরটা শিউরে ওঠে। ও কেন যেকোন পুরুষের ভেতর নাড়া দিয়ে বসবে এমন দৃশ্য দেখলে। নিজেকে সামলে রাখা দায় পড়ে। কিন্তু সজিব নিজেকে এমন সিচুয়েশনে সামলে রাখতেই হবে। ঈশার দিক থেকে চোখ সরিয়ে অন্য দিকে তাকায় সে।
কিন্তু ঈশার মাথায় অন্যরকম দুষ্টুমি ভর করেছে। ও ইচ্ছেকরেই এমন করছে। আজকে যে ও সজিবকে নিয়ে ভালোবাসার সাগরে পা ভেজাতে চায়।
`
-“ওইদিকে কি দেখো?”
সজিব ঈশার কথায় ওর দিকে ফিরে তাকায়। এখনো ওর ঠোঁটের আশেপাশে চিপ্সের গুড়ো লেগে আছে। সজিব হাত দিয়ে ইশারা করে বুঝাতে চায় ওকে। ঈশা বুঝেও না বুঝার ভাব নিয়ে আছে কত মুভিতে এমন রোমান্টিক সিন দেখেছে ও। তাই তো এটাই এপ্লাই করা। না বুঝার ভাব নিয়ে ঈশা সজিবকে জিজ্ঞেস করে,
-“কী?”
-“তোমার মুখে চিপ্সের গুড়ো লেগে আছে। ওইটা মুছে নাও।”
-“এইখানে?”
-“না”
-“এইখানে?”
-“নাহ একটু ডান দিকে।”
-“এইখানে?”
-“নাহ আরেকটু বা দিকে।”
-“আরে আমি দেখছি নাতো। নিজেই মুছে দাও না। এই নাও টিস্যু।”
কথাটা বলেই ঈশা নিজের হাতের টিস্যুটা সজিবের দিকে বাড়িয়ে দেয়।
-“তুমি মুছে দাও তো।”
-“আ……আমি?”
-“না তোমার আত্মা নাও ধরো।”
সজিব হাতে টিস্যু নিয়ে বসে আছে। ঈশা ঠোঁট দুটো পাউট করে মুখ এগিয়ে নিয়ে আসে তার দিকে। সজিবের হাত কাঁপছে। তবুও কাঁপা কাঁপা হাতে ঈশার ঠোঁটের আশেপাশে লেগে থাকা চিপ্সের গুড়ো মুছে দিতে লাগলো।।সজিব যত সরতে চাইছে ঈশা ততোই ওর দিকে মুখটা এগিয়ে আসছে। সজিবের অবস্থা দেখে ভেতরে ভেতরে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সজিবের এতোটা কাছে চলে এসেছে যে তার গায়ের স্মেলটা পর্যন্ত পাচ্ছে। হুট করে ওর হার্ট দ্রুত বিট করতে শুরু করলো। সজিবের হাত থেমে গেছে। ঈশা সজিবের চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই দৃষ্টিটা শুধুই ভালোবাসা চাইছে। ঈশা নিজের হাতটা সজিবের গালের উপর নিয়ে রাখলো। সজিব ঈশার হাতের দিকে তাকিয়ে আবারো ঈশার দিকে তাকাচ্ছে। ঈশা ধীরে ধীরে সজিবের গালের সাথে লাগানো খোচাখোচা দাড়িগুলো ছুঁয়ে দিচ্ছে। এক অন্যরকম নেশায় মেতে উঠেছে ঈশা। দাড়ি দিয়ে খেলতে ও এক পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে। নিজের মুখটা আরেকটু কাছে নিয়ে যায় ঠিক তখনি সজিব নিজের মুখটা ফিরিয়ে নেয় অন্য দিকে। এটা দেখে ঈশার খুব রাগ হয়। কিন্তু কিছু বলেনা। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর সজিব বলে,
-“এভাবে কি ডেকে এনেছো চুপ করে থাকার জন্য? নাকি কিছু বলবে?”
-“কেন কোন কারণ ছাড়া তোমাকে ডাকতে পারিনা?”
-“না পারো না।”
-“শুন সজিব একটা কথা খুব পরিষ্কারভাবে বলে দিচ্ছি তুমি চাইলেও আমার না চাইলেও আমার। আমাকে তোমার ভালোবাসতেই হবে। আর কিভাবে ভালোবাসাতে হয় সে আমি ভালো করেই জানি।”
-“তুমি কখনোই আমার হবার নয় ঈশা। তোমার আর আমার মাঝে অনেক ব্যবধান আছে। সময় আছে সরে যাও আমার জীবন থেকে।”
-” সরতে তো আসিনি সজিব। তুমি আমায় বিয়ে করবে?”
-“সম্ভব না।”
-“ঠিকাছে তাহলে একরাত কাটাও আমার সাথে, আমার শরীরের সাথে তোমার শরীরকে আমি মিশিয়ে নি…..”
কথাটা সম্পূর্ণ করতে পারলো না ঈশা। কানের মাঝে কোন কিছুর আওয়াজ যাচ্ছেনা ওর। চোখ অন্ধকার হয়ে আসছে। গালে হাত দিয়ে চুপ হয়ে আছে। সবকিছু নিস্তব্ধতায় ছেয়ে গেছে। সজিব ওকে থাপ্পড় মারতে পারে কখনোই ভাবে নি । সে তো শুধু একটা কথার কথা বলেছিলো। সজিবের উত্তর কি হয় সেটা শোনার জন্য। মাথা তুলে সজিবের দিকে তাকায় ঈশা। মুহুর্তেই ওর চোখের জল টলমল করে উঠে। সজিব রাগে কাঁপছে। সজিব আর এক মুহুর্তের জন্যও সেখানে দাঁড়ালো না। হনহনিয়ে বের হয়ে গেলো। কি ভেবেছে এই মেয়ে? ও এতোই খারাপ? বিয়ে করতে না পারলে ওর সাথে একরাত কাটাবে? ঈশার কাছ থেকে ও কখনোই এমন কথা আশা করেনি। ঈশাকে ও ভালোবাসে প্রচন্ড রকমের ভালোবাসে। কিন্তু সব ভালোবাসা যে সফল হতেই হবে তার তো কোন কথা নেই। ঈশা কখনোই পারবেনা ওদের সাথে মানিয়ে নিতে। দূর থেকে ভালোবাসি বলাটা যত সহজ কাছ থেকে সেই ভালোবাসাকে আগলে রাখা ততোই কঠিন।
ঈশা সজিবকে পেছন থেকে অনেকবার ডাকলো কিন্তু সজিব শুনলো না। কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে। বাসায় যাবে যে সে খেয়াল নেই ওর। বসে আছে তো বসেই আছে। হঠাৎ ওর ফোনে মেসেজ টোনটা বেজে উঠে। মেসেজ ওপেন করে দেখে,
-“এভাবে বসে না থেকে চুপচাপ বাসায় যাও।”
ঈশা বসা থেকে উঠে সজিবকে খুঁজতে লাগলো কিন্তু কোথাও পেলো না। কল দিলো রিসিভ করলো না। এদিক ওদিক তাকিয়ে অনেকটা বিষন্নতার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বাসার দিকে রওয়ানা দিলো।
`
রুমু হাই তুলে বিছানায় বসে চিৎকার দিয়ে বললো,
-“ভাবী এক কাপ কফি দাও।”
বর্ণালী বেলকনিতেই বসেছিলো। রুমুর কথা শুনে রুমে আসে।
-“কফি নেই চা চলবে?”
-“ভাইয়ার এতো টাকা কি জমিয়ে বাপের বাড়ি পাঠাচ্ছো নাকি? কফিও শেষ হয়ে এলো যে?”
কথাটা বলেই চোখ তাকিয়ে রুমের চারিদিকে তাকিয়ে বললো,
-“আচ্ছা আমার রুমটা কেমন বর্ণালীর রুমের মতো হয়ে গেছে। আরে ভাবী তোমাকে দেখতেও বর্ণালীর মতোই লাগছে।”
-“লাগছে না আমি বর্ণালীই আর এটা আমারই রুম। আমি চা করতে যাচ্ছি ফ্রেশ হয়ে বাইরে আয়।”
কথাটা বলেই বর্ণালী বাইরে চলে গেলো। রুমু হা হয়ে তাকিয়ে আছে। ও তো নিজের রুমে ঘুমাচ্ছিলো কখন কিভাবে এখানে এলো? সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে ওর। দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে দরজার দিকে দৌড় লাগায়। কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে আউউউউউচ বলে চিৎকার দিয়ে উঠে। কারো হাত ওর কোমড়ে অনুভব করতে পেরে চোখ খুলে তাকায়। সজিব এমন অবস্থায় রুমুকে দেখে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। কখনোই রুমুকে ও এভাবে দেখে নি। চুলগুলো এলোমেলো, হাঁটুর সামান্য উপর অবধি টপ্স আর থ্রী কোয়াটার টাউজার পড়া। গায়ে ওড়নাটাও নেই। সজিবের গায়ের সাথে মিশে গেছে রুমু। রুমু সজিবের চোখের দিকে তাকাতে পারছেনা লজ্জায়। ওড়নাটাও রুমে ফেলে এসেছে। সজিব ওকে হুট করেই ছেড়ে দেয়। রুমু কোন কথা না বলেই দৌড়ে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে বিছানায় গিয়ে বসে। চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগে। ও ভাবতেই পারছেনা এটা কি হয়ে গেলো ওর সাথে!!!
বাইরে থেকে বর্ণালীর আওয়াজ ভেসে আসে,
-“কিরে রুমু হয়েছে তোর?”
-“হু….হ্যাঁ আসছিইইই।”
রুমু দ্রুত চোখে, মুখে পানি দিয়ে গায়ে ওড়না জড়িয়ে বাইরে চলে আসে।
`
সবাই ডাইনিং টেবিলে খেতে বসেছে। ঈশা বারবার খাবার নেড়ে যাচ্ছে। মুখে দিতে পারছেনা। খেতে না পেরে খাবার রেখেই রুমে চলে গেলো। ফারহান আহমেদ মেয়ের অবস্থা খুব ভালোভাবেই খেয়াল করলেন। ইভান খেয়ে রুমে এসেই বর্ণালীকে কল দিচ্ছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর আবার কল দেয় এখন ওয়েটিং দেখাচ্ছে। এতো রাতে কার সাথে কথা বলছে বর্ণালী! এই ভেবে রুমের এদিক সেদিক পায়চারী করছে ইভান। ইভানের ফোন বেজে উঠতেই দেখে বাসন্তী নামটা ভেসে উঠেছে। কল কেটে ব্যাক করে ইভান।
-“হ্যাঁ বলো।”
-“কার সাথে কথা বলছিলে?”
-“ঈশার সাথে।”
-“ওহ। তা কি কথা হলো?”
-“আসলে রুমু এখানে এসেছে তো তাই ভাবলাম কাল ঈশা আসলেও ভালো হবে। কিছু আড্ডা দেয়া যাবে।”
-“কি বললো ঈশা?”
-“আসবে বলেছে। কি করছো তুমি?”
-“এই তোমাকেই ভাবছিলাম।”
-“হু খেয়ে তো তোমার কোন কাজ নেই তাই।”
-“আসলেই খেয়ে আমার কোন কাজ নেই। তাই তো সারাক্ষণ তোমাকেই ভাবি।”
বর্ণালী কথা বলছে রুমু ফোনের কাছে নিজের কান এনে লাগিয়ে কথাগুলো শোনার চেষ্টা করছে। রুমুর এমন অবস্থা দেখে বর্ণালী চোখ রাঙিয়ে তাকায়।
-“বাহ গোপন কথা হচ্ছে নাকি? কিছু দেয়া নেয়া হচ্ছে? উম্মম্মমাহ চুম্মম্মম্মাহ।”
বর্ণালী রুমুর মুখ চেপে ধরে। রুমু ওর হাতে কামড় বসিয়ে দেয়।
-“আউউউ ভাইয়া তোকে এমনিতেই রাক্ষুসি বলে না। মানুষ খেয়ে ফেলতে চাইছিস।”
রুমু বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
-“এতো বড় সাহস তোর? শেষ পর্যন্ত তুইও ওই সবজিওয়ালার পক্ষ নিয়ে আমাকে এমন কথা বলতে পারলি? এই তোর বন্ধুত্ত্ব?”
ইভান ফোনের ওইপাশ থেকে কথাগুলো শুনে একনাগাড়ে হেসেই যাচ্ছে।
-“আমি থাকবো না তোর সাথে গেলাম বড় মায়ের কাছে। তুই তোর প্রেমিকের সাথে কথা বল। আর ডিস্টার্ব করবো না আমি।”
-“আরে রুমু শুন না….”
-“এবার আমাকে সরি বলতে আসবি না।”
-“আচ্ছা শুন বাইরে যাচ্ছিস যখন আসার সময় আমার পানির বোতলটা নিয়ে আসিস। জানিসই তো রাত্রে আমার পানি লাগে।”
রুমু রাগে আরো বেশি ফুসতে লাগলো।
-“আনবোনা পানি। রাক্ষুসে মেয়ে রাত ৩টার সময় উঠেও তোর হাবিজাবি খেতে হয় তারপর পানি খেতে হয়। না খেয়ে মরবি আজকে।”
হনহন করে রুমু বাইরে চলে গেলো। বর্ণালী আবারো ফোনে কথা বলতে মনযোগ দিলো।
-“কাল কলেজে কখন আসতে হবে?”
-“৯টার দিকে এসো।”
-“এতো তাড়াতাড়ি কেন?”
-“আরে প্রচুর কাজ আছে তো।”
-“তুমি বললে তো তোমার কাপড় ধোয়া থেকে শুরু করে সব কাজ করতে রাজী।”
-“হয়েছে এবার চুপ যাও।”
`
রুমু গুটিগুটি পায়ে শারমিন বেগমের রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রুমের বাইরে এসে দেখলো রুমের দরজা লাগানো। ইচ্ছে থাকা সত্তেও নক করলো না। রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ায়। সজিবের রুমের সামনে এসে থমকে যায় রুমু। কারো সাথে ফোনে কথা বলতে ব্যাস্ত। একবার উঁকি দিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়। পানির বোতল হাতে নিয়ে বর্ণালীর রুমে যাচ্ছে তখনি দেখলো সজিব এখনো কারো সাথে কথা বলছে। রুমু একবার পানির বোতলের দিকে তাকালো আরেকবার সজিবের দিকে তাকালো। একটা দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে ইয়েএএএএ বলে চিৎকার করতে চেয়েও নিজের মুখ নিজেই চেপে ধরে।
💛

Part 26
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=126671692336523&id=103632171307142

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here