ফিরে আসা পর্ব-২৪

0
413

#ইসলামিক_গল্প #ISLAMIC_STORY
===========================

❝ ফিরে_আসা ❞
———————

লেখিকা- Umma Hurayra Jahan

পর্ব-২৪

মাহিন গাড়ি চালাতে শুরু করলো।
১ ঘন্টা পর
খাদিজা বেগম ফাতেমাকে ফোন দিলো।
ফাতেমা- আসসামুআলাইকুম মা ।কেমন আছো?
খাদিজা- ওয়ালাইকুমুসসালাম।আলহামদুলিল্লাহ ।তোরা কতদূর পর্যন্ত এলি রে মা??
ফাতেমা – মা আসলে কতদূর পর্যন্ত এসেছি বুঝতে পারছি না।না মানে আমি তো এখানকার কিছু চিনি না তাই।কিন্তু ১ ঘন্ট হয়েছে রওনা দিয়েছি।
খাদিজা- ও আচ্ছা।তাহলে তো আরো সময় লাগবে।তোর বাবা তো অস্থির হয়ে গেছে তোর জন্য।তোর যা যা পছন্দ আজ তোর বাবা নিজে বাজার থেকে কিনে এনেছে।আমি এখন সব রান্না করছি।আচ্ছা মাহিন বাবাজি কি তোর সাথেই আছে?

ফাতেমা – হুম আছেন।

খাদিজা – তাহলে ওকে একটু বল না ওর কি কি পছন্দ ?আমি ওর পছন্দের জিনিসও রান্না করে রাখবো।

ফাতেমা- এই যে রাগি মশাই ,মা জিঙ্গেস করছে আপনার কোন কোন খাবার পছন্দ?মা সেগুলো রান্না করে রাখবে।

মাহিন- আমার পছন্দের দাম দেয় কে??আমার কোন পছন্দ নেই।

ফাতেমা – মা ওনার নাকি কোন পছন্দ নেই ।তুমি যা রান্না করবে উনি তাই খাবেন।

খাদিজা- এই তুই মাহিন বাবাজিকে রাগি মশাই বলে ডাকলি কেন রে???

ফাতেমা – হাহাহা। মা অনেক লম্বা কাহিনি এটা।বাসায় এসে সব বলবো ইনশাল্লাহ।
আচ্ছা মা এখন রাখছি।আসসালামুআলাইকুম।

খাদিজা- আচ্ছা ঠিক আছে।ওয়ালাইকুমুসসালাম।

এদিকে ফাতেমার বমি বমি লাগছে মাথাটাও ঘুরছে।কারন ফাতেমা প্রাইভেট কারে চড়তে পারে না।

ফাতেমা – গাড়িটা একটু আস্তে চালান প্লিজ ।আমার তো এসব গাড়িতে চড়ার অভ্যাস নেই ।তাই আমার বমি বমি লাগছে মাথাটাও ঘুরছে।

মাহিন এই কথা শুনে আরো জোরে গাড়ি চালাতে লাগলো।

মাহিন মনে মনে বলছে এইতো পেয়েছি সুযোগ।দাড়াও মিসেস ফাতেমা তোমাকে মজা দেখাচ্ছি।
এই বলে মাহিন আরো জোরে গাড়ি চালাতে লাগলো।

ফাতেমা – আরে আরে কি করছেন???আমি তো গাড়ি আস্তে চালাতে বললাম ।আর আপনি আরো জোরে চালাচ্ছেন কেন???

ও বুঝতে পেরেছি ,আমার খারাপ লাগছে তাই।আরো যাতে খারাপ লাগে তাই না???

মাহিন- এই মেয়ে তুমি কি মনে করেছো???আস্তে আস্তে গাড়ি চালালে আজ তাড়াতাড়ি পৌছতে পারবো???তাই গাড়ি জোরে চালাচ্ছি।

ফাতেমা – কিন্তু আমার তো খারাপ লাগছে।

মাহিন- তাতে আমার কি হয়েছে??গাইয়্যা কোথাকার।গাড়িতে চড়তে পারে না ।ঢ়ং…

ফাতেমা- আপনার কাছে ঢ়ং মনে হতে পারে কিন্তু এটাই সত্যি।

মাহিন- চুপচাপ বসে থাকো ।আমার মাথা খারাপ করবে না বলে দিলাম।

ফাতেমা কষ্ট সহ্য করে চুপচাপ বসে রয়েছে

হঠাৎ করে

ফাতেমা – আরে আরে আরে গাড়ি থামান গাড়ি থামান প্লিজ গাড়ি থামান প্লিজ প্লিজ প্লিজ।

মাহিন ফাতেমার চিৎকারে ভয়ে গাড়ি থামাতে জোরে ব্রেক করলো।

মাহিন- এই মেয়ে এই কি হয়েছে??কি সমস্যা কি তোমার হে?????

ফাতেমা আঙুল দিয়ে বাইরে দেখালো।
মাহিন গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলো।

মাহিন- কি হয়েছে বাইরে কি দেখাচ্ছো?????

ফাতেমা – ফুচকা!!!

মাহিন- কী……….?????ফুচকা?????

ফাতেমা – হুম ফুচকা।

মাহিন- তো কি করবো আমি এখন???

ফাতেমা – প্লিজ রাগি মশাই রাগ করবেন না ।অনেক দিন ধরে ফুচকা খাই না ।একটু ফুচকা খাবো।প্লিজ না করবেন না।ফুচকা আমার খুব প্রিয়। প্লিজ প্লিজ প্লিজ না করবেন না প্লিজ…….

মাহিন- এখন ফুচকা খাওয়ার সময়????আমি এখন গাড়ি থেকে নামতে পারবো না।
মাহিন রেগে গিয়ে কথাটা বললো।

ফাতেমা – প্লিজ প্লিজ প্লিজ ।আমাকে এখন ফুচকা খাওয়ালে আমি সারা রাস্তা চুপচাপ থাকবো।আপনাকে বিরক্ত করবো না। কিন্তু যদি না খাওয়ান তাহলে সারা রাস্তা আপনার মাথা নষ্ট করে দিবো কত বক করে ।
প্লিজ না করবেন না।

মাহিন- সত্যি তো সারা রাস্তা চুপ থাকবে তো???

ফাতেমা – হুম।

মাহিন- আচ্ছা ঠিক আছে মনে থাকে যেন।

মাহিন মনেমনে বলছে “ফুচকা দিলে যদি এই মেয়ে চুপ থাকে তাহলে এটাই বেটার অপশন।অন্তত এর বলব বকর শুনতে হবে না।

মাহিন – আচ্ছা নামো গাড়ি থেকে ।

ফাতেমা আর মাহিন গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার পাশে এক ফুচকার গাড়ির কাছে গেল।

মাহিন- এই মামা এক প্লেট ফুচকা দেন তো।

ফুচকা মামা- আইচ্ছা দিতাছি স্যার।স্যার ফুচকা ঝাল দিবো নাকি কম ঝাল।

মাহিন- ওকে জিঙ্গেস করুন।

ফুচকামামা- চাচি ফুচকা ঝাল দিবো নাকি কম ঝাল ?

ফুচকা মামা ফাতেমাকে চাচি ডাকায় মাহিন হাসছে।

ফাতেমা – মামা কম ঝাল দিয়েন।

আর এই যে রাগি মশাই এতো হাসবেন না ।চাচি ডাকটা শুনে আমার অভ্যাস আছে।আর এই চাচি ডাক শুনেই আমি বুঝতে পারি আমার পর্দা ঠিকঠাক হয়েছে। বুঝেছেন?

মাহিন- হয়েছে এতো জ্ঞান দিতে হবে না।

ফুচকামামা- এই নেন চাচি আপনার ফুচকা।

ফাতেমা ফুচকার প্লেট হাতে নিলো।
ফাতেমা – এই যে রাগি মশাই একটু প্লেট টা ধরুন তো।

মাহিন- কি????তুমি ফুচকা খাবে আর প্লেট ধরবো আমি???impossible

ফাতেমা- প্লিজ একটু ধরুন না!আমি এক হাতে নিকাব ধরে আর অন্যহাতে প্লেট ধরে খেতে পারবো না।প্লিজ একটু ধরুন না।যদি ফুচকা না খাওয়া হয় তাহলে কিন্তু সারা রাস্তা বক বক. করবো।

মাহিন- আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে ধরছি দাও।

মাহিন প্লেটটা ধরলো আর মনে মনে বলছে “আমি কোন দিন আমার মিমির কোন খাবারের প্লেট ধরি নি ।কিন্তু আজ এই মেয়ের প্লেট ধরতে হচ্ছে।আচ্ছা যত ইচ্ছা উড়ে নাও পাখি। যেদিন ডিবোর্স লেটার টা মুখের উপর ছুড়ে মারবো সেদিন সোজা আকাশ থেকে নিচে মাটিতে পরে যাবে।””

এদিকে তো ফাতেমা নিকাবের নিচে দিয়ে খুব মজা করে ফুচকা খাচ্ছে।

মাহিন- খাওয়া হয়েছে ???

ফাতেমা – হুম ।এই তো শেষ প্রায়।

ফাতেমার ফুচকা খাওয়া শেষ।

মাহিন ফুচকার টাকা দিয়ে দিলো।

মাহিন- এবার গাড়িতে উঠ। আর কিন্তু বক বক করবে না বলে দিলাম।

ফাতেমা – জাঝাকাল্লাহু খয়রান রাগি মশাই।আজ অনেক দিন পর ফুচকা খেলাম।

এই বলে ফাতেমা আর মাহিন গাড়িতে উঠলো।

মাহিন গাড়িতে গান ছাড়লো।

ফাতেমা – আরে আরে কি করছেন???গান ছাড়লেন কেন???

মাহিন- মানে??গান ছেড়েছি তো কি হয়েছে??

ফাতেমা – আপনি জানেন না গান বাজনা হারাম জিনিস।আর কোথাও যাওরার সময় আল্লাহর জিকির করে করে যাওয়া উত্তম।আর আল্লাহ না করুক যদি গান শুনতে শুনতে যাওয়ার পথে গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়ে যায় আর আমরা যদি মারা যাই তাহলে তো জাহান্নাম বাসী হবো দুজনেই।আল্লাহর রস্তে গানটা বন্ধ করুন।দয়া করে গান বন্ধ করুন। বলা তো যায় না কার মৃতু কখন হয় ।তাই আমাদের সবসময় আল্লাহকে স্বরন করা উচিত।যাতে আমরা ইমানের সাথে মৃত্যু বরন করতে পারি।তাই দয়া করে গানটা বন্ধ করুন।

মাহিন- না বন্ধ করবো না।

ফাতেমা – দয়া করে আমার কথা শুনুন।প্লিজ গানটা বন্ধ করুন।

মাহিন গান বন্ধ না করায় ফাতেমা নিজেই বন্ধ করে দিলো।

মাহিন- এই মেয়ে এটা তুমি কি করলে???

ফাতেমা-দেখুন এখন গাড়ি চলছে। তাই গান না শুনাই ভালো ।আল্লাহর যিকির করতে করতে যান।আর গান বন্ধ করার জন্য আপনি আমাকে যা ইচ্ছা তাই বলতে পারেন ।আমি কিছুই মনে করবো না।

মাহিন আর কিছু বললো না ।শুধু রেগে আগুন হয়ে গেল।

ফাতেমা মনে মনে বলছে “হে মাবুদ উনাকে তুমি মাফ করে দাও ।উনাকে তুমি হেদায়েত দান করো।হে মাবুদ উনি অবুঝ উনাকে তুমি বুঝ দান করো।”””

বাকি রাস্তা কেউ কোন কথা বললো না।

ময়মনসিংহ পৌছতে পৌছতে প্রায় ২ টা বেজে গেলো।

ক্রিং ক্রিং

কলিং বেলের আওয়াজ শুনে রফিক সাহেব বুঝতে পারলেন যে ফাতেমা আর মাহিন এসে গেছে।

রফিক সাহেব নিজে দরজা খুলে দিলেন।

দরজা খুলে ফাতেমা আর মাহিনকে দেখে খুব খুশি হলেন।

ফাতেমা – আসসালামুআলাইকুম বাবা ।কেমন আছো??

রফিক – ওয়ালাইকুমুসসালাম।ভালো আছি রে মা ।তোদেরকে দেখে মনটা আরো ভালো হয়ে গেছে।

মাহিন- স্লামালাইকুম আংকেল। কেমন আছেন?

রফিক – ওয়ালাইকুমুসসালাম।ভালো আছি ।এসো তোমরা ভিতরে এসো।

ফাতেমা আর মাহিন ভেতরে গেল।

ড্রয়িং রুমে গিয়ে

মাহিন- আচ্ছা আংকেল ফাতেমাকে তো আমি দিয়েই গেলাম ।এবার আমি চলি।

রফিক- এটা তুমি কি বলছো?????

ফাতেমা – কী????চলি মানে ???আপনার কি মাথার তার ছিড়ে গেছে নাকি???

মাহিন- কেন মাথার তার ছিড়বে কেন???

ফাতেমা – তাহলে চলে যাবেন বলছেন যে।

রফিক- তুমি চলে যাবে কেন বাবা???তুমি তো ফাতেমাকে নিয়ে কয়েক দিন আমাদের এখানে থেকে তারপর ফাতেমাকে নিয়ে একসাথে যাবে।

মাহিন- কিন্তু আংকেল আমি তো থাকার উদ্দেশ্যে আসি নি।আমি তো শুধু ফাতেমাকে এখানে রেখে যেতে এসেছি।আর আমি কোন জামা কাপড়ও আনি নি।

ফাতেমা – আমি তো জানতাম আপনি নিজে জামাকাপড় গুছিয়ে আনবেন না ।তাই আমি নিজেই আপনার সব প্রয়োজনীয় জিনিস আমার সাথে গুছিয়ে নিয়ে এসেছি।

মাহিন- কি????তুমি আমার কাপড়চোপড় এনেছো???

খাদিজা- আরে তোরা এসে গেছিস।ভালো করেছিস। এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে এলি?

ফাতেমা – রাস্তায় বেশি জ্যাম ছিলো না তো তাই।

খাদিজা- ফাতেমা তোর তো মনে হয় যোহরের নামায পড়া হয় নি ।তাই জামাইকে নিয়ে তাড়াতাড়ি তোর ঘরে যা ।ফ্রেশ হয় নামাযটা পড়ে নে ।এখনো নামাযের ওয়াক্ত আছে। তাড়াতাড়ি যা।
মাহিন বাবা তুমি ফাতেমার সাথে ওর রুমে যাও।গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও তারপর তোমাদেরকে আমি খাবার দিচ্ছি।

ফাতেমা – চলুন আমার সাথে।

মাহিন আর কিছু বলতে পারলো না।ফাতেমার পিছনে পিছনে ওর রুমে গেলো।

মনে মনে তো মাহিন রেগে আগুন হয়ে আছে।

মাহিন ফাতেমার ঘরে গিয়ে ফাতেমাকে বলছে

মাহিন- এই মেয়ে তোমার সাহস কি করে হয় আমার জামাকাপড়ে হাত দেওয়ার ???আমি কি তোমার সাথে এখানে থাকার জন্য এসেছি???

ফাতেমা – দয়া করে রাগ করবেন না।আর একটু আস্তে কথা বলুন।আমার বাবা মা যদি শুনতে পারে তাহলে কি ভাববে বলুন তো?
দয়া করে রাগ করবেন না।আমি আপনাকে জামাকাপড় বের করে দিচ্ছি আপনি আগে ফ্রেশ হয়ে আসুন।তারপর আমি ফ্রেশ হয়ে নামায পড়বো।

মাহিন ফাতেমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে……….

চলবে ইনশাল্লাহ……….

সবার গঠন মূলক কমেন্ট আশা করছি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here