ফিরে আসা পর্ব-২৬

0
437

#ইসলামিক_গল্প #ISLAMIC_STORY
===========================

❝ ফিরে_আসা ❞
———————-

লেখিকা- Umma Hurayra Jahan

পর্ব- ২৬

ফাতেমার সেই প্রিয় জিনিসটি হলো পবিত্র কুরআন মাজিদ।ফাতেমা এতোদিন পর কুরআন মাজিদ পেয়ে খুব খুশি হলো।যেখানে ফাতেমা প্রতিদিন দুই তিন বেলা কুরআন পাঠ করতো কিন্তু কয়েকদিন পাঠ না করতে পারায় খুব কষ্ট পাচ্ছিলো।
ফাতেমা আসরের নামায শেষ করে কুরআন নিয়ে বসে মিষ্টি মধুর কন্ঠে পাঠ করলো ।আর মাহিন সেটা মুগ্ধ হয়ে শুনলো।
মাহিন যে ফাতেমার কুরআন পাঠ শুনছে সেটা ফাতেমা লক্ষ্য করে নি।
মাহিন মনে মনে ফাতেমার প্রশংসাই করলো ফাতেমার কুরআন পাঠ শুনে। করবেই না বা কেন ।এতো সুন্দর সহিহ শুদ্ধ কুরআন পাঠ শুনলে যে কেউ প্রশংসা করবে।
মাহিন মনে মনে বলছে “এই মেয়ে এতো সুন্দর কুরআন পাঠ করে কি করে।একদম পাক্কা কারীদের মতো।”
ফাতেমা প্রাণ ভরে কুরআন পাঠ করে নিলো। কুরআন পাঠ করে কুুরআনটাকে কিছুসময় বুকে জড়িয়ে রাখলো।
এই ভাবে কুরআন বুকে জড়িয়ে রাখার যে কি সুখ আর প্রশান্তি তা একমাত্র যে করে সেই জানে।
ফাতেমার কুরআন পাঠ শেষ করা দেখে মাহিন আবার মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল।মাহিন এমন একটা ভাব নিলো যে সে কিছুই শুনে নি এতোক্ষন।
ফাতেমা – এই যে রাগি মশাই ।নিশ্চই আপনার ঘরে বসে থাকতে থাকতে বরিং লাগছে। চলুন ছাদ থেকে ঘুরে আসি ।
মাহিন- না আমি যাবো না।
ফাতেমা – আরে চলুন না।ভালো লাগবে।প্লিজ চলুন।আমি জানি আপনার বরিং লাগছে।ঢাকাতে থাকলে তো এসময় বাসায় থাকেন না।
মাহিন- আমি ছাদে না বাইরে যাবো।
ফাতেমা – তাহলে চলুন আমার একটা প্রিয় জায়গায় যাই ।আমি ঐ জায়গায় মনে হয় একবার গিয়েছিলাম।একবার গিয়েই জায়গাটা খুব ভালো লেগেছিলো আমার।যাবেন আমার সাথে???
মাহিন মনে মনে বলছে ঘরে বসে বসে বরিং হওয়ার থেকে একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি।আর আমি বেশি একটা জায়গাও চিনি না।এই গাইয়্যাটাকেই সাথে করে নিয়ে যাই।অন্তত জায়গা গুলো চিনতে পারবো।
মাহিন- আচ্ছা ঠিক আছে। চলো।
ফাতেমা খুব খুশি হলো।
ফাতেমা – আচ্ছা আপনি রেডি হন।আমি আপনার জামাকাপড় দিচ্ছি।আর আমি মাকে বলে আসি।
এই বলে ফাতেমা মাহিনের জামাকাপড় বের করে দিয়ে খাদিজা বেগমকে বলতে গেল।
ফাতেমা – আস সালামু আলাইকুম মা ।আসি??
খাদিজা- ওয়ালাইকুমুস সালাম, আয় মা আয়।
ফাতেমা – মা ওনাকে নিয়ে একটু বাহির হতে গুরে আসি ওনার গড়ে থাকতে বরিং লাগছে
খাদিজা – ঠিক আছে যা সাবধানে যাস।
খাদিজা মার কাছ হতে বিদায় নিয়ে রাগি মসাইকে সাথে কবে বাহির হলো
এ যে মামা নদীর পড়ে যাবেন!

রিকশাওয়ালা- হ যামু। ওডেন।
ফাতেমা আর মাহিন রিকশায় উঠলো।
মাহিন- এই মেয়ে আমার সাথে মিশে বসবে না।দূরে বসো আমার থেকে।
ফাতেমা – রিকশা তো ছোট।আমি আর দূরে যাবো কোথায়।
মাহিন- কি মুশকিল।
ফাতেমা – মামা চলেন।
রিকশা চলতে শুরু করলো।
মাহিন- এই মেয়ে আমার সাথে মিশবে না যাও দূরে বসো।
ফাতেমা – আমি তো দূরেই বসেছি।আর কতো দূরে যাবো??
মাহিন- এই জন্যই রিকশায় উঠতে চাই নি।
কিছুক্ষন পর তারা নদীর পাড়ে পৌছালো।
মাহিন- মামা ভাড়া কতো?
রিকশাওয়ালা – ৪০ টাকা।
মাহিন একটা ৫০০ টাকার নোট বের করে রিকশাওলা মামাকে দিলো।
রিকশাওয়ালা- আমার কাছে তো এতো টাকা ভাংতি নাই।আমারে ভাংতি দেন।
মাহিন- এই সামান্য কয়টা টাকার ভাংতি নেই???যত্ত সব ।
রিকশাওয়ালা- মামা আমি গরিব মানুষ।আইজ শরিরটা বেশি ভালা না। তাই রিকশা নিয়া একটু আগেই বাইর হইছি।তাই ভাংতি নাই।আজ ?শরিরটা বেশি খারাপ।জানি না কতক্ষন চালাইতে পারমু রিকশা।
ফাতেমা মাহিনের কাছ থেকে ৫০০ টাকার নোট টা নিয়ে মাহিনকে আরো ৫০০ টাকা বের করতে বললো।
ফাতেমা – আরেকটা ৫০০ টাকার নোট দিন তো আমাকে।
মাহিন- কেন কি করবে???
ফাতেমা- আগে দিন তারপর বলছি।
মাহিন আরেকটা ৫০০ টাকার নোট বের করে ফাতেমাকে দিলো।
ফাতেমা ১০০০ হাজার টাকা রিকশাওয়ালাকে দিলো।
ফাতেমা- মামা ধরুন টাকাটা।
রিকশাওয়ালা হা করে চেয়ে রইলো ফাতেমার দিকে।উনি একবার ফাতেমার দিকে দেখে আরেকবার মাহিনের দিকে দেখে।
ফাতেমা- আরে মামা লজ্জা পাবেন না ধরুন।মনে করুন যে আপনার মেয়ে আপনাকে হাদিয়া হিসেবে সামান্য কিছু দিলো।ভাববেন আমি আপনার আরেকটা সন্তান।
রিকশাওয়ালা টাকাটা হাতে নিয়ে দুচোখের পানি ছেড়ে দিলো। আর দুই হাত তুলে ফাতেমা আর মাহিনের জন্য দোয়া করলো।
রিকশাওয়ালা- মা গো আমি তোমাদের জন্য দোয়া করি যাতে তোমরা সুখি হও জীবনে। তোমরা যাতে সারা জীবন একসাথে সুখে থাকো।
ফাতেমা – আপনি দোয়া কইরেন মামা।
ফাতেমা আর মাহিন সামনের দিকে হাটা শুরু করলো।
মাহিন- এই মেয়ে তুমি ঐ রিকশাওয়ালাকে এতোগুলো টাকা কেন দিলে???
ফাতেমা – আরে আপনি তো একটু আগে বললেন এই টাকা গুলো আপনার কাছে সামান্য কিছু টাকা।
আর লোকটাকে দেখে মনে হলো খুব অসুস্থ।তাই উনাকে দেখে আমার খুব মায়া হয়েছে। তাই দিয়েছি।আর দান করলে টাকা কমে না বরং বাড়ে।আল্লাহও খুশি হন ।আর যাদের সামর্থ আছে তারা যদি গরিবদেরকে দিয়ে সাহায্য করে তাহলে কোন দেশে গরিব বলে আর কেউ থাকবে না।মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।আর যে দান করে আল্লাহ তাকে খুব ভালোবাসে। বুঝেছেন??
মাহিন- হয়েছে হয়েছে ।আমার পকেট থেকে টাকা নিয়ে আবার বড় বড় কথা।নিজের কাছ থেকে দিতে।
ফাতেমা – আমি আপনার স্ত্রী ।আপনার সব জিনিসে আমার অধিকার আছে। আর আমার সব জিনিসেও আপনার অধিকার আছে।তাই আমার আপনার একা বলে কোন জিনিস নেই।সব দুজনের ।বুঝলেন।
মাহিন- বাহ্ ভালো অধিকার আদায় করতে শিখে গেছো তো।
তাচ্ছ্যিল্যের সুরে মাহিন ফাতেমাকে কথাটা বললো।
ফাতেমা- হিহিহি।অধিকার তো যদি নিজ থেকে না দেন তাহলে তো আদায় করেই নিতে হবে মিস্টার রাগি মশাই। এটাই ইসলামের বিধান।
মাহিন আর ফাতেমা হাটতে হাটতে নদীর কাছে চলে আসলো।
ফাতেমা – এটাই হলো আমার প্রিয় জায়গা। মায়ের সাথে একবার এসেছিলাম।তখন থেকেই এটা আমার প্রিয় জায়গার মধ্যে একটা।পরিবেশটা খুব শান্ত।লোকজনও কম। আমার এরকম শান্ত শিষ্ট জায়গা খুব ভালো লাগে।
মাহিন- যেমন তুমি তেমনি তোমার পছন্দ।হু…….।বোরিং জায়গা একটা।
ফাতেমা – একদিন এই বোরিং মানুষটাকেই আপনি ভালোবাসবেন ।দেখে নিয়েন।
মাহিন- আকাশ কুসুম কল্পনা করা বন্ধ করো ।না হয় একদিন এমন পড়া পড়বে আর উঠে দাড়েতে পারবে না।
ফাতেমা- আচ্ছা তখন দেখা যাবে।চলুন দুজনে হাত ধরে হাটি
মাহিন- হাত ধরা তো দুরের কথা আমার থেকে১০০ হাত দুরে থাকো।
ফাতেমা – আরে চলুন না।
মাহিন- না ।তুমি হাট ।আমি ঐ বেঞ্চে গিয়ে বসছি।
ফাতেমা – আচ্ছা ঠিক আছে।
এই বলে ফাতেমা একটু নদীর পারে একা একাই হাটলো।
হাটাহাটি শেষ
ফাতেমা – চলুন এবার বাসায় ফিরে যাই।সন্ধা হয়ে আসছে।
মাহিন- ঠিক আছে
ফাতেমা আর মাহিন বাসায় চলে আসলো।
ফাতেমা বাসায় ঢুকতেই মাগরিবের আজান পড়লো।
হাসান আর রফিক সাহেব মসজিদে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
হাসান মাহিনকে দেখে তাদের সাথে মাহিনকেও মসজিদে যাওয়ার জন্য বললো।
হাসান- মাহিন চলো মসজিদে চলো নামায পড়ে আসি।
মাহিন- না মানে ভাইয়া আমি আজ যাবো না ।আরেকদিন যাবো।
ফাতেমা হাসানকে ইশারা দিয়ে না করলো মাহিনকে যেন এ বিষয়ে আর কিছু না বলে।
কারন ফাতেমার উদ্দেশ্যে সে নিজে মাহিনকে এমন ভাবে নামাযের গুরুত্ব বুঝাবে যে মাহিন কারো কথায় না।নিজে থেকে মসজিদে যাবে নামায পড়তে।
হাসান আর কোন কথা না বাড়িয়ে রফিক সাহেবকে নিয়ে মসজিদে চলে গেল।
ফাতেমাও বোরকা চেঞ্জ করে ওযু করে নামায আদায় করে নিলো। আর নামায শেষে কোরআন পাঠ করে নিলো।
এদিকে মাহিন একা একা ড্রয়িং রুমে বসে আছে।
কারন এখন নামাযের সময়। সবাই নামায নিয়ে ব্যস্ত একমাত্র মাহিন ছাড়া।
নামায শেষে একে একে সবাই ড্রয়িং রুমে এলো।
খাদিজা বেগম নাস্তা নিয়ে এলো।
এমন সময় ফাতেমার মোবাইল বেজে উঠলো. ………
চলবে ইনশাল্লাহ…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here