ফিরে আসা পর্ব-২৫

0
464

#ইসলামিক_গল্প #ISLAMIC_STORY
===========================

❝ ফিরে_আসা ❞
———————-

লেখিকা- Umma Hurayra Jahan

পর্ব-২৫

মাহিন অগ্নি বর্ন চোখ নিয়ে ফাতেমার দিকে তাকিয়ে আছে।
ফাতেমা- দয়া করে এভাবে তাকাবেন না আমার খুব কষ্ট লাগে।দয়া করে রাগ করবেন না।আপনি যদি না থাকেন আমার বাবা মা ভাই সবাই খুব কষ্ট পাবে।আর ঢাকায় ফিরে গেলেও তো বাবাকে হাজারটা প্রশ্নের জবাব দিতে হবে আপনার ।তাই বলছি আর অশান্তি না বাড়িয়ে আমার সাথে কয়েকটা দিন এখানে থাকুন।প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
মাহিন- ঠিক আছে।কিন্তু আমি আমার মতো থাকবো।এটা তোমার নিজের বাবার বাড়ি বলে আমার সাথে বেশি ভাব দেখাতে আসবে না এ আমি বলে দিলাম।
ফাতেমা – আচ্ছা ঠিক আছে। আগে আপনি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসুন ।আমি জামা কাপড় বের করে দিচ্ছি।
ফাতেমা ব্যাগ থেকে জামা কাপড় বের করে দিলো।মাহিন জামাকাপড় নিয়ে বাথরুমে চলে গেল।
হঠাৎ করে ফাতেমার মনে পড়লো যে মাহিন ঐ সময় ভুলভাবে তার বাবাকে সালাম দিয়েছিলো।
ফাতেমাে- আচ্ছা উনি আসুক ফ্রেশ হয়ে ।তারপর উনার ভুলটা শুধরে দিবো।
মাহিন ফ্রেশ হয়ে আসলো।
ফাতেমা – আচ্ছা আপনি ঐ সময় কিভাবে সালাম দিয়েছিলেন???
মাহিন- কেন ?যেভাবে দেওয়ার সেভাবেই দিয়েছি। স্লামালাইকুম বলে।
ফাতেমা – কিন্তু সালাম তো এভাবে দেয় না ।আপনার সালামের উচ্চারন সম্পুর্ন ভুল।
মাহিন- কি? ??এখন কি তোমার কাছ থেকে আমাকে শিখতে হবে নাকি সালাম কিভাবে দিতে হয়???
ফাতেমা – আপনি তো ভুল উচ্চারন করেছেন যার ফলে সালামের অর্থের বিকৃতি হবে।যার ফলে গুনাহ হবে।সালামের সঠিক উচ্চারন হলো আস সালামু আলাইকুম।যার অর্থ আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।কিন্তু আপনি যদি সালামের উচ্চারন সঠিক না করেন তাহলে তো এর অর্থের বিকৃতি হয়ে গুনাহ হবে।
মাহিন- আমি ঐ সব গাইয়্যাদের মতো আস সালামু আলাইকুম বলতে পারবো না।স্লামালাইকুম কত সুন্দর স্মার্ট শুনা যায়।
ফাতেমা – হে আল্লাহ।আপনি স্মার্টনেসের নেশায় এতোটাই বিভোর হয়ে গেছেন যে এখন আপনি পাপ পূন্যও মানছেন না।
মাহিন- এই শুন জ্ঞান দিতে আসবে না।আমি তোমার থেকে বেশি জানি এসব পাপ পূন্য ।বুঝলে??
ফাতেমা – দয়া করে আপনি আর ঐ ভাবে সালাম দিবেন না।আর সালামের জবাবে ওয়া আলাইকুমুস সালাম বলবেন ।মনে থাকবে তো??
মাহিন- যাও নিজের কাজ করো ।আমার সাথে তর্ক করতে এসো না।
ফাতেমা – তর্ক করছি না।আমি শুধু আপনাকে সঠিক বিষয়টা জানাচ্ছি।আর আপনি আমার স্বামী ।আমি চাই না আপনি কোন গুনাহ কাজ করেন।আমি চাই আপনি দ্বীনের পথে ফিরে আসুন।আমি আর আপনি যাতে একসাথে জান্নাতে যেতে পারি ।আমরা যাতে জান্নাতে একসাথে থাকতে পারি।
এ কথা শুনে মাহিন মনে মনে বলছে“ জান্নাতে একসাথে থাকা তো দূরের কথা, দেখবো দুনিয়াতে কয়দিন আমার সাথে থাকতে পারো”
ফাতেমা – কি হলো কিছু বলছেন না যে।
মাহিন- কিছু বলতে হবে না ।যাও নিজের কাজ করো।
ফাতেমা – আচ্ছা ঠিক আছে।আপনি এখানে বসুন আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।আর হে, এখানে যদি ভালো না লাগে আপনি আমার বেলকনি তে গিয়ে বসতে পারেন।আমার বেলকনি আমি আমার প্রিয় কিছু গাছ লতাপাতা দিয়ে সাজিয়ে রেখেছিলাম।বেলকনিটা আমার প্রিয় জায়গা।ওখানে চেয়ার আছে ।আপনি ওখানে বসতে পারেন ।ভালো লাগবে।
মাহিন – আচ্ছা ঠিক আছে।
ফাতেমা ওয়াশরুমে গেলো।
এদিকে মাহিন বেলকনিতে গেল।বেলকনিতে গিয়ে মাহিন মিমিকে ফোন দিলো।
মাহিন ফোন দিয়েই চলেছে কিন্তু মিমির ফোন তুলার নাম নেই।মাহিন বার বার ফোন দিচ্ছে।অবশেষে মিমি ফোনটা ধরলো।
মাহিন- মিমি কি ব্যাপার তুমি ফোন ধরো নি কেন এতোক্ষন???
মিমি – সরি. আমি একটু ব্যাস্ত ছিলাম তাই।আচ্ছা কেন ফোন দিয়েছো তাড়াতাড়ি বলো।
মাহিন- কেন ফোন দিয়েছি মানে???কতদিন হয়ে গেলো তুমি কোন খোজ খবর নিচ্ছো না ।আগের মতো আর ফোন দাও না।কি হয়েছে কি তোমার??
মিমি- আমি শুধু ফোন দেই না তাই তো???আর তুমি তো মনে হয় সারাদিন আমাকে ফোন দিয়ে উদ্ধার করে দিয়েছো??
মাহিন- তুমি এভাবে কেন বলছো???
মিমি – এভাবে বলবো না তো কি করবো???বউ কে পেয়ে তো আমায় ভুলেই গেছো।এখন আবার ফোন দিয়ে দরদ দেখানো হচ্ছে।
মাহিন- এসব তুমি কি বলছো??আমি তো তোমার কথাতেই বিয়ে করেছি।
মিমি- তো কি হয়েছে???
মাহিন – জানো মিমি এই মেয়েটার সাথে থাকলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে ।আমি একদম সহ্য করতে পারি না ওকে।সারাদিন শুধু জ্ঞান দিতে থাকে কানের কাছে।
মিমি- ওকে ডিভোর্স দিচ্ছো কবে???
মাহিন- আরো কয়েকটা দিন সময় দাও ।এই মেয়েকে আমি এমন কষ্ট দিবো যে ও নিজেই আমাদের জীবন থেকে চিরদিনের মতো চলে যাবে।
মিমি – হুম ।যা করার তাড়াতাড়ি করো।
মাহিন- হুম ।তুমি কোন চিন্তা করো না।আমি ওকে ডিভোর্স দিয়ে তোমাকে বিয়ে করবো।তারপর আমরা সুখে জীবন কাটাবো।
মিমি- আচ্ছা আমি এখন রাখছি ।
মাহিন- আচ্ছা ঠিক আছে।
মাহিন বেলকনি থেকে রুমে গিয়ে বিছানায় বসলো। বসে ফোন চালাচ্ছিলো।
এসময় ফাতেমা মাথার চুল মুছতে মুছতে বাথরুম থেকে বের হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো যেন এক রাশ রুপের ঝলকানি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে।মাহিনের চোখ হঠাৎ করে ফাতেমার দিকে পড়লো।এরকম খোলা চুলে ফাতেমাকে আগে কোন দিন মাহিন দেখে নি।ফাতেমার ঘন কালো লম্বা খোলা চুল যেন ফাতেমার সৌন্দর্যকে আরো কয়েকগুন বাড়িয়ে দিলো। চেহারায় নুর ফুটে ওঠছে।
মাহিন কিছুক্ষন হা করে ফাতেমার দিকে তাকিয়ে রইলো।ফাতেমা এটা লক্ষ্য করে নি ।ফাতেমা তো আপন মনে চুল মুছছে ।হঠাৎ ফাতেমার চোখ পড়লো মাহিনের দিকে।মাহিনের চাহনিতে ফাতেমা লজ্জা পেল।
————————————————————

ফাতেমা – এই যে রাগি মশাই এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন???হিহিহি।মনে হচ্ছে ভুত দেখছেন।
ফাতেমার কথায় চিন্তার ঘোর কাটলো মাহিনের ।মাহিন সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলো ফাতেমার দিক থেকে।
মাহিন- কই আমি তো তোমার দিকে তাকাই নি।আর কেনই বা তাকাবো তোমার দিকে???ইশ রুপের কি ছিড়ি।
ফাতেমা – আমি যেরকম আর আল্লাহ আমাকে যেভাবে বানিয়েছে আমি তাতেই খুশি। কারন নিশ্চই আল্লাহ প্রত্যেক প্রাণীকে সুন্দর অবয়ব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।
আপনিও কিন্তু কম সুন্দর না রাগি মশাই।হিহিহি
মাহিন- আসলেই তোমার লজ্জা শরম খুব কমি আছে। মুখ দিয়ে যা বের হয় তাই বলতে থাকো ।বেহায়া মেয়ে।
ফাতেমা – হুম ।আমি আমার স্বামীকে সুন্দর বলেছি তাতে আপনার সমস্যা কী???হিহিহি
আচ্ছা আপনি বসুন আমি নামাযটা পড়ে নিই।
এই বলে ফাতেমা নামায আদায় করে নিলো যোহরের।
হাসান- মা পুচকি কি এসে গেছে???
খাদিজা- হুম ওরা এসে গেছে ।ওরা ওদের রুমেই আছে।যা ওদেরকে ডেকে নিয়ে আয়। আমি খাবার বেড়ে দিচ্ছি। ওদেরকে বল ডাইনিং রুমে আসতে সবাই একসাথে খাবো।
হাসান- আচ্ছা ঠিক আছে।
খাদিজা- এই রিনা খাবারের প্লেট গুলো একটা একটা করে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে রাখ।
রিনা- আইচ্ছা খালাম্মা।
হাসান- আস সালামু আলাইকুম।আসতে পারি???
ফাতেমা – ওয়া আলাইকুমুস সালাম ,আরে ভাইয়া আয়। কোথায় ছিলি এতোক্ষন??
হাসান- একটু বাইরে গিয়েছিলাম।
হাসানকে দেখে মাহিন উঠে দাড়ালো ।
হাসান- আস সালামু আলাইকুম মাহিন ।কেমন আছো???
মাহিন- ওয়া আলাইকুমুস সালাম। জ্বি ভাইয়া ভালো আছি। আপনি???
হাসান- আলহামদুলিল্লাহ।
মাহিন সঠিক ভাবে সালামের জবাব দেওয়ায় ফাতেমা খুব খুশি হয়েছে।
ফাতেমা মনে মনে বলছে“ যাই হোক আমার রাগি মশাই সালামের জবাবটা ঠিকঠাক দিয়েছে।তাহলে বুঝতে পেরেছেন উনি আমার কথাগুলো।আমার সাথে শুধু শুধূ রাগ দেখায়। হে আল্লাহ তুমি এভাবেই উনাকে দ্বীনের সব কিছু বোঝার তৌফিক দান করো।”””
হাসান- পুচকি চল মা তোদেরকে ডাকছে খাবার জন্য।
ফাতেমা- ঠিক আছে ভাইয়া ।তুই যা আমরা আসছি।
হাসান- তাড়াতাড়ি আয়।
এই বলে হাসান চলে গেলো।
ফাতেমা- ইশ…………কি ভুলটাই না আমি করলাম ।হে আল্লাহ
মাহিন – কি হয়েছে???
ফাতেমা – মাকে তো ফোন দিয়ে জানাতেই ভুলে গেছি যে আমরা সহিসালামতে পৌছেছি।আমি না হয় ভুলে গেলাম আপনি তো ফোনটা দিতে পারতেন আপনার মাকে।যাই হোক আমি ফোন দিচ্ছি
এই বলে ফাতেমা মেহেঘ বেগমকে ফোন দিলো।
ফাতেমা – মা আস সালামু আলাইকুম।
মেহেঘ- ওয়া আলাইকুমুস সালাম।কিরে মা তোরা পৌছে গেছিস??আমার তো খুব চিন্তা হচ্ছিলো।
ফাতেমা – জ্বী মা আমরা ভালো ভাবেই পৌছেছি ।তুমি চিন্তা করো না।বাবা আর মহিমাকেও জানিয়ে দিয়ো।
মেহেঘ- আচ্ছা ঠিক আছে।মাহিন কোথায়?
ফাতেমা – এখানেই আছে।
মেহেঘ – আচ্ছা সাবধানে থাকিস তোরা।
ফাতেমা – ঠিক আছে ।তোমরাও সাবধানে থেকো।আস সালামু আলাইকুম।
মেহেঘ- ওয়া আলাইকুমুস সালাম।
ফাতেমা – এই যে আমার রাগি মশাই এবার খেতে চলুন।মা ডাকছে।
মাহিন- এই মেয়ে তোমাকে না বলেছি আমাকে রাগি মশাই বলে ডাকবে না।
ফাতেমা – আরে এটা তো আমি আপনাকে ভালোবেসে ডাকি।
মাহিন- আমি চাই না তোমার এসব ফালতু ভালোবাসা।
ফাতেমা – আপনি না চাইতে পারেন আমার ভালোবাসা কিন্তু আমি তো আপনার ভালোবাসা একটু ভালো ব্যবহার চাই। আমার এই দুটো জিনিস হলেই হবে ।আমার আর কিছু চাই না।
ভাঙা ভাঙা স্বরে বললো কথাগুলো ফাতেমা।
আচ্ছা চলুন এবার খেতে চলুন।আমার তো প্রচুর ক্ষিদে পেয়েছে।
মাহিন- এতো গুলো ফুচকা খেয়ে আবার নাকি ক্ষিদে পেয়েছে ।পেটুক কোথাকার।
ফাতেমা – হুম ভালো হয়েছে ।এবার চলুন।
ফাতেমা আর মাহিন ডাইনিং রুমে গেল।
রফিস – এসো বাবা এখানে বসো।
মাহিন রফিক সাহেবের সাথে বসলো।
মাহিন- ধন্যবাদ আংকেল।
খাদিজা- একি মাহিন ,তুমি তোমার শ্বশুরকে আংকেল বলছো কেন।উনিতো তোমার বাবার মতো, তোমার শ্বশুর ।উনাকে তুমি বাবা আর আমাকে মা বলে ডাকবে।
মাহিন- না মানে …প্রথম প্রথম তো ।তাই একটু সময় লাগবে।
রফিক – আরে ওর যা ইচ্ছে সেটাই ডাকুব কোন সমস্যা নেই।
নাও এবার সবাই খাওয়া শুরু করো।
ফাতেমা মা আমার আজকে তোর যা যা পছন্দ সব আমি নিজের হাতে বাজার করে এনেছি।তোর মা সব রান্না করেছে। তুই তোর যা যা ভালো লাগে সেগুলো খা ।
বাবা মাহিন তুমিও লজ্জা করো না কিন্তু ।এটা তোমারো বাড়ি।তাই নিজের মতো করে খাবে।
খাওয়া দাওয়া শেষে যে যার ঘরে গেল। বিশ্রাম নিতে।
ফাতেমা আর মাহিন তাদের রুমে চলে এলো। ফাতেমা রুমে এসেই বেলকনিতে গেলো।
ফাতেমা আগে তার প্রিয় গাছগুলোর সাথে একা একা কথা বলতো। আজো সে বেলকনিতে এসেছে তার প্রিয় বন্ধুগুলোর সাথে দেখা করতে। তাদের সাথে কথা বলতে।
ফাতেমা গাছদের সাথে একা একা কথা বলছে ।আর মাহিন সেটা রুম থেকে বসে বসে দেখছে।
মাহিন- এই মেয়েটার মনে হয় মাথার তার ছিড়া ।কেমন পাগলের মতো কথা বলছে গাছের সাথে।
কোন পাগলের পাল্লায় যে পড়লাম কে জানে।
এই বলে মাহিনে ফোন চালাতে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
একটু পড়েই আসরের আজান পড়ে গেল।
ফাতেমা ঘরে এসে ওযু করে নিলো নামাযের জন্য। আর আসরের নামায পড়ে নিলো ।মাহিন বসে বসে ফোন চালাচ্ছে।
এদিকে ফাতেমা তার প্রিয় জিনিস টা খুজছে।
এতো দিন পর নিজের প্রিয় জিনিসটা খুজে পেয়ে দুচোখে পানি চলে আসলো ।যেটাকে সে খুব মিস করছিলো কয়েকদিন।ফাতেমার সেই প্রিয় জিনিসটা হলো…………………..
চলবে ইনশাল্লাহ…..
গল্পে কোন জায়গায় কোন কিছু ভুল লিখলে আমাকে ক্ষমা করবেন দয়া করে।
💖💖💖💖💖
আপনাদের কাছে প্রশ্ন ফাতেমার প্রিয় জিনিস টা কি?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here