ফাগুন প্রেম পর্বঃ ৪১

0
463

#ফাগুন_প্রেম_
লেখনীতে: Bornali Suhana
পর্ব: ৪১
💛
মেয়ের এই অবস্থা দেখে তার মাথাটা ঘুরে আসে। অল্পের জন্য পড়েই যাচ্ছিলেন কিন্তু রুমু পেছন থেকে এসে ধরে ফেলে। রুমুকে ছাড়িয়ে বিছানার উপর বসেই মেয়ের মাথা কোলে নিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন। ভেতর ফেটে যেনো কান্না আসছে। তার কান্না দেখে সজিব ও রুমুর কান্নার বেগটাও বেড়ে গেলো। বর্ণালীর আর কোন সাড়াশব্দ আর পাওয়া যায় না। ডাক্তারকে রুমু আগেই সব বলে দেয়ায় ডাক্তার তার সাথে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে আসেন। ইঞ্জেকশনটা ওর হাতে দেয়ার সময় সবাই চোখ বন্ধ করে নিয়েছিলো। যেনো তারাই কষ্ট পাচ্ছে। বর্ণালীর এই অবস্থা দেখে ডাক্তার জিজ্ঞে করেন,
-“এসব কিভাবে হলো?”
-“আসলে ওয়াশরুমে পড়ে গিয়েছিলো।”
রুমু কথাটা অন্যভাবে ঢেকে দেয়। শারমিন বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলেন,
-“আমার মেয়ের কিছু হবে না তো ডাক্তার সাহেব? ও ঠিক হয়ে যাবে তো?”
-“কিছুটা রক্ত ঝরে গেছে। তবে ভয় নেই। স্যালাইন দিয়ে যাচ্ছি আর স্যালাইন শেষ হলে খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো করাবেন। টেনশনের কিছু নেই সব ঠিক হয়ে যাবে।”
-“জ্বি আংকেল। আর কোন মেডিসিন?”
-“হ্যাঁ লিখে দিচ্ছি ওইগুলো আনিয়ে নিবে।”
ডাক্তারকে রুমু বিদায় দিয়ে এসে ওর পায়ের কাছে বসে। সবাই বর্ণালীকে ঘিরে বসে আছে। অনেক শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে সে। চোখের নীচটা গর্তের মতো হয়ে কালো হয়ে আছে।
.
ইভান বর্ণালীর বাড়ির আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। বর্ণালীর ফোনে মনে হয় ১০০টা কল দিয়েছে কোন রেসপন্স পায় নি। রুমুর ফোনেও বারবার কল করছে রুমু এতোক্ষণ খেয়ালই করেনি। ফোন সাইলেন্ট করা ছিলো। হঠাৎ খেয়াল করতেই ফোন হাতে নিয়ে বেলকনিতে যায়।
-“হ্যাঁ ইভু বলো।”
-“বর্ণালী কোথায়? ঠিক আছে ও? ডাক্তার কেন এসেছিলো?”
-“আসলে বর্ণের মাথা ফেটে গেছে। তাই….”
-“কিহ!!!! ব…….বর্ণালী ঠিক আছে তো? ওর বেশি কিছু হয়নি তো? তুমি আমাকে আগে কেন বলোনি? আমি এখনই আসছি।”
-“ইভু দাঁড়াও। তুমি এখন আসলে ব্যাপারটা অন্যরকম হয়ে যাবে। বর্ণ ঠিক আছে। এখন ঘুমাচ্ছে।”
-“আমি বর্ণালীকে একবার দেখতে চাই রুমু। আমার বাসন্তীকে না দেখলে আমি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো।”
-“তুমি কোথায়?”
-“আমি বাড়ির সামনে।”
-“ইভান প্লিজ এখন বাসায় যাও। পরে কোনরকম ব্যাবস্থা করে না হয় দেখতে আসবে।”
-“কিন্তু….”
-“একবার বুঝতে চেষ্টা করো ইভান তুমি আসলে বর্ণের সমস্যা হয়ে যাবে। আর তুমি তো তা চাও না। তাই না?”
-“হ্যাঁ কিন্তু আমার প্রাণ পাখিটা যে বর্ণালীর কাছে রুমু। আমি আমার পাখিটাকে না দেখলে শান্ত হতে পারবো না।”
-“এখন বাসায় যাও ইভান আমি পরে দেখছি কিভাবে কি করা যায়।”
-“রু….রুমু আমি পারবো না। আ….আমি এখানেই বসে থাকবো। আমার বাসন্তীকে না দেখে আমি যাবো না।”
ইভান কান্নায় কথা বলতে পারছে না। অন্যদিকে জেদ ধরে বসে আছে যাবেও না।
-“আচ্ছা তুমি আগে বাসায় যাও। ঈশাকে নিয়ে চলে এসো।”
-“হ্যাঁ আচ্ছা ঠিকাছে।”
ইভান দ্রুত গাড়ি নিয়ে বাসায় চলে যায়। কিন্তু ঈশা এখনো ভার্সিটি থেকে ফিরে নি। সাহারা ইসলাম জানান ওর নাকি এসাইনমেন্ট আছে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। ইভান রুমেই পায়চারি করছে আবার কখনো বিছানায় বসছে। অপেক্ষা করা ছাড়া ওর কিছুই করার নেই। কল দিলো অনেকবার ঈশাকে রিসিভ করলো না বরং কেটে দিলো। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে আবার সেই জল হাতের তালু দিয়ে বাচ্চাদের মতো মুছতেছে।
.
ঈশা সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাসায় আসে। ফ্রেশ হয়ে কিছু না খেয়েই সোজা ইভানের রুমে এসে তার এই অবস্থা দেখে চোখমুখে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠে। হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকতে ঢুকতেই বললো,
-“কিরে তোর এই অবস্থা কেন? আর এতো কল দিলি? সব ঠিকাছে তো?”
-“বুমনি এসেছিস? বুমনি কিছুই ঠিক নেই রে কিছুই ঠিক নেই।”
ইভান বসা থেকে উঠে ঈশার হাত ধরে কথাটা বলে। ঈশা কিছুই বুঝতে পারছেনা।
-“বস তুই আগে শান্ত হো। এভাবে বাচ্চাদের মত কাঁদছিস কেন? সব খুলে বল আগে।”
ইভান সব খুলে বলে। ঈশা এসব শুনে নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। এতো কিছু হয়ে গেছে। না জানি সজিবের অবস্থা কি!
-“আমি ওকে দেখতে যাবো বুমনি। প্লিজ আমায় নিয়ে চল।”
-“হ্যাঁ চল।”
ঈশা আর ইভান নীচে আসতেই সাহারা বেগম জিজ্ঞেস করেন,
-“তোদের কি হলো? এই অসময়ে কোথায় যাচ্ছিস?”
ঈশা ইভানের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“মা বর্ণালীর অসুস্থ ওকে দেখতে যাবো।”
-“কি হয়েছে ওর?”
-“শুনেছি মাথা ফেটে গেছে। গেলেই বুঝতে পারবো মা।”
-“সে কি রে? কিভাবে?”
-“জানিনা মা।”
-“আচ্ছা তোরা গিয়ে আয়। তোর বাবা আসুক আমরা না হয় রাত্রে আবার যাবো।”
-“আচ্ছা মা।”
ইভান আর ঈশা আর না দাঁড়িয়ে দ্রুত গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে বর্ণালীর বাড়ির উদ্দেশ্যে।
.
ইভান আর ঈশাকে দেখে শারমিন বেগম অনেকটা খুশি হোন। ইভানকে প্রথম দেখে চিনতে পারেন নি। পরে ঈশা আবার পরিচয় করায়। একবার দেখেছেন ওকে তাই চেহারা প্রায় ভুলেই গেছেন। ভেতরে নিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু ইভানের পা যেনো আগাচ্ছে না৷ একটা ভয় কাজ করছে রুমে গিয়েই না এমন কিছু দেখতে হয় যাতে ওর নিজেকে কন্ট্রোল করা কষ্টকর হয়ে যায়। রুমে যেতেই প্রথম চোখ পরে বর্ণালীর উপর। মাথায় ব্যান্ডেজ দেখেই ইভানের চোখ জলে ভরে আসে। সজিব আর রুমু বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। ইভান লুকিয়ে চোখ মুছে ঈশার পিছু পিছু রুমে ঢুকে। ঈশা আলতো করে বর্ণালীর পাশে বসে। ইভান রুমুর পাশে খানিকটা দূরত্ব রেখে দাঁড়ায়। আজকে ওর ভালোবাসা এতোটাই অসহায় মনে হচ্ছে যে ভালোবাসার মানুষকে এই অবস্থায় দেখে বুকে টেনে নিতে পারছেনা। দূরে দাঁড়িয়ে চেয়ে চেয়ে দেখতে হচ্ছে।
💛
#____চলবে………

Previous
https://www.facebook.com/103632171307142/posts/129258598744499/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here